ঝড়ের থেকে জলকে ভয় বেশী। আয়লার সময় সব ভেসে গিয়েছিল। এবার নদীর মাটির বাঁধ কোথাও কোথাও ভেঙ্গেছে, কিন্তু জল ঢোকেনি গ্রামে। অঞ্চলে বারো আনা বাড়ি মাটির। ঝড়ে চাল উড়ে গেছে - কিন্তু সারাতে বেশী অসুবিধা হয় নি। খড় বাড়িতে থাকেই। খরচা বলতে দুদিনের মজুরি ৬০০। ঝড়ের দুদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। টিউব ওয়েল আছে, যদিও দূরে দূরে। তবু পানীয় জলের অসুবিধা নেই। ... ...
টেস্টিং এর ক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পার্থক্যও লক্ষনীয়| ২৫শে মে পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যেখানে মহারাষ্ট্রে টেস্ট ৩,৭৯,১৮৫, কেরালায় ৬৩,০০৯, পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যাটা ২০শে এপ্রিল অব্দি ছিল ৫৪৬৯ আর মে মাসের ২৫ তারিখে ১,৪৮,০৪৯| বিগত প্রায় এক মাসে পশ্চিমবঙ্গে টেস্টের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে| প্রতি পজিটিভ কেস পিছু টেস্টের সংখ্যা এই মুহূর্তে চল্লিশের (৩৮.৮) কাছাকাছি। ১০ই এপ্রিল নাগাদ এই সংখ্যাটাই ছিল ১৮| তুলনায় কেরলে ১০ই এপ্রিল নাগাদ এই সংখ্যাটা ছিল ৩৬.৭ আর ২৫শে মে’র হিসাব অনুযায়ী, ৭০.২, দুক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দ্বিগুন| অর্থাৎ শুরু থেকেই পজিটিভ কেস পিছু বেশিমাত্রায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির টেস্ট করে কেরলে যেখানে কোভিড প্রায় নিয়ন্ত্রণে, সেখানে এই রাজ্যে কম রোগলক্ষণযুক্ত বা উপসর্গহীন অথচ সংক্রমিত এমন অনেক মানুষ এখনও অধরা থাকার সম্ভাবনা প্রবল| ... ...
আর কী-বা সেবা দিতে পারি ফ্রিতে, দুশমনের ঠাণ্ডাতম দিনে... একদিন ছন্দ মেলাতাম, একদিন অন্ত্যমিল দিতাম, একদিন প্রেম ভেঙে যাওয়ার ছমাস যেতে না যেতেই ছটফট করতাম নতুন প্রেমের জন্য, আর এখন হারপিকের ফাঁকা কৌটোর দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি সারাবসন্ত... আগের প্রজন্মের উন্মাদেরা সব কী করছেন এখন? নতুন বইটা তারা কি পড়লেন? কারুর হাতে কি জ্যান্ত হলো? কেঁপে উঠল কি কারও তালুর ওপর? কোথায় প্যাঁচাদের চিয়ার্স? আজ মাপবো হেমিস্ফিয়ারের জ্যামিতি-আকার-আয়তন... তার ব্যাপ্তি... একটা লোক অনর্গল হয়ে গ্যাছে বাংলাভাষার সাথে মিশে... এটা রোগ না নেশা না সিদ্ধি না অভিশাপ না চক্রান্ত না ভ্রান্তি না প্রতিভা না পরিশ্রম না নিউরোপ্রবাহ না প্রলাপ না পলায়ন না প্রারব্ধ না ট্রান্স না মোনোটনি...? ... ...
শিল্প আর শিল্পী নাকি আলাদা। এই আবেগ ভ্যাদভ্যাদে মৃত্যুদিনে সেসব কথা ভাবতে ভালো লাগেনা। এ সব ব্যক্তিগত অনুভূতি বড়ই ব্যক্তিগত। ফিল্ম টিল্ম গোল্লায় যাক, গোল্লায় যাক শিল্পের শবসাধনা, কবিতার বদলে ট্রামে ছেঁচড়ে যাওয়া জীবনানন্দের ডেডবডি মনে পড়ে। সেই দশকে নাকি ওটাই ছিল একমাত্র ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যু। তাকে আপতিক ভাবতে অসুবিধে হয়, যেমন অসুবিধে হয় ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে একজন সফল ফিল্ম মেকারের মৃত্যু। আসলে তো তাঁকে নেই করে দেওয়া হল। টিভিতে, খবরের কাগজে, সোশাল মিডিয়ায় যত কলকাকলি আর হাহুতাশ দেখি, সব শুধু সিনেমা। সিনেমা সিনেমা আর সিনেমা। লোকটা কোথাও নেই। কিন্তু আজ তো সিনেমার দিন না। একটা লোক মারা গেছে। একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। সে শুধু সিনেমা নয়। নিজের আইডেন্টিটিকে সে কখনও সিনেমা দিয়ে ঢাকেনি। মেয়েলি দোপাট্টা পরে কানে দুল ঝুলিয়ে টিভি শোতে এসেছে। যত বয়স হয়েছে তত নরম হয়েছে তার গলার আওয়াজ, আর তীব্রতর হয়েছে তার আইডেন্টিটি। নমনীয়তাকে, নরম স্বরে কথা বলাকে আমরা পুরুষের দুর্বলতা বলে ধরে নিই। কিন্তু ঋতুপর্ণ জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, ব্যাপারটা অতো সোজা নয়। যতগুলো নতুন পুরস্কার ঝুলিতে ঢুকেছে, ততই মেয়েলি হয়েছেন তিনি। ততই নরম হয়েছে তাঁর কণ্ঠস্বর। মেয়েলিপনাকে শক্তি দিয়ে আগলে রেখেছেন। ছুঁড়ে দেওয়া ইঁটগুলোকে, "লেডিস ফিংগার" তাচ্ছিল্য আসবে জেনেও, আঁকড়ে ধরেছেন ওই মেয়েলি আলখাল্লাকে। সেই নরম সাহস, সেই এফিমিনেট দৃঢ়তা ছাড়া ঋতুপর্ণ নেই। হয়না। ... ...
সবকিছু শেষ হয়ে আসছে শ্যামলী জানে। সুবিমলের মাথার ভেতরের ঐ আলোআঁধারি জগত একদিন ওকে গিলে নেবে; আর ফিরতে দেবে না এই ক্ষয়াটে শহরের বাস্তবতায়। সুবিমল টের পায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠতে গিয়ে পা টলে যায়। ভুল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আধঘন্টা পরে বুঝতে পারে ঠিকানা ভুলে গেছে। মাঝে মাঝে মাথার ভেতরটা ছিঁড়ে যায় যন্ত্রণায়। কোনোকিছুতে মন বসাতে পারে না। গভীর রাতে কী যেন অজানা ভয়ে জেগে উঠে শুনতে পায় সারা ঘরময় খুকির খেলনাগুলো, বাঁকুড়ার ঘোড়াগুলি ঠকঠক শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে একলা হয়ে যাচ্ছে ও। ... ...
বস্তুত আমাদের সকলের চোখের সামনে এই সমস্যা ক্রমশ যেন এক টইমবোমার রূপ নিচ্ছে, যা যে কোনো সময়েই ফেটে পড়তে পারে। অথচ রাষ্ট্রের দিক থেকে এ নিয়ে কোনো কেন্দ্রীয় নীতি থাকা তো দূরস্থান, এমনকি সমস্যাটির যথাযথ স্বীকৃতিদানেও অনীহা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, যা শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, চূড়ান্ত অমানবিকও বটে। ... ...
এই গণেশকে সঙ্গে নিয়েই একদিন আমি পৌঁছে গেলাম স্বর্গলোকে, এবার ঠিক সময়ে। মেহফিল তখন সবে জমে উঠেছে। স্বর্গলোক দ্বিতল বিশিষ্ট। উর্ধভাগে গন্ধর্ব-কিন্নরদের নাচ, ভূ-গর্ভস্থ কক্ষে সর্বসাধারণের জন্য নৃত্যাঙ্গন। দেখলাম সেই অনিন্দ্যসুন্দর স্বল্পবসন দিব্যপুরুষদের নাচ দেখার জন্য শুধু আমরা সমকামি পুরুষরাই নই, বহু নারীরাও ভিড় জমিয়েছেন। স্টেজের ওপর নাচের সঙ্গে সঙ্গে বহু ডলারের টিপ্সও হাওয়ায় উড়ে চলেছে। পরে অবশ্য দেখলাম, যা কিছু নোট উড়ে চলছে তার বেশির ভাগটাই এক ডলারের নোট। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ আরো উদ্দাম হতে লাগলো। আমাদেরও তখন অল্প অল্প নেশা হওয়া শুরু হয়েছে। স্টেজ থেকে নেমে এসে একজন দিব্যপুরুষ আমাদের সঙ্গে এসে বসলেন। সাধারনতঃ এই সময়, আধো আলোছায়াতে, একটুকু ছোঁওয়াছুঁয়ির ফাল্গুনি শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আমার কপাল খারাপ। গণেশ আই আই টি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করে এসে এম আই টিতে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র। বামপন্থী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। অতএব ও গে বার ডান্সারদের সমাজতাত্তিক ইতিবৃত্ত জানতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিউটি (দিব্যপুরুষের এই নামই আমি দিয়েছিলাম) খানিকবাদে বিরক্ত হয়ে অন্য টেবিলে উঠে চলে গেল। গণেশ অবশ্য তার আগে ওর হাতে বেশ একটা ভালো টিপস দিয়ে দিল। ... ...
আই টি সেল যা করে যাচ্ছে তা ক্ষমার অযোগ্য। একে তো বাবা মহাদেব কা গুসসা বলে ধর্মীয় রঙ চড়াচ্ছে। সঙ্গে আছে চূড়ান্ত অসংবেদনশীল সব মিম। কোনটায় আমপানের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাচ্ছে এইরকম দেখানো হচ্ছে, কোনটায় মুখ্যমন্ত্রী ও আমপানকে মিলিয়ে হরেক মজাক। হাসি মশকরা করবার এই কি সময় ! যে বাঙালিরা এতে খুশি হচ্ছে, হাসছে, তারা জানে না পুড়ে মরবার আগে লেলিহান অগ্নিশিখাকে পতঙ্গের বড়ই লোভনীয় মনে হয়। ওদিকে রাজ্যপাল আর ১৮ জন সাংসদ দুপুর গড়িয়ে গেলেও চুপ। মুখে কোনো রা নেই। তবে কি এটাই এ দেশের রাজনীতির প্যাটার্ণ হয়ে গেল যে বিরোধী পক্ষ চূড়ান্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে চূড়ান্ত বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে যাবে ? সংসদে দাঁড়িয়ে বলবে, এই রাজ্য সরকারকে কোনো ত্রাণ দেবার দরকার নেই ? ... ...
সাহিত্যের ভাষা ভৌগোলিকভাবে যেখানকারই হোক না কেন তা তো কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই চলবে। সুতরাং, আমি যেখানেই থাকি, আমার মাতৃভাষা যাই হোক, এই ছোঁয়া ঠিক লাগবেই। কারণ, একমাত্র একজন লেখকই অনুসন্ধান করেন আর কোথায় কি লেখা হচ্ছে। ... বছর কুড়ি আগে কলকাতায় এই সাক্ষাৎকারটি দেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। ... ...
ঈদ বলতে বুঝি, কয়েকজনের বাড়িতে বচ্ছরকার নেমন্তন্ন। বিরিয়ানি, সেমাই, হালিম। ব্যস। আর রইল জাকারিয়া স্ট্রিট। আমাদের সেকুলারিজমের প্র্যাকটিক্যাল খাতা। ঈদ নিয়ে তাই আমার বলার কিছু নেই। করোনা, লকডাউন আর সাইক্লোনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া সময়ে তেমন করে ঈদ এলই বা আর কই! আমি বরং বলি কয়েকজন খুচরো মানুষের গল্প, যাঁদের আজ, এই ঈদের সন্ধেয় আচমকা মন পড়ছে, অকারণেই। একজন বর্ণহিন্দুর চোখ দূর থেকে দেখেছে যে 'অপর'দের, তাদেরই কয়েকজন। ... ...
ইদের দিন খুব ভয় লাগত আমাদের । আবার সেই "তোদের আর তোরা কি যেন খাস....ওই যে...." এসব মনভাঙা কথা চলে আসত। সমষ্টিতে বাঁচতে চাওয়া দুই শিশু আবার একঘরে হয়ে যেত। হাসাহাসি হবে খাবার নিয়ে, উৎসব নিয়ে। বেজায় লজ্জিত হয়ে কুঁকড়ে বসে থাকতে হত দিন দুয়েক। মা খুব মনোযোগ দিয়ে পাড়ার কাকিমাদের সঙ্গে ভিড়তে চেষ্টা করত। তার জন্য সিঙ্গার কোম্পানীর টকটকে গুড়ো লাল রংটাই মাথায় দিত। মানে সিঁদুর দিলে জাত যাবে। আর লাল রং দিয়ে জাতে ওঠা যাবে। আসলে.... "ও আপনিও সিদুঁর পড়েন?" এই বাঁধ ভাঙা আবেগের মধ্যে এক মুসলমান মহিলাকে ভীষণ করে কাছে টেনে নেওয়া যায়! মায়ের সেই কাছে যাওয়ার টান ছিল। প্রয়োজনও ছিল। নিজের সন্তানদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতেই মা সকলের মাঝে আমাদের মিলিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। মুসলমান মায়ের সিঁদুর দেখে যদি তার ছেলে মেয়েদের খেলা নেয় সবাই,যদি তাদের ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে না দেয় সেটাই তো আসল কথা। ... ...
করোনার ক্রান্তিতে গত ২৬ মার্চ, স্বাধিনতা দিবস থেকে সারাদেশে গণছুটি ও গণপরিবহণ বন্ধ রেখে দফায় দফায় বাড়ানো হয় লকডাউন। সবশেষ ঈদের কেনাকাটার জন্য ১০ মে থেকে আংশিক লকডাউন শিথিল হলো। দোকান-পাট, মার্কেট ও শপিং মল সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত খোলা রাখার ঘোষণা এলো। সরকারের পক্ষ থেকে সবখানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাস্তবে দেখা যায়, করোনাকে মোটেই কেয়ার করছে না বাঙালি। দোকান-মার্কেট-শপিং মলে ঘেঁসাঘেষি আর ঠেসাঠেসি করেই চলছে কেনাকাটা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বেরিয়ে এলো প্রচুর ব্যক্তিগত যান, সিএনজি চালিত অটো-রিকশা, অবৈধ ইঞ্জিন রিকশা, রিকশা, ভ্রাম্যমান হকার ও সাধারণ মানুষ। আইন-শৃংখলা বাহিনীও সরিয়ে নিলো তাদের টহল ও নজরদারি। ... ...
প্রদীপ হল (হ্যাঁ হল) আদি গঙ্গার পাড়ে। ফলতঃ প্রদীপের ছাদ ও ব্রিজের রাস্তা একই লেভেলে। রাস্তার ওপর টিকিট ঘর। টিকিট কেটে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে হতো। প্রদীপে টিকিট ছিলো ৫০ ও ৬৫ পঃ। ব্যালকনি নাই। কারণ থাকা সম্ভব নয়। থাকলে টিকিটের দাম হতো ১টাকা। ও কেউ কিনতো না। ১টাকা দিয়ে সিনেমা দেখার বিলাসিতা ঐ অঞ্চলে কারুর ছিলোনা। সামাজিক অবস্থান। কে পি রায় লেন, ইউ কে মন্ডল লেন সংলগ্ন অঞ্চল। কলকাতার বেশ পুরোনো লালবাতি এলাকা ও বাংলার ঠেক। একটি সরকারী গাঁজা-চরস-আফিমের আবগারী দোকানও ছিলো। সে সত্যযুগে সরকার এসবও বেচতেন। হাজার হলেও জনকল্যানমূলক রাষ্ট্র। ফলে প্রদীপে সিনেমা দেখতে যাওয়ার নিষিদ্ধ যাত্রা কদাপি বড়দের কানে গেলে কান কামস্কাটকায় চালান অবধারিত। ... ...
কোভিড-১৯ মহামারীর সামগ্রিক প্রভাব বুঝতে গেলে, শুধুমাত্র কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, এই রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা, কোভিড-১৯ কেস সনাক্ত করতে পরীক্ষার সংখ্যা- এই সূচকগুলোর ওপর জোর দিলে হবে না। এপিডেমিওলজিক্যাল মডেলগুলোর পূর্বাভাসও একটি অসম্পূর্ণ চিত্রই প্রকাশ করে, কারণ মডেলগুলো বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন বয়েসের এবং পেশার মানুষ- মহিলা ও পুরুষ- কিভাবে সামাজিক ভাবে মেলামেশা করে সেই জটিল ব্যাপারটাকে একত্রিত করতে পারে না কারণ ডেটা নেই। আবার মহামারীটির প্রভাবের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে মডেলগুলো শুধুমাত্র উপরোক্ত সূচকের কথাই বিবেচনা করে- ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এপিডেমিওলজিক্যাল মডেলগুলো বলে যে দু-সপ্তাহ লকডাউনের থেকে চার-সপ্তাহ লকডাউন ভালো, চারের থেকে আট ভালো ইত্যাদি। কিন্তু সার্বিক বিচারে সেটা ঠিক নাও হতে পারে, দেখা যাক আমাদের সার্ভে কি বলে। ... ...
প্রশ্ন করা যাক, এই সংস্কারে কাদের লাভ, কতখানি লাভ। ভারতে এখনও সত্তর শতাংশ বিদ্যুৎই তাপবিদ্যুৎ। সবচেয়ে বেশি কয়লা খরচ হয় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেই— ২০১৭-১৮ সালের হিসেব বলছে, ভারতে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল মোট ৮৯৬.৩৪ মিলিয়ন টন কয়লা, তার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবহৃত হয়েছিল ৫৭৬.১৯ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ ৬৪.৩% । কাজেই, কয়লাখনি বিক্রি হলে কাদের লাভ, সেই খোঁজ করতে গেলে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার খোঁজ না নিয়ে উপায় নেই। ভারতে সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার নাম আদানি পাওয়ার লিমিটেড— মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২,৪১০ মেগাওয়াট। আছে অনিল অম্বানির রিলায়েন্স পাওয়ার— উৎপাদন ক্ষমতা ছ’হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। সস্তায় কয়লার ব্যবস্থা হলে মন্দ কী? এ ছাড়াও লাভবান হবে টাটা পাওয়ার, জেএসডব্লিউ। প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির জন্যও বিবিধ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটা অনুমান করার জন্য কোনও নম্বর নেই যে দেশের পয়লা নম্বর বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থার মালিকের নামও গৌতম আদানি। ... ...
এরা দুই বোন এবার ঈদে কোন নতুন জামা নিবে না বলে দিল! ওরা দুই বোন ঈদে নতুন জামা নিবে না এই কথা ওদের মুখ থেকে না শুনলে হয়ত আমার জীবনেও বিশ্বাস হত না। কিন্তু আমি শুনলাম এবং বিশ্বাস করলাম। খুব আশ্চর্য হয়েও মনে হল এ কেমন ঈদ এসে হাজির হল? এমন হবে কেন? বাচ্চারা যদি ঈদের আনন্দ না করে তাহলে ঈদের আর থাকল কী? ঈদ এলে তো আর আকাশে ঈদ লেখা ভেসে উঠে না। এই বাচ্চারা যখন নতুন কাপড় পরে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় তখন ঈদ লাগে, ধুপ করে সালাম করে সালামি চায় তখন ঈদ হয়, প্রতি বাড়িতেই খাওয়া দিবে, অত খাওয়া অসম্ভব জেনেও ওরা প্রতি বাড়িতেই যাবে এবং আর খেতে পারব না বলেও খাবে, খেয়ে বের হয়েই আর খাওয়া যাবে না, এখন যেখানে যাব সেখানে কিচ্ছু খাব না, শুধু দেখে করেই চলে আসব! ... ...
তবে ভাইরাসকে নিয়ে সহবাস করা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি হতে যাচ্ছে একথা বলার জন্য পণ্ডিত হবার প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত মনে পড়বে কাম্যুর প্লেগ উপন্যাসের কথা। সে উপন্যাসের মূল চরিত্র ডঃ রু (Rieux) ফ্রান্সের কাল্পনিক ওরান শহরের মহামারি প্লেগের চিকিৎসা করতে গিয়ে বলছেন – “I have no idea what’s awaiting me, or what will happen when this all ends ... For the moment I know this: there are sick people and they need curing.” মানুষ যত্ন চায়, মমতা চায়, সহমর্মিতা চায়। তাই “what will happen” জানা না থাকলেও আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এমনকি ভারত সরকারের করোনা অতিমারির জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজের মাত্র ০.৭৫% (১৫,০০০ কোটি টাকা) স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও। ... ...
আগে ঈদ মানেই ছিলো নতুন জামার মোহ। পাড়ার কার জামাটা সবথেকে সুন্দর তার কম্পিটিশন। রোজা শুরু হওয়ার পর থেকেই সন্ধ্যে বেলায় নিউয়ের আবদার শুরু হতো... আম্মু আমরা কবে ঈদের বাজার করবো? সবার জামা হয়ে গেলো আমাদের এখনো হয়নি। আম্মু বলতো আগে আগে জামা কিনে নিলে সবাই দেখে ফেলবে তাই একটু দেরী করেই কিনতে হয় মা। কিন্তু এখন বুঝি, আম্মু আসলে ছোটো শিশুদের বুঝতে দেয়নি এখন টাকাপয়সার টানাটানি, আব্বুর হাতে টাকা না আসলে কি করে জামা কিনে দেবে? এখন ভাবি আমরা কি স্বার্থপর ছিলাম তখন। কখনও ভাবিনি আব্বু আম্মু ঈদে নতুন কি জামা কিনলো? নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। আমার আম্মু তখন পুরোনো শাড়ীতেই ঈদ কাটাচ্ছে কিংবা খুব বেশি হলে একটা সূতির ছাপা শাড়ী। আব্বু বেচারার তো কিনে দেওয়ার কেউ ছিলো না। নিজের জন্য বোধহয় ঈদে কিছু কিনতোও না। এখন আমার আব্বু আম্মু দুজনকেই আমরা দুইবোন নতুন জামাকাপড় কিনে দিই... কিন্তু সব জিনিষের একটা বয়স থাকে । আমার আম্মু আজকে আর হয়তো নতুন চুড়ি বা শাড়ী দেখে উচ্ছ্বসিত হবেনা যতটা আজ থেকে কুড়ি বছর আগে হতে পারতো! ... ...
সত্যি বলতে, তিরিশদিন এমন না খেয়ে থাকলে নাকি গরীবের পেটের জ্বালার খানিক বোঝা যায়- এই যুক্তিখানার বাড়বাড়ন্ত, হালে, বেশ মনোরঞ্জনকারী। গুছিয়ে পরের ভোরের সেহেরির উপকরণের তোড়জোড় আর বিকেল থেকেই হরেক কিসিমের ফল-বাহারি নাস্তা সাজানো উপোসী বাড়ির মহিলাদের, ফুরসৎ নেই আপিস থেকে খানিক আগে ফিরে নামাজ-কোরান পাঠের পর আরামসে মিনিট তিরিশেক, আপনার মতন, গা এলিয়ে নেওয়ার। মশাই, বলুন তো, কোন গরীব মানুষ এমন বিলাসিতায় না খেয়ে থাকে?! ... ...
অনেকেই এই সমস্ত উদ্যোগগুলো বিগত একমাসেরও বেশি সময় ধরে নিতে নিতে ক্লান্ত। অনেকেই তাঁদের সাধ্যমত আর্থিক সাহায্যও হয়ত ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন। তবু আজ এই 'আমপান'-এর ধ্বংসলীলার পরে এমন একটা অবস্থায় আমরা এসে দাঁড়িয়েছি যে সম্পূর্ণ নতূন উদ্যমে যদি এই ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজে আমরা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারি, বাংলা এই দ্বিমুখী আঘাত সয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে না। ... ...