এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • ভাঙা দিনের ঢেলা- ৭

    বিমোচন ভট্টাচার্য
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ | ২২৯৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আঠারো সালের স্বাধীনতা দিবসে গিয়েছিলাম বেলঘরিয়া ব্যক্তিগত কাজে। তৃণমুল সরকারে আসার পর স্বাধীনতা দিবস পালন করার "উৎসব" বেড়ে গেছে। প্রতিটি রাস্তায় ফ্লাগ তোলা হচ্ছে। মাইকে গান বাজছে। দেশাত্মবোধক গান। এই একটা দিনই মহেন্দ্র কাপুরের কণ্ঠ শোনা যায়। মেরে দেশ কি ধরতী সোনা উগলে, উগলে হীরে মোতি। তবে একটা গান কমন সব প্যান্ডেলে। অ্যায় মেরে বতন কে লোগোঁ। কি সুন্দর কণ্ঠস্বর ছিল লতাজীর!!

    আচ্ছা,এই অমর, কালজয়ী গানটির গীতিকার, সুরকার কারা জানেন? অনেকেই জানেন, যাঁরা জানেন না তাঁদের জন্যে। এই গানের গীতিকার হলেন প্রদীপ। আসল নাম প্রদীপ নয়। রামচন্দ্র নারায়নজী দ্বিবেদী। সেইদিন লিখেছিলাম কিশোরকুমার প্রথম সিনেমার জন্যে মাইকের সামনে সিনেমার গান করেন কোরাসে ১৯৪০ সালে বন্ধন ছবিতে। সেই গানের গীতিকার ছিলেন প্রদীপ।গানটি ছিল -' চল চল রে নওজোয়ান। দেশাত্মবোধক গান প্রায় সবই প্রদীপের লেখা। - আও বাচ্ছো তুমহে দিখায়ে, দে দি মুঝে আজাদী বিনা খর্গ বিনা ঢাল। কিসমত ছবিতে তেতাল্লিশ সালে একটি গান লেখেন - আজ হিমালয় কি চোটি সে ফির হামনে লালকারা হ্যায়/ দুর হটো অ্যায় দুনিয়াবালো হিন্দুস্তাঁ হামারা হ্যায়। কিসমত ছবি মুক্তি পাওয়ার পরই প্রদীপ স্যারকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে হয়। বৃটিশ সরকারের কোপে পড়েন তিনি। অ্যায় মেরে বতনকে লোগোঁ গানটির গীতিকারও সেই প্রদীপ।

    রামচন্দ্র নরহর চিতলকর। গান গাইতেন চিতলকর নামে। সুর দিতেন সি রামচন্দ্র নামে। অ্যায়ে মেরে বতন কে লোগো, গানটির সুরকার সি রামচন্দ্র। এক সময়কার হিন্দী ছবির প্রথমসারির সঙ্গীতকার ছিলেন সি রামচন্দ্র। আনারকলি ছবির লতাজীর গাওয়া " ইয়ে জিন্দেগী উসিকি হ্যায়"। হিন্দী সিনেমার অমর গান। সি রামচন্দ্র সাহেবের সুর।। - " মেরে পিয়া গয়ে রেঙ্গুন, শাম ঢলে খিড়কি তলে তুম সিটি বাজানা ছোড় দো, পরছাইয়াঁ ছবিতে লতাজীকে দিয়ে একটি গান করিয়েছিলেন "কাটতে হ্যায় দুখমেঁ ইয়ে দিন" শুনে দেখুন। কেন লিখলাম বুঝতে পারবেন। আমরা বলি যে লতাজিকে সবচেয়ে ভাল ব্যবহার করেছিলেন মদনমোহনজী(আমি ইনক্লুডেড)। কিন্তু তার আগেও সি রামচন্দ্র সাহেব অনবদ্য কিছু গান করিয়েছিলেন লতাজীকে দিয়ে। মদনমোহনজী প্রথম জীবনে সি রামচন্দ্রের সহকারীও ছিলেন।
    "আশা" ছবিতে কিশোরকুমার আর আশা ভোঁসলে কে দিয়ে গাইয়েছিলেন " ইনা মিনা ডিকা"!! আজও সমান জনপ্রিয় সেই গান। শুধু সুরকার, গীতিকার কারা? সে না জানলেও চলে। এই গানটি লিখেছিলেন সম্ভবত রাজেন্দ্রকিষাণ।দেব আনন্দের লিপে কিছু গান করেছিলেন নিজের সুরে। একটা মখমলি টাচ ছিল গলায়। বারিষ ছবিতে -' দানে দানে পে লিখখা হ্যায় খানেওয়ালে কা নাম' শুনে দেখুন আজই একবার।

    কাল প্রায় সব প্যান্ডেলে শুনলাম অ্যায় মেরে বতন কে লোগো। তুম খুব লাগালো নারা। লতাজীর গান। সবাই জানেন। কিন্তু প্রদীপজী না লিখলে, সি রামচন্দ্র সাহেব সুর না করলে হতো এই গান?

    বাড়ি ফিরেছি একটু রাতে। বেরিয়েছিলাম আবার আড্ডা মারতে। ফিরছি যখন তখন দেখি লকাই সব ছোট ফ্লাগগুলো এক জায়গায় জড় করছে। ওপর থেকে ছিঁড়ে পড়েছে যেগুলো। বাকীগুলো ছিঁড়ে নামাচ্ছে। কেউ দেখছে না। আলো ঝলমল আমাদের পাড়ায় একটু দুরেই হুল্লোড় করছে কিছু ছেলে। আমি লকাইকে বললুম - কেন জড় করছিস এগুলো? কাল বেচে দিবি বলে? লকাই ফুল লোডেড থাকে সব সময়। কালও ছিল। কেঁদে ফেললো লকাই। বললো - কাকু, কাল এগুলো পা দিয়ে পাড়িয়েই সবাই যাবে। আমার দেশের ফেলাগের একটা দাম নেই। লকাই থাকতে দেশের ফেলাগের অপমান হতে দেবে না। কাকু, দেখে নেবেন, কভভি নেহি।

    আমার তখন লকাইকে লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেওয়া আমার দেশের প্রধানমন্ত্রীদের চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক মনে হচ্ছিল ।

    আমার চেয়ে তো বটেই।

    মাইরি বলছি.....।


    ~~~~

    আমাদের পাড়ায় এক দাদা বৌদি থাকতেন। খুবই ভাল মানুষ ছিলেন দুজন৷ হঠাৎ এক রাত্রে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করে দাদা মারা গেলেন৷ হাসিখুশি বৌদি হয়ে গেলেন এক বিষাদ মুর্তি। কাল দেখা হল ব্যাঙ্কের সামনে৷ বয়েস বেড়ে গেছে অনেক৷ আমার চেয়ে বয়েসে কিছু ছোট কিন্তু আমি বৌদিই বলতাম। বললেন - তুমি তো জানো তোমার দাদা সবাইকে বিশ্বাস করতেন। কত মানুষকে যে টাকা ধার দিয়েছেন তার কোন হিসেব নেই৷ চলে যাবার পর ওর ডাইরি পড়ছিলাম। তোমার তো সমরদাকে মনে আছে? আমাদের পাড়ার সবচেয়ে উইটি মানুষ ছিলেন। তোমার দাদার খুব বন্ধুও ছিলেন তাও তো তুমি জানো৷ ওর ডাইরিতে দেখলাম যে সমরদা নিজের অসুখের সময় ওর কাছে দু বারে দশ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল৷ দ্বিতীয়বার চার হাজার ধার নেবার দুদিন পর সমরদা মারা যায়৷ ও লিখছে - সমর মারা যাবার পর ওই টাকা পাবই না জানতাম। আমি আর সমর ছাড়া তো কেউই জানতো না ব্যাপারটা। সমর মারা যাবার পর প্রায় এক বছর পর সোমার( ওঁদের মেয়ে) বিয়ে স্থির হল৷ বিয়ের জোগাড় যন্তর করছি। একদিন কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি ওর ছোটভাই অমর। আমার পাশে বসে ঠিক দশ হাজার টাকা পকেট থেকে বের করে বললো - মেজদা মারা যাবার আগে তোমার কাছে তোমার কাছে দশ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল চিকিৎসার জন্যে৷ এতদিন জোগাড় করতে পারি নি। এখন তোমার মেয়ের বিয়ে। টাকাটা নাও৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম - আর কারুর থেকে ধার করে আমায় দিচ্ছিস না তো? ও হেসে বললো না - মেজদা, বলেছিল পারলে ওর টাকাটা দিয়ে দিস৷ আমি মনে হয় আর সময় পাবো না৷ এতদিন পারি নি। আজ পারলাম। ও চলে যাবার পর অনেকদিন পর কেঁদে ফেলেছিলাম আমি।সমরকে
    হিংসেও করছিলাম। এমন ভাই সবাই পায় না।
    বৌদি থামলে অমরদার মুখটা মনে পড়লো আমার। কালার দোকানে চা খাচ্ছিল কাল। কথাও বলছিল আমার সাথে।

    এ সময়টা এমনিতেই বিষন্নকাল। তবু রোদ্দুরের তেজ কমেছে৷ বৌদি চলে গেলেন। আমি ব্যাঙ্কে ঢুকলাম।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ | ২২৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন