শব্দটা হঠাৎ কানে যেতেই বাবুসোনা বুঝে গেছিল ব্যাপারটা। আর তাই অন্য সবাই চমকে উঠলেও সে চমকায়নি। ছুঁচে সুতো পরাতে পরাতে কাজ না থামিয়েই জিভ দিয়ে চুকচুক করে একটা আওয়াজ করে কেবল বলেছিল, 'আবার গেল একটা!'
অবশ্য ঠিক করে বিশ্লেষণ করে দেখলে বোঝা যায় এই শব্দে বাবুসোনার আশ্চর্য হবার মত কিছুই ছিল না। শোক পাবার তো নয়ই। এর আগে জীবনে আরো তিন-তিনবার শব্দটা শুনেছে সে। ঠিক এই এক প্রাবল্য, এক কম্পাঙ্ক, একই স্থায়িত্ব। সেই একই উৎস থেকে সেই একইভাবে ভেসে এল ক্লান্তিহীন সেই একঘেয়ে শব্দ। কিছুটা যেন চাপা বিস্ফোরণের মত। ... ...
তারা পলিটিক্যালি কারেক্ট মানুষ।
তাদের আড্ডা ছিল মরিচঝাঁপি ছাড়িয়ে, পূর্ব-পশ্চিম দুই পাকিস্তান নাড়িয়ে, আমলাশোলের ধারে, ঝান্ডার ছায়ার তলায়। ছেলেবেলায় যখন তাদের আঙুলে কালি ওঠেনি তখন থেকে তারা দেখে আসছে সেই আদ্যিকালের গণতন্ত্র। সে যে কোথাকার কোন তন্ত্র সে খবর কেউ জানে না, কিন্তু সবাই বলে, 'গণতন্ত্র'।
যত সব বিপ্লবী ছেলে-মেয়ে, কলেজে বই খুলে যারা মোটে বসতে চায় না, গণতন্ত্রের হাতে কর্পোরেটি নোটের ফড়ফড়ানি শুনে শুনে তাদেরও জিভে জল আসে —
পেটমোটা মানিব্যাগ, গোটা নোট, মোটা নোট
ক ... ...
যে যাই বলুক ভাই, বাংলা সাহিত্যের সবচে' বড় ক্ষতি করেচেন মাইরি দাড়িদাদুই! এম্নি লিখেচেন যে আজও বাঙালী তেনার গন্ডি ছেড়ে বেরোতে পারেনি। যে যেমনই লিখুক না কেন রে ভাই, সাহিত্যের ব্যাপারে বাঙালীর উৎকর্ষের মাপকাঠি হলেন সেই আদি ও অকৃত্রিম রবীন্দ্রনাথ। এক্কেরে মোহিনীমোহন কাঞ্জিলাল এন্ড সন্সের মত। কোনো শাখা নেই! এদিকে দক্ষিণেশ্বরের কালীঠাকুর, ওদিকে গীতাঞ্জলীর রবিঠাকুর। আহা, আমার ইয়ে ইয়ে তো কী, রবীন্দ্রনাথ নোবেল! গুরুদেব গো! আরো হাজার বছর তোমায় ধুয়ে জল খাবো গো আমরা! তিরিশ কোটি সন্তানেরা, হে মুগ্ধ দাড়িদা / চ ... ...
ফ্ল্যাটটা কেনার পরে সুদীপের চেয়ে শাশ্বতীই যে বেশি খুশি সেটা ওর হাবভাবেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। অবশ্য সুদীপও যে খুশি হয়নি তা নয়। সাজানো-গোছানো বড় বড় দু'টো বেডরুম, একটা গেস্টরুম, একটা ডাইনিং কাম কিচেন আর অ্যাটাচড্ বাথরুম। সদ্য বিবাহিত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত একটা দম্পতি বাসস্থান হিসেবে আর কী চাইতে পারে এর বেশি? ঝকঝকে মার্বেলের মেঝে, ঘরের দেওয়ালে চমৎকার হাল্কা সবুজ রঙের প্লাস্টিক পেইন্ট, বড় বড় জানালা দিয়ে আলো আর হাওয়া আসছে অনবরত। তোফা! শুধু একটাই মাইনাস পয়েন্ট - ফ্ল্যাটটা রেললাইনের কাছে হওয়ায় উত্তরদিকের জানা ... ...
- দোহাই মিস্টার মিটার! হাপনি এরুকম কোরবেন না! হামার নুকসান হোয়ে যাবে, বেওসার খেতি হোয়ে যাবে!
- হ্যাঁ, তা তো যাবেই। আপনি জাল ওষুধের কারবার করবেন, বেবিফুডে ভেজাল দেবেন আর আমি আপনাকে ছেড়ে দেব?
- শুনেন মিস্টার মিটার! কেতো টাকা চাই হাপনার বোলেন। হামি চেক লিখে দিচ্ছি। আভি!
- টাকার লোভ যে আমার নেই সে তো আপনি আগেই দেখেছেন, মগনলালজী। ওসব বলে ফেলু মিত্তিরকে চুপ করানো যায় না।
- তো কী চাই বলেন? মেয়েছেলে? কলগার্ল? হামি সোব ইন্তেজাম কোরিয়ে দিব, হোটেল ভি ঠিক কোরিয়ে দিব, হাপনি গিয়ে স্রিফ কাম কোর ... ...
ঘটনাটা ঘটবে আজ থেকে ঠিক দেড়শো বছর পরে। ২১৬৬ সালের এপ্রিল মাসে। ঠিক কত তারিখে ঘটবে তা এখন জানা যায় না, তবে ঘটবে অবশ্যই।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর বিশুদ্ধ শহরগুলোর একটাতে বিশাল লম্বা, বুলেটপ্রুফ গাড়িটার থেকে নেমে লক্ষ লক্ষ কালো মাথাগুলোর দিকে চেয়ে হাত নাড়বেন পৃথিবীপ্রধান। তুমুল হর্ষধ্বনি উঠবে সঙ্গে সঙ্গেই। প্রবল হাততালির শব্দে দায় হবে কান পাতা। টিভি ক্যামেরাগুলো প্যান আর জুম করে করে তুলবে জনতার এই উচ্ছ্বসিত কলরবের দৃশ্য।
তারপর পৃথিবীপ্রধান গিয়ে দাঁড়াবেন ডায়াসে। ধীরে ধীরে নিশ্চুপ হবে চারিদিক ... ...
বৈশম্পায়ন কহিলেন - হে রাজন! একবিংশ শতকের প্রথম ভাগে বঙ্গভূমিতে আধুনিক মধ্যবিত্ত বাঙালি নামক এক অদ্ভুত জীবের আবির্ভাব ঘটিবে যাঁহারা নিজ নানাবিধ কার্যকলাপের দ্বারা বঙ্গদেশকে প্রকম্পিত করিয়া তুলিবেন। আমি এক্ষণে সেই বিচিত্রবুদ্ধি বাঙালিদের ক্রিয়াকলাপ কিছু কিছু বর্ননা করিব। আপনি শ্রবণ করুন।
হে নরবর! এই আধুনিক মধ্যবিত্ত বাঙালিগণ সিটি সেন্টারে গিয়া ২০০ টাকার দ্রব্য ১২০০ টাকায় ক্রয় করিয়া আপনার 'স্ট্যাটাস' বজায় রাখিবে কিন্তু রিকশাচালক অধিক ৫ টাকা চাহিলে তাহার সহিত আধঘন্টা ঝগড়া করিয়া পরম তৃপ্তিল ... ...
বেজায় গরম। ফ্যানের তলায় দিব্যি চুপচাপ শুয়ে আছি, তবু ঘেমে অস্থির। টেবিলের উপর মোবাইলটা ছিল, ফেসবুক দেখবার জন্য যেই সেটা তুলতে গিয়েছি অমনি মোবাইলটা বলল, 'ডিজিটাল'! কি আপদ! মোবাইলটা ডিজিটাল বলে কেন?
চেয়ে দেখি মোবাইল তো আর মোবাইল নেই, দিব্যি গোটা একটা ডিজিটাল দেশ প্যাটপ্যাট করে আমার দিকে চেয়ে আছে!
আমি বললাম, 'কি মুশকিল! ছিল মোবাইল, হয়ে গেল একটা দেশ।'
অমনি দেশটা বলে উঠল, 'মুশকিল আবার কি? ছিল সাদ্দাত হাসান মান্টো, হয়ে গেল রাজকাহিনী। এ তো হামেশাই হচ্ছে।'
আমি খানিক ভেবে বললাম, 'তা হলে তো ... ...