আফগানিস্তানকে সি এ এর আওতায় রাখা হল, কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে হল না, এই বিসদৃশতার পিছনে একটিই কারণ থেকেছে। তা হল, এই আইন ধর্মীয় নিপীড়নের কথা বলেছে, জাতিগত নিপীড়নের কথা বলে নি। ধর্মীয় নিপীড়নের পিছনেও একটি মাত্র ধর্মকে দায়ী করে এই আইনের প্রণয়ন, তা হল ইসলাম। সহজ বাংলায় ইসলাম-বিদ্বেষই এই আইনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। শ্রীলঙ্কান তামিলদের উপেক্ষা করাও সেই কারণে, যে তাঁদের দুর্গতির পিছনে মুসলিম-প্রধান কোনও রাষ্ট্রকে দায়ী করা যায় না। ... ...
আমার সদ্য প্রকাশিত শারদীয় সংখ্যার উপন্যাস তিনি করবেন কি না জিজ্ঞেস করতে গিয়ে দেখি সমরেশ বসু। বললেন, ভালো লিখেছ উপন্যাস, তবে আরও নিবিষ্ট হতে হবে, তুমি পারবে উপন্যাস লিখতে। আমার পক্ষে ওই কথাগুলি যেন আশীর্বাদ হয়েছিল। প্রকাশক, কলেজ স্ট্রিট পাড়ার কর্তৃত্বময় ব্যক্তিত্ব। গম্ভীর কন্ঠস্বর। সমরেশ বসুর কথা শুনে বললেন, দিয়ে যাও, ছাপব। তারপরের কাহিনি হৃদয় বিদারক। বই ছাপা আর হয় না। আমি থাকি শালতোড়া। কলকাতায় আসি। এসে খোঁজ নিই। হবে হবে শুনি। এক বছর গেল, দু-বছর গেল, তিন বছর গেল, বই আর বেরোয় না। ১৯৯০-এর বইমেলার পর ফেব্রুয়ারি এক হঠাৎ হয়ে যাওয়া তপ্ত দুপুরে গেছি তাঁর কাছে। তাঁর সামনে বসে আছেন এক অগ্রজ লেখক। খুব সিনিয়র ছিলেন না তিনি। আমি বইয়ের কথা প্রকাশক মশায়কে জিজ্ঞেস করতে তিনি ক্রুদ্ধ গলায় বললেন, আপনি প্রায়ই আসেন কেন বলুন দেখি, বিরক্ত করেন কেন? ... ...
শুক্কুরবার রাতের কবিতার পাতায় আজ প্রকাশিত হলো কবি ও গদ্যকার বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ। ... ...
বিজেপি কোনও রাজ্যে নির্বাচনে যদি হেরেও যা্য়, তবু বিজেপি সেখানে সরকার গড়তে পারে। বিজেপি সম্পর্কে এখন বলা হয়, জিতলে আমরা সরকার গড়ব, আর হারলে, তোমরা বিরোধী আসনে বসবে। মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, গোয়া সহ বেশ কিছু রাজ্যে হেরে গিয়েও সরকার গড়ে বিজেপি প্রমাণ করে দিয়েছে, ভোট বা নির্বাচন একটা ধাপ মাত্র, সরকার গড়ার জন্য ভোটে জিততেই হবে, তার কোনও মানে নেই। ... ...
বহু মানুষ আছেন যাঁরা নিজেদের দাবিগুলো মুখ ফুটে বলেই উঠতে পারেন না, এঁদের মধ্যে অনেকে আছেন যাঁদের দাবি বিষয়ে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। দুর্ভাগ্যের কথা, আমরা যারা নিজের এবং অন্যের মন কী বাত নিয়ে খুব বাতচিত করি, তাদের কাছেও এই দাবি তুলতে না পারা অংশটার গুরুত্ব খুব একটা স্বীকৃতি পায় না। ... ...
সেই কজনের ভিড়ে আমি ছিলাম খানিক আবিন্যস্ত। ভিড়ের মধ্যে একজন তো, তাতেই হবে। ঐকতানের মাধ্যে হলেও ঠিক আলাদা আওয়াজটি তার চিনছি তাতেই ফিনকি দিয়ে রঙ ছড়ালো শব্দগুলো। আবীর প্যাকেট হাতেই ছিল। নিজের কাছে অচেনা তাও তোমার কাছাকাছি ছিল। রোদ্দুরে সব ঝলসে ওঠা অভ্রকুঁচি চোখ ধাঁধিয়ে, সেই সুরে এক ডুবতে থাকা খুব অচেনা আবেশ ছিল। ইচ্ছে বলে কিছু একটা অল্প আবীর দিতে চাওয়া অনেকাদিনের স্বপ্ন ছিল। সেই আবেশে ভেসে গিয়ে ভুল ঠিকানায় ঠিক কথাটা স্রেফ একটিবার বলার ছিল। হাজার হাজার রঙের ফোঁটার সেই একটাই জীবন ছিল। ... ...
কৃষক যে কম দাম পাবে, সেটাকে শুধু তার বিপদ হিসেবে দেখাটাই ভুল। সরষের তেলের দাম, বড় রিটেল প্লেয়াররা যেরকম দাম ঠিক করে দিচ্ছে, সেরকমই চলছে। এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট এর তালিকা হ্রাস হবার ফলে ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স বস্তুটা সরকারি কর্মচারীরা কিসের ভিত্তিতে পাবেন? সেটি উবে যাবে না এরকম কোন গ্যারান্টি নেই। খাদ্য সুরক্ষা কি শুধু ফসল উৎপাদকের লাগে? ... ...
এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা না ঘটা নিয়ে আমরা গর্ব অনুভব করে এসেছি, এবং সেটা সঙ্গত কারণেই। কিন্তু, হিংসার ঘটনা না ঘটা মানেই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দূর হয়ে গেছে – এই ভাবনার মধ্যে অতি সরলীকরণ থেকে গেছে। বরং বলা চলে, বাংলার রাজনীতি, এবং রাজনীতি নিয়ে বিদ্যাচর্চা ও অন্যান্য আলোচনায় সামাজিক বিভাজনে ধর্ম, জাতি, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলোকে সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই এড়িয়ে যাওয়ার পিছনে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষে মানুষে দূরত্ব বেড়ে চলা – সেটা আর্থ-সামাজিক দিয়েও যেমন বেড়েছে, তেমনি সাংস্কৃতিক দিয়েও বেড়েছে। ... ...
তিনদিন পরেই প্রয়াত হলেন রমানাথ রায়। গভীর, শাণিত ও তির্যক তাঁর সৃষ্ট গল্প ও উপন্যাস। তথাকথিত বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসির ভেদরেখাও লঙ্ঘিত হয় প্রায়শ। সহমর্মিতা তাঁর সাহিত্যের বড়ো সম্পদ। ১৯৬৬। ‘এই দশক’ পত্রিকা প্রকাশ দিয়ে শুরু হয় ‘শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন’। ছিলেন তার প্রথম পাঁচ পদাতিকের একজন। লিখছেন আকৈশোর বন্ধু ও এ আন্দোলনের সহস্রষ্টা শেখর বসু ... ...
গোগা। একটা গল্প। যা আসলে একটা আশ্চর্য উপন্যাস শুরু হওয়ার (অথবা শুরু না-হওয়ার) ঘোষণামাত্র। ইস্তেহার। প্যামফ্লেট। শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের মুখপত্র ‘এই দশক’ পত্রিকায় প্রকাশিত ১৯৭০ সালে। রচনা— রমানাথ রায়। নিবিড়পাঠে কবি ও গল্পকার সুদীপ বসু ... ...
স্থানীয় লোকদের মধ্যেও খুব প্রভাব পড়লো এগজিবিশনটার। প্রথম কয়েকদিন এখানকার মানুষরা অবাক হয়ে এতো বাইরের লোকের আনাগোনা লক্ষ্য করেছে, কিন্তু ভিতরে ঢুকতে সাহস করেনি। কিন্তু জলধর আর হেমন্ত সে সঙ্কোচ ভেঙে দিলো। কয়েকটা বাচ্চাকে ছবি দেখাতে নিয়ে এলো জলধর। তারা এতো ছবি এক জায়গায় দেখে অবাক। ধীরে ধীরে আসতে শুরু করলো তাদের বাড়ির লোকরা, বাবা-মা, ভাইবোন, সবাই। হেমন্তর উদ্যোগে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের একটা 'বসে আঁকো' প্রতিযোগিতাও হয়ে গেলো, এবং প্রতিযোগিতার ছবিগুলোর থেকে গোটা দশেক ছবি প্রদর্শনী কক্ষেও লাগিয়ে দেওয়া হলো। জয়ি বুঝলো শুভেন্দুদা কেন আদিবাসীদের মধ্যে এই ছবির প্রদর্শনী করতে বলেছিলেন। ... ...
আসামে এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই যারা এনআরসি বিরোধী। এবং বিজেপি বাদে বাকি সবাই সিএএ বিরোধী। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার (বিজেপির সহযোগী বা প্রতিযোগী) সব রাজনৈতিক দলই সিএএ বিরোধী, কারণ সিএএ এনআরসি-র মূল অবস্থানটিকেই চ্যালেঞ্জ করে। বাঙালি হিন্দুরা সিএএ-র পক্ষে, কিন্তু বাঙালি মুসলিমরা বিপক্ষে। বরাক উপত্যকার প্রায় সব রাজনৈতিক দল সিএএ-র পক্ষে কিন্তু এনআরসির বিরুদ্ধে। ... ...
আজ পাঁচ তারিখ রোববার, সতেরো তারিখ শুক্রবার সে, জয়ি আর জুঁই পৌঁছোবে খুশিঝোরা – সুকান্তর যাওয়ার কথাটাও বললো সে, অ্যাজ আ গেস্ট – উনিশ তারিখ রোববারের মধ্যে সবাই যেন আসে। খুশিঝোরা সমিতির প্রথম ফর্মাল মীটিঙে। তুলি শুনে বললো আমি তো যেতে পারবো না এ কদিনের মধ্যে, তোরা সবাই মিলে যা ঠিক করবি, সেটাই হবে, আমার দিক থেকে কোন আপত্তি নেই। অরুণিমা শ্যামলিমা সুজয়, তিনজনেই বললো আসবে। খবর দেওয়া গেলো না নিলীনকে, যে টেলিফোনে ওর সাথে যোগাযোগ রাখে জয়ি, সেটা য়্যুনিভার্সিটিতে ওর ডিপার্টমেন্টের টেলিফোন, কাজেই কালকের আগে যোগাযোগ করা যাবে না ওর সাথে। এ দায়িত্বটা নিলো জয়ি, আর তার সাথে বাবার মারফত জলধরকেও খবর দেওয়া। ... ...
২০২০ সালের ছাব্বিশ ফেব্রুয়ারি বুধবার সুখদেব রী শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে জামিনে ছাড়া পেলেন। সুখদেব ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সাংবাদিকদয়ের সামনে আমাকে বললেন, “ আপনারা এতোদিন কোথায় ছিলেন ? এখন এসেছেন আমার সঙ্গে কথা বলতে?” ঘর বাড়ি জমি বিক্রি করে 'বিদেশি' হয়েছি, আর এখন এসেছেন আমার সঙ্গে কথা বলতে?” ... ...
উত্তম কুমার সাহা, চাকরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষকের একজন। চাকরি যাওয়ার পর অভাবে ছিলেন, তদুপরি ওঁর ৬ বছরের অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করানোর জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছিল। ঋণ-ধার করেও কোনও রকম চালিয়ে গিয়েছেন ছেলের চিকিৎসা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ... ...
এল লিব্রো দে লাস প্রেগুন্তাস। বিকাশ গণ চৌধুরীর তরজমায় ‘প্রশ্ন-পুথি’। পাবলো নেরুদা ১৯৭৩ সালে প্রয়াত হওয়ার পর তাঁর লেখার টেবিলে মেলে আটটি অপ্রকাশিত কাব্যসংকলনের পাণ্ডুলিপি। এটি তার একটি। আপাতবিচারে নির্ভার চুয়াত্তরটি কবিতার সংকলন। নেরুদা-র জীবনবোধের নির্যাস। লিখছেন কবি গৌতম বসু ... ...
গ্রামীণ জীবন ও কৃষি বিষয়ের প্রখ্যাত সাংবাদিক পি সাইনাথ এবং অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশের বক্তব্যের সংক্ষেপিত অনুলিখন, রাইট টু এডুকেশন ফোরামের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হল। এই আলোচনাসভাটি গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবং মূলত বুদ্ধিজীবীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, বিষয়টি রাজনৈতিক হলেও, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনে যে মতাদর্শের ভূমিকা থাকে তার অবশ্যম্ভাবী উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও, আলোচনাটি, বক্তাদের গুণেই দলীয়, বিশেষত নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে খুব সম্পর্কিত কিছু হয়ে ওঠেনি। ... ...
বিমানবাবুরা জামায়েত উলেমায়ে হিন্দের পদাধিকারী বলে সিদ্দিকুল্লাকে সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি মনে করেন। পড়াশোনা করার জন্য বিখ্যাত কমরেডরা ‘জামায়েত উলেমায়ে হিন্দ’ শব্দবন্ধের মানে জানে না, সংস্থাটির ইতিহাস জানে না। চাড্ডিমান্য সংজ্ঞা অনুযায়ী দাড়ি আর টুপি ছাড়া সিদ্দিকুল্লার কোন নেড়েগুণ নাই। অধুনা রাজনৈতিকোচিত হার্মাদপনা, বাটপাড়ি অবশ্যই আছে। তবু, বিমানদা যখন বলেছেন, তখন সিদ্দিকুল্লা জামাতে উলেমায়ে হিন্দের পদাধিকার বলেই সাম্প্রদায়িক। তাই বিমানদার এককাঠি সরেস, নিরেট, একেবারে একটা আস্ত জ্যান্ত পীরজাদা চাই! উলেমায়ে হিন্দ বনাম স্বয়ং শ্রীমান পীরজাদা! ইহা ধ্রুপদী প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। ... ...
দক্ষিণ ইওরোপের আইবেরিয়ান উপদ্বীপের দেশ। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্য, মধ্যযুগীয় মুসলমান শাসন, প্রাক-আধুনিক ঔপনিবেশিক শক্তি, আধুনিক কালে দীর্ঘ স্বৈরতন্ত্র ও পরে গণতন্ত্রের মিশ্রণে বিচিত্র রঙিন সংস্কৃতি। ঠিক পর্যটক হয়ে সাইট-সিয়িং নয়। কখনও শিক্ষার্থী, পরে তরজমাকার হয়ে এ দেশের নানা শহরের অন্দরমহলে উঁকি-ঝুঁকির অভিজ্ঞতা। এ কিস্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়-শহর কুইম্ব্রা। ঋতা রায় ... ...
যতবার আপনি নিজের ধারণার পক্ষে আওয়াজ তোলেন, ততবারই আসলে আপনি তথ্য সরবরাহ করেন বিপক্ষের প্রচারের হাতে। আপনি নিজেকে চিনিয়ে দেন। বিপক্ষ আপনাকে প্রচারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। আপনি নিজের জগত তৈরি করে তাতে বসবাস করতে থাকেন, বিদ্রোহ, বিপ্লব করতে থাকেন। আপনার বন্ধুবৃত্তের ছোট্টো বৃত্ত তাতে আপনাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। বিপক্ষ এসবে হস্তক্ষেপ অবধি করেনা। বরং তাদের প্রচার আরও নিখুঁত হয়ে ওঠে। আপনি আপনার বৃত্তে বন্দী হয়ে থাকেন, আপনার এলাকার সম্পূর্ন বাইরে বিপক্ষের প্রচার চলতে থাকে, চুপচাপ। আপনি জানতেও পারেননা। এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য একমাত্র আপনার। কারণ আপনি জেনেবুঝেই সমস্ত তথ্য তুলে দিয়েছেন ওই সর্বগ্রাসী ব্যবস্থার হাতে ... ...