স্টেটস্ম্যান পত্রিকায় উনসত্তর সালের গোড়ায় একটি ছোট্ট খবর বেরিয়েছিল --- বস্তারের সদর জগদলপুর শহরে মাওবাদী পোস্টার দেখা গেছে, পুলিশ সন্দেহ করছে বাইরে থেকে আসা কিছু যুবককে। শেষে ধরা পড়লেন ইস্পাতনগরী ভিলাইয়ের দুই বাঙালী। তাঁদের কিছুদিন জেলহাজতে রাখা হল। একজন অল্পদিনেই মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে এলেন। অন্যজন কিছুদিন পরে জামিনে ছাড়া পেলেন। ইতিমধ্যে কোলকাতার মনুমেন্ট ময়দানে মে দিবসের জনসভায় কানু সান্যাল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) গঠনের ঘোষণা করেছেন। এবার রাজ্য কমিটিগুলো গঠনের পালা । তখন ছত্তিশগড় বিশাল মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত একটি অঞ্চল মাত্র। আর কেরালার চেয়ে সামান্য বড় বস্তার ছিল ছত্তিশগড়ের একটি জেলা। ... ...
আমার কাছে আসে তো টাকা বদলে ডলার নিতে। কার কাছে কী টাকা দেখলেই সব বুঝি। কান এঁটো করে একচোট হাসল ডক্টর। রেখেও যায় ওদের টাকা, আমি ওদের হয়ে সুদে খাটাই। এবার লোকটার আসল ব্যবসাটা বোঝা গেল। গোবিন্দর আরো শোনার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু আক্রাম আলি পেছন থেকে খালি গুঁতাচ্ছিল। অবশ্য কথায় কথায় দেরি হয়ে যাচ্ছে অনেক। ওরা বেরোচ্ছিল, লোকটা পিছন থেকে ডাকল। শোন, শোন। যে পথে যাচ্ছো সেখানে পাউন্ডে দিলে ঘাঁটা পড়ে যাবে তোমাদের। তার চাইতে আমার এখানে ডলার বানিয়ে নিয়ে যাও। কথাটা সত্যি। লোকটার কাছ থেকে পাউন্ড ভাঙ্গিয়ে দশ দশ ডলার হাতে নিয়ে বেরোল দুজনে। বোঝা গেল এটা লোকটার সাইড ব্যবসা। কিংবা এটাই আসল, দোকান খুলে রেখেছে শুধু লোক টানার জন্য। ডক্টর লোকটা বেরোবার আগে আর একবার মনে করিয়ে দিল জাহাজ থেকে পালালে তাদের জীবনটা কেমন বেবাক ভাল হয়ে যেতে পারে। আক্রাম দাঁড়িয়ে থেকে দোকানির কথা শুনতে না চাইলেও, রাস্তায় বেরিয়ে সেই কথা তুলল আবার। জুইতোর কথা কইছে গোবিনদা, জায়াজো আর না গেলে কিতা ওয়? কথা কইবার বেলা খুব সওজ রে, অতো সুজা বিষয় নায় মনো রাখিস; যুদি একবার পুলিশোর আ'তো পড়স, তে কিতা অইবো? কেনে, তুমরার ক্লাবার সাব কিতার লাগি? তান আ'তো রেজগি ধরাই দিলেই অইবো। ওয়, তুমরার ওউ ক্লাবার সাব অখনও টিকিয়া আছে নি দেখ, মরিয়া মাটির মিশি গেছে! বাপ নাই তে কিতা অইছে, পুয়া ভাতিজা তো বেটার আছে; তারার চলাফিরাত কুনু উঁচনিচ দেখছো নি কুনু দিন? ... ...
বাড়ি ফিরেছি একটু রাতে। বেরিয়েছিলাম আবার আড্ডা মারতে। ফিরছি যখন তখন দেখি লকাই( আমার লেখায় আগে এসেছে লকাই) সব ছোট ফ্লাগগুলো এক জায়গায় জড় করছে। ওপর থেকে ছিঁড়ে পড়েছে যেগুলো। বাকীগুলো ছিঁড়ে নামাচ্ছে। কেউ দেখছে না। আলো ঝলমল আমাদের পাড়ায় একটু দুরেই হুল্লোড় করছে কিছু ছেলে। আমি লকাইকে বললুম - কেন জড় করছিস এগুলো? কাল বেচে দিবি বলে? লকাই ফুল লোডেড থাকে সব সময়। কালও ছিল। কেঁদে ফেললো লকাই। বললো - কাকু, কাল এগুলো পা দিয়ে পাড়িয়েই সবাই যাবে। আমার দেশের ফেলাগের একটা দাম নেই। ... ...
সাইকেল আর বই, এই তাঁর জগৎ। রাজাবাজারের বাড়িতে বইয়ের ভিড়ে বাকি সব কিছুই অদৃশ্য বলা চলে। সে বাড়িতে প্রথম যে দিন গেলাম, বিচিত্র অভিজ্ঞতা। রূপদার গলা শুনতে পাচ্ছি, মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছি না। অনেক পরে নজর করি, দুটি বইয়ের তাকের ফাঁকে এক চিলতে জায়গায় গা এলিয়ে রূপদা। কথায় কথায় বললেন, দেশের বাড়ি থেকে সে দিনই সকালে ফিরেছেন। জানতাম, দেশের বাড়ি ভগবানপুর। অনুমান করতে পারছিলাম, রূপদা কীভাবে গিয়ে থাকতে পারেন। তবু, খানিক মজা করার জন্যই বললাম, এই গরমের মধ্যেও কি নন-এসি বাসে…। বাক্যটি শেষ করার ফুরসত পেলাম না। রূপদা যেন রীতিমতো অপমানিত বোধ করলেন। পাল্টা প্রশ্ন, ‘কেন, বাস কেন? সাইকেল থাকতে বাস কেন?’ মার্জনা চেয়ে বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু বম্বে রোডে ঝড়ের গতিতে চলা গাড়ির মধ্যে সাইকেলে চলাফেরা ঝুঁকি হয়ে যাচ্ছে না! রূপদা কথাটা কানেই তুললেন না। ... ...
লোহিতসাগর বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। ফিনিসিয় নাবিক, টায়ারের রাজা সকলের সাহায্যে রাজা সলোমনের বাণিজ্যের কী দাপট! শেবার তো সবই আছে পণ্য আছে, নৌকা আছে, পণ্যের বাজার আছে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে খোদ সলোমন। শেবার বণিকেরা দূর দূর দেশে আগের মত সহজে চলে যেতে পারছে না। না জলে, না স্থলে। তাদের মশলা তাদের রজন সুগন্ধি, নিজেদের দেশে নয়, দূর দূর দেশে এসব পণ্যের প্রবল চাহিদা! নিজেদের দেশে কে কিনবে এসব? তাদের স্বচ্ছন্দ বাণিজ্যে এক অদৃশ্য প্রাচীর তুলে দিয়েছেন সলোমন! দেশের সম্পদ সমৃদ্ধি বাড়বে কী করে যদি বাণিজ্য ঠিকমত না হয়? ... ...
সে মালঘরটার খোঁজ করতে লাগল, যে ঘরে আজ দুপুরে একটি সুন্দরী মধ্যবয়সী মেয়ে তার ভারী স্যুটকেসটা রেখে এসেছে। ওর মধ্যেই জমা রয়েছে তার এতদিনের না বলা সব গল্প কিম্বা ভালবাসা। ... ...
টেলিভিশনে ব্রায়ান হ্যানরাহান যখন এই যুগান্তকারী ঘটনাবলির বর্ণনা দিচ্ছেন, আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছি বারো বছর আগের সেই দিনটার কথা যেদিন আমি পশ্চিম বার্লিনের পতসডামার প্লাতসে একটা কাঠের পাটাতনের ওপরে উঠে প্রথম পূর্ব বার্লিন দেখি । কাঁটা তারের বেড়ার ওপারে ধূসর মাটি, ভাঙ্গা চোরা চ্যান্সেলরির বাড়ি যার নিচে ছিল হিটলারের বাঙ্কার, গোয়েরিঙের হাওয়া অফিস। সে মাত্র বত্রিশ বছর আগের কথা। লোকে কেতাবে পড়ে আমি চোখের সামনে ইতিহাস দেখছি । ঠিক এই সময়ে জার্মানি ফিরব ? কাজে? কো ইন্সিডেনসের বাংলা কি ? সমাপতন কি একেই বলে ? ... ...
বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবে সোমেশ্বর। সব হিসেবেরই কী গণ্ডগোল হয়ে গেলো? উনসত্তর সালে চারু মজুমদার নতুন পার্টির নাম ঘোষণা করলেন, সি-পি-আই (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। কিন্তু পার্টি তৈরি হবার আগেই তো পার্টি ভেঙে গেছে ! আগের পাঁচ বছর ধরে ইঁটের ওপর ইঁট গেঁথে গেঁথে যে মন্দির তৈরি করছিলেন চারু মজুমদার, সে মন্দিরে মাথা নীচু করে ঢুকতে চাইলো না যারা, যারা মার্কসবাদকে সর্বশক্তিমান বলে প্রণাম করতে রাজি হলো না, পিকিং রেডিও ঘোষিত রোজনামচার সাথে যারা নিজেদের রোজনামচাকে মেলাতে পারলো না, একেকটি 'খতম' থেকে আশ্চর্য অলৌকিক উপায়ে একেকটি মুক্তাঞ্চল গঠনের ম্যাজিকে যারা বিশ্বাস করতে পারলো না, কমরেড চারু মজুমদারের লাইনই একমাত্র সরলরেখা, এই মন্ত্রকে যাদের মনে হলো আজগুবি, তারা তো আগেই শ্রেণীশত্রু ঘোষিত হয়ে গেছে ! তারপর তো রাস্তাঘাটে-অলিতে গলিতে শুধুই মৃত্যুর মিছিল ! ... ...
অমলকান্তি সব শুনে বলে উঠল, “আমি শুধু একটা কথাই বলব, কাজের সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবার থেকে বাবাকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে, সার্টিফিকেট দেওয়ার মতো কাজ। তিনি প্রাজ্ঞ, মহৎ, দূরদর্শী ও বিচক্ষণ, গোটা দেশ একথা জানে। তিনি যে এই ধরনের হঠকারিতা করতে পারেন না, সেকথাও সবার জানা। তিনি এখন অন্যের ওপরে নির্ভরশীল। কিন্তু সেই নির্ভরতা যেন তাঁর পক্ষে আশঙ্কাজনক না হয়ে ওঠে, সেটা আমাদের সবাইকেই দেখতে হবে...” ... ...
মানসের কাছ থেকে যতটুকু জানা গেল, তা হল এই, যে শনিবার রাত ১১টা নাগাদ তুহিন আর ঋক পার্টিতে পৌঁছয়। তারপর যথারীতি হাই-হ্যালো, নাচ, ড্রিংক্স এসব চলছিল। সবাই বেশ ভাল মুডেই ছিল। কথা নেই, বার্তা নেই – কোথা থেকে ওই আমন শর্মা নামে ছেলেটা এসে তুহিনকে চুমু খেতেই পুরো সিচুয়েশন পাল্টে গেল। ঋক তো রেগে টং। তারপর খানিক কথা কাটাকাটির পর তুহিন আর ঋক দু’জন পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। নাহ্, কোথায় গেছিল সেটা মানস জানে না। পার্টিতে তুহিনের হাতে গ্লাস ছিল, সে ব্যপারে মানস নিশ্চিত। কিন্তু কী খেয়েছে, কার থেকে খেয়েছে – তা মানস জানে না। ... ...
প্রফেসরের ধারণা এর নিচে লুকানো আছে আরো নানা রহস্যময় ও অজানা জিনিস। তাঁর অনুমান সঠিক বলেই প্রাথমিকভাবে দেখা গেল। সেই মন্দিরের নিচে সন্ধান পাওয়া গেল অমূল্য সম্পদের এক গলির৷ সেই দেওয়াল জুড়ে অজানা হায়রোগ্লিফিকস্৷ ... ...
সেই পাচক মাশরুম, শৈবাল আর শামুক দিয়ে তৈরি চমৎকার খাবার বানিয়ে সেই বিধবার নজর কেড়ে নিল৷ অনেকে বলে সে সেই খাবারের মধ্যে নেশা বা সম্মোহন সৃষ্টিকারী কিছু মেশাত। অবশ্য এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। ... ...
এইবার এই চারটে অ্যামাউন্ট আলাদা আলাদা বাণ্ডিল করে একটা একটা খামে ঢুকিয়ে রাখো, জয়ি ড্রয়ার খুলে কতকগুলো খাম বের করে, আর রাবার ব্যাণ্ড। নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে উৎপল। জয়ি বলে, এদিকে এসো, আমার পাশে। উৎপল চেয়ার ছেড়ে উঠে জয়ি যেখানে বসে আছে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। জয়ি চাবি দিয়ে একটা ড্রয়ার খোলে, উৎপলকে বলে, এই টাকার বাণ্ডিলগুলো আর তোমার হিসেবের কাগজটা এই ড্রয়ারে রাখো। এবার চাবিটা দেয় উৎপলকে, ভালো কোরে চাবি দাও। চাবি দেওয়া হয়ে গেলে ওর কাছ থেকে চাবিটা নিয়ে নিজের ব্যাগে ঢোকায় জয়ি, বলে, টাকাগুলো ব্যাঙ্কে জমা দিতে হবে, ব্যাঙ্কে গিয়েছো কখনো? ... ...
তা' গড়পড়তা বাঙালী যে মাদার-ফিক্সেশনে ভোগে সে কথা তো অনেকেই মনে করেন। তাই তারা বৌ আনতে যায় না, বলে - মা, তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি। (আজকের কোলকাতার প্রজন্ম নিয়ে কথা বলছি না, বলছি পূর্ব প্রজন্ম ও আজকের গ্রামীণ সমাজকে সামনে রেখে।) তবু রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিতে চাই, উনি হলেন ইউরোপীয় তথা আধুনিক শহুরে সংস্কৃতির পথিকৃৎ। বাংলা সাহিত্যে ও মননে পরিশীলিত রোম্যন্টিক প্রেমের কাঠামো নির্মাণের বিশ্বকর্মা। এ নিয়ে নীরদ সি চৌধুরি মশায় ওনার "বাঙালি জীবনে রমণী' বইটিতে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। দেখিয়েছেন বংকিমের ইংরেজি উপন্যাস "রাজমোহন'স ওয়াইফ"এ পুকুরে স্নান সেরে ফেরা ভিজে কাপড়ের মেয়েদের দেখে সরস মন্তব্য করা পুরুষরাই বাঙালির তৎকালীন সমাজের সিংহভাগ। তাই হেমেন মজুমদারের নিজের স্ত্রীকে মডেল করে আঁকা সিক্তবসনার ছবির এত কাটতি। তাই "চলে নীল শাড়ি নিঙারি নিঙারি পরাণ সহিত মোর" বা একটু পরিশীলিত "নীলাম্বরি শাড়ি পরি নীল যমুনায়, কে যায়!" একেবারে বাঙালির প্রাণের গান। নীরদ দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের সফিস্টিকেটেড "বিধি ডাগর আঁখি যদি দিয়েছিলে" নয়, ভারতচন্দ্রের "দেখিলাম সরোবরে কোন এক কামিনী, কোনমতে মোর সনে বঞ্চে এক যামিনী' আমাদের পুরুষমানসিকতার সঠিক প্রতিফলন। ... ...
ভোগান্তি হয়েছিল অবিদুল্লাহেরও। ওর চোখ টেনে কী যে দেখেছে, জামার উপর চক দিয়ে দাগ টেনে দিল। ওকে টেনে একদিকে নিয়ে গেল আরও কীসব পরীক্ষা করতে। এইসব প্রশ্ন, তত্ত্বতালাশ পেরিয়ে জার্মান কসাই, ইহুদি দর্জি, জাপানি সুসি কারিগর, নরওয়ের চাষি, পোলান্ডের সিগার কারখানার কর্মী সবাই নেমে গেল। তারা কেউ যাবে পেনসেলভেনিয়া, কেউ মিশিগান, কারো রাস্তা ভার্জিনিয়ার দিকে। রয়ে গেল শুধু বারো জন চিকনের ব্যাপারি। আর দুজন চিনা। চিনাদের ব্যাপারটা আরও গোলমেলে, চাইনিজ এক্সক্লুসান অ্যাক্টে ওদের এই দেশে ঢোকাই এখন মুশকিল। তার উপর ওদের কথাও কেউ সহজে বুঝতে পারে না। ... ...
গ্রীষ্মের রাতে নদীর দিক থেকে হাওয়া বাতাস খেলে যায় শহরের বুকে। মল থেকে বেরিয়ে তিনবারের চেষ্টায় সিগারেট ধরালো পঙ্কজ। পার্কিংএর দিকে হাঁটল। গাড়ির দরজা খুলতে যাবে, যেন হাওয়া ফুঁড়ে বেরিয়ে এল এক মূর্তি- ফাটা জুতো, মলিন জামা প্যান্ট, গোঁফ দাড়ি, লম্বা চুল- মুখ থেকে ভকভক করে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, একহাত পঙ্কজের দিকে এগিয়ে দিয়েছে, অন্যহাত পিছনে। পঙ্কজের হৃদয়ের বরফ আতঙ্কের উত্তাপে গলতে শুরু করেই আবার জমাট বেঁধে গেল। পার্কিং লটের আলোয় লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনে হল, যে নিরানন্দ জগত থেকে আগত একমাত্র মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে , এ লোক সেই জগতেরই কেউ। এই আলোয়, এই নিয়ন সাইনের নিচে যাকে মানায় না। পঙ্কজের সামনে দাঁড়িয়ে হাত পাতল সেই লোক। ... ...
বুড়ি জানে হাতে একটু টাকা রাখতে হয়। এদিকটা না দেখলে হবেনা। গঞ্জনা জুটবে, না খেয়েও মরতে হতে পারে। ক্রয়ক্ষমতাই তো ক্ষমতা এখন! বুড়ি বোঝে। এদিকটা না সামলালে চলবেনা, অরণ্যের জীবন তো আজ আর পাওয়া যাবেনা। তাই সে এটুকু করে। বাদবাকি সবসময় তুমি দেখো, বুড়ি আর প্রকৃতি। বুড়ি যেনো কথা বলে, "কীগো কেমন আছ তোমরা সবাই? আমার মন ভালো নেই। বাঁশবাগানে চ্যাং মাছ নেই। খালে শাল মাছ নেই। প্যাঁচার ডাক শুনতে পাইনা। শেয়ালরা কেউ নেই।" ... ...
২০১৭ সালের ঐ রায় কিন্তু মাইনিং কোম্পানিগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছিল। ওই বিপুল ক্ষতিপূরণ উঠে এসেছিল কেবল উড়িষ্যার তিনটে জেলা থেকে, তাও শুধুমাত্র লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ আকরিক বেআইনি ভাবে নিষ্কাশনের জন্য। অন্য রাজ্যে অন্য আকরিকের জন্য এই হারে ক্ষতিপূরণ ধার্য হলে সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা পড়ত? এই রায় দেখিয়ে যারা ক্রমাগত বে আইনি খননে ব্যস্ত, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা যেত না? কিন্তু গেরুয়া ভারতে তা না করে অবাধ লুন্ঠনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। আর তা করা হচ্ছে ভীষণ তাড়াহুড়ো করে। যেন এই অতিমারির পর্দা সরে যাবার আগেই ঘোলা জলে মাছ ধরে ফেলতেই হবে। ... ...
এক শীর্ণকায়া ভদ্রমহিলা এসেছেন। তাঁর স্বামী করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাগর দত্ত হাসপাতালে মারা গেছেন। ভদ্রমহিলা ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় কোয়াক ডাক্তারের নিয়মিত ডাক পড়ে। তিনি এসে দু – বোতল, তিন – বোতল স্যালাইন চালান। টালির ঘরে টিম টিমে হলুদ বালব। ঘরের এধার থেকে ওধার নাইলনের দড়ি। তার থেকে স্যালাইনের বোতল ঝোলে। মহিলা ক্রমশ বিছানার সাথে মিশে যান। কোয়াক ভরসার বাণী শোনান, 'শরীরের ভেতর শুকিয়ে গেছে। স্যালাইন দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।' ... ...