মৃত্যুদন্ড সম্পর্কিত গবেষণা প্রকল্প (ডেথ পেনাল্টি রিসার্চ প্রজেক্ট) সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে প্রায় ১৬ মাস, ৩০ লাখ টাকা, নেওয়া হয়েছে ৪০০ সাক্ষাৎকার। এই প্রকল্পের অধিকর্তা, দিল্লীর ন্যাশনাল ল' ইউনিভার্সিটির অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসার অনুপ সুরেন্দ্রনাথের সাথে কথা বলেছেন উত্তম সেনগুপ্ত, তারই কিছু অংশ। ... ...
তুর্কী চিরকালই ন্যাটোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার ভূকৌশলগত গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। গোটা নব্বই এর দশক জুড়ে তুর্কী যখন তার কুর্দিশ জনগণের উপর ভয়ঙ্কর হামলা চালাতে থাকে, তখন থেকেই তুর্কী (ইসরায়েল এবং মিশর বাদ দিয়ে, এরা অন্য গোত্রভুক্ত) মার্কিন অস্ত্রের সব থেকে বড়ো ক্রেতা। এই সম্পর্ক কিছু কিছু সময়ে চাপের মুখে এসেছে, যেমন ২০০৩ সালে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে, তুরস্ক সরকার তাতে যোগ দিতে অসম্মত হয়, যাতে তুরস্কের ৯৫% মানুষের সমর্থনও ছিল। গণতন্ত্রের আসল অর্থটা কী সেটা বুঝতে না পারার জন্যে তুরস্ককে তীব্র তিরস্কৃত ধিক্কার জানানো হয়। তুরস্ক মিলিটারি তুরস্ক সরকারের এমন এক ঘৃণ্য অবস্থান মেনে নেওয়ার জন্য, পল অয়ালভিতস, যাকে কিনা সংবাদ মাধ্যম বুশ সরকারের “idealist in chief” বলে অভিহিত করেছিল, তিনি তীব্র ভর্ৎসনা করেন এবং এর জন্য তাদের ক্ষমাপ্রার্থী হওয়া উচিত, তাঁর এও দাবি ছিল। এইরকম গুটিকয়েক ঘটনা বাদ দিলে এই দুই দেশের সম্পর্ক থেকেছে বন্ধুত্বের। সম্প্রতি তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইসিসকে কিভাবে মোকাবিলা করা হবে সে ব্যাপারে এক চুক্তিতে পৌঁছয়ঃ (আইসিস কে আক্রমণের বিনিময়ে, মার্কিনীদের) তুর্কী সিরিয়ার কাছকাছি তার যুদ্ধঘাঁটিগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহারের করতে দেবে, প্রতিদানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইসিসকে আক্রমণ করবে – যদিও তা না করে শেষত তারা কুর্দিশ শত্রুদের আক্রমণ করে। ... ...
কুর্দ ভাসায় ‘রোজাভা’ শব্দটির অর্থ ‘পশ্চিম’। টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল,কুর্দিস্তানের পশ্চিমে,সিরিয়ার উত্তরে এবং তুরস্কের সীমানায় আবদুল্লা অচালানের ‘ডেমোক্র্যাটিক কনফেডেরালিস্ম’ বা রাষ্ট্র বিহীন গণতন্ত্রের তত্বের ভিত্তিতে রোজাভা গড়ে তুলছে এক অভূতপূর্ব গণতন্ত্রের মডেল। আইসিস মানেই যখন চরম পরধর্ম অসুহস্নিতা তখন রোজাভা সব ধর্মের মানুষের জন্য এক খোলা বাতাস। আইসিস মানেই যখন নারী গৃহবন্দী, বোরখা বন্দী,ইতিহাস বিহীন,রাজনীতি বিহীন এক সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র। ইসলামিক স্টেট এ বিধর্মী হলে যখন গন ধর্ষণ আইনসম্মত,যৌনদাসী নিয়মানুগ তখন রোজাভায় বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ এবং বলপূর্বক বিবাহ আইনত নিসিদ্ধ্ব। আইসিস মানেই যখন চরম মধ্যযুগীয় পুরুষ আধিপত্য তখন রোজাভা প্রতিটি সংস্থায় তা রাজনৈতিক পার্টিই হোক বা মিউনিসিপ্যালিটি ৪০% নারী কোটা বাধ্যতামূলক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ভেঙ্গে দিচ্ছে হাজারো বছরের পুরুষ প্রাধান্য। প্রতিটি সংস্থা রোজাভা পরিচালনা করছেন যৌথ নেতৃত্বের ভিত্তিতে। কো প্রেসিডেন্ট, কো মেয়র, কো চেয়ারম্যান - এক জন পুরুষ হলে অন্যজন মহিলা হতে বাধ্য। মহিলারা অংশ নিচ্ছেন সমাজের সর্ব ক্ষেত্রে এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আমরা কিছুদিন যাবত যে সমস্ত মহিলা যোদ্ধাদের ছবি দেখছি তারা সবাই এই রোজাভার মহিলা যোদ্ধাবাহিনী YPJ এর সদস্য। ... ...
রোজাভাঃ টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে,সিরিয়ার উত্তরে এবং তুরস্কের সীমান্তে আবদুল্লা অচালানের রাষ্ট্রবিহীন গণতন্ত্র তত্ত্বের ভিত্তিতে গত ৬-৭ বছর ধরে যে অভূতপূর্ব গণতান্ত্রিক পরীক্ষা এবং এক বৈকল্পিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে সে সম্বন্ধে ইতিপূর্বে গুরুর ব্লগে দুটি পর্বে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। আগের লেখাটির সময়সীমা ছিল ২০১২ সালের রোজাভা বিপ্লব শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত – রোজাভা বিষয়ক তৃতীয় পর্ব প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে এবং রোজাভার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের সূত্রে কেবল মাত্র গুরুচন্ডা৯-র পাঠকদের উদ্দেশ্যে ইস্তাম্বুল থেকে রোজাভার ‘বৈকল্পিক’ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটি লেখা পাঠিয়েছেন ‘ইয়াসিন দুমান’। ইয়াসিন দুমান বর্তমানে ইস্তাম্বুলে পি এইচ ডি ছাত্র, কুর্দিশ অ্যাক্টিভিস্ট এবং রোজাভার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত – ইয়াসিন দুমানের লেখাটির অনুবাদ,লেখক পরিচিতি এবং ফুটনোট সহযোগে রইল আপনাদের উদ্দেশ্যে -পাঠক যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন রাখেন ( ইংরাজিতে রাখলে আমাকে কষ্ট করে অনুবাদ করতে হয়না) তাহলে লেখক যথাসম্ভব উত্তর দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা যারা আমাদের বর্তমান সময়ের এই অসাধারণ উচ্চাভিলাষী সামাজিক পরীক্ষা নিরীক্ষা বিষয়ে আগ্রহী তারা এই সূত্রে রোজাভার সাথে একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ,মত বিনিময় গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা রাখি। ... ...
সেই সাতক্ষীরের গল্প এখন মিলিয়ে গেছে। মেসো, মাসি এপারে এসে কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। বাবা, মা, কাকা কাকিরা নেই। বারাসতের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে গেছে। মাসতুতো ভাইদের সংসার কেমন চলছে জানে না বিমলেশ। ওপার থেকে আসা দুই ভাই খুব কষ্ট করেছে শুনেছিল সে। সাতক্ষীরের কথা তারা বলতে বলতে থেমে গেছে মনে হয়। বিমলেশ রবীন্দ্রসদন চত্বরে বাংলাদেশ বই মেলায় হাজির। সকলেই বাংলাদেশের প্রকাশক। বই সব বাংলাদেশের। “সাঁকোবাড়ি” একটি প্রকাশন সংস্থার নাম। কী সুন্দর নাম! সে বাংলাদেশের কিছু কিছু লেখকের বই পড়েছে। বই তার নেশাও। কিন্তু এই লেখকের নাম সে জানে না। সাতক্ষীরের লেখক, নাট্যকার। সে এতদিন বাদে জানল সাতক্ষীরে একজন লেখকের বাড়ি। হয় তো আরো আছে। এত বছরে সে জানে না। খবরের কাগজে দেখেছে সৌম্য সরকার এবং মুস্তাফিজুর রহমান নামে দুই ক্রিকেটারের বাড়ি সাতক্ষীরে। তাতে আহ্লাদ হয়েছিল বটে, কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে তার আগ্রহ খুব নেই। সে ঢুকতেই দেখল সাঁকো বাড়ি। সাঁকো বাড়ির স্টলে এক বিরল কেশ প্রবীণ বসে আছেন। ময়লা রঙ। চোখের চশমার পাওয়ার কম নয়। ইনিই কি তার ফেসবুকের বন্ধু আমিরুল বাশারের অগ্রজ। তারই বয়সী হবেন, কিংবা তার চেয়ে বেশি। সে কুন্ঠিত গলায় জিজ্ঞেস করল, খায়রুল বাশার মশায় কি আপনি, লেখক খায়রুল বাশার। ... ...
সাত্তার সাহেব সামান্য শব্দহীন হাসি হাসলেন। আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘পায়রা সম্পর্কিত তোমাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা কি?”আমরা হঠাৎ এই প্রশ্নে বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। আমরা কোন উত্তর দিতে পারলাম না। এবং এক পর্যায়ে বললাম,” ক্ষমা করবেন। আমাদের পায়রা সম্পর্কিত নিজস্ব কোন চিন্তাভাবনা নেই।” সাত্তার সাহেব তার সিগারেটে শেষ টান দিয়ে তা ফেলে দিলেন এবং ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “পায়রা হচ্ছে পৃথিবীর আত্মার প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি পায়রা আসলে পৃথিবীর আত্মার এক একটি অংশ। মানুষের জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে পায়রাদের জীবন। প্রতিটি মানুষের আত্মা আসলে এক একটি পায়রা অথবা কোন এক পায়রার প্রতিচ্ছবি যা পৃথিবীতে বসবাসরত এবং আকাশে উড্ডয়নরত অনেক অনেক পায়রার প্রভাবে প্রভাবান্বিত। এইসব পায়রাযুক্ত জীবন হয়ত যাপনকারী ব্যক্তি অনুভব করতে পারে না কিন্তু কারো অনুভব করা কিংবা না করার উপরে পৃথিবীর অমোঘ সত্যগুলোর কিছু আসে যায় না।” ... ...
যেদিন খদ্দের থাকে না, আমরা অনেক অনেক গল্প করি। বরাবর এমনটাই হয়ে আসছে। আমাদের দেওয়ালে চারজনের ছবি লাগানো আছে। আমি চারজনকেই চিনি। একটা আদ্যা মা, একটা নেতাজি, একটা মাধুরী দীক্ষিত, আরেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দীপালির ট্রাঙ্কে আরও একটা ছোট্ট মতো ছবি আছে। আমি জানি ওটা কার। পলাশের। আমাকে কেউ বলেনি। কিন্তু জানি। একদিন দুপুরবেলা খাটের ওপর ছবিটা পড়েছিল, আর আমি রাগ করে একটু চিবিয়ে ফেলেছিলাম। দীপালি কী মারই মেরেছিল। ওই একদিনই। আর কখখনও না। তারপর নিজেই একঘন্টা কাঁদলো। দীপালি ওর মা বাবার কথা একেবারে বলে না। গোমতীর কারো কথাই বলে না প্রায়। কেবল একজন দিদিমণির কথা বলে – তার নাম মায়া। উনি দীপালিকে খুব ভালোবাসতেন। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখাতেন, ঘি ভাত রান্না করে খাওয়াতেন। সেইসব গান দীপালি গায়। মাঝে মাঝে। বিশেষ করে ওই শুভাশিস এলে। শুভাশিসকে একটানা দু’বছর হলো দেখছি, মাসে সাধারণত একবার আসে। শুরুর দিকে, মাইনে পেয়ে। আমার জন্য ক্রিমবিস্কুট আনে, মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে। আর টাকা দেওয়ার পর আমাদের একটা-দুটো করে কবিতা শুনিয়ে চলে যায়। আমি আর দীপালি তখন খুব হাসি। ... ...
লোকমান বুকের ভেতরটা বাষ্প হয়ে উঠে। সমস্ত দুনিয়াটাকে তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্রকারী বলে মনে হয়। এই আকস্মিকতা সে মেনে নিতে পারে না। বেপারী সাবে কেমতে মরে হ্যায় না মাত্র আইল হজ থিকা? মরণের তো একটা রকম আছে? এইটা কুনু কথা হইল? এইসবই যেন লোকমানকে জব্দ করার ফন্দি! শামসুদ্দিন দেখো কেমন ধোয়া ইস্তারি করা পাঞ্জাবী পইরা চইলা আসছে! দুনিয়ার সব মানুষ বেপারী সাবের মৃত্যুকে কী সুন্দর মেনে নিচ্ছে। অথচ লোকটা এই তো সক্কাল বেলা কইল, বিকালে আহিস, তর কথা শুনুম নে…। এখন লোকমানের কথাগুলি কে শুনবো?... বেপারী সাব আপনের পোলায় আমারে একটা ট্যাকাও দেয় নাই। উল্টা গাইল পারছে। দুইটা মানুষ কি খাইয়া বাচি কন দেহি! খালি আপনের ফিরনের আশায় বাইচ্চা আছি কোন মতে… তিনমাসের ঘর ভাড়া বাকী, ঘরে একটা খওন নাই…। ... ...
ওর আঙুলগুলোর দিকে তাকাই। লম্বা,সরু,ফিকে প্রবাল রঙের। ওই আঙুল আমার হাতের মুঠোর মধ্যে গুঁজে দিচ্ছে… কোথাও একটা প্রজাপতি আস্তে আস্তে ডানা ঝাপ্টাতে থাকে। কিম্বা দুটো? পাঁচটা? ফিরতে অনেক রাত হয়েছিলো। ভয়েডকে দেখতে পাইনা এসে। আজকাল মাঝেমাঝেই পাইনা। কোথায় যায় কে জানে?কখোনো জিজ্ঞেস করিনি। কোনো কোনোদিন অনেক রাত্রে আধোঘুমের মধ্যে গালের ওপর ওর নিঃশ্বাস টের পাই। ফিসফিস করে বলে “আই নো, ইউ হ্যাভ সামওয়ান এলস অন ইওর মাইন্ড”। আমি ওর কথার খেই ধরতে চাই – “আই নো…”, বাক্য শেষ হবার আগেই আধোচেতনা আমার জিভকে আচ্ছন্ন করে। আবল্লী আমাকে আস্তে আস্তে টেনে নিতে থাকে। যেন কেউ খুব নরম একটা কম্বল দিয়ে আমায় মুড়ে দিচ্ছে। বহুদিন হারিয়ে থাকা একটা কম্বল। আমি আবল্লীর মধ্যে তলিয়ে যাই। তলিয়ে যাওয়া বেশ ভালোই জিনিস। গভীরে। ... ...
বছর যেতে আর কি? আমরা এখন বড় হয়ে গেছি। আমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি জুটেছে। ওদিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তিন ভুবনের পারে বলে একটা ছবিতে কি ইনোসেন্ট এক মস্তানের রোলে কী অসাধারণ অভিনয় করেছেন! তনুজা তাঁর শিক্ষয়িত্রী স্ত্রী। পল্টুদা অবশ্য মস্তান হতে পারে নি। তবে সুন্দরই আছে। সাধারণ একটা সরকারি চাকরি করে। পাত্র হিসেবে তেমন কিছু নয়, তবে বিয়ের আশা ছাড়ে নি। মা বাবা তো নেই। ধনমাসীমা বলে এক ধনবতী মাসীর পালিত পুত্র। ধনমাসীমা বলেন “জন্মকালে মা-হারা দুর্ভাগারে কে আর মাইয়া দিবো।” আমরা ভাবি আহা, পল্টুদা সাহিত্য ভালবাসে, মিশুকে, পরোপকারী। কেউ না কেউ ভালবাসবেই ওকে। কিন্তু তেমন কেউ দেখা দিল না। ... ...
অকস্মাৎ গুম গুম গুম শব্দে অমোঘ পাহাড় কাঁপিয়া উঠিল। চমকিত বিশাখ দুই পদ পিছাইয়া আসিলেন। হেরিলেন বজ্রপ্রস্তর নির্মিত বেদী সহ জ্বলমণির বিশাল প্রস্তর মূর্তি মৃত্তিকায় প্রোথিত হইতেছে। স্থাণুবৎ মহারাজ দেখিলেন মণি মাণিক্য খচিত দেবগৃহ অতলে চলিয়া যাইতেছে। অপরূপ কারুকার্যখচিত স্তম্ভ, বংশ পরম্পরায় নিপুণ শিল্পীদের সাধনার ফল। নিমেষে নিমেষে মন্দির ভূমিতে গহ্বর সৃষ্ট হইতেছে, যেন নরক ভৈরবীর আদিগন্ত মুখ ব্যাদান। এক এক গ্রাসে বিলুপ্ত করিতেছে নাটমন্দির, দেবশিখর, উপচার গৃহ, বৃন্দবাদনের প্রাঙ্গন। সুদূর পর্বত শিখর হইতে প্রস্রবিনী শঙ্খশুভ্রা নির্মল জলধারা,যা একদিন ধৌত করিত মহাদেবতার চরণ দুটি ,সহসা শুকাইয়া গেলো। পুণ্য দির্ঘীকার পূত সলিল ফোয়ারার ন্যায় ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হইলো। দগ্ধ হইলো মন্দির উদ্যানের পুষ্পবীথি। অবশেষে মন্দিরের শীর্ষ কলসও বিলীন হইলো। ... ...
যাহা ষোল তাহাই আঠেরো। রইল আঠেরোজন কবির ষোড়শোপচার। ... ...
শ্যাম লালের একটি নিকনেম চালু ছিল গাজিয়াবাদের আদালতে। সাজা লাল। দীর্ঘ বিচারকজীবনে, কখনও কোনও অভিযুক্তই নাকি তাঁর বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি পায় নি। প্রত্যেকেই শাস্তি পেয়েছে তাঁর জাজমেন্টে। শ্যাম লাল নিজে যদিও দাবি করেন অনেকেই তাঁর রায়ে মুক্তি পেয়েছেন বা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, কিন্তু এ রকম একটা কেসের রেফারেন্সও তিনি দিতে পারেন নি। আরুষি হত্যাকাণ্ডের কেস তাঁর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল সম্ভবত এই কারণে, ন্যায় প্রদানের থেকেও এই কেসে তাঁর কাছে জরুরি ছিল এই কেসের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত পালন করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম তোলার। “শেষ পর্যন্ত” কথাটি অবশ্যই ব্যঞ্জনামূলক, কারণ, শেষ করার জন্য কোনও চাপ তাঁর ওপর ছিল না, চাপটা ছিল তাঁর নিজের কাছেই। আরুষি হত্যার রায় প্রকাশের ছদিন পরেই শ্যাম লাল অবসর নেন। দেশের সমস্ত মিডিয়া যখন গভীর আগ্রহের সঙ্গে এই কেসটা ফলো করছিল, একটা সঠিক বিচার হওয়া খুব দরকার ছিল, কিন্তু শ্যাম লালের হাতে বেশি সময় ছিল না। অবসর নেবার আগেই তাঁকে মামলার শুনানি শেষ করে জাজমেন্ট শুনিয়ে যেতে হত। শ্যাম লাল চাইলেই কেসটি আরও শুনানির জন্য পরবর্তী বিচারকের হাতে ছেড়ে যেতে পারতেন, শেষ করার জন্য কোনও চাপ ছিল না, কিন্তু তিনি সে পথে হাঁটেন নি। ... ...
২০১০ সালের শেষদিকে, সিবিআই ইনভেস্টিগেটিং অফিসার কৌল মোটামুটি ছক কষেই ফেলেছেন এই ঘটনাকে অনার কিলিং-এর তকমা লাগিয়ে সলভ করতে হবে। সমস্যা হচ্ছে, ক্রিমিনাল কেসে তদন্তের ফলাফল আগেই ভেবে রাখলে সেই অনুযায়ী ঘটনাক্রমকে সাজাতে হয়। এখন সরাসরি তথ্যপ্রমাণ, যেগুলো বা যারা কথা বলে না, যেমন বালিশের ওয়াড়, বিছানার চাদর, কিংবা বোতলে বা গ্লাসে আঙুলের ছাপ, সিঁড়িতে রক্তের দাগ – এদের বয়ান তো বদলে ফেলা যায় না, এরা যে অবস্থায় রেকর্ডেড হয়েছিল, সেইভাবেই রেকর্ডেড থাকে। এর চেয়ে অনেক সহজ, সাক্ষীদের বয়ান বদলে ফেলা। তা, সে ব্যাপারে কৌল খুবই সফল হচ্ছিলেন, একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের বয়ান ততদিনে বদল হয়ে আসছিল, কিন্তু কৌল পড়লেন স্বয়ং নূপুর তলওয়ারকে নিয়ে। মৃত আরুষির শরীর ঢাকা ছিল একটি সাদার ওপর গোল ডিজাইন করা চাদর দিয়ে। কৌল সেটিকে দাবি করেন সাদা চাদর, এবং সেই সম্বন্ধে বিস্তারিত গল্প ফাঁদতে গিয়ে তিনি নূপুরের ওপর চাপ দিতে শুরু করেন, যাতে নূপুর স্বীকার করেন, চাদরের ব্যাপারে তিনি কৌলকে আগে “মিথ্যে কথা” বলেছিলেন। নূপুর অস্বীকার করেন – তিনি প্রথম থেকেই চাদরের সঠিক বর্ণনা দিয়েছিলেন, সে চাদর বেশ কয়েকবার টিভি চ্যানেলে দেখানোও হয়ে গেছে, এখন কৌল সাদা বললেই নূপুরকে তা মেনে নিতে হবে কেন? নূপুর পরিষ্কার জানান, তিনি বয়ান বদল করবেন না, তিনি মিথ্যে বলেন নি কখনওই। কৌল, এমনকি নূপুরকে ভয় দেখান যে, তিনি নূপুরের বিরুদ্ধে কুড়িজন সাক্ষী দাঁড় করিয়ে দেবেন নূপুরকে মিথ্যেবাদী প্রমাণিত করার জন্য। ... ...
আরও একটা ফ্যাক্টর কাজ করে। সেটা হল অনিশ্চয়তা আর রহস্যময়তা। কথক এমন ভাবে তার কথকতার জাল ছড়াতে থাকেন, সাদামাটা ঘরোয়া দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বাইরে যেন একটা জাদুকরি কুহকজড়ানো বাতাস বইতে থাকে কথকতার আসরজুড়ে। রোজকার ঘামঝরানো পরিশ্রমের বাইরে কথক হয়তো এক জাদুগালিচার গল্প বলেন। হয়তো এক সন্তের গল্প বলেন যার কৃপায় বোবা কথা বলে, কাটামুন্ড জোড়া লেগে যায়। এমন জুতোর গল্প বলেন যেটা পায়ে দিয়ে ইচ্ছেমত দেশভ্রমণ করা যায়। এ অভিজ্ঞতা তো আপনাদের সবার আছে। মানুষের বুকের ভেতরে যে অসম্ভব বাসনাগুলো গোপনে লুকিয়ে থাকে, যে ফ্যান্টাসি আমরা গোপনে লালন করি, গল্পের রহস্যময়তা তাকে স্পর্শ করে। যেন ভারচুয়াল রিয়ালিটির ভেতর দিয়ে আমাদের বাসনার নিবৃত্তি হয়। এই আধো বুঝতে পারা, আধো বুঝতে না পারার ভেতরে স্ট্রেস থাকে। এই স্ট্রেস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে গল্প শোনে, সে না-বোঝা রহস্যময়তার ভেতর থেকে আরও গল্প নিজের মত করে বিনির্মাণ করে নেয়। আর, অনিশ্চয়তা তো থাকবেই। কথক যদি কী হতে পারে, আসলে সেটা বিশাল একটা সাপ নয়, একটা মোটা দড়ি, কুমির নয়, শেষ পর্যন্ত দেখা গেল একটা গাছের গুঁড়ি – এসব আগেই বলে দেন, তবে তো সেটি আর গল্প থাকে না, সাংবাদিকসুলভ নিছক ঘটনার বিবরণ হয়ে ওঠে। নীরস সেই গল্প যেন ফোটোগ্রাফিক রিয়েলিটির মত কঠিন সত্য, গল্পের যে মাধুরী মানুষকে চিরকাল আবিষ্ট করে রেখেছে, সেই প্রাণলাবণ্যটুকু আর থাকে না। ... ...
সাধারণভাবে কোনও বই পড়া শুরু করার আগে আলাদা করে কোনও মানসিক প্রস্তুতি নেবার দরকার হয় না – কিন্তু এই বইটা পড়ার আগে আমাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হয়েছিল। বইটা পড়ার জন্য হয় তো আগে থেকে ঘটনাটার কিছু না জানলেই ভালো হত, একটা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বইটা পড়ে একটা মতামতে পৌঁছনো যেত। কিন্তু এটা কোনও কাল্পনিক গল্পের বই নয়, কঠিন বাস্তবের ন্যারেশন। এই ন্যারেশনের একটা অংশ আমি জানি, জানতাম, ঘটনার শুরু থেকেই আমি নজরে রেখেছিলাম, নিজের মত করে খবর জোগাড় করতাম, পড়তাম, ফলে নিজের অজান্তেই একটা মত – সহজ ইংরেজিতে যাকে বলে ওপিনিয়ন, আমার তৈরি হয়ে ছিল। ফলে পুরোপুরি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এই বই পড়া আমার পক্ষে আর কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না। আমি জানতাম, বইটা পড়ে ফেলার পরে আমি ঠিক আগের মত স্বাভাবিক থাকতে পারব না, বইটা আমাকে ধাক্কা মারবে জোরে, আর হন্ট করে চলবে অনেকদিন ধরে। পড়বার পরে বুঝেছিলাম, আমার এই ধারণা অমূলক ছিল না। ... ...
তবে উপায়? বিকাশ প্রথমে ওয়াটার থেরাপির ধান্দা করলেন। দিনে আট গেলাস জল পেটে ঢুকতে লাগলো, মদ্যপান বন্ধ, আর প্রতি ঘন্টায় দুচোখে জলের ঝাপটা। এতে করে কোনও লাভ হল না, বার বার বাথরুম যাবার প্রয়োজন পড়ল, ঝাপটা দিতে গিয়ে জামা ভিজে একশা হল, সন্ধ্যায় ইয়ারবক্সীরা 'উল্লাস' বলার একটি সাথী আপাততঃ হারিয়ে সামান্য বিমর্ষ হলেন। রাতে ঘুম এল না। ঘুম আসার জন্য সানন্দায় কানে কানে পড়তে গিয়ে মাথাটা শেষে খেলল। বিকাশবাবু গোপনে ওনার সহধর্মিনীর প্রসাধন সামগ্রী হাঁটকে শসা, লেবু ইত্যাদি প্রাকৃতিক ভেষজ দেওয়া ক্রিম চোখে লাগাতে শুরু করলেন ও কদিনের মধ্যেই ক্রিম সরাতে গিয়ে ধরা পড়লেন। লাগিয়ে ফল হল কচু, হাতি আর ঘন্টা। চৌর্যের কোনও কারণ বাৎলানো দায় হল, গৃহিনীর মুখনাড়া সার হল, বিবিজান লবেজান করে দিলেন। কিছুতেই কিছু হল না দেখে মরিয়া বিকাশ খুব ভোরে উঠে আদা-মধু আর কল ওঠা ছোলা মুখে ফেলে দু-আঙুলে টেনে টেনে চোখের চামড়ার ব্যায়াম আরম্ভ করলেন। এতে তাঁর জীবনযাত্রা পূর্বের চেয়ে স্বাস্থ্যকর হল, তর্জনীর গাঁটে ব্যথা হল, কিন্তু চোখের কোনও রদবদল ঘটল না। হতাশ, ভগ্ন, ভীত, রোগগ্রস্ত বিকাশ সেন ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন। ... ...
পৃথিবীতে একটা মাত্র ডাইনোসর আছে যার সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত নাম সাধারণ মানুষের মুখে মুখে চলে, জীনাস নেম, স্পিসিস নেম - দুটোই একসাথে উচ্চারিত হয়। আজ অবধি আর কোনো ডাইনোসর বিজ্ঞানীমহলের বাইরে এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তার নামের মধ্যেই তার একচ্ছত্রাধিপত্যের পরিচয়, সে ডাইনোসরের রাজা, 'অত্যাচার-সম্রাট' টাইর্যানোসরাস রেক্স। জীনাস Tyrannosaurus, অর্থাৎ অত্যাচারী টিকটিকি, স্পিসিস rex, অর্থাৎ king। স্থলচর মাংসাশী ডাইনোসরদের মধ্যে টী-রেক্স সর্ববৃহৎ নয়, জাইগ্যানোটোসরের মতো কেউ কেউ তার চেয়ে বড়। কিন্তু আকারটাই তো রাজকীয়তার শেষ কথা নয়। রেক্স ছাড়া টাইরানোসরাসের আরও অনেক প্রজাতি আছে, টাইরানোসরাস বাদেও অনেক বাঘা বাঘা জাত-শিকারী ডাইনোসর আছে। Carcharodontosaurus আছে,Velociraptor আছে। ভেলোসির্যাপটরকে আমরা একরকমভাবে চিনি, 'জুরাসিক পার্ক'-এর র্যাপটর এরাই। এরা সবাই থেরোপড। থেরোপডদের মধ্যে থেকেই সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও আধুনিক ডাইনোসররা উঠে এসেছিল। এদের একটা শাখা এখনও পৃথিবীতে মজুত আছে। তাদের আমরা বলি 'পাখি'। ... ...
দ্বিতীয় লাইনটি ফলো করলেই নোটিফিকেশানের লিস্টে কারা অন্তর্ভুক্ত জানা যায় শুধুমাত্র মুসলমান শব্দটিকে বাদ দিলেই। যারা জানেন তারা জানেন যে ইমিগ্রান্টস দের মধ্যে শরণার্থী আর অনুপ্রবেশকারীর বিভাজন সংঘপরিবারের দীর্ঘদিনের ধর্মীয় রাজনীতির উপাদান। নোটিফিকেশানের মাধ্যমে তাকেই আইনী বৈধতা দেওয়া হল, যে নোটিফিকেশনের একমাত্র প্যারামিটার হচ্ছে ধর্মীয় নির্যাতন। যে বিশাল সংখ্যক দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে নির্যাতিত মুসলিম জনগণ জীবনধারণের আশায় ঢুকে পড়ছে ভারতবর্ষে,এখন থেকে সরকারীভাবে তাদের অনুপ্রবেশকারী ঘোষণা করা হবে। কিন্তু যারা শরণার্থী, তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি সরকারীভাবে বিবেচিত হলো কি? এই নোটিফিকেশনে তার উত্তর মেলেনা। ... ...
এই গুলিয়ে ফেলা থেকে আরো বড় বিভ্রান্তি জন্ম নেয়। মধ্য যৌনতায় (খেয়াল করবেন, ‘মধ্যলিঙ্গ’ বলি নি) অবস্থানকারী মানুষরা যেহেতু ‘ট্রান্সজেণ্ডার’ এর অংশ, তাই কেউ কেউ সমকামিতা আর অন্তর্বর্তী লিঙ্গকে একসূত্রে ফেলে দেয়। এদের উৎপাতেই ফেসবুকে ‘গে শি-মেল হিজড়ে’ নামের একাধিক পেজ অবস্থান করছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সমানাধিকার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা থাকে, কিন্তু সাইটটাকে সাজানো হয় অন্তর্লিঙ্গ মানুষদের ছবি দিয়ে। অন্তর্লিঙ্গ ও সমপ্রেম দুটোই যেহেতু গোঁড়াদের বক্রদৃষ্টির আওতায়, তাই উদারপন্থীরা হিজড়ে ও সমকামীদের এক মঞ্চে বসিয়ে তাঁদের পক্ষে সওয়াল করেন। চেতনা উদযাপক লেখায় অনেকে রূপান্তরিত, রূপান্তরকামী, ইউনাক, অ্যাণ্ড্রোজিনাস, বৃহন্নলা সব্বার কথা লিখে যান। বুঝি যে, তাঁরা দরদ দিয়ে লিখছেন, সমবেদনাও জাগাচ্ছেন পাঠকদের মধ্যে, কিন্তু উল্লিখিত নামগুলোর মধ্যে একের সাথে আরেকের পার্থক্য কিছুই বোঝাতে পারছেন না। ফলে ঠেলাগাড়ির ঠেলা খেয়ে সবাই গিয়ে পড়ছে ‘ট্রান্স’ বর্গে। ... ...