সেই সকালে, বাবুদা যে দিন দু’টাকা চেয়ে আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছিলেন, আমার হাতে সে দিন অনেক টাকা৷ কিন্তু আমার নয়, স্কুলে এনসিসি-র অনুষ্ঠানের জন্য সহপাঠীদের চাঁদার টাকা৷ রবিবার সকালে এনসিসি স্যারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা৷ সাত-পাঁচ না ভেবে, একটু যেন দয়াপরবশ হয়ে স্কুলে ঢোকার মুখে, চার ধারে কেউ কিছু বুঝতে না-পারে, এমন ভাবে বাবুদার হাতে পাঁচ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে হাঁটা দিলাম৷ ... ...
কখনো কখনো আমার চিন্তাদের দেখতে পাই আমি। রোজ না। ওদের মেজাজ-মর্জি হলে তবেই। ব্যপারটা কোনো নিয়ম মেনে চলেনা। মেজাজ-মর্জি নিয়ম মেনে চলার ধার কখনোই ধারে নাকি? যখন দেখতে পাই তখন অদ্ভুত এক জগতে ঢুকে পড়তে হয়। আমি দেখি একজন চিন্তা ঠিক ধূপের ধোঁয়ার মত বইছে। অমনি নীলচে-গাঢ় সাদা রং। একটা পাতার আকৃতি নেয় যেন। পাতার কিনারার রেখা ছোটছোট অক্ষর দিয়ে আঁকা। কোন ভাষা তা পড়তে পারিনা আমি। কোনো চিন্তা সাইফার হুইলের মত । সমকেন্দ্রিক অনেকগুলো চাকতি। তামাটে চকচকে ধাতব রং। একেকটা চাকতিতে একেক রকম চিহ্ন আঁকা। কোনোটা সময়ের দিকে ঘোরে, কোনোটা তার উল্টোদিকে। ... ...
ইদিশ ভাষা অসম্ভব চাতুর্যের সঙ্গে এই শব্দটিকে মুক্তি দিয়েছে তার সঙ্কীর্ণতা থেকে। সেখানে মিশপখের ব্যুৎপত্তি ইহুদিয়ানার গণ্ডিকে অতিক্রম করে যায়- তাই মিশপখে আমাদের হিসেবে গুষ্ঠি! ইংরেজিতে ক্ল্যান। লক্ষ্যের ঐক্য থাকলে তার ভেতরে বন্ধু বর্গ পাড়া পড়শি যে কেউ ঢুকে পড়তে পারেন। বৃহত্তর পরিবার! যেমন ধরুন এই দুনিয়ার সব মোহন বাগান সমর্থক আমার আপন গুষ্ঠি, তারা সবাই আমার মিশপখে। গোরা ঘোষকে খুঁজে পেয়েছি নুরেমবেরগে, শিকাগোতে সিরাজুল ইসলামকে। আমরা সবাই এক ডালের পাখি, এক গোয়ালের গরু। একই দলের লোক। হাত ঘড়ির সময়টা আলাদা হলেও মনে পড়ে যায় খেলা শেষ হবার বিশ মিনিট আগে আমাদের সবুজ -মেরুন পতাকা নেমে যাবে (আমাদের কালে যেতো)। সেখানে সকলে এক মন এক প্রাণ। ... ...
জলধর বলে একদিন, সবই তো হচ্ছে জয়িদি, কিন্তু টীচারের কী হবে ! স্কুলে এখন এতোগুলো বাচ্চার জন্যে রান্না করতে হয় রোজ, তাছাড়া গেস্ট হাউজের ঘরগুলোও তো প্রায়ই ভর্তি থাকে আজকাল। বান্দোয়ান থেকে নিমাই নামের একজনকে নিয়ে এসেছে জলধর, সে রঘুনাথকে সাহায্য করে। তাছাড়াও লকি-শুকি। এমনকী প্রতুলবাবুও এগিয়ে আসেন সাহায্য করতে, কাজেই অসুবিধে হয় না। পুকুরপাড়ে লাউ কেন, এখন কুমড়ো আর বেগুনও হচ্ছে, গাছপালা যা লাগানো হয়েছিলো সবই বাড়ছে তরতর কোরে ! গেটের উল্টো দিকে লকিশুকিদের জমিতে তৈরি গোয়ালে এখন আরও কয়েকটা গোরু, এমনকী মোষও দুটো! সবই হচ্ছে জয়িদি, স্কুলের টীচারের কী হবে? ... ...
তার দৌড় ছিল খিদিরপুরের জাহাজঘাটা অবধি। একটা বড় বাক্স ভরে গেলেই একদিন নৌকায় করে হুগলি নদী পেরিয়ে পৌঁছে যাও কলিঙ্গা বাজার। খিদিরপুর। কলিন লেন, টার লেনে জাহাজে মাল চড়ানোর জন্য বসে আছে চিকনদারি কাজের ব্যবসাদার। মাল পাঠাবে নিউ অরলিন, চার্লেস্তান, সাভানা আর কীসব খটমটো নামের সব জায়গায়। আলেফ সেসব হদিশ জানত না তখন। কে বিক্রি করে কাকে তাও না। আলেফের চাচা মোকসাদ আলি আগে এই কাজ করত, তারপরে চলে গেল ওই দেশে। তার কাছেই শুনেছে সে নাকি বসেছে এখন নিউ ইয়র্কের ডকে। মাল পৌঁছালে চলে যায় তার কাছে কি তার মত আরও সব লোকজন যে যেখানে আছে। চাচা যে এরপর তাকেও সঙ্গে নিতে চাইবে তখনো খবর ছিল না আলেফের। ... ...
ঋষভের মনে হয়েছিল ঐদিন ও হেরে গিয়েছিল, আর রেশমী জিতেছিল। কারণ ঋষভের একটা গর্ব ছিল, যে দক্ষতা নিয়ে ও দুটো আলাদা আলাদা জগৎকে সামলায়- সেটা নিয়ে। ও যেভাবে কাছের মানুষের ছোট ছোট জিনিসগুলোর যত্ন নেয়, তা আর কেউ পারবে না- সেটা নিয়ে। গর্ব ছিল যেভাবে ঠান্ডা মাথায় বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলায় সেই নিয়ে। গর্বের জায়গাটা ভেঙে যাওয়া একটা চুড়ান্ত গ্লানি আর হতাশার বিষয়। রেশমী ঐ গর্বের জায়গাটাই ভেঙে দিল। ঋষভ একবার ভেবেছিল বলবে "ভালো তো অন্য কাউকে বাসিনি, সমস্ত লোভ লিপ্সা বাড়ির বাইরেই রেখে এসেছি", কিন্তু সেটা আর বলা হয়নি! ... ...
সেবারে কুয়ালালামপুরের বুকিং বিনতাং এলাকার বিখ্যাত শপিং মলে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ঘুরতে ঘুরতে বেশ ক্লান্ত – ভাবছি কোন একটা স্টলে বসে একটু কফি/জুস/শেক কিছু একটা খেয়ে নিলে বেশ হয়। তাই আশে পাশে চোখ রাখছি – হঠাৎ করে চোখে পড়ে গেল একটা দোকানের খাবারের অ্যাডে আমের ছবি দেওয়া! মানে রসে ভরে উঠেছে, একটা পাত্রে টুপটাপ করছে কাঁচা হলুদ বা কমলা যাই বলেন তেমন রঙের আম! ব্যাস আর কী ভাবতে হয়! টুক করে ঢুকে পড়লাম সেইখানে – চারদিক খোলা বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট, শপিং মলের ভিতরে। ... ...
সোনা রোদ্দুরে আবিল দুপুর পশমিনা শালে ঝোল কলঙ্ক, কিন্তু কেমন স্মৃতিভারাতুর, ভাঁড়ের ছ্যাঁদায় কাছা কোঁচা ময়। বে'বাড়ির ভোজে আঁচাবো কোথায়, অম্বল সুধা, ধূমপানে মন? যত্নে প্রত্ন খুঁড়ে দেখাবেন সঙ্গে আছেন ডিডি মহাশয়। ... ...
টোটো উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতি মঙ্গলবার টোটোপাড়ায় হাট বসে। দোকানিরা পসরা সাজিয়ে সার সার দিয়ে বসে পড়েন টোটোপাড়ার গৌরবহীন হাটে। অনতিদূরের ভুটান থেকেও ক্রেতারা হাটে আসেন। রোজগারের হাতছানিতে টোটোরাও নিত্যদিন ছুটে যান ভুটানে। কেউ যান এলাচ ছাড়ানোর কাজে, কেউ বা সুপারি ছাড়ানোর কাজে, কেউ কেউ আবার অন্যান্য দিনমজুরের কাজের খোঁজে। ভুটান থেকে দিনে মাথাপিছু ৩০০ টাকার মতো আয় হয়। এই পরিপূরক নির্ভরশীলতার মাধ্যমেই নিবিড় সখ্য গড়ে উঠেছে টোটো আদিবাসী জনজাতি এবং সংলগ্ন ভুটানি মানুষজনের মধ্যে। ... ...
এফিক্যাসি ৭০% মানে কিন্তু এটা নয় যে প্রতি ১০০ জন মানুষকে ধরে ধরে গুনলে আপনি দেখবেন ৭০ জন সংক্রমিত হয় নি আর ৩০ জন সংক্রমিত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে টীকা নিলে আপনার সংক্রমণ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা ৭০%। গুলিয়ে গেলো? বেশ। হাতে একটা কয়েন নিন। টস করলে হেড পড়ার স্বম্ভাবনা ৫০%। বেশ। পড়লো টেল। তাহলে কি পরের বার টস করলে হেড পড়তেই হবে? হাতে নাতে চেষ্টা করে দেখুন – এরকম কোন নিশ্চয়তা নেই। পরের বারেও হেড পড়ার স্বম্ভাবনা সেই ৫০%। আর একটা উদাহরণ। কোনো এক জটিল অপারেশন এর সাফল্যের হার ৯০% - যাকে এভাবেও বলা যায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন রুগী মারা যাবেন। বেশ, এবার যদি কোনো হাসপাতালে প্রথম ৯ জন রুগী ভালো হয়ে যান তাহলে কি দশম রুগীটির মৃত্যু ছাড়া গতি নেই? কাজেই ছোট পরিসরে কিন্তু এভাবে গুনে আপনি হিসেব মেলাতে পারবেন না। ওটা অঙ্ক নয়। এটা একারনেই লেখা, কারন অনেকেই হাতের আঙ্গুলে গুনে বলছেন ধুত ধুত – সব ঝুট হ্যায়। ... ...
সবার্না গ্রুপের তিনটি ভ্যাকসিন নিয়ে ফেজ থ্রি ট্রায়ালের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে কাজটা করা খুব সহজ ছিল না। আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধের জন্য ভ্যাকসিন তৈরির মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টই তারা কিনতে পারে নি। বড়দার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে কে তাকে যন্ত্র বেচবে? কিউবা করোনাপীড়িত আমেরিকার দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বছর বছর আমেরিকার ছেলেমেয়েদের স্কলারশিপ দিয়ে ইলাম মেডিক্যাল স্কুল থেকে শিখিয়ে পড়িয়ে আমেরিকা পাঠাচ্ছে। আর তার প্রতিদানস্বরূপ ট্রাম্প প্রশাসন অর্থনৈতিক অবরোধের ফাঁস আরো শক্ত করেছে। বারাক ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেই সময় সম্পর্ক ভালো করার একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, ট্রাম্পের সময় তার অবনতি হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এখনো পর্যন্ত কোনো সদর্থক পদক্ষেপ নেন নি। ... ...
বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে আর কর্পোরেটের স্ট্রেসগরিমা ইত্যাদি ভাষ্যের অন্তরালে প্রকৃত ভারতবর্ষের মানব সম্পদের পরিচর্যায় সরকারি ব্যবস্থার অবদানকে ভুলতে থাকার কারণ বিবিধ হতে পারে। সরকারের নিজের দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে ফেলার ইচ্ছা, সর্বগ্রাসী মুনাফাপিপাসা, জনগণের সঙ্গত ক্ষোভ - এইসব অনেক কিছুই তার মধ্যে থাকা সম্ভব। তার পরেও, যেসব জায়গায় পৌঁছে যাওয়া পুঁজির কাছে লাভজনক নয়, সেসব জায়গায় পৌঁছনোর দায় রাষ্ট্রযন্ত্রের। সেই যন্ত্রকে সচল রাখার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিকূল পথে চলতে গেলে শুধু চাকরির দায়ের বাইরেও, মানুষের প্রতি পারস্পরিক মমতা এক আবশ্যিক উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি বা অলাভজনক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে রাখা আমাদের অভিপ্রায়। আজকের পর্বে থাকছে সত্তরের দশকের ত্রিপুরায় সমাজ কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক জয়া বর্মনের অভিজ্ঞ্তা। আপনিও আপনার অভিজ্ঞ্তা নিয়ে লিখুন খেরোর খাতা অথবা হরিদাস পাল বিভাগে, কিংবা সম্পাদকীয় বিবেচনার জন্যে ইমেল করুন [email protected] ঠিকানায়। ... ...
চরের মানুষের জীবন সংগ্রামের এই গল্প জাদু-বাস্তবের ঘরানা অনুসারী না বাস্তবতা-নির্ভর তা তর্কযোগ্য। কিন্তু এই উপাখ্যানে অবিসংবাদিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীসত্তার প্রাধান্য, জল জঙ্গম ও মানবমনের রক্ষাকর্ত্রী নারীশক্তির উন্মেষ ও প্রতিষ্ঠা। অমর মিত্রের ধনপতির চর, পড়লেন প্রতিভা সরকার। ... ...
"বিদ্যাসাগর একাকী বিচ্ছিন্ন নিঃসঙ্গ ট্র্যাজিক নায়ক। আমার পছন্দের মহাপুরুষ। যাঁর কথায় কাজে ফাঁক নেই, ফাঁকি নেই। কিন্তু উপরের বইটি আমার সযত্নে লালিত এতদিনের বিশ্বাসের গোড়া ধরে টান দিয়েছে। বিভিন্ন তথ্য ও বিশ্লেষণ দিয়ে দেখাতে চাইছে যে উপরের অনেকগুলো আখ্যান ভক্তজনের তৈরি মিথ, অতিকথন বা প্রেক্ষিত থেকে আলাদা করে টেনে মানে করা, চটজলদি সিদ্ধান্ত নেয়া।" - দেবোত্তম চক্রবর্তীর গ্রন্থ “বিদ্যাসাগর: নির্মাণ-বিনির্মাণ-পুনর্নির্মাণের আখ্যান” বইটির পাঠপ্রতিক্রিয়া, লিখছেন রঞ্জন রায়।। ... ...
খোলা উনুনে এবার ঠাকুমা দুধের হাঁড়ি বসিয়েছে। তাতে মিশিয়ে দিয়েছে ঝোলাগুড়। দুধ ফুটছে। সেদ্ধ আতপ চালের মণ্ড ঠাকুমা খুব ভালভাবে মেখে নিলো আর তা থেকে বানালো ছোট ছোট লেচি। লেচিগুলোর মধ্যে গুঁজে দিলো অনেকটা করে পাটালি গুড়। হাতের তালুতে ঘুরিয়ে নাড়ুর মতো গোল হলেই লেচিগুলো দুধের হাঁড়িতে পড়তে শুরু করলো। ডালিম গাছের মাথায় দিনের শেষ রোদের আয়েশি আড্ডা জমেছে। তুলসীতলায় জ্বলে উঠেছে প্রদীপ। ঘটে সিঁদুর গোলায় আঁকা হয়েছে পুতুল। ... ...
উৎপল জানতো পলিথিনের ব্যাগে লাউয়ের বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হয়, নিজের হাতে আগে করেনি কখনো। গোয়াল থেকে পচা গোবর নিয়ে এলো শুকি, মাটি আর বালির সাথে সেটা মিশিয়ে তৈরি হলো জমি, বীজ বপন করা হলো তাতে। জলধর বললো ব্যাগের নীচে ফুটো করে দাও দু-তিনটে, ওখান থেকে জল ঝরে যাবে। বীজ থেকে চারা, তারপর সুস্থ সবল চারাগুলোকে মাটিতে পুঁতলো ওরা। পুকুর-পাড়ের মাটি তো শুকিয়েই গিয়েছিলো এতদিনে, সেই মাটিকে একটু ঝুরঝুরে করে নেওয়া হলো, দেখতে দেখতে চারাগুলো বেড়ে উঠলো বেশ খানিকটা। এবার শুকির কাজ, চারাগুলোর গায়ে গায়ে কঞ্চি বেঁধে দেওয়া। চারা আর একটু বড়ো হলে কঞ্চির ওপর মাচা, মাস দুয়েকের মধ্যেই ফল ! ... ...
“কোথায় যান কাজ করতে? উত্তরে বললেন, লেবারি করতে যাই। সেকি এখানে নাকি! সে তো বিদেশ! রাজ্যের বর্ডার পেরিয়ে পেরিয়ে ওরা যখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লী মুম্বাই কেরালা ত্রিপুরা লেবার হয়ে চলে যায় সেই দুরের রাজ্যটা ওদের কথায় ‘বিদেশ’। “ - পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলা থেকে দেশ বিদেশে লেবার হয়ে যাওয়া আসা আটকে পড়া বাঁচা মরার কথা নিয়েই শুরু হচ্ছে ধারাবাহিক ‘লেবারের বিদেশ যাত্রা’। ... ...
লোহিতসাগর বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। ফিনিসিয় নাবিক, টায়ারের রাজা সকলের সাহায্যে রাজা সলোমনের বাণিজ্যের কী দাপট! শেবার তো সবই আছে পণ্য আছে, নৌকা আছে, পণ্যের বাজার আছে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে খোদ সলোমন। শেবার বণিকেরা দূর দূর দেশে আগের মত সহজে চলে যেতে পারছে না। না জলে, না স্থলে। তাদের মশলা তাদের রজন সুগন্ধি, নিজেদের দেশে নয়, দূর দূর দেশে এসব পণ্যের প্রবল চাহিদা! নিজেদের দেশে কে কিনবে এসব? তাদের স্বচ্ছন্দ বাণিজ্যে এক অদৃশ্য প্রাচীর তুলে দিয়েছেন সলোমন! দেশের সম্পদ সমৃদ্ধি বাড়বে কী করে যদি বাণিজ্য ঠিকমত না হয়? ... ...
ট্রেনের কামরা তখনও অন্ধকার৷ দর দর করে ঘামছেন কয়েকশো মানুষ৷ কিন্তু পিন ড্রপ সায়লেন্স৷ খিস্তি-খেউড়, ঠেলাঠেলি সব থেমে গিয়েছে৷ কামরা ভর্তি জনতা মন দিয়ে রেডিও-র স্থানীয় সংবাদ শুনছেন৷ সংবাদ পাঠক এ বার খবর পড়া থামিয়ে বলছেন, ‘এই কমপার্টমেন্টে, আপনাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী ক’জন? বড়জোর পাঁচ-দশ জন৷ বাকিরা! বাকিদের কী হবে? তাদের কী দোষ? তারাও কি সব সত্ মায়ের সন্তান?’ আরও বললেন, ‘তবে খেয়াল রাখবেন, সরকারি কর্মচারীর মাইনে বাড়লে দু’পয়সা আপনার পকেটেও আসবে৷ ওরা কিনলে তবে তো আপনি বেচবেন? এখন তো এ-কূল ও-কূল দু’কূল যাওয়ার জোগাড়৷ উনি (জ্যোতি বসু) বলে দিয়েছেন, দিতে পারব না৷ কেন্দ্র না দিলে দিতে পারব না৷ ... ...
জেট ল্যাগ হলে, বা জ্বরজারি হলে, মাঝরাতে অনেক সময় এরকম বাজে ভাবে ঘুম ভাঙে। এরকম বাজে একটা স্বপ্ন আসে, ঘাম দেয়। ঘুম ভাঙারপর মানুষ টের পায় না সে কোথায় আছে। ঋষভ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না যেখানে ওর ঘুম ভাঙল জায়গাটা কোথায়? ওর কলকাতার বাড়ি, না আমেরিকার বাড়ি, না কি হাম্পির হোটেল। হোটেলের খাট থেকে তো বাঁ দিক দিয়ে নামার কথা, এখানে তো মনে হচ্ছে উল্টোটা। স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবার পরেও যেন হাত-পা বাঁধা! ঋষভ শুনেছিল স্লিপ প্যারালাইসিস বলে একটা কিছু হয়- মানুষ ভাবে সে জেগে আছে- কিন্তু হাত-পা ঘুমন্ত মানুষের মত অচল! ... ...