এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • নটবর : একটি গেঁয়ো গল্প

    achintyarup ray
    অন্যান্য | ০৫ ডিসেম্বর ২০১০ | ১০৯১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Samik | 155.136.80.174 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১০ ১৩:৫১467446
  • কিন্তু উইকেন্ডে লেখাটা এগোয়নি মোট্টে। টইটা ডুবেই গেছিল।
  • achintyarup | 59.93.255.167 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১০ ০৬:৫৩467447
  • এক সময় এই রেডিওটা ছাড়া একটা দিনও ভাবতে পারত না ভূদেব। কখনো একটু যদি কড়কড় করেছে, কি কোনো চ্যানেল ধরতে গিয়ে একটু বেশি চিঁ চিঁ আওয়াজ হয়েছে, রেডিও বগলে নিয়ে ভূদেব সঙ্গে সঙ্গে নটবরের দোকানে। "এক্ষুণি সারিয়ে দিতে হবে নটভাই।' আর নটবর যদি বলত, "আজকের দিনটা একটু রেখে যাও ভূদেবদা, ভাল করে একবার খুলেখালে দেখি,' যেন বজ্রাঘাত হত ভূদেবের মাথায়। "সে হবে না নট, তোমার যা পয়সা লাগে বল, আমি দিয়ে দেব। এক মাসে না পারি, দু-তিন মাসে দেব, এ তুমি আমাকে এখনই সারিয়ে দাও। রেডিও ছাড়া আমার একদিনও চলে না ভাই।' সেই রেডিও শেষে ফেলে দিয়েছে ভূদেব। নতুন একটা কিনেওছে নিশ্চয়ই। একবার বলেও নি নটবরকে।

    সক্কালবেলাতেই মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল নটবরের। সবকিছু কেমন বদলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। পুরোনো জিনিসের প্রতি টানটা কেমন কমে আসছে মানুষের। খালি নতুন চাই, আরও নতুন মডেল, আরও কায়দার সব জিনিস। পুরোনো চাল যে ভাতে বাড়ে কে সেটা বোঝাবে এদের? বলি বাপ-মা পুরোনো হয়ে গেলেও কি এমনি করে ফেলে দিবি ঝোপের ধারে? তাদের তো আবার স্পেয়ার পার্টসও হয় না। দাঁতন ফেলে দিয়ে আদর করে শিশিরে ভেজা রেডিওটা দোকানে নিয়ে গেল নটবর।

    এরকম কেন হল? জবাব কিছুতেই খুঁজে পায় না ও। এই তো সেদিন যেন মনে হয় হই হই করে ফটিকপুরের বালির বাঁধে রথের মেলা দেখতে যেত ওরা, পাড়া থেকে দল বেঁধে। একটু পাঁপড়ভাজা কি জিলিপি, ছোট্ট বাঁশি, কাঠের কি প্লাস্টিকের ঘুরন চাকতি আর কাগজের ঘুরণি -- এইটুকু পেলেই নিজেদের রাজা বলে মনে হত। নিজের কথা যদি বাদই দেয় নটবর, তার পনের বছরের মেয়েটাও তো ছোটবেলায় এইসব খেলনা নিয়েই কি আনন্দে লাফাতে লাফাতে ফিরে আসত মেলার মাঠ থেকে। একটা প্লাস্টিকের লাট্টু, কি পোড়ামাটির পুতুল। সেরকম পুতুল ছোটবেলায় নিজের হাতে করেও বানিয়েছে ওরা। ছোট ছোট তেকোণা হাত আর বুক, চিমটি দিয়ে বের করে আনা নাক, আর চোখের জায়গায় মাটির দুটো খুদে খুদে গুলি। এখন আর সে রকম হয়? ঠিক সেই রকম? আর হয় না। মেলাতেও যায় লোকে ঠিকই, কিন্তু ঐ সব সামান্য জিনিসে আর তাদের মন ভরে না। এখন সব অন্য রকম জিনিস আসে মেলায়। সস্তার প্লাস্টিকের জিনিস, কিন্তু নাম করা বিদেশি কোম্পানির ছাপ মারা। সবাই জানে কিন্তু সে নকল ছাপ, তবুও তাই কিনেই খুশি হয়ে ওঠে লোক। বড়লোকেরা যে সব বিদেশি জিনিস কেনে, সেই রকমই দেখতে তো। ঐ একই কোম্পানির নাম লেখা না? দামও সাধ্যের মধ্যেই। দু দিন পরে ভেঙ্গে যাবে? যাবে তো যাবে, ফেলে দেবে ছাইগাদায়।

    আজকাল আর মেলায় যায় না নটবর। দরকারই বা কি? বৌয়ের তার এ সব সখ নেই। মেয়েও বড় হয়ে গেছে, সে এখন নিজের বন্ধুদের সঙ্গেই যায়। নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে নটবরের। মাঠের মাঝখান দিয়ে মেলায় যাওয়ার উঁচু রাস্তা, দুপাশে মাইল মাইল ধানক্ষেত শুধু, আর কিচ্ছু না। ধু ধু মাঠের মধ্যে দিয়ে এঁকে বেঁকে চলে গেছে পথ, তার ওপরে মানুষের সারি। সবাই চলেছে মেলার মাঠের দিকে। সতীর ঘাট থেকে ডাইনে মোড় নিলেই দূরে বাঁ হাতে দেখা যায় শ্মশান, একটা অশথ গাছ -- কতকালের পুরোনো কে জানে -- ঝুরি নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, একটু বাঁয়ে হেলে। সন্ধেবেলায় ঐ গাছের তলা দিয়ে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারত না নটবররা ছেলেবেলায়। ভূত ছিল ঐ গাছে, সবাই বলত। মান্নাপাড়ার মিনি একবার বিকেলের দিকে ওখান দিয়ে যাওয়ার সময় নাকি আলুর দমের গন্ধ পেয়েছিল। কেউ কোথ্‌থাও নেই, আশে পাশে দু-এক মাইলের মধ্যে কোনো গাঁয়েরও চিহ্ন নেই, তবু আলুর দমের গন্ধ কোথা থেকে আসে? সে তদন্ত করার জন্যে আর দাঁড়ায় নি মিনি। দৌড়ে জায়গাটা পেরিয়ে গিয়েছিল রামরামরামরাম বলতে বলতে।
  • paakhi | 72.94.182.10 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১০ ০৮:১৯467448
  • হচ্চে বেশ টি।

  • Nina | 68.84.239.41 | ২৯ ডিসেম্বর ২০১০ ০৯:৫৬467449
  • ওরে কে কোথায় আছিস শাঁখ বাজা--নট নড়েছে----

  • achintyarup | 59.94.2.134 | ৩০ ডিসেম্বর ২০১০ ০৭:৩৩467450
  • খুশি হওয়ার জন্যে তখন বেশি কিছু লাগত না লোকের। মেলায় যাওয়ার পথেই, সতীর ঘাটের একটু আগে, ডান হাতে একটা ভাঙ্গাচোরা বাড়ি এখনো দেখতে পাওয়া যায়। কেউ থাকে না বাড়িটাতে। জানালাগুলোয় কপাট নেই, কে কবে খুলে নিয়ে গেছে কে জানে। ছাদের একটা দিক ভেঙ্গে কাত হয়ে পড়েছে ঘরের ভেতরে। চুনকাম করা ছিল নিশ্চয়ই এককালে, কিন্তু এখন সে আর বোঝার উপায় নেই। কালচে মত রঙ ধরেছে দেয়ালগুলোয়। আর মাঝে মাঝে জমাট সবুজ শ্যাওলার ছোপ। শ্যাওলা অবশ্য নয়, ওগুলো আসলে হল মস, সে কথা জানে নটবর। শ্যাওলা হল গিয়ে অ্যালগি, তার সঙ্গে মসের অনেক তফাৎ।

    এ বাড়ির নাম কাছারিবাড়ি। এক সময় নটবরদের পরিবারেরই সম্পত্তি ছিল। অন্য কোনো শরিকের। ঠিক কাদের, সে আর মনেও নেই ওর। ওদের ভাগে পড়েনি, এইটুকু শুধু জানে নটবর। অনেক বছর আগে, ইস্কুলের হস্টেল আর মাস্টারদের কোয়ার্টার্স যখন তৈরি হয়নি, মাস্টারমশাইদের জন্যে তখন এইখানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ইস্কুলটাও নটবরের পূর্বপুরুষদেরই তৈরি কিনা।

    সব মিলিয়ে মোট জনা পাঁচেক মাস্টার মশাই থাকতেন এখানে। সামনের বারান্দাটা খোলা, বৃষ্টির সময় জানালা দিয়ে জলের ছাঁট, এ সব তো ছিলই, সঙ্গে ছিল সাপখোপের বাড়তি ঝঞ্ঝাট। তবে ঐ যে -- চাহিদা বেশি ছিল না তখন। বাইরে থেকে আসা কমবয়সী মাস্টাররা মানিয়ে নিয়েছিল বেশ। তাদের অনেকেই কখনো গ্রামে থাকেনি এর আগে। সন্ধের পর বাইরে বেরোতে ভয় পেত -- সাপখোপের ভয়, আরও না জানি কিসের ভয়। একবার তো নটবরদেরই ক্লাসের এক ছাত্র এক মাস্টারমশাইকে দেখেছিল সন্ধের পর খোলা বারান্দায় ছাতা মাথায় দিয়ে খবরের কাগজের ওপর বড় বাইরের কাজ করতে। পরের দিন ইস্কুলে এই নিয়ে কি হাসাহাসি। এতদিন পরেও ঘটনাটা মনে পড়তে নিজের মনেই হেসে ফেলল নটবর।

    ভাল মাস্টার পাওয়া কঠিন ছিল সেই সময়। আজকালকার মত বিএ এম এ-র তো ছড়াছড়ি ছিল না তখন। ভাল লোকের জন্য হেডমাস্টারমশাইরা শহরের ভাল ছাত্রদের বাড়িতে পর্যন্ত গিয়ে হানা দিতেন। আর অনার্স পাশ করা কাউকে যদি পাওয়া যেত তাহলে তো কথাই ছিল না। হেডমাস্টার কি সেক্রেটারি সেই হবু মাস্টারের বাড়ি গিয়ে ধরনা দিয়ে পড়ে থাকতেন প্রায়। মাঝে মাঝে আসত কেউ, কিছুদিন থেকে আবার ফিরে চলে যেত। কে পড়ে থাকবে এই ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুরে? বাস রাস্তা থেকে চার মাইল হেঁটে আসতে হত। বর্ষায় হাঁটার মত অবস্থাও থাকত না। এত পেছল থাকত এঁটেল মাটির রাস্তা, যে পথের দু ধারের খেজুর গাছের ডাল ধরে টাল সামলাতে সামলাতে হাঁটতে হত তখন। তাহলে কেনই বা থাকবে ভাল মাস্টাররা? ক'টা টাকা আর মাইনে দিতে পারত ইস্কুল? কিন্তু ঐ যে, সত্যিকারের ভাল মাস্টার যাঁরা ছিলেন, তাঁরা মাইনের কথা ভেবে পড়াতেন না। অল্পেই খুশি ছিলেন তখনকার দিনের মাস্টারমশাইরা।

    নটবর যখন ক্লাস এইটে পড়ে, তখন হেডমাস্টার হয়ে এলেন মিত্রবাবু। সুরেশ মিত্র। ছাত্র মাস্টার সক্কলের সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিলেন ভদ্রলোক। একটু খ্যাপাটে ছিলেন, গেরুয়া পরতেন সব সময়, আর পায়ে খড়ম। স্কুলের বারান্দা দিয়ে খটখট করে যখন হেঁটে আসতেন, শুনশান হয়ে যেত করিডর। ক্লাসঘরের হৈচৈ নিশ্চুপ হয়ে যেত এক মুহূর্তে।

    মিত্র সারের নিজের সাবজেক্ট ছিল অঙ্ক। আর অঙ্কে নটবর বরাবরই ভাল। ওকে তাই খুব ভালবাসতেন সার। একবার কাছারিবাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছিলেন দরকার মত অঙ্ককে কেমন কাজে লাগানো যায় রোজকার জীবনে। যে ক'জন মাস্টারমশাই তখন সেখানে থাকতেন, তাঁরা নিজেরা একটা মেস মত করে নিজেদের খাওয়া দাওয়া চালাতেন। রান্না করার লোক ছিল। মিত্র সার ছিলেন ভাঁড়ার ইন চার্জ। সারা মাসের চাল-ডাল-আলু কিনে রাখতেন মাসের শুরুতেই। প্রায় মণ-খানেক আলু রাখা থাকত সারের নিজের তক্তপোষের তলায়। সেখানে বালি ছড়িয়ে সারি সারি আলু নিখুঁত আয়তক্ষেত্রের আকারে সাজিয়ে রাখতেন তার ওপর। বলতেন বালির ওপর রাখলে নাকি আলু সহজে পচে না। আর আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ বরাবর কটা আলু আছে গুণে প্রতিদিন খাতায় লিখে রাখতেন। দৈর্ঘ্যকে প্রস্থ দিয়ে গুণ করে হিসেব করে রাখতেন মোট কটা আলু আছে তক্তপোষের নিচে। একটা আলুও যদি কোনোদিন হিসেবে কম পড়ত, সেদিন দু:খ ছিল রান্নার লোকের কপালে।

    নটবর ইস্কুল ছাড়িয়ে কলেজে যাওয়ার কিছুদিন পরেই রিটায়ার করেছিলেন মিত্র সার। তারও কিছুদিন পরে খবরের কাগজে বেরল, যে সব সার্টিফিকেট নিয়ে এতদিন স্কুলে চাকরি করে গেছেন সুরেশ মিত্র, তার সব কটাই জাল। তার পর কি হয়েছিল আর খবর রাখেনি নটবর।
  • Nina | 68.84.239.41 | ৩০ ডিসেম্বর ২০১০ ০৮:৪২467451
  • as usual , দুর্দান্ত!
  • siki | 155.136.80.174 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ ০৯:৫২467452
  • কাল রেতের কোটা কী হল?
  • achintyarup | 121.241.214.34 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ ১৮:২৮467453
  • কাল এট্টু লেখাপড়া কর্ত্তে হচ্ছিল। আজগেও হবে :(
  • paakhi | 72.94.182.10 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ ২০:২০467454
  • রন্‌জন দা আগেই ধরেচে, আমারো এবার সন্দো হচ্চে তোর লেখাটার ছাঁচটা বড়োসরো।
    বেশ বেশ।
  • Lama | 117.194.225.26 | ০১ জানুয়ারি ২০১১ ২৩:১০467322
  • অ দাদা। কই?
  • Nina | 68.84.239.41 | ০২ জানুয়ারি ২০১১ ০৩:৩১467323
  • হুম্‌ম্‌ম! ঠিক জানি নট , not নড়নচড়ন --অচিনভায়া গান ধরেছে
    আজ রাতে আর যাত্রা শুনতে যাবনা
    বুইলে নটবর তুমিও যাবেনা
    আম্মো যাবনা ----:-((((((
  • achintyarup | 14.96.89.8 | ০২ জানুয়ারি ২০১১ ০৫:৫১467324
  • যাত্রা এখন বন্ধ আচে। যাত্রার জন্যে মাল্টিপ্লেক্সের দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হয়েচে কিনা
  • siki | 155.136.80.174 | ০৩ জানুয়ারি ২০১১ ১২:১৪467325
  • এসমা জারি কল্লুম। ধর্মঘট বন্ধ। তেসরা জানু, আজ সপ্তাহ শুরু।

    শুরু হো জাও লটবর।
  • debu | 72.130.151.116 | ০৬ জানুয়ারি ২০১১ ২২:৩৫467326
  • নট বর নট আউট
  • Nina | 64.56.33.254 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ০০:৩৩467327
  • নটবরের পায়ে ব্যাথা হয়ে গেল, ক্ষিদে তেষ্টায় পেট-বুক জ্বলে গেল--সেই যে অচিন্ত্য-মাহায় রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কেটে পড়েচেন---আহারে নটকে এট্টু জল বাতাসা দাও!
  • Moloy | 207.45.43.68 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ০০:০৪467328
  • ও দাদা ।। নটবর কি দোকান বন্ধ করে IPL এ খেলতে গেলো?
  • achintyarup | 59.93.247.161 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ০১:৫১467329
  • আর লজ্জা দিওনি গো। আদ্দুটো দিন পরেই তাকে আনার চেষ্টা দিচ্ছি
  • omi | 151.141.84.194 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ০৩:১২467330
  • নাম দেখে কোথায় আরো পড়িক্কিমরি দৌড়ে থ্রেডে ঢুকলাম! কোথায় নটবর?
    কেবল সিধুজ্যাঠামশায়
    নটাং নটা আ নটাং নটা আ গাইছে। :-?
  • kumudini | 122.162.205.193 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ২১:৪৬467331
  • নটবর,হ্যাপি নিউ ইয়ার!!
    এইবার?হুঁ,হুঁ,পালটা হ্যা:নি ই বলতেও এগবার আসতেই হবে!!
  • Nina | 64.56.33.254 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ২৩:৪০467333
  • ঠিক ঠিক--হ্যা পি হ্যাপি নিউ ইয়ার, নটবর--বড় হও
  • achintyarup | 59.93.192.89 | ২২ জানুয়ারি ২০১১ ০৬:২৭467334
  • বড়পুকুরের উঁচু বাঁধটা পেরিয়েই ঢালু হয়ে গেছে রাস্তা। সোজা শ দুয়েক গজ গিয়ে বাঁয়ে নটবরের দোকান। মাঝখানে আরও সব ঘরবাড়ি। ঢালুটার ঠিক ডানদিকে খানিকটা খোলা জায়গা। মাঠ ঠিক নয়, তবে বাচ্চারা খেলাধুলো করে সেখানে। হরিনাম হয় গরমকালে রাত্তিরে। অল্প অল্প ঘাস, এদিকে ওদিকে কাটাকুটি করে চলে গেছে হাঁটা পথের দাগ। এ জায়গাটাকে বলে হরিতলা। ওপারে রুইদাসদের ঘর। তার পেছনে মাঠ। সেই শ্মশান অবধি একেবারে ধুধু। এই সময়টায় সবুজ হয়ে আছে ধানগাছে। হাওয়া দিলে দোলে, সবুজের শেড পাল্টে পাল্টে যায়। ফিস ফিস ফিস ফিস শব্দ ওঠে।

    পিচরাস্তা ধরে আরও এগোলে হরিতলার পরেই ডানদিকে বুরুশের কারখানা। কারখানা বলতে খোলার চালের দুটো ঘর। তার ভেতরেই প্রায় সব কাজ চলে। খানিকটা কাজ অবশ্য রাস্তার ওপরেও করে মিস্তিরিরা। রাস্তা জুড়ে সেজন্য পড়ে থাকে লোহার তারের কুচো। এখানটায় এসে তাই খুব সাবধানে সাইকেল চালাতে হয়। একটু এদিক-সেদিক হয়েছে কি পাংচার। অনেক বার বলে বলেও বুরুশ মিস্তিরিদের সরানো যায়নি রাস্তার ওপর থেকে।

    কারখানার পর ভূদেব পাণ্ডার ছোট মাটির বাড়ি। বিয়ে-থা করেনি ভূদেব। নিজের গান বাজনা নিয়েই থাকতে ভালবাসে। স্কুলে কি লাইব্রেরিতে যে কোনো অনুষ্ঠানে ভূদেবের গান বাঁধা। না ডাকলেও সে যাবেই। জুলপিতে পাক ধরেছে, তাও ঘাড়ের কাছে পাউডার, আর গলায় সরু স্টিলের চেন। তাতে সাঁইবাবার লকেট। একটা ঘিয়ে রং-এর টেরিকটের পাঞ্জাবী, আর সরু পায়জামা -- এই হল ভূদেবের ফাংশনের পোষাক। আর মিনিট পনের পরেই শুরু হয়ে যাবে তার গলা সাধা।

    ভূদেবের বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে, রাস্তার অন্যধারে একটা ছোট্ট মন্দির। এত ছোট যে একটা বড় তুলসীমঞ্চ বলেও চালিয়ে দেওয়া যায়। কোন ঠাকুরের মন্দির সে আর মনে নেই লোকের। পুজোটুজো-ও কোন কালে বন্ধ হয়ে গেছে কে জানে। মন্দিরের গায়ে পোড়া মাটির নক্সার আভাস। খুব ভাল করে দেখলে লতাপাতা কি মানুষের চেহারা এখনো খুঁজে পাওয়া যায় তাতে। কিন্তু নোনা ধরে গিয়ে সে নক্সার কিছুই আর রাখেনি প্রায়। ফুঁ দিলেই কমলা-লাল মাটির গুঁড়ো ওড়ে। মন্দিরের মাথার কাছটায় ছোট একটা অশথ গাছ গজিয়ে উঠেছে। তার শেকড়গুলো আঁট হয়ে বসেছে দেওয়ালে।

    মন্দিরের পাশ দিয়ে কাঁচামাটির যে পথটা বাঁদিকে ঢুকে গেছে, সেটা দিয়ে খানিক এগোলেই নটবরের বাড়ি। পিচরাস্তা থেকে দেখা যায়। এই সাত সকালেই নটবরের বৌ ঘুম থেকে উঠে বাসি কাপড় ছেড়ে ঝাঁটপাট দিতে শুরু করেছে। মেয়েটাকেও তুলে দিয়েছে। দাওয়ার এক কোণায় ঘুম ঘুম চোখে বসে বেচারি দাঁত মাজছে ঘুঁটের ছাই দিয়ে। বেগুনী ফুল-ফুল ফ্রকের নিচের দিকটা ছড়িয়ে আছে মেঝেতে।

    কাঁচা পথটায় ঢোকে না নটবর। অন্যমনস্কভাবে একবার তাকিয়ে দোকানের দিকে এগোয়। দোকানঘরের দরজা কাঠের। নীল রং করা। দরজার সামনের খানিকটা জায়গা সিমেণ্ট করা। একটা কুকুর বসে হাই তুলছিল সেখানে। নটবরকে দেখেই দৌড়ে এল। লেজ নাড়তে নাড়তে চলে এল পায়ের কাছে। ভুক করে একবার ডেকে মুখের দিকে তাকাল। পাত্তা না দিয়ে কোমরের কষি থেকে চাবি বার করে তালা খুলতে থাকে নটবর। তারপর পাশের টিউবওয়েল থেকে পেতলের ছোট ঘটিতে করে জল আনতে হবে। দোকানের সামনে জল ছড়া দিয়ে ভেতরের লক্ষ্মীঠাকুরের মূর্তির সামনে ধূপ জ্বেলে তবে দিন শুরু। এ সব অভ্যাসের বশেই করে নটবর। খুব যে কিছু ভক্তিভাব তার মনে আছে তা নয়। তবে অভক্তিও নেই। দোকান থাকলে সেখানে গণেশ কি লক্ষ্মীর মূর্তি রাখতে হবে, দিনে একবার অন্তত দুটো ধূপকাঠি জ্বালতে হবে -- এ হল গে নিয়ম। কিম্বা অভ্যাস। এ নিয়ে অতশত মাথা ঘামায় না ও।
  • kumudini | 122.163.144.249 | ২২ জানুয়ারি ২০১১ ১২:১৯467335
  • শাঁখ,উলু।
    নটবর স্বাগতম।
  • Nina | 68.84.239.41 | ২৩ জানুয়ারি ২০১১ ০০:৩১467336
  • খুলেছে খুলেছে, নট দোকান খুলেছে---এস সবাই
  • Manish | 59.90.135.107 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৫:২৬467337
  • ধুলো ঝেরে তুলে দিলাম
  • achintyarup | 59.93.245.27 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ০৪:৪০467338
  • নটবর এখন সোঁদরবনে ঘোরাঘুরি কচ্চে, দেকচেন না?
  • Manish | 59.90.135.107 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৩:৪৭467339
  • সাবধান: বাঘ হইতে। :-)
  • kumu | 132.160.159.184 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১৩:৩৬467340
  • দু বছর হয়ে গেল নটবর টইএর,সময় বড্ড তাড়াতাড়ি বয়ে যায় দেখছি।
    নীনার অনারে তুলে দিলাম,যদি দয়া হয় চিন্টুবাবুর।
  • achintyarup | 69.93.196.70 | ২০ জানুয়ারি ২০১৩ ০১:৩৪467341
  • ই কি ইমোশনাল অত্যাচার রে বাপু :-(
  • nina | 79.141.168.137 | ২০ জানুয়ারি ২০১৩ ০২:৩২467342
  • উফ! কুমুদিনী তোমারে যে কি কই----সাধে এমন সুন্দর নাম দিয়েছি ---এত মিষ্টি নাম কি আর কাউকে মানায়-------

    চিন্টুবাবু --নটবর একলাটি সেই কবে থেকে দাঁইড়ে আছে--আহা পা কোমর সব ব্যাথা হয়ে গেল----আর আমাদের োখ ঃ-((
  • sosen | 125.242.207.170 | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৯:০২467344
  • তিন বছর হলো!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন