যদি মৃত্যুই মানুষের অমরত্বের সূচক হয়ে থাকে তবে জানিয়ে রাখা ভালো কোনো কোনো মানুষ জীবৎকালেই অমর হয়ে যান। যেমন বিষ্ণু দে হয়েছিলেন অনুজ প্রতীম অরুণ সেনের কলমে, তেমনি অরুণ সেন স্বয়ং তার সমকালীন বেশ কিছু বিশিষ্টজন ও তাঁর স্নেহভাজনদের মনে। ... ...
উনিশ শতকে নারীর লেখক হয়ে ওঠার যুদ্ধ বহুমাত্রিক অবদমনের গল্প, যার প্রারম্ভে আছে লেখিকার নির্বাসিত মননকল্পনার জিজ্ঞাসা আর অন্য পিঠে এর পরিণামে তার creative unity র ভেতর থেকে উঠে এসেছে বিবাহিত জীবনের ক্লীবত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিশোধস্পৃহা। ... ...
গরীব মানুষকে ত্রাণ দেবার সময়ে বারবার বাজারপন্থী অর্থনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীরা যে কথাটা বলে আসেন তা হল “বিনামূল্যে” কিছু পাওয়া যায় না। সেই একই বাজারের যুক্তি কিন্তু একথাও বলে যে সস্তায় যেমন ভালো মানের জিনিস পাওয়া যায়না, তেমন ভালো মানের শ্রমও পাওয়া যায়না। শ্রমিককে কাজে ফিরিয়ে আনবার একমাত্র উপায় হল কাজের পরিবেশ ও জীবনযাত্রার মানের উন্নতি এবং অধিকতর মজুরির সংস্থান – জোর জবরদস্তি নয়। ভারতের মত দেশে যেখানে প্রায় ৯০% শ্রমিকই কাজ করেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে এবং যাদের কোনরকম কাজের নিরাপত্তা বা অবসরকালীন সুবিধা ইত্যাদি কিছুই নেই, তাদের জন্য সরকারের দ্বারা প্রবর্তিত সুরক্ষাবলয় যথেষ্ট শক্তিশালী হতেই হবে এই বিপর্যয় কেটে গেলে তাদের কাজে আবার ফিরিয়ে আনায় উৎসাহিত করতে। ... ...
২০১৯ সালের ২১শে জুন, আমার ছেলের মৃত্যুর দু-ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ মিডিয়াকে জানায় যে তারা এই মৃত্যুতে মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখছেনা। আমার ছেলে পাশের বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঐ বাড়ির অ্যাকসেস আমার ছেলের ছিলো না। ছাদে যেতে গেলে আলাদা অ্যাকসেস লাগে। আজ অবধি পুলিশ আমাকে জানায়নি কে আমার ছেলেকে ছাদের দরজা খুলে দিয়েছিলো। ছাদে একটা সুইমিং পুল আর জিম আছে, দুটোই বড়োদের জন্য। সেই দিনটা শুক্রবার ছিলো, সময়টা গ্রীষ্ম। একটা গোটা বছর ধরে পুলিশকে চাপ দিয়ে যাওয়ার পর জানা যায় ছাদে একটি পরিবার ছিলো, যাঁরা পুলিশের কাছে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলো। কিন্তু পুলিশ আমাকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছে না। ঐ বাড়িতে বা আসেপাশে বাড়িতে থাকা বেশ কিছু লোক আমার ছেলের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। পুলিশ তাঁদের কারোর স্টেটমেন্ট নেয়নি। ... ...
আস্তে আস্তে পিতৃতান্ত্রিকতা শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হল। বুঝলাম, রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে কবি সাহিত্যিকরা যতই মিলনের রোম্যান্টিকতার ছবি আঁকুন না কেন, বিয়ে নামক মিলনের সমাজ-স্বীকৃত পথটি আদতে পিতৃতন্ত্রের মেয়েদের তাঁবে নিয়ে আসার অন্যতম রাস্তা। আর সেই বিয়েতে পাওয়া সম্পত্তিটিকে চিহ্নিত করে দেওয়ার ইচ্ছে থেকেই আদতে শাঁখা-সিঁদুরের জন্ম। এই বোঝার ঢেউ এসেছিল আমাদের আগের প্রজন্মেই, আমাদের প্রজন্মে বোঝাটা একটু বেশি জোরদার হল। অনেকেই বর্জন করলেন বিবাহের চিহ্ন। অনেকে নিলেন মধ্য পন্থা – কিছু বর্জন, কিছু রেখে দেওয়া, নিজের ইচ্ছা মত। একের দেখাদেখি আরও অনেকে। ... ...
মহামারীর প্রাদুর্ভাব নতুন কিছু নয়। বেদ-বাইবেল-পুরাণের যুগ থেকে শুরু করে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে নানান কালান্তক রোগের সংক্রমণ পীড়িত করেছে মানব সভ্যতাকে। দেশ-বিদেশের সমাজ রোগের অভিঘাত মোকাবিলা করেছে বিচিত্র ভঙ্গিতে। চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি ঘটেছে, তবে তারই পাশাপাশি এলিজাবেথান ইংল্যান্ড বা ঔপনিবেশিক বঙ্গে রোগকে ঘিরে উৎপত্তি হয়েছে কৌতুককর ঘটনার, পাখা মেলেছে মানুষের অন্ধবিশ্বাস, আধিপত্য বিস্তার করতে, চলেছে কৌশলী রাজনীতির খেলা। আর নিরুপায় সাধারণ মানুষ আশ্রয় খুঁজেছে দৈব নির্ভরতায়। পাঁচ পর্বের এই লেখাটিতে মহামারীকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে পাঁচটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে। কোথাও যেমন সমকালীন সাহিত্যে তার প্রতিফলন খোঁজা হয়েছে, তেমনি কোথাও আবার উঠে এসেছে রোগের বিচিত্র চিকিৎসা-পদ্ধতি এবং মারী -কেন্দ্রিক রঙ্গ-রসিকতা। ঔপনিবেশিক বঙ্গে জাতীয়তাবোধের উন্মেষের সন্ধান করতে গেলে তারও একটি সূত্র মিলবে দেশজ চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যার আগ্রাসী ছায়া বিস্তারে। আবার কলেরার হানায় ব্রিটিশদের আতঙ্ক প্রকাশ পেয়েছে তিনশ বছর আগে হাওড়া ও কলকাতায় খোদ ব্রিটিশ সওদাগরের অর্থে ওলাবিবির মন্দির গড়ে ওঠার ঘটনায়। আর করোনা আতঙ্ক থেকে বাঁচতে এই একুশ শতকে লৌকিক দেবদেবীর তালিকায় নবতম সংযোজন করোনা মাতা। ... ...
বাংলায় টিকাকারের কাজ করতেন ‘নীচু’ ব্রাহ্মণ, মালাকার/মালি, কুম্ভকার, শঙ্খকার, তাঁতি, নাপিত ইত্যাদিরা। এদের অধিকাংশই কাছেপিঠের শহর-গ্রাম থেকে আসতেন। বাংলার বাইরে আবার এসব জাতের মানুষ ছাড়াও অন্যান্য জাতের লোকেরা টিকাকার ছিলেন, যেমন কুনবি, সিন্দুরিয়া, আর রোজা। রোজা বা ওঝাদের সাধারণ কাজ ছিল ঝাড়ফুঁক। তাই টিকাকরণ একদিকে লোকধর্মের অনুসঙ্গ হিসাবে ছিল, অন্যদিকে প্রান্তিক মানুষের অপদেবতায় বিশ্বাস ইত্যাদির সাথে ঠাঁই করে নিয়েছিল বলে মনে হয়। আরও উল্লেখ্য হল, বাংলার বাইরে অন্তত টিকাকারদের মধ্যে মুসলমান ছিলেন, আবার গোয়ার মতো জায়গায় ক্যাথলিক পাদ্রিরাও ছিলেন। এরা শীতলা মন্ত্র জপ করতেন কিনা তা অবশ্য জানতে পারিনি। ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রীয় বিধান বা আয়ুর্বেদ থেকে উৎপন্ন হয়ে টিকার প্রথাটি লোকধর্মে মিশেছিল, নাকি লোকধর্ম থেকে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করেছিল, নাকি উভয় দিক থেকেই একত্রে এসেছিল, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের সাহায্যে তার বিচার করা কার্যত অসম্ভব। ... ...
২০১৪ সালের অক্টোবর নাগাদ তুরস্কে যখন যাই তখনও ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠেনি। যদিও দক্ষিণ পূর্ব সীমায় অবস্থিত নিমরুত পাহাড় থেকে পাঁচ ছ ঘন্টার মধ্যে এসে পড়েছে আইসিস, সীমান্তে জোর যুদ্ধ চলছে। আমাদের শেষ পর্যন্ত আর নিমরুত অবধি যাওয়া হয়নি, যুদ্ধ কাঁটাতার টপকে এদিকে চলে আসতে পারে এই আশঙ্কায়। উষ্ণ প্রশ্রবণ আর চোখ ধাঁধানো পুরাতত্ত্বের পামুক্কালে থেকে দিনভর গাড়িতে মৌলানা জালালুদ্দীন রুমির স্মৃতিবিজড়িত কোনিয়া যাওয়ার পথে এক গ্রামে গাড়ি দাঁড়ালে হঠাৎ করেই চোখে পড়েছিলো পথের পাশে বইয়ের দোকান। সেখানে মোল্লা নাসিরুদ্দীন (তূর্কীতে নাসিরুদ্দীন হোজা) তাঁর প্রিয় গাধার পিঠে চেপে বইয়ের মলাটে হাজির। আকসাহির বলে যে ছোট শহরে তাঁর মৃত্যু হয় ও সমাধি, তার খুব কাছে এসে পড়েছি আমরা। নাসিরুদ্দীন এমন এক চরিত্র, যাঁর মধ্যে ইতিহাস ও কিংবদন্তী মিলেমিশে এমনভাবে জট পাকিয়ে আছে যে একটার থেকে অন্যটা আলাদা করা যায়্না। ... ...
চন্দননগরের এক ব্যস্ত চিকিৎসক। সামনের ফ্ল্যাটে ‘করোনা বেরিয়েছে’। ক্লাবের ছেলেরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে এসে বলল, ডাক্তারবাবু, চেম্বার বন্ধ করে দিন—রোগীদের বিপদ, আপনিও সপরিবারে থাকেন। ডাক্তারবাবু বুঝতে পারছিলেন না এটা কি হুমকি, নাকি সত্যিই শুভাকাঙ্ক্ষী এরা। শুভাকাঙ্ক্ষী বলেই মনে হল যখন, তখন বুঝিয়ে বললেন। বাজারে বাসে দোকানে না-জানা করোনা রোগীর কাছ থেকেই বিপদ, কারণ আমাদের দেশে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হয় না, সবাই মাস্ক ঠিকমতো পরতে জানেন না। সামনের ফ্ল্যাটে করোনা হয়েছে সেটা তাঁরা জানেন ও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আলাদা আছেন, বাড়ির বাইরে করোনা-আক্রান্ত বেরচ্ছেন না। ক্লাবের ছেলেরা বুঝল। তারপর ডাক্তারবাবু বললেন, একটা কাজ করবেন? ওদের বাড়িতে নিয়মিত রান্না করা খাবার পৌঁছে দেবেন? ... ...
করোনা ভাইরাস এর অতিমারী বিলেতে একটু বেশি মাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি করছে। সেই সঙ্গে আর একটা ব্যাপার দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান (মানে উপমহাদেশীয়, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রী লঙ্কা), এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষেরা এই নতুন রোগটিতে আক্রান্ত হলে, তাঁদের মৃত্যুর সম্ভাবনা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে বেশি। এই ব্যাপারে স্বভাবতই এই গোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে খানিকটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সেই সঙ্গে অনেক রকম "তত্ত্বের" পর্যালোচনাও আরম্ভ হয়েছে। ... ...
পপুলার ছবি, তার জন্মলগ্ন থেকেই, দায় নিয়েছে ভারতের অতি-জটিল রাজনীতির মুখ্য প্রবক্তা হবার, আবার সে রাজনীতির বিনোদনের যোগান দেবারও বটে।ভারতীয় রাজনীতি-- এবং তার বিনোদনের চাহিদা-- পালটায় প্রতি দশকে, পালটায় তার জননীতি, জনসমর্থন এবং অনুভাগগুলি। সংস্কৃতির এক বিচিত্র নিয়মে অন্তত পঞ্চাশের দশক থেকেই হিন্দি ছবি তাল মিলিয়ে চলছে এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে। একে শুধু রাষ্ট্রীয় রাজনীতির অনুগমন বললে ভুল হবে, বরং হিন্দি ছবির রূপান্তর অনেকসময়েই তার সহোদরা-- দেশীয় রাজনীতির সাথে সম্পূর্ণ সমান্তরাল, কখনও কখনও মাসেরও বিলম্ব হয় না, উনিশশো পঁচাত্তরের জরুরী অবস্থার (জুন) বজ্রনির্ঘোষের ক’মাস আগে পরের মধ্যে রিলিজ করে যায় ‘দিওয়ার’ (জানুয়ারী) এবং ‘শোলে’ (অগস্ট)। দুটি ছবিই প্রবল প্রতিষ্ঠানবিরোধী এবং ভিজিল্যান্টিজমের সমর্থক; একপাশে দস্যুরূপী অসুরদলনের রূপকথা, অন্যদিকে সমসাময়িক ধূমায়িত গণ-অসন্তোষের আগুনে হাত সেঁকা। গব্বর সিং আপাত-অরাজনৈতিক, কিন্তু সে কী সত্তরের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রশক্তির প্রতিভূ নয়? ... ...
ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটের ফিল্টার অপশন না হয় সরল, কিন্তু কী হবে বাংলায় বিপুল বিক্রিত, দ্রুত বিক্রিত, সেরা বিক্রিত খবরের কাগজগুলোর ক্ষেত্রে। সেখানে তো ফি রবিবার বর্ণবৈষম্যের বিজ্ঞাপনে পাতা রঙিন হয়ে ওঠে। যেমন ২১ জুন, ২০২০ আনন্দবাজার পত্রিকার ইত্যাদি ট্যাবলয়েডে ‘পাত্রী চাই’ বিভাগে একটি বিজ্ঞাপনে লেখা হচ্ছে পূর্ববঙ্গ কায়স্থ দেবারী গণ...সুদর্শন কল্যাণীর... ডাক্তার পাত্র শিক্ষিত পরিবারের রুচিশীলা ফরসা স্লিম সুন্দরী MSC/MBBS/MD স্ববর্ণ পাত্রী কাম্য। অর্থাৎ একজন ডাক্তার (শিক্ষিত সমাজের একজন বলে যাঁকে মানা হয়) তাঁর জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভিন্ন জাত/ধর্ম তো ছেড়েই দিন স্বগোত্র-গণের বেড়াজাল থেকে বেরোতে পারছেন না। ... ...
বাবার কাছে শুনলাম অনেক নার্স দিদি দু'মাস বাড়ি যেতে পারেননি। নিজের পরিবারকে এক ঝলক না দেখে যারা দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবার মত রোগীদের সেবা করছেন তাদের কুর্নিশ জানাই। আমাদের কাউন্সিলর স্যার এবং তার পুরো টিমকে অনেক ধন্যবাদ নিয়মিত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌছোনো ও পাড়া স্যানিটাইজ করার জন্য। সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ সেই সকল পরিবারকে যারা আমাদের জন্য ২১ দিন স্বেচ্ছাবন্দী ছিলেন। অনেকের অনেক অসুবিধা হয়েছে জানি, তবু সবাই সহমর্মিতা দেখিয়ে আমাদের পাশে ছিলেন ও নিয়মিত বাবার খোজ নিয়েছেন। ... ...
এখনও ট্রমা থেকে বেরোতে পারিনি আমি। অতজন অসুস্থ মানুষ একসঙ্গে.... দাদুকে নিয়ে অত রাত্রে বেরোনো, মাথার ওপর কেউ নেই কেউ নেই ভাবনা, সেই সময় বেশ কিছু কাছের মানুষের অসহযোগিতা - এগুলো মনে পড়ে যায়। এখনও মাঝে মাঝেই ঘুম ভেঙে যায়, ভাবি এই বুঝি বাবার জ্বর এল। এই বুঝি কারোর কিছু হল। তারপর ভাবি, নাহ্ সব তো কবেই মিটে গেছে! শুধু বাইরের কিছু মানুষ আমাদের অসুস্থ বানিয়ে শোকেসে তুলে রেখেছে। যদি এইরকম দুর্ব্যবহার সবাই করতে থাকেন, কি হবে তাহলে ভাবুন! যে মানুষ আজ দুর্ব্যবহার করছেন, তাঁকেও যদি কেউ তা ফিরিয়ে দেয়, বাঁচা যাবে তো? তাই পাড়ায় কারোর করোনা হলে প্লিজ পাশে গিয়ে দাঁড়ান। ... ...
হলওয়েল লিখেছেন, কেবল দক্ষ ব্রাহ্মণেরা টিকা দেবার কাজ করতেন। সাধারণত তাঁরা এলাহাবাদ, বারাণসী, বৃন্দাবন প্রভৃতি সুদূর হিন্দু পবিত্রভূমি থেকে আসতেন। টিকা দেবার পুরো সময়টাতে তাঁরা ‘অথর্ব বেদ’-এর মন্ত্র পড়তেন। হলওয়েল সাহেবের উদ্দিষ্ট পাঠকরা ছিলেন ব্রিটিশ ডাক্তাররা, বিশেষ করে রয়্যাল সোসাইটির সদস্যরা। হলওয়েল যখন লিখছিলেন তখন একই ভ্যারিওলেশন পদ্ধতি তুরস্ক থেকে ইংল্যান্ডে ঢুকেছে, তার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে ইংরেজ ডাক্তারদের সন্দেহ ছিল। ভ্যারিওলেশন হিন্দু সমাজের মাথা অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের কাজ, বেদমন্ত্র পাঠের সঙ্গে করা হত, এমন বললে ইংরেজ ডাক্তারদের কাছে এটি বেশি গ্রহণযোগ্য হত। ভারত সম্পর্কে যেসব ইংরেজ ডাক্তার খবর রাখতেন, তাদের কাছে ব্রাহ্মণদের পরিচয় ছিল সুপ্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার প্রতিনিধি হিসাবে। আসলে কিন্তু ভ্যারিয়েলেশন কেবল ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া ছিল না, আর পদ্ধতিটি সবসময় একই রকম থাকত না। ... ...
সেই গৌড় কালকে চেম্বার শেষের পর বলে ফেলল, ‘ডাক্তারবাবু, চারিদিকের ঘটনা দেখতে দেখতে কদিন ধরে ভগবানের উপর আমার ভরসা হচ্ছে না। বাচ্চা কোলে নিয়ে শ্রমিকেরা রৌদ্রের মধ্যে হাঁটছে, সেটাকি ভগবানের চোখে পড়েনা? ভগবান থাকলে এতগুলো গরীব মানুষের ঘর আম্ফানে ভেঙে যায়? অথচ দেখেন, যে নেতাগুলো এই অকালেও গরীবের পেটে লাথি মারছে তাদের কিছুই হয় না। দিব্যি আছে।’ ... ...
বিকেলে পাশের পাড়ায় মানে আমার বরের বাড়ির পাড়া থেকে খবর এলো, সেখানে নাকি লোকের মোবাইলে মোবাইলে আমার বরের করোনা রিপোর্ট ঘুরছে। সবাই ওকে নিয়েই আলোচনা করছে। আসলে ওই পাড়ায় আমার শ্বশুরবাড়ি, ওখানে আমার অসুস্থ শাশুড়ি থাকেন আমার ভাসুরের পরিবারের সাথে। আর আমরা শাশুড়ি অসুস্থ বলে ওনাকে এই খবরটা আমরা দিইনি। কিন্তু লোকে যেভাবে বলাবলি শুরু করলো তাতে আমরা তখন বাড়ি বসে চিন্তায় অস্থির। তারমধ্যে আমার ফ্ল্যাটের লোক আর পাড়ার লোকের থেকে তো বাজে বাজে মন্তব্য শুনছিলামই অবিরাম। ... ...
রেমডেসিভির নিয়ে প্রথম ট্রায়াল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে (১০.০৪.২০২০) “Compassionate Use of Remdesivir for Patients with Severe Covid-19” শিরোনামে। এরপরে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র বেরোয় ল্যান্সেটে (২৯.০৪.২০২০) “Remdesivir in adults with severe COVID-19: a randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre trial” শিরোনামে। লক্ষ্য করার বিষয় এ ট্রায়ালটি “randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre” চরিত্রের – যেমনটা সঠিক বৈজ্ঞানিক ট্রায়ালের ক্ষেত্রে হবার কথা। রেমডেসিভির-এর বর্তমান আবিষ্কর্তা Gilead Sciences কোম্পানি এবং NIH স্বাভাবিকভাবেই এই ওষুধের ট্রায়াল দিয়েছে। কিন্তু এদের ট্রায়ালগুলো open-label, double-blind নয়। ফলে বিজ্ঞানের বিচারে বিশ্বাসযোগ্যতা কম। ... ...
মোড় থেকেই বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার লোহার রেলিং-ঘেরা হাঁটার রাস্তা, লোকে ডালি-ফালি নিয়ে লাইন দিয়ে চলেছে। এদিকে একইরকম আরও একটা রাস্তার মসজিদে ঢোকার মুখে, যদিও সেখানে কেউ নেই। পাশে কয়েকজন পুলিশ জটলা করছে। পূর্বঅভিজ্ঞতা থেকে বুঝলাম জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। তাই হেলতে দুলতে ওই রেলিং-ঘেরা জায়গাটা দিয়ে চলতে শুরু করলাম। কয়েকপা এগোতেই জটলাকারী পুলিশের দল ছুটে এসে জেরা শুরু করে দিল। ততক্ষণে বেশ রাগ হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন এসবের উত্তরে বললাম আর্কিওলজিকাল সাইট, তাই দেখতে এসেছি। খুব বিশ্রীরকম সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে, যাওয়ার নিয়ম নেই, বলে ভাগিয়ে দিল ওখান থেকে আমাদের। ... ...
জানেন কতজনের সঙ্গে আলাপ হয় কত বড়ো গুণীজন তাঁরা সবার কনট্যাক্ট আমি রেখে দিই। সময় এলে ঠিক কাজে লেগে যায়। এরম করে অন্তত দুটি ফুটবলারের জীবন আমি বাঁচাতে সাহায্য করেছি আমার চেনা পরিচিত দুই ডাক্তারের সাহায্যে। এই আপনার সঙ্গে আলাপ হলো আজ তেমনি কোথাও কোনও অনুষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, কার্ড দিয়েছিলেন রেখে দিয়েছিলাম। ঠিক সময়ে কাজে লেগে গেলো। ফুটবলে আপনার পায়ে বল এলে আপনাকে ঠিক টাইমিং এ পারফেক্ট কন্ট্যাক্টে বা টাচে বল পাস করতে হবে দলের সহ খেলোয়াড়কে, আফটার অল ইটস আ টিম গেম... লাইফ ইস অলসো আ টিম গেইম... শ্রদ্ধায় প্রণাম করতে গিয়েছিলাম, হাঁ হাঁ করে উঠে দাঁড়িয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর সেদিনের কলাম চেক করতে হবে ওঁকে, তাই আর বিরক্ত না করে বেরিয়ে এসেছিলাম। ... ...