মহীনের ঘোড়াগুলির যখন জন্ম হয় তখন তাদের সামনে কিছুই ছিল না, শুধু ছিল ধু ধু ফাঁকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল আর ছিল তাদের ফেলে আসা পথের অভিজ্ঞতা। এই ফেলে আসা পথের অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা বিস্তীর্ণ চারণ ভূমিতে সবাই মিলে এলোমেলো ভাবেই ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছোটার আরও ছিল বিভিন্ন ঘরানার জনা তিরিশেক ছুটন্ত ঘোড়া যারা মূলত ছেলেবেলায় একসাথে বেড়ে উঠেছিল কোন অঞ্চলে। ঘোড়াদের আস্তাবল ছিল নাকতলায় এবং তার দেখাশুনো করতেন আমাদের মা ও পিসি, যথাক্রমে বিভা দেবী ও রতনপ্রভা – যাঁরা স্নেহ দিয়ে, ঘোড়াদের সবরকম বেপরোয়া দুরন্তপনাকে উৎসাহ দিয়ে, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছিলেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ঘোড়াদের কোন কোন বান্ধবীরাও। তারাও সমান তালে ছুটতে শুরু করেছিল দলের বিভিন্ন রকম দায়িত্ব নিয়ে। ... ...
সুতরাং এক কথায় বলতে গেলে, কৃষ্ণগহ্বর আসলে বিশাল পরিমাণ পদার্থকে ঠেসেঠুসে রাখা এক বস্তুপিন্ড। ঘনত্ব বোঝাতে আবারো আমাদের উদাহরণে ফিরে যাই। যে নক্ষত্রটি নিয়ে আমরা কথা শুরু করেছিলাম, সেই সূর্যের থেকে দশগুণ ভারি যে, তাকে যদি ঠেসে নিউ ইয়র্ক শহরের চৌহদ্দির মধ্যে পুরে দেওয়া হয় তাহলে যেরকম ব্যাপার হবে, একটা ব্ল্যাক হোলের ঘনত্ব অনেকটা সেরকম। কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষীয় বল এতই বেশি (কারণ প্রচন্ড বেশি ভর) যে তা আসেপাশের সমস্ত বস্তুপিন্ডকে গ্রাস করতে থাকে। অন্য নক্ষত্র যদি কাছে চলে আসে তবে তারও সেই হাল হয়। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা, কৃষ্ণগহ্বরের থেকে আলো পর্যন্ত নিস্তার পায়না। ফলে কৃষ্ণগহ্বর দেখতে ঠিক কেমন -- এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন অন্ধকার এক বস্তুপিন্ডের কথা। ... ...
এই যাযাবর থিতু হল এমন দেশে যেখানে তারা পেয়েছিল বৃষ্টির গন্ধ । মরুভূমির মধ্যে সেই সুবাস তাদের অভ্যস্ত নাক চিনে নিতে দেরি করলো না। বৃষ্টির জল ধরে রাখার কৌশল রপ্ত হল। তারা বানিয়েছে বাঁধ , জলাধার , সিরামিকের পাইপ লাইন , বিস্ময়ের পর বিস্ময়।মরু অঞ্চলে জলধারাকে তারা ইচ্ছেমত ব্যাবহার করেছে অতুলনীয় মেধা আর দক্ষতা দিয়ে। পাইপ দিয়ে , নালা দিয়ে , পাহাড়ের গায়ে ধাপ বানিয়ে সারা শহরকে জলসিক্ত করে গেছে। পেত্রা আরো রহস্যময় এই কারণে যে এখনো অনেক কিছু আবিষ্কার করা বাকি ! শিলালিপি আর গ্রাফিত্তি কতটুকুই বা ধরে রাখে ? রোমান এবং গ্রিকদের লেখা থেকে অনেক তথ্য জানা যায় , বিশেষ করে ইতিহাসবিদ ডিওডোরাস আর ভূগোলবিদ স্ট্র্যাবোর লেখা থেকে। তবে এই কৌশল তারা বেশ ভালো করে গোপন রাখত বলে ডিওডোরাস লিখে গেছেন। ... ...
বিজেপির ‘ভারতীয় মানব’ নির্মাণের বিপরীতে আমাদের দেশের বুর্জোয়া লিবারেল, সরকারী বাম, অনগ্রসরদের প্রতিনিধি সকল পার্টিই মনে করেছিলেন ‘সংবিধান’ হবে একটি সমকক্ষ ভাবনা। ‘সংবিধান’ অর্থাৎ “আম্বেদকর এবং তাঁর রচনা করা আধুনিক, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল, সামাজিক ন্যায় সুরক্ষিত করা রাষ্ট্রকাঠামোটিই শেষ হয়ে যাবে বিজেপির হাতে”, এই ছিল তাদের বয়ান এবং প্রধান বয়ান। অর্থাৎ এর মধ্যে দিয়ে যাকে উঁচুতে তুলে ধরা হয় তা হল আধুনিক ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তার ভাবনা। বলা বাহুল্য এই আইডিয়াটির গায়ে এখনো পর্যন্ত যতটা পরিমাণ আমদানি করা মালের গন্ধ লেগে আছে এবং ভারতের সিংহভাগ জনমানসে এটা এখন পর্যন্ত এতটাই অসম্পৃক্ত যে, এটার মধ্যে দিয়ে কখনই বিজেপির সাধারণীকৃত ভারতীয়ত্বের ভাবনাটিকে প্রতিহত করা যায় না। এর জন্য ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য এবং ভারতবর্ষে বিকৃত এবং অসম পুঁজিবাদী উন্নয়নের ইতিহাস একান্তভাবে দায়ী। বরং বলা যায়, এই সংবিধান যে বিষয়টিকে ভারতবাসীর মনে এবং আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জগদ্দল পাথরের মতন অপরিহার্য করে তুলেছে তা হল সংসদীয় গণতন্ত্র। ... ...
রাগের ভেতর সাপের মত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঢেলে দেবে সুরের বিষ। তৃষ্ণার্ত পথিক সেই আঁচলা ভরে পান করে নেবে মৃত শহরের সমস্ত ঝরে যাওয়া শোক। দুঃখ। অভিমান। তখনই নিজেকে ঈশ্বর মনে হয়। সমস্ত না-পারার খেদ ধুয়ে মুছে চোখের জলে ভেসে ভেসে সুবর্ণরেখায় মেশে। আর সেই গভীর ধ্যান পথ হয়ে ওঠে লাল বিপ্লবের। চারপাশে ছড়ানো ছিটানো মোরামের কাঁকর। খালি পা জ্বালা করে। পিচপিচ করে রক্তের স্রোত ছুটে... গানের মত? ... ...
যদিও ২০০০ সাল নাগাদ প্রকাশিত হচ্ছে, গল্পগুলি পড়লে বোঝা যাচ্ছে আরো বছর পনেরো কুড়ি আগে লেখা। বোঝা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে বড় করে কৃষি বনাম শিল্প বিতর্ক শুরুর কিছুটা আগেই, অনেক পুরোনো একটি বিষয়ের অবতারণা করার প্রয়োজন অনুভব করছেন অসীম। বাঁকুড়া এবং বীরভূমের গ্রামে যাঁর পারিবারিক শিকড় রয়েছে, যিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ভারী শিল্প নগরীতে বড় হচ্ছেন, তাঁকে শিল্পনগরের যন্ত্র এবং উৎপাদনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জনজীবন, নতুন রকমের সমাজ এবং বিচিত্র মানুষকে নিয়েই তাঁর রোজগেরে বাস্তব, কিন্তু কৃষির সঙ্গে জড়িত মানুষ কী ভাবে যন্ত্র জিনিসটার মুখোমুখি হচ্ছেন, তার প্রায় কয়েকশো বছরের পুরোনো প্রায় শিল্প বিপ্লবের সময়কার সংঘাতটা তাঁকে ভাবাচ্ছে। বা বলা ভালো এক দেড় দশক পরেকার আমাদের রাজ্যের সম্ভাব্য সংঘাতও প্রতিভাত হচ্ছে। হারাধন মন্ডলের গল্প তে দেখা যাচ্ছে, "হারাধন মন্ডল - দি ওয়েল্ডার, মেড ইন পাথরঘাটা - এ ভিলেজ নিয়ার শান্তিনিকেতন", বিচিত্র ঠোঁটকাটা আমোদ গেঁড়ে, হাতের কাজে উৎকর্ষের সীমানায় পৌছনো, ‘লোহায় লোহায় বিবাহ’ দেওয়া শ্রমিক, মুক্তধারার যন্ত্রবিদের মত যন্ত্রের জয়ের গান না গেয়েই প্রায় বিনা বাক্যব্যয়ে, শেষ পর্যন্ত ফিরে যা্চ্ছে তার গ্রামে। এবং বাসে গান গেয়ে পয়সা জোটানো বাউল, যে নিজে চিরায়ত জীবন দর্শন চর্চার বিশুদ্ধতার দাবী বিশেষ করছে না, গান বাঁধছে শুধু, "চাগরি যদি করবি চাষা আজব কলে বাঁধরে বাসা চাষা পরাণ বলে বুদ্ধি খাসা ফিরতে তোমার চাই জানা।" অথচ বাউল ও হারাধন, দুজনেই যেন কোথাও একটা ভবিতব্যকে অস্বীকার করতে পারছে না, তাদের চোখের সামনেই "একপেট স্কিলড আনস্কিল্ড ওয়ার্কার নিয়ে বাস ছুটে চলে দুর্গাপুরের দিকে", সকলের ফেরার পথটি জানা আছে কিনা জানা নেই, বাস রাস্তার অবিশুদ্ধ বাউলের গানে সমাধান বিশেষ নাই। ... ...
আমার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো বলে আমি কিচ্ছু ভুলিনা। রবীন্দ্র রচনাবলীর কোন খণ্ডে কথা ও কাহিনী, বাড়ির কোথায় ঝুলঝাড়া, কোন ড্রয়ারে মাংস কাটার ছুরি, আমার সব মনে থাকে। ফ্রিজারের পিছন থেকে এক চান্সে থান ইটের মতো পাঁঠার মাংস বার করে ধপ করে রান্নাঘরের সিমেন্টের স্ল্যাবে ফেলে কাটারির সাইজের ছুরি বাগিয়ে তরীকে বলি, আজকে মাংস করব বলেছিলাম না? কেমন মনে রেখেছি অ্যাঁ? হ্যাঁ, স্ল্যাবের উপর ফেলার আগে পাতলা প্লাস্টিক বিছিয়ে নিতেও আমি একদম ভুলিনি ... ...
গাউছিয়ার সোনার দোকানগুলো থেকে চান্দা তুলতে গিয়ে ধরা পড়েছিল সুরা গুণ্ডা। তা প্রায় সাত বছর আগের ঘটনা। মহামান্য আদালত সুরার বিচার করে আজ যাবজ্জীবন ঘোষণা করেছে। সুরা কেবল চান্দাবাজ নয়। পুরানো রেকর্ডগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে সুরা এক দুর্ধর্ষ বোমাবাজ এবং সাংঘাতিক খুনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে বছর কয়েক আগে যে বোমাবাজি হয়েছিল এবং তাতে যে দুজন লোক মারা গেছে তার নেতৃত্ব দিয়েছিল সন্ত্রাসী সুরা। সুরা গুণ্ডা পুরো নাম কী ? টেবিলের ছড়ানো ছিটানো কাগজে নাম খুঁজে পায় কুরাণ। রইসউদ্দিন সোহরাওয়ার্দী। ক্লাশ এইট পাশ। এরপর ঝরে গেছে। সুরার নীচে তিন ভাই, দুভাই দোকানপাট ব্যবসা করে। ছোট ভাইটা ইঞ্জিনীয়ার। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি। ভাইটা কাঁদে । দেশে আসতে চায় । ... ...
সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক-অর্থনীতি বা পোলিটিক্যাল সায়ান্সের সামান্য পাঠও আমাদের অবহিত করে যে সামাজিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক সুরক্ষা বা চাকরির সম্ভাবনাহীনতা যখন প্রাধান্যকারী জায়গায় থাকে তখন একদিকে জনমোহিনী রাজনীতির সামান্য অনুদানও জনসমাজ খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চায়, আবার অন্যদিকে শূণ্যদিশা জনসমাজের প্রবল ক্ষোভ এবং অপূর্ণতা mob violence বা গণহিংসার চেহারা নিয়ে আছড়ে পড়ে। স্মরণ করতে পারি সত্যজিতের “জনঅরণ্য”, মৃণালের একাধিক ছবি, শ্যাম বেনেগাল বা গোবিন্দ নিহালনি-র বিভিন্ন চলচ্চিত্রের কথা। আমরা দেখেছি নিস্ফলা ক্রোধ এবং আক্রোশ কিভাবে জনসমাজে প্রতিবিম্বিত হয়। এখানে ডাক্তারকে স্থাপন করলে দেখবো সে একজন সফল, ঈর্ষণীয়ভাবে স্বচ্ছল এবং ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। এর বিপরীতে রোগীটি আর্ত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত সম্বলহীন এবং ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে দূরে থাকা একজন ব্যক্তি মানুষ। একদিক থেকে দেখলে এ দ্বন্দ্ব ক্ষমতা এবং ক্ষমতাহীনতার মধ্যেকার দ্বন্দ্বও বটে। কিন্তু ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও একজন আমলা বা পুলিস বা শিল্পপতি বা রাজনৈতিক নেতার সাথে ডাক্তারের পার্থক্য হল একজন আমলা বা পুলিস বা রাজনৈতিক নেতা সরাসরি ক্ষমতাকেন্দ্রের অংশীদার, এর উপাদান। একজন শিল্পপতি বহুলাংশে এদের নিয়ন্ত্রক। কিন্তু একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী ক্ষমতাকেন্দ্রের সাথে যুক্ত নয়। এবং এ অর্থে “ক্ষমতাচ্যূত”, ফলে এরা জনরোষের ক্ষেত্রে একটি soft target যাকে সহজেই আক্রমণ করা যায়, নিজেদের প্রবল ক্ষোভকে সহজে উগড়ে দেওয়া যায় এদের ওপরে। ... ...
বিশ্বায়নের আগে আমরা মণিমেলা দেখেছি, বিজ্ঞান জাঠা দেখেছি, এমন কী পাড়ার ক্লাবগুলোর সক্রিয়তা দেখেছি। এখন সেই জায়গায় পোটেনশিয়াল অর্গানাইজাররা অর্কুট-ফেসবুক-টিন্ডার-হোয়াটস অ্যাপ করেন। ফলে সামাজিক পরিসরে সংগঠন ডুবে গেছে, সংঘের আলো উজ্জ্বল হয়েছে। হালে সরস্বতী বিদ্যামন্দির লোকের চোখে টোখে পড়ছে, কিন্তু সক্রিয়তা এক মাত্রায় বহুবছর ধরে থেকেছে। এই দিয়ে ভোটে জেতার সবটা হয়েছে মনে হয় না, কিন্তু কিছুটা হয় নি এমন নিশ্চয়ই নয়। সঙ্ঘারামে নিশ্চিতভাবে সংগঠনের ভিতপুজো হয়েছে। তাহলে বাকি থাকে সংগঠন। একটি সংগঠন ভালো চললে তার ভোট বাড়ে। বিশেষতঃ নতুন খেলতে নামা দল জেতে আর পুরোনো দল হারে ডিফেন্স-মিডফিল্ড-ফরওয়ার্ডের অর্গানাইজেশনের তারতম্য ঘটিয়েই। ... ...
অনিমেষ সচরাচর রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে আসে। গোপাল বহুদূর থেকে ওর গন্ধ পেয়ে ডেকে উঠত। সেই ডাক শুনে ভৌ ভৌ করে দৌড়োদৌড়ি করত গলির কুকুর, তারপর বড় রাস্তার কুকুররা ডেকে উঠত -মেক্সিকান ওয়েভের মত কুকুরের ডাক পৌঁছত অনিমেষের কানে। গলি টুকু প্রায় দৌড়ে ঢুকত বাড়িতে। গোপাল দু পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে মুখ চাটত অনিমেষের। লিপি ততক্ষণে ভাত বসিয়েছে। আজ পাড়া নিশ্চূপ, গলি শুনশান -শুধু আলোর তলায় লিপি একলা দাঁড়িয়ে । লিপির দাঁড়ানোর ভঙ্গী, ওর কান মুখ ঢাকা শাল, ওর দীর্ঘ ছায়া, মাথার ওপর ঝাঁক বেঁধে আসা মশা অনিমেষকে যেন সমস্ত বলে দিল এক মুহূর্তে। এমনকি অনিমেষ যেন লিপির হাতের হাতের ছেঁড়া শিকলিও দেখতে পেল যাতে গোপালের বকলশ ঝুলে রয়েছে। হাতের ব্যাগ নামিয়ে রেখে অনিমেষ বলল- -'কখন? কষ্ট পেয়েছিল?' -'ঘরে চলো'। লিপি বলেছিল শুধু। ... ...
২০১৮ সালের জুলাই মাসে অধ্যাপক পান্ডে এবং এবং তাঁর ছাত্র দেব কুমার থাপা একটি গবেষণাপত্রে ঘোষণা করেন যে তাঁরা এমন একটি পদার্থের সন্ধান পেয়েছেন যা ঘরের উষ্ণতায় অতিপরিবাহী [1]। এইরকম একটি পদার্থের খোঁজ বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই করছেন, কাজেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার পরেই গবেষকমহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এবং খুব ভালো কোন কাজের ক্ষেত্রে যেমন হয়, বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করতে থাকেন, যে দাবিটি যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ কিনা। সেই সঙ্গতি খুঁজতে গিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে যা তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। এই বিতর্কের মীমাংসা এখনও সম্পূর্ণভাবে হয়নি, তবে ২০১৯ সালের মে মাসে ঐ একই গবেষণাপত্র আরো বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরিবর্ধিত সংস্করণে পূর্বোক্ত গবেষকেরা ছাড়াও আরো কয়েকজন যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এই বিতর্কের আরো গভীরে ঢোকার আগে আমাদের গবেষণার বিষয়টি নিয়ে সামান্য একটু জেনে নেওয়া দরকার। সুপারকন্ডাক্টিভিটি বা অতিপরিবাহিতা খুবই জটিল তত্ত্ব, তাই আমরা যথাসম্ভব সহজ করে, যতটুকু না জানলেই নয় ততটুকুই জানবো। ... ...
বাজার অর্থনীতির নিয়মে স্বাস্থ্যপরিষেবাকে চলতে দেওয়ার বিরুদ্ধে কয়েকটি অমোঘ যুক্তি রয়েছে। প্রথমত, বাজারের অত্যাবশ্যক শর্ত, তথ্যের সাম্য। অর্থাৎ, ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুজনেই কেনার জিনিসটা নিয়ে সমান অবগত থাকবেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে, হাজার গুগলের সহায়তা সত্ত্বেও, চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে এই তথ্যের সাম্য আসা একেবারে অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, ফ্লোরিডার বিচারকের যুক্তিটি। কেনার বাধ্যবাধকতা কাজ করলে বাজারের নিয়ম খাটে না। আপনার যদি দামে না পোষায়, এবং তদসত্ত্বেও যদি আপনি কিনতে বাধ্য হন, তাহলে বাজারের নিয়ম চললো কি? আপনি যদি সত্যিই অসুস্থ হন, তাহলে তো আপনি যেকোনো মূল্যেই, ঘটিবাটি বিক্রি করে হলেও, চিকিৎসা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতি বছর, এই দেশে কয়েকলক্ষ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যাচ্ছেন, স্রেফ চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে। অন্তত খাতায়কলমে, তত্ত্বগতভাবে, বাজার অর্থনীতি কিন্তু এমন পরিস্থিতির কথা বলেন না। তৃতীয়ত, বাজারের নিয়ম অনুসারে, ক্রেতা এবং বিক্রেতার সম্পর্কটি সরাসরি এবং সেইখানে তৃতীয় ব্যক্তির সরাসরি লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্ন নেই (মধ্যবর্তী মুনাফাভোগী বা দালালের প্রশ্ন আনছি না)। ... ...
সমস্ত চিকিৎসা বিনামূল্যে হবে শুনে মনে হতে পারে, ‘এই তো! আমাদের সবার জন্যে স্বাস্থ্যের স্বপ্ন সত্যি হল বুঝি।’ কিন্তু আসল ছবিটা কিন্তু সেরকম দাঁড়াচ্ছে না। সব বিনামূল্যে পাওয়া যাবে ঘোষণা হয়ে গেলেও অনেক কিছুই কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না, সব ওষুধ মিলছে না, অপারেশন, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপির জন্যে রোগীদের লম্বা ডেট দেওয়া হচ্ছে, পেসমেকার, স্টেন্ট, প্রস্থেসিস যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া না যাওয়ার কারণে রোগীদের ঘোরানো হচ্ছে। পরিকাঠামো, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা না বাড়িয়ে সব বিনামূল্যে পাওয়া যাবে ঘোষণা করে দেওয়ায় চিকিৎসার মান ক্রমশ নেমেই চলেছে, কোথাও বাচ্চা পুড়ে যাচ্ছে ওয়ার্মারে, কোথাও পেশেন্ট পার্টি ডাক্তার-নার্স পেটাচ্ছে। আসলে যেটা নেই-ই সেটা ফ্রিতে পাওয়া যাচ্ছে বলে ঘোষণা করে দেওয়ার ফল ভুগছেন রোগী ডাক্তার কর্মচারী সকলেই। ... ...
ঈদের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে আমার কাছে সেরা লাগে হচ্ছে ঈদের বাড়ি ফেরা। ঈদের দুই একদিন আগে কেউ যদি মফস্বল কোন শহরের বাসস্ট্যান্ডের দিকে খেয়াল করে তাহলে দেখতে পাবে ঘরে ফেরা কিছু মানুষের মুখ। এই মুখ গুলো ভ্রমণের ধকলে ক্লান্ত। সাথে কয়েকটা ব্যাগ, আণ্ডা বাচ্চা নিয়ে বিধ্বস্ত একেকজন। বাস থেকে নেমে রিক্সা নিলো হয়ত, ব্যাগ নিয়ে গুছিয়ে রিক্সায় বসার পরে রিক্সা ছেড়ে দেওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পরে এই যাত্রীদের যে চেহারা হয় তা আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। ক্লান্ত কিন্তু কী একটা আলাদা আনন্দ, আলাদা সুখানুভূতি খেলা করে যায় একেকজনের চেহারায়। হয়ত ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করে কোন তরুণী, একটা ব্যাগ নিয়ে রিক্সায় ক্লান্ত চেহারা নিয়ে যখন বাড়ির দিকে যেতে থাকে তখন তার মনের অনুভূতি ব্যাখ্যা করে এমন কেউ কী আছে? ... ...
১৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দে বিখ্যাত সোভিয়েত বিজ্ঞানী ভ্যাভিলভ তাঁর বিখ্যাত গবেষণায় পৃথিবীর নয়টি অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছিলেন যেগুলিকে জিনসম্পদের উৎস বলা চলে। ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, ইরাকঅঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার চিলি ও আন্দিজঅঞ্চল, মেক্সিকো—অঞ্চলগুলি ছিল এরকম। পরবর্তীতে মার্কিন বিজ্ঞানী হারল্যান-এর গবেষণাতেও (১৯৭১খ্রীষ্টাব্দ) এই ব্যাপারটা প্রমাণিত হয়। মানুষ যতরকমের শস্য বা প্রাণী ব্যবহার করে, তার কতগুলো নির্দিষ্ট উৎসকেন্দ্র রয়েছে অর্থাৎ সেন্টার অফ অরিজিন। মানে জিনসম্পদ সারা পৃথিবী জুড়ে সমানভাবে ছড়িয়ে নেই। জিনসম্পদের সাথে খনিজ তেল বা কয়লার পার্থক্য রয়েছে। সেগুলি একান্তই প্রকৃতির দান। মানে, পৃথিবীর কোথায় খনিজ তেল বা কয়লা আছে, সে ব্যাপারে মানুষের কোনও হাতই নেই; তবে এগুলি উত্তোলনের প্রযুক্তি তার করায়ত্ত হতে পারে। জিন সম্পদ কিন্তু নিছক প্রকৃতির দান শুধু নয়। ... ...
হামবুর্গের হামবাগ ১৮৯২ সালের জার্মানির হামবুর্গ। কলেরা মহামারির আকার নিয়েছে। বার্লিনে বসে ডাঃ রবার্ট কফ ঘোষণা করলেন এর জন্য দায়ী ভিব্রিও কলেরি ব্যাকটেরিয়া। এবং তা ছড়িয়েছে এলবে নদীর দূষিত জল থেকে। হাসপাতালে কলেরা রোগীর ভিড় সামলাতে সামলাতে রাগে প্রায় ঘোঁত ঘোঁত করছেন ডাঃ পিটেনকোফার। “কোথাকার কে দুদিনের ছোকরা, মাইক্রোস্কোপ নিয়ে ল্যাবটরিতে সারাদিন খুট খুট করছে আর ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।” তাঁর সহকর্মীরা জানেন ডাঃ পিটেনকোফারের মারাত্মক গোঁ। নিজের সিদ্ধান্তে তিনি অবিচল থাকেন। হাজার প্রমাণ দেখালেও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন না। তবে তাঁরা মানুষটিকে শ্রদ্ধাও করেন। ডাক্তারবাবু অকুতোভয়। যে কোনও মহামারির খবরে দৌড়ে যান। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে ভরসা যোগান। ... ...
"নতুন সংবিধানের সাহায্যে ভারতকে স্বাধীন করা, ক্ষুধার্ত দেশবাসীর মুখে অন্ন তুলে জোগানো, নির্বস্ত্র মানুষের জন্য বস্ত্রের সংস্থান এবং প্রত্যেক ভারত কবাসীকে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী নিজেকে বিকশিত করার পূর্ণ সুযোগ দেওয়া।" নিজের মনেই বিড়বিড় করতে করতে রাস্তা পার হই। তীব্র হর্ন কান ঝাঁঝরা করে দেয়। ... ...
'হিন্দি' একটি ভাষাবিশেষ নয়। এটি একটি সংস্কৃতি। উত্তর ও মধ্যভারতের বিশাল এলাকা এই সংস্কৃতির অঙ্গ। পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল,জম্মু, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এর অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত প্রান্তেরই অসংখ্য নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি স্বীকৃত সরকারি ভাষা। কিন্তু যোগাযোগ রক্ষাকারী ভাষা হিসেবে এই সমস্ত জায়গায় হিন্দির কোনও বিকল্প নেই। হিন্দিবলয়ের কেন্দ্র হিসেবে যদি উত্তরপ্রদেশ ও বিহারকে নেওয়া যায় তবে দেখা যাবে এই দুটি রাজ্যেও বহু নিজস্ব ভাষা আছে। বিহারে ভোজপুরি (দুরকম, গঙ্গার উত্তর ও দক্ষিণে), মগহি, মৈথিলি, অঙ্গিকা প্রধান। উত্তরপ্রদেশে ভোজপুরি, অবধি,বুন্দেলখণ্ডি, পহাড়ি ইত্যাদি। একইভাবে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের হিন্দি, হরিয়ানভি, পূর্বি পঞ্জাবি (মনে রাখতে হবে পশ্চিম পঞ্জাব থেকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের ভাষা আলাদা ছিলো)। ... ...
যে নিরন্তর গণ আন্দোলন এখানে রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি, ইত্যাদি পাপ থেকে মুক্ত রেখেছিল, সেই আন্দোলন – যে চাপেই হোক – স্তিমিত হয়ে পড়ল, তাকে গতিময় রাখার কোনো চিন্তাগত প্রয়াস দেখা গেলনা। বাম নেতৃত্বের তরফে এই বিকাশ বিষয়ে কোনো অনুসন্ধান হয়েছে বলে জানা নেই। হয়তো তাঁরা এই পর্যবেক্ষণের ভার ছেড়ে রেখেছিলেন পেশাদার বুদ্ধিজীবীদের ওপর, বিস্মৃত হয়েছিলেন, বাম রাজনৈতিক দর্শনে বুদ্ধির চর্চাটা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীদেরই করতে হয়, ঠিকাদার নিয়োগ করে এ কাজ চলে না, এবং বুদ্ধিজীবীদেরও কর্মী হয়ে উঠতে হয়। ফল হয়েছে মারাত্মক, পেশাদার বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন এ-রাজ্যে একটা বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে। ... ...