‘কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি’ গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ফ্রান্সে, অলিম্পিয়া প্রেস থেকে, ১৯৫৬ সালেই। আমেরিকায় মিলারের ‘ট্রপিক অফ ক্যান্সার’-এর ওপর দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে চলা অশ্লীলতার অভিযোগ তথা আইনি নিষেধাজ্ঞা ১৯৬৪-৬৫ নাগাদ উঠে যাবার পর ওঁর অন্যান্য বইয়ের সাথে এই উপন্যাসিকাটিও আমেরিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। প্রকাশক, গ্রোভ প্রেস। মিলারের ফোটোগ্রাফার-বন্ধু জর্জ ব্রাসেই ওঁর ‘হেনরি মিলার : দ্য প্যারিস ইয়ার্স’ বইতে জানিয়েছেন যে, মিলারের মতে (‘কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি’র) ‘টাইটল ইজ কমপ্লিটলি মিসলিডিং’। ... ...
গত তিন দশকে এমন মারাত্মক ভোট আর দেখেনি ত্রিপুরা। এরপরও ত্রিপুরায় বহু ভোট হয়েছে। অনেক ভোট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গীদের বন্দুকের নলের নিচে ভোট হতেও দেখেছে ত্রিপুরার মানুষ। ২০০০ সালে ত্রিপুরা স্বশাসিত জিলা পরিষদের ভোটে কিছু কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদীরা নিজেরাই ভোট করেছিল। ভোটের আগে সিপিএম প্রার্থীর পরিবারের লোকজনদের, এমনকি সিপিএম নেতাদের সেবার অপহরণ করেছিল জঙ্গীরা। কিন্তু এ ধরনের আতঙ্ক কায়েম হলেও তা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে নি। অন্য অংশে মানুষ প্রতিবাদী হয়ে নিজের মত নিজে প্রকাশ করেছিলেন। কখনো কখনো সিপিএমের দিকে ভোটে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা। তাও কিছু কিছু পকেটে। কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের এলাকায় জোর করিয়ে ভোট করিয়ে জয়ী হয়েছেন ত্রিপুরায়। কিন্তু রাজ্যের ইতিহাসে তারা কেউ একবারের বেশি স্থায়ী হন নি। পাঁচ বছর পরেই মানুষ তাদের বিদায় দিয়ে দিয়েছেন। ... ...
ভোটে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়ে মমতা আন্দোল শুরু করেছিলেন ১৯৯০ থেকেই। তবে তিনি ক্ষমতায় আসার পর পুরোনো সব রেকর্ড ভেঙে খান খান হয়ে গেল। পশ্চিম বঙ্গে অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, গুন্ডা এবং বিপুল অর্থ ছাড়া ভোটে লড়াই করা সম্ভব নয়। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কানে এসেছে, প্রমাণ করা সম্ভব নয়, চলতি ভোটে বিপুল টাকা ছড়িয়েছে এই রাজ্যে আসন বৃদ্ধিতে উৎসাহী একটি দল। সারা দেশে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিপরীতে আমরা দেখছি, নতুন এক ঝাঁক তরুণ নেতা উঠে আসছেন। কানাহাইয়া কুমার, উমর খালিদ, শহেলা রশিদ, জিগনেশ, হার্দিক। এরা কেজরিওয়াল পরবরতী প্রজন্ম। এইটুকুই যা আশার আলো। বাকিটা বড়ই অন্ধকার। ... ...
পোস্টাল অ্যাড্রেস যাই থাকুক, এ' রাস্তার নাম কিন্তু সদর স্ট্রীট। হা হা। অবাক হচ্ছেন? এই তো' লেখকের কাজ - স্থান কাল পাত্র নিয়ে খেলা করে করে পাঠককে ধন্দে ফেলে দেওয়া। ছোটোবেলা থেকেই কাজটিতে আমি পটু। বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলার স্বভাব বরাবরের; তার ওপর মানুষ, পশু, পাখি এমনকি জায়গার নাম বদলে দেওয়ার একটা ফেজও চলেছিল বহুদিন - আমিই এ' গলির নাম দিয়েছিলাম সদর স্ট্রীট।' -এই অবধি ব'লে কমলিকা সামন্ত কফিতে চুমুক ... ...
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ মনিটর হিসাবে, আক্টিভিস্ট হর্ষ মন্দার জানুয়ারিতে আসামের দুটি আটক শিবিরে যান। এই লেখাটি তাঁর অভিজ্ঞতার হাড়-হিম করা বিবরণ। প্রথম প্রকাশঃ ২৬ শে জুন, ২০১৮, দ্য স্ক্রোল। লেখক ও স্ক্রোলের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত। ... ...
দেশের সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচন। প্রত্যেক ভোটেই কিছু নতুন শব্দের জন্ম দেয়। তার কিছু টিকে যায়, বাকিটা হারিয়ে যায়। যেমন ২০১৪-এ ছিল সারদা, নারদা।এবারের ভোটে কতগুলো নতুন শব্দ বা বাক্যবন্ধ কানে আসছে।তার কয়েকটি এরকম। নকুলদানা, ঘুষপেটিয়া, চৌকিদার, এক্সপায়ারিবাবু, স্পিডব্রেকার দিদি, এ-স্যাট, নাকাতল্লাশি, জুমলা। দলবদলেরও একটা নতুন ঘটনা এবারে চোখে পড়ছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দফা ভোট কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে। কোচবিহারে এবার তৃণমূল প্রার্থী একসময়ে বামফ্রন্টের মন্ত্রী পরেশ অধিকারী। উল্টো দিকে বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক এই সেদিনও ছিলেন তৃণমূলের নেতা, এবারে বিজেপির প্রার্থী। আলিপুরদুয়ারেও ছবিও প্রায় এক। তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তির্কে একসময়ের বামফ্রন্টের দাপুটে নেতা, এবারে তৃণমূলের প্রার্থী। ... ...
ভারত-সরকার আয়োজিত 'দেশপ্রেমের গল্প লেখ' প্রতিযোগিতায় পরীক্ষার ফলাফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। আদিত্যনাথ ফার্স্ট হয়েছেন। একাই ৪০০ জঙ্গী মেরেছেন। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী অর্ণব গোস্বামী ও অন্যান্য ভারতীয় মিডিয়া। তাঁরা মেরেছেন ৩৫০। তৃতীয় স্থানে অমিত শাহ। সভাপতি হয়েও ২৫০ র উপরে উঠতে পারেননি। ওদিকে সাংসদ আলুওয়ালিয়া বলেছেন জঙ্গী মারতে যাওয়াই হয়নি, ফাঁকা মাঠে বোম ফেলে ব্রহ্মতেজ দেখানো হয়েছে মাত্র। তিনি পেয়েছেন সান্ত্বনা পুরষ্কার। ... ...
ফিরভি ইঁয়াদ আ গ্যয়ে, তো কেয়া করে! খুদকো ডাঁটে কেয়া? ইঁয়াদকো রুখ দে কেয়া?" বলতে বলতে জল গড়িয়ে পড়ছিল ওঁর তুবড়ে যাওয়া গাল বেয়ে। গালের খাঁজে এসে ভেঙে ভেঙে ছড়িয়ে যাচ্ছিল সে নিম্নগামী নুন জলের স্রোত। চিবুক ছুঁয়ে সে জল পড়ে যাওয়ার আগেই তার উপর পশমের আস্তিন বুলিয়ে নিচ্ছিলেন মানুষটা। স্বজনের স্মৃতিতে বৃদ্ধ চোখে ভরে আসা মুক্তোজল, বড় দামী। ফেলা যায় না যে! তিনি মহম্মদ আতাউল্লা। তুরতুকের বাসিন্দা। ভারতের শেষ গ্রাম হিসেবে পরিচিত কাশ্মীরের এই তুরতুক। কয়েক কিলোমিটার দূরেই পাকিস্তান সীমান্ত। এই তুরতুক গ্রামের মানুষেরা এখনও নিজেদের পরিচয় দেন বাল্টিস্তানি বলে। বছর কয়েক আগে বাল্টিস্তানই নাম ছিল এই প্রদেশের। আর দেশের নাম ছিল পাকিস্তান। তার পরে এল সেই চরম অস্থির বছরটা, ১৯৭১। মানচিত্রের সঙ্গেই ছারখার হয়ে গেল শতশত জীবন, পরিবার, সম্পর্ক, ভালবাসা। সীমান্তকে দিব্যি রেখে ভাগ হয়ে গেল জমিন। কিন্তু মানুষগুলোর ভাগ হওয়া তো জমিনের মতো সহজ নয়! সে যে কঠিন, বড় কঠিন! সেই কঠিনেরই শিকার হয়ে 'ভারতীয়' বনে গেলেন বাল্টিস্তানি আতাউল্লাজি। আজ থেকে বছর পঞ্চাশ আগে, বয়স তখন ২০। তখন রক্তে ফুটছে দেশপ্রেম। ভেবেছিলেন, যে করেই হোক ফিরে পাবেনই নিজের জায়গায়। ভেবেছিলেন, প্রিয়জনদের কাছে যাবেনই ফিরে! ভেবেছিলেন যুদ্ধের ক্ষমতা বুঝি ভালবাসার চেয়ে বেশি! বোকা ছেলে! ... ...
প্রায় জনমানবহীন এক আশ্চর্য নিসর্গকে রঙ-তুলিতে ধরতে চেয়ে গণেশ হালুই বারবার ভুল-বোঝার শিকার হয়েছেন। সমকালীন চিত্রধারার আপাত-দৃশ্যমান সমাজমুখিনতার বিপ্রতীপে তাঁর বিমূর্ত নিসর্গকে ফেলে তাঁর শিল্পকে সমাজবিমুখ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে। মিতবাক, বিনয়ী মানুষটি উত্তর দিতে পারেন নি এই অভিযোগের। নাকি দিতে চাননি? আজ এক আত্মকথনে তিনি যখন বলেন, “এখন আমি একজন ছবি আঁকিয়ে। অনেকের মতে আমার ছবিতে মানুষের কথা নেই। আমি এর উত্তর খুঁজি। নির্ঘাত মৃত্যু থেকে বেঁচে ওঠাতেই মানুষ মৃত্যুর কথা ভোলে এবং এই ভোলার মধ্যেই যে আনন্দের ধারা, তাতেই সেই মৃত্যুর সুর বাজে।” সেও কোনো উচ্চকিত জবাব নয়, এ এক নিভৃত মনোলগ। নিজের সাথে নিজের কথা। ... ...
অদ্য ফুল খেলবার দিন তা বলা যায়না, তবে তাতে পদ্য পড়ায় কোন বাধা নেই। পড়ুন ভোটের কবিতা! ... ...
মেয়ে জন্ম নিলেই বাড়িতে মায়ের সতর্ক দৃষ্টি থাকে তার শরীর সাবধানে রাখার। শরীর তোমার দামী বিষয়টা যত না স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক তার চেয়ে ঢের বেশি যৌনাঙ্গকেন্দ্রিক। তোমার যোনি অক্ষত থাকা জরুরী, কারণ একদিন তোমায় একজন নির্দিষ্ট ছেলের মালিকানায় থাকতে হবে। কাজেই তোমার তুমি নয় তোমার যৌনাঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটি ছেলে জন্মালে তার ট্রেনিং হয় মন নিয়ে। সে কতদূর পুরুষ হবে তার প্রমাণ রাখতে হয় সে কোন ইমোশনাল সেট ব্যাকে যাতে তার আবেগ চাপতে পারে। অর্থাৎ ছেলে আগে মন তারপর শরীর, যা কিনা তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন একটি সত্ত্বা। তো এরকম ভিন্ন ফোকাস নিয়ে ছোট্টটি থেকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে বড় হতে থাকে। এমন নয় যে এতে পরস্পরের প্রতি তাদের আকর্ষণ কমে যায়। কারণ আপনি মানুন বা না মানুন ঐ “প্রেম” জিনিষটা যৌনবোধের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের। কিন্তু প্রেম ছাড়াও যৌনতা থাকে, আফটার অল সবই তো ঐ হরমোনের খেলা। ছেলেটি ক্রমাগত ইমোশন বা মন বিষয়কে মূল্যহীন ভাবতে ভাবতে ক্রমে একটি শরীর হয়ে দাঁড়ায় মূলতঃ। বাসে ট্রামে গা ঘেঁষে দাঁড়াতে চাওয়া এর খুব স্বাভাবিক পরিণতি। ... ...
বৃহস্পতিবারের জন্য অন্য পরিকল্পনা নিয়েছিল শাসকদল। তারই প্রতিফলন দেখা গেল গোটা দিন জুড়ে। বেশ কিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ভোটারদের রাস্তা থেকেই বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পোলিং বুথে শাসক দলের কর্মীরা পিছন থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন কে কাকে ভোট দিচ্ছে। এরকম বেশকিছু ছবি উঠে এসেছে। যা বলে দিচ্ছে কেমন নির্বাচন হল রাজ্যে। বৃহস্পতিবার সকালে ভোট শুরু হতেই জিরানীয়া, মজলিশপুর, মান্দাই, বক্সনগর, রাজনগর, মোহনপুর, বড়জলা এসব স্থান থেকে বাম পোলিং এজেন্টদের আক্রমণের খবর আসতে থাকে। প্রথম দিকে যা ছিল ছোটখাট ঘটনা তা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় আকার ধারন করতে থাকে। বাম পোলিং এজেন্টদের পাশাপাশি চিহ্নিত বাম ভোটারদেরও লাইন থেকে বের করে দেবার খবর আসতে থাকে। অনেক জায়গায় বাম ভোটারদের বাড়ি থেকেই বের হতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ আসে। ... ...
তোমাকে ভুলতে চাওয়া আমার একটা চলমান প্রক্রিয়া। আর তোমাকে ভুলতে না পারা আমার এক অভ্যাস। এই অভ্যাসের ফলেই কখনও কখনও অন্যকে তোমার গল্প করি। আর সে সময় আমি ছোট্ট খুকি হয়ে যাই। কোনোদিন বুঝিনি অন্যসব বাচ্চাদের ছেলেধরা যেমন চকোলেটের লোভ দেখিয়ে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করা রুমাল মুখে চেপে ধরে টুপ করে বস্তার ভেতর ভরে নেয়, ঠিক তেমনি আমার আস্ত একটা জীবনে এই 'নেই তুমি'র আসনকে পূর্ণ করে দেওয়ার ক্রিমে ভরা, রঙিন রাংতায় মোড়া ছোটবেলা দেবে, হারিয়ে যাওয়া বাস্তুভিটে ম্যাজিক করে ফিরিয়ে দেবে বলে এক রাক্ষস ছেলেধরার রূপ ধরে মুখে ক্লোরোফর্মের রুমাল চেপে ধরে বস্তায় ভরে নিয়েছিল ... ...
দেশের স্বাস্থ্যের হালহকিকত নিয়ে ভাবতে বসলে আশার আলোটুকু এতোই দুর্লভ, যে একটু গুছিয়ে আগলে না রাখতে পারলে অন্ধকারই অনিবার্য বোধ হওয়ার আশঙ্কা। সেইখানে, নিজের ভাবনা অস্বস্তি, হাজার না-পাওয়ার পাশে ছোটখাটো প্রাপ্তিগুলো, নিদেনপক্ষে প্রাপ্তির আশাটুকু সাজিয়ে লিখে রাখা জরুরী। একদিকে দেশের স্বাস্থ্যের পেছনে সরকারের খরচ ক্রমেই কমতে কমতে আণুবীক্ষণিক হয়ে দাঁড়ানোর বাস্তব, প্রতিবছর স্রেফ চিকিৎসার খরচা মেটাতে গিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষের নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে যাওয়া, বিশ্বের সুস্থ দেশের সারণীতে আমাদের দেশের ক্রমেই পিছিয়ে পড়া, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ডামাডোলের পেছনে এক এবং একমাত্র ডাক্তারদেরই দায়ী ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে (আর এরাজ্যে তো কথাই নেই, আক্ষরিক অর্থেই “এগিয়ে বাংলা”) ডাক্তারদের উপর আক্রমণের খবর। ... ...
এই পাঁচটা বছর বুঝিয়ে দিল। বদলে দিল। বিজেপি যখন ঘরের দোরগোড়ায় চলে এল, তখন বুঝলাম গণতন্ত্রকে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে অবজ্ঞা করার ফল কতটা ভয়ানক হতে পারে। এই পাঁচটা বছরের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। এই পাঁচটা বছর আমাকে রাজনীতি চেনাল, আমি জানলাম রাজনীতির বাইরে কিছু হয় না, কিচ্ছু হয় না। আমি জানলাম, আমার চারপাশে কত ক্লোজেট থেকে বেরনো লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন, উচ্চশিক্ষিত, সাদা কলারের লোকজন, যাঁরা সব দেখেশুনেও অন্ধভাবে সাপোর্ট করেন যোগীকে, ছাপ্পান্ন ইঞ্চিকে। মনে করেন এঁরাই আচ্ছে দিন আনবেন, এখনও, মনে করেন, এঁরাই বিকাশ আনবেন। এঁরা মনে করেন, মুসলমানরা তো “ওরকমই”। নিচু জাতকে তো “পায়ের তলাতেই” রাখতে হয়, নইলে মাথায় চড়ে বসে। “ওদের” সাথে তো “ওদের” ভাষাতেই কথা বলতে হয়। “ওরা” তো আমাদের থেকে আলাদাই, ওরা শুধু জুতোয় সোজা। ... ...
নীতিশকুমারের, বস্তুত বিজেপি-র, সমর্থকটি দাবি করবেন, “বহোত কাম হো রহা হ্যায়”। ঠিক-ই। পাটনা শহরের চতুর্দিক “কাজে” ঢাকা – ফ্লাইওভারের পর ফ্লাইওভার, নতুন নতুন সরকারি-বেসরকারি ইমারত। “কাজ” মানে এক ঢিলে দুই পাখিঃ চোখে আঙ্গুল দিয়ে আর্থনীতিক উন্নয়ন দেখিয়ে দেওয়া, স্টেট জিডিপি-র বাড়-বাড়ন্ত; পাশাপাশি, অথবা সেটাই মূল উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক আপনজনদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার পথ করে দেওয়া। লোকের জন্য পথ বলতে প্রায় কিছু নেই, যেটুকুবা আছে তা ধনাঢ্যের অশ্লীল বাহনের দখলে। চতুষ্পার্শে ভর্তি নোংরা, দুর্গন্ধে টেকা দায়। ধনিকের কিছু আসে যায়না, তাদের কাচ-তোলা গাড়িতে বাইরের বাতাসের প্রবেশ নিষেধ। আর দরিদ্র মানিয়ে নিতে নিতে একেই জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছে। করে নিয়েও বাঁচার সুরাহা হয়না। দুর্ভাগ্য যেন বিহারবাসীর সহজাত। সেই কবে শুরু হয়েছিল গ্রাম থেকে শহরে আসা – পাটনায় স্থান সংকুলান, অতএব কলকাতা। সে নগরী, ক্রমে, নিজেই হেঁপোরুগী। বঙ্গবাসী জনতাও আজ কাজের খোঁজে দলে দলে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশ বিভুঁয়ে। অতএব, বিহারী কর্মজীবীকে কাজ খুঁজতে যেতে হয়, পঞ্জাব, হরিয়াণা, মহারাষ্ট্র, অথবা অন্যত্র। ... ...
আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোন লেসবিয়ানদের সাথে মিশিনি, আমি নিজে লেসবিয়ান, কিন্তু কেউ যদি আমাকে লেসবিয়ানদের চরিত্র নিয়ে সংজ্ঞা লিখতে বলে, আমি পারব না। আমি কি, তা আমি জানি। আমি মোটেও মানিনা, সবার চরিত্র, চাহিদা সমান হয়। তাই দুম করে কাউকে ট্যাগ করে দেওয়া থেকে যতটা পারি বিরত থাকি। হোমোফোবিকদের কাছ থেকে বহু আক্রমণ আসে। শুনতে শুনতে সয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে আসা আক্রমণ আর খারাপ লাগে না। তারা আক্রমণ করবেই, টিটকিরি মারবেই জানা কথা... ... ...
সেনাবাহিনীর জীবনবীমার প্রিমিয়ামের টাকা এদের শেয়ার কিনতেই লগ্নি হয়েছে। এবং এই টাকা কিন্তু সরকারের দেওয়া নয়। কত টাকা? একটা মোটামুটি হিসেব ধরা যাক - ভারতীয় সেনা (শুধু মিলিটারি) তে জেনারেল এর সংখ্যা কমবেশী ৩৫০ জন - এরা জীবনবীমা বাবদ প্রিমিয়াম দেন মাসে ৫০০০/- অর্থাৎ বছরে ৬০০০০/- টাকা - ৩৫০ x ৬০০০০/- = ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। জওয়ান এর সংখ্যা কমবেশী ১৩ লক্ষ - এরা দেন মাসে ২৫০০/- অর্থাৎ বছরে ৩০০০০/- টাকা - মোট ১৩,০০,০০০ x ৩০০০০/- = তিন হাজার ন’শো কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বছরে মোট তিন হাজার এগারোশো কোটি টাকার মত - এই বিপুল অঙ্কের টাকার দায়ীত্ব কার? ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কে করেন? ভক্তবৃন্দ জানতে চান না - আপনি জানতে চাইলেও পাবেন না - কারণ এর কোন সদুত্তর কারো কাছে নেই। একটি ডুবন্ত কোম্পানির শেয়ার কিনতে এই টাকা লগ্নি করা হয়েছে এবং হচ্ছে - অথচ কোম্পানি বা সেনাবাহিনী কোন তরফেই এই টাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন সদুত্তর নেই। আমাদের মহান সেনাবাহিনী যখন দেশের সেবা করতে নিজের প্রাণ হাতে করে যুদ্ধ করেন, সিয়াচেনে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন, তখন তার পরিবারের ন্যুনতম নিরাপত্তা বিধানে সরকার বাহাদুর উদাসীন থাকেন - তাঁকে দেখিয়ে ভোট কেনাটা বেশী জরুরী। ... ...
ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফ্রান্সিস হল্যান্ডের আমলে ৩৬টি যুদ্ধবিমান ক্রয়ের এই নয়া রাফাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপরেই তিনি এক-একটি ফরাসি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার বলপূর্বক তাঁদের বাধ্য করেছে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে পার্টনার হিসেবে এই প্রকল্পের অংশীদার করতে। ব্যাবসার স্বার্থে এই চুক্তিটি হাতছাড়া করতেই এই গা-জোয়ারি মেনে নেন তাঁরা। ফ্রান্সিস হল্যান্ডের এই দাবি দ্যসল্ট সংস্থার মুখপাত্র মেনে নিতে চাননি। কিন্তু ফাঁস-হওয়া তথ্য থেকে পরিষ্কার, সংস্থার বহু কর্মকর্তা চাননি, ভারতীয় অফসেট পার্টনার হিসেবে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বেছে নেওয়া হোক। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এই চুক্তির প্রাক্-শর্তই ছিল, রিলায়েন্সকে শরিক হিসেবে নিতে হবে। এদিকে মোদী সরকারের প্রতিনিধিরা, বিজেপি-র নেতারা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ান, রাফালে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে অন্তর্ভুক্তিকরণ একান্তই দ্যসল্টের সিদ্ধান্ত। ভারত সরকারের নাকি এই সিদ্ধান্তে কোনও ভূমিকাই নেই। দ্যসল্ট কেন এমন অনভিজ্ঞ দেউলিয়া সংস্থাকে শরিক হিসেবে অগ্রাধিকার দেবে, যারা অতীতে এমন কোনও কাজ করেনি? দ্যসল্টের তরফে এই অস্বস্তিকর প্রশ্ন সবসময়েই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ... ...
বিগত এক দশকের বাংলা ছবি (মানে, কাগজের ভাষায়, তথাকথিত "মননশীল" বাংলা ছবি) দেখলে একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, বাংলা সিনেমার সাথে আন্তর্জাতিক সিনেমার সম্পর্ক, যা সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক একদা স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছিলেন, এখন প্রায় পূর্ণতঃ ছিন্ন হয়েছে। বাংলা সিনেমা, অধুনা, তার নির্মাণে ও মেজাজে, পরিপূর্ণ মধ্যবিত্ততার একটি পঙ্কিল আবর্তে পাক খেতে খেতে, একমনে, নিজেই নিজেকে ক্রমাগত ধ্বংস করে চলেছে। বিশ্বসিনেমার ভাষা যতই বদলে যাক না কেন, যতই জটিল হয়ে উঠুক না কেন তার অন্তর্গত আখ্যানের বুনন, বা সেই আখ্যানের সঙ্গে বহির্বাস্তবের লেনদেন ও টানাপোড়েন, বাংলা ছবি, তবুও, দৃশ্যের মাধ্যমে একটি নিটোল, নাটকীয় অথচ অন্তঃসারশূন্য গপ্প বলাকেই তার পবিত্র কর্তব্য ঠাউরে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে ব্যস্ত থাকবে। এমনকী, ছবির ভাষা নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে, শুধু যদি এটুকুই প্রত্যাশা করি যে সেই গল্প, আদতে, মধ্যবিত্তের কোন গূঢ় আস্তিত্বিক সংকট বা জটিল স্ববিরোধকে দর্শকের সামনে উপস্থাপিত করবে, তাহলেও আশাভঙ্গের শিকার হতে হয়। কেননা, মধ্যবিত্তের হাঁচি-কাশি-টিকটিকি-প্রেম-অপ্রেম-আমাশার গল্পকে, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে, সভ্যতার সংকট হিসেবে উপস্থাপিত করাই, এখন তার নতুন দস্তুর। এবং এই অন্তঃসারশূন্যতাকে আড়াল করার জন্যে রয়েছে আরোপিত কেতা, যা, বস্তুতপক্ষে, ষাট-সত্তরের দশকের আভাঁ-গার্দ ছবির থেকে ধার করা, পরবর্তীতে মিউজিক ভিডিওর জমানায় ব্যবহৃত হতে-হতে বাসি মাংসে পরিণত হওয়া, ক্যামেরা বা সম্পাদনার কৌশলমাত্র। বিশ্বসিনেমার কথা বাদ দিলেও, কেবল যদি হিন্দি বা মারাঠী সমান্তরাল ছবির কথাই ধরি, তাহলেও বোঝা যায়, বাংলা সিনেমা ঠিক কোন গর্তে গিয়ে মুখ লুকিয়েছে। ... ...