এবার আর মঙ্গল শোভাযাত্রা নেই। হালখাতা নেই। কলকাতার রাজপথ শুনশান, ঢাকার রাজপথে আল্পনা হবে কিনা জানা নেই। তবু বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ দেওয়া পয়লা বৈশাখ আছে, দুর্যোগের মধ্যেও। আজ থেকে শতাধিক বছর আগে, এক দুর্যোগের দিনে, গানটি লিখেছেলন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে ছিল বঙ্গভঙ্গ রোখার সময়। রাখিবন্ধনের সময়। কলকাতার রাজপথে নেমেছিলেন, কবি স্বয়ং, সেই দুর্যোগের দিনে। এবারও দুর্যোগ আছে। কিন্তু রাজপথে নামা নেই। দুর্বৃত্তরা আছে, আবারও বঙ্গভঙ্গের খাঁড়াও আছে মাথার উপর। গানটিও আছে। হলই বা একটু পুরোনো। যার প্রাসঙ্গিকতা আছে, তাকে নতুন করে গাওয়া যেতেই পারে। অন্য মোড়কে রইল সেই গানই। এবার পয়লা বৈশাখে। ঠিক সকাল সাড়ে আটটায়, দেখার জন্য ক্লিক করুন। ... ...
স্মল পক্সের টিকা দেবার একটি দেশজ পদ্ধতি যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ভ্যারিওলেশন বলা হত তা ভারতের মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে এবং শহরাঞ্চলেও চালু ছিল। এমনকি উপনিবেশিক রাষ্ট্রের তরফেও এ পদ্ধতিকে একটি সময় পর্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। জেনারের আবিষ্কৃত টিকা (ভ্যাক্সিনেশন) ভারতে আসার পরে এ চিত্র আমূল বদলে যায়। ১৮০২ থেকে ১৮০৪ সালের মধ্যে ১৪৫,০০০ মানুষকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়। ১৮০০ থেকে ১৮০২ সালের মধ্যে ভ্যারিওলেশনের সংখ্যা ২৬,০০০, অর্থাৎ ভ্যাক্সিনেশনের এক-চতুর্থাংশ। ভ্যারিওলেশন বনাম ভ্যাক্সিনেশনের লড়াই একাধিক বিষয়কে সামাজিক এবং রাষ্ট্র পরিচালনার স্তরে প্রতিষ্ঠিত করল – প্রথম, ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্ব এবং ঔকর্ষ এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল সার্জারিতে, এবার সেটা প্রসারিত হল মেডিসিনের জগতে; দ্বিতীয়, সবাইকে সার্বজনীন ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ভারতীয় দেহের ওপরে এর অধিকার প্রতিষ্ঠা শুরু করল; তৃতীয়, রাষ্ট্রের নজরদারির বাইরে কেউ থাকতে পারবেনা এই দার্শনিক অবস্থান রাষ্ট্রিক নীতির চেহারা নিল; চতুর্থ; রাজা এবং প্রজার সম্পর্ক ধীর অথচ অমোঘ গতিতে রাষ্ট্র এবং নাগরিকের সম্পর্কে রূপান্তরিত হতে শুরু করল। ... ...
জনসাধারণের প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করে দিলে ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল কর্মীরা তাদের বাচ্চাদের বাড়িতে ফেলে রোগীদের সেবার কাজ করবেন কী করে? আর সব রেস্তোরাঁ, দোকান-বাজার বন্ধ করে দিলে যত লোকের কাজ চলে যাবে, যে ভীষণ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে, সেটা সামলানো যাবে কেমন করে? ফলে এঁদের অধিকাংশেরই সিদ্ধান্ত যে এঁরা শেষ অবধি লড়ে যাবেন। যতটা দূরত্ব রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় তাই করবেন। এই সঙ্কটকে গুরুত্ব দেবেন, কিন্তু ভয়ে গুটিয়ে থাকবেন না। তাই যথাসম্ভব সেলফ আইসোলেশান, ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে হাঁটাহাঁটি আর স্বাস্থ্য বিভাগের ছবি সহ নির্দেশিকা মেনে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া - করোনার বিরুদ্ধে কিস্তিমাত করার জন্য এই চালই বেছে নিয়েছেন অধিকাংশ সুইডিশরা। ... ...
মীরা অপেক্ষায়। লকডাউন যদি ওঠে! কিন্তু পরিস্থতি আদৌ স্বাভাবিক হবে কি না ভেবে মুষড়ে পড়েছে একদম। মহাজনের কাছেই বিক্রী গামছা। খুচরো বিক্রেতা নেই। নেই সুতো হাতে। লকডাউন না উঠলে মহাজন আসবে না । বরাতও পাবে না। বন্ধ হয়ে যাবে হাঁড়ি। মীরার মত কারিগররা ধুঁকছে। লকডাউন দেশে নয়, ওদের কপালজুড়ে বসেছে যেন! প্রাণে বাঁচলেও পেটে মরতে হবে । তাও রাজি। কিন্তু মেয়ের পড়াশুনা কি আটকে থাকবে? ... ...
মেডিসিনে মাস্টার্স ডিগ্রী করার সময় স্যার বারবার বলতেন, 'ঐন্দ্রিল, মানুষের মুখ ভালো করে লক্ষ কর। মানুষের মুখেই অনেক অসুখের ছবি ফুটে ওঠে। শারীরিক যন্ত্রণা, অসহায়তা , মৃত্যু ভয় এইসবের ছবি পড়তে পারলে তবেই চিকিৎসক হয়ে উঠতে পারবি।' কিন্তু আজ অনেক চেষ্টা করেও ছবির মানুষগুলির মুখের ভাষা পড়তে পারছি না। মনে হচ্ছে, আতংক না, মৃত্যুভয়ও না, যেনো একরাশ ঘৃণা ফুটে উঠেছে শ্রমিকদের মুখে। আমাদের মতো স্বচ্ছল গা-বাঁচানো লোকদের প্রতি তীব্র ঘৃণা। ঘৃণা সেই রাস্ট্রের প্রতি, যে রাস্ট্র রাতারাতি স্পেশাল প্লেনের ব্যবস্থা করে বিদেশ থেকে প্রভাবশালী নাগরিকদের বাড়ি ফেরাতে পারে, কিন্তু লকডাউন ঘোষণা করার আগে দেশের মধ্যে থাকা নাগরিকদের বাড়ি ফেরার কোনো ব্যবস্থা করে না। ... ...
একথা নিশ্চিত যে, দ্রুতগামী যান, যেমন রেল, প্লেনই মারীর মহামারী বা অতিমারী হয়ে ওঠার মূল বাহন। আমরা যদি প্রাক ব্রিটিশ যুগের আর্থ-সামাজিক মডেল দেখি, এই সংগঠিত যান-চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলার বদলে দেশের শাসকদের লক্ষ্য থাকত সড়কপথ নিরাপদ রাখা, কিছু নির্ধারিত বাণিজ্য জলপথে চালানো। সমসত পণ্যের স্থানান্তরণ নয়। বাণিজ্যের সংগঠন উত্তর-ব্রিটিশ ধনতান্ত্রিক যুগের লক্ষণ এবং এই সংগঠনের পিছনে জনগণের শ্রমের মূল ভাগ নিয়োজিত হয়। প্রাক ব্রিটিশ বাংলা যখন পৃথিবীর এক বিশাল অংশে বস্ত্র সরবরাহ করত, সে বিকেন্দ্রিভূত, অসংগঠিত উৎপাদন এবং বাণিজ্যের এক মডেল চালাত। যার ফল হিসেবে দেখা যায়, সেইসময়ে বাংলায় মানুষ মোটের উপর স্বচ্ছল। আর, এই বাজারটা যুখন উত্তর-পলাশী যুগে ইংল্যান্ডে গেল, সেখানে স্থানীয় লোক বড় সংগঠিত উদ্যোগকেন্দের কাজ করতে শুরু করল, তাদের জীবনধারণ আগের থেকেও খারাপ হয়ে পড়ল (ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা, এংগেলস, ১৮৪৫)। হয়ত কিছুটা একই ভাবে সংগঠিত ধনতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র শহরগুলি গড়ে ওঠার সময়ে মানুষের ভালো থাকার মূল অক্ষগুলি অবহেলিত হল, কারণ এই শহরের বিকাশ হল কেবলমাত্র ঐ কেন্দ্রিভূত উদ্যোগ ও বাণিজ্যকে পুষ্ট করার স্বার্থে। তাই কি আমরা দেখতে পারি উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা হয়ে ওঠে এশিয়াটিক কলেরার বিশ্ব-আঁতুরঘর? ... ...
বর্তমানে শুধুমাত্র নিউ ইয়র্ক শহরে করোনাতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭,৫৫১ ও মৃতের সংখ্যা ৩০৪৮। স্কুল, কলেজ মোটামুটি বন্ধ হয়ে গেছে মার্চের ১২ তারিখ থেকে। আর সরকারি ভাবে লকডাউন শুরু হয়েছে ২০শে মার্চ থেকে। আসলে এরম পরিস্থিতি হতো না, যদি আর একটু আগে লকডাউনটা শুরু হতো। প্রায় ৫ দিন দেরি করে দিয়েছে নিউ ইয়র্ক সরকার। ১২ই মার্চ ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন স্টেটের তুলনায় নিউ ইয়র্কে আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু প্রায় সমান ছিলো, খুব বেশি তফাৎ ছিলো না। আর আজ গোটা ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫,১৫৮ ও মৃতের সংখ্যা ৩৫০। ক্যালিফোর্নিয়া সঠিক সময় লকডাউন করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে, কিন্তু দেরি করে দেওয়ায় নিউ ইয়র্ক পারেনি। ... ...
বেঙ্গল কেমিক্যালসের কর্মচারী ইউনিয়ন ত্রিধাবিভক্ত। দুটির মাথায় শাসকদলের দুই মহারথী। একজনের দৌড় বিধানসভায় ,তো আর একজনের পার্লামেন্টে। আর একটি ইউনিয়ন বামপন্থীদের। তিনটে ইউনিয়ন এক হয়ে মামলা লড়ে তবে বেচে দেবার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে পারে। কিন্তু অদম্য সরকার বাহাদুর দেশের লাভজনক সংস্থাগুলিকে বিক্রি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাই সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়ের বিরুদ্ধে আবার আবার ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করা হয়েছে। সে মামলার এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তার আগেই আবার বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তির যে লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে তড়িঘড়ি করে, তাতেও জ্বলজ্বল করছে বেঙ্গল কেমিক্যালসের নাম । সাব জুডিস বলে একটা কথা আছে কি আমাদের আইনি ডিকশনারিতে ? তার অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পরিষ্কার তো ? ... ...
এখনো অবধি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন ধাপেই কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অতি মারাত্মক ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে সার্স, এইচআইভি-তে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ এবং ক্লোরোকুইন বা ক্লোরামফেনিকলের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের সম্মিলিত প্রয়োগ ফল দিচ্ছে। কিন্তু ১৮ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ট্রায়াল রিপোর্ট (র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়াল) “A Trial of Lopinavir-Ritonavir in Adults Hospitalized with Severe Covid-19” জানাচ্ছে - In hospitalized adult patients with severe Covid-19, no benefit was observed with lopinavir–ritonavir treatment beyond standard care. ... কিন্তু যতক্ষণ না একটি ওষুধ র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাকে মান্যতা দেওয়া মুশকিল। যদিও চরম আতঙ্কের সময়, পরম আর্ততার মুহূর্তে মানুষ যেকোন অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে – এমনকি গোমূত্রও! ... ...
থালা বাজাতে বাজাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িছাড়া করে দেওয়া, এই অদ্ভুত সময়ের আলো আঁধারীর আড়ালে স্বার্থ ও ঘৃণার এজেন্ডাগুলিতে শান দেওয়ার বিপ্রতীপে, মানুষ এখনো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, মানুষ হয়ে। কুনাট্য প্রতুল, কিন্তু মানুষ এখনো অনেকটা পথ হাঁটবে, এই আশা অলীক নয়। এই বিশ্বাস দৃঢ় হয় যখন আমরা এই সাম্প্রতিক লড়াইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা দেখি। অপরাজিতা স্বর্ণালী কলকাতা এসএসকেএম হাসপাতালের স্টাফ নার্স। তাঁর দু'সপ্তাহের দিনলিপি রইল আজকের বুলবুলভাজায়। এই লেখাটি তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, ঈষৎ সম্পাদিত। আজকের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রাসংগিকতা রক্ষার দায় গুরুতর বোধে আরো কিছুটা সম্পাদনার দাবী অগ্রাহ্য করেই প্রকাশিত হলো, অপরাজিতার দিনলিপি। ... ...
যারা তিনশো পঁয়শট্টি দিনের তিনশো ষাটদিনেই হোম কোরান্টিনে থাকেন। মুসলমান পরিবারের মেয়ে হিসেবে তাই মুসলমান সমাজকে রোজ অনেক কাছ থেকে দেখি। এখান থেকে কয়েকটা চিত্র তুলে ধরছি,এই চিত্রগুলো অন্য সমাজ ও পরিবারেও যে পাওয়া যাবে না তা নয়,হয়ত অল্পকিছু হেরফের হবে।ধরুন, একটা পরিবারে একটা তেরো বছরের ছেলে ও একটা বারো বছরের মেয়ে আছে,ছেলেটি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে খেলার মাঠে যায় ব্যাট হাতে নিয়ে কিন্তু মেয়েটিকে বাড়িতে বসে থাকতে হয়, সে মেয়ে বলে বাড়ির বড়রা তাকে ন'বছর বয়স থেকেই বাড়ির বাইরে,মাঠে খেলতে মানা করেছে,অসহ্য গরমেও চূড়িদার আর মাথায় ওড়না চাপা দিয়ে থাকতে হবে তাকে সবসময়, অথচ ছেলেটি দিব্যি হাফ-প্যান্ট পরে,হাফ-হাতা টিশার্ট পরে তারই বয়সী বোন বা দিদিকে হুকুম করবে জল দিতে,খাবার দিতে,তার জামাকাপড়গুলো কেচে দিতে। ... ...
এতো গলি কথা থেকে এলো? সরু সরু, অন্ধকার, দম আটকে আসা গলি, সাপের মতো এঁকেবেঁকে একটার গায়ে আর একটা জড়িয়ে, দুদিকে ছায়া ছায়া গঠন যতো, বাড়ি, নাকি আর কিছু? প্রানপনে দৌড়োচ্ছিলো ভোলানাথ, গলি ধরে। দ্যাখে উল্টো দিক থেকে কে যেন এসে দাঁড়িয়েছে নিশ্চুপে। আরে এ কী! এ যে অলড্রিন লিংডো ! শিলং থেকে এসেছিলো, আগ্রার রেস্তোঁরায় কাজ করতো, লকডাউনে টাকা না পেয়ে ২রা এপ্রিল ঝুলে পড়েছিল মাঝরাতে, আগ্রার ভাড়া বাড়িতে। কি সর্বনাশ! সে এখানে কেন? পাগলের মতো ঘুরে অন্য দিকে দৌড়োতে শুরু করে ভোলানাথ। পালাতে পারবে না বোধহয়, বুঝেছিলো। তাও দৌড়োচ্ছিলো, প্রানপনে দৌড়োচ্ছিলো, গলি থেকে গলিতে, আরো গলিতে, গলির গলি তস্য গলিতে। যতক্ষণ না আবারো আরো একটা গলির মুখ থেকে ধীরপায়ে হেঁটে আসতে থাকে নতুন দিল্লির এক রেস্টুরেন্টের ডেলিভারি বয় রণবীর সিং। দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা গ্রামের উদ্যেশ্যে রওনা দিয়েছিলো পায়ে হেঁটে, কাজ খুইয়ে। প্রায় সোয়া দুশো কিলোমিটার হাঁটার পরে, যখন তার বাড়ি আরো প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে, আঠাশে মার্চ রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে। হৃদযন্ত্র সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে আবার গলি পাল্টায় ভোলানাথ, দৌড়োতে থাকে পাগলের মতো, হাঁফায়, মুখ দিয়ে মোটা মোটা সুতোর মতো লালা ঝরতে থাকে, বুক যেন ফেটে আসবে। ... ...
করোনা ভাইরাস সংক্রমন বিষয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারনা ... ...
আমি বর্তমান শাসককে মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গে তুলনা করতে চাই না, কারণ পরবর্তীতে ইতিহাসচর্চা দেখিয়ে দিয়েছে তুঘলক প্রজারঞ্জক ছিলেন। তার সমস্ত কল্যাণমুখী কার্যকলাপ নষ্ট হয়ে যায় যত না তাঁর অদূরদর্শিতায়, তার থেকে বেশি অন্য অন্য কারণে, যার মধ্যে সুলতানের মন্দভাগ্যও একটি। আমাদের বর্তমান শাসক তুলনাহীন, একমেব অদ্বিতীয়ম ! নোটবন্দীর সময়ের কথা মনে আছে তো ? কিরকম হাহাকার পড়ে গেছিল চারদিকে ? সবচেয়ে বেশি অসুবিধেয় পড়েছিল এই গরীবগুর্বোরাই, যারা এখন প্রাণ হাতে করে পথ হাঁটছে। রুজি হারিয়ে অনাহারক্লিষ্ট তাদের কান্না এখনো কানে বাজে। ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েই ঢলে পড়েছে কতো লোক। এবার আবার এই লকডাউন। ... ...
মহামারীর মধ্যেও অন্যান্য এমারজেন্সি কিন্তু থেমে নেই। এনারাই পড়েছেন সবচেয়ে সমস্যায়। আজকে একজন বয়স্ক মহিলা এসেছিলেন তার স্বামীর কোলোনোস্কোপি রিপোর্ট নিয়ে। রিপোর্টে ক্যন্সারাস গ্রোথ ধরা পড়েছে। বায়োপ্সি রিপোর্ট এখনো পেন্ডিং। রেক্টাম থেকে ব্লিডিং হয়েই যাচ্ছে। যাকে দেখাচ্ছিলেন তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। নার্সিংহোমে ফোন করেছিলেন, তারা লকডাউনের পরে যোগাযোগ করতে বলেছেন। ওই মহিলা আব্দালপুর থেকে চার কিলোমিটার হেঁটে আমার বাড়িতে এসেছেন। কোনো ভ্যান, রিকশা পাননি। ওনার একমাত্র ছেলে পুনেতে আটকে আছেন, আসতে পারছেন না। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, 'ডাক্তারবাবু, আপনি শুধু ওষুধ দিয়ে এই লকডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত ব্লিডিংটা বন্ধ করে দিন।' ... ...
পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই করোনার বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে ধর্মীয় সমাবেশের হাত ধরে - যেমন ধরুন, দক্ষিণ কোরিয়ার সেই মহিলা - সেখানকার চিকিৎসক-বিজ্ঞানীদের কাছে কেস নম্বর থার্টি ওয়ান - একাই সংক্রমণের বড়ো চেইন রিয়্যাকশন শুরু করেছিলেন - চার্চে গিয়ে একধাক্কায় সাঁইত্রিশ জনেরও বেশী মানুষকে করোনা পজিটিভ করেছিলেন - তাঁদের থেকে আবার আরো অনেকে। কাজেই, সংগঠিত ধর্মাচরণ সংক্রমণের সহায় - অন্তত এই পরিস্থিতিতে - এবং, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই এই বিপদের বিরুদ্ধে সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ করে না - ধর্মাচ্ছন্ন এই দেশে তো একেবারেই না। ... ...
হাজারে হাজারে লোক যাচ্ছে নিমোর উপর দিয়ে দল বেঁধে হেঁটে – ঘরে ফিরছে চাইছে তারা, জি টি রোড বরাবর, রেললাইন বরাবর হেঁটে যাচ্ছে তারা কলকাতার দিক থেকে ঝাড়খন্ড, বিহারের দিকে। পিঠে, কোলে বাচ্ছা – বড় বড় বাক্স-ব্যাগ নিয়ে ফিরছে। নিমোর রাস্তার ধারে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন লোক খাচ্ছে – চাল, আলু ইত্যাদি জোগাড় হয়েছে। কিন্তু শেল্টার? ইচ্ছা করলেই আপনি ২৫-৫০ জনকে নিয়ে ভাবলেন গ্রামের কোথাও রেখে দেবেন, খাওয়াবেন – সেসব অত সোজা নয়। প্রশাসনের অনুমতিই মোষ্ট লাইকলি আপনি পাবেন না। যে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, তাকে যেতে দাও – শ্রমিক-মজুর এদের কষ্ট-মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামাবার মতন সময় নেই বড়কর্তাদের। ... ...
আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চাপে প্রতিটি দেশের, বিশেষ করে গরীব দুর্বল ও ছোট দেশগুলোতে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। এর জায়গা নিয়েছে কর্পোরেট হেলথ সেক্টর যেখানে স্বাস্থ্য নেই, রয়েছে বহুমূল্যে কেনা স্বাস্থ্য পরিষেবা। এ কারণে আফ্রিকার দেশগুলোতে এবোলা মহামারির চেহারা নিয়েছিলো যখন তখন স্বাস্থাকর্মীদের বেশিরভাগের কাছে একটি গ্লাভস কিংবা মাস্কও ছিলো না। এখনো ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকার মতো দেশে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষিত হবার বিষময় ফল ২০২০-র পৃথিবী দেখছে। ... ...