আমি এইরকম একজন মহিলাকে দেখেছি যাঁর স্বামী একটা ছোট কারখানায় কাজ করতেন। একটাই ছেলে, কলেজে পড়ছিল। স্বামীর আয়ের যেটুকু হাতে আসতো তাই দিয়েই সাধ্যমত সংসার চালাচ্ছিলেন মহিলাটি। কিন্তু পই পই করে বলেও স্বামীকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পারেননি একবিন্দু, আর পারেননি কিছু সঞ্চয় করাতেও। মধ্যবয়সের যাবতীয় পরিচিত ব্যাধিই ভদ্রলোকের শরীরে ছিল, রক্তের উচ্চচাপ, শর্করা মাত্রাও ছিল বিলক্ষন চড়া। তাই নিয়েই তিনি নিয়মিত ধূমপানে আর মদ্যপানে যতটা অভ্যস্ত ছিলেন ততটাই নারাজ ছিলেন ডাক্তারে-ওষুধে। ভদ্রমহিলা চেষ্টা কম করেননি কিন্তু ‘মেয়েছেলে’র কথায় কান দেওয়াকে কবেই আর পুরুষোচিত কাজ বলে ধরা হয়! ফল যা হবার তাই, একদিন অফিসে কাজ করতে করতেই শিয়রে শমন। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ। দুদিন হাসপাতালে যুদ্ধের পর ভদ্রলোক চলেই গেলেন একেবারে। ... ...
জ্যোতি মারা যাবার পর এক দরদী রাজনৈতিক ব্যাক্তি এরকম বলেছিলেন... ভালই হয়েছে, মেয়েটা মরে বেঁচেছে। নইলে জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকত। যদি সমাজের কোনো একটা মানসিক বিকার নিয়ে আমার সত্যিকারের বিবমিষা থাকে, তাহলে এটা। মেয়েটির বেঁচে থাকার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় এই মনোভাব। শুধু অন্য লোকে এ কথা বিশ্বাস করলে সমস্যা ছিল না; অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েটি নিজেও তাই বিশ্বাস করে। সমষ্টি এবং ব্যষ্টির নিঃশ্বাসে মিশে যাওয়া এই বিষাক্ত বিশ্বাসকে আক্রমণ করা ধর্ষককে হত্যা করার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েটিকে আর তার পরিবারকে “কিচ্ছু হয়নি” বলে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আপাত দৃষ্টিতে একথা বলা অন্যায়। কিচ্ছু হয়নি মানে? এত বড় সর্বনাশের পর এই কথা? এই আরেকজন পুরুষতান্ত্রিক শূকর। সংবেদনশীলতার কণামাত্র নেই। এই সব অভিযোগ শুনেও আমি এই কথাটা বলতে চাই এবং বলে থাকি। যাঁদের বলেছি, তাঁরা প্রায় সকলেই আমাকে মার্জনা করেছেন। ব্যক্তিগত স্তরে যাঁদের সে কথা বলার প্রয়োজন হয়নি, কিন্তু যাঁদের এই কথাটা শোনা এবং বিশ্বাস করা প্রয়োজন, তাঁদের জন্য এখানে বলছি। “কিচ্ছু হয়নি।” অপরাধ নিতে পারেন। মার্জনা না করলেও চলবে। কিন্তু এই যে আপনার চরম অভিজ্ঞতাকে একরকম ট্রিভিয়ালাইজ করলাম, সেই অপরাধে আমাকে রোজ সকাল-বিকাল গালি দেবার ফাঁকে এই কথাটা নিজেকেও শোনান। শেষে যদি একদিন এটা বিশ্বাস করতে পারেন, দেখবেন বাঁচতে ইচ্ছে করছে। পাশের বাড়ির মেয়েটি যদি এসে গোপনে কাঁদে আপনার কাছে, তার কানে কানেও এই কথাটাই বলুন, “কিচ্ছু হয়নি। কোথাকার কে লম্পট কী করল, তার জন্য তোর জীবন যাবে? জীবন বুঝি এতই ফেলনা?” ... ...
নিখিলদার ব্যাগ থেকে সেই বোতলের উপস্থিতি টের পেলাম – সেখান থেকে মদ সরিয়ে আমি কার্তিকদাকে প্রথম চাখতে দিই। সেই সময়ের স্কুল অব থটস ছিল এই যে থ্রি এক্স রাম খেতে হয় হয় কষা মাংসের চাট দিয়ে। যথারীতি মাংস রান্নার ভার পড়ে কার্তিকদার উপরে – সেই বয়সে মদের ভাগ না-এলেও আমার প্রতি কার্তিকদার ভালোবাসার জন্য কষা মাংস আমি চেখে ছিলাম। দুর্গাপূজার ভাসানের সময় বাড়িতে মদের অনুপ্রবেশ নিমো গ্রামের সীমানায় বাঙাল অনুপ্রবেশের মতই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ঘটনা বলে পরে প্রমাণিত হয়েছে। আরো হালকা বয়েস বাড়লে প্রথম সময় এল মদ নিজের জিভে চাখার। আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার ও গাইড ছিল গদাকাকু। এত দিন পর্যন্ত কেবল মদ সাপ্লাইয়ে সাহায্য করেছি – যখন খাওয়া হত তখন আমার বয়সীদের উপস্থিতি এ্যলাও ছিল না। ফলে পরিমাপে গোলমাল করে ফেললাম – প্রথমে নিখিলদার ব্যাগ থেকে হাতানো থ্রি-এক্স রাম ও পরে গদাকাকুর সামনে বসে তার গাইডেন্সে অক্টোবরের শেষের বিকেলে ছাদে জিন পান। সন্ধ্যা বাড়ছে, আমার বাড়ছে কনফিউশন – তখনও বাড়ির ঠাকুরকে প্রণাম করে বিজয়া দশমী করতাম সবাইকে – সেই প্রথম বার স্কিপ হল, বড় কারো কাছে যেতে পারছি না মুখে গন্ধের ভয়ে – মাথা ঘুরছে, পায়ের নিচে বসানো আছে আলি চাচার বানানো তুবড়ির বস্তা, নিজেদের বানানো রঙমশাল, আর অগুনতি বুড়িমার চকোলেট বোম্বের বাক্স। পরের স্মৃতি আবছা – নদুকাকুর ঘরে খাটের ধারে আমি বমি করছি মেঝেতে, আমার বাম পাশে শুয়ে আমার উপর দিয়ে উঠে মেঝেতে বমির চেষ্টা করছে আমার গাইড গদাকাকু। ফুলমা আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে আর বলছে এই গদাটার জন্য – ফলত গদাকাকু কোন জলপট্টি পাচ্ছে না, না পাচ্ছে বমি করার জন্য কোন হেল্প। সে নিশা আমাদের সহজে ছোটে নি – এবং পলকে পলকে তারে মনে উঠেছে। গাঁজা আমাদের ঘোষ বাড়িতে কোন দিন ট্রাই হয় নি। সেই দিন নিশা করে আমার এবং গদা কাকুর ঘৃণা লজ্জা ইত্যাদি ভয় প্রায় হাটে বিকিয়েছিল। ... ...
গাঁজা জিনিসটা সেইসময়ে যেহেতু খুব সস্তার নেশা ছিল, সেটা নিয়ে পার্লামেন্ট আগে খুব মাথা ঘামায় নি। মুঘল আমলেও গাঁজার ওপর কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ বসেনি। তবে ১৭৭০-এ কোম্পানি যখন প্রায় দেউলিয়া হয়ে পার্লামেন্টের দ্বারস্থ হয়, বেল আউট প্যাকেজের পাশাপাশি কোম্পানির থেকে লাভ বাড়ানোর অপশনগুলো পার্লামেন্ট বিচার করে। ১৭৯০ এ ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার গাঁজা-চরস-ভাং-এর ওপর ট্যাক্স বসানো হল। এই ট্যাক্স বসানোর ব্যাপারে পরবর্তীকালে কিছু মজার ঘটনা ঘটেছিল। গাঁজা ভাং-এর ব্যাপক ব্যবহারে কালেক্টররা বুঝে উঠতে পারছিল না কীভাবে ট্যাক্সেশন করলে সবচেয়ে বেশি রেভিনিউ আসে। ফলে কখনো দোকানগুলোকে গুণগত তারতম্যে বিক্রির ওপর ট্যাক্স দিতে হয়, কখনো ট্যাক্সের নিয়ম পালটে দৈনিক ফিক্সড ট্যাক্স করা হয়, কখনো দামের ফারাক না দেখে সব ধরণের গাঁজা ভাং-এর ওপর ওজন অনুযায়ী ট্যাক্স ধরা হয়। ১৭৯০ এর নির্দেশনামায় কালেক্টররা সরাসরি ট্যাক্স নিতেন না, নিজের এলাকায় গাঁজা ভাং চরস বিক্রির থেকে জমিদারদের ট্যাক্স কালেক্ট করতে হত। ১৭৯৩ এ ৩৪ নং রেগুলেশন অনুযায়ী কোম্পানির অধীনস্থ এলাকায় গাঁজা ভাং চরস চাষও ব্যবসা করার জন্য আলাদা করে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হয়। বলাবাহুল্য, লাইসেন্সিং ছিল রেভিনিউ আদায় করার সবচেয়ে সহজ পন্থা। লাইসেন্স পাওয়া এবং রাখার জন্য নিয়মিত ফি দিতেই হত। রেগুলেশনের কারণ হিসেবে সেটা উল্লেখও করা হয় যে লাইসেন্সের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কমবে এবং সরকারের অর্থাগমও সম্ভব হবে। ১৮০০ সালে আরেকটা রেগুলেশন বের হয়, যাতে বলা হয় এগুলোর মধ্যে চরস সবচেয়ে ক্ষতিকারক এবং চরস বানানো বা বিক্রি সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। আর মজার ব্যাপার, ১৮২৪এ আরেক নির্দেশনামায় বলা হয় যে গাঁজা বা অন্যান্য নেশার জিনিসের থেকে মেডিকেলি চরসের কোনো বেশি ক্ষতিকারক প্রভাব নেই, ফলে ব্যান তুলে নেওয়া হল। ১৮৪৯এ বেশি আবগারি শুল্ক আদায়ের জন্য খুচরো গাঁজার ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। এই সময় থেকে পরের কয়েক দশক ট্যাক্স দৈনিক হিসেবে হবে না ওজনের ওপর হবে এই নিয়ে বিভিন্ন আইন আসে। ফলে দ্যাখা যাচ্ছে যে কোম্পানির শাসনের আমলে গাঁজা ভাং-এর ব্যাপারে অর্থাগমের সুযোগ নিয়েই বেশি মাথা ঘামানো হয়েছিল। গাঁজা নিয়ে আফিং-এর মতন ব্যবসার সুযোগ ছিল না। কারণ গাঁজা সস্তা, প্রায় ঘরেই চাষ করে ঘরেই খাওয়া যায়, আর লোকে যেরকম সেরকম ভাবে জোগাড় করে নিতে পারে। সুতরাং চাষ আর পাইকারি ব্যবসাতে ট্যাক্স বসানোই এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় ছিল। একই কারণে খুচরো গাঁজার ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণও করতে চেয়েছিল কোম্পানি। ... ...
ঝিম। এসময় বড়ো মায়াবী লাগে চারপাশ। গোধূলির জাদু আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে গাছেদের পাতায় পাতায়। সামনে শ্যাওলা-ঝাঁঝিতে ভরা ছলাৎছল ঝিলের জল। একপাশে ভিড় করে আছে কুচো কচুরিপানা। ত্রস্ত পায়ে জলপিপি ছুটে যায় জল বেয়ে বেয়ে। রূপসী জলসাপ সোনা ও কাজলে মুড়ে ডুবে থাকে নিঝুম আলস্যে। পানাকৌড়ি যুগল ডুবে যায় ভেসে ওঠে এমনিই। ওপারে এক দারুণ বালক চার খুঁটিতে বাঁধা নৌকায় এক মনে দাঁড় বায়। সে নৌকা কোথাও যায় না। স্থির সেই নৌকাটিতে দাঁড় বেয়ে চলে বালক অবিরাম, অক্লান্ত। সে বুঝি অনুশীলনরত। নৌকা যাবে না কোথাও, কোত্থাও। তেমনই কথা দেওয়া আছে ঘাটের সাথে। অথচ বালকটিকে যেতে হবে দূরে বহুদূরে....। আর আমরা, তাম্বুরিন বাজানো ডিলানের মানুষটির মত, কোথাও যাবার নেই যার, গাইতে থাকি। ... ...
কোটিল্য এরপর নানান মদের লিস্টি দিয়েছেন, যেমন মেদক, প্রসন্ন, আসভ, অরিষ্ট, মৈরেয় আর মধু। মধু মানে কিন্তু হানি নয়, আঙুরের থেকে তৈরি ওয়াইন। উনি রেসিপিও দিয়েছেন। একটা শুনুন। মৈরেয় বানাতে কী কী অ্যাডিটিভ লাগে। মেষশৃংগী গাছের ছাল গুড়ের সাথে মিশিয়ে বাটতে হবে। তার সাথে দিন গোলমরিচ ও ত্রিফলা চুর্ণ। ব্যাস,এটাই সিক্রেট রেসিপি। আমের রস থেকেও মদ হোতো। কতো রকমের মদ ছিলো? আয়ুর্বেদে বলে ষাটটি। কোটিল্য উল্লেখ করেছেন প্রায় দশ-বারোটির কথা। অগ্নিপুরাণেও আছে সাত-আটটির নাম। তন্ত্র ঘাঁটলেও গোটা দশেক জেনেরিক মদের নাম পাওয়া যায়। ... ...
আমার তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে। মাত্র মাসখানেক। একদম কচি আর নিপাট ভালো বউ। আমার শাশুড়ি মা আমাকে শিলিগুড়ি দিয়ে এলেন। যেদিন উনি ফিরে আসবেন, আমরা ওনাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে ফিরছি, তিনি দেখি কী যেন একটা দোকান থেকে কিনে পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন ফেরার পথে। তারপর বাড়ি ফিরে গ্লাস সাজিয়ে বসলেন। আমার সব রোম্যান্স (প্রথম বরের সাথে একা থাকতে এসেছি) মাথায় উঠে গেলো, করুণ মুখ করে বসে আছি, যাহ! আমার কপালেও মাতাল বর, এবার আমায়ও প্রচুর পেটাবে। আর গুডি টাইপ ছিলাম বলে তেমন মার খেতে হয় নি কোনওকালে। এইদিকে চোখ ছলছল, আর ওদিকে আমার নতুন বর আমায় ভালোবেসে গ্লাস হাতে দিয়ে দিল। বললো ছোট্ট একটা সিপ নিতে। সেটা ছিল জিন, আমার মদখড়ির জন্য হালকা ব্যবস্থা। নাকের কাছে আনতেই মোটামুটি বমি ঠেলে এলো। আর তখন বেজায় ভদ্র আমি, অন্যজনকে অপ্রস্তুতে ফেলতে চাইনে, কাজেই ঢকঢক করে তেতো ওষুধ খাওয়ার মত পুরো খেয়ে ফেললাম। আর সাথে সাথেই মাথা ইঁটের মতন হয়ে গেলো। তারপর আর কতটা খেয়েছিলাম আর মনে নেই, কেবল তার হাঁ করা মুখটা বেশ মনে আছে। আর ক্রমশ আমার বডি টেম্পারেচার নামতে শুরু করে, তিনিও বোঝেন কী কাণ্ডটাই করেছেন। তারপর ঐ বডি টেম্পারেচার বাড়ানোর যে পন্থা তার মাথায় এলো, সেও চরম। পুরো শাস্তি হয়ে গেলো। এবং ঐ প্রথম দেখাতে(পড়ুন চাখাতে) আমি অ্যালকোহলের অপ্রেমে পড়ে গেলাম। ক্রমশ সেইরকম পার্টি-টার্টিতে গ্লাস জানলা দিয়ে বা টবে গোপনে ঢেলে দেবার অভ্যেস আয়ত্তও করে নিলাম, যাতে কারোর মনে আঘাত না লাগে। ... ...
-- না। আমি চাইলেও তোমার গলা কাটতে পারি না। --- আমি কম বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে প্রেম করা এইসব নিয়ে বলতে চাইছি । এ নিয়ে কি কোন গড়পড়তা নিয়ম নেই? -- কেন থাকবে না? সময় বদলায়। ষাটসত্তরের দশকে বার এ কোন মেয়ে ঢুকত না। হ্যাঁ, শহর কোলকাতার কথাই বলছি। গড়পড়তা মেয়েরা সন্ধের আগে ঘরে ঢুকে যেত। যারা ঢুকত না তাদের কপালে জুটত ঘরে-বাইরে মুখনাড়া আর পাড়ায় বদনাম। তখন কফিহাউসে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা মারাই অনেক বড় বিপ্লব। আর এখন? সন্ধ্যেয় অলিপাবে গিয়ে উঁকি মেরে দেখ? এ নিয়ে ঘরেবাইরে পাড়ায় কোন কথা হবে না। হলে মেয়েটি মুখের ওপর বলে দেবে- বেশ করেছি। আমার ভোটার কার্ড আছে। -- তাতে কী হয়? -- আচ্ছা আতাক্যালানে তো! যে মেয়েটা কারা দেশ চালাবে সেটা ঠিক করতে পারে সে নিজে আদৌ মদ বা গাঁজা খাবে কি না, খেলে কোনটা খাবে, কতটা খাবে, কোথায় বসে খাবে, কার সঙ্গে খাবে সেটা ঠিক করতে পারে না? এরকম হিপোক্রেসির কোন মানে আছে? ... ...
ওয়ার্কশপে গেছি। সে আমার প্রথম আম্রিগাবাস। ওয়ার্কশপে বারোটা দেশের তেরোটা ছেলেপুলেদের প্রায় সব কটা ঘোর মালখোর। প্রায়টা জুড়লো, আমার জন্য। তখন আমি মদ টদ মোটে ছুঁতুমটুঁতুম না, মানে বিয়ার মুখে দিয়ে বি গ্রেড নিমের পাঁচন মনে হওয়া আর ওয়াইন খেয়ে মাথা ঘুরে যাবার পরে আর কিছু ছোঁবাটোবার ইচ্ছেটিচ্ছে হয়নি। তো, সে তোরা নিজেরা যা ইচ্ছে খাবি খা, কিন্তু না, আমা হেন ঘোর মদনাস্তিককে দীক্ষিত না করে তাদের আত্মার শান্তি, প্রাণের আরাম কিছুই হচ্ছেনা। বিশেষত আমার রুমমেট হার্মাদ কন্যা তো এই কনভার্টিকরণকে পুরো ধর্মপ্রচারের মতন সিরিয়াসলি নিয়ে নিল। কীসব ফলের ফ্লেভারে বিয়ার দিয়ে আমার ক্লাস শুরু হল। তা, তাতে সবে একটু একটু উন্নতি দেখাচ্ছি বলে টিচার যখন রায় দিচ্ছেন, তখনি সব ভেস্তে দিলেন এক প্রফ। ... ...
প্রায় দুই দশক আগেকার এক সোনারোদ পুজোআসছে শরতের সকাল। তখন আকাশের নীলিমা গভীরতর ছিল, শিউলি তাড়াতাড়ি ও বেশী ফুটত, আসন্ন পুজোর গন্ধে বড় আনন্দ ছিল, পুজোর ধুমধাম অনেক দীর্ঘস্থায়ী ছিল, দিল্লীর বাঙালী ক্লাবসমূহে প্রচুর মেম্বার ছিল, “নাটকটাটকে” আবালবৃদ্ধবনিতার প্রবল উৎসাহ ছিল, সর্বোপরি সকলের ওজন ও রক্তচিনি দুইই অনেক কম ছিল। যথারীতি প্রচুর গবেষণা, ঝগড়া, তিনটি রেজিগনেশন পেশকরণ ও সামান্য সাধাসাধির পর প্রত্যাহার নেওন ইত্যাদির পর "গান্ধারীর আবেদন" বিপুল ভোটে জয়ী হল। ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন ইত্যাদি কাষ্টিং হয়ে গেছে, ভানুমতীও রেডী, কেবল গান্ধারী তখনো ফাইনাল হয়নি। ... ...
নতুন জমি/ ভূমি সংস্কার আইন এজন্যেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রশাসনের লক্ষ্য সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করা ও কম্পিউটারাইজ করা। এর জন্য যা দরকার জমি মালিকদের সঠিক জমির হিসেব দেওয়ার সহযোগিতা। জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ফলে প্রচুর জমির মালিকানা গোপন ও বেনামী, অন্যদিকে সরকারি অধিগ্রহণ হলে মালিকরা অবশ্যই চাইবেন সঠিক ক্ষতিপূরণ যার জন্য জমির হিসেব ঠিকঠাক থাকা প্রয়োজন। এই ভাবেই জমি সংশোধন ও অধিগ্রহণের মধ্যে এক সহজ সম্পর্ক আছে। দ্বিতীয় অংশ ঠিকঠাক কাজ করতে হলে প্রথম অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন, আর প্রথম ক্ষেত্রে উন্নতি হলে স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অনেক সুবিধে হবে। সঠিক পরিসংখ্যান দিতে মালিকদের উৎসাহ দিতে, কিছু পুরস্কার যেমন, সরকারি সুযোগ সুবিধে দেওয়া যেতেই পারে। সহজে সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ, NREGA, ভর্তুকি, জন বন্টন ব্যবস্থা ইত্যাদির ব্যবস্থাও করা যায়। একই ভাবে গত পঞ্চাশ বছরে জমি সংস্কার বলবৎ করতে আমাদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছুদিনের জন্য উর্ধ্বসীমা আইন কিছুটা শিথিল করা যেতেই পারে যাতে মালিকরা সঠিক তথ্য দিতে আগ্রহী হন। বিশেষত দেখা গেছে যে জমিসংস্কার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি উন্নতির পরিপন্থী হয়েছে, ও এর দায়ভাগ আরো বেশি বর্তায় জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ওপর (Ghatak and Roy, 2007 )। এমনকি জমির রেকর্ড ঠিক করার জন্য ও সঠিক তথ্য জানালে আয়করে ছাড় দেওয়াও যেতে পারে। আদিবাসী এলাকায় কৃষি জমি বিক্রির ওপর অকারণ বিধিনিষেধ আরোপ, আদিবাসীদেরই স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে। এই বিধিনিষেধ তফশিলী জাতি, উপজাতি আদিবাসীদের সঠিক জমি ব্যবহারে সাহায্য তো করেই নি উপরন্তু তাদের জন্য বিকল্প জীবিকা ও গড়ে তোলে নি। আপাতদৃষ্টিতে বৈষম্যের নামে শিল্পায়নে বাধা সৃষ্টি করে আদতে কিছু লাভ হয়নি। জঙ্গল রক্ষা আইন সংরক্ষণের নীতির বিরোধী হয়ে উঠেছে । সম্পত্তি আইনে আওতায় জঙ্গল জমি আনার উদ্দেশ্য অবাধ কৃষি ও বন কাটা নয় বরং, তাদের পুরুষানুক্রমে চলে আসা শিকার ও সংগ্রহণ বৃত্তি থেকে যদি তারা উচ্ছেদ হয় তার প্রকৃত ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাও করা। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, বাস্তবের সাথে আদর্শের মেলবন্ধন না ঘটাতে পারা আমাদের ব্যর্থতা, ঠিক যেরকম বন্টন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমষ্টিগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন ও বন ধ্বংস রোধ করার ভারসাম্য রক্ষা করতেও আমরা সক্ষম হইনি। সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য জমির বন্টন আরো সমান ভাবে হওয়ার সাথে সুষ্ঠু জমি বাজার ও জমির আরো উন্নত ব্যবহার পদ্ধতি গড়ে তোলার মধ্যে যে কোনো সংঘাত নেই সেই সত্যি যত তাড়াতাড়ি বোঝা যায় ততই মঙ্গল। ... ...
২০০০ সালে পৃথিবীতে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৩ লক্ষ ৭২ হাজার মেগাওয়াট। ২০১৩ সালের শেষেও উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় একই জায়্গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে আসল উৎপাদন কমেছে কারণ জাপানের ৫৪ টি পরমাণু চুল্লি বন্ধ রয়েছে। আমেরিকান ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে মিলিয়ে একটি নতুন চুল্লিও চালু হয় নি। বরং চুল্লি বন্ধ করে দেওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। ঐ সময়কালে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে ২০১১ সালে মার্চ মাসে জাপানের ফুকুশিমায় ঘটলো এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রায় একই সময়ে তিনটি চুল্লির জ্বালানি দন্ড পুরোপুরি গলে বহুদূর পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়াল। শুধু তসি নয়, আজও সেখান থেকে তেজস্ক্রিয় জল ভূগর্ভে এবং সমুদ্রে মিশে চলেছে। দুর্ঘটনার পর জার্মানি, বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ড তাদের চুল্লি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ইতালি, অস্ট্রিয়া পরমাণু কর্মসূচী বাতিল করে। ফ্রান্স ২০২৪ সালের মধ্যে অর্ধেক চুল্লি বন্ধ করে দেবে বলে জানায়। ... ...
ডঃ পাত্র এর একটা বিহিত বা হেস্তনেস্ত করার দায়িত্ব নিলেন। অবশ্য এতে ওনার একটা অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্টও ছিল। সময়সুযোগ থাকলে একদিন তিনিও পুরোদস্তুর গবেষণা করতে পারতেন, শুধু ছাত্র ঠেঙিয়েই চাকরির জীবনটি চলে গেল। সে যাই হোক, উনি অনেক আঁকজোঁক করে কিচ্ছু বের করে উঠতে পারলেন না। এই অবস্থায় উনি একদিন কাকভোরে উঠে লেকের মাঠে গাছপালার ঝোপে বান্ধবগড় থেকে কেনা ক্যামোফ্লাজ জ্যাকেট পরে ঘাপটি মেরে কী হয় দেখার জন্য বসে রইলেন। প্রথম দু দিন কিচ্ছু দেখতে পাওয়া গেল না। সুস্থ শরীর ব্যস্ত করে রাতের ঘুম নষ্ট হল। কিন্তু তাতে ডঃ পাত্র দমলেন না। এক সময় তিনি ডক্টরেট করেছিলেন, তাই অকিঞ্চিৎকর জিনিস নিয়ে খামোখা লড়ে যাবার ক্ষমতা তাঁর পুরনো। ... ...
এ তো গেল রাজ্য সরকার। কেন্দ্র সরকার কেন FCI যোগান বন্ধ করতে গোঁ ধরে বসে আছে সে আরেক রহস্য। দ্বিমত নেই শ্রমিকদের রেশন দেওয়ার দায়িত্ব মালিকের। কিন্তু মালিককে তার দায়িত্ব স্মরণ করানোর কাজে কংগ্রেসের রাজ্য সরকার বা ভাজপার কেন্দ্র সরকার, কারোই কষ্মিণকালে আগ্রহ দেখা যায় নি। হরেদরে শস্তা খাদ্য আসছে FCI-এর গুদাম থেকে, অর্থাৎ সরকারি পয়সাতে। যখন সেই যোগান বন্ধ হতে যাচ্ছে মজুরের রেশন মার খাবে, মালিকের কেশাগ্র বঙ্কিম হবে না। হুট করে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আর মালিকের কী করা উচিত উপদেশ বিতরণ করার বদলে, কেন্দ্র সরকার বিভিন্ন পক্ষের (অবশ্যই মালিক ও মজুরপক্ষ) সাথে আলোচনায় বসে সমাধান সূত্র বার করার চেষ্টা করতে পারত। আসলে শ্রমিকের অধিকার কর্তন করাতে কংগ্রেসে ভাজপায় বিশেষ মতভেদ নেই। এই মুহূর্তে ওপরের ঘটনাবলী কংগ্রেসকে ঘ্যানঘ্যান করার সুযোগ দিয়ে দিয়েছেঃ NFSA লাগু করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা কেন্দ্র সরকার এখনো দেয় নি। মানে, জানুয়ারি থেকে ECA বাদ দিন, NFSA-এর রেশনও পাওয়া যাবে না। ... ...
আবার মই? কি বলি বলুন, স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে মই নিয়ে সে সময় ভারী উৎসাহ ছিল - সত্যজিত রায়ের ট্রেন যেমন অপু-দুর্গার কাছে বৃহত্তর পৃথিবীর প্রতীক হয়ে দেখা দিয়েছে সেরকম ভাবেই হয়ত ঊর্ধ্বগামী মই দেখলেই লোকে দো'তলা তিনতলা ছাড়িয়ে সোজা ছায়াপথের কথা ভাবতে শুরু করতেন। যাই হোক, এ মই নিয়ে এসেছিলেন ইংলিশ চিকিৎসক রবার্ট ফ্লাড। ফ্লাড অবশ্য শুধু চিকিৎসক নন - জ্যোতিষী, গণিতবিদ, অতিপ্রাকৃত-বিশারদ, একই অঙ্গে অনেক রূপ। ফ্লাডের তত্ত্ব অনুযায়ী মইয়ে উঠে গুনে গুনে ঠিক ন'টি সিঁড়ি চড়লেই আপনার আত্মা পৌঁছে যাবে সূক্ষ্মতর ব্রহ্মান্ডে, কিছু সময় বিশ্রাম, তারপর ফের পাশে রাখা দ্বিতীয় মই দিয়ে নেমে আসা। আবারো জগৎসংসারের ঠ্যালা সামলানোর পালা, তারপর ফের মইয়ে চড়া। ফ্লাডের যেহেতু অঙ্কে ছিল বিষম উৎসাহ, উনি দাবী করেছিলেন এই ন'টি স্টেপ নেহাত গাঁজাখুরি ব্যাপার নয়। রীতিমতন পাইথাগোরিয়ান গণিতের সাহায্য নিয়ে তৈরি হয়েছে এ মই, প্রতিটি সিঁড়ি কতটা চওড়া, কতটাই বা লম্বা সবেরই ফিরিস্তি দেওয়া যাবে অঙ্কের হিসাবে। ... ...
দশটা বছর ব্যয় করে এই পর্ণকুটির তৈরি করা আধখানা তার বাতাস থাকে, আধখানা তার চাঁদের বাড়ি কোথায় তোমায় বসতে দেব? বরং তুমি বাইরে এসো। সং সুন নামে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের এক কোরিয়ান কবির লেখা । রাজদরবারে কাজ করতেন আগে, পরে সব ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যান, লেখালিখি নিয়েই জীবন কাটান। এই কবিতাটার পিটার লি-কৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে আমি বাংলা করেছি। এখানে যদি একেকটা লাইনকে দেখা যায় আলাদা করে, বোঝা যাবে প্রত্যেকটায় আসলে দুটো বাক্যাংশ আছে, দুটো ছবি। প্রথম লাইনেই যেমন দুটো স্টেটমেন্ট, একটা বলছে দশ বছর পরিশ্রমের কথা, অন্যটা বলছে বাড়ির কথা। দ্বিতীয় লাইনে তো আধাআধি ভাগ হয়ে গেছে লাইনটাও, বাড়িটারই মত... যার অর্ধেকটায় থাকে বাতাস, আর বাকি অর্ধেকটায় চাঁদ। শেষ লাইনেও অমন দু ভাগ, প্রথম অংশটা বলছে বাড়িতে ঢুকতে/বসতে দেবার জায়গা নেই (যেহেতু বাতাস ও চাঁদ আগেই সবটা দখল করে রেখেছে), আর শেষ টুকরোটা জানাচ্ছে, বাড়ির বাইরেই বরং অতিথিকে গ্রহণ করা হবে। ছোট্ট একটা ছিমছাম কবিতা। তিন লাইনের জাফরির ফাঁক দিয়ে আসা একটুকরো গল্পের আভাস। শিজো আসলে এরকমই। ... ...
সুপ্রীম কোর্টের রায় নিঃসন্দেহে হতাশ করেছিল কিন্তু তার থেকেও বেশি আঘাত দিয়েছিল সেই রায়ের ভাষা। সে সম্পর্কে অন্যত্র লিখেছি তাই এখানে আর লিখছি না। তবে দুঃখ, কষ্ট হতাশার সঙ্গে যেটা যোগ হয়েছিল, সেটা একটা রাগ, একটা হতাশাজনিত ক্ষোভ। শুধু আমার মধ্যে নয়, আমার মত চারপাশের অনেক মানুষের মধ্যেই দুঃখর থেকেও বেশী ফুটে উঠেছিল রাগ, দেশের প্রতি প্রবল অভিমান। সেই সময় সেই অভিমানের অভিঘাত থেকে একটা লেখা লিখেছিলাম। প্রকাশের অযোগ্য ভাষার কারণে সেই লেখাকে সেই সময় প্রকাশ করা যায় নি। আজ এক বছরের মাথায় সেই লেখাটাকেই একটু কাঁচি চালিয়ে সভ্য করে দিলাম। মনে হল, সেই যে প্রবল রাগের অনুভূতি সেটাও ডকুমেন্টেড হয়ে থাকা দরকার। ... ...
এখন আমি কোন কিছু কেয়ার করি না। আমার কর্ম ক্ষেত্রে কিংবা অন্য কিছুতে আমার গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত সঠিক কি না, তা বিচার করবার জন্য অন্য কারুর প্রয়োজন আমি অনুভব করি না। IITতে আমার বন্ধুরা যারা সব সময় আমার যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ করত তবুও আমি যাদের বিশ্বাস করতাম, তাদের সবাইকে আমি মেইল করি। তারা আমাকে খুব সাপোর্ট করেছে। এর পর আমি আরও কিছু লোকের সামনে নিজেকে প্রকাশ করলাম, তার পর আরও কিছু লোকের সামনে। আমি খুব মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। কেউ কেউ আমার কথা অবিশ্বাস করেছেন, কেউ বা আমার বক্তব্যকে সম্মান জানিয়েছেন, আমাকে অপমান করেছেন আবার কেউ প্রচণ্ড চমকে গেছেন। হ্যাঁ, IITতে হোমোফোবিক আছে, কিন্তু সব থেকে যেটা প্রয়োজন IITতে অনেক উচ্চমনের ব্যক্তিরা আছেন, তারা আমাকে আশা দিয়েছে। আমি যা ভেবেছিলাম, IIT সেই রকম নয়, কিন্তু সম্পূর্ণ পারফেক্ট বলে কিছু কি পাওয়া যায়? আমি বাস্তব, শেষমেশে ছাত্র সমাজের কণ্ঠ হিসাবে আমার গল্প স্বাধীনতা পেয়েছে। আমি, আমার ক্লাসে কিছু বন্ধুদের পেয়েছি যারা গে-দের ভাল দিক গুলো চিন্তা করে গে হওয়া কতো ভালো তা আমাকে বলে। আমি অনেক প্রোফেসার পেয়েছি যারা আমার কাছে সমকামীদের প্রতি তাঁদের সাপোর্ট প্রকাশ করেছেন। এ সব কিছুর ভিতর দিয়ে আমি দিনের শেষে বিছানায় যাই, জানি আমি এবার নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো। যদিও আমি অনেক অনুশোচনা, লজ্জা, ডিপ্রেশানের ভিতর দিয়ে গেছি। মেডিক্যাল পরীক্ষা দিয়েছি, আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ছি, সামাজিক বাধানিষেধ পেয়েছি। কিন্তু যখন আমার গল্পটা কতটা ‘প্রেরণাদায়ক’ জানিয়ে আমি আবারও মেইল পাই, তখন আমি অনুভব করি একটা সময় আসবে যখন কোন নতুন সমকামী নিজের প্রকৃত পরিচয় দিতে কখনোই বিব্রত বোধ করবে না, সে কাঁদবে না বরং লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে টিভি সিরিয়ালের কোন নতুন হিরোর উপর তার ক্রাশের কথা সে তার রুম মেট’দের কাছে গল্প করবে। ... ...
স্বভূমে পরবাসী আমি সেদিন কাজে যাবার পথে স্মার্টফোনের পাতায় খবর দেখতে গিয়ে সেই ঝাপটা খাই। ৩৭৭ ফিরে আসার খবর। মোবাইলে মেসেজ ভেসে আসে। আর ওলট পালট হতে থাকে আমার ভিতর। বাসভূমি থেকেও কি চিরকাল তবে স্বদেশহারা থেকে যাব আমরা? কখনো এ দেশে, শৈশবের মাঠে, কৈশোরের শুঁড়িপথে হাত ধরে হাঁটা হবে না আমাদের, ঠোঁটে ঠোঁট রাখা হবে না বৃষ্টির বোলপুরে, অকারণে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে? সন্তান, স্বাগতম, শুভেচ্ছা কিছুই পাব না? আমরা একটিভিস্ট নই, রাজনীতিক নই, নিতান্ত সাধারণ মানুষ। মুখচোরা, পড়ুয়া, হাসিখুশি, চোখে চশমা, ঠিক আর পাঁচজনের মত মানুষ। আমরা ভয় পাই। ক্লান্ত, অন্তহীন লড়াইএর ভয়, অহেতুক আক্রমণের ভয়, ঘৃণার ভয়, কৌতুহলের ভয়, জীবিকা হারানোর ভয়। আর অপমানিত হই। যখন সর্বশক্তিমান ধর্মগুরু বলেন আমাদের সারিয়ে দেবেন যে কোনো দিন। যখন কাগজের পাতা থেকে টিভির পর্দায় আমাদের যৌনজীবনের ঠিক কতটা "এগেইনস্ট দ্য নেচার" এই নিয়ে ডিবেট চলে। যখন ধরেই নেওয়া হয়, আমাদের প্রেম প্রেম নয়, দুটি যৌনাঙ্গের বিকৃত সহাবস্থান মাত্র। একে অন্যকে আঁকড়ে এই ভয় বুকে নিয়ে আমরা ঘুমোই, আর সারাদিন আমার চোখ জ্বালা করে। সারাদিন। ... ...
আলীয়া মাদ্রাসা আর খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার পার্থক্য মানুষকে বোঝাতে হবে। কিন্তু খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার সমস্যাগুলি তো তাতে চাপা পড়ে যাবে না। এক বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আমরা আধুনিক যুগে জীবিকানির্বাহের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত করে ছেড়ে দিচ্ছি, যাদের একমাত্র রোজগারের রাস্তা, সাঈদী সাহেবের ভাষা্য়, কারো বাপের জানাজা পড়িয়ে ১০ টাকা আয় করা। ধর্মের শিক্ষা সেকুলার প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ এবং স্কলারলি ভাবে ক্লাসিকাল ভাষা আর দর্শন চর্চার মাধ্যমেই হওয়া উচিত, এই ধরনের ধর্ম শিক্ষা পরধর্মবিদ্বেষী মধ্যযুগীয় মানসিকতার পরগাছা শ্রেণীর মানুষ তৈরি করে, তৈরি করে হুজুরদের ক্যাননফডার। আল্লামা শফি, জুনায়েদ বাবুনগরী এই গরিবের ছেলেদের নাস্তিকদের ফাঁসির দাবীতে পথে নামান, পুলিশের গুলির মুখে ঠেলে দেন। বিনিময়ে নিজেরা রোজগার করেন প্রভূত অর্থ। আওয়ামী-বামপন্থী জোট সরকারের বামপন্থী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই মাদ্রাসাগুলিকে চেয়েছিলেন সরকারের আওতায় আনতে, শফি হুজুররা হুমকি দিয়েছিলেন যে তাহলে দেশে রক্তগঙ্গা বইবে। মাদ্রাসা ছাত্রদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগে জল ঢেলে দেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এদের দিয়ে মাদ্রাসায় গ্রেনেড তৈরি করাতে গিয়ে দুটি ছেলেকে বিস্ফোরণে মেরে ফেলেন হেফাজতের নায়েবে আমীর মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী। তবু চেষ্টা করেছিলেন নাহিদ। বাংলাদেশ পারে, আমরা পারিনা কেন? আপনি গেয়েছেন “শোন তালিবান তালিবান/আমি তোমাদের সাথে নেই/ আমি ধর্মে মুসলমান/ আছি লালনের সঙ্গেই”। লালনের হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরের মূর্তি কিন্তু কওমী মাদ্রাসা ছাত্ররা গিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল সুমন। আর তালিবানরা সকলেই মাদ্রাসা ছাত্র, তালেবা শব্দের মানেই ছাত্র, তাই থেকেই তালিবান। তাদের চেয়ে বেশি আরবী আপনি নিশ্চয় জানেন না। বরং এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয়না কেন যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন গ্রামের গরিব সংখ্যালঘু মানুষকে অবৈতনিক সরকারি শিক্ষা আর মিড ডে মিলের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি, কেন তাকে মাদ্রাসায় যেতে হয়? সবাই ছেলেমেয়েকে কোরআনে হাফেজ করতে চান এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শিক্ষার অধিকারের দাবী পিছিয়ে পড়ল, উঠে এল মাদ্রাসা শিক্ষার অধিকারের দাবী? ... ...