দক্ষিণের কড়চা - যদি ভাবো জবালা মেঘ সঞ্চরমান, তবে চোখ মুছে ফ্যালো ঘাসে, নদীঘাটের শরবনে। যদি ভাবো জবালার কোলে জল, তবে চোখ মেলে দ্যাখো এই পূর্বাশা অন্তরীপ। এখন ঘন আলকাতরায় লেপে গেছে আকাশের মনস্তাপ।
মনস্তাপই তো। সাড়ে তেরো মাইল দূরে শেষ বাস এসে থেমে যায় তেলোর চকে। তারপর পায়ে হেঁটে রোজ জবা কাঁকড়ার ঝোড়া নিয়ে বাড়ি ফেরে, ফিরতে ফিরতে যেদিন তার ঋতুঃক্ষরণ হয়, মাতুয়া খালের জলে থাই ধুয়ে ছেঁড়া ন্যাকড়া পরে নেয়। কোমরের ঘুনসিতে মাদুলির মধ্যে হাড়গিলের হাড় নড়ে ওঠে। ... ...
দক্ষিণের কড়চা - সুদাম গুছাইতের চোখে চালশে ধরা পড়েছে বছর আষ্টেক। তাও চশমা ধরণের কোনো বস্তু তার নাকের ওপর এখনও ওঠেনি। তার গতায়াত গঞ্জবাজারের সিডির দোকান অবধি। বাকিটা দিনগত।
নিউ শান্তি চিত্রমন্দিরের খড়ে ছাওয়া একখানি হলঘর। চারপাশে হিজল গেঁওয়া গাছগাছালির ছায়া পড়ে আছে আলগোছে। একটি ছোট ডোবাও রয়েছে। বাসন্তীর একটি বৈশিষ্ট্যহীন গঞ্জের দুটি বধু হাঁড়ি তিজেল নিয়ে গরাণকাঠের গুঁড়ির ওপর ঘাটের মায়ায় ধোয়াধুয়ি শুরু করলে ঠুং ঠাৎ শব্দ কানে আসে। ভরদুপুরে গা-লাগোয়া হাড়িয়ার ঠেকে অস্পষ্ট রবে ... ...
রবীন্দ্রে গদগদ নজরুলে থতমত
#
প্রয়াত গায়ক ভুপেন হাজারিকার একটি গানের কথা খুব মনে পড়ে। না পড়লেও চলত, তবে মনে পড়ে। খুব সম্ভবত শিবদাস বন্দোপাধ্যায়ের লিরিক। 'সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনাতে নজরুল'। এটা বাংলা আধুনিক গান হিসেবে শুনতে মধুর।
রবীন্দ্রনাথকে অ্যাসেট বানিয়ে ফেলেছিল আমবাঙালি নিজের মানসিকতার স্বার্থে। রবীন্দ্রনাথের কেবল বহুমুখী প্রতিভা ছিল, আর সমসময়ে তেমন কারুর ছিল না, এই বিভ্রান্তিকর ভাবনা ছিল বাঙালির প্রতিষ্ঠান ভজনার চিরন্তন রীতি ও প্রীতি। রবীন্দ্রনাথ নিজে এ ব ... ...
ভুবন মাঝি নাকি আত্মহত্যা করেছিল। ভুবন মাঝি কি আত্মহত্যা করেছিল? ভুবন মাঝি কি সত্যি মরে গেছে? 'তুমি বেধবা হইছ বলে কি আমি নাও বাওয়া ছেড়ে দেব?' গভীরতম রাতটিতে লক্ষ্মী বাগদিকে এই ছিল ভুবনের কথা। 'তোমাকে আমি কী দিয়া বাঁধি বলত?' লক্ষ্মী কোমরের লুঙিটা ঈষৎ নামিয়েছিল এবং তখন তার নাভিমূলে হাঁসুয়ার ভাঁজ। নিতাই যখন হুপিং কাশিতে শেষদিন কেঁপে কেঁপে উঠছিল, গলায় নীল সাপের মতো মরে যাওয়ার ভয় পেঁচিয়ে গেছে, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তখন তালা ঝুলছে। ... ...
গঙ্গাপদ একজন সাধারণ নিয়মানুগ মানুষ। ইলেকট্রিকের কাজ করে পেট চালায়। প্রতিদিন সকাল আটটার ক্যানিং লোকাল ধরে কলকাতার দিকে যায়। কাজ সেরে ফিরতে ফিরতে কোনো কোনোদিন দশটা কুড়ির লাস্ট ডাউন ট্রেন। গঙ্গাপদ একটি অতিরিক্ত কাহিনির জন্ম দিয়েছে হঠাৎ করে। ইদানিং গঙ্গাপদ ভয় পাচ্ছে না কোনো কিছুতে। কবে থেকে ঠিক এটা শুরু হয়েছে, সে নিজে তো জানেই না, আমরাও জানি না। এই অতিরিক্ত কাহিনির দরুন গঙ্গাপদ ঠিক বিশিষ্ট কোনো চরিত্র হল বলা যাবে না, কিন্তু গঙ্গাপদ একদিন মার খেয়ে গেল। ... ...
আমার শিক্ষক জীবনটি নয় নয় করে আট দশ বছর জিইয়েছিল। কাজ পাচ্ছি না তো শিক্ষাদান কর। সুতরাং প্রাইভেট টিউশন নামক জীবিকায় ক্ষুন্নিবৃত্তি, কলাটা মুলোটা এবং সন্ধ্যের টিফিন। যেহেতু গণিতশাস্তর পড়াতাম, তাই অধিকাংশের কাছে বেহ্মদত্যির মতো ছিলাম। আমাকে দেখামাত্তর ছাত্র-ছাত্রীর মা-বাবা যতটা নিশ্চিন্ত, খুদে নাগরিকটি ততোধিক মর্মাহত হত। মুখের আলোটি তৎক্ষণাৎ ঘনমেঘে অবলুপ্ত। কী মুশকিলেই না পড়তাম! মুশকিলের আসান তো চাই। প্রথমে ফাঁদ পাতলাম। তারপর চাঁদ পাতলাম। ... ...
গাঙ ফিরবেন বাবু? ওরা দুজনেই চোখ তুলে বাম দিকে তাকাল। একটি ছোট ডিঙি নৌকা। নৌকার লোকটি কী বলল তাদের ঠিক ঠাহর হয়নি। বাতাসে জলের সরসর শব্দ। পিছনের গেঁওয়া গাছের মাথায় বড় বাতাসের ঝাঁকুনি। গাঙ ফিরবেন লাকি গো? ওরা বুঝল এ গাঙফিরানি ডিঙি। ওপারে মিঠালি বাদি। যে-ঘাটে ওরা দাঁড়িয়ে আছে সেটি পটুয়াখালি ঘাট। মধ্যে বিদ্যাধরী ছলাৎছল। সূর্য মধ্যগগনে। মেয়েটির কপালে উড়োচুল। শালের পাড়ের আলপনায় মুখটি বেশ দেখায় যেন। যেন এইমাত্র ধুয়ে সাফা করে ক্রিম ... ...
বড়ি দেওয়ার কথা বলছি। এ রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলা মেদিনীপুর। অধুনা পূর্ব মেদিনীপুর। এই জেলাতে ঘরে ঘরে বড়ি দেওয়ার চল। বড়ির ডালের অনেক রকমফের। সে সব আপনারা আমার চেয়ে বহুগুণ বেশি জানেন। আপনাদের সঙ্গে সে ব্যাপারে পাঙ্গা নিতে গেলে আমি ভির্মি খাব। আমি অন্য কথা বলি বরং। শীত এল তো ঘরে ঘরে উসখুস মা কাকিমা জ্যেঠিমাদের মধ্যে। কেউ শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। ... ...
আমাদের সংস্থান ভিন্ন। আমাদের আনন্দ আলাদা, অভিমান আলাদা। আমাদের পদশব্দও আলাদা। আমাদের পাপ আলাদা। লকার আলাদা। কোনো কোনো মুহূর্তে বৃত্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। পুকুরের জলে ঢিল ছুঁড়েছিলে, তাই কাটাকুটি খেলা। সন্ধ্যে নামার আগে তেচোখো মাছেরা খলবল করে অখন্ডিত আলোয়। তখন জলতলে ছায়া নামছে বলে কুঁচবক উড়ে যাবে দূর শিরিষের চূড়োয়। একটি বৃত্ত ক্রমশ মিলিয়ে গেল বলে আরেকটি বৃত্তের ঢেউ দিই। এই তো মেলেছে পার্বণ তোমাকে নির্বাসন দিইনি বলে। ঢেউ ঢেউ তরঙ্গ তরঙ্গ ... ...
আসুন পাঠক, ব্রায়ান মন্ডলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। অবশ্য এই নামে নামের মালিক এখন একটি ফিঁচেল হাসি হাসবেন, একটু যেন গরিমাও হয়ত আপনার চোখে পড়তে পারে। তার আড়ালে একটি ছোট্ট অতীত লুকিয়ে আছে। ষোল বছর আগে ব্রায়ানের বাপ হ্যারি ওরফে হারানের ডাক পড়েছিল ক্যানিং সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলের হেডমাস্টারের কেবিন থেকে। ব্রায়ান চতুর্থ শ্রেণি টপকিয়ে জুনিয়র হাই-তে যাচ্ছে। ক্ষেতে তখন শশা আর বেগুন ঢলে পড়েছে দস্তুর মতো। কোনোক্রমে হাতের কাদা ধুয়ে, হেঁটো ধুতি একটু নামিয়ে টামিয়ে হেডমাস্টুরের কেবি ... ...