"গল্প লেখা বা বলার দেবতা বলল - তা হলে তুমি একটা চির -অতীতের গল্প লেখো বা বলো না কেন?" এই বাক্য দিয়ে , পৃথিবীর একটি প্রাচীনতম আখ্যান ভিত্তি করে এই বই শুরু হয়। ওল্ড টেস্টামেন্টের গল্পগুলো তৈরি হয়েছিল ১২০০০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথকের জিভে ও উচ্চারণে , প্রাচীন হিব্রু বা আরমাইক এ। ৭০ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম ধ্বংসের পর ওল্ড টেস্টামেন্টের সব পাণ্ডুলিপিই প্রায় লুপ্ত , ইহুদি ধর্মজ্ঞরা স্মৃতি থেকে আবৃত্তি ... ...
"আমরা একে অন্যকে সাহায্য করতে পারি, কিন্তু নিজের ক্রুশ নিজেকেই বইতে হয়।"সংবেদনশীলতা কি কাউকে আদতে শেখানো যায়? অধুনা আপাত নিউরোডাইভার্স কর্পোরেট সংস্কৃতিতে কথায় কথায় অন্যের জুতোয় পা গলানোর যে প্রবাদ চালু আছে, সেই দুনিয়ায় সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষের প্রতি সহমর্মী হয়ে ওঠার জন্য কতটা কাজে দিতে পারে আশি বছরের পুরনো টি-গ্রূপ মেথড? এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে, ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ এডভান্সড বিহেভিওরাল সায়েন্সের দুই আবাসিক শিবিরে যোগ দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন লেখক। এই পদ্ধতিতে দশজন প্রতিভাগীরা কদিন রোজ আট ঘণ্টা আলাদা ঘরে যেভাবে একে অপরের সঙ্গে যা ব্যবহার করেন, তাই হয়ে ওঠে তাদের নির্জ্ঞান মনের ডেটাবেস। পুরো পদ্ধতি পরিচালনার দায়িত্ত্বে থাকেন কতিপয় ফেসিলিটেটররা। শুরুতেই সবাইকে এক ফর্মে সই করতে হয় এই মর্মে যে এই ... ...
এই উপন্যাসকে আমরা চারটে অঞ্চল জুড়ে বানানো একটা কাল্পনিক মানচিত্র এবং সেই মানচিত্রের চারটে কাল্পনিক অঞ্চলকে চাররকম রং দিয়ে কল্পনা করে নিতে পারি । কমলা অঞ্চলে অর্থাৎ কলকাতার সাহেবগলিতে থাকে মিঠু , তার মা ছন্দা এবং বিপ্লব। নীল অঞ্চলে অর্থাৎ বিদেশে[ব্রিটেন সম্ভবত] আছে পঙ্কজ , লিপি , সুবিমল। সবুজ অঞ্চলে কলকাতার অন্য একটা পুকুরসুদ্ধু গলির মধ্যে প্রতিবেশী হিসেবে থাকেন স্মিতার অসুস্থ জেঠিমা এবং শখ হিসেবে মহাকাশ নিয়ে অবসেসড সনৎ। হলুদ অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় বৌবাজারের নির্মীয়মান মেট্রোর সাইট ইঞ্জিনিয়ার সাহিল , তার প্রেমিকা কঙ্কণা এবং বৌবাজারের ফুটপাথবাসী প্রফুল্ল। উপন্যাসের এই প্রধান চরিত্রগুলো এক বছর ধরে নিজেদের নিজেদের স্বতন্ত্র অঞ্চলে বসবাস করে এবং এক অঞ্চলের চরিত্রের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের চরিত্রের সামনা সামনি দেখা হয়না। কিন্তু চরিত্রগুলোর মধ্যে কিছু কিছু অতীত স্মৃতির মাধ্যমে সংযোগ আছে। যেমন বর্তমানে আলাদা আলাদা রঙের অঞ্চলে থাকলেও মিঠু ও সনৎ এককালে বিবাহিত ছিল। স্মিতা ও পঙ্কজ বিবাহিত , ... ...
সংগীতের জগতে 'কন্সেপ্ট অ্যালবাম' বলে একটা জিনিস হয়। সাধারণত গানের অ্যালবামের একটা গান অন্য গানের থেকে কথায় এবং বিষয়ে আলাদা হয়ে থাকে , কিন্তু কন্সেপ্ট অ্যালবামের গানগুলো কোথাও একটা অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা থাকে , তাদের কথা এবং বিষয় একই ধাঁচের হয়। শেষ পর্যন্ত গানগুলো মিশে গিয়ে যেন একটা নির্দিষ্ট থিমের দিকেই নির্দেশ করে। এরকম অ্যালবামের প্রকৃষ্ট উদাহরণ পিন্ক ফ্লয়েডের 'এনিম্যালস' বা 'দ্য ওয়াল' অ্যালবামগুলো। 'ছয়ে রিপু' বইটাও বাংলা ভাষায় সেরকম একটা 'কন্সেপ্ট গল্পের বই' বা এন্থোলজি বলা যেতে পারে। গল্পগুলো একে অপরের থেকে আলাদা কিন্তু কোথাও গিয়ে সমষ্টিতে এক সম্পূৰ্ণ নতুন আখ্যানের জন্ম দেয়। লেখক এই বইতে বাংলা ভাষায় বর্তমানে অধিকতর লেখালেখি হচ্ছে সেরকম ছটা ঘরানা[ঋতু]র ... ...
সাবান শ্যাম্পু বৈদ্যুতিক গাড়িদের মত যেকোনো ভোগ্যপণ্য বাজারে ছাড়ার আগে মার্কেট রিসার্চ বলে একটা জিনিস করা প্রায় আবশ্যিক। এটা করলে জানা যায় ক্রেতারা ঠিক কিরকম জিনিস কিনতে চাইছেন , বাজারে সেই জিনিসটার অভাব আছে কিনা অভাব না থাকলে যে সব ব্র্যান্ডের জিনিস ইতিমধ্যেই বাজারে পাওয়া যায় তাদের সঙ্গে কিরকম প্রতিযোগিতা হতে পারে , তাদের থেকে আপনার পণ্য কতখানি আলাদা ইত্যাদি। ছবি পণ্য হলেও এরকম কোনো মার্কেট রিসার্চ বাংলা ছবিতে আজ পর্যন্ত করা হয়েছে বলে জানা যায়নি। নির্মাতারা কি আদৌ জানেন যে সাধারণ বাঙালি দর্শক কিরকম ছবি দেখতে চায় ? নিজেদের স্বচ্ছন্দ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে কি বাংলা ছবির নির্মাতাদের এখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার ... ...
কিছু ছবি দর্শকদের মনে বছরের পর বছর থেকে যায় , কিছু হল থেকে বেরোনোর পরেই ভুলে যাওয়া যায়। মনস্তত্ব অনুযায়ী এটার ব্যাখ্যা হল ছবির সঙ্গে দর্শকদের নিজস্ব আবেগের সংযোগ [বিজ্ঞাপনের ভাষায় ইমোশনাল কানেক্ট] তৈরী না হলে বেশিরভাগ দর্শকরা সাধারণত সেই ছবি পছন্দ করেন না এবং মনে রাখেন না। আসলে তারা নিজেদের জীবনকেই পর্দায় দেখতে চান কিন্তু একইসঙ্গে এটাও চান যেন তারকারা অতিপ্রাকৃত বা অবাস্তব কিছু একটা করে হলেও শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জিতে যান। ঠিক যেটা অনেকসময় মনে ষোলআনা ইচ্ছে থাকলেও দর্শকরা নিজেদের জীবনে করতে পারেন না। এতে কোনো সন্দেহ নেই আশির আর নব্বইয়ের দশকের মূলধারার বাংলা ছবিগুলো ফিল্ম করা যাত্রা হলেও তাদের দর্শকদের সঙ্গে কানেক্ট করতে পেরেছিল। পাশাপাশি সেসময় 'সেন্ট পার্সেন্ট কোডোপাইরিন মার্কা' ... ...
এই পর্বে চলুন একটু বাংলা ছবির ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করা যাক। খুব বেশিদিন আগে নয় , মোটামুটি সত্তর বছর পিছিয়ে গেলেই আপাতত চলবে। সেসময় সারা পৃথিবীতে ছবিতে সত্যিকারের কোনো লোকেশনে শুটিং হত না। সমস্ত শুটিং হত বিরাট জায়গা নিয়ে তৈরি এক একটা স্টুডিওর সেটের ভেতর। কলকাতার টালিগঞ্জের সেরকম স্টুডিওগুলো ছিল ইন্দ্রপুরী , টেকনিশিয়ান্স ষ্টুডিও (সরকারি), এনটি ওয়ান। ক্যামেরা জিনিসটা তখন এত বড় আর ভারী ছিল যে সেটা স্টুডিওর বাইরে বের করার ঝক্কি পোহাতেন না কেউ। ইনডোর সেট ছাড়াও স্টুডিওর ভেতর বহু আউটডোর সেট তৈরি থাকত [ ইতিহাসে আশ্রিত ছবির গল্পের জন্য মন্দির , রাজাদের প্রাসাদ ইত্যাদির তৈরী করা ছাঁচ ] , শুধু সময়মতন স্টুডিও ভাড়া নিয়ে ছবির শুটিং শুরু করে দিতেন এক্সরা। সেই সময় অর্থাৎ পঞ্চাশের দশকের ... ...
এই যে এত এক্স ওয়াই এবং জেডদের কথা হল , এদের বাইরেও ছবির ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা সমান্তরাল ব্যবস্থা চালু আছে এবং সেই পরিবেশনা এবং প্রদর্শনের ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে অনুসরণ করা হয় । ধরে নেওয়া যাক আপনার একটা ছবি বানানোর ইচ্ছে কিন্তু কোনো এক্স আপনার ছবিটা করতে রাজি হলেন না। অগত্যা আপনাকে সমবায় পদ্ধতিতে ছবিটা বানাতে হবে। নিজেকেই টাকাপয়সা জোগাড় করতে হবে , যারা অভিনয় করবেন তাদেরকে বলতে হবে অল্প টাকায় কাজ করার জন্য , নিজেকেই পরিচালনার পাশাপাশি ক্যামেরা এডিটিং সব করতে হতে পারে ইত্যাদি। বা এখন মোবাইলেও হয়ত আপনি একটা ছবি তুলে ফেললেন , বানালেন একটা ছোট দৈর্ঘ্যের ছবি। কিন্তু ছবিটা সবাইকে দেখাবেন কি করে ? প্রচলিত ... ...
আগে একটা ছবি দেখে কারুর ভালো লাগলে সেটা আরেকবার দেখার একমাত্র উপায় ছিল আবার হলে গিয়ে দেখা। এভাবেই কিছু ছবি এক বছর ধরে একেকটা হলে চলত । ব্যাপারটা কিছুটা বদলাল ভিএইচএস আসার পর। কোনো ছবি দেখে ভালো লাগলে কিছুদিন বাদে দর্শক তার ভিএইচএস ক্যাসেট কিনে বাড়িতে রেখে দিতেন এবং যতবার ইচ্ছে দেখতেন। আরো কিছুদিন বাদে এল সিডি , ডিভিডি। সস্তায় এত পুরোনো ছবির সিডি , ডিভিডি বাজার ছেয়ে ফেলতে কিছু সংস্থা ডিভিডি ভাড়া দেবার ব্যবসা শুরু করেছিল। অর্থাৎ একটা লাইব্রেরীর মতন ক্যাটালগ থাকবে , কেনার বদলে আপনি সেখান থেকে বেছে একটা ছবি আনিয়ে দেখে নেবেন। বদলে কয়েক দিনের ভাড়া দিয়ে দেবেন। নেটফ্লিক্স এরকমই একটা ডিভিডি ভাড়া দেবার সংস্থা ছিল , অনলাইন অর্ডার ... ...
ছবির ব্যবসার ক্ষেত্রে মুক্তি পাবার পর প্রথম তিন দিন খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ। অর্থাৎ প্রথম শুক্রবার , শনিবার এবং রবিবার। আশি বছর আগে একটা হল থাকলে প্রতি শুক্রবার সন্ধেবেলা আগে থেকে কিছুই না জেনে দর্শকরা ঘুরতে ঘুরতে সেখানে গিয়ে দেখতেন কি ছবি চলছে , তারপর টিকিট কাটতেন । এই সন্ধ্যেবেলার শো কেই বলা হত ম্যাটিনি শো এবং হলে যে তারকার ছবি হুলিয়ে চলত তিনিই হতেন ম্যাটিনি আইডল। কিন্তু একসময় এক্স এবং ওয়াইরা বুঝতে পারলেন যে কোন ছবি এর পরের শুক্রবার মুক্তি পাবে সেটা আগে থেকেই দর্শকদের জানা জরুরি। সবার পাড়ায় বা যাতায়াতের পথে তো আর হল পড়ে না যে তিনি বুঝতে পারবেন কোন ছবি এর পর সেই হলে আসছে। এটা সামলাতে প্রথমে হাতে আঁকা পোস্টার এল যাতে আসন্ন ছবি মুক্তির ... ...