এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • achintyarup | 59.93.243.28 | ২৬ জুলাই ২০১১ ২১:৩৩483606
  • এই টই কিন্তু খুব ধীরে চলবে, ঢিমে তেতালা বা তার চেয়েও আস্তে, ধরুন কিনা খানিকটে শম্বুকের স্লো সাইকেল রেসের মত। আগেই বলে রাখলুম, হুঁ।
  • siki | 122.162.75.8 | ২৬ জুলাই ২০১১ ২১:৪৯483649
  • ফ্রিকোয়েন্সিটা জানিয়ে দিলেই হবে। তাগাদা মারব না :-)
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৬ জুলাই ২০১১ ২১:৫৩483660
  • নটবর স্পিডে না চল্লেই হল :-) চালাও চিন্টুবাবু, চালাও পানসি
  • achintyarup | 59.93.243.28 | ২৬ জুলাই ২০১১ ২২:৩৮483671
  • সবুজ দোকান, লাল বোর্ড

    ঝেঁপে নেমেছে বৃষ্টি। নড়বড়ে তক্তার বেঞ্চে কোনোরকমে পশ্চাদ্দেশ ঠেকিয়ে বসে আছি। চা হবে তো ভাই? হবে। দুধ ছাড়া হবে না। তাই সই। দোকানের দেওয়াল বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি। তাই বলে মনে করবেন না যে ঘনসন্নিবদ্ধ বংশদণ্ড পরস্পরসন্নিহিত হয়ে দণ্ডায়মান এবং তার ওপরে মৃত্তিকার প্রলেপ। সেরকম কিছু আদৌ নয়। স্রেফ ফাঁক ফাঁক করে কয়খানা লম্বালম্বি করে চেরা বাঁশ পাশাপাশি মাটিতে পোঁতা, দুইখানি দণ্ডের মধ্যে ইঞ্চি ছয়েক করে গ্যাপ। হ্যাঁ, তার ওপরে মেলা রয়েছে অর্ধস্বচ্ছ বর্ণহীন পলিথিন। এই রকম দেওয়াল দোকানের তিন দিকে। সামনের দিক খোলা। এবং ডাইনে ও বাঁয়ের দেওয়ালে বাঁশের বেড়া শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে পলিথিন। আর খানিকটে সালোকসংশ্লেষের আশায় আমি একেবারে সামনের দিকে ঘেঁষে বসেছিলুম। ফলে পৃষ্ঠদেশে শ্রাবণের ধারাবর্ষণ। দোকানঘরের চালটিও তৈরি হয়েছে পলিথিন দিয়ে। তার রং কালো। সেখান থেকে জল পড়ছে চুঁইয়ে। নড়বড়ে টেবিলের ওপর অযত্নে রাখা ডিভিডি প্লেয়ারের ওপর জমা হচ্ছে জল।

    দোকানটি দেখা গেল এক নালা অথবা নর্দমার ওপর অবস্থিত। নালার ওপর কয়েকখানা বাঁশ ও তক্তা পেতে তৈরি হয়েছে তার মেঝে। দুয়েকটা চটের থলিও পাতা এখানে ওখানে। কিন্তু তক্তাগুলির মধ্যেও খানিকটা করে ফাঁক। ফলে নিচে তাকালেই চোখে পড়ছে ঘোলাটে কালো জল। তারই একপাশে শিলনোড়া পেতে মশলা বাটছেন যে দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ তাঁকে দেখতে প্রায় আবোল তাবোল কাব্যগ্রন্থের কাঠবুড়োর মত। নেড়া মাথা, লম্বা দাড়ি। কাঠবুড়ো ছড়াও দোকানে আছেন এক মহিলা এবং একটি কমবয়সি ছেলে।

    দোকানের সামনের দিকে একপাশে রাখা কয়লার উনুন থেকে নীলচে ধোঁয়া উঠছে, পুরোনো তালপাতার পাখা দিয়ে উনুনের নিচের মুখে হাওয়া করছে ছেলেটি, ঝরঝরে পাখা থেকে আওয়াজ উঠছে ফটফট চটপট। কালচে কেটলি গম্ভীর মুখে বসে আছে তপ্ত কয়লার ওপর।

    উনুনের বাঁদিকে ছোট্ট একখানা কাচের শো-কেস। তার ভেতরে এক কোনায় পড়ে রয়েছে লোকাল কারখানায় তৈরি তিনখানি কোয়ার্টার পাউণ্ড পাউরুটি। অন্য তাকে রাশীকৃত সিগারেটের প্যাকেট। বেশিরভাগই পুরোনো, রং-জ্বলা এবং খালি।

    আমি বসে আছি বাঁদিকের দেওয়াল ঘেঁষে পাতা তক্তায়। আমার মাথার পেছনে ঝুলছে লম্বাটে বোর্ড। তার ওপরে বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা দোকানের নাম -- সবুজ রেষ্টুরেণ্ট। তার নিচে ছোট করে লেখা মোবাইল নাম্বার, তার নিচে লেখা :
    স্পেশাল খাবার পাওয়া যায়
    তিনচুরিয়া অর্ডার দিলে পাওয়া যায়
    প্যাকেট ২০ টাকা

    তিনচুরিয়াটা কি বস্তু? জানা গেল সে হল রসমালাইয়ের মত এক জাতীয় মিষ্টি। কিন্তু আগে থেকে না জানালে পাওয়া যাবে না। পেট এদিকে চুঁই চুঁই করছে খিদেয়। খাবার কিছু কি পাওয়া যাবে এখন? ঘাড় ঘুরিয়ে বোর্ডের দিকে চোখ ফেরাই আবার। দেখি তিনচুরিয়ার নিচে বড় বড় করে লেখা রয়েছে রেড বোর্ড। সবুজ রেষ্টুরেণ্ট, তার রেড বোর্ড? চমকিত হই। সত্তরের ছেলেদের পকেটে পকেটে নাকি থাকত মাও-এর বাণীসমৃদ্ধ ছোট্ট রেডবুক। কিম্বা লুকোনো থাকত বইয়ের তাকের ফাঁকে, বড় বইপত্তরের আড়ালে। আর এরা এই সবুজ রেষ্টুরেণ্টে এত বড় একখানা রেড বোর্ড-ই ঝুলিয়ে রেখেছে। কাদের সঙ্গে কাদের সব অশুভ আঁতাতের কথা এই জন্যেই কি বলে থাকেন বুদ্ধবাবুরা?

    সে যাগ্গে, রেড বোর্ডে দেখলুম লেখা আছে কি কি পাওয়া যায় এই রেষ্টুরেণ্টে। চাউমিন (১৬ টাকা), চাউমিন হাফ (১০ টাকা), স্পেশাল চাউমিন (২০ টাকা), মোগলাই (১৫ টাকা), মোগলাই ডবল ডিম (২০ টাকা), এগরোল (১০ টাকা), এগরোল ডবল ডিম (১৫ টাকা), স্যানরুইস (৩ টাকা), ভেজিটেবিল (২ টাকা), ভেজ পোকরা (৩ টাকা), বনচপ (২ টাকা), চিকেন পোকরা (৫ টাকা), স্পেশাল প্যাটিস (৩ টাকা)।

    কিন্তু এখন সে সব পাওয়া যাবে না জানা গেল। পরোটা আর ঘুগনী মিলতে পারে। পরোটা? উনুনের পাশে টোল-খাওয়া অ্যালুমিনিয়ামের পাত্তরের ওপর খান কয়েক বড় বড় ফোলা ফোলা লুচি রাখা আছে দেখছি যে। জানা গেল ওইগুলোই হল পরোটা। তো সেই গরম গরম পরোটা আর ঘুগনী মন্দ লাগল না খিদের মুখে। তারপর কটকটে গোলাপী রঙের প্লাস্টিকের জাগ থেকে ঢকঢক করে একপেট জল। কয়েক ঘণ্টার মত নিশ্চিন্দি।

    বাইরে বৃষ্টি ততক্ষণে থেমে গেছে।
  • Urmi | 121.241.214.38 | ২৬ জুলাই ২০১১ ২৩:১৩483682
  • ভালো জোমেছে :)
  • I | 14.96.50.68 | ২৭ জুলাই ২০১১ ০১:০৯483693
  • জ্জিও!
  • nk | 151.141.84.194 | ২৭ জুলাই ২০১১ ০১:৩৯483704
  • অসা জিনিস। খুব ভালো হচ্ছে।
  • kumu | 122.160.159.184 | ২৭ জুলাই ২০১১ ১১:৪৬483715
  • ঐ জাগের জল খেলে?কেন,মিনারালের বোতল নিতে পার্তে।

    সঙ্গে সহকর্মিনী গেছিলেন না?তাঁর এক্ষপেরিয়েন্সের কথাও লেখো।

    ডি:-ইহা অ্যাকাদেমিক ইন্টারেষ্ট,কোনরূপ এয়ার্কি নহে।
  • siki | 123.242.248.130 | ২৭ জুলাই ২০১১ ১২:৪৭483726
  • সুন্দর। মনেই হচ্ছে না কখনো যাই নি। এত জীবন্ত বিবরণ, মনে হচ্ছে, এই তো, কালকেই আমিও ওখানে পরোটা ঘুগনি খেয়ে এসেছি। খুব চেনা জায়গা যেন।

    ছবি আঁকতে জানলে এঁকে ফেলতাম। বর্ণনাটা চোখের সামনে ভাসছে, দিব্যি দেখতে পাচ্ছি দোকানটা।
  • dd | 124.247.203.12 | ২৭ জুলাই ২০১১ ১৩:২০483607
  • না। খুঁত থেকে গ্যাছে।

    একটা রোঁয়া ওঠা, ঘিয়ে ভাজা দাঁত ছরকুটে ভীতু কুকুরের খুব দরকার ছিলো।

    ঠিক পরোটা খাওয়ার সময়েই গা ঝাড়া দিয়ে জল ছিটিয়ে টিটিয়ে,মুচকী হাসা,নিল্লজ্জ ল্যাজ নাড়া। এইসব অচিন্তো লেখে নাই।
  • siki | 123.242.248.130 | ২৭ জুলাই ২০১১ ১৩:৫১483618
  • তবে রহস্যটা থেকেই গেল। ডিভিডি প্লেয়ারের ওপরে জল জমা হয় কেং কয়ে?
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৭ জুলাই ২০১১ ২০:৩৩483629
  • এই রায় বংশ সরস্বতীর বরপুত্র সবাই! প্রত্যেকের হাতে জাদু কি ছড়ি----চিন্টুবাবু তোমায় একটি জাদু কি ঝপ্পি দিলুম---ও বসে রইলুম পুরোটা পড়ার জন্য---
  • achintyarup | 59.93.243.132 | ২৮ জুলাই ২০১১ ০৫:১৩483640
  • বাড়ি থেকে সঙ্গে নেওয়া জলের বোতল ছিল। তাও দোকানের জলই খেয়েছিলুম বলে মনে হচ্ছে।

    সহকর্মিনী গেছিলেন বটে, কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতার কথা আমি কি করে লিখব? আমি কেবল আমার অভিজ্ঞতা আর খানিকটে ইতিহাস ভুগোল লিখতে পারি।

    কুকুর কিন্তু ছেল না দীপ্তেন্দা। থাগলে কি আর ছেড়ে দিতাম? তার কথাও নিশ্চই লিখতাম।

    জল জমছিল কিন্তু, ফোঁটায় ফোঁটায়। তখনও গড়িয়ে পড়ে নাই।

    থাঙ্কু নিনাদিদি
  • Manish | 59.90.135.107 | ২৮ জুলাই ২০১১ ১৫:৩৬483643
  • চন্দ্রকেতুগড়.........................

    তারপর
  • achintyarup | 59.93.194.82 | ৩০ জুলাই ২০১১ ০৬:১১483644
  • রূপকথা

    এক ছিল রাজা। তার এক রাণী। দুধে-আলতায় রঙ সে রাণীর, হাসলে পরে মাণিক ঝরে, কাঁদলে ঝরে মোতি। রাজার হাতিশালে শত হাতি, ঘোড়াশালে হাজার ঘোড়া। বিরাট রাজধানী শহর -- লোক লশকর সেপাই সান্ত্রী দোকান বাজারে ভরভরাট। কিন্তু মন ভাল নেই কারও। না রাজার, না মন্ত্রীর, না সেপাই-সান্ত্রীর। দলবল নিয়ে রাজ্য আক্রমণ করতে আসছে গোরাই পীর। আকাশ জুড়ে যুদ্ধের মেঘ। কে জানে কি হবে। রাজামশাই তৈরি হন লড়াইয়ে যাবেন বলে। তলোয়ারটি কোমরে গোঁজেন, রাজ সহিস সাজিয়ে দেয় সেরা ঘোড়া, বেরোনোর আগে দেবতাকে প্রণাম করে দেখা করতে আসেন রাণীর সঙ্গে। চিন্তায় ভাবনায় মুখে কথাটি নেই মহারাণী কমলার। শেষ শ্রাবণের ভরা দিঘীর মত টলটল করছে চোখ। রাজা বলেন যাই গো রাণী, যুদ্ধে যাই। রাণীর চোখে পলক পড়ে। পদ্মকলি চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে আসে মুক্তোর দানার মত দু ফোঁটা জল। ধরা গলায় বলেন, যাই বলতে নেই রাজা, বল আসি।

    রাণীকে অভয় দেন রাজা। বলেন মক্কার পীরের সাধ্য কি আমাদের হারায়। কত বড় বড় বীরেরা আছে আমার সাথে। হামা আছে, দামা আছে, তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জেতে এমন বাপের ব্যাটা কেউ আছে নাকি? এই দেখো, এই সাদা পায়রা নিয়ে যাচ্ছি সঙ্গে। আমি ফেরার আগেই রণখোলার মাঠ থেকে যুদ্ধজয়ের খবর নিয়ে এই পায়রা উড়ে আসবে তোমার কাছে। আর ওই কালো পায়রা? জিগ্যেস করেন রাণী। মুখ গম্ভীর হয় রাজার। ওকেও নিয়ে যাচ্ছি। এই পায়রা যদি ফিরে আসে রাণী, তাহলে কিন্তু আর দেরি কোরো না। প্রাণের চেয়ে সম্মান অনেক বড়। চোখের জল লুকোতে মুখ ঘুরিয়ে নেন রাজা। সিংহদুয়ারের সামনে গিয়ে চড়ে বসেন প্রিয় ঘোড়ার পিঠে।
  • Manish | 59.90.135.107 | ৩০ জুলাই ২০১১ ১৮:৪৩483645
  • রাজাটা কি ভিতু মাইরি,যুদ্ধে যাবার আগেই মৃত্যুভয়ে চোখে জল।
  • Sudip | 59.90.135.107 | ৩০ জুলাই ২০১১ ১৯:৪৬483646
  • খুব ভালো লাগছে।
  • nk | 151.141.84.194 | ৩১ জুলাই ২০১১ ০১:২৯483647
  • ভারী চমৎকার!
    এই রূপকথার শেষ লাইনটা আগেই অচিন্ত্য লিখে দিয়েছিলো হায় কিংবা হাত ফসকে লাইনটা ভাটে চলে গেছিলো। :-(
    লেখা খুব সুন্দর হচ্ছে, অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকছি।
  • kumu | 14.98.190.120 | ৩১ জুলাই ২০১১ ০৭:৫৬483648
  • এ ক্যামোন রাজারাণী? সেলফোন পজ্জন্ত নাই!
  • achintyarup | 59.93.243.104 | ০২ আগস্ট ২০১১ ০৫:৫২483650
  • টগবগ টগবগ আওয়াজ তুলে রাজার ঘোড়া ফটকের বাইরে চলে যায়। পেছন পেছন আরও কত শত সেপাই সান্ত্রী হাতি ঘোড়া। যুদ্ধ হবে রণখোলার মাঠে। প্রাসাদ থেকে খুব দূরে নয় সে মাঠ।

    দিন নেই রাত নেই প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে দু পক্ষের। পিছিয়ে যাওয়ার পাত্র নয় কেউই। তবে কিনা চন্দ্রকেতু হলেন রাজা। বড় বড় সব বীরেরা আছেন তাঁর সঙ্গে। বোঝা যায় কেউ ঠেকাতে পারবে না পীর গোরাচাঁদের হার। এমন সময় হঠাৎ খাঁচায় রাখা কালো পায়রাটা গেল উড়ে। কেউ বলে ঠিক করে বন্ধ করা হয়নি খাঁচার দরজ, কেউ বলে নিশ্চয়ই শত্রুপক্ষের চর এসে উড়িয়ে দিয়েছিল পায়রাটাকে। অলুক্ষুণে ব্যাপার কানে আসতে ভয় পেয়ে গেল সৈন্যরা। অজানা আতঙ্কে মনোবল ভেঙ্গে গেল তাদের। এক পা দু পা করে পিছু হটতে লাগল তারা।

    পায়রা ওদিকে উড়তে উড়তে গিয়ে নামে রাণী কমলার কোলের ঠিক পাশটিতে। শিউরে উঠলেন রাণী। কাঁদতে কাঁদতে আছড়ে পড়লেন ভুঁইয়ের ওপর। তারপর মনে পড়ল যাওয়ার আগে কি বলে গিয়েছিলেন রাজা। দাসদাসীরা ঘিরে ছিল রাণীকে। ধীর গলায় তাদের বললেন একটা নৌকো ভাসা শানপুকুরে। নৌকো ভাসানো হল। সেই নৌকোয় গিয়ে উঠলেন রাণী কমলা। তারপর তাতে ছিদ্র করে দিলেন। রাণীকে নিয়ে নৌকো আস্তে আস্তে তলিয়ে গেল পুকুরের জলে।

    রাজা তো জানতেন এমনটাই হবে। অমন যে দুর্জয় রাজা, তিনিও দুর্বল হয়ে পড়লেন। যুদ্ধে হেরে বন্দী হলেন পীর গোরাচাঁদের হাতে।

    আরও এক কারণ নাকি ছিল চন্দ্রকেতুর পরাজয়ের পেছনে। হামা আর দামা দুই ভাই বিশাল শক্তিশালী। তারা ছিল রাজার প্রধান ভরসা। রাজার গড়ের লম্বা টানা দেওয়াল তো তাদের দুজনেরই তৈরি। সব্বাই চেনে তাদের। সব্বাই জানে --

    লম্বা দেহ ভীষণ তাদের আকার
    হামা দামা দুভাই মিলে বাঁধল বিরাট প্রাকার।

    তাদের গায়ের জোর প্রচণ্ড। এক রাত্তিরে কোদালের আড়াই কোপে কেটে ফেলেছিল কয়েক বিঘার এক বিশাল পুকুর। নাম তার আড়াই কোপের পুকুর। কিন্তু এত শক্তি কোথা থেকে পেল তারা? সে ভারী গোপন কথা। বাড়িতে রান্নার পর আগ ভাতটা তারাই খেত। আগ ভাত হল হাঁড়ির ভাতের এক্কেবারে ওপরের অংশ। সেই খেয়েই তাদের গায়ে এত জোর। গোপন খবর হলে কি হবে, গোরাচাঁদ হলেন পীর। তিনি ঠিক যেনে ফেললেন দুই ভাইয়ের শক্তির রহস্য। একদিন তাদের মা সবে চুলা থেকে ভাত নামিয়েছে, এমন সময় ভিখারীর ছদ্মবেশে গোরাই এলেন তাদের বাড়ি। বললেন, কয়দিন কিছু খাওয়া হয় নাই, বড় খিদা লেগেছে মা, দুটি খেতে দিবি? মায়ের মন গলে গেল। কৌশলে সেদিনের আগ ভাত খেয়ে নিলেন পীর সাহেব। হামা দামা কাছে ছিল না তখন। কিন্তু যেই না পীর আগ ভাত খেয়ে নিয়েছেন, দুর্বল হয়ে পড়তে লাগল দুই ভাই।

    নিস্তেজ হইয়া পড়ে দুই ভাই দেহ
    অসি না ধরিতে পারে কোনো ভাই কেহ।

    কোনো রকমে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি ফিরল তারা। গোরাই ততক্ষণে সেখানে নেই, কিন্তু ব্যাপার দেখে হামা দামার কিছুই বুঝতে বাকি রইল না। প্রচণ্ড খেপে গেল তারা মায়ের ওপর। তার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলল রাজার কাছে, বিচারের জন্যে। মায়েরও বিশাল দেহ, আর ছেলেরাও দুর্বল। টেনে আর নিয়ে যেতে পারে না। মাকে এক জায়গায় ফেলে রেখে খানিক হাঁপিয়ে নেয় তারা। বিশালবপু সেই মহিলার শরীরের চাপে ছোট একটা খালের মত নিচু জায়গা তৈরি হয়ে গেল সেখানটায়। নাম হল তার মাইজোল। পথে আস্তে আস্তে টানাটানিতে মায়ের কাঁকের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল। যেখানে সেই হাড় ভেঙ্গেছিল, সেই জায়গায় তৈরি হয়ে গেল কাঁকজোল নামের অগভীর খাল।

    আর লড়তে পারল না হামা আর দামা। রাজাও মনে মনে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। সে যাত্রায় তাই জয় হল পীর সাহেবের।

    রাজাকে হারিয়ে পীরের মনে ভারি আনন্দ। কিন্তু কাজ তাঁর শেষ হয়নি তখনও। হামা দামা ছিল শক্তিশালী সৈন্য মাত্র। কিন্তু রাজার দুই প্রধান সেনাপতি আকানন্দ আর বাঁকানন্দ তখনও রয়ে গেছে অপরাজিত। হাতিয়াগড়ের অধিপতি মহিদানন্দের পুত্র তাঁরা। সহজ লোক নয় তারা--

    নাম আমার আকানন্দ
    বাঁকানন্দ আমার ভাই
    পেয়েছি শিবের বর
    রোজ করি মনুষ্য আহার।

    এই আকা আর বাঁকাকে শায়েস্তা করতে গেলেন গোরাচাঁদ। এবারের লড়াই কিন্তু এত সহজ হল না। যুদ্ধ হল মরণপণ। পীরের তরবারির আঘাতে আকা আর বাঁকার ভবলীলা সাঙ্গ হল। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে প্রচণ্ড আহত অবস্থাতেই আকানন্দ শিবের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলেন পীরকে --

    আকানন্দ বাঁকানন্দ রাবণের শালা,
    তার সঙ্গে যুদ্ধ হইল আড়াই পক্ষ বেলা।
    কি জানি আল্লার মরজি নছিবের ফের
    চেকোবাণে গোরাচাঁদের কাটা গেল ছের।

    তবে অত সহজে কি আর গোরাচাঁদ মরেন? একটু পান, চুন আর সুরকী যোগাড় করে উঠতে পারলেই জুড়ে যেত তাঁর কেটে যাওয়া ছের। তাঁর দলবলকে বললেনও তিনি সে কথা --

    ক্ষ্‌তস্থানে দাও পান চুন সুরকী লাগাইয়া,
    এখনই দেখিবে সব আল্লারই দোয়া।

    কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও যোগাড় করা গেল না সে সব। অবশেষে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করলেন গোরাই পীর।

    পীর মারা যাওয়ার পর বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেলেন রাজা। ফিরে এলেন প্রাসাদে। এসে দেখেন শূন্য পুরী হা হা করছে। বাঁচার ইচ্ছে চলে গেল তাঁর। যে শানপুকুরে রাণী কমলা নিজের নৌকো ডুবিয়ে দিয়েছিলেন, মনের দু:খে সেখানেই ডুবে মরলেন চন্দ্রকেতু।
  • arnab | 14.98.47.170 | ০২ আগস্ট ২০১১ ১৮:৫৫483651
  • এই পদ্যগুলোর উৎস কী?
  • nyara | 122.172.23.198 | ০২ আগস্ট ২০১১ ২১:০১483652
  • চন্দ্রকেতুই রাজা ছিলেন? তবে যে শাস্ত্রে বলেছে, 'রাজার শালা চন্দ্রকেতু, তারেই ধরে শেষটা / বললে রাজা তুমিই না হয় কর না ভাই চেষ্টা' ইত্যাদি?
  • achintyarup | 59.93.244.225 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ০২:৪৫483653
  • এই পদ্যগুলো সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় প্রত্ন সংগ্রাহক দিলীপকুমার মৈতে। কিছু যোগাড় করেছেন গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে, পাঁচালী টাইপের কোনো ছাপা বই থেকে কিছু পেয়েছেন কিনা জিগ্যেস করাতে মনে করতে পারলেন না। গত বছর অসুস্থ হওয়ার পর থেকে দিলিপবাবুর স্মৃতিভ্রংশ ঘটেছে মনে হল। তবে ওই পাঁচালী ধরণের বইয়ের খোঁজে আছি। দেখি যদি পাওয়া যায়। কলেজ স্ট্রীটে পাইনি। মেছুয়াতে বাজারের মধ্যে মুসলমানী বইয়ের খান তিনেক দোকান আছে, সেখানে খোঁজ করতে হবে। বাংলার পীর সাহিত্য বইটি কার লেখা মনে নেই। সেখানেও কিছু থাকলে থাকতে পারে।
  • achintyarup | 59.93.240.229 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ০৫:১৪483654
  • এখানে পীর গোরাচাঁদের কথা একটু সংক্ষেপে বলে নিই। পীর গোরাচাঁদ বা গোরাই পীরের আসল নাম গাজী শাহ্‌ সৈয়দ আব্বাস আলি। মক্কা থেকে বাইশজন আউলিয়ার এক দল এ দেশে এসেছিল ধর্ম প্রচার করতে। আব্বাস আলি ছিলেন সেই বাইশ জনের একজন। গায়ের রং ফরসা ছিল বলে নাকি গোরাচাঁদ নাম পেয়েছিলেন। (তখনও গৌরচন্দ্রের আগমন ঘটেনি কিন্তু।) গোরাই গাজী, গোরাচাঁদ মুশকিল আসান, গোরা পীর -- এইসব নামেও তিনি পরিচিত। গাজীর নামে গল্পের শেষ নেই। সে সব অন্য কোথাও বলব।

    গোরাচাঁদের দরগা আছে বেড়াচাঁপায়, খনামিহিরেরে ঢিপির ঠিক পাশে। বেড়াচাঁপা থেকে কিলোমিটার দশেক দূরে বিদ্যাধরী নদীর তীরে হাড়োয়া। সেখানে আছে পীরের মাজার। ৭৬০ বঙ্গাব্দের ১২ই ফাল্গুন আকানন্দ বাঁকানন্দর হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন পীর। মাজারের সামনে প্রতি ১২ই ফাল্গুন এখনও তাই বসে পীর গোরাচাঁদের মেলা। ভাষাবিদ পণ্ডিত মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেবের বাবা মাফিজুদ্দিন আহ্‌মেদ ছিলেন গোরাচাঁদের সেবায়েত (সেবায়েত শব্দটি লক্ষ্যণীয়)।

    বর্ধমান অঞ্চলেও পীর গোরাচাঁদের ভালই পসার ছিল মনে হয়।

    গোরাচাঁদের দরগা আছে খাস কলকাতা শহরেও। পার্কসার্কাস অঞ্চলে গোরাচাঁদ দরগা রোড-কে এখন দরগা রোড বলেই জানে সবাই। কাছাকাছি অঞ্চলেই রয়েছে গোরাচাঁদ রোড এবং গোরাচাঁদ লেন। আমি কিন্তু খুঁজছি গোরাই গাজীর গান। কেউ পেলে জানাবেন।
  • kiki | 59.93.201.248 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ০৮:৪৭483655
  • আচ্ছা, খনা মিহিরের ঢিপি কেন সেটাও বলবে নিশ্চয়, শুনবো বলে বসে আছি।:)
  • kumu | 122.160.159.184 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ১০:৫৮483656
  • আগেই বল্লুম,ঐ পায়রার চক্করে না গিয়ে দুজনে দুটি সেলফিন রাকলে এত গন্ডগোল হয় না।
  • I | 14.96.193.100 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ১২:৫১483657
  • ন্যাড়াদা, :-))))
  • Urmi | 121.241.214.38 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ১৮:৩৪483658
  • রাজা চন্দ্রকেতুর গল্প আগে কিছুই পড়িনি। এটা পড়ে অনেকটাই জানলাম। বেশ হচ্ছে লেখাটা :)
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ১৯:০৮483659
  • চিন্টুবাবু , জমাটি--অনেক কিছু জানছি --
  • nk | 151.141.84.194 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ২১:২০483661
  • আহা রাজা হলে কি রাজার শালা হতে নেই? চন্দ্রকেতুর বোন হয়তো অন্য কোনো রাজ্যের রাজার বৌ। :-)
    অচিন্ত্য, সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লাগছে সেনাপতিদ্বয় আঁকানন্দ বাঁকানন্দকে। এনারা রাবণের শালা? মানে মন্দোদরীর ভাই? এদের বাবার নামও ইন্টারেস্টিং, মাহিদানন্দ। মন্দোদরীর বাবার নাম যদ্দূর মনে পড়ছে ময়দানব, তেনার কোনো পুত্র ছিলো কিনা রামায়ণে সে রেকর্ড নেই বটে, তবে থাকা খুবই সম্ভব! ময়দানব থেকে বাঙালি ভার্সনে মাহিদানন্দ হয়ে যাওয়া ও খুবই সম্ভব। :-)
    আর, হাতিয়াগড় জায়গাটা কোথায়?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন