ওরা থাকাকালীন শেষের দিকে প্রায় প্রতিরাতে শোনা যেত চেঁচামেচি। ওর বউয়ের অভিশাপ, মেয়ের অভিযোগ, কান্না। সেই সব অসুখী উচ্চারণে বাইরের স্ট্রিটল্যাম্পের পান্ডুর আলোয় রাত গ্রাউল করে, শ্বাপদের মত। মিগুয়েলের বিরুদ্ধে খুব সম্ভবতঃ এই পৃথিবীর সব আক্রোশ জমা হয়ে আছে তাদের। একসময়ে ভালো না বাসলে এই রকম ঘেন্নাও করা যায়না। ... ...
আর দেখুন, রবীন মণ্ডল তো কলকাতার লোক কেনে নি। কিনেছে দিল্লী আর মুম্বাইয়ের বায়াররা। লাস্ট ফোর-ফাইভ ইয়ার্স, দে আর বায়িং টু বিল্ড আপ দেয়ার স্টক। এরপর কী হবে? মার্কেটে যা পড়ে আছে, ওরাই কিনে নেবে - দরকার হলে, বেশী দামে হলেও। দেন, দে উইল ক্রিয়েট আ ডিমান্ড, আ ক্রাইসিস - প্রাইস চড়চড় করে বাড়বে। দিস হ্যাপেনড উইথ সুজা অ্যান্ড টেক মাই ওয়ার্ডস, দ্য সেম ইজ গোয়িং টু হ্যাপেন উইথ রবীন মণ্ডল। বেশ কথা। শাঁসালো কালেক্টর কদ্দূর সহমত হলেন, বলতে পারি না। আমার শুধু মনে পড়ে গেল, রবীন মণ্ডল চেয়েছিলেন, তাঁর ছবি দেখে দর্শক যেন দর্পণের মুখোমুখি হন। কে সেই দর্শক? দর্পণের মুখোমুখি হয়ে ডিজাইনার হেয়ার-সালোঁ থেকে ছেঁটে আসা চুলটুকু গুছিয়ে নেওয়া বাদে সেই ধনী মানুষটি আর কী করবেন? ... ...
ব্রজঠাকুর তো ঈশ্বরচিন্তায় ডুবে থাকেন। সামান্য জমি জিরেত। কিছু ফলের গাছ। দোকানটা চালায় ভাগ্নে মোহন, আর সংসার চালায় মোহনের বিধবা মা শান্তি। শান্তিবালা আর ছেলে মোহন, বড়ো ভালো মানুষ ওরা। তবে এও ঠিক কোন অকূলে ভেসে যেতো যদি ব্রজগোপাল ঠাঁই না দিতো। তা ব্রজঠাকুরেরও তো বয়স হল। কে দেখে সংসার? হাঁপানি আর ভগবানের চিন্তা -এই নিয়েই জীবন। ব্রজঠাকুর বলেন তাঁর অলৌকিক দর্শনের কথা, চুপচাপ শুনে যান শান্তি। তাঁর মাথার উপর ছাদ। ছেলেটার খাওয়া দাওয়ার কষ্ট নেই। ব্রজঠাকুর বেলাবেলি খেয়ে শুয়ে পড়েন। বলেন আমি যোগনিদ্রা দেই। তো বেশ। দুপুরে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে বাড়ী আসে মোহন। মায়ে পোয়ে খায়। জীবনে এতো শান্তি কখনো পায় নি শান্তিবালা। স্বামী ঘর থেকে বার করে দিলে ছোটো ছেলে নিয়ে লোকের বাড়ী বাস। এর বাড়ী, তার বাড়ী। বারবার ঠাঁই বদল। আশ্রিতের জীবন। অনিশ্চয়। দুর্ভাবনা আর অপমান। ... ...
আচ্ছে দিনের বাজারে অবশ্য সবসময় উন্নয়নের হিসেব রাখা মুশকিল। কখন কোথা দিয়ে বিকাশ হয়ে যাবে, টেরটিও পাবেন না। ভাববেন আমের বাজারদর যাচাই করবেন, সরকারপক্ষ আপনার হাতে ধরিয়ে দেবে আমলকী ফলনের বার্ষিক হিসেব। যেমন ধরুন, কর্মসংস্থান। বিরোধীপক্ষ সরকারের কাছে জানতে চাইলেন গত চার বছরে কত নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। মোদীজি তার উত্তরে কতজন বছরে পাশ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, সি এ হচ্ছে তার হিসেব দিয়ে দিলেন। নাও, এবার ঠ্যালা সামলাও। তাই বলছি, হিসেব মেলানোর চেষ্টা না করাই ভালো। ... ...
আমরা ঝটপট শহুরে ক্লেদাক্ত জামাকাপড় ছেড়ে ফেলে টুপি-মোজা-জ্যাকেট সম্বলিত হয়ে চল্লুম রান্নাঘরের পানে, সেখানে তখন অপেক্ষা করছে গরমাগরম মোমো আর কফি। সেই সন্ধ্যায় আমরা দু'রকম জায়গার চারজন মানুষ গল্প করতে করতে কখন একাত্ম হয়ে গেছিলাম টের পাইনি। হুঁশ ফিরলো জীবন দা, যে কিনা এই হোমস্টের মালিক তার কথায়। 'এখানে অনেক গেস্ট আসেন, কিন্তু সেরকম কোনো সাইট সিইং, বাজার-মল, সিনেমা হল এসব কিচ্ছু না থাকায় ফিরে চলে যান একদিন বাদেই।' হায়রে Mall, Hall ও কোলাহল প্রেমী বাঙালী, প্রকৃতির কাছে এসেও প্রকৃতিকে না ছুঁয়ে সেই গতানুগতিক "এখানে দেখার কী আছে"? আমাদের এখানে একদিন থেকে পরদিন মূলখারকা চলে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তাগাথাং ঢুকেই আমরা ঠিক করে ফেলেছিলাম একদিনে আমাদের মন ভরবে না। ... ...
মতামত দিয়েছেন - যশোধরা রায়চৌধুরী, জয়া চৌধুরী, রৌহিন ব্যানার্জ্জি, অচল সিকি, সৌভিক ঘোষাল ... ...
আমি রবি ঠাকুরের কবিতাও গড়্ গড়্ করিয়া বলিয়া যাইতে পারি। যেমন, ছপ্পড় পর কৌঁয়া নাচে ও আর কত কাল একা থাকব। এরূপ ভীষণ স্মরণশক্তি আজিকালকার বাঙ্গালীদের মধ্যে দেখা যায় না। শুনিয়াছিলাম মহাপুরুষ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের এইরূপ ভীষণ স্মরণশক্তি ছিল। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মহাশয় বাঘের ন্যায় গর্জ্জন করিতে পারিতেন। এ কারণে লোকে তাঁহাকে বাঙ্গালার বাঘ বলিত। তিনি একবার অত্যাচারী বৃটিশ শাসকের বাড়িতে গিয়া এইরূপ ভয়ানক গর্জ্জন করিয়াছিলেন যে অত্যাচারী বৃটিশ শাসক ভয় পাইয়া তাঁহার নামে একটি অট্টালিকা লিখিয়া দেয়। সেই অট্টালিকাতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মহাশয় একটি কলেজ স্থাপন করেন। সেই কলেজ অধুনা আশুতোষ কলেজ নামে খ্যাত। এইরূপ আরো বহু ঘটনার কথা আমি নানা দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থে পড়িয়াছি। এইভাবে নানা দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের পর গ্রন্থ পড়িতে পড়িতে আমি বর্ত্তমানে একজন কেও-কেটা হইয়াছি। আমার সহিত এখন আর কেহই পাল্লা টানিতে পারিবে না। ... ...
মনোনকে হোক বা যাই হোক ওপরে যেতেই হবে, ব্যাগ নিতে হবে, আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করত হবে। ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম। ওপরের ল্যান্ডিংএ পৌঁছনোর আগেই মনে হল সবাই সরে গেল, সামনের ঘরের দরজাটা আলতো করে বন্ধ হয়ে গেল। ঘরে ঢুকে তাতামির ওপর শুয়ে পড়লাম, ঘড়িতে সকাল ছটার এলার্ম দিয়ে রাখলাম। আশ্চর্যের ব্যাপার এত আতঙ্কের মধ্যেও ঘুমিয়েও পড়লাম। সকাল হল, বাইরে বের হয়ে গ্রামের একটি লোককেও দেখলাম না। বাস ঠিক সাতটায় এল। গতকালেরই চালক, সে যেন আমাকে দেখে আশ্চর্য হল না, হেসে বলল, ‘সুপ্রভাত’। ... ...
কবে থেকে মামা ফকিরের এই কেরামতি , গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক বৃদ্ধ মানুষটি জানান, যেদিন নোয়াখালিতে বাবুজি মহাত্মা গান্ধী আসেন আর মালগাড়ী কামরাভর্তি করে মরা মানুষ এনে ভৈরবের মেঘনা নদীতে ফেলে দেওয়ার খবর বাতাসে উড়তে উড়তে এই গ্রাম পর্যন্ত এসে পোঁছেছিল সেদিন কাকডাকা ভোরে মামা ফকির প্রথম আগুন আগুন! বলে চিৎকার করে। তার দৃষ্টি ছিল রায়বাড়ি বরাবর। গ্রামবাসী পরদিন ভোরে অবাক বিস্ময়ে দেখে রায়বাড়ির উত্তরাধিকার বাবু মহেন্দ্র নারায়ণ রায়, (এমএ ডিস্টিংশন, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)-এর রক্তাক্ত দেহ তুলসিতলায় পড়ে আছে আর নাটমণ্ডপ সিন্দুক ভর্তি কাঁসার বাসন-কোসন, লক্ষনৌ থেকে আনা সেতার সব সুসজ্জিত রেখে তার পরিবারটি রাতের অন্ধকারে ভারত পালিয়েছে। ... ...
প্রতিবারই এটিএম থেকে টাকা তোলার পর আচমকাই নিজে থেকে কিছুটা সতর্ক হয়ে যায় সুজয়। জায়গাটা এমনিতে দিনমানে জমজমাট বেশ কয়েকটা ব্যাঙ্ক ও তাদের এটিএম রয়েছে। সামনে অনেকটা পার্কিঙ এর জায়গা। ব্যাঙ্ক গুলো ছাড়াও বেশ কিছু বীমা কোম্পানি, শেয়ার কোম্পানির অফিস, মোবাইলের ঝকঝকে দোকান এমনকি ভালো রেস্তোরাঁও রয়েছে এখানে। কিন্তু সুজয়ের টাকা তোলার সময়টায় জায়গাটা বড় শুনশান হয়ে যায়। অফিস থেকে ফেরার পথে এখানে গাড়ি থামিয়ে টাকা তোলার সময় পার্কিং এ একটাও গাড়ি থাকে না। কচ্চিত একটা দুটো এটিএমে নড়বড়ে সিক্যুরিটি গার্ড থাকে, তারা গরমের দিনে এটিএমের মধ্যেই টুলে বসে ঝিমোয়। খুব একটা রাত্তির নয় যদিও, শহরে রাত সাড়ে ন’টা মানে সন্ধ্যাই। বাজার এলাকা এইসময়ে জমজমাট। এদিকের অফিস পাড়া যেন বড় বেশি ফাঁকা। ... ...
ছুটতে ছুটতেই দারিয়ানাসু লুকোনো দরজার দূরত্ব মনে মনে মেপে নেয়, মনে মনেই একবার হাসে। নিশ্চিন্ত হবার হাসি, পেছনে ছোটা ঘোড়সওয়ারদের বোকা বানানোর হাসি। আরও পিছনে হৈ-হৈ করতে থাকা লোকগুলোকে এখন দেখা যাচ্ছে না, টিলার আড়ালে হারিয়ে গেছে। ঘোড়সওয়ারদেরও দারিয়ানাসু আগেই বোকা বানিয়ে দিতে পারত, হরিণের মতো ছুটতে পারে সে, কিন্তু পিঠের দামি বোঝাটা ফেলে দিতে চায়নি। অবশ্য তাতে কিছু ক্ষতি হয় নি তার, আর বিশবার শ্বাস নিতে-না-নিতেই সে পৌঁছে যাবে লুকোনো গোল দরজার পাশে। ব্যাস, তারপর একটা ছোট্ট লাফ, তারপর দু’পলকে দরজার ফাঁকটুকু বুজে যাবে। হাঃ হাঃ হাঃ, ঘোড়সওয়ারগুলো বুঝতেই পারবে না কোথায় ভ্যানিস হল তাদের শিকার। ছাউনিতে গিয়ে আষাঢ়ে গল্প ফাঁদবে অন্যদের কাছে, বলবে ভুতুড়ে মানুষের কথা, যাদের দেখা যায় কিন্তু ধরা যায় না। ... ...
তিনদিন হাঁটবার পর, এমনস্থানে পৌঁছনোর কথা, যেখানে খচ্চরের পক্ষেও রাত্রিবাস সম্ভব নয়। অতএব, ওই প্রচন্ড শীতকে মোকাবিলা করবার মতন শীতবস্ত্র আমাদের সঙ্গে রাখতেই হবে। মোটের ওপর এইসমস্ত বিষয়, এবং, এর সাথে সাথে, কিছু হাঁটবার, বিশ্রাম নেওয়ার, ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়ার ব্যাপারে অবগত হওয়ার পওকে উনিশে অক্টোবর দশমীর সকালে, আরম্ভ হলো, আমাদের রুপিন পাস্ ট্রেক। এবং, ওই তখন থেকেই, সভ্যতার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক শেষ! ... ...
এ বড় সুখের সময় নয়। ঘাড়ের উপর এনআরসি, মাথার উপর ক্যা। আসামে বাংলা কোনঠাসা, উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। কাশ্মীর এখনও অবরুদ্ধ, নাগাল্যান্ডে বুটের শব্দ। এখনও পর্যন্ত ১১ টি রাজ্য এনপিআর মানবেনা জানিয়েছে, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার অনমনীয়। দেশভাগের পর গত সত্তর বছরে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় ইউনিয়নের সামনে এত বড় সংকট আর আসেনি। এ ঠিক উৎসবের সময় নয়। সেই জন্যই এ সময় উৎসবেরও। রাষ্ট্র যখন পিটিয়ে সমস্ত বহুত্বকে সমতল করে দিতে চায়, তখনই তো সময় বহুত্বকে উদযাপন করার। রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন কিচ্ছু বদলাতে পারেনা দেখিয়ে দেবার। সংকটের মধ্যেই জন্ম হয় নতুন উচ্চারণের, স্ফুরণ হয় নতুন শব্দ, নতুন চিৎকারের, নতুন সৃজনের। এ সময় উৎসবেরও। উৎসব সংখ্যার। ... ...
ফোন করতে যাবে ঠিক সেই সময়ে ধড়মড় করে উঠে বসলো কাক ভিজে হওয়া চিমসে একটা লোক। সামনের লুকিং গ্লাসে ঠিক মতো মুখটাও দেখতে পেল না বল্টু। গাড়ি বুকিং হয়েছে খাল পাড় পর্যন্ত। “দাদা একদম ভিজে গেছেন। আমার কাছে একটা পরিষ্কার তোয়ালে আছে। একটু মুছে নেবেন?” বল্টুর কোন কথার উত্তর দেয় না লোকটা। বল্টু নিজেও কোন কথা বাড়ায় না। একেই অনেক রাত। চারপাশে গাড়ির সংখ্যা কম। নেশা-টেশা করে আছে কিনা সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। যাক তার চেয়ে তার নতুন গাড়ির সিট ভিজুক। কিছুক্ষণ পরে শুধু হাওয়ার মতো ফিসফিস করে লোকটা বলে “আপনার বইটা একটু দেখতে পারি?” বল্টুর মনেই ছিল না তার সিটের পাশেই রাখা বই। ‘কলকাতার গোলকধাঁধা’। কিন্তু এই অন্ধকারে বৃষ্টি আর বিদ্যুতের মাঝে লোকটা বইটা দেখতে পেল কী করে? ... ...
যে লোকালয়ে তোমার বাস, গ্রামে বা নগরে, যেখানে তোমার সামাজিক পরিচিতি বিদ্যমান, সেইখানে তুমি পিঞ্জরাবদ্ধ শের। অনিশ্চয়তা বিহীন সেই কৌমজীবনে তুমি আবাল্য অভ্যস্ত। অতএব তোমার হারাইবার ভয় নাই। চিন্তা নাই। এই চিন্তার অভাব তোমার পরিধি নির্ণয় করে, তোমাকে সীমার মাঝে বাঁধিয়া ফেলে, ক্রমে তুমি অসীমকে ভুলিয়া যাও, নিজেকে ক্ষুদ্র জ্ঞান করিতে করিতে জন্মসংসারের নাগপাশে আবদ্ধ হইয়া গোলকধাঁধায় ঘুরিয়া মর। মুক্তির স্বাদ যে ভুলিয়াছে, মোক্ষ তাহার রুচিবে কেমনে? ... ...
বাঙালি মাত্র বিদেশে গেলেও দেশের খাবার খোঁজে। দিল্লী স্টেশনের বাইরে বাংলা সাইনবোর্ড যারা দেখেছেন তারা জানেন। মালিক হতে পারে রাজস্থানি, দুটো বাঙালিকে কাজে রেখে দিব্বি দু পয়সা করে খাচ্ছে। আমিও এতে দোষের কিছু দেখিনা। কথাতেই বলে, আপ রুচি খানা। যা পছন্দ হবে খাও, কে কি বলবে হ্যা ! তো, ওই গাইডগিরি করার সময়, কানে কানে ফিসফিস করে সাদেক মিয়ার হোটেলের (মানে ওই, রেস্টুরেন্ট, আমরা ওটাকেই হোটেল বলি) কথা বলে দিতুম। এই সাদেক মিয়ার কথা আগেও বলেছি, এনার মাইয়ারে আমি বাংলা পড়ানোর নাম করে গল্পগুজব করতুম হফতায় দুদিন। টুরিস্টদের বলতুম, দেশের কথা মনে পড়ে যাবে, ফেরার টিকেট দু দিন এগিয়ে আনতে হবে, এতো ভালো এর খাবার। ... ...
১৯৯৫ সাল নাগাদ শুরু হলো চরম উত্তেজক অধ্যায় যাকে ভালো বাংলায় ক্লাইম্যাক্স বলে। সেপ্টেম্বরে গণেশ দুধ খেয়ে জানালেন আর দেরি নেই। অক্টোবরে ডিডিএলজে মুক্তি পেলো, আর ডিসেম্বরে পুরুলিয়ায় ঈশ্বর পুষ্পকরথ থেকে অস্ত্রবৃষ্টি করলেন। অন্যান্য অস্ত্রের সাথে ইউরেনিয়ামে রাঙানো একটা জাঙিয়াও পড়েছিলো, তার রং বলার জন্য একটি টক শোয়ের আয়োজন হয়। সেই লাইভ অনুষ্ঠানে সমস্ত জাতি গলার শির ফুলিয়ে বলে "রং দে মোহে গেরুয়া"। সমগ্র জাতি জাঙিয়া পরতে শুরু করে তাই ঈশ্বরকে উলঙ্গ হতে হয়। ঈশ্বর জাঙিয়াহীন দেখে দ্যাবাপৃথিবী একত্র হয়ে এক অপূর্ব আলখাল্লা রচনা করে, যার সুতো ইতালির আর বোতাম প্যালেস্টাইন থেকে আনা। ... ...
সাধারণভাবে আমরা জানি পদার্থের স্ট্যাটাস বা অবস্থা তিন প্রকার। কঠিন তরল এবং বায়বীয়। কিন্তু মানুষের স্ট্যাটাসের সংখ্যা অসংখ্য। এই বিচিত্র দুনিয়ায় বিচিত্র স্ট্যাটাসের উৎপত্তি হচ্ছে প্রতিদিন। ফেসবুকের কল্যাণে সেই স্ট্যটাসগুলো মনের কৃষ্ণগহবর থেকে বেরিয়েআসছে নির্দ্বিধায়। এই ফেসবুক স্ট্যটাস নিয়ে একটি গবেষণা করা যাক। কথায় আছে যার স্ট্যাটাস নাই তার কিছুই নাই। আবার বাংলা ছবির ডায়লগের মত ডায়লগ আছে, চৌধুরী সাহেব আমার ঘর নাই,বাড়ি নাই, কিন্তু স্ট্যাটাস আছে। এখন আপনার মেয়ে বিয়ে দিবেন কি না বলেন? ... ...
আমি যখন অষ্টম বা নবম শ্রেণীর ছাত্র তখন আমাদের গ্রামে প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজো হয়। আমাদের কাজ মূলত: ছিল কর্মকর্তাদের ফরমাশ খাটা - বাজারের জিনিসপত্র বয়ে আন রে, মণ্ডপঘর পরিষ্কার কর রে, আঙিনা ঝাঁট দে রে ইত্যাদি । এতে ঠিক পুজোর আমেজ ছিল না । মনে এই ভাব জাগতো, "পুজো তো বড়দের ব্যাপার। আমাদের কি?" তবে ওই দূর্গাপুজোর দুটো ব্যাপার মনে আছে এখনো । এক, পদ্মফুল আনার গল্প । দুই কাকুর সাথে আমরা কমবয়েসী দুজন গিয়েছিলাম ধোয়া চাদর নিয়ে পদ্ম তুলতে । চাদরে পোটলা বেঁধে ফুল ভর্তি করে নিয়ে এসেছিলাম। আর মনে আছে আমার এক পিসতুতো বোন, নাম ছিল ডলি, প্যান্ডেলের সামনে আরতি নেচে আরতি করেছিল। দুটো পদ্ম ফুলের মধ্যেকার পদ্মচাকি ফেলে দিলে একটা ঝুমকোর মতো দেখায়। ওর সাজগোজ হয়ে যাবার পর দুটো পদ্মের ঝুমকো ও কনুই-এর ওপরে পদ্ম দিয়ে একটা গয়নার মতো বেঁধে দিয়েছিলাম। ... ...
নদীতে মৎস্য শিকার, অন্ধকারে নদীজলে টর্চের আলো ফেলে মাছ ধরার সে এক অদ্ভুত কৌশল। টর্চের নীলাভ আলো মাছের চোখে পড়লে জলেও খালবিলে মাছ স্থির হয়ে যায়। নড়তে চড়তেও পারে না আর। তখন ঝোপ বুঝে কোপ মারলেই হলো। কেউ কেউ তো তলোয়ারের কোপ মেরেই মাছটাকে করে ফেলে দু'টুকরা, নদীজলে রক্তারক্তি কাণ্ড। শশাঙ্ক বেহেরা অতোটা আবার নিষ্ঠুর নয়। টর্চের ফোকাস মাছের উপর ফেলে রেখে অন্য হাতে মাছটাকে খপ করে তুলে নেয় সে। তার যে জীবন্ত ধরাতেই আনন্দ। এই কিছুদিন পূর্বেও সুবর্ণারেখা নদীতে ইলিশ উঠত। খান্দারপাড়া গ্রামের ঝড়েশ্বর পানী আর মাধব পানী দুই ভাই, নদীবুকে পাটায় দাঁড়িয়ে দিবারাত্রি অষ্টপ্রহর জাল ফেলত। দিনে তাদের গড়ে বত্রিশটা ইলিশেরও রেকর্ড আছে। এখন সে দিনকাল আর নাই। জিজ্ঞাসা করলে তারাও তেরচা করে বলে "আঘু তভু অনেক ইলশা উঠতায় সুবনরেখায়। অখন সে ইলশা কুবে আছে জানু?কলকাতায়!" ... ...