এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • চুনসুরকি অলিগলি

    Sayantan
    বইপত্তর | ২৮ ডিসেম্বর ২০০৫ | ১৪৪৩৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • xi | 161.141.84.221 | ০৯ জুন ২০১২ ০১:৩৫451281
  • না, ভিন্ন শব্দ। শব্দটায় বে উপসর্গের প্রয়োগ নেই, পথ কথাটাও নেই। কথাটা বেপ। বেপথু কে বেপমান ও বলা যায়।
    বেপথু-বেপমান-কম্পমান।

    এর মধ্যে পথ কথাটা নেই।
  • সায়ন | 125.241.47.199 | ০৯ জুন ২০১২ ০৯:৫২451282
  • ক্ষি, স্যাম - দুজনকেই ধন্যবাদ। আমি ভুল জানতাম।
  • -- -- | 127.194.99.6 | ১০ জুন ২০১২ ১২:৫১451283
  • ক্রমান্বয়ে আমি ডিঙাই নোংরা আবর্জনার পাহাড়, দুর্গন্ধে গাছেরাও পাতা-ফাতা ফেলে বেপাত্তা। ছোট ছোট টিলায় সাজানো সভ্যতার শৈশব, পুরানো ফেন্সোডিলের শিশি, ছেড়া- ছাতু হওয়া চটি, দিশি মদের বা ফিনাইলের আবছা লেবেলের বোতল, ভাঙ্গা খেলনা সাইকেল, রিকশার সিট, মাংস চটা মৃত কুকুর, সদ্য পচা ইঁদুর হাবি জাবি স্মৃতিহীণ ফ্যালনা জীবন। কোথাও কোথাও ঘাস অবধি জন্মে গেছে। ঘসাটে চামড়ার সিডি এদিক ওদিক মেলা পড়ে, তার বুকের ওই টুকু ফাঁক খুঁজে মাথা তুলেছে ফ্যাকাসে ঘাস, দুর্গন্ধভরা আকাশের দিকে। ছেড়া পাঁচশো টাকার নোটের দু এক কুচি আছে বাকি যেন রহস্য। জাল নোটই হবে।

    আমি মাঝে মাঝে রাস্তা জুড়ে পেরেক আর কাঁচ সাজিয়ে হাঁটি। পায়ে ফুটতে থাকলে চোখ বন্ধ করে আরো একবার নিই প্রেমের আস্বাদন। কালো রক্ত অন্ধকারে মিশে থাকে মিশকালো রাস্তায়। গরমে পোষাক খুলে ফেলতে চাইছে গায়ে গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে কদাকার বাড়িরা। সৈন্যেরা যেন প্রস্তুত হয় নি এখনও, বাতিল যুদ্ধসাজে গান গাইতে নেমে পড়েছে চন্দ্রবিন্দু, স্টেজ ঘুরেই চলেছে। ডাকছে হরপ্পা, নালন্দা ইজিপ্ট, কোন এক পিরামিডের মাথায় বসে থাকা শিকারি বাজ পাখি। শহর জুড়ে ম্যানহোলের ডাকনাগুলোকে আবিস্কার করি- এক দুই, পাঁচ টাকার মুদ্রা, বিদ্যুতচমকের কাকরশ্মীতে টের পাই আমি সম্পূর্ণ নগ্ন।

    আমি মাঝে মাঝে গাছ পুঁতি আকাশে রাস্তায় আগ্নেয়গিরিতে। নান বয়েসে ফেলে আসা প্রেমের মত গাছ পুতি, বেড়া দিই, বলি চিঠি দিও। কাগজে রঙ ঘসি, গাছের পাতায় সবুজ, হুলুদ, লাল। জেমস গান গায়, পত্র দিও, পত্র দিও, সিডি ঘোরে- দিন যায় রাত আসে। সকালে-বেশিরভাগ দিন দুপুরে দাঁত মাজি। দাঁত মাজা শেষ হলে আয়নাটা ফেঙ্গে ফেলে দিই, জানালার যেই দিকে আবর্জনার স্তূপ অনুমান।পকেট হাতড়ে দেখি, নাহ কোন টাকা নেই। জোরে একটা টান দিই। জামার পকেটটা উঠে চলে আসে। জানালা দিয়ে ফেলে দিই সেটা। চাল- মুড়ি কিছুই না থাকলে, তাদের পাত্রগুলোও ফেলে দেওয়া চলে। ইন্টারনেটটা এখনো যে কী করে চলছে বুঝতে পারি না- মোডেমের মধ্যে তার প্রাণটা দপদপ করে। আমি টাইপ করি আবর্জনা। আমার মস্তিষ্কের মধ্যে ফুটো করে কে যেন ঢেলে দিয়েছে এক দোয়াত কালি। কালো কালি ধিরে ধিরে নেচে নেচে মিশছে গাঢ় লালে, তাজা ধুক-পুকে, প্রেমে।

    আমার পাঠক-পাঠিকারা আমায় মাঝে মাঝে এটিএম মেশিন মনে করে। এটা ওটা নম্বর টেপে, কচলায়। বিভিন্ন খাস্তা শহরে এলিফ্যান্ট রোডের রাস্তায় গ্রীসে নিয়ে পুরানো রঙচটা বাড়িতে ফিট করে দেয়। অক্ষর ভিক্ষা করে নতজানু হয়ে, কোন প্রাচীন মাতাল রাত্রে, যেন সক্রেটিস। কেউ কেউ চায় এম আর আই মেশিন বানাতে, সিডিতে ধরা থাকুক প্রতিটি রোমকূপ, অস্থিগ্রন্থির স্বর অসঙ্গতি। কেউ বলে এটা চাই, কেউ বলে ওটা। আমি নিজের শরীরের সঙ্গে জুয়া খেলি- স্লটার, কাঠমান্ডু, লা ভেগাসে। ঝুলে ঝুলে বাড়ি যাই লোকাল ট্রেনে। আশার বৃষ্টি কেবল জল হয়ে পড়ে, টাকা পয়সা গাছের পাতা সব ন্যাড়া বিবর্ণ বিলীন বেলুন লাগে আবর্জনার স্তূপে দাঁড়িয়ে।

    ( ৯ জুনের লেখা)
  • Sam | 127.216.202.226 | ১০ জুন ২০১২ ১৩:৩৪451284
  • উপরের লেখাতে একটা অদ্ভুত মাদকতা আছে, লেখাটা ক্রমশ সুররিয়াল হয়েছে , বেশ ভালো।
  • সায়ন | 125.184.109.13 | ১১ জুন ২০১২ ১৫:২৩451285
  • সুমেরুদার লেখালিখির পাখা চিরকালই ঃ-)
  • Kaju | 131.242.160.180 | ১১ জুন ২০১২ ১৮:১৬451286
  • চোন্দিলও ভুল জানে। অন্তহীনে 'মুঠোর রুমাল'-এ আছে একটা লাইন -

    'বেপথু এ হাওয়া'

    ওই শুনে আমিও ভুল শিখছিলাম সে সময়। ছুট্টে গিয়ে সংসদ খুলে ভুলটা উড়িয়ে ঠিকটা বসিয়ে নিলাম।

    অনেকেই ভুল বলে। একজন 'যুক্তি তক্কো গপ্পো' নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখেছিল। তাতে নীলকন্ঠ সম্বন্ধে বলেছে - 'এই বেপথু অবস্থাতেও সে গেয়ে ওথে কেন চে আছো গো মা'।

    মরাল অব দ্য স্টোরি কী?

    কীইইইইই

    মাঝেমধ্যে একটু দ্যাখস নাড়ী দেখে ভেরিফাই করে নেবেন।
  • xi | 161.141.84.239 | ১১ জুন ২০১২ ১৮:৫৬451287
  • হাওয়া হয়তো কাঁপছিলো। ঃ-))))
  • কাজু | 131.242.160.180 | ১১ জুন ২০১২ ১৯:০৫451288
  • বেপথু এ হাওয়া ঠিকানা চায়।

    অর্থাৎ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হাওয়া ডাক্তারের ঠিকানা চাইছে ! ওক্কে।
  • কাজু | 131.242.160.180 | ১১ জুন ২০১২ ১৯:০৬451289
  • ক্ষি-দি, সি দ্য ভাট অব মর্নিং।
  • Tim | 108.249.6.161 | ১১ জুন ২০১২ ২০:০৫451291
  • হাওয়া কাঁপে তো। উত্তাল কাঁপে। তিরতির করে, ফ্যাৎফ্যাৎ করে। হাওয়ার কাজই কাঁপা ও কাঁপানো। গভীরের গিয়ে ভাবলে , টেকনিকালি সবই কাঁপছে। বিজ্ঞানেই আছে। ঃ)
  • sam | 127.192.251.217 | ১১ জুন ২০১২ ২০:২২451292
  • এই কিছুখ্সন আগে গাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ চালিয়েছিলাম, যা কেঁপেছি না, বুঝতে ই পারছি তলে তলে সব কাঁপছে।
  • xi | 161.141.84.215 | ১১ জুন ২০১২ ২০:২৫451293
  • তবে? যারে কয় মহাকম্প।

    "তিরিক তিরিক লম্ফ
    মাটির নিচে যে কম্প
    হাজারে হাজারে বাজারে বাজারে
    বাজছে কী জগঝম্প! "

    ঃ-)
  • xi | 161.141.84.215 | ১১ জুন ২০১২ ২০:২৮451294
  • ভেবে দেখলে এই যে যত বাজনা--জগঝম্প ই হোক বা সেতার গিটার বা তানপুরো ই হোক, সবই তো কম্পন।
    ঃ-)
  • Sam | 127.192.251.217 | ১১ জুন ২০১২ ২০:৩৭451295
  • কাঁপে কাঁপে-আমার হিয়া কাঁপে-
    কর এ সি বন্ধ-
    এ সি ব অ অ অ ন্ধ -
    এ সি বন্ধ , গায়ে গন্ধ, অমিত্রাক্ষর ছন্দ জাগে-
    ময়লা এ মন ধো আগে।

    :P
  • xi | 161.141.84.239 | ১১ জুন ২০১২ ২০:৩৯451296
  • আরে কাজু, দেখেছি মর্নিং ভাটে তোমার লেখাটা। কিন্তু সে আলোচনা কি আর "একতারাটির একটি তারে" ধরবে?
    সে নতুন টই খুলে করতে হবে। ঃ-)
  • সায়ন | 111.63.238.28 | ১৯ জুন ২০১২ ০৪:৪১451297
  • আজ নিঝুম রাতে সব অশরীরী মাতাল। দুরন্ত উল্কাগতিতে সাঁত সাঁত হাওয়া কেটে দৌড়োয় নামগোত্রহীন কিছু স্মৃতি। সেদিনের অস্পষ্ট সেই বিকেলগুলো যখন সন্ধ্যা নামতো মল্লিকদের বাড়ির ছাদ পার হয়ে, আশী-ঊর্দ্ধ একাকী বুড়ির পেয়ারাগাছটার পাতা আরও ঘন সবুজ, ট্টি-ট্টি বলে উড়ে যাওয়া পাখীটা বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যেত প্রিয়জনের জন্য সারাদিনের কতো নতুন অবাক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় - আর আমি দেখতাম দুপুরের ঘোলাটে আকাশে শুরু হত কেমন মেঘের আনাগোনা। তুমি জানো না, সেই অদ্ভুত বিকেলগুলোয় আমার হাতে থাকত খুব ইন্টারেস্টিং কোনও না কোনও গল্পের বই। দিনের আভা মরে এলেও পৃষ্ঠাগুলি কাত করে যতটা সম্ভব আলো শুষে নিতাম দুচোখ দিয়ে। আমার তুমিসর্বস্ব সেই সেই বিকেল-সন্ধ্যেয় তোমার অধ্যায় শেষ হত পড়ে না শেষ করতে পারা পৃষ্ঠাটির কোণ মুড়ে। অনেক পরে একদিন তোমার পড়ার টেবিলে একটা শারদীয়া বুকমার্কার পেয়েছিলাম। তোমাকে না জানিয়ে চুরি করে এনেছিলাম তোমার সম্পত্তি। ভুল গান আর হট্টমেলার বেঘোরে আজ যদি খুঁজি চাবিবন্ধ ড্রয়ার, জানি অনেক সারপ্রাইজ পাবো। যেই মৌহর্তিক সীমানায় শিরায় দাগ কেটে লিখেছিল প্রথম আরও অনেক কিছুর মত প্রথম অচেনা অনুভূতি, আমি সেই বিলয়গামী সন্ধ্যেগুলোয় ছায়াপথ হাঁটি। তুমি জানো না, তোমাদের বাড়ির দোতলায় সেই বারান্দাটার এক কোণে সেই যে ঘুপচিমত ঘরটা, যেটা চিরকাল তালাবন্ধ থাকতো, যেদিন শেষ চলে আসি আমরা ওই শহর ছেড়ে, ভেবেছিলাম ওই ঘরটাকে, আর কিছু মানুষকে আর অযথা ভয় পাবো না। ভেবেছিলাম যদি ওই অচেনা অন্ধকারের প্রতিটা দিশায় একটা করে রঙীন কাগজের পৃষ্ঠা সেঁটে দেওয়া যায়, অনেক উজ্জ্বলতা গ্রাস করে নেবে শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাওয়া ঠান্ডা স্রোত। তোমার মনে পড়ে, এমন একদিন দুপুরে একটা ঘুড়ি কেটে পড়েছিল পাশের বাড়ির ছাদে, আর পুরনো দেওয়াল টপকে সেই ঘুড়ি আনতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলাম প্রশ্নদাদুর কাছেঃ-) ... তোমাকে সামনে পেলেই তো ওনার আবার উৎসাহের সীমা থাকত না! এত অকৃতজ্ঞ তুমি, আমি না থাকলে সেই একদিন স্কুলফেরতা তুমি নির্ঘাত বদরাগী ঘেয়ো কুকুরটার কামড় খেতে, নেহাত আমি তাড়ালাম তাই। তবু যতোবার সাফাই গাইতে হয়েছে এটাওটা কারণে, কই একবারও তো পাশে এসে দাঁড়াওনি! আসলে ভীতুর ডিম ছিলে তুমি। আমাদের সেই টিয়াটার মত। ভয় পেলে পিঠে ডানার পালকের মধ্যে মুখ গুঁজে নিতে, ভাবতে, উজ্জ্বল সকাল তো আর বেশী দূর নয়। অথচ নিজের ত্রিসীমানায় নিজের গন্ডীতে কী অদ্ভুত পালটে যেতে, হাতের তালুতে নুনলঙ্কার গুঁড়ো রেখে মুখে টকাস টকাস শব্দ তুলে কামরাঙা খেতে শিখিয়েছিলে। কাজলদি তোমাকে গরগরে ঝাল কয়েতবেল মেখে দিত আর কী ভালো গলা দিয়ে নেমে যেত নির্দ্বিধায় সেইসব। আমার সেই অস্পরা তুলিগুলো, ক্যামলিনের জলরঙ এমন আরও অদরকারি অনেককিছু সেভাবেই ফেলে রেখে এসেছিলাম। পরে জেনেছিলাম, তুমি নিয়ে গেছ সেইসব। আর সেই লুকনো বাক্সটা? যাতে ভরা ছিল আমাদের সাম্রাজ্য, তোমার ঊষ্ণীষের প্রতিটা পালক, আমার বিজয়ী তরোয়াল, মোমগুঁড়ো, চুমকি, কাচের চুড়িভাঙা, জরির সুতো, আমাদের নামের আদ্যক্ষর লেখা স্ফটিকের টুকরো, রুলটানা পৃষ্ঠাগুলো যেখানে কিছু উল্কাগতি স্মৃতি স্থবির থেকেছে এতকাল - সেসবও তুমি নিয়ে গেছো তো?
  • Nina | 78.34.167.250 | ১৯ জুন ২০১২ ০৮:২৮451298
  • কি মন কেমনিয়া লেখা রে সান্দা-----
  • সায়ন | 125.241.57.132 | ৩০ জুন ২০১২ ০১:৫৪451299
  • চোখের কোলে রক্ত ছিল তোর
    নিঃসাড়েতে উপচে পড়া প্রেম
    অমল আলোয় ধবল ব্যাকুলতা
    আমার কলম একতারাটি হারা

    তোর পীড়নে বনের বুকে ছায়া
    তোর খেয়ালে উদ্ধারে বিরতি
    বাসন্তী তোর হলুদ বনের ফুল
    একফালি ছাদ ভিন্ন স্রোতের নদী

    নির্ঘুম মন ঠিকরানো কঙ্কণ
    তরল রাতের পূর্ণ সোহাগ মেখে
    উথাল পাথাল দ্রাক্ষামঞ্জরীতে
    সাজিয়েছিল অশ্লীল ইঙ্গিতে

    সদ্য ছিন্ন কবিতা অধোগতি
    একতারাতে অন্যগলায় গান
    আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামাস যদি
    আর ছেড়ে যাবি না যখন তখন
  • সায়ন | 125.241.92.230 | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ০০:২০451300
  • যখন আমি ভেসে চলছিলাম অনল নদীর বুকে
    কারও নোঙরের তীক্ষ্ণ ফলা কোনওভাবে যখন
    বিঁধতে পারতো না আর আমায়
    পুড়ছিল সেই শ্মশানভরা জমিতে অগুন্তি কাঠ
    শতেক বিদ্রূপে, আর কিছুটা আদেখলাপনায়

    *************

    আমার রণতরীর দুই ধার ঘেঁষে লাল নিশান
    বর্শার ইস্পাতে বিশ্বস্ত হারিয়ে যাওয়া নাবিক,
    তাদের সান্ধ্যভাষা গান
    আমি জ্বলন্ত চোখ দেখেছি নক্ষত্রভরা সজ্জায়
    মাতাল বিজয়োল্লাস, স্খলিত পা টেনে চলায়

    আমি রক্ষা করতে পারিনি সেই নাবিকদের
    বিদেশী শস্যের ভান্ডার, তুলোর গাঁঠরি,
    স্মৃতির এলোমেলো উপাখ্যান
    যেদিন আকাশচুম্বী আগুনে জ্বলেছিল দাউদাউ
    আমি নির্দ্বিধায় শপথ ভেঙেছিলাম বাঁচবার

    দিশাহীন নৌকা ছোটে দুর্নিবার ঘূর্ণির ডাকে
    শেষ শীতে, আমি এমনই উদ্দাম শিশুদের
    সাথে ক্ষণিক ছুটে চলায়
    সুখ মেখেছিলাম একটা দু'টো কোমল করস্পর্শে
    তাদের কোনও একজান হঠাৎ হাতে টান দেয়

    আর সেই বেআব্রু উদাসীন গলি উপগলি
    তার উপকন্ঠে বাঁধানো শান মুখাবয়ব নশ্বর
    শুকনো ছিল ফেটে যাওয়া মাটি
    মদের চেয়ে শক্তিধর, সঙ্গীতের চেয়েও বিপুল
    আমার নোউকার নেচে পাড় ভাঙছিল বিপুলতায়

    কেন্দ্রবিন্দুর চেয়েও ভয়ার্ত কোনও উপসীমায়
    জ্বরময় ভালোবাসা যখন মাত্রা দেওয়া শেখায়
    ব্যাঞ্জনবর্ণগুলি ধুয়ে মুছে সাফ
    নদীর গহীনে শায়িত যা কিছু অস্নেহে বিষজর্জর
    আমি আঘাত হাসি, বাদবাকিটা অস্ত্রের কেরামতি

    **************

    শিশুটির অম্লমধুর ত্বকের মত করুণ কিছু
    মাটি ভেজা গন্ধ, নদীর ধারে উঠছে ধুঁয়া
    এক আকাশ আগুন খাই তবে
    এক পৃথিবী নির্মমতা আঁজলা ভরে মুখোশ ধুয়ে নাও
    অন্ধ কোলাহল নিয়ে এসো স্রোত, এসো জল
  • সায়ন | 125.241.92.230 | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ০০:২৪451302
  • যখন আমি ভেসে চলছিলাম অনল নদীর বুকে
    কারও নোঙরের তীক্ষ্ণ ফলা কোনওভাবে যখন
    বিঁধতে পারতো না আর আমায়
    পুড়ছিল সেই শ্মশানভরা জমিতে অগুন্তি কাঠ
    শতেক বিদ্রূপে, আর কিছুটা আদেখলাপনায়

    *************

    আমার রণতরীর দুই ধার ঘেঁষে লাল নিশান
    বর্শার ইস্পাতে বিশ্বস্ত হারিয়ে যাওয়া নাবিক,
    তাদের সান্ধ্যভাষা গান
    আমি জ্বলন্ত চোখ দেখেছি নক্ষত্রভরা সজ্জায়
    মাতাল বিজয়োল্লাস, স্খলিত পা টেনে চলায়

    আমি রক্ষা করতে পারিনি সেই নাবিকদের
    বিদেশী শস্যের ভান্ডার, তুলোর গাঁঠরি,
    স্মৃতির এলোমেলো উপাখ্যান
    যেদিন আকাশচুম্বী আগুনে জ্বলেছিল দাউদাউ
    আমি নির্দ্বিধায় শপথ ভেঙেছিলাম বাঁচবার

    দিশাহীন নৌকা ছোটে দুর্নিবার ঘূর্ণির ডাকে
    শেষ শীতে, আমি এমনই উদ্দাম শিশুদের
    সাথে ক্ষণিক ছুটে চলায়
    সুখ মেখেছিলাম একটা দু'টো কোমল করস্পর্শে
    তাদের কোনও একজান হঠাৎ হাতে টান দেয়

    আর সেই বেআব্রু উদাসীন গলি উপগলি
    তার উপকন্ঠে বাঁধানো শান মুখাবয়ব নশ্বর
    শুকনো ছিল ফেটে যাওয়া মাটি
    মদের চেয়ে শক্তিধর, সঙ্গীতের চেয়েও বিপুল
    আমার নৌকার নীচে পাড় ভাঙছিল বিপুলতায়

    কেন্দ্রবিন্দুর চেয়েও ভয়ার্ত কোনও উপসীমায়
    জ্বরময় ভালোবাসা যখন মাত্রা দেওয়া শেখায়
    ব্যাঞ্জনবর্ণগুলি ধুয়ে মুছে সাফ
    নদীর গহীনে শায়িত যা কিছু অস্নেহে বিষজর্জর
    আমি আঘাত হানি, বাদবাকিটা অস্ত্রের কেরামতি

    **************

    শিশুটির অম্লমধুর ত্বকের মত করুণ কিছু
    মাটি ভেজা গন্ধ, নদীর ধারে উঠছে ধুঁয়া
    এক আকাশ আগুন খাই তবে
    এক পৃথিবী নির্মমতা আঁজলা ভরে মুখোশ ধুয়ে নাও
    অন্ধ কোলাহল নিয়ে এসো স্রোত, এসো জল
  • Milli | 161.141.84.239 | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ০২:৩১451303
  • ডানহাতের পিঠের কালচে বাদামী দাগটার উপরে হাত রেখে
    তুই জিজ্ঞেস করলি-
    "এটা কীসের দাগ রে তুরাইন?"

    আমি হাত টেনে নিতে গিয়ে টের পেলাম
    তোর মুঠি ঘিরে ধরেছে হাত, ছাড়াতে পারি না।
    কিন্তু কী বলবো তোকে?

    আমরা আগুন নিয়ে যখন প্রথম খেলতে শিখলাম,
    সেই সময়ের পোড়া দাগ এটা?
    তোর তো কিছু মনে নেই চিরল,তুই সব ভুলে গেছিস।
    ভালোই তো, ভালোই হয়েছে।

    ঝাঁক ঝাঁক পাখি বাড়ি ফিরছিলো সেই সন্ধ্যায়,
    ভাগ হয়ে যাওয়া মালার মতন উড়ে যাওয়া পাখির দল,
    উড়তে থাকা মালা।
    আরেক ঝাঁক আসে একরাশি তীর যেন।
    আরেক ঝাঁক, আরেক ঝাঁক, আরো এক ঝাঁক।
    এত পাখি কোথা থেকে আসে চিরল?

    আকাশটা কমলা হয়ে ছিলো অচেনা আলোয়।
    আমরাও কমলা হয়ে গেছিলাম নিশ্চয়।
    সেই কমলাপরীর মায়ায় ভুলেই কি পথ ভুল হয়ে গেল আমাদের?

    আকাশে একটা ঘুড়িও ছিলো,
    লখ কেটে যাওয়া ঘুড়ি,
    বাতাসে ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যাচ্ছিলো নিরুদ্দেশে।
  • Milli | 161.141.84.239 | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ০২:৩২451304
  • ক্লান্ত ঈশ্বর বসে থাকে জলের ধারে, শ্যাওলা ধরে সবুজ হয়ে যাওয়া বাদামী পাথরে।
    পুরাতন আগ্নেয়শিলার মতন মন্থর স্মৃতি তার।
    সে ভাবতে চেষ্টা করে, কবে যেন চারিদিক সোনালী-কমলা ছিলো?
    কবে যেন বুড়ী পৃথিবী ফুটন্ত কিশোরীর মত গন্‌গনে ছিলো?
    সেইসব দিন! যখন খেলাঘর গড়া আর ভাঙার মতন জলেস্থলে উথালপাথাল- সে কবে?
    মনে পড়ে, পড়ে, পড়ে না।
    পৃথিবীর ঈশ্বর গভীর ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে।

    তার স্বপ্নে এখন সেই নবীনবেলার দিন-
    সেইসব ঝড়বজ্রবিদ্যুত, প্রতিশ্রুতিময় আকাশ থেকে আগুনের বর্শামুখ নেমে আসে সৃষ্টিমুখী মহাসমুদ্রে,
    অভিমাণী ওষ্ঠের মতন ফুলে উঠছে সমুদ্র, কী রহস্যময় স্পন্দন সেখানে!
    সেখানে গভীর কান পেতে সে শুনেছিলো আশ্চর্য গান, প্রথম জীবনের প্রথম জন্মের প্রথম কান্না।

    তারপরে কত গোলাপী ভোর, সোনালি দিন আর রাঙা সন্ধ্যা
    পার হয়ে গেছে, পার হয়ে গেছে, পার হয়ে গেছে।
    তার ঘুমন্ত মুখের উপরে ভাসে ঝরা পালকের মতন চিঠি,
    মেঘের নৌকোয় ভেসে ভেসে কাছিয়ে এসেছে।
  • সায়ন | 125.241.92.230 | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ০৫:৩৭451305
  • বড়ো দীর্ঘ এই শিকড়, জরার মত স্তব্ধ যা কিছু
    স্রোতহীন নিশিদিন অন্ধকার কূহক
    এই সব নিস্তর ভ্রমর
    যতদূর যায় চোখ দৃষ্টির অগোচর
    সেইখানে ঠাঁই নাই, সেই নশ্বর ঘূর্ণিপাক
    না হয় গোপন থাক, যদি নিতান্তই খুঁজে পাই হারানো ঈশ্বর

    কথা হয়েছিল, অগ্নিস্পর্শে রূপান্তরিত হবে শিলা
    কোলাহলময় বাগাড়ম্বরে যুগান্তর স্থাপন করবো একদিন অবহেলায়
    কথা হয়েছিল
    কথামালা ম্লান হলে বৃষ্টি নামিয়েছিলি পাথরপ্রতিমায়
    দিক্‌দিগন্ত উড়ে চলা বর্ষার সূচীমুখ ফলা
    জোয়ার ভাটা, শুরুওয়াত এবং আখির
    অস্থির শব্দাবলী বাক্য হানে পরিযায়ী পাখীটির ঠোঁটে
    রাত্রি গ্রাস করতে থাকে শব্দমুখর আর একটি দিন
    দিনের কঙ্কাল, অন্তীমসংস্কার
    জলস্পর্শে বাঁচিয়ে তুলবো হাঁটু মুড়ে বসা ভেঙে যাওয়া ঈশ্বর

    কোথায় ছিলে এত দীর্ঘ স্থাপনকার্যে, অবসাদগৃহে
    ছুটে এসে কুড়িয়ে নিয়েছিলে রৌদ্রতপ্ত অপাপবিদ্ধ ভুল
    ঝরোখায় অনন্যা নারী
    কুটীরের শান্ত গায়ে আল্পনা আঁকা
    তোমাদের ওই পৃথক বর্ণমালার মত এলোচুল
    হয়ত বনানীর বেখেয়াল বৃক্ষরোপণ
    ঢাল হয়ে নামে যতেক লুপ্ত জাতি হারিয়ে
    ফসিলের অবক্ষয়ে
    সেই পাললিক শিলার আড়ালে বসে
    অশ্রুমোচন করেন ঈশ্বর
  • nina | 79.141.168.137 | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ০৬:৪১451306
  • সান্দা--শুভ বিজয়া। কোথায় ছিলিস--কেমন আছিস?
  • সায়ন | 111.62.106.18 | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ২১:১৪451307
  • শুভ বিজয়া নীনাদি'। কোথায় ছিলাম... তা তো জানি না তবে মনে হয় একটা টাইম মেশিন আবিষ্কার করে ফেলেছি (ওয়েল, অলমোস্ট) :-)
  • সায়ন | 111.63.146.8 | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ২২:৫৫451308
  • স্মৃতি তারে ভুলিবারে পাড়ি দিছে নীলসায়র ঝিল,
    এ ঘর এখন শূণ্য তাই -
    মধ্যযামিনীতে যদি একান্তই কড়া নাড়ো...
    হয়ত দেখা হলেও হয়ে যেতে পারে তোমার আমার নির্ভীক অহংকার
    চৌকাঠের নীচ দিয়ে চুরি ক'রে উঁকি মারে আলোর শহর
    দেওয়ালে পেরেক বুকে আজকাল ঝুলে থাকে চেনা কোনও নাম
    এই হাটে ভাঙা দরজা কেনাবেচা হয়
  • nina | 79.141.168.137 | ০৪ নভেম্বর ২০১২ ০১:১২451309
  • তা বেশ করেছিস সান্দা--তোর টাইম মেশিনে চড়ে good time zone গিয়ে ও কবিতা লিখিস তো! এত সুন্দর লিখিস --বড্ড মনকেমনিয়া উদাস করে দেয়-----খুব ভাল থাকিস, অনেক অনেক লিখিস--
  • সায়ন | 59.249.33.125 | ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ২৩:৫২451310
  • চতুর্দিকে পথে ছড়ানো তোমারই খন্ড-বিখন্ড
    যে তুমিই তোমার স্বভাবে কখনও প্রেমিকা ছিলে -
    কখনও কপট হত্যাকারী।
    যা মেলেনি সমর্পণে, আর্তিতে, লুন্ঠনে বা প্রতিভায়
    তাকে কুড়িয়ে আনতে তোমার বেলা যায় -
    জানোনি,
    সে আকাঙ্খিত কী যে,
    সে তোমার প্রিয়তম।
    সে তো তুমি নিজে।
    আমি সেই।
    আবার হাতে আঙরাখা রাখো আজ
    দ্যাখো, রূপে রূপ গলে যাচ্ছে,
    দীর্ঘ হচ্ছে রাত, আর কোনও ভবিতব্য নেই,
    আর নেই কোনও অস্তিত্ববিহীন পরাজয়।
  • কল্লোল | 125.244.225.243 | ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৯:৫৪451311
  • সায়নরে। কি বলবো তোকে। লিখে যা। এমনি আরও আরও লিখে যা।
  • সায়ন | 59.200.242.6 | ২০ এপ্রিল ২০১৪ ২১:৫১451313
  • || পুরানো জানিয়াই ডাক দাও ||

    আজ স্কুল ছুটি হলেই দৌড় দৌড় দৌড়। বাড়ি ফিরে পিচকারির ওয়াশারটা ভিজিয়ে রাখা আছে দেখতে হবে ওটা নরম হয়েছে কিনা। আর সে পেতলের পিচকারি, গাম্বাট ভারি মত! আগেরবারই বলেছিলাম নতুন পিস্তল পিচকারি একটা কিনবো কিনা তা কেই বা কথা শোনে। ওখানেই শেষ নয়। শুকনো খেজুরের ডাল, তালপাতা আর পাটকাঠি চূড়ো করে হোলিকা (সেই না-গ্রাম না-শহর আধা-মফঃস্বলী জায়গাটায় সবাই বলতো 'চাঁচোড়ি') বাঁধছিল দেখে এসেছিলাম সকালেই। ছোটন আর পিকলু আজ স্কুলেই আসেনি। এই ক'দিন আগে ভীমপূজো হল। ছোটন মনে মনে কীসব বিড়বিড় করতে করতে প্রতিটা ভীমের পায়ের ফাঁক দিয়ে গলেছে। আর তার পরদিন থেকেই হাতের গুলি ফোলানোর চেষ্টা করে। ছোটনের গার্লফ্রেন্ড আছে। (এর তিন বছর পরে ছোটনের মা অর্পিতাকে বাড়ি ডেকে এনে ছোটনকে রাখী পরাবে... সে গল্প হেথা নয়)। যাহ্‌! পিঠ থেকে ব্যাগটা মাটিতে পড়ে গেল!

    বাড়ি ঢোকার মুখে চারটে ধাপ চিরদিনই একলাফে নামি। জোড়া পায়ে ল্যান্ড করলে বেশ দম্‌ম্‌ করে একটা শব্দ হয়। মা’ও বোঝে আমি ফিরলাম। বাইরের দরজার পাশেই চুনকাম করা দেয়ালে টুকুনদা’ গতবার দোল খেলার পর হনুমানকালি মাখানো পাঞ্জার ছাপ রেখে গেছিল। সেটা এখনও ততটা ফিকে হয়নি। টুকুনদা’দের ট্রান্সফার হয়ে গেছে। ওদের তলাটা খালি। হাতের ছাপটায় নিজের হাত রেখে দেখি বেশ ফিট করে গেছে। ওরকম গাঢ় সবুজ রঙ চাই। অথবা ডাক্তারদাদু যেমন লালওষুধ বানায়, মারকিউরোক্রোম, ওর’ম অনেকটা পেলে বেশ হত। তা না, নিরামিষ এক শিশি কী, এমনি গুঁড়োটা দেখতে সবুজ সবুজ, বালতির জলে মেশালেই গোলাপি লাল। দেখতেই ওই, আসলে ফিকে। আর আবীর। ধুস। টিয়াটা ঝিমুচ্ছিল। সদ্য ঘুম ভাঙা চোখ সাদা করে হিমশিতল দৃষ্টিতে তাকায়। হেহে, ভয় দেখাচ্ছিস! তোকেও রঙ মাখাবো।

    কালকের জন্য ব্যাট্‌ল প্ল্যান তৈরী হতে থাকে। দরজায় দুম দুম। পিউ এসেছে। হতচ্ছাড়াটা আনন্দমেলাটা আবার নিয়ে যাবে। মিচকে হাসির নীচে বুঝি অন্য উদ্দেশ্য। নতুন পিচকারি পেয়েছে তাই দ্যাখাতে। হাহাহা কী অদ্ভুত দেখতে ওটা। একটা অতিকায় আমের মত। মাথার কাছটায় কালোদার সেলুন দোকানে চুল কাটার সময় যেটায় করে জল দেয়, সেরকম একটা ব্যাপার লাগানো, নীচে চাপলে চিড়িক চিড়িক করে বিন্দু বিন্দু জল বেরোবে? আহারে! বলি, ওই দিয়ে বেলুনে রঙ ভরবি কী করে! নাহ্‌ সেটা ভেবেই দেখেনি। আমার প্রাগৈতিহাসিক পিচকারিটির দিকে তাকায়। হ্যাঁ ওটা তো আছেই। তবে কাল তোর প্রভূত বিপদ খুকী। ওকে বেলুনের প্যাকেট দেখাই। দেখেটেখে টা-টা করে চলে যায়। বাবা ক্যাসেট চালিয়েছে। বেশ ভালো লাগে এই গানটা, অগ্নিবীণার ঝঙ্কারে ফোটা তুমি আগুনের ফুল...

    খানিকটা এরকম দেখতে ছিল পিচকারিটা, এটার থেকে আরেকটু লম্বা আর মুখের কাছটায় শুঁড় নেই –


    আমি দেখেছি, কোনওবারেই সাদা জামা পরে দোল খেলার অনুমতি মেলে না। জিজ্ঞেস করলে এমনভাবে তাকায় যেন কী না কী বলে ফেলেছি। এবারেও তার অন্যথা হয় না। একটি পুরনো ঢ্যাপসা জামা জোটে কপালে। নীচে নামতে না নামতেই আক্রমণ। মুখে চেনা স্বাদ পেয়ে বুঝি হয়ে গেল। কিন্তু কোনটা মাখালো। গাঢ় গোলাপিটা যেন হয়, ওটা অনেকদিন থাকে। রাস্তা দিয়ে বিভিন্নরকম গড়নের একই দেখতে ছেলে মেয়ে যাচ্ছে। মাখানোর সময় চোখ টিপে বন্ধ করে রাখে বলে পরে চোখের জায়গাটা ফ্যাটফ্যাটে সাদা হয়ে দূর্ভিক্ষপীড়িত দেখায় তাই এবার আর ভুল করিনি। নিজেই বলেছিলাম চোখের নীচ ঘাড় গলা পুরো কভার করতে। আশা করি করেছে। কিছু লোক দূর থেকে আসতে আসতে আমাদের প্রস্তুতি দেখে শর্টকাট নিচ্ছে। এখন যাক। আর কিছু প্রবল খরতর চোখ পাকিয়ে হেঁটে যাওয়া লোক। জামায় প্যান্টে একফোঁটা রঙ নেই। মাখালে বোধহয় আমাদের পানাপুকুরে চুবিয়েই মারবে। ধুর কী দরকার এদের রঙ দিয়ে। দুই হাতের তেলোয় বারবার তাকাই খুশী খুশী চোখে, নাহ্‌ আঙুলের খাঁজ, হাতের উল্টোপিঠ কিচ্ছু বাদ যায়নি। দুপুরে স্নানের পর ভাত খেতে বসলে যদি রঙ লাগে তাহলেও কুছ পরোয়া নেই। ঝামেলা হয় গতবারের মত দাদাভাইয়ের ওই উল্লুক বন্ধুগুলো সন্ধ্যেবেলা মাথায় আবীর দিয়ে গেল আর তার পরের দিন মাথায় জল ঢালতেই আবার গোটা গা রঙীন ওরকম কিছু হলে। বাড়ির সামনেই পাট এবার চুকোতে হবে। বালতিটা উপরে রেখে আসি। তুতাই ছোটন পিকলু আর আরও কে কে আসছে, না সবকটাকেই চিনি। আরে ডিম নিয়ে এসেছে!

    কোথায় যাবি? চল এমনি একটা টহল দিয়ে আসি কেটিসি ক্লাব চত্বর, গয়লাপাড়া আর বাসস্ট্যান্ডের দিকটা অন্য কোনও দলের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে তো ভালোই, তবে দুটোর মধ্যে ফিরতে হবে। চৌধুরিদের বাড়ির বাগানে এখনই বেশ কুশী কুশী আম। খাওয়া যায়। ঢিল মারলেই আম পড়ে। ইঁ: এগুলো টোকো বিষ। বেশ একটা বড়ো দল চলে গেল পাশ দিয়ে। বোধহয় দাদাভাইদের ব্যাচের। সবকটা কাদামাখা। এখনই ওসব চাই না। ডিম আর শুকনো রঙ মিশে চুলগুলো বেশ খোলতাই হয়েছে। ভোটে, লাল্টু আর গব্বর – জেলেপাড়ার তিন স্টার সিগারেট ধরালো। এই ভিজে জামাগুলো আজ আর শুকোবে না। ধ্রুবদের বাড়ি আসা পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি ওদের ছাদে কেউ আছে। ঠিক বাড়ির নীচে আসা মাত্রই ঝপাস করে ধুয়ে দিয়ে গেলো। তারপরই ধুপধাপ করে পালানোর আওয়াজ। হতভাগারা। মোরাম ফেলা রাস্তার লাল কাদা আর রঙের চ্যাটচ্যাটানি মিলে পায়ের চটিগুলো এতক্ষণে বেশ চ্যাটাশ চ্যাটাশ করে বাজছে। সপসপে ভেজা জামাটা গায়ে বেশ শিরশির করে। ছোটন বলে ওই দ্যাখ পিউ। আরিব্বাস! বেশ দল বানিয়েছে তো। আমাদের আসতে দেখে একটা উল্লাস এবং আতঙ্কের মিলমিশ কোলাহল ওঠে। হুহিহাহা, লড়ে যা। সাঁৎ সাঁৎ বেলুন ওড়ে, থ্যাপাস করে ফাটে দু’একটা বেশীরভাগই মিস। অনুকূলঠাকুরের আশীর্ব্বাদে আমার নিশানা আজ বেশ চোখা। রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা উঠে আরও পাঁচ-ছয় ধাপ সিঁড়ি উঠলে তবে ওদের বাড়ির সামনের বারান্দা। ওকে দেখি এতক্ষণে। দু’হাতে ওই হাস্যকর রকমের নীরিহ পিচকারিটা নিয়ে ফিঁৎচ ফিঁৎচ করে বেড়ালের হ্যাঁচ্চোর মত রঙ ছিটাচ্ছে। মায়া হয়, স্বাভাবিকভাবেই, শত্রুপক্ষ হলেই বা কী। দু-তিনটে বেলুন ছুঁড়ি ওর হয়ে, ওর হাতে দিই আর ক’টা। ছুটতে গিয়ে চটির স্ট্র্যাপের একটা প্রান্ত খুলে গেছিল সেটা লাগানোর জন্য নীচু হয়ে বসি। যতক্ষণে ওর চীৎকারটা শুনি, ঘুরে দেখি পিউ কাঁদতে কাঁদতে দুই হাত সামনে আড়াআড়ি রেখে বারান্দার একটা ধারে বসে পড়েছে। পাশে দাঁড়িয়ে সেই ছেলেটা সামান্য বেপরোয়া মুখে। এক লহমা লাগে কী হয়েছে সেটা বুঝতে। সটান একটা ঘুষি চালাই ছেলেটার নাক লক্ষ্য করে। নিশানা যথারীতি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। ছেলেটা সামলে ওঠার আগেই ওর দাদা বা সেই জাতীয় কেউ আমার কোমরে ভারি কিছু দিয়ে মারে। বসে পড়তেই ঘাড়ে পড়ে আরেকটা। একটু অচেতন অবস্থায় দেখি লাল্টু ওকে টেনে রাস্তায় নামিয়েছে, মারপিট, একটা কোলাহল।

    দাদাভাই এসে গেছিল। বলে, হ্যাপী হোলি রে ভাই। আমি হাসি, বলি দেরী করে এলি। নির্লজ্জটা বলে, না দেরী করিনি। করলে তোকে বাড়ি নিয়ে যেত কে? মা’কে বলিস নর্দমায় পড়ে গেছিলি। আমি সাক্ষ্যপ্রমাণ ইত্যাদি দিয়ে দেবো। মনে মনে ভাবি, কোমরেরটা দেখা যাবে না, হোলির রঙের সঙ্গে ঘাড়ের কালশিটেটা কি অনেকদিন থাকবে। পিউ বোধহয় আর হোলি খেলবে না। আমার সঙ্গে কথা বলবে তো! হ্যাঁ: বলবে না আবার... আনন্দমেলা নিতে আসবেই নির্ঘাত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন