রামজনমভূমি-বাবরি মসজিদ নিয়ে শীর্ষ আদালতের ৫ সদস্যের বেঞ্চের রায়ে যা বলা হয়েছে, এই কথাটাই তো ৩০ বছর আগে বলেছিলেন এল কে আদবানি। তখনও মসজিদ ভাঙা হয়নি, ১৯৮৯ সালে তাঁর সমাধানসূত্র ছিল মসজিদকে তুলে নিয়ে গিয়ে (রিলোকেট) নতুন জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হোক, আর সেই জায়গায় মন্দির তৈরি হোক। মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পর, আদবানি একদিকে বলেছিলেন, সেদিনটা (৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২) নাকি ছিল (মাই কান্ট্রি মাই লাইফ) তাঁর জীবনের সব থেকে দুঃখের দিন। আর বলেছিলেন, ভারতে এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই যে দল প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে পারে যে তারা ক্ষমতায় এলে নতুন করে ওই খানেই বাবরি মসজিদ তৈরি করে দেবে। শনিবার, ৯ নভেম্বর, শীর্ষ আদালতের রায় শোনার পর এই কথাগুলোই মনে পড়ে গেল। ... ...
কী ঘটেছিলো সেই রাতে কুপওয়ারা জেলার এই জনবিরল গ্রামদুটিতে ? অভিযোগ করা হয়েছে, কাছাকাছি কোথাও সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে রাতের বেলা রাজপুতানা রেজিমেন্টের সামরিক উর্দিধারীরা তল্লাসির নামে ঘিরে ফেলে গোটা গ্রাম। সাধারণ আবালবৃদ্ধবনিতাকে ঘেরাও করে রেখে চালানো হয় নির্বিচার ধর্ষণ। বৃদ্ধা থেকে বালিকা প্রায় একশ কাশ্মিরী নারী এই লালসার শিকার হয়। পরবর্তীতে মেয়েরা স্বাভাবিক ট্যাবু ঝেড়ে বার বার অভিযোগ করা সত্ত্বেও সৈন্যবাহিনীর অস্বীকার করাকেই চূড়ান্ত বলে মেনে নেওয়া হয় এবং এই অভিযোগকে পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ... ...
উর্মিমালা বসুকে 'কামপন্থীদের নতুন যৌনদাসী' অভিধায় অভিহিত করা হয়েছে। এত শুদ্ধ একটা বাংলা বানান-টানান ঠিক রেখে লেখার জন্য লেখককে অভিনন্দন। তবে কিনা লোকের কালো মনে সাদা নেই – লেখককে বা লেখকের অভাবে তাঁর পোষিত রাজনৈতিক দলকে ফুলের তোড়া পাঠানোর বদলে আমরা রেগে উঠলাম। এত অপমান! মেয়ে বলেই এসব শুনতে হবে! ... ...
তো, নেলী আমাদের সাথেই আছে, অনেক দিন ধরে আছে। নেলী, মানে নেলী নামের অঞ্চলটি, আসামের আর পাঁচটা ছোট মফস্বলের মতই। ঘন সবুজ ধানখেত, দিগন্তে মেঘালয়ের কালো পাহাড় দেখা যাচ্ছে, দুএকটা জায়গায় সেগুনগাছ-ঝোপঝাড়, ব্যস্ত বাজার, দূর্গাপূজার মন্ডপ, আর জামাকাপড় থেকে বড়সড় মুসলমানদের জনসংখ্যা অনুমান করা গেল। ১৯৮৩-র দিনটিতে কী হয়েছিল তার কোনো স্মারকচিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না। তবে এরকমই তো হওয়ার কথা ছিল। দিল্লী ১৯৮৪ বা গুজরাট ২০০২-হত্যাকান্ডকে রাষ্ট্র ন্যূনতম বিচারের মাধ্যমে জবাব দিয়েছে, তার কারণ তাদের প্রেতাত্মারা ফিরে ফিরে আসে। আর নেলী দেশের দূরের কথা, রাজ্যের রাজনীতিতেও এক বিস্মৃত অধ্যায়। গরিব, পাড়াগেঁয়ে মুসলমানরা মরেছে এরকম এক গণহত্যা কে মনে রাখে। দ্বিতীয়ত, যারা মরেছে মরেছিল অবৈধ বিদেশীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়। ফলে তাদের সুবিচারের দাবি আরেকটু নড়বড়ে হয়ে যায় বইকি। দিল্লী বা গুজরাটের মৃতদের ঠিকঠাক ধর্ম ছিল না, কিন্তু তারা যে ভারতীয় নাগরিক, অনুপ্রবেশকারী নয় এই নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই। তৃতীয়ত, হত্যাকান্ড ঘটেছে এক প্রান্তিক প্রদেশে, ভারতীয় মূলভূমি থেকে অনেক দূরে। তাই আমাদের জাতীয় যৌথ বিস্মৃতি ঘণ হয়ে ওঠে। সংক্ষেপে, নেলীর কথা কেউ শোনে না। একটি হত্যাকান্ডের পরোক্ষ বৈধতার জন্য যখন আগের একটিকে খাড়া করা হয়, নেলীর নাম তখনো আসে না। কেননা নেলীর মধ্যে পরবর্তী কোনো হত্যাকান্ডকে বৈধতা দেওয়ার মূল্যটুকু নেই। দেশের যৌথ স্মৃতির কাছে নেলী ঘটেইনি। ... ...
এই পুজোতে একজনের কষ্টের কথা শুনে যেন চোখের কাজলের মতো আরো ঘোরা কৃষ্ণবর্ণা হয়ে গেলেন দেবী। তার সঙ্গে আমার আলাপ তো বেশি দিনের নয়। তার গায়ের রঙ কুমারী গাছের ছায়ার মতো, বসন্তের শুরুতে যার ঝাঁকড়া মাথা জুড়ে নতুন পাতার রঙ হয় টকটকে লাল। সে মেয়ের চোখেমুখে কষ্টের কালি। স্বামী সন্তান ঘর, সব সে খেইয়ে লিয়েছে গ্য। সে এক আস্ত ডাইন। পিনাকী মিত্র বললো অন্য মানুষের পুজোর গল্প চাই, তাইতে আমার মনে পড়ল ফুলকুমারি মেঝেনের কথা। পুরুলিয়ার ফুলকুমারি। তার হাত ধরে গল্প করার সময় একবারও তো মনে হয়নি সে নাকি এক সব-খাওয়া ডাইন, যার নামে তার গ্রাম তো গ্রাম, আশেপাশের গ্রামগুলিও ভয়ে কাঁপে। ... ...
গত দু’দশকে ভারতের HCR দ্রুত কমে এসেছে। আর্থিক সংস্কার (মানে ১৯৯১-এর পর থেকে নয়াউদারনীতির প্রয়োগ) যে সফল হয়েছে তার প্রমাণ হিসেবে প্রায়শ এই HCR কমে আসার কথা বলা হয়। কী রকম কমেছে একটা ধারণা করে নেওয়া যাক। শহর অঞ্চলগুলোতে HCR কমেছে ৩২% (১৯৯৩-৯৪) থেকে ২১%-এ (২০০৯-১০)। গ্রামীণ এলাকায় কমেছে আরো দ্রুত হারেঃ ৫০% থেকে ৩৪%, একই সময়সীমায়। প্ল্যানিং কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯-১০-এর পরের দু’বছরে সারা দেশের HCR আরো ৮% কমেছে। ফলে ২০১১-১২-তে দারিদ্র্যের হার ২২%-এ নেমে এসেছে। সরকারি নীতি যারা ঠিক করেন তাঁরা, এবং তাঁদের সেনাপতি কাগজ-টিভিওয়ালারা, গরীবির ওপর জোরদার ধাক্কা নিয়ে প্রভূত আপ্লুত। অর্থাৎ, খুব তো শাইনিং ইন্ডিয়া শাইনিং ইন্ডিয়া করে গালমন্দ দিলে। এই দেখ প্রমাণ, আর্থিক সংস্কার সত্যি সত্যি ভাল কাজ করছে। না না, জনপ্রতি আয়-ফায় বাড়ার কথা বলছি না। সে তো মুকেশদা, রতনকাকুরা বেশি কামালে দেশের জনপ্রতি আয় বেড়ে যাবে, তাতে রামা কৈবর্তের কী এল গেল। ওসব ছেঁদো তর্ক থাক। সংস্কারের সুফল এক্কেবার নিচুতলায় পৌঁছোচ্ছে, বুঝেছ? ... ...
মতামত দিয়েছেন - যশোধরা রায়চৌধুরী, জয়া চৌধুরী, রৌহিন ব্যানার্জ্জি, অচল সিকি, সৌভিক ঘোষাল ... ...
ছবিটি প্রথম দর্শনে যতটা সরলরৈখিক দেখায় ততটা একতলবিশিষ্ট আদপে নয়, এবং ঠিক সে কারণেই পরিসর বা বিনির্মিত বিষয় বৈচিত্রে গাঢ় মনোযোগ ও বিশ্লেষণ দাবী করে। ছবি দেখে ফেলার পর যে চিন্তা ভাবনার অবশ্যম্ভাবী বুদবুদ ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে দর্শকের মন এবং মগজকে। তার এক সুদূরপ্রসারী আমেজ আর কথাজাল তৈরি হয়। অনেকটা সময় ধরে সে আমেজের বিস্তার, অনেকগুলি কথামুখের ধাপে তার অবধারিত আলোকপাত। মানসমুকুলের গপ্প তৈরি করার উপাদান অথবা গপ্পের বুননের ধরন, তার বাধাহীন এগিয়ে চলা, বাঁক নেওয়া বা ন্যারেটিভের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে উপনীত হওয়া, সমস্তটাই মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় গল্পের মেজাজ, অনুভূতির ভিত্তি এবং বিষয়ের সংগে। বলার ধরন এবং কি বলা হচ্ছে সেই বিষয়ের সনির্বন্ধ সমণ্বয়ে যে অভূতপূর্ব নির্মাণ প্রকল্পের ছায়াপ্রতিমা ক্রমপ্রতীয়মান হতে থাকে এই আপাত সহজ অথচ গভীর চলচ্ছবি-আখ্যানের সরল দ্রুতির চালে ছন্দে, বিষাদে, হরষে – সেই একান্ত শিল্পরূপটিই সহজ পাঠের গপ্প-কে চলচ্চিত্র হিসেবে একুশ শতকের বাংলা সংস্কৃতির চালচিত্রে অসাধারন করে তুলেছে। ... ...
প্রাচীন ভারতে সমকামিতা গর্হিত ছিল না। কিন্তু মানুষ ধীরে ধীরে যৌনতার প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে উঠল। এই পরিবর্তনের প্রমাণসাপেক্ষ বিবরণ পাওয়া যায় বৈষ্ণব সন্ন্যাসী অমর দাস উইলহেলমের ‘ইণ্ডিয়াস স্লো ডিসেণ্ট ইনটু হোমোফোবিয়া’ বইতে। লেখক ‘গে অ্যাণ্ড লেসবিয়ান বৈষ্ণব অ্যাসোসিয়েশন’ (GALVA) এর প্রতিষ্ঠাতা। ভারতীয় বংশোদ্ভুত লেখিকা-গবেষিকা রুথ বানিতা একাধিক বইতে বিশদভাবে একই বক্তব্য রেখেছেন। উইকিপিডিয়াতে বইয়ের তালিকা দেখে নিতে পারেন। ভানিতার সাথে যুগ্মভাবে ‘সেম সেক্স লাভ ইন ইণ্ডিয়াঃ রিডিংস ফ্রম লিটারেচার অ্যাণ্ড হিস্ট্রি’ বইয়ের সম্পাদনা করেছেন ইতিহাসের অধ্যাপক সেলিম কিড়ওয়াই। তিনি প্রথম ভারতীয় শিক্ষাবিদ যিনি স্বঘোষিত সমকামী । রামদেবের ‘হোমো-বাদ’এর উপর ‘আস্থা’শীল লোকজন বোধ হয় এঁদের নামই শোনে নি। কিন্তু এঁদের দৌলতে এখন অনেকের কাছেই প্রতীত যে, সমকামিতা ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ‘হেয়ারলুম’ । এছাড়া ছোটখাটো অগুনতি লেখায় প্রাচীন ভারতে ও প্রাচীন সাহিত্যে সমকামিতার কাঁড়ি কাঁড়ি উদাহরণ পড়েছি। ... ...
এটার নাম সোনা-অষ্টমী। মানে সোনাগাছির অষ্টমী। এমনিতেই সারা বছর দ্যাখনদারি রোশনাইতে ভরে থাকে হিজবিজবিজ গলিগুলো। অষ্টমীর দিন তার যৌবন যেন ফেটে পড়ে, কী উদ্দাম, আর কী নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ ! এতো সুন্দর মুখ, ঝলমলে সাজ আর পালিশ করা কথা ! স্বপ্নাকে আধো অন্ধকারে মনে হচ্ছে যেন কোনো রাণী। এই গলি যেখানে বড় রাস্তায় মিশেছে সেখান থেকেই শুরু ছোট ছোট টুনি বালবের চাঁদোয়া। তার আভা এসে ওর গালে পড়েছে। তালাবন্ধ আপনে আপের সেন্টারের দেওয়ালে হেলান দেওয়া মেয়ে অষ্টমী পুজো উদযাপন করবে ব'লে খদ্দেরের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ... ...
পুরুলিয়ার তেলকুপি এক ঘুমন্ত গ্রাম। পুজো নেই, ঢাকের বাদ্যি নেই, তবে মেলা কাশফুল। এখানে গাড়ি থামিয়ে জানালা দিয়ে গ্রামবাসী নিজে থেকেই বলতে থাকেন, এই হলো গে প্রাচীন তৈলকম্প গ্রাম, হাজার বছর আগে শিখর রাজবংশের রাজধানী। ঐ যে দেখছেন নদীগর্ভে অর্ধপ্রোথিত দেবালয় ওই হ'লো মা মহামায়ার মন্দির। ওই যে বেনাঘাসের বনে মাথা উঁচু ক'রে আরেকটি, ওটি ভৈরবের থান। আমি জিতেন মাঝিকে বলি, কতো নেবে দাদা নৌকো ক'রে মহামায়ার মন্দিরে যেতে ? একথা জেনেই বলি যে আসলে এইগুলি সবই জৈন দেউল। কালের প্রকোপে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের বলশালী দেবতার চাপে কখন হিন্দুমন্দিরে পরিণত হয়েছে কেউ জানে না। নৌকা যখন চড়ায় ঠেকে, মন্দিরের ভেতর ঢুকে দেখি কোন দেবতা নেই, কিন্তু স্থানীয় অর্চনার ছাপ আছে তেল সিঁদূরে। জিতেন বলে এইরকম অনেক মন্দিরে পশুবলিও দেওয়া হয়। ... ...
সুজিত মিনজকে মারলো কে সে এক বিশাল ধাঁধাঁ। যে ঘরে তার আধপোড়া শরীর পাওয়া গেল সেটা বেদান্তের ক্যাম্পাসের একেবারে ভেতরে সিসিটিভি রুম হিসেবে ব্যবহার হয়। মৃতদেহের হাত পা লোহার তার দিয়ে বাঁধা ছিল। দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা হলে এরকমটি হবার কথা নয়। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য আন্দোলনকারীরাই তাকে মেরেছে। কিন্তু সুজিত মিনজ ডোঙারিয়াদের ঘরের লোক। স্বজাত। পেটের দায়ে বেদান্তে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করতো। তাকে মেরে আন্দোলনকারীদের কী লাভ। ... ...
মিছিল শেষে বাড়ি এলাম এই। পা দুটো ব্যথা করছে, গলা চিরে গেছে, হাততালি দিয়ে দিয়ে হাত দুটো লাল। মা দরজা খুলে দিয়ে একটু কটমট করে তাকাল, কিন্তু আমি হাত পা ধুয়েই রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের জল চাপিয়ে দেওয়ায় আর বেশি রাগ দেখাল না। টেবিলের একপাশে বসে মা খাতা দেখছে, আমি মাকে চা দিয়ে নিজের কাপটা নিয়ে অন্যদিকে বসলাম। সারাদিন ফোনটার দিকে তাকাই নি আজ, দুটো একটা ছবি তোলা ছাড়া। ছবিগুলো দেখলাম ভালোই হয়েছে, যদিও তোলার সময় থরথর করে কাঁপছিলাম রাগে। শেয়ার টেয়ার সেরে গ্রেটা থানবার্গের নতুন স্পিচটা দেখব বলে হেডফোন গুঁজছি কানে, মা একবার মুখ তুলে তাকাল। এটার মানে সবই তো হল, পড়তে কখন বসবে? আমিও চোখ নামিয়ে প্লে করলাম, মাত্র কয়েক মিনিটের স্পিচ, মা মুখ খোলার আগেই হয়ে যাবে। রাগে মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে গ্রেটার, এতটাও আগে দেখিনি কখনো। ... ...
আলো, আনন্দ, প্রেম কই সেভাবে তো ছুঁয়ে গেল না করতল! সেভাবে একটা কোনও সীমারেখা হয়ে উঠল না আমার দেশ। কোথাও ইচ্ছেমতো বাঁচতে চাওয়া হলো না। তবে এত না এর মধ্যে একটা সমাজ কাকে চাইবে! কাকে দেবে তার আয়ের শতাংশ! চারপাশে ছড়িয়ে আছে অধিকার। অধিকার আর অধিকার। যে তোমাকে কেড়ে নিতে শেখাবে, যে শেখাবে হত্যা, রক্ত আর বিরাট একটা অধঃপতন। মানসিক এবং মানবিক কোনও ভাবালুতা তার কাছে বোকামি মাত্র। এইযে দেশ ছেড়ে যারা বসবাস গড়ে তুলেছিল অন্য একটা সীমারেখায়। ... ...
প্রথম থেকে এই তালিকা বিয়োজনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। বর্তমানে এনার্সি শুধু আসাম নয়, ভারত নয়, এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রক্ষাপটেও একটি উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয়। প্রতিটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী, তাদের গণসংগঠন, প্রতিটি ভাষিক গোষ্ঠী, তাদের প্রতিনিধিত্বকারী দল উপদল, প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠী যাদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ভূগোল-ইতিহাস, তারা নিজের সুবিধামতো, নিজের রাজনৈতিক লাভ, সামাজিক লাভ ক্ষতি বিবেচনায়, একটি করে আনুমানিক সংখ্যা ঠিক করেছেন, এবং প্রত্যাশা করেছেন সেই সংখ্যাই প্রতিফলিত হবে এনার্সির চূড়ান্ত তালিকায়। অসমীয়া চেয়েছেন বাঙালির নামকর্তন হোক প্রভূত পরিমাণে, বাঙালিরা উল্টোটা চেয়েছেন। হিন্দুরা চেয়েছেন মুসলমান বিতাড়িত হোক এই ভূখণ্ড থেকে, মুসলমানরা চেয়েছেন মুসলমানের সংখ্যা কম হোক, হিন্দুরা চিহ্নিত হোক বেশি পরিমাণে। এবং এই ভাবেই সম্পূর্ণ নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে নাম বিয়োজনের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে এনার্সির চূড়ান্ত তালিকা। ... ...
ইদানিং আরেক পরেশানি হয়েছে মতির এই দলজিৎ সিংকে নিয়ে। ছেলেটার নাম তাই। খুব ভাব এখন মতির সঙ্গে। প্রায়ই আসে এ পাড়ায়। পেছনের গেট দিয়ে সোজা ঢুকে পড়ে মতির আস্তানায়। আঙ্কল আঙ্কল করে পাগল। অবাক হয়ে যায় শক্ত মোটা ভিশতি দেখে। খুঁটিয়ে জানতে চায় কী করে তৈরী হয়। অগত্যা অমলতাসের হলুদ পাঁপড়ির ওপর থেবড়ে বসে মতি খবর দেয় কী করে বকরি ইদের পরে সেরা ছাগচর্ম বেছে নিয়ে তাকে ফোটানো হয় বিরাট লোহার কড়াইতে। তার সঙ্গে মেশানো হয় কিকার গাছের বাকল। এই বাকলের সাপ্লাই আসে অনেক দূরের দেশ আফ্রিকার উত্তরি ভাগ থেকে। বারবার ফোটানোর পর কম-সে-কম কুড়িদিন ভিজিয়ে রাখা হয় ওই কড়াইতে। কিকার-জল থেকে চামড়া যখন তোলা হয় তখন সে আর চামড়া নেই। হয়ে গেছে ইষৎ হলদে মাখনের মত নরম। এইবার আচ্ছা করে মোষের চর্বি ঘষা হয় বাইরে দিকটাকে জলনিরোধক করার জন্য। কিকার-জলের এত গুণ যে সব দূর্গন্ধ, সব খতরনাক জীবানু ধ্বংস করে চামড়াকে একেবারে ঝাঁ চকচকে করে দেয়। শেষে দক্ষ হাতে ভিশতিতে সেলাই পড়ে। ... ...
ছবি দেখার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে? (অথবা, রাগসঙ্গীত শোনার? সাহিত্যপাঠের? কিম্বা, ভালো সিনেমা দেখার? এককথায়, শিল্পবিষয়ে সচেতন চর্চার কি আদপেই কোনো যুক্তি আছে?) ভেবেছিলাম, এই প্রশ্নের অতি স্বাভাবিক উত্তরটি অস্তিবাচক। কিন্তু, কিছু আলাপ-আলোচনার শেষে বুঝলাম, এই প্রশ্নের সর্বজনগ্রাহ্য উত্তর পাওয়া মুশকিল। যেমন, আমার মনে হয়, এই অভ্যেস জরুরী। এই প্রসঙ্গেই, আগের একটি লেখায় বলেছিলাম, নান্দনিকতার বোধ গড়ে তুলতে এই অভ্যেস অবশ্যপ্রয়োজনীয়। পশ্চিমী দেশে, স্কুলের বাচ্চাদের নিয়মিত আর্ট গ্যালারী বা চিত্রপ্রদর্শনীতে নিয়ে যাওয়ার চল রয়েছে। এবং, শুধু দেখাই নয়, ছবি দেখে কেমন লাগলো, সেই অনুভব নিয়ে তাদের দস্তুরমতো লিখতেও হয়। এইভাবেই নান্দনিকতার বোধ তৈরী হয়, আর সাথে সাথে নিজের ভালো লাগাটিকে বিচার বা বিশ্লেষণ করার বোধটিও তৈরী হয়। সুকুমার হৃদয়বৃত্তির গঠনে এমন চর্চা বা পাঠ জরুরী, এমনই আমার ধারণা। ... ...
চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন (যার অনেকগুলোই গড়ে উঠেছে লাগাতার চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিক্রিয়ায়) পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন যে বিগত দেড় বছরে নানা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নার্সিংহোম বা ব্যক্তিগত চেম্বারে ভাঙচুর লাঞ্ছনা এবং নিগ্রহের ঘটনা একশো ছাড়িয়েছে। মহিলা চিকিৎসকরাও বাদ যাননি এর হাত থেকে। মেদিনীপুরের ডেবরায় এক চিকিৎসকের মুখে মানুষের বিষ্ঠা মাখিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন প্রবীণ চিকিৎসক অপমানের ভয়ে ও পেশার চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। বহু সরকারি চিকিৎসক চাকরি ছাড়তে উন্মুখ, এবং অনেকে পদত্যাগপত্র দাখিল করে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে চিকিৎসকদের সংগঠনের বিবৃতিতে জানা গেছে। কিন্তু সরকার তাদের পদত্যাগ করার বা স্বেচ্ছাবসরের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করেছেন। চিকিৎসকদের আরও অভিযোগ যে সরকারি ডাক্তারদের নিরাপত্তা দেয়া দূরে থাক, বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাসক দলের স্থানীয় নেতানেত্রীরা এই গণপিটুনির প্রধান পরামর্শদাতা ও চালিকা শক্তি। ... ...
তা হলে, শ্রীরাম কি শরতে যুদ্ধ করেন নি? এই নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে৷ কারণ, বিন্ধ্যের দক্ষিণে এই পুজো করলেও তার আগে অযোধ্যায় দুর্গাপুজোর উল্লেখ কোনও রামায়ণে নেই৷ বাল্মিকী রামায়নে অকালবোধনই নেই৷ এমন কি, বনবাসের আগে বা পরেও কখনও তিনি অযোদ্ধায় দুর্গা পুজো করেছেন বলে কোনো উল্লেখ নেই। ... ...
সাবেক এমসিআই নিয়ে হাজার অভিযোগের মধ্যেও একটা স্বস্তি ছিল - সেফটি ভালভ-ও বলতে পারেন - যে, তার প্রতিনিধিরা নির্বাচিত, চিকিৎসকদের ভোটে নির্বাচিত। ঠিক যেমন, দেশের হাল নিয়ে যত আক্ষেপই করি না কেন, গণতন্ত্রের শক্তির উপর আমাদের আস্থা সদা অটুট। আমরা আশা রাখি, বেশী বাড়াবাড়ি করলে সেই নেতাকে আমরা ভোটে হারিয়ে ক্ষমতাহীন করে ফেলতে পারব - না, শেষমেশ পেরে উঠি না হয়ত - কিন্তু, এই আশাটা একটা বড় জোরের জায়গা, এবং নেতারাও কোনো এক জায়গায় সচেতন থাকেন, যে, পরের দফায় তো ভোটে জিতে আসতে হবে। এনএমসি বিল সেই আস্থার জায়গাটাই ভেঙে দিয়েছে। প্রস্তাবিত কমিশনের বেশীর ভাগ সদস্যই হবেন কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক মনোনীত। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্ত্বেও সেই কমিশনে নিয়মিত ভিত্তিতে অধিকাংশ রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব থাকার অবকাশ নেই। রাজ্যের প্রতিনিধিরা যেখানে থাকবেন, তাঁদের ভূমিকা মূলত পরামর্শদাতা বা উপদেষ্টার - সেই পরামর্শ অনুসারে চলতেই হবে, কমিশনের এমন বাধ্যবাধকতা নেই। ... ...