গ্রামের মাতৃস্থানীয়রা যখন এটা-ওটা-সেটা নিরীহ কথা কানাকানি করে , তখন পরিবারের কর্তাদের পাওয়া যায় ছেলেদের আড্ডায়। সেখানে জিনিসপত্রের দাম, এলাকার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা চলে। সম্ভবত আরো অনেকটা সভ্য দেশে একই ধরণের জায়গায় যতটা বিচক্ষণতা ও বোধের সঙ্গে এই ধরণের আলোচনা হয়, এখানকার আলোচনাও সেই একই গোত্রের। কিন্যামওয়েজি গ্রামের সকলের একত্রিত হওয়ার জায়গাকে ওদের ভাষায় "ওয়ানজা" বা উওয়ানজা বলা হয়। এটা সাধারণত গ্রামের চৌকোনো জায়গার একটেরেতে থাকে। ফাঁকা সময়ে- অবশ্য ব্যস্ততা খুব কমই থাকে - তারা উবু হয়ে বসে ধূমপান করে, আর সম্ভবত মায়েদের মুখে একটু আগে যে আলোচনা শোনা গেছে, সেই একই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে । সদ্য আগত সাহেবটি হল সেই বিষয় । ... ...
এই যে আপনারা, মানে যারা জুনিয়র বা সাব জুনিয়ার সিটিজেন, তাদের যে জিনিস দেখে আমি মুগ্ধ হই তা হচ্ছে আপনাদের গভীর আত্মবিশ্বাস আর দুঃসাহস। আমরা সিনিয়র সিটিজেনরা, কীরম একটা ন্যাকাটে ও ক্যাবলা কার্তিক ছিলাম। এখনো। তো, সেই সময়টাই সেরকম ছিল। মা বাবা গুছিয়ে ক্যালাতো, অংকের মাস্টারের তো কথাই নেই। এমন কি ভূগোলের মাস্টার মশাইও সাতটা রাজধানীর নাম না বলতে পারলে উত্তাল পেটাতেন। "শালা" বলেছি, শুনতে পেয়ে পাড়াতুতো এক কাকা উদ্যোগ নিয়ে কান মলে দিতেন। সে এক মুক্তাঞ্চল। ... ...
আমাদের ধারণা ছিল কলেজের ছেলেমেয়েরা তো বড় হয়েছে, এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে ওদের সচেতনতার শিক্ষা খুব বেশি প্রয়োজন নেই, কারণ টেলিভিশন বা সমাজ মাধ্যমের কারণে এরা সব কিছুই দেখেছে, শুনেছে, জেনেছে। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম একেবারেই ভুল ভেবেছি। যেহেতু প্রথম ঢেউয়ে গ্রাম তেমনভাবে আক্রান্ত হয়নি, তাই এই ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই অসুখটার ণত্ব ষত্ব কিছু জানেনা। টেলিমেডিসিন কি, অসুখের প্রোটোকল কি? কতদিনের মধ্যে কী ধরণের পরীক্ষা করাতে হবে, পরীক্ষা কোথায় হয়? অক্সিজেন কেন, কখন লাগতে পারে এগুলো তারা বিশেষ কিছুই জানেনা। তাছাড়া বেশিরভাগের বাড়িতে অক্সিমিটার তো দূর থার্মোমিটার পর্যন্ত নেই। ... ...
ন্যামওয়েজিদের কিছু অদ্ভুত রীতি আছে। একটা বাচ্চার জন্মের পরে তার বাবা পিতা নাড়িটা কেটে ফেলে আর সেটা নিয়ে রাজ্যের সীমানায় গিয়ে সেখানে মাটিতে পুঁতে দেয়। যদি সে জায়গাটা একটি নদী হয়, তাহলে নদীর পাড়ে পুঁতে দেয়; তারপর একটা গাছের শিকড় নিয়ে সে ফিরে আসে, আর বাড়ি ফিরে নিজের দরজার চৌকাঠে সেটা পুঁতে দেয়। তারপর সে তার বন্ধুদের জন্য একটা ভোজের বন্দোবস্ত করে। একটা বলদ বা গোটা ছয়েক ছাগল মারে, পোম্বে বিলোয় সবাইকে। যমজ সন্তানের জন্ম হলে, তারা কখনই একজনকে মেরে ফেলে না, বরং সেটা আরও বড় আশীর্বাদ মনে করে। ... ...
কেল্লায় যে এত ভূতের বসবাস আমি নিজেও তা জানতাম না আগে, আমি তো সপ্তাহে অন্তত পক্ষে একদিন হলেও কেল্লায় যাই, কিন্তু কেল্লার ভেতরে জ্বিন দেখার সৌভাগ্য আমার এখনও হয়নি। একবার তো কেল্লার জঙ্গলে ঢাকা বেগম মহলে ভরা শীতের সময় প্রায় সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত ছিলাম, কিন্তু সেদিনও সেখানে কিছুই দেখতে পাইনি—তবে নিশ্চয় কোনো না কোনো দিন ঠিকই কেল্লার ভেতরে জ্বিনের দেখা পাবো—এই আশা রাখি। ... ...
আমাদের আসার দিনক্ষণ জেনে বড়দাদী মুসার মাকে দিয়ে বাসা পরিষ্কার করিয়ে রাখে। উঠোন জুড়ে পড়ে থাকা পাতা এক জায়গায় জড়ো করা, কলঘরের মেঝে বালু দিয়ে ঘষে ধুয়ে রাখা, টাইমকলের জল চৌবাচ্চায় ভরে রাখা—এসব কিছু বড়দাদী দাঁড়িয়ে থেকে করায়। আর আমরা বাসায় পৌঁছাতে না পৌঁছাতে হরিপদ ঘোষ ঘটি ভরে রোজকার দুধ দিয়ে যাওয়া আর রহিম চাচাকে বাজারে পাঠিয়ে আনাজপাতি কিনে আনা – এ সবকিছুও হয় বড়দাদীর আদেশে। ... ...
আমরা মনখারাপের সঙ্গে লড়াই করার জন্য কলেজে মাঝেমাঝেই মনোবিজ্ঞানীদের নিয়ে ওয়েবিনার করছিলাম, যাতে তাঁরা আমাদের বাঁচার কোন পথ বাতলে দিতে পারেন। তাঁরা বলেছিলেন বই পড়তে, বিশেষ করে জীবনীমূলক বই। পরীক্ষা শেষ হবার পর, আমি পূর্ব দিনের মহামারীগুলি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম স্বামী বিবেকানন্দের লেখা প্লেগ ম্যানিফেস্টোর প্রথম কয়েক লাইন বাদ দিলে প্রায় পুরোটাই যেন করোনার সাবধানতার সঙ্গে মিলে যায়। সেই একই পরিচ্ছন্নতার বার্তা, টাটকা আর পুষ্টিকর খাবারের পরামর্শ। ডাক্তার আর জি করের প্লেগের ওপরে লেখা একটি বই হাতে এলো। নতুন করে ছাপা হয়েছে। দ্বিতীয় কুমুদিনীর বাবা কৃষ্ণকুমার মিত্রের আত্মচরিত পড়লাম। হজরত মহম্মদের ওপরে লেখা তাঁর বইটি আন্তর্জালে খুঁজে পেলাম। অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে জগৎ ভুলে পাগলের মত কেবল পড়েই যেতে লাগলাম। বই থেকে মুখ তুললে যত রাজ্যের আতঙ্ক এসে ধরে, তাই কেবল বইয়ের আড়ালে আড়ালে আমার দিন কাটতে লাগল। ... ...
মধ্য আফ্রিকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপজাতি হল ন্যামওয়েজিরা। আমার কাছে একজন ন্যামওয়েজির সৌন্দর্যের আদর্শ হল একজন লম্বা দীর্ঘপদ কালো মানুষ, ভালো মানুষের মতন সদা হাসিভরা মুখ, হাসির ফাঁকে দাঁতের উপরের সারির মাঝখানে একটা ছোট গর্ত দৃশ্যমান। সে যখন বালকমাত্র, তখন তার গোত্র বোঝাতে এই গর্তটা তৈরি করা হয়েছিল। তার গলার থেকে শত শত লম্বা তারের ঝুমকো ঝুলছে; মানুষটা প্রায় নগ্ন হওয়ায় তার গোটা সুন্দর শরীরটা দেখতে কোন অসুবিধা নেই। ... ...
লকডাউনের দ্বিতীয় ঢেউয়ের অতি নিদারুণ এই দিনগুলি কোনমতে কাটছিল। খেয়াল করলাম, আমাদের অনার্সের বেশ কিছু ছেলেমেয়ে গ্রুপ চ্যাটে অনেকদিন কোন কথা বলছেনা। ফোন করলেও ফোন ধরছেনা। কী করে যোগাযোগ করি ভেবে পাইনা। শেষে তাদের বন্ধুদের কাজে লাগিয়ে জানলাম, প্রত্যেকের বাড়িতেই একাধিক নিকটাত্মীয় মারা গেছেন। এদিকে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি তলানির দিকে, যারা আসে, তারাও ঠিকমত সাড়া দেয়না। বুঝি মনটা ওদের ভালো নেই। এর মধ্যে অনেক গুলিই ঘটনা ঘটল - তার মধ্যে দুটো বলছি। পিজি ক্লাসের একটি ছেলে আর একটি মেয়ে হঠাৎ করে গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গেল, সব যোগাযোগ বন্ধ। অনেকবার ধরে ফোন করতে করতে জানতে পারলাম, ছেলেটার কারণ কী। ... ...
উকাওয়েন্দি জায়গাটা দেখা গেল প্রায় জনবসতিহীন। এবড়োখেবড়ো জমি, জঙ্গলে ভরা, অগণিত সূক্ষ্ম জলধারা-জালিকা অঞ্চলের সব জল বয়ে নিয়ে যায়। উর্বর, অজস্র প্রাণী ও উদ্ভিদের ভরা একটা অনুকূল ক্ষেত্র। জন বসতিগুলোর মধ্যে তবু উল্লেখ যোগ্য উত্তরের মানা মেসেঙ্গে বা টাঙ্গানিকার ধারে, পশ্চিম দিকের এনগোন্ডো এবং টংওয়ে; মাঝখানের রুসাওয়া; দক্ষিণে পামবুরু ও দক্ষিণ-পূর্বে উটান্ডা। ... ...
আমি একটা ফেসবুকের পাতা বানিয়েছিলাম, সেখানে নানা ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা লেখা, আঁকা, মোবাইলে তোলা ফটো, নিজের করা হাতের কাজ, রান্নার ছবি, গান, নাচ বা আবৃত্তির ভিডিও - লকডাউনে যে যা পাঠাত, সেগুলো আপলোড করতাম। এছাড়া ওদের মন ভাল করার অন্য কীই বা উপায় ছিল! বেশিরভাগ তো সব দূরদূরান্তে অজ পাড়াগাঁয়ে বাড়ি, কলেজের কাছে মেস করে থাকে। নিজেরা হাত পুড়িয়ে রান্না করে খায়। একবার একটা পিজি ব্যাচ পাশ করে মেস ছাড়ার আগে আমাদের নেমন্তন্ন করে মাংস ভাত খাইয়েছিল। যা হোক, আলটপকা দু সপ্তাহের লকডাউন হতে দু তিনটে জামাকাপড় নিয়ে সব বাড়ি চলে গিয়েছিল। বই খাতা মেসে পড়েছিল, আর যে ওগুলো নিতে ফিরতে পারবেনা, তা তো স্বপ্নেও ভাবেনি। বাড়িতে বসে লেখা পড়া যে করবে, উপকরণ ছিলনা। আমি যখন বলতাম এই তো রবীন্দ্র জয়ন্তী এসে গেল, কিছু লিখে পাঠাও। অনেকে বলেছিল, ঘরে কাগজ নেই ম্যাডাম। তখন আমি বললাম, যে ওমা! লিখতে বুঝি সব সময়ে কাগজ লাগে? আমি তো মোবাইলে লিখি। তখন আর্জি এলো কোন, জয়ন্তী নয়, শুধু আমাদের জন্য মোবাইলে লিখুন ম্যাডাম। ... ...
এখানকার উপজাতিরা ধাতুর মধ্যে চেনে বলতে তামা আর লোহা। তামা আসে রুয়া থেকে, আর উপকূলের থেকে। আর রট আয়রন আসে উসুকুমা বা উন্যামওয়েজির উত্তরের এলাকা থেকে, ও উভিরা থেকে। আফ্রিকার অন্দরের বাসিন্দারা যে সমস্ত পিতলের অলঙ্কার পরে, কাফেলাগুলোর সঙ্গে আনা মোটা পিতলের তার থেকে স্থানীয়রা সেই সব গয়না তৈরি করে। যদিও লৌহ আকর প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, এমনকি উন্যামওয়েজি ও উজিজির মধ্যে অনেক জায়গায় মাটির উপরে দেখাও যায়-তবুও তা খুব কমই কাজে লাগে; যদিও উকোনঙ্গো ও উভিনজাতে, স্থানীয়রা আকরিক লোহা গলিয়ে নিজেদের দরকারের লোহা তৈরি করে এমন উদাহরণ আছে। ... ...
স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসছিল – এমন চিত্রকর্মের সলতে পাকানো পর্বটি কেমন ছিল এবং গুহার দেওয়ালে, পিলারে এবং ছাদে এমন মসৃণ চিত্রকর্ম কীভাবে সম্ভব হল? বিভিন্ন চিত্র গবেষণা থেকে যেটুকু জানা গেছে, তা হল মাটি-কাদার সঙ্গে গোবর ও তুষের গুঁড়োর মিশ্রনের প্রলেপ দিয়ে প্লাস্টার হত, তার ওপর চুণের আস্তরণ দিয়ে মসৃণ করে তার ওপর চিত্রিত হয়েছে সেইসব অমূল্য চিত্রাবলী। রং তৈরি হত মূলত বিভিন্ন লতাগুল্ম, গাছের রস, খনিজ পদার্থ, iron oxide, manganese di oxide এবং কাঠকয়লা। এইসব মিশ্রিত রং টেম্পারা পদ্ধতিতে চিত্রায়ণ হয়েছিল। ভাবতে অবাক লাগে, প্রায় ২ হাজার বছর ধরে সময়ের ঝড়ঝাপ্টা সহ্য করে এখনও অনেকটা রয়ে গেছে। ... ...
তো, নস্টালজিয়ার একটা সেট প্যাটার্ন আছে। প্রথমটায় ঠাট্টা, ফাজলামি প্রচুর করুন। এমন কি বুঝিনা বুঝিনা করে একটু অসভ্য টাইপের জোকও করতে পারেন - কিন্তু সেটা ইশারাতেই। তারপরে একেবারে শেষটায় একটা হুল্লাট ইমোশনাল মোচড় - একটা দগদগে চোখ ছলছলে ভাব - বুক চাপা একটা কান্না গোছের। তাইলে জমবে। আমি প্রথমেই জানিয়ে দি'- আমার এই নস্টালজিক খানা পিনার ব্যাখ্যান একেবারে পুরো ফ্যামিলি নিয়েই পড়তে পারবেন। রেটিং একেবারে ইউনিভার্সাল। আর শেষটাতেও কোনো হায় হায় রে ক্লাইম্যাক্স নেই। খুবই সহজপাচ্য। আসলে এই আমাকে দেখুন। জন্ম ৫৩ সালে (AD), সেই কলেজ বেলার থেকে কতো যে নতুন নতুন খাবার খেয়ে অবাক হলাম। এবং এখনো সেই অবাক হওয়া শেষ হয় নি। ... ...
প্রথমটা হল সিলুরে, জিজিরা যাকে সিংগা বলে। স্থানীয়দের কথা অনুসারে চার, এমনকি ছ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আমি যেটার ছবি এঁকেছিলাম, সেটা সাড়ে আটত্রিশ ইঞ্চি লম্বা, ওজন দশ পাউন্ড, তবে কিনা এটা ছোট মাছ হিসাবেই বিবেচিত হয়েছিল। অত্যন্ত চর্বিযুক্ত মাছ, পিঠের রং গাঢ়-বাদামী, আর পেটের দিকটা হালকা বাদামী, প্রায় সাদাই হয়ে যাওয়া। এই মাছ আঁশবিহীন। নদীতে হ্রদে যেরকমটা আমরা পেয়ে থাকি, এটা সেই রকমেরই। গোম্বে নদীতে শ’য়ে শ’য়ে এই মাছ ধরা হয়, কাটাকাটি করে শুকানো হয় আর আরব, আচারে-ব্যবহারে মুসলমান হয়ে যাওয়া নিগ্রো ও সোয়াহিলিদের কাছে বিক্রির জন্য উন্যানেয়েম্বেতে নিয়ে যাওয়া হয়। ... ...
ঠাকুমা তো জানে না—এগিয়ে চলা প্রতিটি মুহূর্ত আমার বুকের ভেতর দামামা বাজাচ্ছে। বুঝতে পারছি সব আকুতি বিফল হয়ে আমাদের আরেকটু পরেই শহরে ফিরে যেতে হবে। এমন সময়গুলোতে আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না। এসব সময়ে আমি শুধু দেখি আমার বাড়িটাকে, দেখি বাড়ির মানুষগুলোকে, এমনকি উঠোনে দুলতে থাকা গাছের ছায়াগুলোকেও। শহরের বাসায় রোদতপ্ত নিরিবিলি দুপুরে মা যখন ভাতঘুম দেয়, তখন নির্ঘুম আমি মায়ের পাশে শুয়ে এসব আবার দেখি খোলা চোখের অন্দর পেরিয়ে বুকের কোঠর থেকে। ... ...
জীবনের এক অধ্যায়কে পিছনে ফেলে গাড়ি এসে দাঁড়ায় কাজের পরিসরে। দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের ভিতরে। শালিক পাখির গল্প লেখার জন্য আমার নামে পুরষ্কার উঠেছে। আজই অনুষ্ঠান। হাসিমুখে দাঁড়াই মঞ্চে, মাইক ধরে দু চার কথা বলি নিপুণ পেশাদারিত্বে। আজ এই দৃশ্য দেখে যারা সবচেয়ে খুশি হত, তারাই আজ নেই। এ যে কী শূন্যতা বলে বোঝানো যায় না। আত্মীয় স্বজনের গুঞ্জন কানে ভাসে, 'তোমার খুব মনের জোর।' 'তুমি তো একটা ছেলের কাজ করছ'। এদের কাছে অন্তর ঢেকে রাখি সঙ্গোপনে। অসুস্থ বোনটা বাবা মায়ের কাছেই থাকত। এখন তাকে নিয়ে এসেছি সব পাট চুকিয়ে। আর আমার দুটো মেয়ে নয়, তিনটে। মনে ভাবি সামলাতে পারব তো সব দায়িত্ব! ... ...
চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েনসাং-এর বর্ণনায় এই গুহামালার উল্লেখ আছে। সপ্তম শতাব্দীর পর থেকেই বৌদ্ধধর্মের প্রাসঙ্গিকতা ক্ষীণ হয়ে আসে, ফলে অজন্তার গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। ইসলামিক অভ্যুত্থানের পর এই শিল্পসম্পদ সম্পূর্ণ ঢেকে যায় গভীর জঙ্গলে এবং অনাদৃত পড়ে থাকে প্রায় ১১০০ বছর, ফলে গুহার ভেতরকার অমূল্য চিত্রমালার ক্ষতিসাধন শুরু হয় তখন থেকেই। গুপ্তধনের মত এই সম্পদের পুনরাবিষ্কার ঘটেছিল হঠাৎই, ১৮১৯ সালে এক ইংরেজ সামরিক ক্যাপ্টেন জন স্মিথ বাঘ শিকারের নেশায় পৌঁছে গেছিলেন গভীর জঙ্গলে ঢাকা অজন্তা গুহামালার উত্তরদিকের এক পাহাড়ের মাথায়। ওয়াঘুর নদীর অন্য পারে স্মিথ লক্ষ্য করলেন—জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে অস্পষ্ট এক গুহার আভাস। উৎসাহী স্মিথ স্থানীয় এক কিশোরকে সঙ্গী করে চললেন গুহামুখের অন্বেষণে। নদীর অপর পারের দুর্গম জঙ্গলের অনেকটা পার হয়ে আবিষ্কার করলেন সেই অনাদৃত সম্পদ। ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল এর খবর এবং ১৯৮৩-তে অজন্তা গুহামালা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পেল। ... ...
আমি চমকে প্রথমবারের মত তার দিকে ভালো করে তাকাই। তার ছাপা শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথায় ঘোমটা তোলা, ঘোমটায় কপাল ঢাকা আর দুই কানের পাশে আটকানো। ওর সঙ্গে আগে মুখোমুখি হইনি। টিয়াকে দেখে আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি ওরা মুসলমান। না এতে আমার আপত্তি কিছু নেই। আসলে এটা নতুন দেখলাম। আতি চাচা এত তো আমাদের বাড়িতে আসত। দাওয়ায় বসত, কিন্তু ঘরে বসতে দেখিনি। রান্নাঘরেও কোনদিন মুসলমান মেয়ে বৌকে কাজ করতে দেখিনি। আমি সহজ ভাবে টিয়ার মায়ের সঙ্গে আলাপ জমাই। ... ...