বকুলের মনে পড়ে, যখন কলেজে পড়ত - ওর এক সহপাঠী ছিল, নাম রিনি। ও বলেছিল ওর এক পিসতুতো কাকার গল্প, থাকতেন বারাসাতে। উনি যখন ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে অফিস করতেন, তখন বলতেন - পৃথিবীর অর্ধেক লোক থাকে বারাসাতে, আর অর্ধেক লোক কলকাতায়। ঠেলে-ঠুলে, গুঁতিয়ে-গাঁতিয়ে যখন ট্রেনের দরজা পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছেন বারাসাত স্টেশনে নামার জন্য - ও হরি, নেমে দেখেন ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে বারাসাতের পরের স্টেশন বামুনগাছি'তে। তখন রিনি বলতো, কাকাই তুমি একটা কী ! তাহলে আমরা এতগুলো লোক কোথায় থাকি ! তুমি একটা যাতা। রিনির কাকার কথাগুলো অদ্ভুত আজব ধরনের। থেকেও নেই। আজ বকুল বুঝতে পারে রিনির কাকার কথাগুলো। এই থেকেও ... ...
নিজের অজান্তেই আধো-জাগা আধো-ঘুমের মধ্যে পায়ের কাছে রাখা পাতলা চাদরটি গায়ের উপর টেনে আপাদমস্তক ঢেকে নেয় বকুল। কিন্তু মায়ের অনর্গল 'এই বকুল কত বেলা হয়ে গেল, ওঠ এবার ----' ডাকাডাকিতে চোখ পিটপিট করে তাকায় বকুল চাদরটি একটু সরিয়ে মুখের উপর থেকে। শুনতে পায় টিপটিপ করে ঝরে পড়া জলের আওয়াজ। ঘাড় একটু ঘুরিয়ে মাথার দিকের খোলা জানালা দিয়ে দেখতে পায় গুঁড়ি গুঁড়ি বরফ পড়ার মতো বৃষ্টি হচ্ছে। একটা শীতল আর্দ্রতায় ভরা বাতাস খোলা জানালা দিয়ে ঢুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরের মধ্যে। জানালার উপরের পাটাতনটি অবশ্য বাধা দিচ্ছে বৃষ্টির হালকা ছাটকে ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে। কালকে রাতে শুতে যাওয়ার আগেই দেখেছিল বকুল একটি ... ...
শৈশব অথবা কৈশোরের প্রাক্কালে যখন কোনো দুষ্টুমি কিংবা অন্যায় করে মিথ্যা কথা বলে অন্যায়টি ঢাকার প্রচেষ্টায় সচেষ্ট থাকতাম অথবা ঠাকুরের পুজোর থালার থেকে লুকিয়ে মোদক কিংবা নাড়ু চুরি করতাম, ঠাকুমা এবং মা-কাকিমারা চেঁচিয়ে উঠতেন, 'তোর কী কোনো ভয়-ডর নেই ! চুরি করে আবার মিথ্যা কথা বলছিস ! কেউ ঠেকাতে পারবে না, রসাতলে যাবি তুই।' তখন ভাবতাম 'রসাতল' আবার কি ? রস মানে তো খেজুরের রস, আখের রস, মিষ্টির রস। আর 'রসাতল' মানে রসের অতল। 'রসাতল' কেন খারাপ হবে ... ...
সম্প্রতি কয়েকটি বাংলা সংবাদপত্রে বেশ কিছু প্রতিবেদনের সম্মুখীন হচ্ছেন জনসাধারণ, ‘বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা কি বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন’, ‘বুদ্ধিজীবীরা নীরব কেন ?’ প্রত্যেকটি প্রবন্ধেই উল্লিখিত একটি একই ধরণের বাক্য ‘স্বাভাবিক ভাবে বাঙালি যে লেখক, কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, নাট্যকার এই শ্রেণিটার ওপর বাংলায় যে কোনও অনৈতিক ঘটনা ঘটলে অনেকটা তাকিয়ে থাকেন।’ কিম্বা ‘বুদ্ধিজীবী বলতে একটি কাল্পনিক বন্ধনী তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে আছেন শিল্পী, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকার, নাট্যব্যক্তিত্ব, অভিনেতা প্রমুখ।’ অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী বলতে সাধারণ বাঙালি এঁদের বোঝেন এবং আশা করেন এনাদের সরবতা অনৈতিক ঘটনার বিরুদ্ধে। বুদ্ধিজীবী বলতে আমার এই ক্ষুদ্র মস্তিস্কে যেটি বোধগম্য হয়, বুদ্ধিবলে যে বা যারা জীবিকা নির্বাহ করেন। ... ...
চলন্ত ট্রেন শহরতলি ছাড়িয়ে এক এক করে স্টেশন, বড় বড় অট্টালিকা এবং কারখানার চিমনি নিঃশেষিত কালো ধোঁয়া পিছনে ফেলে যখন এগিয়ে চলে দিগন্ত প্রসারিত সবুজ মাঠ ব্যাপী আধা-শহর আধা-গ্রাম অভিমুখে - চোখে পড়ে নির্মল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর খাল-বিল-জলাশয়-নদীর চরে কাশফুলের মোহনীয় দোলাদুলি। আমার আপনার মনের পর্দায় ভেসে আসে বিশ্বখ্যাত সত্যজিৎ রায়ের 'পথের পাঁচালী'র সেই দৃশ্য - দূর্গা, অপু ছুটে চলেছে হাত ধরাধরি করে স্বপ্নিল মুখে অপার বিস্ময় ভরা চোখে কাশফুলে ভর্তি মাঠের ভিতর দিয়ে, আর দেখা যাচ্ছে কয়লার ইঞ্জিনের ট্রেন ভেঁপু বাজাচ্ছে, ধোঁয়া উড়িয়ে। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যা কল্পনায় এঁকেছেন, তাই সেলুলয়েডের পর্দায় আমাদের দেখালেন সত্যজিৎ রায়। ... ...
সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত বিবেক দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর বিছানায় একটু গড়িয়ে নিতে নিতে ভাবে পঁয়ত্রিশ বছর প্রায় হয়ে গেল তার সংসার-ধর্ম শিখার সাথে, কিন্তু আজও সে ঠিকঠাক ভাবে বুঝে উঠতে পারলো না তার স্ত্রীকে। তার কী যে মায়া এই সংসারের প্রতি ! একঘন্টার উপর হয়ে গেল সবার দুপুরের খাওয়া হয়ে গেছে, কিন্তু শিখার পাত্তা নেই। এখনও সে রান্নাঘরে ব্যস্ত কাজের মাসির সাথে। বাসন ধুচ্ছে রাসমণি মাসি। যতক্ষণ না সে ধোয়া বাসন পরিপাটি করছে, দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করবে শিখা। এখন তাদের ছেলে কিশোরের বউ রনি জুড়েছে এই সংসারে প্রায় বছরখানেক হলো, দিতে পারে তাকে এই তদারকির দায়িত্ব। কিন্তু দেবে না। পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ... ...
ঋতুরাজ এবং সৃষ্টির ছয় কন্যা। প্রত্যেকেরই বিবাহ সম্পূর্ণ। পরম সুখে সন্তান-সন্ততি, স্বামী সহ ঘর-কন্নায় ব্যস্ত তারা। কিন্তু প্রত্যেকেই তারা পিতৃগৃহে বছরে একবার অন্তত আসে। আর মেজকন্যা বর্ষা বছরে দুবার তো আসেই, মাঝে মাঝে তিনবারও হয়ে যায়। আর বড়োকন্যা উষ্মা তো যেতেই চায় না। সেই যে চৈত্র মাসে আসে, আর যাওয়ার নাম নেই। মেয়ে বৈশাখীকে বাবার কাছে পাঠিয়ে দিলেও নিজে থেকে যায় পিতৃগৃহে। আর জ্যৈষ্ঠ মাসে বর্ষার বড়দি উষ্মার পিতৃগৃহে থাকাকালীন হুট্ করে একদিন বর্ষা চলে আসে তার পুত্র মেঘমল্লার আর কন্যা মেঘবালিকাকে নিয়ে। শরৎ তার কন্যা শিউলিকে নিয়ে এসে উপস্থিত তার পিতৃগৃহে। কিন্তু উষ্মা আর বর্ষার কোনো ইচ্ছে দেখা ... ...
পাতা ৬২ : প্রতিদিন বিছানায় শরীরটা রাখলেই, অনিলবাবুকে গান শোনাতে মরিয়া হয়ে ওঠে সে। বার বার দেয় চুম্বন হাতে, গলায়, কপালে, এমনকি পায়েও। ছাড়ে না দেহের কোনো অংশ। দেহের যে অংশ উন্মুক্ত, সেখানেই চুম্বন। মাঝে মাঝে রক্ত বের করে দেয়। প্রতিরাতে খাওয়ার পর অনিলবাবুর নেশা একটু টিভি দেখার। টিভি দেখতে দেখতে যতই হাত দিয়ে তাকে সরাবার চেষ্টা করেন, ঠিক সময় সুযোগ বুঝে আবার বসায় তার ভালোবাসার দংশন। শান্তিদেবী এই এলেন বলে। বাইরের চোকরি’তে এঁটো বাসনপত্রের নামানোর আওয়াজ পেয়েছেন। নার্ভের ওষুধটা খেয়ে এবার ঘরে ঢুকবেন। শান্তিদেবীর আসার আগেই যা করার করতে হবে অনিলবাবুকে। ওনার কানে গানের গুনগুন আওয়াজ গেলেই তাকাবেন অনিলবাবুর ... ...