এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে : ন্যাশনাল পার্কস অফ অ্যামেরিকা

    Shuchismita
    অন্যান্য | ০৫ জুন ২০১০ | ১৯৬১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | 124.168.49.37 | ২৩ অক্টোবর ২০১১ ০৮:৩২456921
  • পাইয়ের লেখার যে বৈশিষ্ট্য সব থেকে আমাকে টানে সে হ'ল ব্যাকরণ না মানা স্বত:স্ফূর্ততা। যখন ইচ্ছে হয়, ভিতর থেকে আসে লেখা-একটানে লিখে যাওয়া -নিয়ম , কানুন , শৈলীর তোয়াক্কা না করে-খুব সম্ভব একটুও এডিট না করা। মশাদের সম্বন্ধে দু এক কথা লেখাটা, বা আমার শহর বা এই লেখার শুরুটা.. এইটা একটা ম্যাজিকের ব্যাপার। হাজার উপরোধ, অনুরোধ, চাকু, হুমকি-কাজ হবে না। বুঝে গেছি। অপেক্ষা করব বরং।
  • pi | 72.83.90.203 | ২৪ অক্টোবর ২০১১ ০৯:৩৮456922
  • ছোটাই মস্তানদির সাথে একটা ডিল করি ?
    ঐ ওষুধের কথা টইটা চলার বন্দোবস্ত করছি, কেমন ?

    পারলে গ্র্যা ক্যা র ক'টা ছবি দিয়ে যাবো। তবে ছবিতে ঠিক ধরা যায়না। কবে যে চোখের মত একটা ক্যামেরা তৈরি হবে !

  • pi | 147.187.241.6 | ২০ জুন ২০১২ ০২:০৯456923
  • নাকি এটাই তুলবো ? হুচে, টিম ? ঃ)
  • Nina | 22.149.39.84 | ২০ জুন ২০১২ ০২:১৪456925
  • হুম! আবার সে এসেছে ফিরিয়া----সুপুরি না খুঁজতে হয় আবার--তবে এবার হুচিম--না টিমুচি--টিম্পাই টা তো বেক ই হলনা
    কোতায় যেন পড়লাম--ভবিষ্যত বলবে ---
  • hu | 22.34.246.72 | ২০ জুন ২০১২ ০২:১৪456924
  • এটা তুল্লে তো তোমারও নিস্তার নেই ইপিস্তা। আর তোমাদের বিশ্বাস নেই। এবার তোমার আর টিমের দুটো সুপুরিই আমি নিলাম। আজ মাঝরাতের মধ্যে গ্রা ক্যা জমা দাও।
  • Tim | 138.173.35.222 | ২০ জুন ২০১২ ০২:১৬456926
  • আমি তো কবেই বলেছি, যে লিখে দোবো। সোসনটা কমুক, তারপরেই লিখে দোবো।
  • Rit | 213.110.243.21 | ২০ জুন ২০১২ ২০:০৬456927
  • ছোটবেলা থেকেই আমি ভ্রমন কাহিনীর পোকা। ক্লাস টেন অবধি পশ্চিমবাংলার আর বিহারের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি কিন্তু শঙ্কু মহারাজ, অ্যাটলাস আর ভ্রমন পত্রিকার সৌজন্যে মানস ভ্রমন করে বেড়াতাম লাদাখ থেকে ইয়োলোস্টোন, অন্নপূর্ণা থেকে কিলিমাঞ্জারো। শুধু স্থানবৈচিত্র নয়, মন চাইতো কালবৈচিত্র ও। শরদিন্দু পড়ে মাথা খারাপ হয়ে যেত। যাই হোক ছাত্রজীবন টা মোটামুটি ধানের শীষের উপর শিশিরবিন্দু দেখেই কাটিয়ে দিয়েছিলাম।
    আমেরিকায় এসে দেখলাম এখানে বেড়ানো তুলনামুলকভাবে সহজ। ট্রেনে রিজার্ভেশন পাবার ঝক্কি নেই। হোটেল বুকিং এর চাপ ও কম। শুধু দরকার একটা ভাল দল। আর পকেটে ড্রাইভার লাইসেন্স। টাকা না থাকলেও চলে কারন for everything else there is mastercard।
    দলের চিন্তাও ছিল না। আমার কলেজের ৪ বন্ধু সুমন, অয়ন, জয়ন্ত, নাগ দা আর আমার বৌ মৌ, সুমনের বৌ কস্তুরী আর অয়ন এর বৌ দিশা। ৮ জনের জমাট দল।
    যাত্রা শুরুর আগে দরকার ছিল একটা ঠিকঠাক পরিকল্পনার। আমি আর সুমন বসলাম ল্যাপটপ নিয়ে। ৮ দিনে আমরা ঘুরবো প্রায় ৩০০০ মাইল আর ৬ টা পার্ক এ যাবো। পার্ক গুলো ও ফেলনা নয়। রকি, ইয়োলোস্টোন, টেটন, আর্চেস, ক্যানিয়নল্যান্ডস আর মেসা ভার্দে।
    ঠিকঠাক পরিকল্পনা ছাড়া সময়ে শেষ করা অসম্ভব ব্যাপার। তার উপর আমরা ৩ রাত্তির তাঁবুতে কাটানোর কথা ভাবছি।
    সুন্দর করে ম্যাপ এঁকে সময় ছকে নিলাম। ৫ জন বাহনচালক। সুতরাং ১৫ ঘন্টা টানা চালানো ও সম্ভব। সক্কালবেলায় একটা মস্ত বড় ফোর্ড এর ভ্যান এ চড়ে আমরা রওনা দিলাম ডালাস থেকে। গন্তব্য ৯০০ মাইল দূরের ডেনভার।
    জয়ন্ত আর মৌ এর এটা প্রথম বড় রোডট্রিপ, বাকিদের তবু কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু শুরু থেকেই দেখা গেল ওদের উৎসাহ ওদের অনভিজ্ঞতাকে অতিক্রম করে ফেলেছে। জয়ন্ত ওর নতুন ক্যানন এর ১০-২২ লেন্স এ ল্যান্ডস্কেপ তোলা শুরু করেছে গাড়ির ভিতর থেকেই। টেক্সাস এর ধু ধু করা প্রেইরি আমাদের যথেষ্ঠ বিরক্তিকর লাগে। কিন্তু উত্তরপুর্বের লোকের কাছে সেটা তখন নতুন জিনিস।
    ওকলাহোমা সিটি পৌছতে ১১ টা বেজে গেল। বড় লাঞ্চ এর প্রশ্নই ওঠে না। সাবওয়েই ভরসা। আমাদের খাদ্যবিলাসী নাগ দা একটু প্যাঁ পোঁ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ৭ জনের সঙ্গে পাঙ্গা নিতে পারে নি। আমাদের যে করেই হোক রাত ১২ টার মধ্যে ডেনভার পৌছতে হবে। নইলে কাল সারাদিন রকি ঘোরা বা রাত্রে তাঁবুতে দুঃখ আছে।
    রকি পাহাড় টা উচ্চতায় বা বিশালতায় আমাদের হিমালয় এর কাছে পাত্তা পাবে না। শুধু পর্বতমালা হিসেবে এ হিমালয়, কারাকোরাম, হিন্দুকুশ বা আন্দিজ এর চেয়ে কম কুলীন। কিন্তু ছড়িয়ে ছিটিয়ে হলেও এ পাহাড় সেই আলাস্কা থেকে মেক্সিকো ওব্দি ছড়ানো। একটা বিশাল ভৌগলিক ব্যাপ্তি আছে এর। এই পাহাড়েই আছে ইয়োলোস্টোন, আছে লাল বেলেপাথর এর কারুকার্যে ভরা উটা, অ্যারিজোনার মরুভূমি।
    আট থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি বছর আগে ল্যারামাইড ওরোজেনী তে তৈরি হয়েছিল এই পর্বতমালা। বয়সের হিসেবে এটা হিমালয়ের চেয়ে পুরানো তবে সিএরা নেভাদা বা স্মোকি র তুলনায় ছেলেমানুষ। টেকটোনিক গতি কম থাকায় আর মুখোমুখি সংঘর্ষ না হওয়ায় রকির ছয়-সাত-আট হাজারি হওয়া হয়ে উঠল না। আর এখানকার প্রাচীন নদী গুলো অতটা রকি নির্ভর ও নয়। এখানেও হিমালয়ের কাছে হারল রকি। তার উপর ঐ ক্ষত টা। যার নাম ইয়োলোস্টোন। একটা বিশাল আগ্নেয়গিরির মুখ এখানে রকি কে সমতল করে দিয়েছে।
    হিমযুগের ছাপ রকি তে সর্বত্র। ভুগোল বইতে পড়া হিমবাহের সব কার্য রকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কে দেখা যায়।
    আমরা দেখলাম ও পরের দিনে।
    সকাল বেলায় ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ৮ টা। চটপট সব মাল তোলো রে গাড়ি তে। মোটেল ৬ এর বাজে প্রাতরাশ কোনওরকমে গলায় ঢেলে বেরিয়ে পড়লাম। ডেনভার থেকে বোল্ডার হয়ে আমরা ঢুকব এস্টেস পার্ক দিয়ে। মাস টা আগস্ট, তাই রাস্তায় বরফ দেখার দুরাশা না করাই ভাল। আমাদের আজকের পরিকল্পনা হল ট্রেল রিজ রোড দিয়ে পাহাড় টা এপার ওপার করা। রকির পশ্চিমে গ্র্যান্ড লেক পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে রাত্রিযাপন হবে হিমবাহের অববাহিকায় তাঁবু খাটিয়ে। এস্টেস পার্কেই দেখতে পেলাম শৃঙ্গ গুলো। মানছি ওগুলো আট হাজারি নয়, কিন্তু আমাদের চোখ কি আসল উচ্চতা অনুভব করতে পারে? চোখ ঝলসানো সাদা কালো চূড়া গুলো আমাদের যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। আস্তে আস্তে আমরা প্রবেশ করলাম পাকদন্ডী গুলোতে। চুলের কাঁটার মত বাঁক গুলো এক একটা পেরোচ্ছি আর চারদিকের রূপ বদলে যাচ্ছে। আর একটা জিনিস বুঝলাম যে পাহাড়ের আবহাওয়া কোনও ভবিষ্যতবানী মানে না। এস্টেস পার্ক এ ছিল চোখ ঝলসানো রোদ, অথচ একটু পরেই বিভার পন্ডস এর কাছে পৌছতেই বৃষ্টি নামল। তখন আর রাস্তা দেখা যাচ্ছিল না। একটা দাঁড়ানোর জায়গা পেতেই দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়ি। আমরা তখন খেজুরে গল্প শুরু করলাম। আমি দিচ্ছিলাম রকি র ভূতত্বের জ্ঞান, সুমন দিচ্ছিল পাহাড়ী রাস্তায় কেন ভারী গাড়ি চালানো বেশী নিরাপদ সেই জ্ঞান আর জয়ন্ত করছিল নিকন আর ক্যানন এর তুলনামুলম আলোচনা। অয়ন মহিলামহল কে কিছু একটা নতুন তাস খেলা শেখাচ্ছিল আর নাগ দা বলছিল এখানে কোথায় হরিনের মাংস পাওয়া যায়?

    মেঘ কাটল এক ঘন্টা পর। আমরা অবশ্য বৃষ্টি হালকা হতেই গাড়ি চালানো শুরু করেছি। দার্জিলিং, সিকিমের হিমালয়ের চেয়ে এ পাহাড় সত্যি আলাদা। কদিন আগেই সিকিমে দেখেছি শুধু পাইন, ফার, ম্যাগনোলিয়া, রোডোডেন্ড্রন এর সমারোহ। এখানে কিছুটা গিয়েই ফুরিয়ে গেল চিরহরিৎ। তুন্দ্রার দেশে এসে গিয়েছি আমরা। আর সেই একদিকে পাহাড় একদিকে গভীর গিরিখাত নেই। এখন পুরো জায়গাটাই ঢেউখেলানো তৃণভূমি। দু-একটা পাহাড়ী ছাগল-ভেড়াও দেখলাম। ঢেউখেলানো জমিটা নেমে গেছে দূরের উপত্যকার দিকে। তার পেছনে লাইন দিয়ে দাঁড়ানো একের পর এক শৃঙ্গ। একসময় একটা জায়গায় বরফ দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। সামনে লাভা ক্লীফ। এই পাথরের বয়স নাকি রকির বয়সের ১০ গুন। রকি যখন সমুদ্র ছিল, তখন হয়ত এই পাথর টা তার একটা ছোট দ্বীপ ছিল। আমাদের আর জানা হল না ওখানে ফসিল পাওয়া গিয়েছে কিনা।
    হাতে সময় কমে এসেছে। বিকেলের আগেই রকির পশ্চিমে পৌছতে হবে। নইলে সন্ধ্যের আগে ফিরতে পারব না। মহাদেশীয় বিভাজিকা পেরোলাম দুপুর ১ টা নাগাদ। ওখানে দাঁড়িয়ে বৌ এর সাথে কিছু প্যাটেল ফটো তুললাম। বিভাজিকার উপরই একটা হ্রদ ছিল যার পূর্বের জল বয়ে চলেছে অতলান্তিকে আর পশ্চিমের জল প্রশান্তে। ভবলেই শিহরিত হতে হয়। মহাদেশীয় বিভাজিকা পেরোনোর পর রকির রূপ আবার বদলালো। পাইন গাছের সারির মধ্য দিয়ে ফিরে এল আমার চেনা পাহাড়। হিমালয়ের যেমন দক্ষিন দিকটা সবুজ আর উত্তর দিকটা মরুভূমি, রকির ও তেমনি পশ্চিম দিকটা বেশী সবুজ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলীয় বাষ্প এখানে সারা বছর ই বৃষ্টি দেয়।
    আমাদের দল এর সবার ই নানান রকম প্রতিভার ছড়াছড়ি। তবে নাগ দার ধারেকাছে কেও আসে না। যেমন কবিতা লেখে তেমনি গান গায়। তবে সবার সেরা হল চটজলদি মুখে মুখে ৪ লাইনের কবিতা বা এক গানের সুরে অন্য গান গাওয়া। একটা কবিতার উদাহরন দিচ্ছি নিচে (যদিও এটা এই ট্রিপ এ লেখা নয়, কিন্তু এটা আমি ভুলব না জীবনে।)

    "পালিয়ে তুমি পারবে না
    পেরোতে একশ ক্রোশ।
    ঝড়ের মাঝে বুক চিতিয়ে
    দাঁড়াও ডি কে বোস।"

    তো নাগ দা হল খাওয়া পাগল। Flora র চেয়ে Fauna র দিকে ওর আগ্রহ বেশী। রকির Fauna র মধ্যে কি কি রোস্ট করে খাওয়া যায় সেটা ছিল ওর সবচেয়ে চিন্তার বিষয়। আর আমরা বাকিরা ভাবছিলম রাতে তাঁবুতে যদি ভালুক আসে, তবে ভালুক নাগ কে খাবে নাকি নাগ ভালুক কে খাবে?

    গ্র্যান্ড লেক এ পৌছে গেলাম ২ টো নাগাদ। চারদিকে পাইন ঘেরা একটা হিমবাহসৃষ্ট হ্রদ। সার্থকনামা হ্রদ। বোটিং এর ইচ্ছে থাকলেও সময়াভাবে হল না। আমাদের দ্বিগুন সময় হাতে রাখা উচিত ছিল। এটা পরের দিনগুলোতে আরো বেশী বুঝেছিলাম। এই গ্র্যান্ড লেক রকির পশ্চিমদ্বার (এস্টেস পার্ক হল পূর্বদ্বার)। তাই বেশ কিছু হোটেল, রেস্তোঁরা ছিল এখানে। আমাদের মধ্যাহ্নভোজন টা আমরা এখানেই সারলাম। খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে দেখি আকাশ আবার কালো হয়ে এসেছে। একটু ভয় পাবার ই কথা। আজ রাতে আমাদের কোনও হোটেল বুক করা নেই। Campground এ বৃষ্টি এলে সবাই মিলে গাড়িতে রাত কাটাতে হবে। সুতরাং সূর্যাস্তের আগে বেরিয়ে পড়তেই হবে glacier basin এর উদ্দেশ্যে। একটাই বাঁচোয়া যে রকি কে আবার পেরতে হলেও দূরত্ব টা বেশী না। মাইল ৫০। ফেরার রাস্তায় লক্ষ্য করলাম যে আমাদের রাস্তার পাশেই কুল কুল করে বয়ে চলেছে একটা নদী। খুব ই ছোট। এক জায়গায় নাম টা দেখেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। নাম টা 'কলোরাডো নদী'। সেই কলোরাডো যে রকির চেয়ে অনেক প্রাচীন আর যে নদী উটা, অ্যারিজোনাতে তৈরী করেছে ক্যানিয়নল্যান্ডস আর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। গ্র্যন্ড ক্যানিয়ন এর বিশালতা যারা না দেখেছেন তাঁরা কল্পনাতেও আনতে পারবেন না। আর এখানে নদী টা একেবারে পুঁচকি। মৌ লাফাতে লাগল যে কলোরাডো পেরোব পায়ে হেঁটে। অগত্যা বৃষ্টির মধ্যেই পোঞ্চো মাথায় আমরা ৫-৬ জনে গেলাম নদী পেরতে। পাহাড়ী নদী, আর জলটা বরফগলা। পা কনকন করে উঠল। জলের গভীরতা ছিল না। তবে নিচের পাথরগুলো ছুরির মত লাগছিল।
    কলোরাডো নদী থেকে উঠতে ইচ্ছে করছিল না।কিন্তু ঐ সন্ধ্যের আগে ফেরার তাড়া। সংকীর্ণ পথ ধরে শুরু হল আমাদের চড়াই এ ওঠা। চেনা রাস্তাতে গাড়ি চালানো জটিল ছিল না। বরং ভিউপয়েন্ট গুলো জানা থাকায় ফেরার সময় ৩-৪ টে জায়গায় দাঁড়ানোয় সুবিধা হল। একটা জায়গা ছিল মেডিসিন বো কার্ভ। ওখানে রকি র একটা দুরন্ত প্যানোরামিক ভিউ পাওয়া যায়। পাহাড়ের উচ্চ অধিত্যকায় হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ গুলো দেখে মন ভরে উঠছিল। ইচ্ছে করছিল ঐ হ্রদ গুলোর পাশে গিয়ে বসে থাকি ঘন্টার পর ঘন্টা। নীল জলে সাঁতার কাটি।

    মোরেন পার্ক এ পৌছলাম সন্ধ্যে ৫ টায়। আর ১৫ মিনিট গাড়ি চালিয়ে এসে গেলাম গ্লেসিয়ার বেসিন ক্যাম্প গ্রাউন্ড এ। জায়গা টা মনোরম বললে কম বলা হয়। একটা ৩ দিকে পাহাড় আর এক দিকে জঙ্গল ঘেরা উপত্যকা। ঠান্ডা খুব বেশী নেই। আকাশে শুক্লা ত্রয়োদশীর চাঁদ। এখানে বিদ্যুতসংযোগ নেই। তাই টর্চের আর চাঁদের আলো ই ভরসা। এমন সময় একজন এসে বলে গেল যে খাবার বাইরে না রাখতে। গতকাল ও নাকি ভালুক এসেছিল এখানে। আমাদের তো অবস্থা খারাপ। এতক্ষন ইয়ার্কি করছিলাম এই বলে যে ভালুক এলে নাগদা কে এগিয়ে দেব, কিন্তু সত্যি ভালুক আসবে সেটা তো ভাবিনি। মৌ, দিশা রা রীতিমত চিন্তিত। তার মধ্যেই আমরা খাটিয়ে ফেললাম দুটো তাঁবু। BBQ করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ভালুক এর গল্প শুনে আর সাহস হল না। জেলি, পাউরুটি, কোক খেয়ে ঘুমোনোর ব্যবস্থা করতে হবে। খাওয়া শেষ হতে হতে মেঘ সরিয়ে চাঁদ বেরোল। ৩ দিকের শৃঙ্গ গুলোর বরফ তখন চকচক করছে। সঙ্গে বাইনোকুলার এ দেখছিলাম অনেক দূরের হিমবাহ টা। একটা স্বর্গীয় অনুভূতি আমাদের ভালুকের ভয় কাটিয়ে দিল অনেকটা। আমার আর সুমনের একটু দূরের নদীর ধারে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ক্লান্তি আর লম্বা সফরের দায়িত্ববোধ ঘুমোনোর পক্ষেই সায় দিল।
    কখন ঘুম এসেছে খেয়াল নেই। হঠাৎ জয়ন্তের চিল চিৎকারে ঘুমের দফারফা। ভালুক এলো নাকি? ভয়ে শিউরে উঠেছি। জয়ন্ত বলল একটা ভয়ঙ্কর আওয়াজ এ ওর ঘুম ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু সে আওয়াজ তো এখনও আছে। না ভালুক না। ভালুক যাকে ভয় পায় এ সেই নাগের নাসিকাগর্জন। জয়ন্তকে সান্তনা দিয়ে কানে বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল সকালে ট্রেকিং আছে। আর তারপর হলুদ পাথরের দেশে পৌছতে হবে।
    ঘুম ভাঙল পাখিদের কলকাকলিতে। ভোর হয়ে গেছে। আমি ক্যামেরা হাতে বাইরে বেরিয়ে দেখি সুমন জয়ন্ত রা ওদের এস এল আর এ ভোরের ছবি তোলা শুরু করে দিয়েছে। তখনও সুর্য্য ওঠেনি। চাঁদের নরম আলো তে ভেসে যাচ্ছে পুরো উপত্যকা টা। চারপাশের তাঁবুগুলো থেকে লোকেরা এখনও বেরোয়নি। খুব র‌্যোমান্টিক লাগছিল পুরো ব্যাপারটাই। একটু পরে আকাশের সাদা মেঘগুলোতে রঙ লাগতে শুরু করল। পাহাড়ে সুর্য্যোদয় যাঁরা দেখেননি তাঁরা এটা কল্পনাও করতে পারবেন না। আর আমি সত্যি ভাগ্যবান, এক বছরের মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর রকি তে সুর্য্যোদয় দেখলাম। তরল সোনা গড়িয়ে পড়ছিল হিমবাহ টার উপর।
    মিষ্টি রোদের মধ্যেই আমরা সব প্যাক করে নিলাম। আমি আর সুমন এখন তাঁবু বসানো আর গোটানো তে বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছি। শেষ ৩ বছরে ৪-৫ টা ক্যাম্পিং তো হলই। গাড়িতে ওঠার আগে মাখন পাউরুটি, আপেল ইত্যাদি খেয়ে নিলাম। কাল পাহাড় দেখেছি গাড়িতে চড়ে। আজ হাঁটা আছে। গাড়িতে করেই পৌছলাম পার্ক এর ট্যুরিষ্ট সেন্টার এ। গাড়ি ওখানে রেখে ক্যামেরা আর পিঠের ব্যাগ গিয়ে পার্ক এর বাস এ গিয়ে উঠে বসলাম। ওরা আমাদের নিয়ে যাবে বেয়ার লেক ওব্দি। তারপর সেখান থেকে হাঁটা। আমাদের প্ল্যান আছে বেয়ার লেক, নিম্ফ লেক, ড্রিম লেক আর এমারেল্ড লেক। পুরো ট্রেক টা ৪ মাইল হাঁটা আর ৬০০-৭০০ ফুট ওঠা।
    ৪ টে লেক ই শেষ হিমযুগের অবদান। বেয়ার লেক থেকে সোজা পশ্চিম এ দেখা যাচ্ছে পাশাপাশি দুটো দুরকম চূড়ো। একটা গ্রানাইট এর বড় মোনোলিথ চারপাশের ক্ষয়ের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হিমবাহের ক্ষমতা হয়নি ওকে Kঈটে নামানোর। এটা নাকি রকি তৈরীর আগে একটা আগ্নেয়গিরি ছিল। এখন অবশ্য শুধুই একটা মোনোলিথ। চূড়োটার নাম হ্যালেট পিক। হ্যালেট পিক এর পাশেই একটা U আকৃতির উপত্যকা যার মধ্যে এখনও বয়ে চলেছে টিন্ডাল হিমবাহ। একটা সময় ছিল যখন এই হিমবাহের নিচে ঢাকা ছিল গোটা এলাকাটা মায় ঐ হ্যালেট পিক। তবে এখন সেটা শুধুই স্মৃতি। U ভ্যলির উত্তরদিকে একটা রিজ। যার নাম ফ্যাটটপ মাউন্টেন। রকির পশ্চিম দিক থেকে এই পাহাড়ে ওঠার রাস্তা আছে। তবে আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য ঐ U ভ্যালিতে হিমবাহের নিচের পান্না হ্রদ।
    বেয়ার লেক এর নাম এখানকার ভালুকদের জন্য। কালো ভালুক এর উপদ্রব এখনও আছে। আমাদের বলে দেওয়া হল যে ট্রেল ছেড়ে জঙ্গলে না যাওয়ার জন্য। ভালুক এর বাচ্চা র কাছে গেলে প্রানসংশয় হতেই পারে। আমরা অবশ্য ৮ জন এক সাথেই আছি। চলতি অ্যাডভেঞ্চারের বেশী আর প্রয়োজন নেই। তো বেয়ার লেক কে আমরা এক পাক ঘুরে এলাম ট্রেলটার শুরুতে। উচ্চতা বাড়তে শুরু করল শীঘ্রই। বেয়ার লেক এ জ্যাকেট পরে গরম লাগছিল কিন্তু তাপমাত্রা কমতে সময় লাগল না। রাস্তার অপার্থিবতা বাড়িয়ে দিচ্ছিল রাস্তার পাশে বয়ে চলা ছোট্ট নদীটা। এই নদীর উৎসেই তো চলেছি আমরা। এই নদী হিমবাহ থেকে বেরিয়ে হ্রদগুলোকে জুড়েছে। নদীর ও হ্রদের পাশে দেখলাম কয়েকজন শিল্পী কে যাঁরা ঝলমলে দিনের সৌন্দর্যকে ক্যানভাসে তেলরঙে ফুটিয়ে তুলছেন।
    ভল্লুক হ্রদ টা ঝলমলে হলেও হতাশ করল নিম্ফ। প্রচুর পাতা পড়ে হ্রদটার দফা রফা করে দিয়েছে। আর প্রচুর জংলী পদ্ম, শালুক ছিল হ্রদটায়। তার চেয়েও যেটা খারাপ সেটা হল এই হ্রদ টার চারদিকে বিশাল উঁচু পাইন গাছ থাকায় সূর্য্যের আলো ঢুকছিল না। তাই আমাদের ক্যামেরাগত মন একটু খারাপ ছিল। আমরা কি আরো উপরে উঠব?
    সামনের রাস্তাটা ভয়ঙ্কর। এতোটা খাড়াই রাস্তা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ছাড়া আর কোথাও দেখিনি। তবে অনেকটা উপরে চলে আসায় ফোনে সিগন্যাল চলে এসেছে। চট করে বাড়িতে সবাই ফোন করে নিলাম যে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেনি, পাহাড়ে গড়িয়ে যাইনি এমনকি ভল্লুকেও আমাদের খায়নি! ২-৩ বার থেমে থেমে আমরা চললাম স্বপ্নের দেশে।
    ড্রিম লেক... স্বপ্ন হ্রদ... আমি তো ছোটবেলা থেকেই এরকম একটা জায়গার স্বপ্নই তো দেখতাম। আমরা ৮ জন ই চুপ। ১০ মিনিট কেও কোনও কথা বলতে পারিনি। একটা সম্পূর্ন স্বচ্ছ হালকা নীল-সবুজ রঙের হ্রদ। নিচের পাথর, গাছের গুঁড়ি গুলো সব দেখা যাচ্ছে। হ্রদের ওদিকে অর্ধেক আকাশ জুড়ে হ্যালেট শৃঙ্গ,, টিন্ডাল হিমবাহ, ফ্ল্যাটটপ পাহাড় আর তার নিচের চিরহরিৎ অরন্য। আর অন্যদিক এ হ্রদের শেষে দেখা যাচ্ছে নিচের উপত্যকাটা। পাথরের উপর বসে ছিলাম ৩০-৪০ মিনিট। উঠতে ইচ্ছে করছিল না। নৌকা থাকলে চলে যেতাম হ্রদের অন্যদিকে। জয়ন্ত বলল, চল গাড়ি থেকে তাঁবু দুটো নিয়ে আসি। পরের ২ দিন এখানেই থাকব। আমি ওকে আশ্বস্ত করলাম যে পরের দিন গুলোতে কিছু কম দেখার নেই। সেটা পরে বুঝেওছিলাম।
    অবাক ব্যাপার কোনো হ্রদ থেকেই অন্য হ্রদ দেখা যাচ্ছে না। তাই বোঝার উপায় নেই আর ঠিক কতটা হাঁটতে হরে। নদী ধরে এগোতে এগোতে ২-৩ টে ছোট জলপ্রপাত পেলাম। পান্না হ্রদে পৌছলাম তখন মধ্যাহ্ন। মাথার উপরে নীল আকাশের উজ্জ্বল সূর্য্যের প্রতিবিম্ব পড়েছে পান্না হ্রদের গাঢ় সবুজ জলে। জলের রঙ স্বপ্ন হ্রদের মত অত স্বচ্ছ নয়। তবে এখন আমরা পাহাড়ের ঠিক সামনে। তাই হ্রদের ব্যাপ্তিটা অন্যরকম লাগছিল। হ্রদের উল্টোদিকেই হিমবাহের বরফ দেখতে পাচ্ছি। হ্যালেট শৃঙ্গটা অনেকটা ইসেমিতি র এল ক্যাপিতানের মত দেখতে। ৮০ ডিগ্রী তে নেমেছে পাহাড় টা। পর্বতারোহীর স্বপ্ন।
    জুতো খুলে জলে পা ডুবিয়ে বসে ছিলাম অনেকক্ষন। তবে এবার ফিরতে হবে। নিচে পৌঁছে গাড়ি নিয়ে বেরোতে হবে। আজ ও ১০ ঘন্টার পথ। জলদি না বেরোলে রাত শেষ হয়ে যাবে। কাল তো যাব ইয়োলোস্টোন। আমি আগে গেছি, তাই ওখানের দুদিনের প্ল্যান পুরো আমার। আমি চাইনা দেরীর জন্য ইয়োলোস্টোনে কোনও গোলমাল হোক।
    পার্কিং থেকে শুরু করলাম ২ টো নাগাদ। এতোটা হেঁটেও সবাই ফিট আর উত্তেজনায় ফুটছে। সাবওয়ের ফুটলঙ খেয়ে শুরু হল পরের যাত্রা।
    তোমরা কেও অ্যামেরিকান ওয়েষ্টার্ন এর সিনেমা গুলো দেখেছ? ধু ধু করা মাঠ, দূরে দূরে লাল বেলেপাথরের বুত্তে, ঘোড়ায় চড়া কাউবয় (ক্লিন্ট ইস্টউড বা হ্যারিসন ফোর্ড এর মত), এ সবই দেখা যায় রকি থেকে ইয়োলোস্টোন যাবার রাস্তায়।
    পৃথিবীতে পর্বতের অভাব নেই। কিন্তু এই লাল বুত্তে সমৃদ্ধ প্রান্তর গুলো আমেরিকার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য । দক্ষিনে নিউ মেক্সিকো থেকে উত্তরে মন্টানা পূর্বে কলোরাডো থেকে পশ্চিমে ক্যালিফোর্নিয়ার মরু পর্যন্ত ছড়ানো এই লাল মাটির দেশ সত্যিই পাগল করার মত।
    একই দিনে মা ও স্ত্রী কে হারিয়ে ২৬ বছর বয়সী যুবক থিওডোর রুজভেল্ট চলে আসেন এই রাখাল বালক দের দেশে (ডাকোটা তে)। এই ল্যান্ডস্কেপ শুধু থিওডোর এর মন পরিবর্তন করে না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত ও নির্ধারন করে। নায়াগারা (নায়াগ্রা নয়) জলপ্রপাতের অনৈসর্গিক সৌন্দর্য্য কে ব্যবসায়ী দের হাত থেকে বাঁচানো যায়নি, কিন্তু থিওডোর শপথ নেন যে আমেরিকান ওয়েষ্ট এর সৌন্দর্য্যকে তিনি বিক্রীত ও বিকৃত হতে দেবেন না।
    যাই হোক, লম্বা সফর অন্তে আমরা এলাম আইডাহোর ড্রিগস শহরে। এটা টেটন পর্বতমালার পশ্চিমের একটা ছোট শহর। রাত ২ টায় হোটেল এ চে্ক ইন করলাম। আজ আর কোনও শক্তি অবশিষ্ট নেই। দরকার একটা জমাট ঘুম। তারপর কাল সকালে যাব সেই স্বপ্নের দেশে।

    *******************************************
  • Rit | 213.110.243.21 | ২০ জুন ২০১২ ২০:১২456928
  • ** ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক **
    সকাল হল ৭ টায়। অ্যালার্মের আওয়াজে ঘুম ভেঙে আমরা সাত তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম। স্নান, প্রাতরাশ সেরে বেরোতে বেরোতে ৮ টা। ইয়োলোস্টোনের ৪ তে মুখ্য দ্বার আছে। আমরা ঢুকব পশ্চিম দ্বার দিয়ে।
    ইয়োলোস্টোন এর ম্যাপ টা খুললে দেখতে পাবে পুরো পার্ক এর গুরুত্বপূর্ন জায়গাগুলো কে সংযোগ করে একটা ৪ এর মত রাস্তা। উত্তরের বা আপার লুপে আছে নরিস বেসিন, গোল্ডেন গেট ক্যানিয়ন, ম্যামথ হট স্প্রিং, টাওয়ার ফলস, দুনরাভেন পাস আর ক্যানিয়ন ভিলেজ। দক্ষিনের বা লোয়ার লুপে আছে ইয়োলোস্টোন নদী, ইয়োলোস্টোন লেক, ওয়েস্ট থাম্ব বেসিন, ওল্ড ফেথফুল বেসিন আর ম্যাডিসন। দক্ষিন এর রাস্তা চলে গেছে টেটন পাহাড় ও পার্ক এর দিকে।
    আগামী কাল রাত টা থাকব ক্যানিয়ন ভিলেজে ক্যাম্প করে। সুতরাং প্রথম দিনে আপার লুপটাই ভাল। সেই হিসেবে আমরা ঢুকব ম্যাডিসনের পশ্চিমদ্বার দিয়ে।
    ইয়োলোস্টোন পৃথিবীর একটা আশ্চর্য্যের মধ্যে পড়ে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলার একটা অংশ যা মহাদেশীয় উত্তর আমেরিকার বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এখানে পৃথিবীর উপরের স্তর খুব ই পাতলা (মাইলখানেক)। পৃথিবীর যে কয়েকটা জায়গায় ভূগর্ভস্থ গলিত লাভা পৃথিবীপৃষ্ঠের এত কাছে চলে আসে সেগুলোকে বলে 'হট স্পট', উদাহরনঃ হাওয়াই।কিন্তু ইয়োলোস্টোন ছাড়া আর সব কটা হট স্পট ই হয় মহাসাগরের ভিতরে নাহয় উপকূলে। সেদিক থেকে ইয়োলোস্টোন একটা বিশাল ব্যতিক্রম। পার্ক টার পুরোটাই একটা অতিকায় আগ্নেয়গিরির মুখ (ক্যালডেরা)। শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ৬.৪ লক্ষ বছর আগে। আর তার লাভা ও ছাই তে গোটা উত্তর আমেরিকা ঢাকা পড়েছিল। সেন্ট হেলেনা র ১০০০ গুন ছিল সেই অগ্ন্যুৎপাত। শেষ ৩ তে অগ্ন্যুৎপাত এর হিসেব কষলে দেখা যায় সেগুলো হয়েছিল ২১, ১৩ ও ৬.৪ লক্ষ বছর আগে। আগ্নেয়চক্রের হিসেবে আমরা পরের অগ্ন্যুৎপাতের সময়ে চলে এসেছি। ২০১২ নামক সিনেমাটা মনে পড়ে? মহাপ্রলয়ের ক্ষমতা রাখে এই আগ্নেয়গিরি আর সেটা এখানে গেলে বোঝা যায়।
    ইয়োলোস্টোনের ৩ দিকে পাহাড়। তার কারন হল এই হট স্পট টার আপেক্ষিক গতি দক্ষিন পশ্চিম থেকে উত্তর পূর্বে। আসলে যদিও হট স্পট টার গতি নেই, মহাদেশটাই এগিয়ে চলেছে দক্ষিন পশ্চিমে। ইয়োলোস্টোনের ক্যালডেরা টা একটা মালভূমি যার উত্তর, পূর্ব আর দক্ষিনে রকি পর্বতমালা। দক্ষিন এর পাহাড় টার বিশেষ নাম হল গ্র্যান্ড টেটন পর্বতমালা। এটা পৃথিবীর নবীনতম ভঙ্গিল পর্বত। মাত্র ১ কোটি বছর আগে শুরু হয় এই পর্বতমালা।
    হট স্পটের আপেক্ষিক গতির জন্য প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ইয়োলোস্টোন পর্য্যন্ত একটা সুন্দরভাবে নির্মিত অববাহিকা দেখা যায়, যার নাম স্নেক বেসিন। স্নেক নদী এখানে সাপের মত এঁকেবেঁকে টেটন থেকে গিয়ে পড়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে। স্নেক নদীটার নাম এখানে কে কে শোননি? যারা শোননি তাদের বলব তোমাদের প্রেমেন মিত্তির বৃথাই ঘনাদার গল্প বলে গেছেন। এই স্নেক নদীর হেল্স ক্যানিয়নেই ঘনাদা বুঝতে পেরেছিলেন পৃথিবী বাড়ল না কেন।
    স্নেক নদীর এই উপত্যকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলীয় বাষ্প কে বয়ে আনে ইয়োলোস্টোন এ। আর ঐ মেঘ ৩ দিক ঘেরা রকির ভিতর দিয়ে বেরোনর পথ না পেয়ে ঝরে পড়ে ইয়োলোস্টোন এর বুকে। ইয়োলোস্টোনে উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ গড় বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়। আর এই বৃস্টি ও তুষার ইয়োলোস্টোনের বুকের আগুনের সাথে মিশে তৈরী করেছে এই কল্পপুরী। এটা নিজেই একটা পৃথিবী। বিশ্বের কোথাও আর এমন জায়গা নেই।
    এখানে কি কি আছে? নামগুলো আগেই বলেছি, কিন্তু তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরন জানতে হলে পাঠক কে একটু ধৈর্য্য ধরতেই হবে। তবে কোনও বর্ননা বা ছবি বা ভিডিও ইয়োলোস্টোনকে জানতে যথেষ্ট নয়। এখানে বার বার গেলে কিছুটা বোঝা যাবে পৃথিবীর শক্তি , বোঝা যাবে পৃথিবীর আদিমতা আর বোঝা যাবে স্বর্গ-নরক এর পাশাপাশি সহাবস্থান।
    এই তাপক্ষেত্র গুলোর আর একটা আকর্ষন এখানকার রঙীন পুল আর স্প্রিং গুলো। এরকম স্বচ্ছ রঙীন জলাধার পৃথিবীতে আর কোথাও দেখা যায় না। রঙ গুলোর ও উল্লেখ করা উচিত। লাল, কমলা, হলুদ, সোনালি, সবুজ, নীল আর কালো। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না এরকম কিছু প্রাকৃতিক ভাবে থাকতে পারে। এই উষ্ণ জলাধার গুলোর রঙের উৎস কিন্তু এক ধরনের আনুবীক্ষনিক ব্যাকটিরিয়া যাদের বলে Thermophile। অর্থাৎ কিনা তাপপ্রেমী। গরম জলে এই থার্মোফাইল রা কলোনি তৈরী করে যার রঙের বাহার প্রবাল প্রাচীর কেও লজ্জা দেবার ক্ষমতা রাখে। থার্মোফাইলের রঙ ও জলের তাপমাত্রা সম্পর্ক পদার্থবিজ্ঞান মেনেই। অর্থাৎ কিনা লাল রঙ সবচেয়ে কম উষ্ণ আর নীল রঙ সবচেয়ে বেশী উষ্ণ। এখানেও এই পুল গুলো রঙ দেখে উষ্ণতা নির্ধারন করা যায়। লাল রঙের জলের তাপমাত্রা ৫০-৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, হলুদ ৭০ মত আর নীল ৯০ এর উপর। একই জলাধারে সব রঙ গুলো থাকলে কেমন লাগে তার জন্য কিছু ছবি পিকাসাতে দেওয়া হল।
    নরিস বেসিন এ অবশ্য দু একটা নীল পুল ছিল, আর একটা নদী ছিল যার রঙ লাল আর সবুজে মেশানো। সেরা পুল গুলো আছে আগামী কাল-পরশুর প্ল্যান এ।
    নরিস বেসিনে ঘন্টাখানেক কাটিয়ে আমরা রওনা দিলাম ম্যামথের উদ্দেশ্যে।
    ম্যামথ একটা অতিকায় চুনাপাথরের পাহাড়। স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইট এর সাথে নিশ্চয় সবাই পরিচিত। কিন্তু সেগুলো হয় গুহার ভিতরে চুনের দ্রবন একটু একটু করে জমা হয়ে। এখানে পুরোটাই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। গাইজার, স্প্রিং আর পুলের মাধ্যমে মাটির নিচের চুনাপাথর গলে উঠে এসেছে উপরে আর গড়িয়ে যেতে যেতে তৈরী করেছে এখানকার বিশ্ববিখ্যাত টেরাস গুলো। ধাপে ধাপে নেমে আসা চুনাপাথরের সিঁড়ির উপর দিয়ে বয়ে চলেছে উষ্ণ প্রস্ববনের জল। থার্মোফাইলের রঙে রাঙানো এই সিঁড়িগুলোর নাম গুলো ও অনবদ্য। কয়েকটা নাম মনে পড়ছে- মিনার্ভা টেরাস, অ্যাফ্রোদিতি টেরাস, কিউপিড স্প্রিং, মার্বেল টেরাস, ক্লিওপেট্রা টেরাস, ওপাল টেরাস, প্যালেট টেরাস ইত্যাদি। প্যালেট টেরাস এ যে কত রঙের শেড দেখলাম না দেখলে তা কল্পনা ও করা যাবে না। মুখ্য পাহাড়টার উপরে উঠলে দেখা যায় উপরটা সমতল আর পুরো জায়গাটা থেকে ধোঁয়া উঠছে আর জল গড়িয়ে পড়ছে চার দিক দিয়ে। ঐ জলই টেরাস গুলোর জীবনীশক্তি। জলের অভাবে অনেক টেরাস এখন একদম রঙহীন সাদা বা ধূসর। পাশাপাশি এই জীবন-মৃত্যুর বৈপরীত্য ইয়োলোস্টোন এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পাহাড়ের উপরের ঐ জলে থার্মোফাইলের কলোনি আমাকে আন্দামানে দেখা প্রবাল প্রাচীরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
    পাহাড় টার নিচে ছিল একটা বিশাল বড় চুনাপাথরের ঢিপি। ওর উপর থেকে এক সময় ঝর্ণা নেমে আসতো। এখন সাদা রঙের একটা কঙ্কাল। ঢিপিটা দেখতে একদম একটা মানুষের মুখের মত। এরই নাম লিবার্টি ক্যাপ। অন্যনামে ''Old man of Yellowstone'।
    সবার শেষে দেখলাম ম্যামথ।বিশাল হাতির মত দেখতে একটা চুনাপাথরের মোনোলিথ। এটা রীতিমত জীবিত ও উচ্চতায় বাড়ছে। ম্যামথের গায়ের রঙ ও দেখার মত।
    ম্যামথেই আমাদের দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল।

    তোমরা নিশ্চয়ই সেরেঙ্গেটির নাম শুনেছ। আফ্রিকার এই জঙ্গল বন্য জন্তুর জন্য বিখ্যাত। ইয়োলোস্টোনের লামার ভ্যালি কে উত্তর অ্যামেরিকার সেরেঙ্গেটি বলা যায়। বাইসন, এল্ক, অ্যান্টিলোপ, গ্রিজ্লী, কালো ভালুক, নেকড়ে, পাহাড়ী ভেড়া সে এক অপূর্ব মেলবন্ধন।আর হ্যাঁ লামার ভ্যালি তে লামা ও পাওয়া যায় (সূর্য্যদেবের বন্দী মনে পড়ে? সেই হ্যাডক এর গান আমার মিষ্টি লামা ইত্যাদি)। লামার ভ্যালির সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ইয়োলোস্টোনের বাকি জায়গার নাটকীয়তা এখানে নেই। খুব শান্ত পরিবেশ। কুল কুল করে নদী বয়ে চলেছে সবুজ উপত্যকার মধ্য দিয়ে। দূরে দেখা যাচ্ছে পাহাড়, যার উপরের বরফ প্রায় শেষ এর মুখে। মার্চ-এপ্রিলে এলে এই পাহাড় গুলোকেই আল্পস লাগবে। এই ভ্যালি টা আগ্নেয়গিরির ক্যালডেরার বাইরে হওয়ায় এখানে গাইজার ইত্যাদি নেই। গাড়ি চলছে। হঠাৎ দেখি সামনে লম্বা ট্রাফিক জ্যাম। অ্যাক্সিডেন্ট হল নাকি? খবর নিয়ে জানা গেল বাইসনের দল রাস্তা আটকেছে। এবার ফিরতে পারব কিনা সেটা বাইসন বাবাজীদের হাতে। তবে আমরা বন্য বাইসনের দল আগে দেখিনি, তাই দেখার উৎসাহও ছিল ষোলো আনা। গাড়ি চালানোর অবশ্য আর সুযোগ বা প্রয়োজন হল না। বাবাজীরা মিনিট পনেরোর ভিতর দেখা দিলেন। অগুন্তি বাইসন। কম করেও ২০০। লালমোহন বাবু দেখলে একটা বাইসন বিভ্রাট বলে রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস ই নামিয়ে দিতেন। চারদিকে শুধুই বাইসন। গাড়ি থেকে বেরোলে প্রান সংশয় হতে পারে বলে ভিতর থেকেই ছবি তুলছিলাম। গাড়ীর ভিতরেও যে খুব নির্ভয়ে ছিলাম তা নয়। ঐ মেগা শিং নিয়ে একবার ঢুঁ দিলেই ব্যস, গাড়ীর কাচ হাওয়া হয়ে যাবে সঙ্গে আমরাও।
    কতক্ষন পর ওরা যে চলে গেল মনে নেই, তবে ঘন্টা দুয়েক তো হবেই। তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ। আমরা চললাম কিছু খাবারের খোঁজে। খেয়ে দেয়ে ক্যানিয়ন ভিলেজে গিয়ে তাঁবু খাটাতে হবে।
    লামার থেকে ক্যানিয়নে ফেরার পথে পড়ে টাওয়ার নদী, ক্যানিয়ন ও জলপ্রপাত। আজ রাত্রে আর হবে না, কাল সকালে আসবো দেখতে। তবে টাওয়ারের কাছে রেস্টোরান্ট (জেমস দা, ঠিক বলেছি? ) পাওয়া গেল। একটু বাইসনের স্যুপ না খেলে আজ আর চলছে না। ব্যাটারা ২ ঘন্টা ধরে ভয় দেখিয়েছিস, এবার খাবো তোদের ঝোল। পেটে ছুঁচোরা ফুটবল খেলছিল, বাইসনের ঝোল পড়তে শান্ত হল। খাওয়া দাওয়া সেরে ইয়োলোস্টোনের উচ্চতম রাস্তা মিলনার পাস পেরিয়ে ক্যানিয়নে পৌছলাম তখন রাত ১১ টা।
    ভাগ্গিস বুক করে রেখেছিলাম অনলাইন। নইলে ওদের অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের পারমিট টা ওরা অফিসের বাইরে বোর্ড এ টাঙ্গিয়ে গেছল। সেটা নিয়ে আমরা গেলাম ঘন পাইন জঙ্গলের ভিতর তাঁবু খাটাতে।
    জায়গাটা রকির গ্লেসিয়ার বেসিন এর চেয়ে অনেক বেশী মারাত্বক। রকিতে তাঁবুতে আসছিল চাঁদের আলো। বরফ ঢাকা শৃঙ্গ গুলো দেখা যাচ্ছিল। ভালুকের ভয় থাকলেও অন্য তাঁবুর লোকজন কে দেখে সাহস পাচ্চিলাম। এখানে ওসবের বালাই নেই। সবচেয়ে কাছের অন্য তাঁবুতে যেতে গেলে পাইনের একটা ঘন স্তর অতিক্রম করতে হবে। আর ঐ ঘন জঙ্গলে চাঁদের আলো আসছেনা।
    ভালুক বা বাইসনের ভয় বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে গেলাম তাড়াতাড়ি। বিশ্রাম টা প্রয়োজন। নইলে পরের দিন আর টানা যাবে না।
    ভোর বেলা ঘুম ভাঙলো চোখে আলো এসে লাগায়। টেন্ট থেকে বেরিয়ে দেখি মৌ দিশা রা বাইরে আড্ডা দিচ্ছে। মুখ টুখ ধুয়ে একটু মর্নিং ওয়াকে বেরোনো গেল। তাঁবুর পাশে নিশ্চিন্তে চরে বেড়াচ্ছিল একদল হরিন (এল্ক ও অ্যান্টিলোপ )। ওদের কোনও ভয়ডর নেই। ওদের কেও কোনওদিন আঘাত করেনি, তাই মানুষ কে ওরা ভয় পায় না। হায় আমাদের দেশেও যদি অভয়ারন্যে এতোটা অভয় দেওয়া যেত! আমরা হরিনদের সাথে ছবি তুললাম। ওরা বেশ ভাল পোজ দেয় কিন্তু। ব্রেকফাস্ট সেরে সবাই মিলে আবার গাড়িতে ওঠা গেল। আমরা ফিরবো কালকের রাস্তায় কিছুটা। টাওয়ার ফল্স টা কাল রাত্রি হয়ে যাওয়ায় বাদ গেছল, আজ দেখে নিতে হবে। ৩০ মিনিটের রাস্তা দেখতে দেখতেই পেরিয়ে গেলাম। টাওয়ার জায়গা টা সার্থকনামা। ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা মুস্কিল কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ নেই। ধরা যাক একটা ক্যানিয়ন, তার নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে ইয়োলোস্টোন নদী। একটা দিক খাড়াই নেমে গেছে ক্যানিয়নে। আমরা আছি তার উল্টো দিকে। এপাশে খাড়াই একটু কম। এই দিক থেকে আর একটা ক্যানিয়ন (টাওয়ার ক্যানিয়ন) এসে মিলেছে মূল ক্যানিয়নে। এই টাওয়ার ক্যানিয়ন টা দৈর্ঘ্যের দিক থেকে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বলাই যায়। একটা বেশ উঁচু জলপ্রপাত ক্যানিয়নের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আর তার পরেই মিশে যাচ্ছে ইয়োলোস্টোনের নীল জলের ধারায়। টাওয়ার প্রপাতের উপরের দিকের পাহাড় গুলো অদ্ভুত। সারি সারি গম্বুজের মত সোজা উঠে গেছে। বেশী উঁচু না হলেও এরকম দেখতে পাহাড় আগে দেখি নি। আর ঐ গম্বুজ গুলো হালকা হলুদ বেলেপাথরের। গ্রানাইটের চকচকে ভাব টা নেই। রুক্ষ, খসখসে। দেখলেই মনে হয় কত যুগের পুরোনো। টাওয়ার প্রপাত টা একটা ঝুলন্ত উপত্যকা। শেষ হিমযুগে এই টাওয়ার নদী একটা হিমবাহ ছিল যেটা ইয়োলোস্টোন হিমবাহে এসে মিশেছিল। টাওয়ার ছিল ছোট হিমবাহ, তাই দুটো হিমবাহের উপত্যকা টা সমান উচ্চতায় ছিল না। এখন বরফ গলে যাওয়ায় নদী বয়ে চলেছে। আর টাওয়ারের উপত্যকা টা হয়ে গেছে ঝুলন্ত।
    আমরা যথারীতি ঠিক করলাম যে ক্যানিয়নের নিচ অবধি নামব। এখানে বেশী গভীরতা নয়, খুব বেশী হলে ৭০০-৮০০ ফুট। দল বেঁধে নামতে শুরু করলাম। আসল ইচ্ছে ঐ টাওয়ার প্রপাতের নিচে যাওয়ার যদিও রাস্তা বলতে কিছু নেই। আপাতত আমাদের গন্তব্য হলুদ পাথরের নীল নদী। ১৫-২০ মিনিট মত লাগল নামতে। দু একটা জায়গা খুব খাড়াই ছিল, কিন্তু আমাদের উৎসাহের কাছে ঐ খাড়াই আর কি?
    নদীর উপত্যকায় নেমে বুঝলাম নদীর নামের তাৎপর্য্য। সব পাথর ই হলুদ। কিন্তু সোনার মত হলুদ না, সালফারের মত হলুদ। এই বেলেপাথরে সালফারের মাত্রা খুব বেশী হওয়ায় পাথরগুলো ভঙ্গুর। আর নদীর জল গাঢ় নীলচে সবুজ। জলের স্রোত ও খুব তীব্র। আমরা ইয়োলোস্টোনের জলে নামার সাহস দেখালাম না আর। নদীর গভীরতাও বোঝা যাচ্চিল না ঐ গাঢ় রঙের জন্য। জলে না নেমে আমরা ইয়োলোস্টোনে ব্যাঙ নাচালাম।
    যারা ব্যাঙ নাচানো জান না তারা ছোটোবেলায় কি যে মিস করেছ তা কি বলব। ব্যাঙ নাচানো হল একটা পাথরের টুকরো কে জলের উপর দিয়ে সজোরে ছুড়ে মারা যাতে টুকরো টা জলে পড়ে না ডুবে গিয়ে লাফিয়ে ওঠে। এখন স্কিল টা হল একটা পাথর ডুবে যাবার আগে কতবার লাফাবে? নভিশ রা একবার ও পারে না, আর আমার মত স্কিলড ব্যাঙ নাচিয়ে রা ৫-১০ বার পারে। অবশ্যই পাথরের টুকরোর আকারের উপর নির্ভর করে কতবার লাফাবে। যারা আগ্রহী আমাকে জানাতে পারো, ব্যাঙ নাচানোর স্পেশাল কোর্স এর ব্যবস্থা করা যাবে। ঃ)
    মোটামুটি ভাল পাথর গুলো নদীর বুকে বিসর্জন দেবার পর শুরু হল অভিযান। টাওয়ার ফলসের নিচে যাবার। তার আগে পেরোতে হলে খরস্রোতা টাওয়ার নদী। ভাল ব্যাপার হল যে টাওয়ার নদীর জল স্বচ্ছ ও অগভীর। তাই বরফঠান্ডা হলেও ঐ হাঁটু জল পেরিয়ে গেলাম ক্যামেরা নিয়ে। এবার পাথরের উপর দিয়ে রাস্তা খোঁজার চেষ্টা। ৩০ মিনিট মত গিয়ে দেখলাম প্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে, কিন্তু আর এগোনোর পথ নেই। সামনে একটা ছোট র‌্যাপিড আর দুদিকে ধস নেমে এগোনোর রাস্তা বন্ধ। সুতরাং এবার ফেরার পালা।

    নামাটা সহজ হলেও ওঠাটা একেবারেই নয়। ঐ ৭০০-৮০০ ফুটেই প্রান বেরিয়ে গেল। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ৬০০০ ফুট উঠতে হলে কি হবে ভাবছিলাম। ৪০-৪৫ মিনিট লাগল গাড়ি অবধি পৌঁছতে। এবার ক্যানিয়ন ভিলেজে গিয়ে লাঞ্চ করতে হবে, তারপর যাব ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক এর স্টার অ্যাট্রাকশন দেখতে। যথাক্রমে 'গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অফ দি ইয়োলোস্টোন' আর সেখানে পর পর দুটো জলপ্রপাত, 'আপার ফলস' আর 'লোয়ার ফলস'।
    অ্যামেরিকান গুলো ভাল নাম দিতে পারে না কেন কে জানে? পাহাড় এর নাম রকি, বা গ্রেট স্মোকি মাউন্টেন, ক্যানিয়ন মানেই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, সে যেখানেই হোক না কেন? তারপর টেটন এর আগেও একটা গ্র্যান্ড।
    সে যাকগে, ক্যানিয়ন ভিলেজ এ খাওয়া দাওয়া সেরে প্রথম থামা উপরের প্রপাতটায়। নদী ঐ ইয়োলোস্টোন যেটার উপর একটু আগেই ব্যাঙ নাচিয়ে এলাম। কিন্তু এখানে নদী অনেক বেশী উত্তাল। আমরা দাঁড়িয়েছিলাম প্রপাতের ঠিক মাথায় রেলিংঘেরা ব্যালকনিতে। সামনেই নীলচে সবুজ জল প্রবল বেগে ঝাঁপিয়ে পড়েছে অজানার উদ্দেশ্যে।
    অনেকেই পাহাড়-সমুদ্র-জঙ্গল নিয়ে তর্ক বিতর্ক করেন, যে কোনটা বেশী ভাল। আমার মতে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর হল জলপ্রপাত। সামনে থেকে তাকিয়ে থাকলে সম্মোহিত হয়ে যাই আমি। ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে ঐ অসীম জলধারায়। সেই কোন ছোট্টবেলায় প্রথম দেখেছিলাম জোন্হা-হুড্রু-দশম প্রপাত। তারপর একে একে ধুঁয়াধার, শিবসমুন্দ্রম হয়ে শোশনে প্রপাত। মনে পড়ে ঘনাদার সেই অমোধ গল্প 'পৃথিবী বাড়ল না কেন?' সেই যে স্নেক নদীর হেল'স ক্যানিয়নে নৌকা বেয়েছিলেন তিনি। শোশনে প্রপাতের উপর দাঁড়িয়ে নরকের গিরিখাতের দিকে তাকিয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম সত্যি ভাগ্গিস পৃথিবী আর বাড়ে নি। এই ছোট্ট পৃথিবীই দেখে শেষ করতে পারব না, আরো বড় হয়ে গেলে কি যে হত!
    সেখান থেকে এই ইয়োলোস্টোনের যুগ্ম প্রপাত। উপরের টা শেষ হয়ে গেলে আর একটু পরে গিয়ে নিচের টা। খুবই ইচ্ছে ছিল নিচের প্রপাতের মাথার কাছে যাবার। কিন্তু সময় কমে আসছে, বিকেলের আগে তো ওল্ড ফেথফুলে পৌঁছতে হবে। তারপর হোটলে ফিরে যাওয়াও আছে। উপরের প্রপাতে দারুন একটা রামধনু উঠেছিল। রামধনু ধরা না গেলেও ছবি তুলে নিলাম। মায়াবী লাগছিল সব কিছু।
    আপার ফলসের মাথা থেকে আমরা গেলাম ক্যানিয়নের উত্তর দিকে। ওদিকেই আছে ক্যানিয়নের সেরা পয়েন্ট, Artist's point। এখানে বসে শিল্পীর তুলিতে নেমে আসত স্বর্গ। আমরা গিয়ে দাঁড়ালাম জায়গাটাতে। ভাষা আবার এখানে নিরুপায়। ক্যামেরাও পারবে না এই রঙ ধরতে। আমার তোলা ব্যর্থ ছবি আমি দেখিয়ে দেব কিন্তু সেটা দেখে এই জায়গাটার ধারনা করতে যাওয়া বাতুলতা। বর্ননা দেবার আরো এক ব্যর্থ প্রয়াস করা যাক এখানে।
    মিশরের যেমন পিরামিড, ভারতের যেমন তাজমহল, অ্যামেরিকার ঠিক তেমনই ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক-একমেবাদ্বিতীয়ম। আমরা যারা বেড়াতে যাই, আমরা শুধু মূল রাস্তাটার উপর কয়েকটা জায়গা দেখে পুরোটা বুঝতে চেস্টা করি। সেটা হয়ত রকি পাহাড়ে সম্ভব, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নেও সম্ভব, কিন্তু ইয়োলোস্টোনে সম্ভব নয়। এখানে পৃথিবী প্রতি মূহুর্তে বদলে যায়। এখানকার আবহাওয়া, মেঘ-রৌদ্র সব এখানকারই , অন্য কারোর মত নয়। এতো রঙ এক ঐ প্রবাল দ্বীপ ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাবে না। বরফ আর আগুনের একই সাথে খেলা এরকম আর কোথাও হয় না। ১ কিমির মধ্যে +১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে -৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের এরকম শান্ত সহাবস্থাল ও আর নেই। (ক্রমশঃ)
  • pi | 82.83.85.246 | ২০ জুন ২০১২ ২০:১৭456929
  • আরে নাগদা মানে অভিষেক নাগ নাকি ?
  • | 60.82.180.165 | ২০ জুন ২০১২ ২০:৩৯456699
  • ঋত, আপনার লেখাটা চমৎকার লাগলো।
    সম্ভব হলে ছবিও দেবেন।
  • Rit | 213.110.243.21 | ২০ জুন ২০১২ ২১:১৫456700
  • পাই,
    আবার কে? এই নাগ পৃথিবীতে একটাই। ঃ)
  • pi | 82.83.85.246 | ২০ জুন ২০১২ ২১:১৭456701
  • তা বটে। নাগদা ইউনিক পিস।ঃ)
    কিন্তু তাইলে নাগদাও সঙ্গত করুক আপনার সাথে ! সেও তো এ পাতায় আসে !
  • Rit | 213.110.243.21 | ২০ জুন ২০১২ ২১:২৪456702
  • পাই,
    হুম। ও সঙ্গত দিলে তো ভালই। তানাকাতে সব কটা সফর ছন্দময় হয়ে উঠবে।

    যাহ। শুরুতেই গ্র্যা ক্যা আর ডেথ ভ্যালি শেষ হয়ে গেছে। আমি যে গেলাম তার কি হবে? ঠিক আছে আমি তাহলে জিওন, অ্যান্টিলোপ, ব্রাইস আর মনুমেন্ট ভ্যালি ই লিখব।
  • পাই | 82.83.85.246 | ২০ জুন ২০১২ ২১:২৬456703
  • না না, সবই লিখুন !
  • | 60.82.180.165 | ২০ জুন ২০১২ ২১:৩৯456705
  • ঋত,বাঃ দেখছি ছবিগুলো।
    অপনি শিগ্গির ব্রাইস,জিয়্ন/জায়ন ইত্যাদি নিয়ে শুরু করে দিন।আমাদের এই গরমেই সেখানে যাবার প্ল্যান আছে।আমাদের সঙ্গে এক বা একাধিক আট থেকে ছয় বছুরে থাকবে তাইথাকাখাওয়া ইত্যাদিও জমিয়ে লিখবেন। ওখান থেকেই আমরাও নাহয় খুঁটে খাবোঃ)
  • SS | 141.193.196.214 | ২০ জুন ২০১২ ২১:৪৩456706
  • খুব সুন্দর ছবি ও লেখা। গ্লেশিয়ার এনপি, গ্র্যান্ড টেটন এগুলোতে যাননি?
  • Rit | 213.110.243.21 | ২০ জুন ২০১২ ২১:৪৯456707
  • গ্র্যান্ড টেটন তো পাশেই। গ্লেসিয়ার যাওয়া আর হল না। আমি গেছি ইয়োলোস্টোন(২), গ্র্যান্ড টেটন (২), মাউন্ট রেনিয়ার, শেনানডোয়াহ, রকি, আর্চেস, ক্যানিয়নল্যান্ডস, মেসা ভার্ডে, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (২), ডেথ ভ্যালি, জিয়ন আর ব্রাইস ক্যানিয়ন।

    বাজে মিস হয়েছে গ্লেসিয়ার, ইওসোমিতি আর ওলিম্পিক। তবে ক্যালিফোর্নিয়া-১ দিয়ে ১৬ ঘন্টার একটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা আছে। আস্তে আস্তে লিখি।
  • Tim | 108.249.6.161 | ২০ জুন ২০১২ ২১:৫৭456708
  • জ্জিও! জমিয়ে লিখুন ঋত। পড়ছি। ছবিগুলোয় অনেক মিল পেলাম।
  • SS | 141.193.196.214 | ২০ জুন ২০১২ ২১:৫৮456710
  • গ্লেশিয়ার এনপিতে অবশ্যই যাওয়া উচিত। অপূর্ব সিনিক বিউটি।

    আমারও আপনার লিস্টের বেশিরভাগ জায়গা ঘোরা হয়ে গেছে + আরো অনেক ছোট ছোট অপরিচিত জায়গা। যেমন, বিগ হর্ন ন্যাশনাল ফরেস্ট, নিডলস রক স্টেট পার্ক। এগুলোর কথা কাউকে বলতে শুনিনা অথচ এরাও কম যায় না।
  • pi | 82.83.85.246 | ২০ জুন ২০১২ ২১:৫৯456711
  • ৩ দিনে কতটা কি কভার করা যেতে পারে ? আমাকে কেউ তিন , সাড়ে তিনদিনের প্ল্যান বানিয়ে দিতে পারবে ?
  • SS | 141.193.196.214 | ২০ জুন ২০১২ ২২:০২456712
  • মাত্র তিন দিন?
    এত তাড়াহুড়োর মধ্যে এতকিছু দেখা যায় নাকি!
  • pi | 82.83.85.246 | ২০ জুন ২০১২ ২২:০৪456713
  • সময় নাই যে ঃ(

    কানা মামাই সই ।
  • Nagda | 183.8.78.69 | ২০ জুন ২০১২ ২২:০৫456714
  • ঋত এর এই লেখা টা আগেও পড়েছি। সেই ট্রিপ টা সত্যিই খুব মেমরেবেল ছিল। কোনো সফল সফরের অন্যতম অংশ হলো সফরসঙ্গীরা। এই ট্রিপ টা পুরো গ্রুপ টা এত ডায়নামিক ছিল যে খুব এনজয় করেছিলাম :)
  • hu | 22.34.246.72 | ২০ জুন ২০১২ ২২:০৬456715
  • এই ঋতই ঋত্বিক নাকি? আমি তো এনার লেখার খুব ফ্যান। ভ্রমণকাহিনী ছাড়াও মহাজাগতিক ঘটনা নিয়ে চমৎকার লেখেন। খুব ভালো লাগল এখানে দেখে।

    পাই, তিনদিনে গ্র্যান্ড টেটন আর ইয়েলোস্টোনটা ভাল করে দেখা হয়ে যাবে।
  • SS | 141.193.196.214 | ২০ জুন ২০১২ ২২:০৭456716
  • উইক ডে তে ৫ দিন ছুটি নাও আর তার সাথে আগের-পরের উইকেন্ড দুটো নিলেই তো ৯ দিন হয়ে যাবে। যাওয়া আসায় অবশ্য দুটো দিন চলে যাবে তবুও হাতে থাকবে ৭ দিন।
  • Nagda | 183.8.78.69 | ২০ জুন ২০১২ ২২:০৮456718
  • Pi এর সঙ্গে এবার কোনো ট্রিপ-এ যেতে হবে। সঙ্গে আলুদা !
  • pi | 82.83.85.246 | ২০ জুন ২০১২ ২২:০৮456717
  • বেশ। আমাকে পেলান বানায়ে দাও ঃ)

    ঋত, মহাজাগতিক লেখাপত্তর পড়তে চাই ঃ)

    আর নাগদা, এবার তুইও ফিল্ডে নাম !
  • pi | 82.83.85.246 | ২০ জুন ২০১২ ২২:০৯456719
  • :D
  • Rit | 213.110.243.21 | ২০ জুন ২০১২ ২২:১০456721
  • আমরা রকি, ইয়োলোস্টোন, আর্চেস, ক্যানিয়নল্যান্ড্স, মেসা ভার্ডে ঘুরেছিলাম ৯ দিনে। টেক্সাস থেকে রোড ট্রিপ।

    আর ফিনিক্স-গ্র্যান্ড ক্যা-লা ভে-ডে ভ্যা-জিয়ন-ব্রাইস-নাভাহো-মনুমেন্ট ভ্যালি-অ্যান্টিলোপ-হর্স সু বেন্ড-ফিনিক্স ঘুরেছিলাম ৫ দিনে।

    প্ল্যান চাইলে পাঠিয়ে দিতে পারি। তবে আমাদের প্ল্যান কুচো (৬ -) দের জন্য খুব ই বাজে। আমরা গাড়িতে ঘুমোতাম-খেতাম। ক্যাম্প এ থেকেছি। গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট দের সস্তার ট্রিপ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন