আমার জীবনে, যে কোন কারণেই হোক, সেলিব্রিটি ক্যাংলাপনা অতি সীমিত। তিনজন তথাকথিত সেলিব্রিটি সংস্পর্শ করার বাসনা হয়েছিল। তখন অবশ্য আমরা সেলিব্রিটি শব্দটাই শুনিনি। বিখ্যাত লোক বলেই জানতাম। সে তিনজন হলেন সৈয়দ মুজতবা আলী, দেবব্রত বিশ্বাস আর সলিল চৌধুরী। মুজতবা যখন মারা গেছেন তখনও আমি ঘুন্সি পরি। দেবব্রতর মৃত্যুর সময়ে আমার বয়েস এগারো-বারো। কাজেই এনাদের মূল্য আমি বুঝেছি অনেক পরে। সলিল চৌধুরী অবশ্য আমার যৈবনকাল অব্দি জীবিত ছিলেন, কিন্তু শেষ অব্দি আর সাক্ষাৎ করে উঠতে পারিনি।
এখন মনে হয় এনাদের কারু ... ...
অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় লিখেছেন রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে নাকি সলিল চৌধুরী অশৌচ পালন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে বাংলা নাগরিক সঙ্গীতের বাবা ধরলে সলিল নিশ্চয়ই তাঁর উজ্জ্বলতম পুত্র। সেই হিসেবে পিতৃবিয়োগে কাছা-ধারণের মধ্যে আশ্চর্য কিছু নেই। অথচ সলিলের গান শুনে আর যার গানের কথাই মনে হোক, রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ে না। হিমাংশু দত্তর কথা মনে পড়তে পারে, দ্বিজেন্দ্রলালের কথা মনে পড়লেও পড়তে পারে - কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নন। সঙ্গীতের অ্যাপ্রোচে এতটাই তাদের তফাত। অনেকটা যেন শচীনকর্তার "শ্যামরূপ ধরিয়া এসেছে মরণ" শোনার পরে ... ...
দেবব্রত বিশ্বাস খুব সম্ভবত: সর্বোচ্চ আলোচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। দিস্তে দিস্তে লেখা হয়েছে ওনার গান গাওয়া সম্পর্কে, তাঁর জনাদর সম্পর্কে, বিরুদ্ধতা ও তৎসহ তাঁর অভিমান সম্পর্কে। কিছু আমি পড়েছি।
ওনার গানের যে দুটো দিক নিয়ে আমি বিশেষ উৎসাহী, সে নিয়ে খুব লেখাপত্তর চোখে পড়েনি। এক, ওনার গানের যন্ত্রানুষঙ্গ ও বিন্যাস (arrangement) আর দুই, গানকে নিজের strength -এর জায়গা থেকে গড়ে নেওয়া।
প্রথমেই ধরুন যন্ত্রের ব্যবহার। শান্তিনিকেতনী ঐতিহ্যে রবীন্দ্র গানের সঙ্গে সঙ্গতে বেজেছে এসরাজ, তালে ক ... ...
ম্যাঘে ম্যাঘে ব্যালা গড়িয়ে আসে। নয় নয় করেও পঞ্চাশের ধাক্কা বয়েস হতে চলল জলধরবাবুর। তবে আজকাল পঞ্চাশ-টঞ্চাশ নস্যি। পঁচাশি-নব্বই পার করে দিচ্ছে লোকে হাসতে হাসতে। এ তো আর শরৎবাবুর আমলের নাটক-নবেল নয় যে চল্লিশ পেরোলেই পুরুষমানুষ সুযোগ্য ছেলের হাতে সংসারের দায়িত্ব তুলে দিয়ে বারমহলে বসে থেলো হুঁকোয় তামুক খেতে খেতে গ্রামের আর পাঁচজনের সঙ্গে সুখ-দুঃখের গল্প, মানে অন্যকে কাঠি, করবেন আর সেই পাপস্খালনে সময়ে সময়ে ঈশ্বরচিন্তা করবেন! সে কপাল করে কি আর এসেছেন জলধরবাবু? একে তো মেয়েদুটি ছোট ছোট। তাদের কলেজ-পার ন ... ...
ভাগ্যের ফেরে জলধরবাবু আবার পরভূমে নিজবাসী। সেও নয়-নয় করে আজ তিন বছর হতে চলল। আবার সেই সিলিকন ভ্যালি। আবার সেই হাঁপ-ধরানো ঊর্ধশ্বাস। আবার সেই জিনিসের দাম দেখে খাবি। আবার সেই চাকরি নট হবার ভয়। সাড়ে তিন বছর যে সময় দিয়ে ... ...
ইস্ট জর্জিয়া ও যাদবপুর
- কাচুমাচু রায়
---------------------------
ঊনিশশো বিরাশি সাল। আমি তখন মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে
পিএইচডি করি। ইস্ট জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় খুবই ডাকসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়,
যাদবপুর-টুরের মতন হেজিপেজি নয়। যারা জানেন না, তাদের জানাই আমাদের মাননীয়া
মুখ্যমন্ত্রীর পিএইচডি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। (সেই সঙ্গে তাদের এই প্রশ্নও করি,
জানেন না কেন? এরকম উচ্চশিক্ষিত, বিদ্বৎমনস্ক মুখ্যমন্ত্রী সারা ভারতে আজ অব্দি
আসেনি।) সেখানেও ... ...
[ লেখাটা অন্যত্র শুরু করেছিলাম ]
সলিল চৌধুরী আর রাহুল দেব বর্মন - মেলোডির দুই রাজা । দুজনেই কমার্শিয়াল গানের জগতে নিজেদের পেশাদার জীবন গড়ে তুলেছিলেন । অথচ সঙ্গীতের অপ্রোচে দুজনে দু পথের পথিক । সলিল চৌধুরীর আকর্ষণ জটিল সঙ্গীতিক নির্মাণে, অন্যদিকে রাহুল দেব বর্মন সুরের সহজ চলনে বিশ্বাসী । অ্যারেঞ্জমেন্টে সলিল প্রথম জীবনে ধ্রুপদী - বিশেষতঃ পশ্চিমী আঙ্গিকে, শেষের জীবনে তৎকলীন পশ্চিমী রক-পপ ঘরানার অনুসারী । রাহুল প্রথম থেকেই নিজের মতন পাঁচমিশেলি আঙ্গিক তৈরি করে নিয়েছেন । সলিল চৌধুরী যেখানে ঘ ... ...
কমলবাবু হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
ছেলেবেলায় "চাঁদের পাহাড়" আমাদের অনেকেই পড়েছি ও শিহরিত হয়েছি। বাংলা ভাষায় লেখা শিশুপাঠ্য উপন্যাসের মধ্যে "চাঁদের পাহাড়" নিঃসন্দেহে একদম ওপর দিকে থাকবে। আজ থেকে অত বছর আগে স্রেফ কিছু বই আর নিজের কল্পনার জোরে অ্যাফ্রিকার পটভূমিতে যে অমন উপন্যাস লেখা যায় ভাবতেই মস্তিষ্কে জট পড়ে যায়। আজকের মতন তথ্যবহুল, প্রায়-বাস্তব-ছবিসংকুল তেমন বইও কি আর তখন হত? আর মফস্বলে বা কলকাতাতেও কটাই বা ভাল বই পাওয়া যেত রিসার্চ করা জন্যে? কোথায় ছিল ডিসকাভারি চ্যানেল, হলিউডের অ্যাডভেঞ্চ ... ...
জলধরবাবু একজন পোড়-খাওয়া এন আর আই বা ভাপাভা ("ভারত-পালানো-ভারতীয়") । তাঁর লেট-যৌবন-আর্লি-প্রৌঢ়ত্বে জলধরবাবু একটি মস্করামূলক প্রবন্ধ লিখে হালকা করে দেশে ফেরত যাবার মনোবাসনা ব্যক্ত করেছিলেন । দোষের মধ্যে তো এই । এই দেখেই আকাশের দেবতা মুচকি হাসিলেন । বলিলেন, "তোর ফেসবুক পোস্টিং ১০০১ বার শেয়ার না করাতেই বর দিলাম । যাবি তো যা ।" অতঃপর জলধরবাবু বৌ-বাচ্চা-বাক্স-প্যাঁটরাসহ ভারতবর্ষে ... ...
[কুড়ি বছর আগে লেখা এক বছর-পঁচিশ বয়সী যুবকের পুরোন ডায়রি আমার হাতে এসেছে।
এডিট না করেই তুলে দিলাম - কুড়ি বছরে কলকাতার বাহ্যিক রূপ কতটা পাল্টেছে সেটা
দেখার জন্যে। এর আর কোন মূল্য নেই।]
... এ কলকাতার মধ্যে আছে আরেকটা কলকাতা।
হেঁটে দেখতে শিখুন ...
- শঙ্খ ঘোষ
আমি হাঁটতে থাকি। যাদবপুর থেকে ঢাকুরিয়া, গড়েহাটা হয়ে বাঁদিকে গোঁত্তা খাই।
গুরুসদয় দত্ত রোড হয়ে সার্কুলার থুড়ি আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডে পড়ি। বিরাট "হোয়েনএভার
ইউ সি কালার, থিংক অফ আস" সাইনবোর্ডের ... ...