ঠাকুমা কাক ভোরে উঠতেন। তারপর চান করে, সূর্য প্রণাম করে রোজকার পূজা করতেন। বাতাসা প্রসাদে আমাদের দিন শুরু হত। আমরা ভাইবোনেরা ছিলাম একে অপরের বন্ধু, সবচেয়ে স্নেহময়ী বন্ধু - ঠাকুমা কখনো ঝুলি থেকে গল্পের মণিমাণিক্য উপহার, কখনো নাটুকে ছড়া বলতেন যেমন - 'নাকচাবি গহনা কবে দেবে বলো না? যদি বল কাল দেবো ভোরে উঠে চলে যাবো, বলে যাবো না। ' ... ...
একটানা কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির পরে মেঘমুক্ত নীল আকাশে আজ সূর্যদেব স্বমহিমায় বিরাজ করছেন। রোদ্দুরের দেখা পেয়ে প্রকৃতিতে কেমন একটা ব্যস্ততার ভাব। গাছেদের পরণে ঝকঝকে নতুন পোশাক। বুলবুলি, পাপিয়া, কুব, কোকিল, হলুদ বসন্তবৌড়ী ছাড়াও অচেনা পাখিদের প্রাত্যহিক আনাগোনা আমার ঘরের প্রায় লাগোয়া জঙ্গলে। বেশ কয়েকদিন পরে আজ তাদের কর্মব্যস্ত দিনের শুরু হল। প্রজাপতিরা তাদের রঙবেরঙের ডানায় রোদ্দুর লাগিয়ে এ গাছ থেকে সে গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে। ... ...
আদিম মানুষ ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। তারা শিকার করতো বন জঙ্গল থেকে ফলমূল আহরণ করত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিকার ও জঙ্গলের ফলমূল যথেষ্ট পাওয়া যেত না। তখন খাদ্যের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে উদ্ভব হলো কৃষির।.যে সমস্ত এলাকায় তখনও যথেষ্ট শিকার ছিল তারা শিকারি যুগেই পড়ে রইল। কৃষি অর্থনীতি চালু হওয়ার সাথে ধীরে ধীরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উপাদান যুক্ত হলো। সেটি হল সারপ্লাস বা উদ্বৃত্ত।.এই প্রথম মানুষ তার প্রয়োজনের অনেক বেশি পণ্য উৎপাদনে সক্ষম হলেও যা ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখা সম্ভব যেটা শিকার যুগে সম্ভব ছিল না। ধীরে ধীরে মানুষ দেখল এককভাবে শস্য সংরক্ষণের চেয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে করলে সুবিধা হয়।.এই কেন্দ্রীয়ভাবে ... ...
স্কুল যাওয়ার সময় খড় বাঁধা থেকে শুরু করে দেখতে পেতাম। কিংবা বাইরে বেরুলেই দেখতাম পুজোর মাস দেড়-দুই আগে থেকে— একমেটে, দু’মেটে...। বাড়ির পাশেই বারোয়ারী দুর্গাদালান। অথচ কখন যেন মৃৎশিল্পীরা খড়ি মাখিয়ে চলে যেতেন! তারপর থেকে রোজ অপেক্ষা করে থাকতাম কবে রং করতে আসবেন। রং এর দিন থেকে শুরু হতো আমাদের হৈ চৈ খেলা। সেদিন থেকে শুরু করে আমরা পাড়ার ছোটরা সবাই সারাক্ষণ দুর্গাদালানেই হৈ চৈ করতাম। শুধু পাড়াই নয়, গ্রামে একটাই পুজো। বড়োরাও থাকতেন। আমরা ছোটরা কত রকম নতুন নতুন খেলা আবিস্কার করে খেলতাম। কখনো কখনো পাড়ার বড়োদের বকাও খেতাম। রং করা থেকে শুরু করে মূর্তি সাজানো দেখা, সে এক অন্য রকম ... ...
আদর্শ বাঙালির সিক্স প্যাক বা সেক্সী প্যাক কিছুই নেই। ভাতখেকো তাই ওপরে নিচের অংশটা সরু, পেটের দিকটা মোটা তাই আদুরে নাম পটলা। চায়ের দোকান থেকে খাবার টেবিলে ভীষন প্রতিবাদী তাই উপাধি পেয়েছি নকশালি। আরে একসময় দেখতেন না, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেই আপনি হয়ে যেতেন মাওবাদী তেমনিই একটা ব্যাপার। তবে আমি নেতা মন্ত্রীদের বিরোধিতা তো দূরে থাক পাড়াতুতো রাজনৈতিক টিকটিকি গিরিগিটিদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলি নি কখনও। যত হম্বিতম্বি চেনাজানা মহলে আর কি। ... ...
#পাহাড়যাপন আতরের দোকান করে যারা, তাদের কাছে দোকানের বাইরের পৃথিবীটা বাসি বলেই মনে হয়। পুষ্পের সৌরভ পেলেও যেন মনে হয় জোলো, ভালো মিষ্টির সুবাসও মনে ধরে না। সব কিছুই বড় অপরিশোধিত। আতরের দোকানটা যেন আরেক জগত, গন্ধের হাট বসেছে সেখানে। কোনওটা পারস্যের ফুলের আতর, কোনটা হিমালয়ের আয়ুর্বেদিক শিকড়ের গন্ধ। প্রতিটি ফুল নিজের ইতিহাস জানায়, বলতে চায় নিজের গল্প।কয়েকজন কারিগর বছরের পর বছরের ধরে এক্সপেরিমেন্ট করে যায় নতুন সুগন্ধের আশায়। দক্ষ হাতে গন্ধ তৈরি করে ওস্তাদ তারা। কিন্তু যে গন্ধ শেষমেশ তৈরি করা যায় না, সেই আতরের কারিগররা হীনমন্যতায় ভোগে। ব্যর্থতা স্বীকার করতে চায় না। মাথার চুল খামচে ধরে চেষ্টা চালিয়ে যায় ... ...
আজ মহালয়া। দূর্গার শুটিং এ এখনো প্যাক আপ হয়নি। ফাস্টফুড খেয়ে বেঁচে থাকা অসুরগুলোর অম্বল হয়েছে।মা অন্নপূর্ণার, হাতের তেলেভাজা মুড়ি খেয়ে। নন্দীভিঙ্গী খুব খুশি। চপশিল্প হবে না আর কৈলাশ-এ। ও ব্যাটারা কাজ করতেই চায় না। ভোটের সময় রিগিং করবে আর কাটমানি খেয়ে নেশাভান করবে। বেশ মজা শিবের, বৌ ঘরে না থাকলে যা হয় , আরকি। খোলা হাওয়ায় বসে "এক টানেতে যেমন তেমন " বলে শিববাবাজি একটা সুখটান দেবে বলে ঠিক করেছে। এমন সময় কাঁচুমাচু মুখ করে , সাদা চুলো বুড়ো ব্রহ্মা হাজির। শালা কিপটে, চুলে কলপ করতে কি হয়? জামাই বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করে। তবু হেসে শিব বললো" বলল হে বোম্ভা ... ...
লেখাটি তুলে নিলাম
হাভাতে বুড়িটি ভাতের সন্ধানে কোনো এক আত্নীয় সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন। তার জন্ম এপারে উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রংপুরের মঙ্গা পীড়িত কোনো এক দূর্গম গ্রামে। তাই আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না, অনিবার্য এক অচিন ক্ষুধা আজন্ম চিটচিটে ঘামের মতো লেপ্টে থাকে তার জঠরে, গতরে এবং সর্বাঙ্গে। বুড়ির জীবনের গল্পটিও তাই মঙ্গা উপদ্রুত অন্চলের অন্যান্য বুড়ির মতো অতি সংক্ষিপ্ত এবং স্যাঁতসেঁতে টাইপের পুরনো। তাই আসুন, এই পর্বটুকু আমরা বরং এক বাক্যেই সেরে নেই : ১৫ বছর বয়সে এক ক্ষেতমজুরের সঙ্গে বিয়ে, বছর না ঘুরতেই বাচ্চা, পরের বছরগুলোতে আরো আরো আন্ডা-বাচ্চা, স্বামী আরেকটি বিয়ে করলে মেয়েটি পাঁচটি ছেলে-মেয়েকে একাই ক্ষেতমজুরী করে ও চেয়ে-চিন্তে বড় করে, মেয়ে-গুলোকে সাধ্যমত অন্যত্র ... ...
।। *বুড়ি ছুঁয়ে যাই*।। ।। *জলছবি*।। (১) । । প্রথম পর্ব। । মাধু, মাধু, এই মাধু।। কোথায় গেলি,শুনতে পাস না।অনেকক্ষণ থেকেই সেতারের তারগুলো অন্যমনস্ক হয়ে নাড়াচাড়া করছে মাধু, যার ইস্কুলের পোষাকী নাম মাধবীলতা। আচারের বোয়েমগুলো নামিয়ে আন তো মা। বেলা যে পড়ে এল। শীত আসি আসি করছে, পড়ন্ত বিকালের রোদ্দুর এর তেজ কম, মাধবীলতা ওরফে মাধু বসেছিল মাদুর পেতে সেতারটি নিয়ে রেওয়াজ করতে, কার্তিক পূর্ণিমার পরে একটা পাড়ারই অনুষ্ঠানে বাজাতে হবে মালকোষ, ও বাড়ির রবিদা বলেছে সামনের সপ্তাহে তবলার সাথে একবার ঝালিয়ে নিতে হবে, লোকে বলে মাধুর হাতে সুরের যাদু আছে। গেলবারও বাজিয়েছিল রবীন্দ্র ভবনে বৃন্দাবনী সারং, কাগজেও উঠেছিল মাধুর বাজনার ছবি। কিন্তু মনটা ... ...
নানারকম যা চোখে পড়ছে। ইন্টারেস্টিং লাগছে। মানুষের সার্চ ফর ডিগনিটি যতদিন আছে, সম্মানের সঙ্গে বাঁচার ইচ্ছা ততদিন আছে , ততদিন সৃজন আছে।এগজিবিট ১: সংগ্রহ পি মজুমদার রোড, হালতু অঞ্চল, দক্ষিণ পূর্ব কলকাতা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। আঁকার ক্লাসের পোস্টার, জলের মোটা পাইপের গায়ে,ইলেকট্রিকের বাক্সের গায়ে আঁটা ।
দেবীপ্রসাদ স্মরণে~~ তিনি বলেছিলেন ~ “কর্মের কষ্টি পাথরে যে জ্ঞানকে যাচাই করা হয় নি, সে জ্ঞান জ্ঞানই নয়। তার কোন মূল্য নেই।’’
সভ্যতা দিয়েছে স্থান মোরে কৃত্রিম অরন্যে / বট-বৃক্ষ থেকে আজ হয়েছি আমি পটের-বৃক্ষ
চাষাগুলোকে পিষে দিয়েছে। বাঙালি মিডিয়া শাহরুখের পেছন পাকা ছেলে নিয়ে খুব ব্যস্ত...
ভাদর-এর বাদলমেলা গেছে আকাশ পারে, / এসেছে আশ্বিনের শান্ত উৎসবের বেলা। / সোনালি রোদ্দুর-আলোর অলঙ্কার পরে / করছে আকাশ মেঘের সাথে খেলা।
এসো এসো সখা তর্পণ নিই সেরে;কিছু আত্মা প্রতিবারই যায় ফিরেলালন করেনি সন্তান যারাপাহাড় সরাবে বলে!- কিম্বা ধরো এই গঙ্গারই কোলে-এইতো সেদিন,আমরাই যাই ভুলে!-ভেসেছে পলাশ হাজারে হাজারেহাওয়ার ভেলাতে চড়ে! আরো কত সব আত্মা রয়েছে-জমে জমে আজ পাহাড় হয়েছে-এসো এসো সখা তর্পণ করি-পরমাত্মীয় হয়ে! এই পৃথিবীরও বয়স হয়েছেদুচোখে তার বরফ গলেছে;হয় যদি হোক দেরী -তবুও স্বপ্ন বন্ধ কোরো না ফেরি। ... ...
যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না সদ্য জয়েন করেছি স্কুলে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন। স্কুল থেকে তিন কিলোমিটার আগে এক ব্যাটা বেবুনপাজিহতচ্ছাড়া মুরগি আমার চলন্ত বাইকের সামনের চাকা আর পেছনের চাকার মাঝের ফাঁকটাতে ঝাঁপ দিলো। একদম ডেলিবারেটলি। উইদাউট এনি প্রোভোকেশন। ডিপ্রেশন এ্যান্ড ওয়ার্কপ্লেস স্ট্রেস ছিলো মনে হয়। দীর্ঘদিন ধরে কেউ ওকে রান্নার চেষ্টা করেনি। তাই হয়তো ঝাঁপ।পেটের ওপর দিয়ে চাকা গেলে কি আর মুরগি বাঁচে ? মুহূর্তে হৈ হৈ। দেড় মিনিটে ভিড়। সাড়ে চার মিনিটের মধ্যে আমি ঘেরাও।ড্রোন দিয়ে ভিডিও তুললে সে যে কি অসাধারণ হতো, লং শটে অজস্র কালো কালো মাথার ভিড় দিয়ে শুরু করে মুরগির শবদেহের ... ...
দক্ষিণ ফ্রান্সের রোকেনব্রুন শহর। উত্তাল সফেন সমুদ্র যেনো প্রতি মুহূর্তে চুম্বন এঁকে দিচ্ছে শহরের ওষ্ঠে। শান্ত সমাহিত অথচ প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর দক্ষিণ ফ্রান্সের এই শহর। সালটা ১৯৩২। রোকেনব্রুন শহরের একপ্রান্তে প্রিমেভেরা নামক একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতে এলেন হ্যান ভা মীগরে নামের এক ব্যক্তি, আর তারপরেই রহস্যের জাল ঘনীভূত হয়ে উঠলো প্রিমেভারা কে নিয়ে। কিন্তু কে এই - হ্যান ভা মীগরে? চিনতে না পারারই কথা, কারণ তখনও মিডিয়ার স্পটলাইট মীগরেকে নজরবন্দী করতে পারে নি। সেই সময় তিনি আপাত অখ্যাত এক চিত্রশিল্পী। যদিও পরবর্তীতে এই মীগরেই হয়ে উঠেছিলেন আমস্টারডামের ধনকুবেরদের মধ্যে অন্যতম। তবে শুধু এটুকু বললে মীগরে সম্পর্কে অনেককিছুই না বলা থেকে যায়। ... ...
চোখে চোখে বলবো কথা, লজ্জা পাবো একটু খানি, / কলম-দোয়াতে লিখবো চিঠি, পার্কার পেন অনেক দামি।
ফিরে এসেছি, না না গুরুচন্ডা৯তে নয়, দেশে। এসে দেখি শহরটাই শুধুমাত্র নয়, বন্ধুবান্ধব এর চিন্তাভাবনা বদলে গেছে। প্রিয় বন্ধুরা আমাকে বয়কট করেছে, প্রচার চালাচ্ছে, আমি নাকি একটা রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়েছি। মানে জার্সি বদলেছি। কারণ আমি এখন দেবদেবী নিয়ে বেশি লেখালেখি করি তাই, আচ্ছা কোন দেবদেবী কিভাবে কোন রাজনৈতিক দলের বাপের সম্পত্তি হয়ে গেল? দেবদেবীর কথা লিখি কারণ লোকাল দেবদেবীর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের অনেক ইতিহাস। ... ...