মৃত্যুভয়, পাপক্ষয়
সরিৎ চট্টোপাধ্যায়
কাপালিকের তন্ত্রে মেশে রক্তের নেশা, তার খড়্গ আর ভাল
মহাডামরির জিভের মতো লাল; অপেক্ষায়
হাড়িকাঠে পিছমোড়া করে বাঁধা মানব-শিশু। শিশু হত্যা, হালাল।
অষ্টমীর অঞ্জলি দিচ্ছে পেট-মোটা ডাক্তার
সেই সুগারটা দিলি তো মা, দেখিস হার্ট কিডনি দুটো যেন ভালো থাকে
মাইরি বলছি, পুষিয়ে দেব, এই ডেঙ্গুর সিজনটুকু যাক।
আমলা মন্ত্রী শিল্পপতি মরিয়া হয়ে এক সারিতে খাড়া
তদন্তের হাত থেকে জাস্ট এবারটা বাঁচিয়ে দাও, ট্রিনিটি বাপেরা!
নিখাদ ... ...
সেই পলাশের তিন পাত
সরিৎ চট্টোপাধ্যায় / অণুগল্প
প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির এক রাতে পোয়াতি পেঁপেগাছটার বড় মায়া হল। ওর পায়ের কাছেই সদ্য অঙ্কুরিত এক অচেনা গাছের চারা তার প্রথম তিনটে কচি পাতা নিয়ে ঝড়ের দাপটে প্রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। সর্বশক্তি দিয়ে সেদিন পেঁপেগাছটা হাত বাড়িয়ে ঝুঁকে পড়েছিল, বলেছিল, ভয় পাস নে রে খোকন, আমি আছি তো! আর সারা রাত তার আঁচলের আড়ালে ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠেছিল পলাশের কচি পাতাগুলো।
লাল মাটি, গুড় জাল দেওয়া গন্ধ, দামাল গন্ধেশ্বরী। বুধু সারেঙ হারমোনিয়াম বাজাতো। সেদিন ছোপ ... ...
ডন কিহোটে, অথবা ছায়াবাজি
সরিৎ চট্টোপাধ্যায় (ছোটগল্প)
শিয়ালদা স্টেশন। বছর পনেরোর সেই ছেলেটা একরকম প্রায় টলতে টলতেই কারশেডে দাঁড়ানো লালগোলা প্যাসেঞ্জারের খালি কামরাটায় উঠে মেঝেতেই শুয়ে পড়ল। রেলপুলিশের হাতে যাত্রীরা ওকে তুলে দেওয়ার সময় দেখা গেল ওর শরীরের প্রায় অর্ধেক আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে।
রাত বারোটার কিছু পরে এনআরএসের বার্ন ওয়ার্ডে সার্জারীর পিজি সমীর মাইতি যখন ওকে দেখে, তখনও ও অজ্ঞান। মেডিকো-লিগাল কেস। প্রায় পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট বার্ন। তবে সেকেন্ড ডিগ্রী; ইনফেক্ ... ...
দ থার্ড ল
সরিৎ চট্টোপাধ্যায় / অণুগল্প
ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর বেড়ালটা বো-টাই আর চশমা পরে ছড়ি নাচিয়ে চোখ পাকিয়ে বলছিল, এভরি অ্যাকশন, না হে, জুতা নহে, হ্যাস অ্যান ইকুয়াল অ্যান্ড - !
- কাট্!
- ওয়াই?
- তুমি শালা ক্যাট! তুমি লেকচার দেওয়ার কে হে?
- আ ক্যাট?
ধড়মড় করে উঠে জগা পাগলা তার কালো ছোপছোপ দাঁত বার করে হঠাৎ চেঁচাতে শুরু করে, কাট, ভাইঙা ফেল! সব শালা বেওয়ারিস মাল! দেখছস না সব জং ধরসে! ভাঙ শালা!
কয়েকজন পথচারী হাসে, বাকিরা বন্ধ হয়ে যাওয়া জুট ... ...
রাতপরীদের অভিশাপ
আজকে আবার হাতছানি দেয় হাসনুহানা,
আজ, রক্তে আবার খুনের নেশা নিঝুম রাতে।
দেবযাণী তার ঘৃণার আতর মাখছে মাখুক,
ভরছে ভরুক বিষের থলি আপন হাতে।
জ্বলছে ধু ধু অভিমন্যুর চিতার আগুন,
পার্থ কাঁদুক! তুমিও কাঁদো যাজ্ঞসেনী!
কাঁদবে অনেক বীর্যশুল্কা অম্বা'র মত,
জাত্যভিমানে বধ্য নারীর কান্না যত।
ধর্মযুদ্ধে একেলাই হাঁটি, একলাটি মন,
ফণীর বিষেতে আজকে আমার কী যায় আসে?
ধর্ম! আর কি মুক্তি দেবে না, হাসনুহানা?
তবে মরুক! নিভবে জাতির চিতাও, ... ...
রাক্ষস (গল্প)
সরিৎ চট্টোপাধ্যায়
- ওয়ে সরজু! অব ফির অপনা হাথ, জগন্নাথ! বলে হেসে গড়িয়ে পড়ে রামস্বরূপ সিং।
সরজুও হাসে। কিছু মানুষকে প্রথম নজরেই কেন জানি ভাল লেগে যায়। ফৌজে যোগ দেওয়ার প্রথম দিনই সরজু কে জানে কেন ভাল লেগে গেছিল এই ছেলেটাকে। সেদিন, যেদিন খাকি হাফপ্যান্টের ওপর খালি গায়ে পৈতে পরেই মাঠে এসে দাঁড়িয়েছিল আর ড্রিল সার্জেন্টের উদমা খিস্তি খেয়েও দাঁত বার করে হেসেছিল রাজস্থানের এক ছোট্ট গ্রামের উচ্ছল এই ছেলেটা।
কাল একমাসের ছুটি কাটিয়ে ফিরেছে সরজু। শাদি করে। এখ ... ...
পেরেক
সরিৎ চট্টোপাধ্যায় (গল্প)
আচমকা এক পশলা বৃষ্টি এসে চুব্বুর করে ভিজিয়ে দিল দু'জনকে।
প্রিন্সেপ ঘাট। বিকেল পাঁচটা। লোকজনের ভিড় কমে এসেছে। হঠাৎ রিমি হেসে উঠল, এই, এবার চল তো, নাহলে এবার পুলিশ এসে ঘাড় ধরে তুলে দেবে!
- ইল্লি! মামারবাড়ি আর কি! ইউ আর নাও মাই ল-ফুলি ওয়েডেড ওয়াইফ অ্যান্ড, রাইট নাও আমার একটা চুমু খেতে খুব ইচ্ছে করছে।
- এই না! ধ্যাৎ। অসভ্যতা কর না, লোক রয়েছে।
- বিয়ের চারমাসের মধ্যেই সব প্রেম বাষ্প হয়ে গেল ম্যাডাম? ছাতাটা বার কর না -
- হ্যাঁ, কী শখ! এ ... ...
চীর্ণ
সরিৎ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা হাই কোর্ট। রোহণ ভার্সেস দ স্টেট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল; অ্যাপট নং ১৫৪; ২০১৬।
ইন্সপেক্টর ত্রিদিব চৌধুরী কোন খুনের মামলায় আদালতে এত ভীড় আগে কখনো দেখেনি। খবরের কাগজ আর টিভির সংবাদ চ্যানেলের কল্যানে রাজ্য জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এই কেস।
আজ, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট শশধর সান্যাল হত্যাকাণ্ডের শেষ শুনানি। রায় আজই বেরোতে পারে। রোহণের ডায়েরিটা ও যেদিন খুঁজে পায় কেউই বোধহয় ভাবতে পারেনি যে ওটা এই কেসে এতটা প্রভাব ফেলবে। কোর্টরুমে টানটান উত্তেজনা।