এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে : ন্যাশনাল পার্কস অফ অ্যামেরিকা

    Shuchismita
    অন্যান্য | ০৫ জুন ২০১০ | ১৯৬৩২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • de | 59.163.30.3 | ২৫ জুন ২০১০ ১১:০৭456855
  • অপূর্ব লেখা আর অসাধারণ ছবি -- খুব খুব ভাল লাগলো!
  • aranya | 98.221.52.119 | ২৩ জুলাই ২০১০ ০৮:৫২456856
  • কি মারাত্মক ভালো লেখা আর ফাটাফাটি সব ছবি। ইয়েলোস্টোন-টা নিয়েও যদি এমন লিখত কেউ ..
  • Diptayan | 115.113.42.194 | ২৩ জুলাই ২০১০ ১০:৩৯456857
  • অনবদ্য লেখা - ছবি দেখতে পেলুম না - ওয়েবসেন্স আটকাচ্ছে :(
  • kd | 59.93.194.188 | ২৩ জুলাই ২০১০ ১৪:৩৭456858
  • অনেকদিন গুচ পড়া হয় নি - এখন এই টইটা ওপরে উঠে আসতে শুচিস্মিতার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বেড়ানোর গপ্পো পড়লুম। খুব খুউউউব ভালো লাগলো ওর লেখা - তিনবার গেছি - প্রতিবার নতুন লেগেছে, হয়তো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চোখ পাল্টে গেছে বলে। এই লেখাটি পড়ে পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে পড়লো। থ্যাংক ইউ, শুচিস্মিতা।

    একটা ছোট টাইপো চোখে পড়লো, বলেই দি। কলোরাডোর জল পরিস্কার গ্লেন রিভার ড্যামের জন্যে। হুভার ড্যাম ডাউন-রিভার।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৪ জুলাই ২০১০ ০৬:৫৭456859
  • সবাইকে ধন্যযোগ :)

    কাবলি-দা, একদম ঠিক বলেছেন তো! এহ! খুব লজ্জায় পড়ে গেলাম!
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৪ জুলাই ২০১০ ০৭:০২456860
  • অরণ্যের কমেন্ট দেখে মনে হল ইয়েলোস্টোনের গল্পও তুলে দিই তাহলে এখানে।

    প্রথমে ছবি :

    http://picasaweb.google.com/shuchismita.sarkar/BryceZionYellowstone#
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৪ জুলাই ২০১০ ০৭:০৪456861
  • ইয়েলোস্টোন গেছিলাম গতবছর অগাস্ট মাসে। ডায়েরী লিখেছিলাম অ্যাজ ইউজুয়াল। সেটাই তুলে দেবো আস্তে আস্তে।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৪ জুলাই ২০১০ ০৭:০৬456862
  • ৮ই অগাস্ট, ২০০৯ – ভোর ৫:৪৫ - ব্লুমিংটন

    আজ বেড়াতে যাচ্ছি অনেকদিন পর। আলাদা করে বলার মত কিছু নয়। তবে তিরিশ বছরের জীবনে এই প্রথম একদম নিজের খেয়ালে একা একা বেরোনো। সেদিক দিয়ে একটা গুরুত্ব আছে বইকি। ভোরের ফ্লাইট ভাল্লাগে না। কিন্তু উপায় কি! ৬:১৫তে ফ্লাইট। ভেবেছিলাম সোয়া চারটে নাগাদ উঠলেই হবে। কিন্তু বিধি বাম। সোয়া তিনটেয় বেড়েপাকা আমেরিকান এয়ারলাইন্স এসেমেস করে ঘুম ভাঙিয়ে দিল। আর কি ঘুম আসে। চারটে পর্যন্ত চোখ চেপে শুয়ে থেকে হাল ছেড়ে দিলাম। চান করে কফি পানান্তে সাজুগুজু করতে করতেই ক্যাব এসে গেল। বুড়ো ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে লাস ভেগাসে জুয়ো খেলতে যাচ্ছি কি না! নারে ভাই, ছাপোসা মফস্বলী বালিকা, জীবনে প্রথম একা বেড়াতে যাচ্ছি – তাও এই তিরিশ বছর বয়সে। জুয়ো খেলার সাহস কোথায়! আপাতত ব্লুমিংটন এয়ারপোর্টে বোর্ডিংযের অপেক্ষায়। ফির মিলেঙ্গে ব্রেক কে বাদ।

    ৮ই অগাস্ট, ২০০৯ – সকাল ৮:০০ – আকাশপথে

    ব্লুমিংটন থেকে শিকাগো প্লেন রাইড হগওয়ার্টসের ভাষায় অ্যাপারেট করার মত। ফ্লাইট টেক অফ করলো ৬টা ২০ নাগাদ। আর ৬টা ৩৮শেই পাইলট সাহেব ঘোষনা করলেন – ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গন, আপনারা কুর্সিবন্ধনে আবদ্ধ হউন। আমরা অবতরন করিব। ল্লেহ! খুললাম কখন যে বাঁধব!!

    এক একটা দিন অদ্ভুত ভাবে আসে। এর আগেও তো কতবার ভেবেছি ইয়েলোস্টোনে যাওয়ার কথা। যবে থেকে আমেরিকা এসেছি তবে থেকেই ভেবেছি। বারবার ভেস্তে গেছে। এবারেও তো ভেবেছিলাম আসা হবে না। কিন্তু জোর করে চলে এলাম। আমার রোজ রোজ মেলবাক্স চেক করায় বড় আলিস্যি। আমি ওটাকে ডেইলি রুটিনের জায়গায় উইকলি করে নিয়েছি। ফলে যখনই বাক্স খুলি কেজো-অকেজো চিঠির ভারে তা উপচে থাকে। কালও তেমনই একটা দিন ছিল। চাবি ঘোরাতেই পাপা জোন্স পিজ্জা, ওভেন বেকড স্যান্ডুইচ, বেড অ্যান্ড বাথের কুপন, নিকটবর্তি স্টেট ফার্ম এজেন্টের উপদেশাবলী ইত্যাদি অতীব গুরুত্বপূর্ন খেজুরের সাথে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের লেটেস্ট ইস্যু মাটিতে ঝরে পড়লো। অ্যান্ড গেস হোয়াট? এবারের কভার স্টোরী ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক। ফ্লাইটে বসে সেটাই পড়ছি।

    “কখনো সময় আসে জীবন মুচকি হাসে
    ঠিক যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা
    অনেক দিনের পর মিলে যাবে অবসর
    আশা রাখি পেয়ে যাবো বাকি দু-আনা”:-)

  • Manish | 59.90.135.107 | ২৪ জুলাই ২০১০ ১০:০৮456863
  • অসাধারন সব ছবি। গুচ্ছ গুচ্ছ মন্দিরের ছবি গুলো এক কথায় ফটাফাটি।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৪ জুলাই ২০১০ ২০:৩৫456865
  • ৮ই অগাস্ট, ২০০৯ – দুপুর ২:৩০ – লাস ভেগাস

    অবশেষে নষ্ট শহরে পা রাখা হল। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই দেখি এক খানা গাম্বাট গীটার আকাশপানে চেয়ে আছে। দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে। টাইম স্কোয়ারে ইহাকেই তো দেখিয়াছি হার্ডরক কাফেতে। তফাত একটাই। টাইম স্কোয়ারে যাকে নিউ ইয়র্কের জীবনের স্পন্দন মনে হয়েছিল এখানে সেটাকেই নির্লজ্জ বেলেল্লাপানার বেহায়া টুকলি মনে হল। তবে গোটা লাস ভেগাস শহরটাই তো নকলে ভরা। হাতে কিছু সময় ছিল। আমার অফিস কলিগের রেকমেন্ডশনে গেলাম ভেনিশিয়ানে। ইটালীর ভেনিসের অনুকরনে নাকি এই হোটেল তৈরী। কিছু ক্যানাল, কিছু সোনালী বর্ডার দেওয়া সাদা সেতু আর সিলিং জোড়া রেনেসাঁ পেইন্টিং-এর অক্ষম অনুকরনে যা তৈরী হয়েছে তার নাম যদি ভেনিস হয় তাহলে আর ইহজীবনে আসল ভেনিস দেখে আমার কাজ নেই। যে কোন শিল্প – বিশেষ করে তা যদি আর্কিটেকচার হয় – তার সাথে পারিপার্শ্বিকের মেলবন্ধন খুব জরুরী। মিশর থেকে একটা ওবেলিস্ক খুলে এনে প্যারিসের রাস্তায় লাগিয়ে দিলে যেমন তার শোভা বাড়ে না, তেমনি ব্যস্ত চৌরাস্তায় পৃথুলা স্ট্যাচু অফ লিবার্টিকে তৃতীয় শ্রেনীর কার্টুন মনে হয়। তার চেয়ে বরং ক্যাসিনোগুলো ভালো। এর আগে তো শুধু সিনেমাতেই দেখেছি। ঘরভর্তি সারি সারি স্লট মেশিন, পোকার টেবল এবং আরো যেগুলোর আমি নাম জানি না – সেসব দেখে বেশ রোমাঞ্চিত হলাম। এমনকি দানী হতচ্ছাড়ার পাল্লায় পড়ে সকালের উপলব্ধি ভুলে একটু জুয়াও খেলে নিলাম। আসলে আপত্তিটা জুয়ো নিয়ে নয়। আমার মফস্বলী জেনেটিক ডিসার্ডার আমাকে ছোটোবেলাতেই জানিয়ে দিয়েছে আমি একটি ট্যালা এবং সারা পৃথিবীর মানুষ অপেক্ষা করে আছে কখন আমি একটি ট্যালামি করব আর তারা প্রান ভরে আমায় দেখে হাসবে। ক্যাসিনোতে কি ভাবে খেলতে হয়, কোথায় টাকা ঢোকাতে হয় কিছুই তো জানি না। কিছু একটা কেলেঙ্কারী করি আর হাসির খোরাক হই আর কি! কিন্তু এহেন সরল স্বীকারোক্তিতে আমার সাহসিকতার ঝুঁটি ধরে টানাটানি শুরু হয়ে গেল। আর সাহসে কটাক্ষপাত হলে খাঁটি বাঙালী রক্তে কেমন আলোড়ন ওঠে তাতো জানেন ঈশ্বর এবং ক্ষুদিরাম বোস। তার ওপর জানা গেল এমনকি দেবপ্রিয়াও স্লট মেশিনে খেলেছে। এখানে একটা কথা বলে নিই। দেবপ্রিয়া যদিও আমার থেকে হাজার গুনে স্মার্ট কিন্তু বালুরঘাটের মেয়ে বলে আর আমার মতই আর্মানির স্যুট অথবা গুচ্চির ব্যাগ সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল নয় বলে আমি মাঝে মাঝেই ওকে আমার সমগোত্রীয় ভেবে নিই। তাই দেবপ্রিয়ার পরামর্শ মত পাকড়াও করলাম এক কালো স্যুট পরা অ্যাটেন্ডেন্টকে আর সমস্ত মফস্বলী জড়তাকে পেন্নাম ঠুকে তাকে জানিয়ে দিলাম আমি এক নাদান বালিকা। কিন্তু জুয়ো খেলার বড় শখ। এখান তিনি যদি একটু সাহায্য করেন। কালো স্যুট মধুর হেসে বলল – তা কি খেলতে চাও তুমি? বোঝো! সেটাই যদি জানবো তাহলে তোমাকে জিগালাম কেন। সে বোধহয় এমন জিনিস এর আগে দেখে নি। সংশন্বিত চোখে সে আমার আই ডি দেখতে চাইল। লজ্জার মাথা খেয়ে তাও দেখালাম। জুয়ো না খেলে আজ আমি ঘরেই ফিরব না। আমার তিরিশ বছরের সঞ্চিত নির্বুদ্ধিতা আপাদমস্তক জরীপ করে সে বলল – ফলো মি। আর কি ভাগ্যি তখনই তার ফোন বেজে উঠলো। আমাকে এক জ্যানিটারের হাতে সঁপে দিয়ে কালো স্যুট স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলল। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আফটার অল জ্যানিটার তো আর স্যুট পরে নি। তাকে তবু অ্যাপ্রোচ করা যায়। সে জানতে চাইল – কত টাকার খেলবে? আমি একটি ডলার বাড়িয়ে দিলাম। জ্যানিটারই টাকা ঢোকালো আর দেখিয়ে দিল কি ভাবে খেলতে হবে। প্রথমেই হারলাম। পরের দানে অহো কি বিস্ময়! টাকা দ্বিগুন হল। কিন্তু ট্যালার ভাগ্যে আর কতই বা বিস্ময় জমতে পারে। পরপর ছ’বার খেলে এবং হেরে সব টাকা শেষ করে উঠে পড়লাম। যাক বাবা! লাস ভেগাসে এসে জুয়ো খেলিনি এই বদনামটা আর কেউ দিতে পারবে না!!

    ৮ই অগাস্ট, ২০০৯ – রাত ৯:১৫ – সেন্ট জর্জ, উটা

    অবশেষে বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ আমার ট্যুর গাইডের দেখা মিলল। ট্রপিকানা হোটেলের লবিতে হল মধুর মিলন। অবশ্য মধুর না কষায় সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কারন সে চীনদেশীয়। চাইনীজ সে কি ভাষায় বলে ঠিক বলতে পারবো না, তবে সে ইংরিজী বলে চিনে ভাষায়। অতএব বুঝ সে লোক যে জানো সন্ধান!

    আপাতত সেন্ট জর্জ, উটাতে ঘাঁটি গেড়েছি। হোটেলের ঘর থেকে চম্‌ৎকার একখানা সুর্যাস্ত দেখে নিলাম। আমেরিকার এই অঞ্চলে যতবার আসি মুগ্‌ধ হই। এখানে প্রকৃতি পুরুষ। গঁগ্যার পেইন্টিং-এর মত রুক্ষ, প্রকান্ড পুরুষ। সারা দিনের শেষে সূর্যের নরম লাল সে দু-বাহু দিয়ে শুষে নেয়। বারবার দেখেও পুরনো হয় না। কাল যাচ্ছি জায়ন আর ব্রাইস ক্যানিয়নে। ভোরে উঠতে হবে। আজ এখানেই শেষ।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৪ জুলাই ২০১০ ২০:৪০456866
  • ৯ই অগাস্ট, ২০০৯ – রাত ৮:৩০ – সল্টলেক সিটি, উটা

    আমার সহযাত্রীরা সকলেই এশীয়। তার মধ্যে আবার ষাট শতাংশ চাইনীজ। তবে আমি একা এসেছি শুনে সবাই আমাকে বেশ প্যাম্পার করছে। আর আমিও এই প্যাম্পারিং-এর সুযোগ নিয়ে “কাকু একটা ছবি তুলে দিন”, “বৌদি চলুন ঐ ক্লিফটা থেকে ঘুরে আসি”, “গাইড-দা, এই জায়গাটা কি সুন্দর – এখানে একটা ফোটোস্টপ দিন” ইত্যাদি করে বেড়াচ্ছি।

    সকালে সাড়ে সাতটা নাগাদ বেরোনো হল জায়ন ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশ্যে। জায়নে প্রথমেই নজর কাড়ে সবুজের সমারোহ। আমেরিকার এই অঞ্চলের অন্য কোন ন্যাশনাল পার্কে এত সবুজ দেখি নি। নাভাহো স্যান্ডস্টোনের বুক চিরে বয়ে গেছে ভার্জিন রিভার – সেই নদীই জায়নকে সবুজ করে রেখেছে। জায়নে যে জায়গাগুলোতে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল সেগুলো চড়া রোদের আলোতে ভালো লাগার কথা নয়। জায়নে যাওয়া উচিত ছিল গোধুলির সময়। কিন্তু আমার ট্যুর আর সমস্ত মেড ইন চায়না প্রোডাক্টের মতই সস্তা এবং কমপ্লেইন্ট-রেজিস্টান্ট। তাই জায়নে বুড়ি ছুঁয়ে আমরা চললাম ব্রাইস ক্যানিয়নের পথে।

    যাত্রাপথ বড় সুন্দর। দুদিকে যতদুর চোখ যায় ঢেউ খেলানো পেশীর মত রকির বিস্তার। কোথাও এক গোছা সবুজ ঐ রুক্ষতার থেকেই প্রানরস শুষে নিচ্ছে। আবার কোথাও নির্মম দাবানলের সাক্ষী রেখে গেছে ঝলসানো গাছের গুঁড়ি, এবড়ো-খেবড়ো প্রানহীন শিকড়। এই পথে আমি যখনই এসেছি আমার ছাপোষা জীবনের থেকে অনেক বড় কিছু এক অন্যতর জীবনের স্পন্দন টের পেয়েছি। ঘোড়ার খুরের ধুলো উড়িয়ে সূর্যাস্তের দিকে ছুটে যাওয়ার জীবন। কলোরাডো নদীতে উজান বাইবার জীবন। তারাভরা আকাশের নীচে ভুট্টা পুড়িয়ে খাওয়ার সেই সব জীবন – যা আমার নাগালের অনেক বাইরে – এই রাস্তা আমাকে সেই জীবনে বড় প্রলুব্ধ করে।

    ব্রাইস ক্যানিয়নে না এলে পৃথিবীর এক অনন্য সৌন্দর্য আমার চিরদিনের মত অধরা থেকে যেত। মাইলের পর মাইল জুড়ে কমলা-গোলাপী-হলুদ পাথরের সারি। আমি বৈজ্ঞানিক নই। এই পাথর - যার পোষাকি নাম হুডু - কি ভাবে এখানে এল তার অক্ষম ব্যাখ্যায় আমি যাবো না। দিগন্তবিস্তৃত প্রস্তর স্তম্ভ দেখে আমার মহাভারতের এগারো অক্ষৌহিণী সেনার কথা মনে পড়ছিল। কোটি কোটি বছর ধরে নির্জন সমাধিক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছে নির্বাক সৈনিকের দল। পাঞ্চজন্যের একটি ফুঁ তে যেন এখনই প্রান ফিরে পাবে। চড়াই ভেঙে খানিক উঠে একটা পাতাহীন গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে বসলাম। আমার সামনে দুই কোটি বছরের নিরন্তর কর্মশালায় তৈরী হওয়া এক নিখুঁত শিল্প। অবিশ্বাসী মন এইখানে এসে তাঁকে খুঁজে পায়।

    মাটি জানবে তুমি আস্থার পায়ে দাঁড়িয়েছ তাই স্নিগ্‌ধ
    তার জীবন স্তন্যে ধন্য
    ধন্য হল বিশ্ব।

  • hukomukho | 69.250.185.233 | ২৪ জুলাই ২০১০ ২১:২০456867
  • অসাধারণ, ফাটাফাটি হচ্ছে শুচিস্মিতা, ছুটুক ঘোড়া টগবগিয়ে, আর উড়তে থাকুক সোনার ধুলো তার প্রতি পদক্ষেপে , যা আমরা শুষে নেবো আমাদের প্রতিটি রোমকূপ প্রতিটি ইন্দ্রিয় দিয়ে।
  • sinfaut | 117.194.195.156 | ২৪ জুলাই ২০১০ ২১:৫৯456868
  • এখনো পড়ার সুযোগ হয়নি, কিন্তু ছবিগুলো খুব লাগলো।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৬ জুলাই ২০১০ ১৭:০৮456869
  • ১১ই অগাস্ট, ২০০৯ – ভোর ৫:৩০ – ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক

    ইয়েলোস্টোন ন্যশনাল পার্কের লগ কেবিনে বসে এই লেখা লিখছি। চারদিন শুনশান। নিস্তব্ধ। ঘন পাইনের সারির মধ্যে এই কটা কেবিন – যার একটায় আমি আছি। আমার জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে পাইনের বন নিকষ কালো দৈত্যের মত দাঁড়িয়ে আছে। সত্যি বলতে কি এমন জায়গায় যে আমাকে একা রাত কাটাতে হবে তা আমি আগে ভাবি নি। বাইরের পৃথিবীর থেকে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন এই এলাকা। এমনকি যে 911 এর অটূট নিরাপত্তায় আমি এদেশে একা থাকি – তার ওপরেও আর ভরসা করতে পারছি না। আমার সেল ফোনে কোন সিগনাল নেই। কেবিনে নেই কোন ইন্টারকম। মিনিট সাতেক হেঁটে গেলে সার্ভিস ডেস্ক। এখন যদি একটি ভাল্লুক এসে আমার জানলায় নক করে তাহলে সার্ভিস ডেস্ক পর্যন্ত গিয়ে জানাতে পারলে তবে মিলবে সাহায্য। কোন সিগন্যাল না থাকার জন্যই বোধহয় আমার সেলফোন তার নিজস্ব লোকাল টাইমে সেট হয়ে গেছে। সাড়ে পাঁচটাতে অ্যালার্ম দিয়েছিলাম। উঠে স্নান করে তৈরী হয়েও দেখি বাইরের আঁধার একটুও ফিকে হয় নি। মনে হয় আমি জেগেছি সাড়ে চারটেতে। আর এখন বাজে সাড়ে পাঁচটা। নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই। কারন ঘরে কোন ঘড়ি নেই। আর যে ইন্টারনেট আমাকে রনে-বনে-জলে-জঙ্গলে উদ্ধার করে সেই পরম অগতির গতিও এখানে অচল। আমি এখন তাই ভোর হওয়ার অপেক্ষা করছি আর লিখে রাখছি গতকালের কথা।

    কাল সল্টলেক সিটি থেকে বেরিয়েছি সাড়ে সাতটা নাগাদ। গাইড আমাদের প্রথমেই নিয়ে গেল উটার স্টেট ক্যাপিটালে। সুন্দর মার্বেলের বাড়ি – ঐ যেমন হয় আর কি। কিন্তু আমার মন তো তখন উড়ে বেরাচ্ছে রকির আঁকে বাঁকে – হলুদ-সবুজ উপত্যকার অনাবিল মুক্তিতে। মর্মর সৌধে কি তখন মন ওঠে!

    তারপরই সোজা ইয়েলোস্টোনের পথে। সর্পিল রাস্তা রকির বুক চিরে এগিয়ে চলেছে। পাহাড়ের বুক-জোড়া সূর্যমুখীর ক্ষেত আকাশের দিকে চেয়ে হাসছে। কালো পাহাড়ের বুকে সবুজ পাহাড়, তার বুকে লাল পাহাড়, তার কোলে সোনালী চারনভূমি। ঠিক ছবির মত – ছোটোবেলায় ‘বসে আঁকো’ প্রতিযোগিতায় যেমন আঁকতাম। মাঝে মাঝেই ধরা দিচ্ছে স্নেক রিভার – সার্থকনামা নদী একটি – পাইনের জঙ্গলের ফাঁকে ফাঁকে তরতর করে খরস্রোতে বয়ে চলেছে। লাঞ্চ করতে থামা হল জ্যাকসন হোলে। রকি দিয়ে ঘেরা একটি ছোট্ট শহর। সামান্য কয়েকটি রেস্টোরয়ান্ট। আর সামান্য কিছু মানুষ। লাঞ্চের পর একটু হেঁটে বেড়ালাম। শহরের বড় রাস্তাটিকে বাদ দিলে বাকি ছোটো রাস্তাগুলোতে ট্রাফিক লাইট নেই। লোকজন এদিক ওদিক তাকিয়ে পরস্পরের সম্মতি নিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছে। বেশ বন্ধুব্‌ৎসল শহর। আমাকে একবারও অপেক্ষা করতে হল না। গাড়িওয়ালারা মিষ্টি হেসে পথ করে দিল।

    এর পরেই শুরু হয় গ্‌র্‌যাণ্ড টেটন ন্যাশনাল পার্ক – যা গিয়ে মিশেছে ইয়েলোস্টোনে। পার্কের শুরুতেই রকি পাহাড় অভ্যর্থনা করলো তার বরফে ঢাকা চুড়ো দিয়ে। রকি যে আসলে নেহাত এক সাধারন পাহাড় নয় – এ যে পর্বত – হিমালয়-অ্যাল্পস-আন্দিজদের জাতভাই তা তো প্রায় ভুলেই গেছিলাম কলোরাডো নদীর দাপটে। বরফের শৃঙ্গ সে কথা মনে করিয়ে দিল। তবে রকি ঠিক হিমালয়ের মত ধ্যানগম্ভীর নয়। তার হাবভাব অনেকটাই চ্যাংড়া ছোঁড়ার মত। সেই ফিচেল রকিকে পাশে নিয়ে আমাদের বাস চলতে থাকলো পৃথিবীর সব চেয়ে পুরোনো ন্যাশনাল পার্কের পথে।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৬ জুলাই ২০১০ ১৭:০৯456870
  • ১২ই অগাস্ট, ২০০৯ – ভোর ৪:০০ – ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক

    কাল সারাদিন ধরে যা যা দেখলাম তা ভালো করে দেখার জন্য গোটা একটা জীবন ও বোধহয় যথেষ্ট নয়। লিখছি একে একে।

    ইয়েলোস্টোন ভোরের দিকে বেশ ঠান্ডা হয়ে যায়। আমি একটা হাল্কা ফ্লিস জ্যাকেট সাথে এনেছি। সকাল বেলা সেটা গায়ে দিয়েও শীতে কাঁপছি। তবে ভোরবেলা পাইনের পথ ধরে হাঁটতে খুব ভালো লাগছিল। ছোটোবেলায় প্রায় প্রতি বছরই শিমুলতলা যাওয়া হত। কুয়াশা মাখা ভোরে চাদর জড়িয়ে কুঞ্জ-কুটীরে খেজুর রস খেতে যাওয়ার সেই সব দিন। বহুদিন পর আবার সেই রকম ভোরবেলা হাঁটতে বেরোলাম।

    আমরা যেখানে আছি সেখানে ইয়েলোস্টোন রিভার রকির বুকে একটা ক্যানিয়ন তৈরী করেছে। সবাই বলে ইয়েলোস্টোনের গ্‌র্‌যান্ড ক্যানিয়ন। বিশালত্বে গ্‌র্‌যান্ড ক্যানিয়নের সাথে যদিও কোন তুলনাই হয় না, কিন্তু নদীটি যেখানে পাহাড়ের বুকে জলপ্রপাত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেই সৌন্দর্য অতুলনীয়। খুব আফসোস হচ্ছিল ফোটোগ্রাফিটা ভালো করে শিখি নি বলে। কি আর করবো। স্মৃতির ক্যামেরাতেই গেঁথে নিলাম ছবিটি।

    ফোটোগ্রাফির প্রসঙ্গ যখন উঠলৈ তখন একটা গল্প করেই নিই। এখানে সবার ধারনা হয়েছে আমি খুব বড় ফোটোগ্রাফার। আমি যতই বোঝানোর চেষ্টা করি যে আমার কাঁধে যে যন্তরটা ঝুলছে তার অর্ধেক ফাংশানই আমি জানি না – লোকে ভাবছে আমি বুঝি বিনয় করছি। শুভ থাকলে বলতো – জালিগিরির শেষ নেই। কিন্তু আমি কি করবো! ওরা ভাবলে আমার কি দোষ!

    এর পরের স্টপে বাস থেকে নামতেই একটা খুব পরিচিত গন্ধ পেলাম। মাঝে মাঝেই ইলেভেন-টুয়েলভের কেমিস্ট্রি ল্যাব থেকে এই গন্ধ বেরিয়ে আমাদের স্কুলবাড়ী ভরিয়ে দিত। তারপর তো নিজেও বানিয়েছি সালফারের এই বাষ্প। একটা বিস্তীর্ন চত্বরে কাদামাটি টগবগ করে ফুটছে। কাঠের সেতু দিয়ে সেই ফুটন্ত মাটি পেরিয়ে এক গুহার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখান থেকে গলগল করে সালফারের ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বেশিক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। এই গুহার নাম ড্‌র্‌যাগনস মাউথ – সত্যিই যেন এক ড্রাগনের মুখ থেকে আগুন বেরোচ্ছে – আর সেই সাথে গুমগুম আওয়াজ।

    এবার আমার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে পড়া জ্ঞান একটু কাজে লাগাই। ইয়েলোস্টোন আসলে এক আগ্নেয়গিরি। শুধু ভলক্যানো নয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একে বর্ণনা করেছে সুপার ভলক্যানো বলে। শেষ অগ্নুৎপাত হয়েছিল ছশো চল্লিশ হাজার বছর আগে। তখনই ইয়েলোস্টোন তার বর্তমান রূপ নেয় – যা আমি সারাদিন ধরে দেখলাম। ইয়েলোস্টোনের আগ্নেয়গিরি এখনো অ্যাকটিভ। সরের মত পাতলা মাটির নিচে পৃথিবী এখনো উত্তপ্ত এবং চঞ্চল। তারই প্রকাশ ঘটছে এখানে সেখানে। বাসে যেতে যেতে মাঝে মাঝেই দেখছি মাটি থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এমন দৃশ্য তো আগে দেখি নি কখনো। অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবী বানানোর কারখানায় গাইডেড ট্যুর নিয়েছি।

    ইয়েলোস্টোনের যে ইনফরমেশন ব্রোশিওরটা পার্কে ঢোকার সময় হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল তাতে দেখছি লেখা আছে –YellowstoneLakeisthelargestmountainlakeinNorthAmerica. মাউন্টেন লেক কাকে বলে আমি জানি না। তবে লার্জেস্ট হোক বা না হোক, ইয়েলোস্টোনের মত লেক যে পৃথিবীতে খুব বেশি নেই সেটা নিশ্চয়ই সত্যি। এটাই আমার দেখা প্রথম লেক যেখানে জ্বালামুখী গহ্বর থেকে বাষ্প বেরিয়ে বুদ বুদ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে জলের মাঝে। লেকের পাশে এই জায়গাটার নাম ওয়েস্ট থাম্ব। এখানে যে কতগুলো মাড পুল, হট স্প্রিং, গীজার আছে আমি গুনে রাখতে পারি নি। গাইড সময় দিয়েছিল পঁয়তাল্লিশ মিনিট। সবকটা পুলে একবার করে উঁকি মেরে যখন বাসে ফিরলাম তখন সবাই হাততালি দিয়ে আমাকে ওয়েলকাম ব্যাক করলো – অধমের সময়ের হিসেব ছিল না – এক ঘন্টা পেরিয়ে গেছিল। নীলকান্ত মনির মত টলটলে নীলকে ঘিরে সালফারের হলুদ – তাকে জড়িয়ে আছে সাদা ক্যালসিয়াম কার্বনেট। কাছে গেলে গরম বাতাসের হলকা লাগছে গায়ে। লাগারই কথা। পুলের ভেতরের ঐ তরলের উষ্ণতা যে প্রায় ১৮০ ডিগ্রী ফারেনহাইট!

    এরপর লাঞ্চব্রেক ওল্ড ফেইথফুল ইন এ। ওল্ড ফেইথফুল পৃথিবীর সব চেয়ে বিখ্যাত গীজারগুলোর মধ্যে একটি। আর ইয়েলোস্টোনের সব চেয়ে পুরোনো ব্যাবসায়িক সাফল্য। প্রতি ঘন্টা দেড়েক অন্তর পৃথিবী এখানে প্রায় চার হাজার গ্যালন ফুটন্ত জল উদগীরন করে তার বুকের ভেতর থেকে। এমন রেগুলার ইন্টারভ্যালে পারফর্ম্যান্সের জন্যই নাম হয়েছে ওল্ড ফেইথফুল। কালীপুজোর রাতের ইলেকট্রিক তুবড়ির মত এই বিস্ফোরন। আসলে তার চেয়ে অনেকটাই বেশি। কারন এই তুবড়ি লাফিয়ে ওঠে প্রায় দেড়শো ফুট। বাজি ফোটানো দেখার পরও হাতে কিছুটা সময় ছিল। একটা কফি হাতে বসেছি লজের বারান্দায়। এক টুসটুসে বুড়ি আমার সাথে ভাব জমালো। ষাটের দশকে সে প্রথম ইয়েলোস্টোন আসে। ক্যানিয়নে গিয়ে পিকনিকের স্মৃতি তার এখনো অমলিন। এখন আর হাঁটতে পারে না। নাতি-নাতনীরা পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুড়ি রয়েছে বসে। সামনে ওল্ড ফেইথফুল।

    ইয়েলোস্টোনের যে ছবিটা আমাকে সব চেয়ে আকৃষ্ট করতো সেটা হল একটা গাঢ় নীল গহ্বর – এক কমলা আস্তরন তাকে সূর্যের ছটার মত ঘিরে রেখেছে। জেনেছিলাম তার নাম গ্‌র্‌যান্ড প্রিসম্যাটিক স্প্রিং। মিডওয়ে গীজার বেসিনে দেখা পাওয়া যাবে তার। তাই যখন গাইড বলল এর পরের গন্তব্য মিডওয়ে গীজার, তখন উত্তেজনায় বুক ধুকপুক – তারে আমি চোখে দেখি নি, তার অনেক গল্প শুনেছি – আর গল্প শুনে তাকে অল্প অল্প নয়, ভীষন ভীষন ভাবে দেখতে চেয়েছি। অবশেষে এল তাহলে সেই মুহুর্ত। ঠিক যেমনটা ছবিতে দেখেছিলাম তেমনটা দেখা গেল না। কারন গ্‌র্‌যান্ড প্রিসম্যাটিকের ব্যাস ৩৭০ ফুট। ছবিটা আকাশ থেকে নেওয়া। তাই ঐ নীল তারার মত বিচ্ছুরন দেখা যায়। আমি দেখলাম মাটি থেকে। তবে যা দেখলাম তাতেও জন্ম সার্থক। চেনা পৃথিবীর কোন চিহ্ন সেখানে নেই। ফুটন্ত ফুটিফাটা মাটি। তার মাঝে ঐ গাঢ় অপার্থিব নীল – অত বিশাল বলেই বোধহয় প্রশান্ত গম্ভীর। তার মাঝখান থেকে ধোঁয়া উঠছে – মুখে এসে ঝাপটা দিচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে উঠে আসা সেই উষ্ণতা। আর সেই নীলকান্ত মনিকে ঘিরে আছে কমলা চাদর। ঐ কমলা চাদর আসলে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়ার বাসস্থান। চোখের সামনে সামনে জীবনের এই রূপ দেখে আমি নড়তে পারছিলাম না। গাইড এসে বলল এবারেও দেরি করলে বাসে উঠে গান গাইতে হবে। অগত্যা ফিরতেই হল।

    মিডওয়ে গীজার দেখার পর আমার আর কিছু চাইবার ছিল না। গাইড নিয়ে গেল লোয়ার গীজার বেসিনে। আবার ব্যাকটেরিয়ার চাদর। আবার সেই আদিম প্রাণের স্পন্দন। দেখি এর মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে এক মরা গাছের গুঁড়ি। ১৯৮৪তে এক বিশাল দাবানলে ইয়েলোস্টোনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পুড়ে গেছিল। ঐ মরা গাছ সেই অগ্নিকান্ডেরই শিকার।

    বেলা বয়ে যায়। আমাদের বাস এল ম্যামথ হটস্প্রিং এ। এ যেন এক মৃত্যু উপত্যকা। হাজার হাজার বছর ধরে ক্যালসিয়াম কার্বনেট জমে মাটি এখানে মৃত্যুর মত সাদা। কিছু প্রানহীন গাছ দাঁড়িয়ে আছে ইতি-উতি। যে কোন মুহুর্তে কালো হুড পরা একটি লোক বেরিয়ে এসে বলতেই পারে – চেক মেট। আর কি আশ্চর্য – তারই মধ্যে তৈরী হচ্ছে জীবন। সাদা পাথরের ভাঁজে ভাঁজে যে বাদামী রেখা – সেখানে হাইড্রোজেন সালফাইডের ভরসায় সংসার পেতেছে ব্যাকটেরিয়ার দল।

    দিনের শেষ গন্তব্য রুজভেল্ট টাওয়ার। ইয়েলোস্টোনের সব চেয়ে উঁচু জায়গা। এখানে এসে আবার দেখা হল ইয়েলোস্টোন নদীর সাথে। পাহাড় কেটে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে। রকির শরীরে কোটি কোটি বছরের ভাঙ্গাগড়ার ছাপ। পাইনের বন দাঁড়িয়ে আছে কে জানে কত প্রজন্ম ধরে। আজ এই নশ্বর মানুষ – কালের সমুদ্রে একটি বুদবুদের মত যার অস্তিত্ব – সে আজ এখানে এসে দাঁড়ালো।

    অনেকক্ষন লেখার পর খেয়াল হল প্রায় সোয়া পাঁচটা বাজে। জানলার পর্দা সরিয়ে দিলাম। এখনো আলো ফোটে নি। এই আদিম পৃথিবীতে অন্ধকারে চোখ মেলে চেয়ে আছি আমি একা। বাইরে পাইনের সারি জ্যোৎস্নায় ভিজে চুপ। বিষাদক্লিষ্ট সুঁড়ি পথ চলে গেছে কোন গভীরে। এখনি একটা সাদা ঘোড়া এসে দাঁড়াবে। ম্যাজিক আর রিয়েলিটির শেষ সীমানাটাও মুছে যাবে।

    আমরা বেসেছি যারা অন্ধকারে দীর্ঘ শীত রাত্রিটিরে ভালো
    খড়ের চালের পরে শুনিয়াছি মুগ্‌ধ রাতে ডানার সঞ্চার
    পুরানো প্যাঁচার ঘ্রান – অন্ধকারে আবার সে কোথায় হারালো!
    বুঝেছি শীতের রাত অপরূপ – মাঠে মাঠে ডানা ভাসাবার
    গভীর আহ্লাদে ভরা; অশথের ডালে ডালে ডাকিয়াছে বক
    আমরা বুঝেছি যারা জীবনের এই সব নিভৃত কুহক।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৪:৫৭456871
  • এটা শেষ করা হয়নি। অসমাপ্ত ফেলে রাখতে নেই। তাই।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৪:৫৯456872
  • ১৩ই অগাস্ট, ২০০৯ – ভোর ৫:০০ – সল্টলেক সিটি এয়ারপোর্ট

    যাত্রা হল শেষ। এবার বাড়ির পথে। গত দুদিনের ডায়েরীতে শুধু গন্তব্যের বিবরনই দিয়েছি। যে মানুষগুলোর সাথে সেই গন্তব্যে পাড়ী তাদের কথা বলাই হয় নি। গাইড-দা কে দিয়েই শুরু করা যাক। গাইডটা ঠিক দুটি ইংরিজি জানে –“ইউ নো” আর “কাইন্ড অফ লাইক”। মাত্র দুটি শব্দবন্ধ ব্যবহারে যাবতীয় মনের ভাব প্রকাশ করা নি:সন্দেহে কঠিন কাজ। তবে ভদ্রলোকের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। কিপ গোয়িং গাইড-দা!

    গাইড-দার চৈনিক ইংরিজি বোধগম্য ভাষায় অনুবাদ করে এই কদিন যে আমার পরিত্রাতার ভুমিকা পালন করেছে সে হল চাইনীজ মেয়ে শেরি। শেরির বাবা মেডিকেল সায়েন্সে রিসার্চ করে। ছমাসের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হসপিটালে এসেছে। শেরি তার মায়ের সাথে সামার ভ্যাকেশনের ছুটিতে বেড়াতে এসেছে বাবার কাছে। শেরির বাবা ভাঙা ইংরিজি বলতে পারে। তবে শেরির মা – যাকে আমি মনে মনে হাসি-বৌদি বলে ডাকছিলাম – একদমই ইংরিজি জানে না – শুধু মিষ্টি করে হাসে। আর ভারী সুন্দর দেখতে – ওর হাসিটা মনে থেকে যাবে অনেকদিন। চিনে এখন ইংরিজি শেখার দিকে ভালোমত জোর দেওয়া হচ্ছে বলেই বোধহয় এদের মধ্যে সবচেয়ে বলিয়ে কইয়ে হল শেরি। আমি ওকে একটা চকোলেট দিতেই ও খুব খুশি হয়ে জানিয়ে দিল – তুমি আমায় টিয়ান-টিয়ান নামে ডাকতে পারো – আমি খুব মিষ্টি ভালোবাসি বলে আমার চাইনিজ নাম টিয়ান-টিয়ান। চাইনিজে টিয়ান-টিয়ান মানে সুইট। দুই মিষ্টান্ন প্রেমিকের আলাপ জমতে কখনৈ দেরি হয় না। এক্ষেত্রেও হল না। টিয়ান-টিয়ান শুধু মিষ্টি মেয়েই নয়, ও খুব ভালো গান গায়। হাঙ্গেরীতে গিয়ে চিনকে রিপ্রেজেন্ট করে এসেছে গত বছর।

    এছাড়াও আছে কাম্বোডিয়ান কাকু-কাকিমা। কাম্বো-কাকুর একমাত্র কাজ যে কোন সুদৃশ্য অথবা কুদৃশ্য জায়গায় কাকিমাকে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা। এমন কি দেখি ট্‌র্‌যাশক্যানের সামনে দাঁড়িয়েও ছবি তুলছে। তবে কাম্বো-কাকু আমার ছবিও তুলে দিয়েছে। এই ট্রিপে আমার যে কটি ছবি উঠেছে বেশির ভাগই কাম্বো-কাকু অথবা চিনে-দা (শেরির বাবা) তুলে দিয়েছে।

    ফিলিপিনো জ্যেঠু-জ্যেঠিমাদের কথাও বলতে হয়। তিন জোড়া বুড়ো-বুড়ি দল বেঁধে বেড়াতে এসেছে। খুব আমুদে মানুষ। সব সময় হৈ চৈ করছে। তবে বড্ড কৌতুহলী। তুমি একা এসেছ কেন, তোমার কি কোন বয়ফ্রেন্ড বা হাজব্যান্ড নেই, তুমি একটা ব্যাগপ্যাকে পাঁচ দিনের লাগেজ কি করে ঢোকালে, তুমি ইন্ডিয়ান হয়েও স্টেক খাচ্ছো কেন। রে দুর্বিনিত, আর প্রশ্ন করিয়ো না, এবার মুন্ড খসিয়া পড়িবে! তাও মোটের ওপর মানুষগুলো ভালৈ। পাড়ার গায়ে পড়া অথচ স্নেহশীল বড়রা যেমন হয় আর কি! এক জ্যেঠিমাকে তো এক খানা সিঁদুরের টিপ পরিয়ে দিলেই বারোয়ারী পুজোর কাজে লাগিয়ে দেওয়া যায়। সে খুব খেয়াল রেখেছিল আমার। শুচি তুমি একা থাকবে, ভয় পাবে না তো? সকালে উঠতে পারবে তো? নাকি আমি ডেকে দেব তোমায়? এমন মিষ্টি জ্যেঠিমার নাকটা লম্বা হলেও তাকে ক্ষমা করে দিতেই হয় শেষ পর্যন্ত।

    আমার ফোটোগ্রাফি এক্সপার্টিসের মিথটা যে প্রথম চালু করল সেই চাইনীজ মেয়েটির কথাই বা ভুলি কি করে। তার নামটা জানা হয় নি। তবে সে সর্বক্ষন তিড়িং বিড়িং করে লাফিয়ে বেড়াত বলে তাকে ফড়িং নামে ডাকাই যায়। ফড়িং-এর মা আমাকে দেখতে পেলেই চাইনীজে প্রচুর বকবক করে। ফড়িং এসে তার মা-কে সামলায়। ওদের থেকে আমি একটা চাইনীজ শব্দ শিখেছি। শে-শে। মানে ধন্যবাদ।

    আর কথা বলতো বটে ডোনা। ডোনা যদিও তিরিশ বছর এদেশে আছে, কিন্তু ইংরিজিটা এখনো ভালো রপ্ত হয় নি। কিন্তু কথা বলতে তার ভীষন উৎসাহ। আর আমার সামনে সে কঠিন ইংরিজিতে ইয়েলোস্টোনের সৌন্দর্য বর্ণনা করবেই করবে।

    কাল দুপুরে ইয়েলোস্টোন থেকে ফেরার পথে আমরা লাঞ্চ করতে গেলাম এক চিনে বাফেতে। গাইডদা বলল ওরা একটা স্যুপ বানায় ভাল্লুকের মাংসের স্টক দিয়ে। আমার তো শুনেই মনে পড়ে গেল টুম্পার কথা। টুম্পা আমার মায়ের মাসতুতো বোন, কিন্তু আমার থেকে বয়সে ছোটো। ও ছোটোবেলা থেকেই খুব ইউনিক। মুর্গি-পাঁঠা জাতীয় নিরীহ মাংসে ওর মন উঠতো না। বাঘ-সিংহ হলেই ভালো হয়। তবে একান্ত না পেলে ভাল্লুক বা গণ্ডারও চলতে পারে – এরকম একটা দাবী ছিল ওর। আমি ছোটোবেলায় এতো দু:সাহসী ছিলাম না। তবে এখন একবার টুম্পা হওয়ার চেষ্টা করা যেতেই পারে এই ভেবে আমি এক বাটি স্যুপ নিয়ে বসলাম। বেশ ভালৈ খেতে। তবে ঝোলটা ভাল্লুকের নাকি বাইসনের নাকি পাতি মুর্গির সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। হাসি বৌদির বোধহয় খুব ভালো লেগেছিল। স্যুপই খেয়ে নিল চার বাটি।

    খাওয়ার শেষে আবার বাস যাত্রা। গাইড-দা একটা হিস্টোরিক চাইনীজ সিনেমা চালিয়ে দিয়েছে। আমি সাব-টাইটেলের সাহায্যে সেটা দেখছি। হিরো সবে হিরৈনকে চুমু-টুমু খেয়ে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে - বাস ঢুকে পড়লো সল্টলেক সিটিতে।

    সল্টলেক সিটিতে একটা মর্মন চার্চ আছে। শেষ দিনের ট্যুরে আমাদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা। জনৈক বার্মিংহ্যাম ইয়ং হাজার মাইল পরিভ্রমন এই জায়গাটিকেই চার্চ বানাবার উপযুক্ত মনে করেন এবং পঁচিশ মাইল দুরের একটি ক্যানিয়ন থেকে পাথর নিয়ে এসে এই চার্চ তৈরী হয়। ধর্মস্থান নিয়ে আমার কোন ছুঁতমার্গ নেই। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আর্কিটেকচারগুলোর অধিকাংশই তো ধর্মস্থান। কিন্তু এই চার্চটি মোটেই সুদৃশ্য নয়। ডাউনটাউনের মধ্যে ছোট্ট একটা জায়গায় গথিক স্টাইলের বাড়ি – আমার তো একেবারেই ভালো লাগলো না। তবে লিখে রাখলাম কারন এইখানে এসে আমাদের ট্যুর শেষ হল। পাঁচদিনের পর সবাই এবার যে যার মত এয়ারপোর্টে বা হোটেলে।

    আবার কাল থেকে অফিস। আবার স্যাস, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট। মাঝে কিছুদিনের জন্য রকির সান্নিধ্য ভুলিয়ে দিয়েছিল এসব। কাম্বো-কাকু, ফিলি-জ্যেঠি, চিনে-দা, হাসি বৌদি, টিয়ান-টিয়ান – এরা সবাই মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। ভেবেছিলাম টিয়ান-টিয়ানের সাথে একটা ছবি তুলবো। হোটেলে চলে আসার পর খেয়াল হল সেকথা। যাক গে! ও যখন বড় হবে কোন দিন হয়তো দেখতে পাবো ওকে টিভির পর্দায় গান গাইতে। হয়তো তখন ওকে চিনতেও পারবো না। তাহলে কি সেই অমোঘ ফেলে আসার গান দিয়ে শেষ করি?

    Myheartisdown
    Myheadisturningaround
    IhadtoleavemylittlegirlinKingstonTown!

    ক্লিশে? তা হোক। কবি বলে গেছেন সত্যি কথা জমলে অমনই হয়।

  • Tim | 173.163.204.9 | ০৯ জানুয়ারি ২০১১ ১২:৪৬456873
  • সাতদিনে ঘুরে আসা হলো বেশ কটা ন্যাশনাল পার্ক। গুছিয়ে সর্ষে লেখার ইচ্ছে হবে কিনা জানিনা, শুধু দরকারী তথ্যগুলো আর রুটটা লিখে রাখি। কয়েকটা জায়গা নিয়ে হুচি লিখেছে, তাই আলাদা করে আর বলবোনা। যাই হোক, কোথায় কোথায় গেলাম বলি।

    লাস ভেগাস থেকে:
    ১। valley of fire
    ২। zion national park
    ৩। Mojave national preserve
    ফ্ল্যাগস্টাফ থেকে:
    ৪। Sedona
    ৫। Petrified forest national park
    ৬। Grand canyon national park
    আবার লাস ভেগাস ফিরে:
    ৭। Death valley national park
    আপাতত এই। ছবিগুলো তুলে দেবো সময় করে।
  • byaang | 122.172.0.214 | ০৯ জানুয়ারি ২০১১ ১২:৫১456874
  • তোর গুছিয়ে লেখার ইচ্ছে যদি না হয়, আমার তোকে গুছিয়ে ক্যাল দেওয়ার পোচ্চুর ইচ্ছে হবে। লিখে ফ্যাল তাড়াতাড়ি।
  • Bratin | 117.194.100.213 | ০৯ জানুয়ারি ২০১১ ১৩:২০456876
  • টিমের লিস্টের মধ্যে ২ টে গেছি

    ১। গ্রান্ড ক্যানিয়ান ন্যাশানাল পার্ক
    ২। Zion ন্যাশানাল পার্ক

    এছাড়া আর যে কটা তে গেছি

    ১। আকাডিয়া ন্যাশানাল পার্ক
    ২। ব্রাইস ক্যানিয়ন ন্যাশানাল পার্ক

    যই হোক। টিম তুমি গুছিয়ে লিখে ফেল। অপেক্ষায় আছি।
  • kd | 59.93.194.202 | ০৯ জানুয়ারি ২০১১ ১৩:৪৮456877
  • হায় রে! ভদ্রলোক এত খেটেখুটে চার্চ বানালেন আর শুচিস্মিতা তাঁর নামটাই পালটে দিলো।

    জানি টাইপো, তবু রসিকতার লোভ সামলাতে পারলুম না :-)
  • Nina | 68.84.239.41 | ১০ জানুয়ারি ২০১১ ০০:১৫456879
  • টিম্ভাই প্লিজ ডেথ ভ্যালি টা একেবারে জমিয়ে লেখ, গুছিয়ে সবকটাই লেখ--বসে রইলুম
  • hu | 71.201.25.54 | ১০ জানুয়ারি ২০১১ ০৬:১০456881
  • সর্ষে না লিখলে আমিও ব্যাংদির শিবিরে যোগ দেব।

    @kd, ভদ্দরলোকের নাম যে ব্রিংহ্যাম তা আমি এই আজকে প্রথম খেয়াল করলাম। আদপেই টাইপো নয়। আমার মুর্খামি। কোথায় যেন পড়েছিলাম ইংরিজি ভাষায় কোন শব্দের প্রথম আর শেষ অক্ষরটি দেখেই আমরা বেশির ভাগ সময় শব্দটি অনুমান করে নিই। আদ্যন্ত সত্যি।
  • kd | 59.93.245.89 | ১০ জানুয়ারি ২০১১ ১১:৩০456882
  • আরে হু, আমিও জানতুম না, ভাইঝির ঘরের দেওয়ালে ওনার নাতির নতির নাতি বা অমন কিছুর পোস্টারে ভরা না দেখলে (স্টিভ ইয়ং, ফুটবল প্লেয়ার, সত্যি দারুণ

    তবে তারপর ওদের ব্যাপার-স্যাপার পড়ে হেব্বি ভালো লেগে গ্যালো - কিছু কিছু সিস্টেম তো বটেই (যদিও মুখ ফুটে কোনোদিন বলতে পারিনি, শুনে বৌ যদি বাড়ি থেকে বার করে দ্যায়)।

    খুব ভালো লিখেছো তবে কিছু কিছু দরকারি খবর দাওনি। যেমন ইউটাহ্‌তে মদের দোকান খুঁজে পাওয়াই যায় না, যাও আছে, সব সরকারি, সরকারি টাইমে খোলে-বন্ধ হয়। সন্ধে একটার পর কোথাও সার্ভ করে না। শুধু সিনারি কি পেট ভরে?
  • Sibu | 184.228.165.193 | ১০ জানুয়ারি ২০১১ ১১:৩৯456883
  • না না, উটাতে একটার পর মদ পাওয়া যায় তো। তবে সুলুক-সন্ধান জানতে হয় ;)। আমি অবিশ্যি জানি না। কিন্তু জানে এমন একজনকে জানতাম। সে রাত আড়াইটের সময় বীয়ার যোগাড় করে খাইয়েছিল।

    আচ্ছা, এই যন্তরে উ-তে য-ফলা দেব কি করে?
  • hu | 12.34.246.72 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০১:৩০456884
  • পাই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গল্প লিখবে। আর টিম হলুদ পাথরের।
  • pi | 128.231.22.133 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৩:১০456885
  • হুচে যা লিখে দিয়েছ তারপর তো আর কিছু হয় লেখার হয়ই না।
    একেকটা জায়গায় গিয়ে তোমার একেকটা লাইন মনে পড়ছিল :)
    কিন্তু মজাটা কী বলোতো ? সেদিন ভাটে এটাই লিখেছিলাম।
    এই যে এটা নিয়ে এত পড়েছি। এত ছবি দেখেছি। ভেবেছিলাম, অবাক হবার তেমন কিছুই নেই। আমার নিজের দিক থেকে, সত্যি বলতে কি, খুব বেশি এক্সাইটমেন্ট ছিল না। মা,মাসিকে দেখাবো, ওরা দেখলে ভারি অবাক হয়ে যাবে, এইটা বরং ছিল। আগে থেকে ওদের তেমন কিছু বলিওনি। ঐ ,চলোনা, পাহাড়ে বেড়াতে যাচ্ছি। ওরা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নিয়ে বিশেষ কিছু শোনেওনি। বরং জানে, আমেরিকা মানেই নায়াগ্রা। ঐ তীর্থক্ষেত্র দর্শন না করলে দেশে ফিরে সবাই ছ্যা ছ্যা করবে। তো, একটু গুনগুনাচ্ছিলো, নায়াগ্রা না গিয়ে এই পাহাড়ে চল্লি কেন ? পাহাড় তো দেশে আমরা কতই দেখেছি। আমি সেন্টু দিলুম, আহা , আমাদের সাথে যাচ্ছো, সেটাই তো আসল। তো, তাতেও দেখি এই এখনকার ওয়েদারের মত মিইয়েই আছে। তখন শুরু করলাম উইকি থেকে পড়ানো, গুগল ইমেজ থেকে দেখানো। আর করতে করতেই মনে হল, আরে, সর্ষেদানা থাকতে বাজারী মাস্টার্ড পাউডার ক্যানো ! তো, হুচের এই লেখা খুলে মা, মাসিকে পড়তে তো দিয়ে এলাম, শুরু করে মুগ্‌ধ হবে হবে এমন স্টেজে রেখে ল্যাবে চলে এলুম। ওমা, রাতে গিয়ে শুনি, কী কাণ্ড !

  • pi | 128.231.22.133 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৬:১৪456887
  • কী কাণ্ড ?
    না, নেটফ্লিক্সের সিনেমা, কালার্স চ্যানেলের বালিকা বধূ, বন্ধন, আবাপ, গানের ঝর্ণাতলায়, আর হুচের সর্ষে একেক খিড়কি দিয়ে একেকজনকে দেখতে দেখতে তাঁরা তো সুখে কালাতিপাত করতেছিলেন। তারপর কোথা হইতে কী হইল। মধ্যাহ্নভোজন ও মাধ্যাহ্নিক নিদ্রাকর্ষণের ব্রেক কে বাদ কম্পুর তালা আর খুলিল না। চাবি টিপে টিপে হয়রান। পাসওয়ার্ড ভুল লিখছে ভেবে চিচিং কে মুলো , পটল, ঝিঙে সব লিখলো। কিন্তু হায়,ল্যাপীগুহার দ্বার ফাঁক তো আর হয়না !

    হুম্ম। যা ভেবেছিলাম তাই। ক্যাপস লক অন হয়ে বসে আছে।
    বলি একটা ফোন করতে হয়েছিলটা কি! বিকেলে যখন ফোন করলুম, তখনো তো কিছু বলবেন মা জননিগণ ! তো, বলবে কি, তারা নাকি ভয়েই সারা। কম্পু ভোগে পাঠিয়েছে ভেবে। ক্যাপস লক অনের মেসেজ ভেসে আসতে দেখে আরো ঘাবড়ে গেছে।

    যাগ্গে, সেসব তো হল। কিন্তু গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন ? সে দূর অস্ত।
    সবে লাস ভেগাস সেরে ডেথ ভ্যালিতে গেছে। হুচে। মায়েরাও।
    কিন্তু এখন আর সময় কই ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন