শিক্ষার প্রথম সারিতে থাকা মানুষজন ক্রিয়েটিভ হবেন এটা স্বাভাবিক। আমার আপত্তি নেই। আমার আপত্তি অন্য জায়গায়। আমার এক পরিচিত মাস্টারমশাই সোশ্যাল গ্রুপে জ্বালাময়ী কবিতা আবৃত্তি করে ফাটিয়ে দিচ্ছেন। সাধু সাধু। গল্পটা হচ্ছে ব্লক লেবেল বা পাড়া লেবেল এও ওনার স্কুলের কোন ছাত্র বা ছাত্রীকে দেখেনি কোন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায়। ওনার স্কুলের কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম ওরা জানেই না অমুক মাস্টারমশাই এত ক্রিয়েটিভ বলে। তা মশাই এই সোশ্যাল গ্রুপ ক্রিয়েটিভিটি সমাজের কি লাভ দিলো। মানে ধরুন আপনি হাসপাতালের ডাক্তার, কিন্তু আপনার হাসপাতালের লোকজন জানেনই না আপনি চিকিৎসা করেন। তা এতে কি সম্মান বাড়ে? কী জানি? ... ...
ভার্চুয়াল ক্লাসরুম বা আপিসঘরে দৃশ্যমানতা কিঞ্চিৎ উচ্চস্তরের, মানে পর্দার ক্যামেরার নজর ব্যক্তির উর্ধাঙ্গটুকুতেই সীমাবদ্ধ। ‘বিলো দ্য বেল্ট’ ইনফরমাল হলে সমস্যা নেই। বাঁকুড়ার গামছার সঙ্গে শার্ট-টাই-ব্লেজার পরে উচ্চপর্যায়ের মিটিং চলছে দেখলে অতএব ভিরমি খাওয়া নিষ্প্রয়োজন। মিটিং-ধারী দাঁত খিচিয়ে বলবেন, "তাতে কোন মহাভারতটা অশুদ্ধ হচ্ছে ,শুনি! আমি তো আর এই পোশাকে সমুদ্রসৈকতে সেলফি তুলতে যাচ্ছিনা।" ক্যামেরা চালু করা যে ক্লাসে জরুরি নয়, তার ড্রেস কোডে আবার রংচটা, ফুটোফাটা ভেন্টিলেটেড গেঞ্জিও নাকি চলতে পারে। তা বলে পরীক্ষার দিনেও? দইয়ের ফোঁটা অবসোলিট হয় হোক, পাটভাঙা জামাটুকু তো অন্তত পরবে! ... ...
p>অনলাইন ক্লাস ইস্কুলের বিকল্প হতে পারবে না কোনওভাবেই - তা প্রথম থেকে জানা ছিল। কিন্তু অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থাকল গত পনেরো ষোলো মাসে - ততটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবারও বোধহয় কথা ছিল না। বিশেষ করে যত ঘরে স্মার্ট ফোন আছে, ইন্টারনেট ডেটা প্যাক যতটা সস্তা হয়েছে আগের চেয়ে তার হিসাব নিকাশ করলে মনেই হয় যে অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থেকেছে, তার চেয়ে প্রসারিত হতে পারত। কেন অনলাইন ক্লাস আরো খানিকটা প্রসারিত হতে পারল না সেই আলোচনা একটা স্বতন্ত্র বিষয়। সেখানে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক, কানেকশান ও গতির সহজলভ্যতা এসবের প্রশ্ন আছে, ছোটদের মনঃসংযোগের প্রশ্ন আছে, শিক্ষাদপ্তরের পরিকল্পনার খামতি নিয়েও প্রশ্ন যে একেবারেই নেই তাও নয়। কেন এতদিনেও বিভিন্ন শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক ক্লাস মেটেরিয়াল এক জায়গায় রাখার একটা ওয়েব সাইট ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করে ফেলা গেল না, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সময় সুযোগ মত ঢুকতে পারত আর দেখে নিতে পারত তাদের পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ভিডিও, ছবি, চার্ট, ম্যাপ, গ্রাফ, লেখা ইত্যাদি তা বোঝা দুষ্কর। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন রাখার আর উত্তর পাওয়ার জায়গাও সেখানে রাখা যেতে পারত, ওয়েব পোর্টালটিকে ইন্টার্যাকটিভ করে তোলার অনেক সুযোগ তো প্রযুক্তি করেই দিয়েছে। তবুও সেই সুযোগকে ব্যবহার করে নেবার দিকে শিক্ষা দপ্তর এগোলেন না। এই অতিমারীকে মোকাবিলা করে এই সময়ে শিক্ষাকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা যে এক একটি বিদ্যালয় ও তার শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের বিষয় নয়, সেই উদ্যোগ যতই আন্তরিক হোক না কেন শেষ পর্যন্ত একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো এই বিপুল সমস্যার মোকাবিলায় জরুরি - তা শিক্ষা দপ্তর বুঝে উঠতে পারেন নি বলেই মনে হয়। এই সমস্ত নানা ধরনের বিষয় ছাড়াও অন ক্লাইস ক্লাস সংক্রান্ত সমস্যাটা অনেকটাই অর্থনৈতিক। ... ...
নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের দারিদ্র জিনিসটা যেন প্রায় হাইলাইটার দিয়ে চিহ্নিত করা। তার পোশাকআশাক দেখে তৎক্ষণাৎ আপনি বুঝে যাবেন যে মানুষটা গরিব। সেজন্য আপনি মানুষ হিসেবে মোটামুটি ভালো হলে তাঁর প্রতি কিছুটা অতিরিক্ত সহানুভূতিশীলও হবেন। অর্থনৈতিক সংকটের সময় আপনি নিজে এবং বৃহত্তর অর্থে সরকার স্বয়ং চেষ্টা করবে তাঁর পাশে থাকার। ঠিক এই কারণেই প্রকট দারিদ্র অনেকের ক্ষেত্রে একটা ক্যামোফ্লাজও বটে। তিনি হয়তো ততটাও গরিব নন যতটা তিনি দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো। সে আসলে যতটা গরিব তার তুলনায় নিজেকে তিনি সম্পন্ন দেখাতে চান। দারিদ্র তাঁর কাছে লজ্জার। দরিদ্রনারায়ণ সেবার খিচুড়ির লাইনে তিনি দাঁড়াতে পারেন না। সেজন্য সমস্ত রকম সরকারি এবং বেসরকারি রিলিফ এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে হামেশাই তিনি হন বঞ্চিত। ... ...
এবার প্রশ্ন, গাছ তো লাগানো হবে, কিন্তু কোন প্রজাতির গাছ? জানা থাকা ভালো যে, সমস্ত গাছ দূষণকে সমানভাবে রোধ করতে পারে না। গাছেদের এই ক্ষমতা পরীক্ষা করার যে সূচক তাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় বায়ু দূষণ সহনশীলতা সূচক (Air Pollution Tolerance Index বা APTI). এই APTI সংখ্যাটি ধূলিকণা এবং বায়বীয় দূষকের প্রতি গাছের সহনশীলতা বুঝতে সাহায্য করে। এটি পাতায় ক্লোরোফিল, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, অম্ল-ক্ষারক অনুপাত বা pH ফ্যাক্টর এবং জলীয় সামগ্রীর স্তরের উপর নির্ভর করে। এর মান যত বেশি, গাছের দূষণ রোধ করার ক্ষমতাও তত বেশি। গবেষণায় পাওয়া বিভিন্ন গাছের APTI মানের সাধারণ গড় হচ্ছে: পর্ণমোচী ১৪-২৪, চিরহরিৎ ১২-২০, ঝোপঝাড় ১০-১৮ এবং ঘাস ১৬-২৯। এগুলি সাধারণভাবে প্রাপ্ত APTI মানের ভিত্তিতে সংজ্ঞাবদ্ধ করা হয়েছে। এই হিসেব অনুযায়ী আমাদের খুব চেনা কিছু গাছের গুণ দেখে নেওয়া যাক। ... ...
তবে শেষপাতে বলতেই হয়, কলকাতার পথঘাটের আনাচে কানাচে যতটা স্বচ্ছন্দে বিহার করেছেন হার্ট, লোক বা সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর ধারণা ততটাই অস্বচ্ছ, অস্পষ্ট এবং নেড়াতথ্যের ভারে জর্জরিত। কাহিনি উঠে আসে না সেই থেকে; বড়জোর কিছু কিছু টুকরো ছবি দেখতে পাওয়া যায় বড়জোর। যেমন জানা যায়, ইংরেজদের আসারও আগে পর্তুগিজদের শুরু করা ক্রীতদাস প্রথা কিভাবে কোম্পানির শাসনকালেও বহাল তবিয়তে ছিল, ১৭৮৯ সন অব্দি। দাসপ্রথার সঙ্গে জড়িত বর্বরতার প্রতীক বা অমানবিকতার ইতিহাস, কোনোকিছুই মান্য হয় নি সেকালে। দিব্যি চলেছে দৈনিকে দাস কেনাবেচার, বা পালিয়ে গেলে সেই কারণে দেওয়া বিজ্ঞাপন। কেউ দাস কিনলে কাছারিতে রেজিস্ট্রেশন করাতে হতো সেই দাসের। তারপর নিংড়ানো শুরু। ... ...
"বিদ্যাসাগর একাকী বিচ্ছিন্ন নিঃসঙ্গ ট্র্যাজিক নায়ক। আমার পছন্দের মহাপুরুষ। যাঁর কথায় কাজে ফাঁক নেই, ফাঁকি নেই। কিন্তু উপরের বইটি আমার সযত্নে লালিত এতদিনের বিশ্বাসের গোড়া ধরে টান দিয়েছে। বিভিন্ন তথ্য ও বিশ্লেষণ দিয়ে দেখাতে চাইছে যে উপরের অনেকগুলো আখ্যান ভক্তজনের তৈরি মিথ, অতিকথন বা প্রেক্ষিত থেকে আলাদা করে টেনে মানে করা, চটজলদি সিদ্ধান্ত নেয়া।" - দেবোত্তম চক্রবর্তীর গ্রন্থ “বিদ্যাসাগর: নির্মাণ-বিনির্মাণ-পুনর্নির্মাণের আখ্যান” বইটির পাঠপ্রতিক্রিয়া, লিখছেন রঞ্জন রায়।। ... ...
বিষয় নির্বাচন, ঘটনাবহুল দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ সেই বিষয়কে পর্বে পর্বে বিন্যস্ত করা, চরিত্রনির্মাণ, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সংঘাতের চিত্রণ, বিশেষত নারীচরিত্রের রহস্য, সৌন্দর্য, সংকীর্ণতা এবং মহত্বের অসাধারণ উন্মোচন, নদী-জল ভিত্তিক জীবনের ছবিকে তার নিজস্বতায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং সর্বোপরি জীবনকে জয় করা এবং তাকে প্রতিষ্ঠার জন্য জোটবদ্ধ লড়াইয়ের অনিবার্যতা - এ সবই অসামান্য স্বাভাবিকতায় প্রতিষ্ঠিত এই উপন্যাসে। লেখকের মুন্সিয়ানার মূলে আছে এই নিপীড়িত, নিঃস্ব মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখে পরম মমতা এবং ভালবাসায় তাদের আত্মীয় করে নেওয়া। নইলে এই উপন্যাস রচনা করা সম্ভব হত না। বিশেষত ওপার বাংলার মানুষের কথ্য ভাষার এমন নিপুণ ব্যবহার গভীর বন্ধুত্ব ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়ার উপলব্ধ সত্য যে কত খাঁটি তা অসিত কর্মকারের এই গভীর এবং নিবিড় কর্মে ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত। একেবারেই ত্রুটি নেই,এ কথা আমি বলব না। রাজনীতি, দল এই প্রসঙ্গগুলো এসেছে তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে নয়। সে যাই হোক, অসিত কর্মকার তাঁর যে সৃষ্টি আমাদের উপহার দিলেন তার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকব। ... ...
সৌমেন বৈরাগীর গলায় উত্তেজনা। অসিত মাইতির কথার মাঝেই বলতে শুরু করে দিয়েছে। আমি ছিলাম দিদি। আমি… আমি… একদম ওই স্পটে গেছিলাম। আমি শুধু একলা না, এই সুন্দরবনের প্রায় একশ দেড়শ লোক তখন ওই বাগানের রাস্তায়। আমাদের আগেই ক’জন বেড় দিয়েছিল ওদের। আমি ছিলাম কয়েকজনের পিছনে। একজনে দেখতে পেয়ে গেছিল জঙ্গলের মধ্যে কি একটা বড় বস্তার মতো টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেনের ড্রাইভার আর মালিকের লোক। দেখেই সেই লোকের সন্দেহ হয়। তাইতো চিৎকার দিয়ে ডাকে। আমরাও সেই ছুট মারি। ওখানে জমা হয়ে আমরাও বেড় দিয়ে দাঁড়াই। বের হতে দেইনি তক্ষুণি ওইখান থেকে। দেখি জানেন বস্তার মধ্যে একটা লাশ! জানেন সেইটা আমাদের এই বালিরই লোক। এই বিরাজনগরেরই। এই পাশের পাড়ারই মানুষ। অভিলাশা মণ্ডল। ওই মালিকের লোক ড্রাইভার অভিলাষার লাশ বস্তায় পুড়ে জঙ্গল দিয়ে গায়েব করে দিচ্ছিল। ... ...
ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলাম ধবধবে সাদা পোশাক ও টুপি পরা অল্পবয়সী এক ছেলে। বাক্স ধরতে এসেছে। আমি আর কথা বললাম না। এই ডিস্ট্রিবিউশন আমার জন্য, আমার গাড়ির জন্য খুব পরিশ্রমের। কয়েকটা স্টক পয়েন্ট ঠিক করা হয়। এরপর ক্লায়েন্টদের ঐ ঠিকানা শেয়ার করা হয় যাতে নিজেরা তুলে নেয়। আমার বাকি সহকর্মীদের ক্লায়েন্টরা অডি, বিএমডাব্লু, মার্সেডিজ চড়ে যায় ডোনেশন নিতে (ঐ আরেক মজার গল্প, পরে বলব)। আর আমার সদ্য এদেশে আসা অভাগা ক্লায়েন্টদের প্রায় কারো গাড়ি নেই। যাদের আছে, খুব মেজাজও আছে সঙ্গে। যাদের গাড়ি নেই, তাদের অনেক অনুনয় বিনয় করতে হয় গাড়ির সার্ভিস পেতে হলে। ... ...
সেই সকালে, বাবুদা যে দিন দু’টাকা চেয়ে আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছিলেন, আমার হাতে সে দিন অনেক টাকা৷ কিন্তু আমার নয়, স্কুলে এনসিসি-র অনুষ্ঠানের জন্য সহপাঠীদের চাঁদার টাকা৷ রবিবার সকালে এনসিসি স্যারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা৷ সাত-পাঁচ না ভেবে, একটু যেন দয়াপরবশ হয়ে স্কুলে ঢোকার মুখে, চার ধারে কেউ কিছু বুঝতে না-পারে, এমন ভাবে বাবুদার হাতে পাঁচ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে হাঁটা দিলাম৷ ... ...
কখনো কখনো আমার চিন্তাদের দেখতে পাই আমি। রোজ না। ওদের মেজাজ-মর্জি হলে তবেই। ব্যপারটা কোনো নিয়ম মেনে চলেনা। মেজাজ-মর্জি নিয়ম মেনে চলার ধার কখনোই ধারে নাকি? যখন দেখতে পাই তখন অদ্ভুত এক জগতে ঢুকে পড়তে হয়। আমি দেখি একজন চিন্তা ঠিক ধূপের ধোঁয়ার মত বইছে। অমনি নীলচে-গাঢ় সাদা রং। একটা পাতার আকৃতি নেয় যেন। পাতার কিনারার রেখা ছোটছোট অক্ষর দিয়ে আঁকা। কোন ভাষা তা পড়তে পারিনা আমি। কোনো চিন্তা সাইফার হুইলের মত । সমকেন্দ্রিক অনেকগুলো চাকতি। তামাটে চকচকে ধাতব রং। একেকটা চাকতিতে একেক রকম চিহ্ন আঁকা। কোনোটা সময়ের দিকে ঘোরে, কোনোটা তার উল্টোদিকে। ... ...
ইদিশ ভাষা অসম্ভব চাতুর্যের সঙ্গে এই শব্দটিকে মুক্তি দিয়েছে তার সঙ্কীর্ণতা থেকে। সেখানে মিশপখের ব্যুৎপত্তি ইহুদিয়ানার গণ্ডিকে অতিক্রম করে যায়- তাই মিশপখে আমাদের হিসেবে গুষ্ঠি! ইংরেজিতে ক্ল্যান। লক্ষ্যের ঐক্য থাকলে তার ভেতরে বন্ধু বর্গ পাড়া পড়শি যে কেউ ঢুকে পড়তে পারেন। বৃহত্তর পরিবার! যেমন ধরুন এই দুনিয়ার সব মোহন বাগান সমর্থক আমার আপন গুষ্ঠি, তারা সবাই আমার মিশপখে। গোরা ঘোষকে খুঁজে পেয়েছি নুরেমবেরগে, শিকাগোতে সিরাজুল ইসলামকে। আমরা সবাই এক ডালের পাখি, এক গোয়ালের গরু। একই দলের লোক। হাত ঘড়ির সময়টা আলাদা হলেও মনে পড়ে যায় খেলা শেষ হবার বিশ মিনিট আগে আমাদের সবুজ -মেরুন পতাকা নেমে যাবে (আমাদের কালে যেতো)। সেখানে সকলে এক মন এক প্রাণ। ... ...
জলধর বলে একদিন, সবই তো হচ্ছে জয়িদি, কিন্তু টীচারের কী হবে ! স্কুলে এখন এতোগুলো বাচ্চার জন্যে রান্না করতে হয় রোজ, তাছাড়া গেস্ট হাউজের ঘরগুলোও তো প্রায়ই ভর্তি থাকে আজকাল। বান্দোয়ান থেকে নিমাই নামের একজনকে নিয়ে এসেছে জলধর, সে রঘুনাথকে সাহায্য করে। তাছাড়াও লকি-শুকি। এমনকী প্রতুলবাবুও এগিয়ে আসেন সাহায্য করতে, কাজেই অসুবিধে হয় না। পুকুরপাড়ে লাউ কেন, এখন কুমড়ো আর বেগুনও হচ্ছে, গাছপালা যা লাগানো হয়েছিলো সবই বাড়ছে তরতর কোরে ! গেটের উল্টো দিকে লকিশুকিদের জমিতে তৈরি গোয়ালে এখন আরও কয়েকটা গোরু, এমনকী মোষও দুটো! সবই হচ্ছে জয়িদি, স্কুলের টীচারের কী হবে? ... ...
তার দৌড় ছিল খিদিরপুরের জাহাজঘাটা অবধি। একটা বড় বাক্স ভরে গেলেই একদিন নৌকায় করে হুগলি নদী পেরিয়ে পৌঁছে যাও কলিঙ্গা বাজার। খিদিরপুর। কলিন লেন, টার লেনে জাহাজে মাল চড়ানোর জন্য বসে আছে চিকনদারি কাজের ব্যবসাদার। মাল পাঠাবে নিউ অরলিন, চার্লেস্তান, সাভানা আর কীসব খটমটো নামের সব জায়গায়। আলেফ সেসব হদিশ জানত না তখন। কে বিক্রি করে কাকে তাও না। আলেফের চাচা মোকসাদ আলি আগে এই কাজ করত, তারপরে চলে গেল ওই দেশে। তার কাছেই শুনেছে সে নাকি বসেছে এখন নিউ ইয়র্কের ডকে। মাল পৌঁছালে চলে যায় তার কাছে কি তার মত আরও সব লোকজন যে যেখানে আছে। চাচা যে এরপর তাকেও সঙ্গে নিতে চাইবে তখনো খবর ছিল না আলেফের। ... ...
ঋষভের মনে হয়েছিল ঐদিন ও হেরে গিয়েছিল, আর রেশমী জিতেছিল। কারণ ঋষভের একটা গর্ব ছিল, যে দক্ষতা নিয়ে ও দুটো আলাদা আলাদা জগৎকে সামলায়- সেটা নিয়ে। ও যেভাবে কাছের মানুষের ছোট ছোট জিনিসগুলোর যত্ন নেয়, তা আর কেউ পারবে না- সেটা নিয়ে। গর্ব ছিল যেভাবে ঠান্ডা মাথায় বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলায় সেই নিয়ে। গর্বের জায়গাটা ভেঙে যাওয়া একটা চুড়ান্ত গ্লানি আর হতাশার বিষয়। রেশমী ঐ গর্বের জায়গাটাই ভেঙে দিল। ঋষভ একবার ভেবেছিল বলবে "ভালো তো অন্য কাউকে বাসিনি, সমস্ত লোভ লিপ্সা বাড়ির বাইরেই রেখে এসেছি", কিন্তু সেটা আর বলা হয়নি! ... ...
সেবারে কুয়ালালামপুরের বুকিং বিনতাং এলাকার বিখ্যাত শপিং মলে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ঘুরতে ঘুরতে বেশ ক্লান্ত – ভাবছি কোন একটা স্টলে বসে একটু কফি/জুস/শেক কিছু একটা খেয়ে নিলে বেশ হয়। তাই আশে পাশে চোখ রাখছি – হঠাৎ করে চোখে পড়ে গেল একটা দোকানের খাবারের অ্যাডে আমের ছবি দেওয়া! মানে রসে ভরে উঠেছে, একটা পাত্রে টুপটাপ করছে কাঁচা হলুদ বা কমলা যাই বলেন তেমন রঙের আম! ব্যাস আর কী ভাবতে হয়! টুক করে ঢুকে পড়লাম সেইখানে – চারদিক খোলা বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট, শপিং মলের ভিতরে। ... ...
সোনা রোদ্দুরে আবিল দুপুর পশমিনা শালে ঝোল কলঙ্ক, কিন্তু কেমন স্মৃতিভারাতুর, ভাঁড়ের ছ্যাঁদায় কাছা কোঁচা ময়। বে'বাড়ির ভোজে আঁচাবো কোথায়, অম্বল সুধা, ধূমপানে মন? যত্নে প্রত্ন খুঁড়ে দেখাবেন সঙ্গে আছেন ডিডি মহাশয়। ... ...
টোটো উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতি মঙ্গলবার টোটোপাড়ায় হাট বসে। দোকানিরা পসরা সাজিয়ে সার সার দিয়ে বসে পড়েন টোটোপাড়ার গৌরবহীন হাটে। অনতিদূরের ভুটান থেকেও ক্রেতারা হাটে আসেন। রোজগারের হাতছানিতে টোটোরাও নিত্যদিন ছুটে যান ভুটানে। কেউ যান এলাচ ছাড়ানোর কাজে, কেউ বা সুপারি ছাড়ানোর কাজে, কেউ কেউ আবার অন্যান্য দিনমজুরের কাজের খোঁজে। ভুটান থেকে দিনে মাথাপিছু ৩০০ টাকার মতো আয় হয়। এই পরিপূরক নির্ভরশীলতার মাধ্যমেই নিবিড় সখ্য গড়ে উঠেছে টোটো আদিবাসী জনজাতি এবং সংলগ্ন ভুটানি মানুষজনের মধ্যে। ... ...
এফিক্যাসি ৭০% মানে কিন্তু এটা নয় যে প্রতি ১০০ জন মানুষকে ধরে ধরে গুনলে আপনি দেখবেন ৭০ জন সংক্রমিত হয় নি আর ৩০ জন সংক্রমিত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে টীকা নিলে আপনার সংক্রমণ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা ৭০%। গুলিয়ে গেলো? বেশ। হাতে একটা কয়েন নিন। টস করলে হেড পড়ার স্বম্ভাবনা ৫০%। বেশ। পড়লো টেল। তাহলে কি পরের বার টস করলে হেড পড়তেই হবে? হাতে নাতে চেষ্টা করে দেখুন – এরকম কোন নিশ্চয়তা নেই। পরের বারেও হেড পড়ার স্বম্ভাবনা সেই ৫০%। আর একটা উদাহরণ। কোনো এক জটিল অপারেশন এর সাফল্যের হার ৯০% - যাকে এভাবেও বলা যায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন রুগী মারা যাবেন। বেশ, এবার যদি কোনো হাসপাতালে প্রথম ৯ জন রুগী ভালো হয়ে যান তাহলে কি দশম রুগীটির মৃত্যু ছাড়া গতি নেই? কাজেই ছোট পরিসরে কিন্তু এভাবে গুনে আপনি হিসেব মেলাতে পারবেন না। ওটা অঙ্ক নয়। এটা একারনেই লেখা, কারন অনেকেই হাতের আঙ্গুলে গুনে বলছেন ধুত ধুত – সব ঝুট হ্যায়। ... ...