পবিত্র বোধ হয় আবার কিছু বলবার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সুভাষ নজরুলের দিকে তাকিয়ে বলল, নজরুল সাহেব, আজ সকালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে আপনি যখন কনফার্ম করলেন আপনিই নজরুল ইসলাম, আমি তখনই আপনাকে একটা প্রস্তাব দেব ভাবছিলাম। সেই জন্যেই আমি আপনার নবযুগের কথাটা তুলছিলাম। আপনারা তো এতক্ষণে শুনেইছেন, কয়েকমাস আগে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেবার বাসনায় আমি চিত্তরঞ্জন দাশ মশায়ের সঙ্গে দেখা করি। তিনি অতি স্নেহে আমাকে তাঁর সঙ্গী করতে রাজি হলেন। আমাকে তিনি প্রথম দিনেই দুটো কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন; এক, গৌড়ীয় বিদ্যায়তনের অধ্যক্ষতা, এবং দুই, বাংলায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রচারের দায়িত্ব। ওই যে স্টেট্স্ম্যানের মন্তব্যের যে-কথা পবিত্রবাবু বলছিলেন সেটা ওই প্রচারেরই একটা অংশবিশেষ। কিন্তু আমার বাসনা আছে, বাংলার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটা বাংলা দৈনিকপত্র বের করার। আমি ভাবছিলাম, এ ব্যাপারে যদি আপনার সক্রিয় সাহায্য পাওয়া যায়। ... ...
মেয়েদের নাম রাশিয়ান ও তুর্কিক, দুই ধরনের। কিন্তু পদবীটি হবে রাশিয়ান স্টাইলে স্বামী বা পিতার নাম অনুযায়ী ওভা অথবা এভা। যেমন গুলনারার পুরো নাম গুলনারা গালিমোভা। আর এক মন্ত্রী নাতালিয়া করজোভা! প্রায় তিরিশ বছর যিনি রাষ্ট্রপতির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন তাঁর নাম নুর সুলতান নজরবায়েভ। তাঁর এক মেয়ের নাম দিনারা নুরসুলতানোভনা নজরবায়েভা – তিনি বিলিওনেয়ার। নতুন রাজধানীর নাম নুর সুলতান। যেমনটি সচরাচর হয়ে থাকে! ... ...
অনেক পুরনো এই মস্কো শহরের পথঘাট সুপ্রশস্ত। লন্ডন-প্যারিস-ভিয়েনা-রোমের মত সেখানে কোনো সরু বা কানা গলি নেই। তার কারণ জানতে বেশিদূর যেতে হয় না। স্তালিন (আক্ষরিক অর্থে স্টিল বা লৌহমানব) যানবাহন ও জনসাধারণের সুবিধার্থে সেই হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসের সঙ্গে কোনো আপোষ করতে চাননি। যেখানে বাধা, সেখানেই বুলডোজার চালিয়ে আপন পথ পরিষ্কার করেছেন, আপন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। অর্থে দ্বিবিধ। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি রুমানিয়ার চাউসেস্কু সেপথেই চলে বুখারেস্টকে আলোকিত করতে চেয়েছিলেন। নির্মম হাতে প্রাচীন শহরকে নির্মূল করে কংক্রিট নগরী গড়ে তোলার পথে অনেকটাই এগিয়েছিলেন। অকালে তাঁর নিধন না হলে বুখারেস্ট শহরের ইতিহাসকে সমূলে উৎপাটন করে সারিবদ্ধ দশতলা ফ্ল্যাট বাড়ি বানিয়ে দেওয়াটা অসম্ভব হত না। ... ...
অন্ত্যেষ্টিশিল্পের আলোচনা এখানেই শেষ। অনেক দেশ এবং অনেক সময়কালের কাহিনী বাকী রইল। আশা করি সেগুলি তুলে ধরার জন্য কখনও এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় খণ্ড নিয়ে ফিরে আসব। যাবার আগে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই- কেন এই ধারাবাহিক শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন সমাজের সামাজিক গঠন, তাদের ভিতরকার উঁচু-নিচুর শ্রেণীভেদ, লিঙ্গবৈষম্য, সাজপোশাক, খাদ্যাভ্যাস এগুলো তাদের সমাধি ও অন্যান্য বিদায়-উপহার দেখে বোঝা যায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বনাম গোষ্ঠীবোধ- কোন সমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটারও আভাস পাওয়া যায়। পরলোক বিষয়টিকে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ কীভাবে কল্পনা করে এসেছে তার ধারণা পাওয়া যায়। বোঝা যায় সমাজগুলির শৈল্পিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন। পাওয়া যায় সামরিক অভিযানের কাহিনী, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিষয়ে অনেক তথ্য। পাওয়া যায় কিছু প্রেমকাহিনী, কিছু সমাধিলেখ, কিছু কবিতা। সামগ্রিকভাবে মানবসভ্যতার লিপিবদ্ধ ইতিহাসের অভাবকে অনেকটাই পুষিয়ে দেয়- অন্ত্যেষ্টিশিল্প। ... ...
পলিটিক্স্ তো এক-একজনের এক-এক রকমের হতে পারে। যেমন ধরুন আপনি নিজেই ন্যাশনাল কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ হয়েছেন। তার মানে তো এই নয় যে, সরকারী স্কুল-কলেজ যারা এখনও ছাড়তে রাজি নয় আপনি তাদের বিরোধী। মূল একটা ঐকমত্য থাকলেই সংবাদপত্রে এক সঙ্গে কাজ করা যায়, বলে মুজফ্ফর, সেখানেই আমাদের প্রগতিশীলতা। নানা মতকে একটা প্ল্যাটফর্মে এনে আলোচনায় কোন আপত্তি নেই আমাদের। নিজেদের একটা মত থাকতেই পারে, কিন্তু বিরুদ্ধ মতকেও যথেষ্ট শ্রদ্ধা দেখিয়ে সেই মত কাগজে ছাপতে কোন আপত্তি হবে না আমাদের। তবে হ্যাঁ, কৃষক শ্রমিক অভুক্ত অর্ধভুক্তদের কথা আমরা লিখব, লিখব পূর্ণ স্বাধীনতার কথা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভয় পাব না। সংবাদপত্র কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের মুখপত্র এ কথা আমরা বিশ্বাস করি না, কিন্তু তাঁবেদারও নয় কারো। ... ...
তিনি লিখছেন, 'মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী / আর হাতে রণতূর্য'। সত্যই তাই । প্রেম প্রকৃতি বিক্ষোভ বিদ্রোহ বিপ্লব এসেছে তাঁর লেখায়। আবার একই সঙ্গে এসেছে বৈপরীত্যমূলকভাবে ঈশ্বরে অনাস্থা ও আস্থা । কেউ বলতে পারেন, ঈশ্বর নয়, ঈশ্বরের নামে করে খাওয়া ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তাঁর এই জেহাদ। 'গ্রাম উঠে আসে নাগরিক স্থাপত্য নিয়ে তাঁর লেখায়। খনি অঞ্চলের মানুষ। খনন করেন মানুষের মন, রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, দল—শ্রমিকের উদ্যমে, কৃষকের আবেগে, বুদ্ধিজীবীর পাণ্ডিত্যে, আবহমান বাংলা কবিতার সুরে। ... ...
কাকিমা বলছিল, আরে! শুকদেবের হাতেও মোটা কাঠ ছিল, কুড়ুলও ছিল। ঝামেলা শুরু হবার আগে সে কাঠ কাটছিল, চাইলেই সে সেগুলো ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু সে তা না করে মাথা ঠান্ডা রেখে শুধু ঢালের মতো করে মোটা কাঠ দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে গেছে। নাহলে রক্তগঙ্গা দ্বিগুণ হতো, শানু! ... ...
প্রথমত একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে জেনে রাখা দরকার যে বিভিন্ন অঞ্চলে চাষবাস নিয়ে যে কাজ হচ্ছে তার মধ্যে খুব নতুন কিছু নেই। একার্থে মূলত আমাদের কার্যপদ্ধতি, অতীতের নানা কৃষিজ্ঞানকে স্মরণ ও অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। আবার বর্তমান সময়ের নিরীখে যাকে বলে ইম্প্রোভাইজেশন, তা করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফসলচক্র নিয়ে ভাবনা ও পরীক্ষানিরীক্ষা৷ জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে ফসল নির্বাচন, রোপণের সময় পরিবর্তন করা, যে অঞ্চলে এই অনুশীলন হারিয়ে গেছে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। আবার পুরানো অভিজ্ঞানের অনুশীলনের সঙ্গে প্রয়োজনমতো বর্তমানের কিছু প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা। তবে "খুব নতুন কিছু নেই" বলে দিলে মনে হতে পারে "তাহলে এ আর এমন কী?" ... ...
জামুকে দেখলে টুনুর মনে হয় ইতিহাস বইয়ের খানিক টুকরো যেন হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। কতরকম অজানা সব গল্প যে বলে। সরলা নেমে দেখেন ছেলে বেশ পরিস্কার শার্ট প্যান্ট পরে ভব্যিযুক্ত হয়ে এসেছে। খাবার বেড়ে সামনে বসে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলেন এও আজ একটু অন্যমনস্ক। হুঁ, হাঞ্জি আর ঘাড় নেড়েই কাজ চালাচ্ছে। ওর হিন্দিবাংলা মেশানো তড়বড়ে কথা আজ নেই। খেয়ে হাত মুখ ধুয়ে, থালা গেলাস মেজে ধুয়ে রেখে কিছু কাজ আছে কিনা জিগ্যেস করে তারপর ইতস্তত ভাবে জানায় ওর একটা আর্জি আছে মা’জির কাছে। ঢোলা শার্টের পকেটে হাত গলিয়ে তুলে আনে একটা কাগজে মোড়া পাতলা কি যেন। ঐ জিনিষটা সে সরলার কাছে রেখে যেতে চায়, ওর থাকার কোন ঠিক নেই, এটা আরেকজনের জিম্মা করা জিনিষ, চুরি হয়ে গেলে উপরওলার কাছে অপরাধী হয়ে যাবে জামু। সরলা বলেন যার জিনিষ তাকেই দিয়ে দিলে তো হয়। জামু নাকি জানেই না সে মানুষ কোথায়। আবার ওর মুখ থমথমে হয়ে যায়, চোখদুটো কেমন অচেনা। ... ...
“গ্রিগরি, এতক্ষণ আপনি আমি দু’জনেই প্রভূত রেড ওয়াইন পান করেছি। একটা ল্যাটিন প্রবাদ আছে – ভিনো ভেরিতাস। মদ্যে নিহিত আছে সত্য। তাই বলি, আমরা আফ্রিকাতে যাদের সঙ্গে কারবার করি, তাঁদের পূর্ণ সততা সম্বন্ধে সন্দিহান হওয়া স্বাভাবিক। সে সন্দেহ আমাদের আছে। যে ঋণ গ্রহীতাদের কথা বলছেন, নিজেরাও জানেন তাঁদের সততা বিবাদিত। তাঁরা এটাও জানেন যে আমরা ব্যাঙ্কাররা সেই একই সন্দেহ পোষণ করি। সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। তাই যে বৃহৎ খনিজ তেলের ডিলগুলির কথা আপনি ভাবছেন – যেমন এঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, কঙ্গো – সেখানে আমরা সম্যক সাবধানতা পূর্বক ঋণ দিয়ে থাকি। এক পয়সা মারা যায়নি। আমাদের রাশিয়ান অভিজ্ঞতা বলে আপনাদের দেশেও সেই একই সমস্যা। আপনাদের ব্যাবসায়িক কর্মকর্তারা আরমানি স্যুট পরে দারুণ আমেরিকান ইংরেজিতে বক্তিমা দিলেও আমাদের সন্দেহ দূরীভূত হয় না। সেটি প্রকাশ করলে আবার আপনারা ক্ষিপ্ত হন”। ... ...
কতক্ষণ লেগেছিল পৌঁছোতে? দু আড়াই ঘন্টা হবে। সে দেখিয়ে দিয়েই চলে গেল। আমি ব্যাগ কাঁধে দরজা খুললাম। দরজা খুলেই হাঁ হয়ে গেলাম। দেখি গাদাগাদি করে মানুষ ঘুমোনো। কেমন বলেন তো! যেদিকে একজনের মাথা সেইদিকে আরেক মানুষের পা। মানে অল্প জায়গায় বেশি মানুষ আঁটাতে গেলে যেমন ভাবে শুতে হয় তেমন। প্রায় দেড়শ লোক এক ঘরে। কত বড় ঘর! ছোট। ওইটা আসলে একখানা ফ্ল্যাট। এই আমাদের এখানে যেমন ফ্ল্যাট বাড়ি দেখেছেন সেই রকম। হাসব্যান্ড ওয়াইফ একটা কী দুটো বাচ্চা নিয়ে থাকার যে ফ্ল্যাটবাড়ির ঘর হয় সেইরকম। দুটো রুম। কিচেন। আর পায়খানা বাথরুম কটা? একটা। ... ...
আর আমি?– প্রশ্ন করে কাজি। তুমি? তুমিই খানিকটা আমার প্রেরণা বলতে পার। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতিতে যখন তুমি প্রথম কবিতা পাঠালে করাচি থেকে, আমি তখন সমিতির সহকারী সম্পাদক। তার আগে দুয়েকখানা চিঠিও তুমি লিখেছিলে। কিন্তু ক্ষমা নামে একটা কবিতা যখন পাঠালে, তা ছাপা হল। তোমার প্রথম ছাপা কবিতা। ছাপাবার সময় শুধু কবিতাটার নাম আমি বদলিয়ে দিয়েছিলাম, ক্ষমার বদলে মুক্তি। তুমি রাগ তো করলেই না, চিঠি লিখে ধন্যবাদ দিলে। ... ...
আমাদের দুটো গ্রাম। পাশাপাশি। দুটো জমি পেরোতে হয়। একটা চার বিঘা। আরেকটা তিনবিঘা। চার বিঘা এক সময় আমাদের ছিল, ফুটবল খেলার ম্যাচে বুট না থাকায় মার খাচ্ছে গ্রামের ফুটবল দল। অতএব বুট কিনতে চার বিঘা জমি বিক্রি করে দিলেন বাবা। এ-সব শোনা। মায়ের পতি নিন্দার আবশ্যিক উপাদান: উড়িয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিলে। এবং অবিস্মরণীয় উদ্ধৃতি: ঘর জ্বালানে পর ভালানে। ... ...
একদিন ক্ষুদিরাম মাস্টারমশাইএর পাঠশালায় পড়তে গেলাম। তিনি গাঁয়ের ভেতর শিব মন্দিরের গায়ে একটা চাতালে পড়ান। আমাদের বাড়ির কাছাকাছি সেটা। তার আগে হাতেখড়ি হল ক্ষুদুবাবুর কাছে। পিসি আর কাকু আমায় নিয়ে গিয়েছিল ওঁর বাড়ি। নিশ্চয়ই সেটা সরস্বতী পুজোর দিন। আমার ঠিক মনে নেই। ঠাকুমা পিসির হাতে সিধে পাঠাল। একটা পাথরের থালায় আতপ চাল, আনাজ আর ষোলো আনা পয়সা। কাকুর হাত ধরে গেছি। আমার বগলে শ্লেট, হাতে পেনসিল। এরপর ওঁর কাছে একদিন আসন বগলে পড়তে গেলাম গ্রামের ভেতরের শিবতলায়। মাস্টারমশাই যেন স্বয়ং যমদূত! সেই যমদূত যদি ভিক্টিমের জাগ্রত অবস্থায় হাতে ডাঙশের বদলে মার্বেল গুলি আর মণ্ডা-মিঠাই নিয়ে যমপুরীতে নিয়ে যাবার জন্য আসে, তাহলেও ছেলের দল নির্ঘাৎ মাটিতে পায়ের আঙুল পুঁতে দিয়ে শরীরটা শক্ত করে পিছন দিকে ঠেলুনি দিয়ে পরিত্রাহি চিৎকার ছাড়ত “আমি যাব না গো–ওওওও” বলে! ছেলেদের গাধা থেকে ঘোড়া বানাবার জন্য আর শাসনে রাখার জন্য অভিভাবকেরা সেই যমদূতসম “মাস্টামশায়”-এর কাছেই পাঠাতেন। ... ...
শান্তার কবিতার বই বেরোল দু’বছর পর। তখন কবিতা আর সায়নে যাপন যুগপৎ চলছে। বেদনা ও আকুতি প্রতিদিন চোখ ধুয়ে দিয়েছে তার। যাকে দেখতে চায় আর খোলা আকাশের নীচে গায়ে গা লাগিয়ে সময় কাবার করে দিতে চায় অজস্র কথায় – তাকে দেখা হয় না। শূন্যে মিলিয়ে গেছে যেন! নীরব ছটফটানিতে সে চুরমার হয়। সান্ত্বনা বলতে পত্র-পত্রিকায় পেয়ে যাওয়া সায়নদীপের লেখাগুলো। একদিকে একটা সর্বগ্রাসী প্রেম সে অন্তরে লালন করেছে। অন্যদিকে প্রতিটি সামাজিক, দেশজ, বৈদেশিক আর প্রাকৃতিক ঘটনার অভিঘাতে ছটফট করেছে একা। ... ...
আপনার ধন কেমন ভাবে নিবেশিত হবে তার স্ট্রাটেজি তৈরি করেছিলেন ফান্ডের দুই ডিরেক্টর – অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত মাইরন শোলস এবং রবার্ট মেরটন। নোবেল বিজেতারা আম জনতাকে জানালেন, নির্ভয়ে থাকুন। আমাদের নিবেশন কৌশলটি এমনই ফলপ্রসূ এবং অভ্রান্ত, যে কোনো ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক বিপর্যয় না ঘটলে আপনাদের অর্থ এবং তার মুনাফা সুনিশ্চিত থাকবে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী এ ধরণের ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক বিপর্যয় এক শতাব্দীতে একবার মাত্র ঘটতে পারে। চার বছর বাদে রাশিয়াতে প্রভূত লোকসান করে এল টি সি এম তাঁদের গ্রিনিচ কানেকটিকাটের অফিসে তালা দিলেন। ... ...
রাঢ়ের এই অঞ্চলের অতীতের ইতিহাস আমরা মঙ্গলকাব্যগুলোতে পাই। ... তারা কি দুর্যোধনের মত মারাত্মক? ব্যাপক সামাজিক ধ্বংস, হত্যালীলার নায়ক? মাহুদ্যা আর ভাঁড়ুদত্তের মধ্যে প্রথম জন কেমন যেন মাথা গরমের, আর দ্বিতীয় জন লোভী, কুচুটে। যারা ঝিল বোজাতে চায়, তারা ব্যাপকভাবে অন্ধকারের মানুষ এমনটা নয় কিন্তু! চরম ধ্বংসাত্মক মনোভাব এখানকার মানুষের তেমন নেই। উচ্চকিত মন্দ নেই, গড়পরতা ভাল, গড়পরতা মন্দ।” বলতে বলতে আচমকা হেসে ফেললেন তিনি। বললেন, “তোমরা যদি কখনও উপন্যাস লেখ, এই এলাকার পটভূমিতে মহৎ উপন্যাসের সাদা মানুষ কালো মানুষ নিয়ে মুশকিলে পড়বে। আপাদমস্তক “কালো” মানুষ বোধহয় আঁকতে পারবে না, যদি বাস্তব থেকে চরিত্র খোঁজো। আবার সব ভাল মানুষের পো যদি সেই লেখার চরিত্র হয়, তবে পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না নিশ্চিত। কৃত্রিমতার অভিযোগ উঠতে পারে কিন্তু! ... ...
একদিন নারায়ণ ফোন করে। "স্যার, ভাবতে পারবেন না এত মাছ হয়েছে! রান্নাপুজোর দিন থেকে মাছ বিক্রি শুরু করেছি। পাড়া প্রতিবেশী জানতে চাইছে এত মাছ হচ্ছে কীকরে? আপনি সুস্থ হয়ে আসুন৷ আমরা অপেক্ষা করবো। আপনাকে এক লাখ টাকা দেবো৷ আমার ক্ষেত খামার পুকুর সব সাজিয়ে দেবেন।" শুনি আর ভাবি, সোমদা বিভিন্ন ব্লকে কিষাণ কিষাণীদের জন্য যে ব্যবস্থা করে দেয়(কৃষি প্রশিক্ষণ, ফার্ম ডিজাইন) তাতে তাদের যা রোজগার হয় সোমদার বেতন তার চেয়েও কম। ... ...
১৯৯৭/৯৮ সালে ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়া (আমাদের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক) ডলার আর রুবলের বিনিময় মূল্যের একটি মান বেঁধে দিয়েছিল। এক ডলারের দাম ৫ আর ৭ রুবলের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে। যদি রুবলের দাম কমে, বাজার থেকে ডলার কিনে ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়া রুবলকে চাঙ্গা করবে। আর যদি রুবল শক্তিশালী হয়ে এক ডলারের বদলে ৫ নয়, ৪ রুবলের দিকে চলে যায়, বাজারে ডলার বিক্রি করে ব্যাঙ্ক রুবলের ভাও আবার পাঁচে নিয়ে আসবে। এর কেতাবি নাম ভাসমান গাঁটছড়া (ফ্লোটিং পেগ) বা ম্যানেজড পেগ। এই ভাবে রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রুবলের মূল্যরক্ষার শপথ নিলো। কাগজ-কলমে এই পদ্ধতি আগ মার্কা শুদ্ধ। কিন্তু এটির শক্তি নির্ধারিত হয় যেকোনো দেশের ডলারের ভাঁড়ারে সঞ্চিত ধন (ডলার) এবং দেয় সুদের হার অনুযায়ী। মাত্র ছ’ বছর আগে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড এইরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করে পাউন্ডের দাম ধরে রাখতে সম্যক ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাঁদের প্রতিরক্ষা প্রয়াস একদিনেই বিধ্বস্ত হয় – কালো বুধবার ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯২। এই জুয়োয় দান দিয়ে জর্জ সোরোস একদিনে এক বিলিয়ন ডলার লাভ করেন। ... ...
নব্বই সালের পর বিশ্ব রাজনীতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সে পরিবর্তনের আঘাত এত দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল যে বিশ্বের তাবড় বড় অনেক রাষ্ট্র ঝাপটে পড়েছে। অর্থনীতি মুচড়ে গেছে। রাষ্ট্রের সীমানা আর জনগণের নাগরিকত্ব বদলের সঙ্গে সঙ্গে দেশহারা হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। পুঁজিবাদ নিপাত যাক বলে লাল ঝাণ্ডার পাণ্ডারা আর ফান্ডা দেখাতে পারছে না। বিপ্লব হিমঘরে। নেতাদের চরিত্র পালটে সম্পূর্ণ বিপরীতে এসে ঠেকেছে। সমাজতন্ত্র ভাগাড়ে আর ধর্মনিরপেক্ষতার মরণ হয়েছে। গণতন্ত্র সেজে উঠেছে ভোগবাদী আভিজাত্যে। এর সঙ্গে ধম্মো ধম্মো বোল উঠেছে আকাশ বাতাস মাটিতে, নদীতে। আজকাল দেখি অনেকেই স্ত্রী সহবাস, স্বামী সহবাসের দোআ মুখস্থ করার পাশাপাশি হাগতে যাওয়ার দোআও মুখস্থ করে ফেলছে। মন্দিরা শঙ্খ বাজিয়ে তিন বেলা সাড়ম্বরে পূজা করছে। পাঁচ বেলা পড়ে নামাজ পড়ে কপাল ঘষে ঈমানী ছাপ বসাচ্ছে। তবে ধর্ম যত জোরে শোরে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, ঘরে ঘরে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে দাঁত শূলাচ্ছে তারচে বেশী জোরে নৈতিকতা পালিয়ে গেছে। মানুষ বেশি বেশি মুসলমান হয়েছে। বেশি বেশি হিন্দু হয়ে গেছে। ... ...