মোটাসোটা হলে কী হবে, ছোটবেলায় সারা বছরে অজস্রবার জ্বর হতো আমার। তার মধ্যে দুটি দিন অবশ্যম্ভাবী ছিল। একবার এই ষষ্ঠীর দিনে, আর একবার আমার জন্মদিনে। বোধহয় এতবেশি প্ল্যান করতাম বন্ধুরা আসবে, সবাই মিলে কী কী মজা করবো, সেই জন্যই। নিজেরই নজর লেগে যেতো! বাবা বলতেন, সিজ়ন চেঞ্জ। সর্বপল্লীর পুজোমন্ডপের বাঁশের কাঠামো চোখে পড়তেই আর পড়াশুনোয় মন বসতোনা তেমন। অঙ্কের বইখাতা খুলে উদাস হয়ে বসে থাকতাম। বাইরে নীল আকাশ, সবুজ গাছপালা কে যেন সোনার জলে ধুয়ে দিয়েছে। কার কটা জামা হলো পাড়ায় বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা। আমাদের কাপড় কিনে দর্জি দিয়ে জামা বানানো হতো, রাঙা টেলার্সে। কখনোই সেগুলি ষষ্ঠীর আগে হাতে ... ...
বউবাজার থানায় বিদ্যুৎ তরফদারের সামনে বসে একাগ্রচিত্তে কিয়স্ক রেজিস্টারের একফালি ছবির মধ্যে ডুবে গেল । প্রায় তিন মিনিট কেটে গেছে । বিদ্যুৎ নিজের টেবিলে বসে এটা ওটা ফাইল ওল্টাচ্ছে । কলতান আপনমনেই বলে উঠল , ' কারেক্ট কারেক্ট ... কোন ডাউট নেই .... খালি চোখেই পরিষ্কার .... 'কথাটা বিদ্যুতের কানে গেল । সে বলল, ' কি হল কলতানদা ? '---- ' না কিছু না .... এন্ট্রি আর এগজিট-এর হ্যান্ডরাইটিং পরিষ্কার আলাদা । এর জন্য কোন এক্সপার্টের দরকার নেই ।'বিদ্যুৎ ফাইল বন্ধ করে বলল, ' তার মানে সতীনাথ দত্ত এই কথাটা অন্তত সত্যি বলেছে । '----- ' হ্যা.... তাতেই আমাদের চিন্তা আরও ... ...
সেসব হাফপ্যান্টের কাল। জীবন ও ফেস্টিভ্যাল এগরোলময় ছিল। তার আগেরটাও আমরা দেখেছি(দইবড়া, মুগের চপ ইত্যাদি)। হাফপ্যান্ট এখন ধেড়ে, বুড়ো ও বুড়িরাও পরে। এবং ফুলপ্যান্ট পরা খোকাও খুবই মেইনস্ট্রিম। এগরোল থেকে গেল। জেনারেশনটির সাদা চুলদাড়ি আসলে অকালে পেকেছে এই বিশ্বাস আঁকড়ে থাকলেও অস্বীকার করে লাভ নেই, যৌবন যদি বা থাকে তার লাস্ট ফেজ চলছে। যাদের বৌ/বর ও ছানাপোনা আছে তারা হা-ক্লান্ত। এইসব না থাকার পরেও সুনন্দ আঃ-ক্লান্ত। পিঠের ব্যথা, চটকে যাওয়া ঘুম ও লটকে যাওয়া প্ল্যান। ফেস্টিভ্যাল বয়ে চলেছে। 'দুটো এগচিকেন। শস দেবেন না।' এই ফিলজফিটা আমরা এই প্রজন্মে পেলাম। দ্বিতীয় এগচিকেনটি কার? উত্তরের জন্য আত্মবলিদান দেওয়া চিকেনটিকেই খুঁজতে হয়। খেপে ... ...
একটা নারীর গন্ধে সন্ধ্যা তারা ফুটে উঠে,রাত্রির শিয়রে খুলে যায় সমস্ত পানশালার দরোজা,কামিনী ফুটে, ছলনাময়ী কামিনী! গন্ধের মাঝে লুকিয়ে রাখে পৃথিবীর আদি ছলনা।একটা নারীর গন্ধে একটা পুরুষ আত্মহত্যা করেপানশালা থেকে ফিরে এসে সে হয়ে যায় লোডেড পিস্তল, যার ট্রিগার তার বুক বরাবর তাক করা।
শৈশব অথবা কৈশোরের প্রাক্কালে যখন কোনো দুষ্টুমি কিংবা অন্যায় করে মিথ্যা কথা বলে অন্যায়টি ঢাকার প্রচেষ্টায় সচেষ্ট থাকতাম অথবা ঠাকুরের পুজোর থালার থেকে লুকিয়ে মোদক কিংবা নাড়ু চুরি করতাম, ঠাকুমা এবং মা-কাকিমারা চেঁচিয়ে উঠতেন, 'তোর কী কোনো ভয়-ডর নেই ! চুরি করে আবার মিথ্যা কথা বলছিস ! কেউ ঠেকাতে পারবে না, রসাতলে যাবি তুই।' তখন ভাবতাম 'রসাতল' আবার কি ? রস মানে তো খেজুরের রস, আখের রস, মিষ্টির রস। আর 'রসাতল' মানে রসের অতল। 'রসাতল' কেন খারাপ হবে ... ...
অনাবিস্কৃত ছায়াপথ ধরে হেঁটে চলি আমি, অনন্তে মিশে যায় শ্বাস-আমাকে ঘিরে ধরে একান্ত আমারই দেহঘ্রাণ-মাথার ভিতর বাসা বাঁধে, নক্ষত্রের ঝাঁক-ধূমকেতু-দিগন্তরেখা-ফসলমাঠ-মাছবাজারআর,নষ্ট পণ্যের ক্লান্ত বিনষ্ট দরাদরি। তবু, হে ছায়াপথ, রক্ষা ক'রো আমার অভীপ্সা,সঙ্গোপনে প্রেমিকার মতো। বুকের মাঝে অনাবিস্কৃত
(২) ঘুম হবে না জেনে বিছানায় গেলে, কোন রকম উদ্বিগ্নতা থাকে না। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি এই ব্যাপারটা অনেকটা বৃষ্টি হবে না ভেবে, ছাতা না নেওয়ার মতো। অবধারিত, সেদিন বৃষ্টি হবেই, আর শুধু তাই নয়, সেই বৃষ্টিতে পড়ে ভিজতেও হবে। তেমন ভাবেই, ঘুম হবে না জেনেই, কখন ঘুম এসে গেল, বুঝতেই পারিনি। বেলা প্রায় ন’টা নাগাদ ... ...
মেন রাস্তাটা থেকে সরু সাপের মত লাল মাটির যে মেঠো রাস্তাটা গ্রামের ভেতর ঢুকেছে ওখানেই শেষ বাড়িটা রতন ঢাকির। গতবার যেবার ইয়া বড় ঠাকুর হয়েছিল শহরে, সেবার রতন ঢাকি কথা দিয়েছিল ছেলে বুধন কে, পরের বার ঠিক সাথে করে নিয়ে যাবে। ঘন্টা বাজাতে। ওই দূরে। কলকাতা শহরে। বুধন তখন সরকারি খিচুড়ি ইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণী। বুধন জানে শহরে স্বপ্ন ওড়ে, মেয়েরা নাকি ছেলেদের প্যান্ট পরে ... ...
সম্প্রতি কয়েকটি বাংলা সংবাদপত্রে বেশ কিছু প্রতিবেদনের সম্মুখীন হচ্ছেন জনসাধারণ, ‘বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা কি বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন’, ‘বুদ্ধিজীবীরা নীরব কেন ?’ প্রত্যেকটি প্রবন্ধেই উল্লিখিত একটি একই ধরণের বাক্য ‘স্বাভাবিক ভাবে বাঙালি যে লেখক, কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, নাট্যকার এই শ্রেণিটার ওপর বাংলায় যে কোনও অনৈতিক ঘটনা ঘটলে অনেকটা তাকিয়ে থাকেন।’ কিম্বা ‘বুদ্ধিজীবী বলতে একটি কাল্পনিক বন্ধনী তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে আছেন শিল্পী, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকার, নাট্যব্যক্তিত্ব, অভিনেতা প্রমুখ।’ অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী বলতে সাধারণ বাঙালি এঁদের বোঝেন এবং আশা করেন এনাদের সরবতা অনৈতিক ঘটনার বিরুদ্ধে। বুদ্ধিজীবী বলতে আমার এই ক্ষুদ্র মস্তিস্কে যেটি বোধগম্য হয়, বুদ্ধিবলে যে বা যারা জীবিকা নির্বাহ করেন। ... ...
একটা রাতের ঘাসে শুয়ে আছি। জল বসন্তের মতো সমস্ত শরীর ভেদ করে একেকটা নতমুখ বের হয়ে আসছে। একেকটা মুখ একেক রকমচাওয়ার বিনিময়ে না পাওয়ায় ঝুম বৃষ্টি এক ঝাঁক মৌমাছির মতো জেঁকে বসে আছে ঠোঁট আর চোখের কিনারে। আলো ফুটলেই চোখ আর ঠোঁট ঢুকে পড়ে আরেকটা নতমুখে। যে মুখ এখনো অঙ্কুরিত আছে ঝড়ের গর্ভে। ... ...
সুকিয়া স্ট্রীটের এপকন টেস্টিং ল্যাবে কলতানের অনেক বছরের যাতায়াত । ল্যাব চালায় বাদল সাহা । পিওর কেমিস্ট্রিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এস সি । বাষট্টি বছর বয়েস ।কলতান বলল , ' এই স্যাম্পেলগুলো রাখ । কাল দুপুরের মধ্যে রিপোর্ট চাই । টিসু পেপারে মোড়া দুটো বোতল সবুজ রঙের বোতাম এবং ক'টা বোতল ভাঙা কাঁচের টুকরো বার করে বাদলকে দিল । বলল, ' আরও দুটো ভাইটাল টেস্ট আছে । ওগুলো পুলিশের ফরেনসিক সেল ক্যারি আউট করবে .... '------ ' খুব ইন্টারেস্টিং কেস মনে হচ্ছে । '----- ' কেস তো সবই ইন্টারেস্টিং । ইন ফ্যাক্ট কেস যত ইন্টারেস্টিং, তত ঘোরাল । ভীষণ টাফ ... ...
কতবার তো সমন পেয়ে ছুটে ছুটে গেছি- সেইসব জোনাকিরা লাল চেলি গায়ে মাখে; তখন সন্ধ্যা তারা পশ্চিম আকাশে;দেখেছি- আমিষ ফুলগুলো,পাপড়ি বিছিয়ে রাখে। আগুন খায় গিলে ; ধাতুমলে ভেসে যায়- উদাসীন; প্রাগৈতিহাসিক কামারশালায়।
বাজ পাখির মতো চুমু খেয়েছিলো একবার,তড়িৎ গতিতে মিলিয়ে গেলো সে চিহ্ন,এ এমন এক ফুল যেনো —তার সুরভি পৃথিবীতে অমর হয়ে গেলোযার পাপড়ি ছিলো নরোম টকটকে লালতৃষ্ণার্ত মাঠের মতো দিগন্তের প্রান্তর,আশ্বিনের জল, নোঙর ফেলা জাহাজের বন্দর।আবার ক্ষনিক দেখা পেলে সে ফুলেরঠোঁটে ঠোঁট ঘষে জেনে নিতাম মুক্তো কতটা গভীরে থাকে ডুবন্ত ঝিনুকের। বাজ পাখির মতো সে চুমু খেয়েছিলো একবারএই ছিলো প্রথম, এই ছিলো শেষবার।। ... ...
সন্ধে সাতটা বাজে । বিদ্যুৎ তরফদারের কাছে প্রিয়দর্শিনীর আজব কিস্যা বর্ণনা করছিল কলতান বউবাজার থানায় বসে । নেকলেসটাও থানার জিম্মায় জমা করে দিল সে । এখন পুলিশের দায়িত্ব যথাযথ জায়গায় এটা হস্তান্তর করার । প্রয়োজন হলে তারা প্রিয়দর্শিনীকে এবং সতীনাথকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে । কলতান বলল, ' প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকতে পার, সে ওদের মুখোমুখি বসে বয়ান দেবার জন্যই হোক বা লিখিত বয়ান দেবার জন্যই হোক ... লিগ্যাল কোন লুপহোল না থাকে ... '----- ' আরে দূর ... ছাড় তো ... তোমাকে ডিপার্টমেন্টে কে না চেনে ... এর জন্য আবার ডিপোজিশান লাগবে ? এখন আইটেম তো বউবাজার থানার কাস্টডিতে । আইটেম ... ...
আমার মৃত্যু কামনা করে একটা পত্র এসেছে। যদিও, প্রেরক আমায় ভালোবেসেছে।
স্বরাজনু মঙ্গলসূত্র : আজ দ্বিতীয় তথা শেষ পর্ব : গুজরাটের গান্ধীগীতগুজরাটের 'গান্ধীগীত': বিহার থেকে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য গুজরাটের খেদা। ১৯১৫ থেকেই তাঁর আপন রাজ্যে গান্ধী গ্রামীণ জনতার বড় আপনার জন হয়ে ওঠেন। চম্পারণের মতো এখানেও খেদা সত্যাগ্রহের সময় গ্রাম-গ্রামান্তরের গুজরাটি চারণকবিরা তাঁদের গানে-কবিতায়-লোকনাট্যে দেশনেতা গান্ধী ও তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডকেই শুধু নয়, বরং লিখতে শুরু করেন এক পরম কাছের মানুষকে।গুজরাটের 'ভাওয়াই' নামক লোকনাটিকাগুলোতে প্রথম উঠে আসে 'সবরমতীর সন্তের' কথা। তারগালা ভাওয়াই দ্বারা প্রকাশিত 'তারগালা ভোজক হিতেচু' পত্রিকার 'ক্ষমতার নেশা' প্রবন্ধে ভাওয়াই কবি কুসুমকান্ত লেখেন, "তাঁর হাতে না আছে অস্ত্র/ না তাঁর মনে ধরে হানাহানি/ যিনি লড়ছেন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে/ যাঁর অস্ত্র কেবল ইচ্ছাশক্তি/ তিনি ... ...
তোমার সাথে দেখা করাটা ভীষণ জরুরী যেমন জরুরীকোন মুমূর্ষ রোগীর জন্য এম্বোলেন্সআগুন লাগা কোন বস্তিতে দমকলকর্মী পানিতে ডুবতে থাকা মানুষের লাইফজেকেটভবঘুরে কোন পাগলের জন্য একমুঠো সহানুভূতি।আমি জেনেছি তুমি এক প্রতিষেধকের নামআরো জেনেছি আমার যে মরনব্যাধিতার একমাত্র ঔষধ তোমার খোশমেজাজী চুমু। সুতরাং তোমার সাথে দেখা করাটা ভীষণ জরুরী দেখা করো, বাঁচাও, বাঁচতে দাওট্রাফিক সিগনাল পড়ে যাবে, আটকে রেখেছিশহুরে সমস্ত গাড়ি।দ্রুত পার হয়ে আসো জেব্রা ক্রসিং,তাড়াতাড়ি খুব তাড়াতাড়ি। ... ...
(১) কেবলমাত্র যে শমন হাতে পেলেই কোর্ট-কাছারী করতে হয় তা নয়। অনেক সময় বৈষয়িক ব্যাপারের সমাধান নিতেও কোর্টের অনুগামী হতে হয়। স্বাধীন দেশে এমনটাই নিয়ম। সেই নিয়মের পাকচক্রে মাত্র চারদিনের ঝটিকা সফরে গত ৩১শে অক্টোবর একবার নিজভূমি দর্শনে, বঙ্গদেশের রাজধানী এবং আমার কৈশোর-যৌবনের লীলাক্ষেত্র (খারাপ অর্থে নেবেন না প্লিজ, পড়াশুনো, বড় হওয়া, জ্ঞানার্জন, বিবাহ, কন্যার পিতা হওয়া সবই এখানে), কোলকাতা ঘুরে গেলাম। টিকিটটা আসলে ৩১শের-ই ছিল, কিন্তু ৩০শের রাত্রিতে। রাত ১-১০এ। আর আমি যাবার একদিন আগে পর্যন্ত নিশ্চিন্ত ছিলাম, টিকিট আমার ৩১শের দুপুর একটায়। কি ভাগ্যি, ৩০ তারিখ সকালে ... ...