শিকড় তো অনেক গহীনে। সেখানে প্রবেশ করবে কী করে রেখা। সে ছিল নিরূপায় নিরালম্ব এক মানবী, খালেকও কি তাই নয়? খালেক--পোকার রক্তে যে শৈশব রয়েছে তাকে সে এড়াতে পারে না। তাকে সে ভোলে নি। টিপু ভাইজান, মনি ভাইজান, ছবিদি, ইস্কুল, পা ভাঙ্গা শালিক...... কী অপূরব এক শৈশব এঁকেছেন মাহমুদুল হক। সেই শৈশবই খেয়েছে তার প্রাণমন। সেই ফেলে আসা গ্রাম, মানুষজন। ১৯৪৭-এর কথা তা। তখন বালকের বয়স আট হবে বড় জোর। ক্লাস টু। তার দাদা টিপু কলেজে ভর্তি হয়েছে। মনি ভাইজান ক্লাস নাইন হবে কি? সেই বালকের অমল শৈশবই এই উপন্যাসের আধার। এই উপন্যাসের প্রাণ। ছোট ছোট এমন অনুষঙ্গে ভরে আছে এই উপন্যাস যে পড়তে পড়তে বুক মুচড়ে যায়। দেখতে পাই আমার জন্মের আগের পৃথিবী। উপন্যাস তো আমাকে জাতিস্মর করে তোলে। দেখতে পাই সেই সময়কে। ... ...
লকডাউন পিরিয়ড কর্মহীনতাকে মাত্রাছাড়া করে তুলেছে। ধুঁকতে থাকা অর্থনীতির ফাঁদে পড়ে বহু ছাত্রকেই আয়ের পথ খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে। যে ছাত্রকে আজ সুদিনের আশায় অব্যহতি দেওয়া হল সে ফিরতি বছরে আদৌ স্কুলমুখী হবে কিনা তা বলা মুশকিল। গোটা বিশ্বেই এই আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে যে অতিমারীর প্রকোপ কাটলে ভয়াবহ ড্রপ আউট হতে চলেছে স্কুল কলেজে। ভারতে এর মাত্রা যে ঠিক কত ভয়াবহ হতে পারে তা আন্দাজ করাও মুশকিল। জিরো অ্যাকাডেমিক ইয়ারের প্রাথমিক অব্যহতি নড়িয়ে দিতে পারে ফিরতি বছরের শিক্ষার্থীর হারকেই। তাছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা নিজেই অর্থনীতির একটা বড় অংশ। এই গোটা ব্যবস্থার সাথে যুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ভিতর বিভাজন কম নয়। ... ...
গুজরাল এবং জাফরি কমিটি এ ব্যাপারে যা সূত্র দিয়েছিল, তা হল এইঃ হিন্দিভাষী রাজ্যে শিখতে হবে তিনটি ভাষাঃ ১। হিন্দি (সংস্কৃত সমেত), ২। উর্দু বা অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা, ৩। ইংরিজি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষা। অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে যে ভাষাগুলি শিখতে হবেঃ ১। আঞ্চলিক বা স্থানীয় ভাষা। ২। হিন্দি। ৩। উর্দু বা অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা। ৪। ইংরিজি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষা। অর্থাৎ, কার্যত, হিন্দি এবং ইংরিজি শেখাটা প্রতিটি ভারতীয় শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক। ... ...
দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া ইলাসট্রেটেড উইকলি লিখছে, "বৃহস্পতি এবং শুক্রবার সর্বত্র বাঙালিরা মাথা উঁচু করে সগর্বে চলাফেরা করছিলেন। ট্রামে, অফিসে, রাস্তার মোড়ে- সর্বত্র বাঙালিবাবুদের আলোচ্য বিষয় কেবল মোহনবাগান। খালি পায়ে খেলে বাঙালি ছেলেদের বুট পায়ে দেওয়া ব্রিটিশ সৈন্যদের হারিয়ে দেওয়া গল্প।" অন্যদিকে ইংরেজরা একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি মোহনবাগানের এই আচমকা উত্থান। ৪ অগস্টের হিতবাদী পত্রিকা জানাচ্ছে, সেমিফাইনালের দিন সন্ধ্যায় একই ট্রেনের বগিতে ভ্রমণরত একজন ভারতীয় খ্রিস্টান সরল মনে ইংরেজ সহযাত্রীর কাছে খেলার ফল জানতে চান। উত্তরে ইংরেজটি ওই ভারতীয় ভদ্রলোকের গালে সজোরে একটি চড় কষিয়ে দেন। ... ...
পার্মাফ্রস্ট বলে প্রকৃতিতে একটা ব্যাপার আছে যা স্থলভাগের প্রায় ২৪% এলাকা জুড়ে এর অবস্থান করে । পার্মাফ্রস্ট মানে মাটির নিচে সহস্র-অযুত বছর ধরে জমে থাকা চিরবরফ অঞ্চল। এই হিম-মৃত্তিকাই ধারণ করে আছে মানব সভ্যতার আদিম অস্তিত্বকে। এর বুকেই দাফন আছে বরফ-যুগের প্রাণীদের হাড়-কঙ্কাল, এমনকি কিছু গাছপালার অংশও। এগুলি এতটাই গভীর এবং পুরু বরফের স্তর যে, সাইবেরিয় অঞ্চলের বাসিন্দারা মাটি খুঁড়ে ঘর বানিয়ে তাতে শার্কের মত বৃহৎ প্রানীর মাংস অব্দি সংরক্ষণ করে বছরের পর বছর ধরে । বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই বরফও নাকি এখন দ্রুত গলে যাচ্ছে । কেননা, বিশ্ব-উষ্ণায়ণের জেরে এই সব অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে লাগামছাড়া হারে। ২৩ জুন, ২০২০ জানা গেল যে, রাশিয়ার মস্কো থেকে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তর মেরুবৃত্তের অন্যতম শীতলতম এলাকা ভেরখোয়ানস্ক শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস । এখানে সচরাচর লোকজন বছরের বেশরভাগ সময়ে মাইনাস ৫০ ডিগ্রির তাপমাত্রায় জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত । বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অংশে অনেক দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে, তাও ধীরে ধীরে নয়, প্রায় রাতারাতি। ... ...
প্রতিটি কোশের মধ্যে আয়ন চ্যানেল (ion channel) নামক একটি ফাঁপা অংশ থাকে এবং charged particles বা আয়ন ওই চ্যানেলের মধ্য দিয়েই যাতায়াত করে। এই চ্যানেলের মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম দরজা থাকে, যা নিয়ন্ত্রণ করে ওই পথে কতটা আয়ন কোন্ গতিতে ও কোন্দিকে যাবে। কোশগুলি আবার অন্যান্য কোশের সঙ্গেও তথ্য আদানপ্রদান করে গ্যাপ জাংশান (gap junction)-এর মাধ্যমে। লেভিনের উদ্দেশ্য ছিল একটি মাইক্রোস্কোপিক যন্ত্র কেনিউরোটক্সিনের মতো কাজ করিয়ে যে-কোনো চ্যানেলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করা, যার ফলে যে-কোনো কোশের বিভাজন, অঙ্গগঠন, আকার ও অবস্থান নির্ধারণ করতে পারা যাবে ইচ্ছেমতো। মানে খুব সহজ ভাষায়—একটা ত্রিভুজাকৃতির ব্যাং বা আমাদের বিখ্যাত প্রবাদ অনুযায়ী ‘সাপের পাঁচ পা’ গঠন করাও সম্ভব হতে পারে! ... ...
নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকারকে সরাসরি লঙ্ঘন করছে এই মুখ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া। শুধু তাই নয় মানুষের মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে অজানা ভয়। সন্দেহ তালিকায় না থাকার আপ্রাণ চেষ্টা স্বরূপ সে ক্রমশ গুটিয়ে নেবে তার স্বাভাবিক অভিব্যাক্তিটুকুও। ভুলতে বসবে সংবিধান তাঁকে দিয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমবেত হবার অধিকার, মিছিল-মিটিং করার অধিকার। শিরদাঁড়া বেয়ে এক অজানা ভয় নেমে আসবে, নিয়ন্ত্রণ করবে তাঁর সমস্ত গতিবিধি, ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে রাতে শুতে যাওয়া পর্যন্ত। সামগ্রিক এই ভয়ের চর্চায় কি গণতন্ত্রের মূল ভিতটাই প্রশ্ন চিহ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে না? ... ...
এর মধ্যে নতুন উপদ্রব করোনা সেন্টার এবং মানুষের আতঙ্কে বিকারগ্রস্ত আচরণ। বাড়ির পাশের হস্পিটাল সামান্য জ্বর কাশি হলেও পাঠিয়ে দিচ্ছে করোনা সেন্টারে। সেখানে সুস্থ স্বাভাবিক কোনো মেন্টেনেন্স নেই। যে কেউ, যার সরকারি হস্পিটালের অভিজ্ঞতা আছে, সে আন্দাজ করতে পারবে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার কিরকম হতে পারে। শুধু অব্যবস্থা তো নয়, সাথে জড়িয়ে আছে ভয়। যে ভর্তি তারও মানসিক অবস্থার অবনতি হবে। যারা কাজ করছে ওই সেন্টারে, তারাও ঢাল তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দার হয়ে দুরুদুরু বুকে কতটাই বা পরিষেবা দেবে। এরপর আশে পাশের মানুষজন যদি শোনে কোভিড সেন্টারে গেছে, রোগী এবং তার পরিবারের করোনা হোক না হোক, বাড়িতে-এলাকায় স্বাভাবিক ভাবে থাকা যে আর হবেনা এটা নিশ্চিত। যদি বাড়ি বয়ে একদল আতঙ্কগ্রস্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকজন মারতেও আসে, মৃত্যুর আগে যে প্রশাসন এসে পৌঁছাবে না এ গ্যারান্টি দেওয়াই যায়। পৌঁছালেও সেটা ওই ১-২% ব্যতিক্রম লিস্টে। ফলে বাবা এবং বাবার মতো বহু মানুষ যে কোনো ধরনের অসুখই অত্যন্ত যত্নে লুকিয়ে রাখছে। এমনকি নিজের বাড়ির লোকের থেকেও। ... ...
ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট তৈরি করার সময়ে আন্দাজ পেয়েছিলাম এটা সরকারি সদিচ্ছা এবং অর্থ জোগাড় করে ফেললেই তক্ষুনি করে ফেলা যায় না। এমবিবিএস ডিগ্রি থাকলেই যে এটা সামলাতে পারবেন যে-কোনো ডাক্তার এমন নয় ব্যাপারটা। এখানে কাজ করতে হলে পাস করার পর অন্তত বছর দুয়েক ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা চাই তাঁর, বয়স হতে হবে পঞ্চাশের নীচে, কারণ শারীরিক পরিশ্রমও প্রচুর একাজে, সবকটা ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে কাজ করতে হয়। প্রয়োজনে রোগীকে অজ্ঞান করে, তাঁর ফুসফুসে টিউব ঢুকিয়ে, ভেন্টিলেট করার দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এই চিকিৎসকের। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই প্রাণসংশয় হবে রোগীর। অতএব এ কাজ ডাক্তার মাত্রেই করতে পারবেন, এমন নয়। ... ...
একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে – যদি ৭০% থেকে ৯০% জনসংখ্যার সংক্রমণ ঘটে (১০.০৪.২০২০-তে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাব্লিক হেলথের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী) তাহলে আমরা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছি এমনটা ভাবতে পারি। যদি এ পরিমাপ ৪০-৫০%-ও হয় তাহলেও এরকম একটা পরিসংখ্যানে পৌঁছুনো কার্যত অসম্ভব। নিউ ইয়র্কের মতো করোনা-বিধ্বস্ত শহরে যেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৪,২৯৯ জনের (সমগ্র ভা্রতের চেয়ে অনেক বেশি) সেখানে শহরের সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র ১২.৩ থেকে ১২.৭% আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ওখানেও হার্ড ইমিউনিটির কোন ভরসা বৈজ্ঞানিকেরা দেখতে পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে ভারতবর্ষ উজার হয়ে গেলেও শেষ অবধি হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে কিনা সন্দেহ আছে। ... ...
গলা খাঁকড়িয়ে ইবন, মুখে দুটো লবঙ্গ ফেলে বললেন, সে এক আশ্চর্য ব্যাপার দেখলাম, বুঝলেন! সবে চিন দেশ ছেড়েছি। সমুদ্রের কোন অজানা অঞ্চল দিয়ে চলেছি মাঝিমাল্লার দল বুঝতেই পারছে না। শোঁ শোঁ হাওয়া। আকাশ কালো অন্ধকার। দশ দিন সূর্যের মুখ দেখিনি। বেঁচে থাকবো কি না বুঝতেই পারছি না! জাহাজের সবাই আবার চিন দেশে ফিরে যেতে চাইলো কিন্তু তখন তা আর সম্ভব নয়। বিয়াল্লিশ দিন সমুদ্রে আমাদের এইভাবেই কাটল। অনিশ্চিত। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না কী হতে চলেছে। তেতাল্লিশ দিনে দূর থেকে একটা পাহাড় দেখা গেল। পাহাড়! মানে ডাঙা! বাতাসের বেগ আমাদের সেই দিকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। জলের মধ্যে পাহাড়! অভিজ্ঞ নাবিকের দল বলাবলি করতে লাগলো, এরকম কোনো ধারণাই তাদের নেই। কোথাও মস্ত বড় কিছু ভুল হচ্ছে! ... ...
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাড় পাঁজরা বেড়িয়ে গেছে। কোভিড রোগীদের তো বটেই, অন্যান্য রোগেও চিকিৎসা পেতেও জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে।এটা হওয়ারই ছিল। মিডিয়া ও সরকারের পক্ষ থেকে যথারীতি ভঙ্গুর পরিকাঠামোকে চাপা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। মানুষেরা আমাদের গালি দিয়ে মনের ঝাল মেটাচ্ছে। কর্পোরেট হাসপাতালগুলি জনস্বাস্থ্যের এই দুর্যোগের সময়েও ব্যবসায়িক মনোভাব থেকে বেরোতে পারেনি। তারা নানা রকম করোনা প্যাকেজ চালু করেছে। তা সাধারন মানুষ তো বটেই, আমার মতো মধ্যবিত্ত চিকিৎসকেরও সামর্থ্যের বাইরে। সরকার সে সব দেখে শুনেও চুপচাপ। ... ...
প্রথম যেদিন সাকিনা মেজদিকে ওইরকম থুতনি নিয়ে দেখল এবং মেজদির মুখে শুনল যে ওর ক্যানসার হয়েছে সে কী কান্না বুড়ির। শুধু বলে, “ও মা, তাহলে তো তুই বাঁচবি না রে মেয়ে৷” মেজদিই বরং ওকে সান্ত্বনা দিত। এরপরই সাকিনা বিবি এমন একটা কাজ করেছিল যা আমি কোনোদিন ভুলব না। মেজদিকে, যবেই আসত গোটা তিনেক করে ডিম দিত খেতে। পয়সা নিত না। কিছুতেই নিত না৷ বলত, “তোর শরীর খারাপ রে মেয়ে৷ রোজ খাবি একটা করে। দিশি ডিম। উপকার হবে৷” অবাক হতাম। এক হতদরিদ্র গ্রাম্য মহিলা কোন্ মনের জোরে এমন কাজ করতেন!! ... ...
ইন্ডিয়ান মেডিকেল গেজেটে প্রকাশিত একটি হিসেবে জানা যায় ১৮১৭ থেকে ১৮৩১ সালের মধ্যে শুধু অবিভক্ত বঙ্গে এক কোটি ৮০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছিল কলেরায়। মৃতদের মধ্যে এক বিরাট অংশ ছিল ব্রিটিশ সেনা। তবে তার আগেও প্রতি বছর হাজারে হাজারে মানুষ মারা গেছে কলেরায়। কলেরার আতঙ্ক ইউরোপিয়ানদের মধ্যেও যে কতটা জাঁকিয়ে বসেছিল তার চমকপ্রদ সাক্ষ্য মেলে পৃথক এক ব্রিটিশ সরকারি নথিতে। ১৭২০ সাল নাগাদ জনৈক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ডানকান ওলাবিবি মন্দির তৈরি করার জন্যে দিয়েছিলেন চার হাজার টাকা। হাওড়ার শিবপুর অঞ্চল তখন ছিল গভীর জঙ্গল। সেই জঙ্গলে ওলাবিবি রূপে পূজিত পাথরের ঢিপিকে ডানকানের টাকায় তৈরি হওয়া মন্দিরে স্থানান্তরিত করে শিলাখন্ডটির ওপরে এক দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তী কালে শিবপুরে বন কেটে বসতের প্রসার ঘটলে স্থানীয় জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় ওলাবিবির মন্দিরের জনপ্রিয়তা লোকমুখে আরও ছড়িয়ে পড়ে। ... ...
এর আগের পর্বে কয়লাখনি নীলাম ও তাতে বিশাল বনভূমি ধ্বংসের কথা লিখেছি। লিখেছি কী ভাবে কর্পোরেটের সামনে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে এদেশের সমস্ত খনিজ ও বনজ পদার্থ। যাতে তাদের কোনো অসুবিধে না হয়, সেজন্য আইন পালটে যাচ্ছে দেদার। অতিমারির অছিলায় শুধু ভিডিও কনফারেন্স করে পরিবেশ সম্পর্কিত অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যদি আসামের বাঘজান তৈলকূপ ও বিশাখাপত্তনমের গ্যাস লিক আমাদেরকে কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকে তাহলে তা হওয়া উচিত ছিল এইরকম- এদেশের মাটিতে পরিবেশের সর্বনাশ আটকাতে হলে আমাদের চাই ইন্ডাস্ট্রির তুমুল খিদেকে বশে রাখবার জন্য যথোপযুক্ত পলিসির আশ্রয় নেওয়া। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? ... ...
পপুলিজমের বৈশিষ্ট্য, যেখানে সঠিক-বেঠিকের হিসেবের থেকেও মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা বেশি প্রয়োজনীয়। কন্তের বিরুদ্ধে একগাদা বিতর্ক, মূলত তাঁর সিভিতে যেসব ডিগ্রির উল্লেখ আছে সেগুলো নিয়ে। মোদীর entire political science-এর মতো মোটা দাগের মিথ্যা না, মমতা ব্যানার্জির জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাস্যকর দাবি নয়, সুচারু অর্ধসত্য আর মিথ্যা দিয়ে সাজানো কন্তের ফোলানো সিভি। অন্যদিকে স্পেনের পাবলো ইগলেশিয়াসের Podemos পার্টি আঞ্চলিক রাজনীতি (যার শিকড় কিনা ভাষা ও সংস্কৃতিগত ভাবে স্বীয় স্বীয় অঞ্চলের এবং আলাদা) হাইজ্যাক করে নির্বাচনে কিস্তিমাত করেছে। তারা এখন তৃতীয় বৃহত্তম দল। যেসব আঞ্চলিক, প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোট নিজেদের দিকে টেনে এনে তারা জিতেছে সেই ইস্যুগুলো তাদের নিজস্ব কর্মসূচির নয়, সেই আন্দোলনগুলিতে তারা কস্মিনকালেও অংশ নেয়নি। ... ...
তবে ডিনার পর্বের এখনও বাকি আছে। অর্ডার নিয়ে সুন্দরী ওয়েট্রেস চলে যাবার পর আবার শুরু হল আলাপ। বিষয় থেকে বিষয়ে ভাসছি যেন বানের জলে কলার ভেলার মতন। এরই মধ্যে কিঞ্চিৎ পানীয়। এ বিষয়ে ভাষার অবতার বোধগম্যতা সমস্যা হয়নি অবশ্য। এবং তারপর অপূর্ব ক্রিম ও গাজরের স্যুপ। যদি অভয় দেন তো বলি, ইউরোপীয় কন্টিনেন্টালস্যুপ এখনও চিনে স্যুপকে দশ উইকেটে ইনিংসে হারাবে। তা চিনেরা সারা পৃথিবী যতই তাদের খাবারে ছেয়ে ফেলুন না কেন। তারপর একসময় প্রধান পদটিও এসে গেল। অবশ্য মাছ বাদে তাতে আছে চটকে মাখা আলু সেদ্ধ আর একজামবাটি সালাদ, যার অনেকগুলো পাতা যে খাদ্য আগে জানতাম না। সেদ্ধ মাছটি একাই যদিও কাফি ছিল। ট্রাউট জাতীয় কোনো মাছ, বিঘৎ খানেক সাইজ। ইন নদীতে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় এমনটাই শুনলাম। অস্ট্রিয়ান জার্মান নামটাও শুনেছিলাম, কিন্তু ওইটুকু মাছের অত বড়ো খটোমটো জার্মান নাম মনে রাখার মতো এলেম আমার নেই। ... ...
—না কিছু করতে পারবে না ওরা। বাড়ি গিয়েই আমার ফেসবুকে পোস্ট করব প্রমাণটা। সবাই দেখবে, জানবে। তখন ওরা বাধ্য হবে আমাদের, মানুষদের গণিতের সৃজনশীলতাকে স্বীকৃতি দিতে। উচ্চকোটির গণিত যে শুধু ওরাই একচেটিয়া পারে সেই ভুল ভাঙবে। এবং সাথে সাথে সমস্ত গণিতের দরজা আমাদের জন্যও খুলে দেবে। ন্যায্য অধিকার হিসেবেই দিতে বাধ্য হবে। —এইটা তোমার মহান প্ল্যান? —এইটাই আমার মহান প্ল্যান। ... ...
সময় যত গড়িয়েছে সাইরাকিউজ রণক্ষেত্র ছেড়ে ততই পিছিয়ে চলেছে এথেন্স বাহিনীও। আর কিছুদূর যেতে পারলেই নিশ্চিন্ত হবেন তাঁরা। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল এতক্ষণ, এক্কেবারে পরিকল্পনা আনুযায়ী, নিখুঁত। হঠাৎ, চাঁদের আলোটা যেন কেমন কমে যেতে লাগল। অবাক বিস্ময়ে এথেন্স বাহিনী আকাশে চেয়ে দেখে—চাঁদের অনেকটা অংশই নেই, পুরো গায়েব। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? আজ তো পূর্ণিমা। আকাশে তো পুরো চাঁদই থাকার কথা। সন্ধ্যায় তো পুরো চাঁদই দেখেছিল তাঁরা। তাহলে, ব্যাপারটা কী হল? আর যত সময় যাচ্ছে ততই ক্ষয় পেতে থাকছে চাঁদ। চারিদিকে অমাবস্যার আঁধার নেমে আসছে যেন! সবাই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। সৈন্যদল মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। সেনাপতি নিসিয়াসের নেতৃত্বে বসল জরুরি মন্ত্রণা সভা। এদিকে ক্ষয়তে ক্ষয়তে ক্রমেই অদৃশ্য হলেন চন্দ্রদেব। ... ...
বৃষ্টির তেজ প্রচণ্ড রকমের বেড়ে গেছে এই কয়েক মিনিটে। ঝোড়ো হাওয়ার সাথে শিরশিরে শব্দ, হুড়মুড় করে নেমে এসেছে হারুর ছাদে। বুকটা ক্ষণে ক্ষণেই কেঁপে উঠছে, একটু ভয় ভয়ও লাগছে বটে, কিন্তু ছাদ থেকে হারু কিছুতেই নামবে না আজকে। ওর সব স্বপ্ন, ছেলেবেলায় অঙ্ক খাতার পিছনে সুপারহিরোদের ছবি, ব্যাটম্যানের স্কার্ফ, এক এক করে নষ্ট হয়ে যাবে। বেলগাছের ডালে ঝুলে থাকা বাবার মুখটাও অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই সুযোগ। চোখ বন্ধ করে ঝড়ের মধ্যে শরীরটা ভাসিয়ে দিলেই কেল্লাফতে। একজোড়া ডানা ঠিক খুঁজে নেবে হারুকে। সে ভিজছে, অনবরত ভিজবে অসময়ের বৃষ্টিতে। মায়ের থেকে লুকোনো কান্না, ওষুধের দোকানে ধার, অপমান, চড়া সুদে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। আর তারপর ম্যাজিক! ... ...