উদ্দেশ্য আমার কাছে অন্তত খুবই স্পষ্ট ছিল। এন আর সি, সি এ এ এবং ছাত্র ছাত্রীদের উপরে পুলিশ তথা সরকার সমর্থক গুন্ডা দের হামলা ইত্যাদি নিয়ে সারা দেশে যে নানা প্রতিবাদ হচ্ছে, কলকাতায় থেকে তার যতটুকু আঁচ পাওয়া যায়, সেটা অনুভব করার , চাক্ষুষ করার চেষ্টা করা। এবং গুরুচন্ডালি তে লিখে ফেলা, যতটা পারা যায়।। ... ...
পার্ক সার্কাসে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই আমার মনে পড়ে রক্তবীজের কাহিনী। আকাশ-চাটা আগুন-চিতায় সহমরণে মরতে যাওয়া মায়ের অসহ্য যন্ত্রণার চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে জরায়ু উন্মোচনে তার জন্ম। একফোঁটা রক্ত যেখানে পড়ে সেখানেই জন্ম হয় রক্তবীজের। এক থেকে একশ, হাজার, লক্ষ -- লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তরুণাসুর রক্তবীজের সংখ্যা। ... ...
এ এক অদ্ভুত শিউড়ে ওঠা সময়ের কাহিনী। আমরা সেই সময় অতিবাহিত করছি যখন আমাদের মনে পড়ে যায় “পিচ্ছিল নেপথ্যে আজও রয়েছে মানুষ – একা – নরক দর্শন করে, তবু অন্ধ নয়, খোঁড়া নয়; ... ...
তেত্রিশ বছরের একটা জোয়ান কিন্তু রুগ্ন ছেলে শুয়ে আছে জেলখানার ঠান্ডা মেঝেতে, গায়ে হয়ত শুধু একটা কম্বল। গরাদের ফাঁকে তাকে কড়া নজরে রেখেছে এদেশের কুখ্যাত ট্রিগারহ্যাপি পুলিশ বাহিনী, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমাতে নিজেরাই সরকারি বাস পোড়ায়, গুজরাত মডেলে সংখ্যালঘুর দোকান ভেঙে দামী মাল লুঠ করে। আর দমাদম গুলি ছুঁড়ে শুইয়ে দেয় শিশুদেরও। আটক নাবালকদের সোডোমাইজ করার অভিযোগও ওঠে এদের বিরুদ্ধে। ... ...
এই লেখা লিখতে লিখতেই শোনা যাচ্ছে বিশ্বভারতীতে সঙ্ঘের পেটোয়া লোকজন নিয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছিল এক সেমিনার যাতে সিএএ ও এনআরসির সুফল ব্যখ্যা করার কথা ছিল। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় রড লাঠি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে আরেক গুন্ডাবাহিনী। বিশ্বভারতী থেকে আসা এই খবর কোনদিকে গড়াবে আমরা জানি না, কিন্তু গোটা দেশজুড়ে যে সমস্ত ক্যাম্পাসগুলিতে আরেসেস এবিভিপির যাতায়াত ছিল সীমিত সেগুলিতেই নানা ফিকিরে ঝামেলার পরিবেশ তৈরী করে এক একটা ফেনোমেনন বানাতে চাইছে তারা। কিন্তু তাদের এই বর্বরতা কোনোভাবেই শেষ কথা হয়ে যে উঠবে না তার প্রমান প্রায় প্রতি মুহুর্তে দিয়ে চলেছেন এই দেশের ছাত্রছাত্রীসমাজ ও তাদের পাশে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষ। আরেসেস বিজেপি যত হিন্দুরাষ্ট্র বা অন্যকে টুকরে গ্যাঙের নাম করে আসলে নানাভাবে ভারতের বিভাজনে ব্রতী হবে ততোই তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হবে এবং অতীত থেকে ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করার শিক্ষা তাদেরও দেওয়ার জন্য একত্রিত হবেন এদেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। যে আজাদীর স্লোগান উঠে এসেছিল বিক্ষুদ্ধ কাশ্মীর থেকে আজ তা শোনা যাচ্ছে কলকাতায় মুম্বইতে সব জায়গায় এবং তা দিচ্ছেন সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ গৃহবধু বাচ্চা বুড়ো সবাই। ফয়েজের কবিতার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি বসাতে বাধ্য হচ্ছে ভীতু কর্তৃপক্ষ। ... ...
এখানে আসতে থাকুক সব আপডেট। কোথায় কী হবে, কী হল। ... ...
দৃপ্তার কাছে অরাজনীতির বিলাসিতার সুযোগ ছিল। কিন্তু, ও শপিং মল, নেটফ্লিক্সের জীবনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরাসরি ময়দানে নেমেছে। যখন ওর কাছে রাস্তায় নামার সুযোগ ছিল না, তখন ও ক্রমাগত উচ্চমানের রাজনৈতিক মীম বানিয়েছে। আর আজ এই সঙ্কটকালে ও কম্পিউটারের পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পড়েনি। জামিয়ায় আক্রমণের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেছে সেখানে। আজ সকালে এবিভিপির গুণ্ডাবাহিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে হামলা করেছে। র আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন তারা আক্রমণ করেছিল, তখন চোখের সামনে দেখেছি সাংবাদিকের মাথা থেকে টুপ টুপ করে পড়া রক্তবিন্দু ভাঙা কাচের গুঁড়োয় মিশে যাচ্ছে, চারদিকে আগুন জ্বলছে এবং এ টি এমের ভিতরে একলা মেয়েকে ঘিরে ধরে সঙ্ঘীগণ অত্যাচার চালাচ্ছে। তারপর ঘটে গেছে জামিয়া, আলিগড়ের ঘটনা। রাষ্ট্রের নৃশংসতার মাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর প্রদেশ ভয়াবহ অত্যাচার চলছে। আর কাশ্মীরের কথা তো আমরা জানতেই পারছি না। দেশজুড়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দৃপ্তা নিজেও হুমকি শুনেছে। এই হুমকিগুলো আমাদের ভয় কাটিয়ে দিতে সাহায্য করে। আজ বিকেল বেলা দৃপ্তা যখন বলল ওকে ঘিরে ধরে লাঠিপেটা করা হয়েছে, তখন আমার হাড় হিম হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, বুঝতে পেরেছিলাম যে, ... ...
ফিরোজ - দেখ, তোমায় তো বললাম জামিয়া আর 'জেএনইউ' এর ছাত্রছাত্রীরা শুরু করেছিল অবরোধের তা ক্রমে মানুষের প্রতিরোধে পৌঁছেছে। এর বেশিরভাগটাই সামলাচ্ছেন মহিলারা। আট থেকে আশি, এমনকি অন্তসত্ত্বা মহিলারাও রয়েছেন এই দলে। পালা করে তারা আসছেন। বাড়ির কাজ সামলে। পুরুষেরাও আছেন, তবে তাদের ভিড় বেশি সন্ধ্যার পর। আর এই জমায়েতে যে শুধু মুসলমানরাই রয়েছেন তা কিন্তু নয়। এতে অনেক হিন্দু শিখ এরাও রয়েছেন একসঙ্গে জোট বেঁধে। ... ...
আজ মুখোশে মুখ ঢেকে বড় রড হাতে নিয়ে জেএনইউ হস্টেলে ঢুকেছে গুন্ডাবাহিনি, যা ছাত্রদের অভিযোগ অনুযায়ী এবিভিপির। রাষ্ট্রপোষিত গুন্ডা। ফি বাড়ানোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, এনার্সি, সিএএ-র বিরুদ্ধে ছাত্রদের একতা, শাহিনবাগ ধর্ণা,গোটা দেশে বিশাল আন্দোলন, দেশবিদেশে বেইজ্জত হবার অপমান, আর কতো সইবে ফ্যাসিস্ট সরকার। জেএনইউয়ের অধ্যাপক, ছাত্র নির্বিশেষে আজ তাই রক্তাক্ত। নির্বাচিত ছাত্রসংসদ প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ সাংঘাতিকভাবে আহত। হাসপাতালে ভর্তি। অনেক সহযোদ্ধারও একই হাল। আহত অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন। জোর করে জয়শ্রীরাম বলানো হচ্ছে, আর তাও নাকি হচ্ছে সংঘপরিবারঘনিষ্ঠ অধ্যাপকের অংুলিহেলনে। ... ...
সূচীপত্র ... ...
অণুগল্প - ধরা যাক, আকাশে চাঁদ ফুটে আছে। কদমগাছের তলায় সেই আলো ডাবের শাঁসের মত ঘন। অদূরে ঝোপঝাড়। সেইখানে জোনাকির আলো। জ্বলছে, নিভছে। পাশেই ঝিল। চাঁদের আলোয় তা চকচকে। হাওয়া দিলে ঢ্যামনা সাপের মত জলের উপরিতল নড়ে। হাওয়া দিচ্ছে। নিঃশব্দে লক্ষ্মী পেঁচা উড়ছে। ইঁদুরেরা গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। আরও ধরে নেওয়া যায়, ঐখানে, চাঁদের ঐ গোলাকার থালা দেখে মানবেতর প্রাণীটি আবাক, আশ্চর্য্য হয়েছে। ... ...
বললুম : এরকম মানে ? // এরকম মানে কেমন যেন বাউল বাউল / দেহতত্ব তোমার কবিতা জুড়ে / রসে-রসে টুপটুপে / সেই প্রথম থেকেই লিখছ এই রকম কবিতা / কেন গো ? / জিগ্যেস করল তরুণী ... ...
পদ্মপাতায় জল / জল, তুমি কার? ওর না আমার? / কলহে ব্যাপৃত হয়ে পড়ি। // কাঁচা ইলিশের ঝোল পুড়ে যায়। // চোখের নাগাল ছুঁয়ে নীলকন্ঠপাখি ঘুরে যায়। // ফুলের আঘ্রাণ উড়ে যায়। ... ...
বিশ্বরূপে মোহিত হলে মাটি খাবে ঘরের ছেলে / খুলো না ওর হাতের দড়ি আটকে রাখো রান্নাশালে / কোন্ মথুরায় চলে যাবে এইবার যদি সুযোগ মেলে / তখন দেখবে নন্দরানি শূন্য যে ঘর রাত পোহালে- // বলে দিও দিব্যি কেটে ঐ যমুনা আর না পেরোয় / পাড়ার মাঠেই খেলুক ঘুরুক নিজের পাঠে বসুক ভোরে / ননীর অঙ্গে ছপটি মেরো বকলে যদি না করে ভয় / যার অন্তরে জগৎ কাঁদে কাঁদাও তাকেই শাসন করে ... ...
যাইনি কখনো ও বাড়িতে / চানঘরে দেখিনি কখনো জল পড়ে যায়— / অথচ শরীর ভেজেনি একটুও / শুনিনি রবি ঠাকুরের গান বসবার ঘরে বসে / শুধু দেখেছি সিঁড়ি ঘরে আলো— ... ...
নতুন মালিক এলে গাছ গুলি ভয়ে জড়সড় / আগাছা আপদ ভেবে যদি ওরা উপড়ায় মুল / কিম্বা সাধের পাতা ছেঁটে কেটে বানায় অদ্ভুত / সান্ত্বনা চেয়েছে ওরা মাথা নুয়ে মাটির উপর ... ...
তুমিও সহজ মতো বিশ্বাস করেছ সবকিছু। / সত্য ভেবে এ সংসার। ভাঙা চাল। ভাতের কাঁকর / নীরবে না-পাওয়া নিয়ে আমিও জপেছি রাধানাম / ঝড় এলে উড়ে যায় চাল, শস্য, তাও বলি --'তিষ্ঠ ক্ষণকাল' / যেভাবে বানের জলে ভাসে কৃষিকাজ / কৃষকের মন ভাবে প্লাবিত এ মাটি / অধিক ফলন সুখে / বর্ষশেষে ভেজা নারী / কোথা থেকে কোথায় বা যায়! / ... ...
রোধ নিভছে। / পোড়া পায়ে তাকতবর মাটি / আহা, / কষ্ট আছে / দরকারে নরম চটির আংটায় / লুকিয়ে রাখলে / গোপন কথারাও / ... ... ...
দেশ জাতি দ্বেষ জাতি পোড়া / মাটির পুতুল দিয়ে / চিত্রনাট্য,স্টেজ, আলো, পর্দা সব রেডি, / সেট সাজিয়েছি... / মৃত্যু উপত্যকার... / / যাবতীয় আলো দর্শকের চোখে ! / মঞ্চ অন্ধকার | / ... ... ...
বারো বছর কাটার পর হঠাৎ একদিন গভীর রাতে সুলতান দেখেন তাঁর শোবার ঘরে দুজন অতি সুন্দর যুবক এসে পরিচয় দিলেন রামোজি আর লক্ষ্মোজি নামে। তাঁরা রামদাসের মুক্তিপণ হিসেবে ছ'লক্ষ টাকার সোনার মোহর আর সুদ হিসেবে ছ'লক্ষ টাকার রূপোর মোহর নিয়ে এসেছেন। মোহরগুলিতে রামচন্দ্রের নিজের নাম ছাপা আছে। সুলতানের তো চক্ষু চড়কগাছ। এভাবে মাঝরাতে তাঁর শোবার ঘরে দুজন ঢুকলো কী করে? অন্যদিকে তিনি এই দুজন আগন্তুকের ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ। সুলতান রামদাসের মুক্তি পরওয়ানা স্বাক্ষর করে দিলেন। সেই রাতেই ঐ দুই যুবক কারাধ্যক্ষকে ফরমান দেখিয়ে রামদাসকে মুক্ত করে দিলেন। পরদিন সকালে হইহই ব্যাপার রইরই কাণ্ড। সুলতান ও রামদাস দুজনেই বুঝতে পেরেছেন ঐ দুজন যুবক কে ছিলেন? রাজা তো চমৎকৃত। আর রামদাসের বিলাপ বাধা মানেনা। তিনি বারবার বলছেন, রামলক্ষ্মণ ভক্তকে দর্শন না দিয়ে কেন যবন রাজাকে করুণা করলেন? ... ...