খুল্লনার ছমাসের গর্ভে রাজার আদেশে সাধু ধনপতির সিংহল যাত্রা। খুল্লনাকে ধনপতি বলে যায় মেয়ে হলে নাম দিতে শশীকলা, ছেলে হলে শ্রীপতি। "বারো বছরেও না ফিরলে তাকে পাঠিও দক্ষিণ পাটনে। সে যেন সব বন্দিশালা ঘুরে দেখে কার কপালে দিনরাত শিবপূজার চিহ্ন আঁকা।" মধুকর, দুর্গাবর, শঙ্খচূড়, চন্দ্রপাল, ছোটমুঠি, গুয়ারেখি এবং নাটশালা এই সপ্তডিঙ্গা চড়ে পিতা জয়পতির বহু যুগ পরে ধনপতি যাবে দক্ষিণ পাটনে। নৌকাদের সামনের দিক সুঁচালো আর পিছন দিক গোল। গায়ে কাঠের কারুকার্য্য। নৌমুখগুলির সিংহ, মহিষ, হস্তী, ... ...
যে ছায়ায়, যে রোদ্দুরেদিনগুলো কেটেছে..তারই মধ্যে একটি দিন।সেদিন বিশ্বভারতীর বাস মিস করলাম। সাইকেল চালাতে জানিনা। প্রথম বছর, হোস্টেল পাইনি। তাই সীমান্তপল্লীর শেষ প্রান্তে 'সূর্যাবর্ত' বাড়ির দোতলায়, আমরা দুই বন্ধু থাকি। বন্ধুটি সাইকেল নিয়ে আগেই বেরিয়ে গেছে।আমি এগোতে থাকি বালিপাড়ার মধ্যে দিয়ে। ভাবনার পালে দোলা লাগে যেদিকেই তাকাই। লাল মাটির পথ, দেওয়ালে আঁকা মাটির বাড়ি, গাছে গাছে সাদা শিম, সজনে ... ...
মাসের প্রথম সপ্তাহ:-এক মফঃস্বল শহরের সরকারি ব্যাংকের শাখায় উপচানো ভিড়। সকাল সাড়ে দশটায় পৌঁছে দেখা গেল তখনও সব কর্মীরা এসে উপস্থিত হতে পারেননি। মোটামুটি এগারোটা পাঁচ নাগাদ সব কর্মীরা নিজেদের কম্পিউটারে লগইন করতে গিয়ে টের পেলেন, লিংক নেই। সরকারি ব্যাংকে লিংক না থাকার দুর্ভোগ সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রত্যেকেই কমবেশি ওয়াকিবহাল। তাই ভিড় বাড়তে লাগল। আর তারই সাথে পাল্লা ... ...
কৌতূহল, যা জানি না সেটা জানার ইচ্ছা। মানুষ মাত্রেরই কৌতূহল থাকে, কারো কম কারো বেশি। মনুষ্যেতর প্রাণীদেরও থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক। যার কৌতূহল নেই, সে জড় পদার্থ। তবে এটা প্রকাশ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করলেই ভালো। আমার খরগোশ অ্যান্ডিকে দিয়ে শুরু করি। বাবা মারা যাওয়ার মাস দেড়েক পর আমি ওদের নিয়ে আসি। তারপর আমরা তিনটি প্রাণী অর্থাৎ আমি আর আমার দুই খরগোশের এক সঙ্গে জীবন শুরু হল। যখন এসেছিল দুই ক্ষুদের বয়স তখন এক মাসের একটু বেশি। বাপ রে বাপ, কী প্রাণশক্তি আর কৌতূহল! অ্যান্ডি আর স্যান্ডির মধ্যে অ্যান্ডি ধবধবে সাদা এবং বেশি দুষ্টু। স্যান্ডির ... ...
সত্যি করে বলো ত মা !———————সুপ্রিয়া চৌধুরী———————মা ! তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো ?কই ! ভাবছো না তো আমার কথা !একটু দেরী ফিরতে হলে বকে নিয়ে ধমকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকে তোমার চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতে অশ্রুধারায় !মূল্য দিতে পারিনি সেই ভালবাসার !তাই বুঝি মা চলে গেলে আকাশ মাঝে ?সত্যি করে বলো ত মা !এখন যখন দেরী করে বাড়ী ফিরিকিংবা যখন মন খারাপে লুকিয়ে কাঁদি,-তুমি ও কি মা আমার সাথে আমার হয়ে কেঁদে বেড়াওওই আকাশে ?তাই তো আমি মাঝে মাঝেই আকাশ পানে চেয়ে থাকি।দিনের আকাশ বড্ড খারাপ, কড়া মেজাজ-আমার থেকে সারাক্ষণই তোমায় যেন লুকিয়ে রাখে !রাতের আকাশ মায়ায় ভরা ঠিক যেন সে তোমার মতন ! তা'তেই খুঁজে বেড়াই ... ...
আকাশের থেকেও বড় তোমার আমার ভালোবাসা।সূর্যের আলোর থেকেও প্রখর তোমার আমার ভালোবাসা।চাঁদের আলোর চেয়েও স্নিগ্ধ তোমার আমার ভালোবাসা।সমাধির চেয়েও শান্ত তোমার আমার ভালোবাসা।বসন্তের থেকেও রঙিন তোমার আমার ভালোবাসা।স্বর্গের থেকেও সুন্দর তোমার
“জীবনভর যে ভিড় ছিল সরে গেছে। আজ একা আমি জিৎভূমে। রাত্রিকাল। ঝড় উঠল। শুয়ে আছি। শুয়ে শুয়ে শুনছি হাওয়া ছুটল। এখানকার ঝড়ের ভাষা জানি। শুকনো হিজল পাতাগুলি খরখর করে উরে চলল। গলগলির সরু ডালগুলি ছিটকে পড়ল। শিমূলের কচি ডালটা ভাঙল বোধ হয় --- হালকা গাছ। না, এ ঝড় থাকবে না বেশিক্ষণ। বৃষ্টি নামল। এবারে শুকনো পাতাগুলি ভিজে উঠল। ভিজেপাতা সাড়া তোলা না। চুপ ... ...
সাত সকালে কালীবাবু উত্তেজিত গলায় বললেন, 'আরে প্রকাশবাবু খবর শুনসেন নাকি .... দেশবন্ধু পার্কের ওই দিকে একটা মার্ডার হইসে। মুসিপাড়া থানা থেকে ত্রিদিব বক্সী ফোন করসিল ... 'প্রকাশ ঘড়াই দ্রুত এ ঘরে এলেন। বললেন, ' তাই নাকি ! শুনিনি তো ... '---- ' কাল অনেক রাতে নাকি একটা জওয়ান সেলেরে শ্যুট কইরা মারসে। আমাদের কাছে খবর আসার আগেই নাকি হেডকোয়ার্টারে খবর গেসে ... ...
জীবন তরঙ্গ - পর্ব ২৫ বেশ কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকার জন্য আড্ডায় গিয়ে নয়নকে অনেক গাল শুনতে হল। তখন পরের দিনের মোহন বাগান ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ নিয়ে আড্ডা সরগরম। আই এফ এ শিল্ড ফাইনালে দুই প্রধান মুখোমুখি হচ্ছে। পিন্টু সেই বছরেই ইস্টবেঙ্গলে সই করেছে। দলের প্রথম এগারোয় জায়গাও করে নিয়েছে। লিগের খেলাগুলোয় অনেক গোল করেছে। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ... ...
জীবন তরঙ্গ - পর্ব ২৪ নয়নের বাগবাজারে থাকাটা নির্ধারিত সময়ের থেকে কিছুটা বেড়ে গেল। কলেজ খুলে গিয়েছিল, ফলে শেষ দু দিন মামার বাড়ি থেকেই কলেজে গেল। নয়ন এদিক ওদিক গেলেও আড্ডার টানে দু এক দিন বাদেই ফিরে আসত। বাইরে বেড়াতে যাওয়া ছাড়া এতদিন রহড়ার বাইরে খুব কমই থেকেছে। আড্ডার টানকে উপেক্ষা করে এবারে রইল। কারণ একটাই, ঈজা। মেয়েটা ... ...
জীবন তরঙ্গ -পর্ব ২৩ পরের দিন নন্দ নটার সময় স্কুলে বেরিয়ে গেল। জলখাবার খেয়ে চায়ের কাপ নিয়ে নয়ন বারান্দায় চেয়ারে বসেছিল। এটা নয়নের খুব পছন্দের জায়গা। ছোটবেলায় এখানে বসে একমনে বাইরের জগতটাকে দেখত। তখনো দেখছিল। পরিবেশ, পরিস্থিতি, ঘর-বাড়ি, সব ধীরে ধীরে কেমন পাল্টে যাচ্ছে। যদিও দক্ষিণ কোলকাতার তুলনায় উত্তরে এই পাল্টে যাওয়ার গতি অনেক কম। দু চারটে ফেরিওয়ালা ... ...
জীবন তরঙ্গ - পর্ব ২২ গালুর চলে যাওয়ার কষ্টের তীব্রতা একটু কমতে না কমতেই আড্ডায় এল আর একটা ধাক্কা। কচিদা রহড়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কচিদার পরিবারে কেবলমাত্র ওর মা ছিল। চৌধুরি পাড়ায় মায়ে ব্যাটায় থাকত। চাকরি বাকরি না পেলেও কচিদা কখনো বসে থাকেনি। সকালে কাগজ বিলি থেকে শুরু করে সারাদিন কিছু না কিছু করে রোজগারের চেষ্টা করত। মায়ের পেনশন আর ওর রোজগার, দুয়ে মিলে সংসার চলে যেত। অবস্থা সেরকম ... ...
জীবন তরঙ্গ - পর্ব ২১ নয়ন আর রজতের পার্ট ওয়ান পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সামনে কিছুদিন অখণ্ড অবসর। এই সময়ের দিনচর্চায় পড়াশুনার কোন জায়গা নেই। হাঁড়ি পুকুরের আড্ডায় ত্ততদিনে দুজনে স্থায়ী সদস্যের স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। দিনের অনেকটা সময় ওখানেই কাটে। পরীক্ষা শেষ হবার পর নয়ন কয়েকদিন পিসির বাড়িতে গিয়ে ছিল। অনেকদিন পরে গেল, তাই নিয়ে পিসিমার অনেক অভিমান, অভিযোগ, নয়নকে সামলাতে ... ...
তোমার গরু-ছাগল মারলে খারাপ লাগে, কিন্তু গাছ কাটলে কেন লাগে না? মানুষের জন্য যদি হিউম্যান রাইটস থাকে, তবে বাকি প্রাণীরা কী করল? মানুষ আত্মহত্যা করলেও দোষী ঠাউরানো হয়, তবে পিঁপড়ে, মশা, আরশোলা খুন করার জন্য যে বিজ্ঞাপণ
গব্বর সিং ছিল এলাকার বস। সে স্বয়ং পুলিশের জেলার তথা ঠাকুর সায়েবের হাত কচাং করে কেটে নিয়েছিল। তারপরও তিনি রবীন্দ্রনাথের মতো আলখাল্লা পরতেন, কিন্তু তার হাতগুলো হাওয়ায় উড়ত। তাতেও ঠাকুর হাল ছাড়েননি। কারণ পেটকাটা মূর্ধণ্য ষও ব্যঞ্জনবর্ণ, আর হাতকাটা পুলিশও পুলিশও। এইরকম সময় একদিন জানা গেল, গব্বর রাতের অন্ধকারে বাসন্তীর বেডরুমে উঁকি দিয়েছে। বাসন্তী চিল্লে পাড়া মাথায় করছে। কিন্তু পড়শীরা কেউ নেই, তারা খুব সংস্কৃতিবান। বাসন্তীকে ফেলে সব মমতাশঙ্করের নৃত্যনাট্য দেখতে ... ...
"গল্প লেখা বা বলার দেবতা বলল - তা হলে তুমি একটা চির -অতীতের গল্প লেখো বা বলো না কেন?" এই বাক্য দিয়ে, পৃথিবীর একটি প্রাচীনতম আখ্যান ভিত্তি করে এই বই শুরু হয়। ওল্ড টেস্টামেন্টের গল্পগুলো তৈরি হয়েছিল ১২০০০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথকের জিভে ও উচ্চারণে, প্রাচীন হিব্রু বা আরমাইক এ। ৭০ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম ... ...
জীবন তরঙ্গপর্ব ২০ দুজনেরই বেশ কয়েকদিন অফিস কামাই হয়ে গেল। রণজয়ের ছুটি পাওনা আছে, তেমন একটা সমস্যা নেই। রাশির চাকরি তো এক বছরও হয়নি। বসেরা ভাল, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে ছুটি মঞ্জুর করে দিয়েছে। বাবা বাড়ি চলে এসেছে, আর অযথা কামাই করার কোন অর্থ হয় না। দুজনে একসাথেই অফিসে বেরোয়, ফেরে আলাদা আলাদা সময়ে। অফিস যাওয়ার পথে বাবার খবর নিতে রাশিকে নিয়ে রণজয় ... ...
জীবন তরঙ্গ পর্ব ১৯ রাতে শোয়াটা এখনো একঘরেই আছে। পরিবর্তিত পরিবেশ, পরিস্থিতির প্রভাব দৈনন্দিন যাপনের অনেক ক্ষেত্রে পড়লেও বিছানা এখোনো একটাই আছে। বেডরুমের লাগোয়া একটা অ্যান্টি চেম্বারের মত আছে। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর রোজ প্রায় ঘন্টা খানেক দিগ্বিজয় ওই ঘরে বসে ওকালতির কাজকর্ম করেন। কণিকা খাওয়ার পর টুকটাক কাজকর্ম সেরে, একটু টিভি দেখে তারপর ঘরে ... ...
জীবন তরঙ্গ পর্ব ১৮ পছন্দসই একটা আস্তনার সন্ধান পাওয়া গেল। রণজয়ের এক ছাত্রের বাবা ব্যবস্থা করে দিলেন। তাঁর এক বন্ধুর বাড়ি। বন্ধুটি থাকেন কোলকাতায়, ছুটিছাটাতে এখানে এসে দু এক দিন কাটিয়ে যান। একজন মালি বাড়িটার দেখাশুনা করে। বাগানওয়ালা সুন্দর দোতলা বাড়ি। এক তলায় দুটো ঘর, রান্নাঘর, স্নানঘর আর একটা বড় বারান্দা ভাড়াটিয়ার জন্য বরাদ্দ হল। বাড়ির চারপাশে অনেকটা ... ...
জীবন তরঙ্গ - ১৭ এমএসসিতেও রণজয় ফার্স্ট ক্লাস পেল। পাশ করার অল্প সময়ের মধ্যেই একটা আধা সরকারি সংস্থায় ভদ্রস্থ একটা চাকরি লেগে গেল। রাশি তখন থার্ড ইয়ারে পড়ে। নির্মাল্য খুব খুশি এবং অনেকটা নিশ্চিন্ত হলেন। ছেলে ভাল জায়গায় চাকরি পাওয়াতে দিগ্বিজয়ও খুশি হয়েছিলেন। তবে যথারীতি তার বহিঃপ্রকাশ ছিল খুব সীমিত। রণজয় চাকরি পাওয়ার খবরটা প্রথমে মাকে জানিয়েছিল। কণিকা খুশি হয়ে অনেক আদর আর আশীর্বাদের পর ... ...