আমার একটি প্রতিপাদ্য, বহুদিন ধরেই, ছিল এবং আছে। সেটি হল, বছর দশেকের জন্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যাপারটা বাঙালির জীবন থেকে তুলে দেওয়া উচিত। কেউ গাইবে না, কেউ শুনবে না, কেউ শেখাবে না, কেউ শিখবে না, টিভিতে দেখাবে না, রেডিওতে শোনাবে না, বিজ্ঞাপনে লাইন দেবে না ইত্যাদি। দশ বছর ডিটক্সিকেশনের পরে বোঝা যাবে রবীন্দ্রনাথ কতটা নিজের জোরে দাঁড়াতে পারেন। নইলে গলায় একটু সুর খেললেই পয়সা দিয়ে রেকর্ড বের করে শিল্পী হয়ে গেলাম - এ অনেক হয়েছে। অনেক শুনেছি দুশোটি গানের চর্বিত-চর্বণ। গেল কুড়ি-তিরিশ বছরে একজন গায়কও কি উঠেছে ... ...
শার্লক হোমস সংক্রান্ত। ... ...
ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বালেশ্বরে। চাঁদিপুরে গেছিলাম সাতদিনের জন্যে। গিয়ে দেখি প্রেশারের ওষুধ আনিনি। বালেশ্বরে গেলাম ওষুধ কিনতে। বলল, "আনিয়ে দেব, কাল আসুন।" বাজারে চা খেতে গিয়ে আলাপ হল ভদ্রলোকের সঙ্গে। স্বাস্থ্যবান, দেহাতি চেহারা। খেটো ধুতির ওপর মোটা সুতির পাঞ্জাবি, গলায় তুষের উড়ুনি। ভদ্রলোক যে কোন প্রদেশের বোঝা মুশকিল। আমার সঙ্গে পরিষ্কার বাংলায় কথা বললেন, দোকানির সঙ্গে উড়িয়ায়, সঙ্গে দুজন আদিবাসী মজুর ছিল - তাদের সঙ্গে কোন এক উপভাষায়। আমার জঙ্গলপ্রীতির কথা জেনে বললেন, "আসুন না। জঙ্গল দেখে য ... ...
তখন আমি এফডি ব্লকে মুস্তাফির নেটে খেলতে যাই। আমার নিজের কোন ব্যাট ছিল না। ইংলিশ উইলো আর কোত্থেকে পাব! বাবা কাশ্মীরে কাজে গেছিল। একটা কাশ্মীর উইলোর ব্যাট এনে দিয়েছিল। সে ব্যাটে খেলা হয়নি। আসলে ব্যাটটা একেবারে কাঁচা, কারখানা থেকে কেনা। দেশের সব ভাল ব্যাট কাশ্মীরে তৈরি হয়। সেখান থেকে বম্বে-দিল্লি-কলকাতায় গিয়ে মহাজন কি সাইমন্ডস ব্র্যান্ডে বিক্কিরি হয়। বাবা জানত না যে ব্যাটে তখন অয়েলিং-ও হয়নি। অয়েলিং করে নকিং করে খেলব, এই ছিল বাসনা। সে সব আর করে ওঠা হয়নি। কাজেই একেবারে আনকোরা, নতুন অবস্থাতেই ওটা ছিল। ... ...
নিউ ইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে যখন নেবেছি তখন বেলা প্রায় দেড়টা। নাবার কথা ছিল সকাল নটায়। স্যান ফ্র্যান্সিসকো থেকে সোজা নিউ ইয়র্ক। বাজে আবহাওয়ার জন্যে প্লেন ঘুরে এল ডেনভার দিয়ে। ব্যস সাড়ে চার ঘন্টা মায়া। আমরা যাব নায়াগ্রা ফলস। এয়ারপোর্ট থেকে সময় লাগবে সাত ঘন্টা। নটায় নাবলে পথে থেমে-টেমেও ছটার মধ্যে হোটেলে ঢুকে যাবার কথা। হতচ্ছাড়া শীতকাল।
অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল শীতের মাঝে একবার নায়াগ্রা ফলস দেখতে যাব। চতুর্দিক সাদা, নায়াগ্রারও অনেক অংশ জমে গেছে, তারই মাঝে সে ঝিরঝিরি বয়ে আচমকা দেড়শো ফুট ঝাঁপ দ ... ...
একটা লোক মোটা গলায় গাইছে "সুদূর, বিপুল সুদূর"। আর আমি দেখছি আদিগন্ত মাঠ, চোত মাসের ঠাঠা রোদ্দুরে দগ্ধ হচ্ছে। সেই লোকটাই আবার যেই বলেছে, "সেদিন এমনি মেঘের ঘটা রেবা নদীর তীরে", অমনি গায়ে ভিজে হাওয়ার ঝাপটা এসে লেগেছে। হাট করে খোলা ঘরদোর, হুহু করে ছাট এসে বিছানা-টিছানা সব ভিজিয়ে দিল। বেয়াক্কেলে লোক!
গলা শুনলে মনে হত একটা লোক থ্রি-পিস স্যুট-টাই পরে গান গাইছে, পায়ে চকচকে জুতো। পরিচ্ছন্ন করে দাড়ি-গোঁফ কাটা। ধারালো, চকচকে কিন্তু সমাহিত চেহারা। গানে সাহেবি পরিশীলন। আমার তখন কতই বা বয়েস হবে? বছর ... ...
ভদ্রলোকের সঙ্গে ট্রেনে আলাপ হয়েছিল। সেটা নব্বই দশকের প্রথমদিক। আমাদের তখন কলেজে ফাইনাল ইয়ার। ষোলজনের দল গেছিলাম বম্বে-পুনা-গোয়া। ফেরার সময়ে বম্বে থেকে ট্রেন ধরেছি। একসঙ্গে সব জায়গা পাওয়া যায়নি। আমি, অসীম আর শেখর আলাদা হয়ে গেছি বাকি তেরজনের থেকে। টু-টিয়ার কামরায় আমাদের সঙ্গে ওই ভদ্রলোক । মিস্টার সেনগুপ্ত। মাঝবয়েসী, বছর পঁয়তিরিশ বয়েস। ব্যবসার কাজে বম্বে গেছিলেন, ফিরছেন। খুব মাইডিয়ার লোক। তখন আমাদের যা বয়েস তাতে কেউ বড়দের মতন ব্যবহার করলে কি সিগারেট অফার করলেই দারুণ ভাল লেগে যায়। সেনগুপ্তবাবু সেসব ... ...
সে অনেককাল আগের কথা। আমার তখন ছাত্রাবস্থা। রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের টাকার ভরসায় ইটালি বেড়াতে গেছি। যেতে চেয়েছিলাম অস্ট্রিয়া, সুইৎজারল্যান্ড, স্ট্রাসবুর্গ। কারণ তখন সবে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল শুনতে শুরু করেছি। মোৎজার্টে বুঁদ হয়ে আছি। কিন্তু রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের টাকায় সুইৎজারল্যান্ড বেড়ান হয়না। অনেক হিসেব-টিসেব কষে দেখলাম ইটালি কোনরকমে হয়ে যাবে। এসেছি ভেনিসে। পকেট তো একেবারে গড়ের মাঠ। তাই ব্যাকপ্যাকিং করছি। থাকছি ইউথ হস্টেলে। খাচ্ছি স্যান্ডউইচ আর ক্যালজোন। একদিন পিজ্জা খেয়ে দেখেছি। ইটালি ... ...
খাওয়া-দাওয়া ছিল বটে স্বাধীনতার আগে। ভারতীয় খানার স্বর্ণযুগ বলতে মুঘল যুগ। শ্রীযুক্ত বাবর যখন ভারতের অধিপতি হয়েই পড়লেন, যে জিনিসটি তিনি সবথেকে বেশি আকাঙ্খা করতেন তা হল তার জন্মস্থানের খানা, বিশেষতঃ ফলমূল। মধ্য এশিয়ার খোবানি থেকে পারস্যের তরমুজের জন্যে তার প্রাণ কাঁদত। তাছাড়াও ভারতের মশলাদার খাবারও তাঁর বিশেষ পছন্দের ছিলনা। বাবর পছন্দ করতে মধ্য এশিয়ার ঝলসান মাংসর পদ। বাবরপুত্র হুমায়ুন কিন্তু ভক্ত ছিলে পারসিক পোলাও থেকে হালকা মশলাদার রান্নার। আকবরের সময়ে ভারতীয় রান্না, পারসিক রন্ধনপ্রণালী আর মধ্য এ ... ...
আমার বাড়ির কাছেই ছোট একটা বার আছে। আমরা বলি স্টিভের ভাঁটিখানা - স্টিভস ব্রিউয়ারি। যদিও স্টিভ মদ বানায় না, কিন্তু ওটাই আদরের নাম হয়ে গেছে। আমরা কজন আধবুড়ো লোক প্রতি শনিবার সকালে গলফ খেলে স্টিভের দোকানে ঢুকে দুয়েক পাত্র বিয়ার সেবন করে বাড়ির পথ ধরি। এ আমাদের অনেকদিনের অভ্যেস। স্টিভ ভিয়েতনামের যুদ্ধে লড়াই করেছে। এখানে যুদ্ধফেরতদের ভেটারেন বলে। স্টিভ হল ভিয়েতনাম ভেটারেন। যুদ্ধের পরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে প্রায় পিসনিক হয়ে যায়। নিজে ওহায়োর ছেলে, কিন্তু ওর বেস ছিল স্যান্টা বারবারা। সেখানে থাকার সময়েই বারবারা বল ... ...