এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 122.168.208.254 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ২৩:৪৬483662
  • আহা! ছোটবেলায় পার্কসার্কাসে থাকতাম। দরগা রোড, গোরাচাঁদ লেনে ইটের উইকেট আর রবারের বলে ক্রিকেট খেলেছি। সেগুলো পীর গোরাচাঁদের নামে জেনে বিশেষ ঘ্যাম ফিল কচ্চি।
  • achintyarup | 59.93.247.54 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ০৫:৩৪483663
  • সন্ধেবেলা উত্তর চব্বিশ পরগণার এস পি ফোন করেছিলেন। জানালেন আমার দেওয়া সূত্র ফলো করে নাকি তাঁরা চন্দ্রকেতুগড়ের পুরাবস্তু স্মাগলকারী একটি লোককে ধরেছেন, প্রচুর পুরাবস্তু সহ। রাত পর্যন্ত কলার তুলে বসে রইলুম।

    অ নিশি, আক-বাঁকা সত্যি সত্যিই রাবণের শালা-টালা ছিল না কিন্তু। তারা কত ভয়ঙ্কর সে কথা বোঝানোর জন্যে কবি ঐ সব লিখেছেন।
  • de | 120.62.161.75 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ০৭:৫৮483664
  • বা:! বেশ লেখা -- অচিন্ত্যবাবু কত অচেনা জায়গাকে যে লেখার মাধ্যমে চিনিয়ে দেন --এ জায়গাগুলোরও ছবির লিং আছে নাকি?
  • siki | 123.242.248.130 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ০৮:৩৭483665
  • উরিত্তারা! অচিন্ত্য তো বেশ গোয়েন্দা পত্রকার দেক্‌চি!!
  • kiki | 59.93.200.70 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ১০:০৪483666
  • কলার তোলা ছেড়ে এবার একটু সাবধানে ঘুরলে হয়। এটা কোনো মজা করলাম না কিন্তু।
  • i | 137.157.8.253 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ১১:১৪483667
  • অচিন্ত্যবাবুকে অজস্র ধন্যযোগ লেখাটির জন্য।
    বেশ কবছর আগে আউটলুক ইন্ডিয়ায় একটি আর্টিকল বেরোয় এই প্রত্নবস্তুর পাচার ইত্যাদি নিয়ে। কিছুদিন হই চই হয়ে আবার যে কে সেই যে হয়ে গেছে, সে বোঝাই যাচ্ছে। কারোর কি মনে আছে লেখাটির কথা?
    আর বাণী বসুর কি একটি উপন্যাস ছিল খনামিহিরের ঢিবি?
  • byaang | 122.167.209.136 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ১১:২১483668
  • হ্যাঁ, খনামিহিরের ঢিবি বাণী বসুর। কয়েকবছর আগে পুজোসংখ্যায় বেরিয়েছিল।
  • til | 165.12.252.211 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ১১:৫১483669
  • ঐ পুজো সংখ্যা আমার কাছে আছে, কোন বছর বললে আই কে এই পুজোতে দিতে পারি।
    --
    যাক , বাঁচা গেল M এখন নিজনামে বর্তমান। "এই M আমি নয়" ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা। মোটে তো ২৬ টা অক্ষর, তারও স্বঙ্কÄ!
    --
    আমার স্কুল হোষ্টেলে সহ বোর্ডার ছিল , দেগঙ্গা বেড়াচাঁপার চন্দ্রকেতু গড়ের কথা তার কাছেই প্রথম শুনি। সেই অবস্থা এখনও চলছে। ভাবা যায় শুধু এইটে কত বড় ট্যুরিস্ট সেন্টার হতে পারে!
  • i | 137.157.8.253 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ১২:১৩483670
  • তিল,
    আমার কাছে যদি না থাকে, জানাবো আপনাকে। পড়েছি আমি, কিন্তু এখানে আছে কি না দেখতে হবে। আপনি সেইমত আপনার বাগানের অলিভের ব্রাঞ্চানি আর বইটি নিয়ে চলে আসবেন। এখন কথা হল আপনাকে কি দেওয়া যায়... আমি তো অ্যাকচুয়ালি মাদুগ্গা আর অসুরের অস্তর ঝেঁপে দেওয়ার প্ল্যান করছি-ডুএলে লাগবে তো... :))

    তো ঐ খনামিহিরের ঢিবি উপন্যাসে ঐ অঞ্চলের কিছু ইতিহাস ছিল বোধ হয়।
  • kiki | 59.93.202.147 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ১২:৫৩483672
  • তিল......:) নিজের দেওয়া নিজের নাম।:P

    কিন্তু যেটা হলো , আমি কেমন জানতাম খনা, মিহির এরা ঠিক বাঙালী নয়, আর কাকু পিসিকে জিগাতে মঞ্চায় না।
  • lcm | 69.236.187.211 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ১৩:০৮483673
  • আর, তিনচুরিয়া কি হল? খেলে? কেমন?
  • arnab | 14.98.238.9 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ১৮:৫০483674
  • শরদিন্দু খনাকে ক্ষণা লিখেছেন। মনে হয় ভুল লেখেননি।
  • nk | 151.141.84.194 | ০৪ আগস্ট ২০১১ ২১:১৯483675
  • আরে মিহির তো শুনলাম উঙ্কÄয়িনী থেকে ভাসতে ভাসতে দ্বীপরাজ্যে গিয়ে ঠেকলেন, সেখানের রাজা রাণী তাকে উদ্ধার করে পুরোহিতের কাছে দিলেন, পুরোহিত আর পুরোহিত গিন্নী তাকে মানুষ করলেন। খনা রাজার মেয়ে, সেও মিহিরের সঙ্গে মানুষ হলো। খনা ও মিহির দুজনেই জ্যোতিষ শিখলেন আর খুব তুখোড় হলেন, পরে দুজনেই উজ্জয়িনী তে এসে মিহিরের বাবার সঙ্গে দেখা করলেন। এগুলোতে তো বাঙালির কোনো ব্যাপার পাই না! মানে এই কাহিনির খনা মিহির মধ্যভারতের বলে সন্দেহ হয়।:-)
    তবে "খনার বচন"এর খনা বাঙালি বলে সন্দেহ করেন অনেকে, কারণ তাতে প্রচুর বঙ্গ রিচুয়ালের কথা আছে।
    "ভরা হতে শূন্য ভালো যদি ভরতে যায়/ আগে হতে পিছে ভালো যদি ডাকে মায়।"
    "কলা রুয়ে কেটো না পাত/ তাতেই কাপড় তাতেই ভাত"
    "কচুবনে ছড়ালে ছাই/ খনা বলে তার সংখ্যা নাই"
    "যদি বর্ষে মাঘের শেষ/ ধন্যরাজার পুন্য দেশ"

    এইসব কচু, কলা, মাঘের শেষে বৃষ্টি--এসব তো বঙ্গীয় ব্যাপার! :-)
  • ranjan roy | 122.168.205.254 | ০৫ আগস্ট ২০১১ ০০:২৭483676
  • nk এর সঙ্গে যোগ করলাম:
    'যদি বর্ষে রিমিঝিমি,
    শস্যের ভার না সয় মেদিনী।
    যদি বর্ষে ছিঁটাফোঁটা,
    পর্বতে হয় মীনের ঘটা।''
    পুরো বাংলা বাজারের ব্যাপার।
    তবে খনা-মিহির যদি রঞ্জন রায়ের মত বঙ্গ থেকে মধ্যপ্রদেশ বা সেন বংশের মত উজ্জয়িনী( বা কর্ণাটক) থেকে বঙ্গে এসে থাকে?

    আর কিকি'র সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলছি কলার তোলা কম করে ওদিকে ক'বছর না যেতে।
  • i | 137.157.8.253 | ০৫ আগস্ট ২০১১ ০৫:৪৬483677
  • এন কে,
    এই 'খনার বচন'এর জন্যই মনে হয় মল্লিকা সেনগুপ্ত খনাকে প্রথম বাঙালী মহিলা কবি বলেছিলেন। মানে কবিতায় লিখেছিলেন।কোন কবিতা মনে নেই।কোথায় পড়েছি তাও মনে নেই।

    কিকি,
    আপনার গতকালের ১২:৫৩ র কনফিউশন কেটে যাবে অচিন্ত্যবাবুর এই লেখায়। মন বলছে তাই। অনেক ইতিহাস , লোককথা আসবে এই লেখায়, এই সুতোয়।।গুগল, উইকি করতে হবে না।

    অচিন্ত্যবাবু, আমরা অপেক্ষা করছি...
  • nk | 151.141.84.194 | ০৫ আগস্ট ২০১১ ২০:৪১483678
  • i, আমিও কবিতাটা খুঁজছি, খনাকে নিয়ে কবিতাটা। আর খনামিহিরের ঢিবি গল্পটায় কী ছিলো একটু সারসংক্ষেপ করে বলে দেবে যদি সময় পাও?

    আর, অচিন্ত্যরূপ, অপেক্ষায় আছি যে----
  • ranjan roy | 122.168.188.87 | ০৫ আগস্ট ২০১১ ২২:০৬483679
  • "" খনা মিহিরের ঢিবি'' উপন্যাসে ইতিহাস বা পুরাতঙ্কেÄর নিরিখে বিশেষ কিছু নেই।
    দন্তকথা থেকে আমরা জানি যে খনার মেধা ও ক্ষমতায় স্বামী ও শ্বশুর, মিহির ও বরাহ ওঁর জিভ কেটে নিয়েছিল- যাতে খনার বচন শেষ হয়ে যায়।
    তাই উপন্যাসের নায়িকা নিজের মধ্যে খনাকে অনুভব করে, ইতিহাসের অধ্যাপিকা হয়ে খনা-মিহিরের ঢিবি চন্দ্রকেতুগড়ে খুঁজতে গিয়ে বন্যায় ভেসে যাওয়ার উপক্রম। এদিকে তার স্বামী-শ্বশুর ঠিক বরাহ-মিহিরের মত ঈর্ষ্যায় জ্বলে ওকে মেরে ফেলতে চায়।
    গল্পটি আসলে খনার মিথের মোড়কে নারী-পুরুষের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও পুরুষের হেজিমনিস্টিক অ্যাটিচুডের কথা। পড়তে ভাল লাগবে।

  • rupankar sarkar | 116.203.164.117 | ০৫ আগস্ট ২০১১ ২৩:৪৯483680
  • আমি একটু ফুট কেটে যাই : যতদূর শুনেছিলাম, খণা শ্রীলঙ্কার মেয়ে। তার বাবা ওখানে খুব নাম করা জ্যোতির্বিদ ছিলেন। খণা একমাত্র সন্তান এবং নিজেও এই শাস্ত্রে পারঙ্গমা, তাই বিবাহের যৌতুক হিসাবে খণার বাবা তাঁর যাবতীয় পুঁথি-পান্ডুলিপি খণার সঙ্গে দিয়ে দেন। নৌকায় বসেই মিহির বুঝতে পারেন তাঁদের শেখা বিদ্যা থেকে এ বিদ্যা কত অগ্রসর। তাই বরাহকে আদেশ করেন বৌমাকে বলতে, সে যেন শ্রীলঙ্কা থেকে আনা সব পুঁথি জলে ফেলে দেয়। তাকে বলা হয় ভারতে এ বিদ্যার কোনও মূল্য নেই। অগত্যা খণা তাই করেন। যে বিদ্যা টুকু স্মরণে ছিল, তাই দিয়েই এখানে কাজ চালান। (বাংলা শিখতে আর ক'দিন লাগে) এই কাহিনীর সূত্র চাইলে এক্ষুণি দিতে পারবনা।
  • rupankar sarkar | 116.203.164.117 | ০৬ আগস্ট ২০১১ ০০:০৯483681
  • এই মাত্র উইকিপিডিয়া দেখলাম। হ্যাঁ, শ্রীলঙ্কার ব্যাপারটা লিখছে সেখানেও। তবে খনা মিহিরের না বরাহমিহিরের স্ত্রী ছিলেন তাই নিয়ে ওখানে দুরকম কথাও বলেছে।
  • Lama | 117.194.226.29 | ০৬ আগস্ট ২০১১ ০৬:০৭483683
  • মিহিরের এই কাজ বরাহ বলে গালাগালি দেবার উপযুক্ত
  • DB | 115.187.38.164 | ০৬ আগস্ট ২০১১ ১৮:৩০483684
  • টৈটাতে চোখ আটকে গেল । কয়েকমাস আগে নেহাৎ ই বেড়ানর জন্য গিয়েছিলাম বেড়াচাঁপা - দেখেছিলাম খনামিহিরের ঢিবি আর চন্দ্রকেতুগড়।কিন্তু খণা মিহিরের সম্পর্কে কিছু কিছু উপকথা শুনলেও চন্দ্রকেতু সম্পর্কে কিছুই জানতামনা। তাই লেখাটা পড়ে উৎসহিত বোধ করছি। চলুক লেখাটা তরতরিয়ে।আমি কিছু ছবি তুলেছিলাম কিন্তু জানিনা সে ছবি এখনে কোথাও দেখানর কন উপায় আছে কিনা

  • achintyarup | 59.93.240.27 | ১০ আগস্ট ২০১১ ০৫:৩১483685
  • পাহাড়

    বেড়াচাঁপায় ঢোকার আগেই গাড়ির সামনে লাগানো প্রেস লেখা বোর্ডটা খুলে রাখতে বলেছিলাম উমেশকে। সে চুপচাপ সেটাকে নিজের সিটের তলায় চালান করে দিল। আমরা টুরিস্ট তো, শুদ্ধুমাত্র ভ্রমণ এবং প্রবল জ্ঞানপিপাসা নিয়ে চলেছি। কাঁধে ক্যামেরা, বোতলে জল। ভ্রমণপিপাসুদের আজকাল অবশ্য সাদা রঙের অ্যাম্বাসাডার গাড়িতে করে ঘোরঘুরি করতে বিশেষ দেখা যায় না, কিন্তু গত্যন্তর না থাকায় বেড়াচাঁপাবাসীদের উইলিং সাসপেনশন অব ডিসবিলিফের ওপর ভরসা রাখতে হল।

    খাওয়া দাওয়া সারা হলে সবুজ হোটেলের ছেলেটিকে জিগ্যেস করি, ভাই গড়টা কোনদিকে? ওই তো সামনেই একটু এগিয়ে যান, তারপর বাঁ দিকে গেলেই পাহাড়। গাড়িতে গিয়ে উঠি।

    লেখাপড়া না করার অনেক অসুবিধা। এই যেমন আমরা জানতামই না যে পাহাড়তলীর যে জায়গাটায় উমেশ তার গাড়ি পার্ক করল সে জায়গার নাম সিংদরোজা। একজন পর্বতারোহীকে দেখলাম ঢাল বেয়ে নেমে আসছে। গড়টা কোথায় জিগ্যেসে করতে যে পথ দিয়ে সে এসেছে সেই দিকে দেখিয়ে বলল, এই তো, এটাই গড়। গাড়ি উঠে যাবে ওপরে। চেয়ে দেখি ডান দিকে বাঁশঝাড় ঘন হয়ে আছে, বাঁয়ে গুটিকয় কলাগাছ, তার পাশে আর্কিওলজিকাল সার্ভের ছোট্ট বোর্ড, সামনে সরু মেটে রাস্তা খানিকদূর গিয়ে ঝোপড়া বাবলাগাছের আড়ালে হারিয়ে গেছে। গাড়ি নিয়ে সেদিকে যেতে রাজি হল না উমেশ। কি আর করা যাবে।

    এ এস আই-এর যে বোর্ডগুলো এদিকে ওদিকে লাগানো আছে, পুরাতাঙ্কিÄক গুরুত্ব তাদেরও খুব একটা কম নয় বলেই মনে হল। নীল রং চটে গেছে জায়গায় জায়গায়, মর্চে পড়েছে। কি লেখা আছে পুরোটা পড়া কঠিন।

    বাবলাগাছের তলা দিয়ে দু এক পা এগোতেই দেখলাম সামনে লোহার গেট। হাট করে খোলা। তার দুপাশে একটু পর পর সিমেণ্টের খুঁটি। গেটের ডানদিকের খুঁটিগুলোর গায়ে একটু কাঁটাতার লেগে আছে, কিন্তু বাঁদিকের তার উধাও হয়ে গেছে কবে কে জানে। শুধু সার সার খুঁটিগুলো চোখে পড়ে। তার ডানদিকে ঢিপি, বাঁদিকে পাটের ক্ষেত। ভারতীয় পুরাতঙ্কÄ সর্বেক্ষণের বোর্ডে লেখা, সুরক্ষিত স্থান।
  • achintyarup | 59.93.254.196 | ১১ আগস্ট ২০১১ ০৫:৫৭483686
  • দু ধারের পাটক্ষেতের থেকে ঢিবির উচ্চতা বড়জোর আট কি দশফুট। সরু পথ টানা চলে গেছে ওপর দিয়ে। দুধারে গাছ। বেলা গড়িয়ে যাওয়া মেঘলা সকালে ছায়া ছায়া সবুজ অন্ধকার গায়ে দিয়ে যেন ঘুমিয়ে রয়েছে ঢিবিটা। বাঁ পাশের বিঘে দুয়েক ক্ষেতে পাট কাটা হচ্ছে। আঁটি বেঁধে মাথায় করে এনে রাখা হচ্ছে ঢিবির ওপর। সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে রিক্সা ভ্যান। তাতে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাছের কোনো খাল কি ডোবায়। সেখানে পচতে দেওয়া হবে গাছগুলো।

    বৃষ্টি পড়ছে না, কিন্তু ছাই ছই রঙের মেঘ ঢেকে আছে আকাশ। ক্ষেতের যে জায়গায় পাট কাটা হয়ে গেছে, সেখানকার টলটলে জলে ছায়া পড়েছে মেঘের। চিরিক চিরিক করে কাঠবেড়ালির ডাক শোনা যাচ্ছে। অপার শান্তি চতুর্দিকে।

    খানিকটা এগিয়ে বাঁ দিকে একটা জায়গা চৌকো করে খানিকটা খোঁড়া রয়েছে চোখে পড়ল। একেবারে সদ্য খোঁড়া নয়, হয়ত কয়েক সপ্তাহের পুরোনো। হাতখানেক খোঁড়ার পর ঢেকে রাখা হয়েছে কালো রঙের পলিথিন দিয়ে। গর্তটায় নেমে পড়ে তার দেওয়ালে হাত বুলিয়ে দেখতে থাকে কৌশিক। মাটির মধ্যে গেঁথে রয়েছে কোথাও একটা ইঁটের টুকরো, অথবা ভাঙ্গা পাত্রের অংশ। আমিও নেমে পড়ি সেখানে। দেখতে থাকি উল্লেখযোগ্য কোনো প্রত্নবস্তু খনকদের নজর এড়িয়ে রয়ে গেছে কিনা।

    ঢিবির ওপরে এবং আশেপাশে যে কয়জন লোক রয়েছে তারা সবাই চাষের কাজে ব্যস্ত। জিগ্যেস করে জানা যায়, সরকারি লোকেরাই খুঁড়েছে এই জায়গা, মাস দেড়-দুই আগে। আরেকটু এগিয়ে ডানদিকেও এরকম একটা খুঁড়ে রাখা জায়গা আছে। সে জায়গা খোঁড়া হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। মাটির তলা থেকে একটা না দুটো কঙ্কালও বেরিয়েছিল। তারপর কি হল? কঙ্কাল-টঙ্কাল যা পাওয়া গেল ওরা নিয়ে গেল। তারপর কি হল জানিনি বাবু।

    ঢিবির ওপরে ততক্ষণে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে কৌশিক। ছোট্ট খোলামকুচি যত্ন করে খুঁটে তুলে নিচ্ছে মাটি থেকে। পটশার্ড। পুরোনো কালের মৃৎপাত্রের টুকরো। যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে ঢিবির ওপর। কোনোটা মসৃণ, কোনোটা রুলেটেড -- দাগ-টানা। হঠাৎ, কালো রঙের ছোট্ট একটা টুকরো হাতে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠল কৌশিক। এন বি পি! এন বি পি! সে কি জিনিস? জানা গেল NBP হল নর্দার্ন ব্ল্যাক পলিশ্‌ড্‌ ওয়্যার। রোদে পোড়ানো মাটির তৈরি পাত্র। কুচকুচে কালো এবং মসৃণ। যেমতি আমাদের শৈশব-কৈশোরে দেখা কুঁজো। এইরূপ চিক্কণ কৃষ্ণ মৃৎপাত্র এক সময় তৈরি হত এই অঞ্চলে। মুলত মৌর্য যুগেই বিকাশ ঘটেছিল এই ধরণের পাত্র নির্মাণ শিল্পের। পরে, রাজ্য প্রত্নতঙ্কÄ সংগ্রহালয়ে সুন্দর নক্সা-করা ব্ল্যাক পলিশড ওয়্যার-এর নমুনা দেখে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেছে আমার।

    কৌশিকের দেখাদেখি খোলামকুচি খুঁজতে শুরু করি আমি। ঊর্মিও। চোখ একটু অভ্যস্ত হয়ে আসতেই দেখতে পাই সর্বত্র ছড়িয়ে আছে তারা। মৃৎপাত্রের টুকরো, ইঁট। ঢালের দিকে, বৃষ্টির জল যেখান দিয়ে গড়িয়ে গেছে খানিক আগে, সেখানে আরও স্পষ্ট চোখে পড়ে -- পটশার্ড আর ইঁটের কুচি। কোনো টুকরো দেখে বোঝা যায় পাত্রের তলার অংশ, কোনোটা আবার কলসী কি মালসার কানা। কুড়িয়ে নিই পকেট ভরে। (পরে প্রত্নতঙ্কÄবিদদের দেখাতে তাঁরা বললেন সবকটি পটশার্ডই অতি প্রাচীন। চন্দ্ররাজার ঢিবির ওপর ওরকম যে ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে সে খবর তাঁদের অজানা নয়।) চোখের সামনে দেখি পাটগাছ বোঝাই ভ্যানের চাকার তলায় মটমট করে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের টুকরো। শহর থেকে আসা মোটর সাইকেল অথবা গাড়ির নিচেও গুঁড়িয়ে যায় একইভাবে। কেউ দেখার নেই, বারণ করার নেই। শুধু পুরাতঙ্কÄ সর্বেক্ষণের বোর্ডে লেখা -- সুরক্ষিত স্থান।
  • kiki | 59.93.201.123 | ১১ আগস্ট ২০১১ ১৪:৫২483687
  • অচিন্ত্য,
    সত্যি খুব দু:খু হবার মতো।ভীমবেটকা না কোথায় যেন চল্লিশ হাজার বছর আগের না কি, যাইহোক গুহামানবদের আঁকা পাওয়া গেসলো, তাদের ও তো একই অবস্থা।ভাবলেও কষ্ট হয়।

    ইন্দ্রানী,
    হ্যাঁ, আমারো তাই মনে হচ্ছে।
  • ranjan roy | 122.168.211.3 | ১২ আগস্ট ২০১১ ০১:২২483688
  • কিকি,
    না, আপনার তথ্য ঠিক নয়। ভীমবেটকায় যা আছে তা হল আদিম মানবের (প্রস্তরযুগের) গুহাচিত্র, স্পেনের আলতামিরার মত। সেগুলো সযত্নে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। সিকিউরিটি আছে। রীতিমত টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। গতবছরই দেখে এসেছি। জায়গাটা ভোপাল থেকে ১৪ কিমি দূরে ওবেদুল্লাগঞ্জ থেকে আরও চার কিমি।
  • achintyarup | 59.93.246.118 | ১২ আগস্ট ২০১১ ০৫:২৫483689
  • রাখালদাসের কথা

    ""...আমি আমার পারসি শিক্ষক মৌলবি খয়র-উল-আনাম ও বন্ধুবর শ্রী হেমচন্দ্র দাশগুপ্তের সহিত চন্দ্রকেতুগড় দেখিতে গিয়াছিলাম। কলিকাতা হইতে বারাসাত-বসিরহাট রেলে অতি সহজেই যাওয়া যায়। বেড়াচাঁপা স্টেশনে নামিয়া এক মাইল দক্ষিণ পূর্বে যাইলেই চন্দ্রকেতুর গড়ের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পৌঁছানো যায়। ...স্থানীয় লোকের নিকট হইতে বসু যে সমস্ত প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করিয়াছিলেন, সে সকল অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ও পুরাতন।

    ""... যে স্থানটি এখন চন্দ্রকেতুগড় বলিয়া পরিচিত তাহা দূর হইতে দেখিলে একটি পুরাতন পুষ্করিণীর পাড় বলিয়া ভ্রম হয়, কিন্তু নিকটে যাইলে এবং পরীক্ষা করিয়া দেখিলে তাহা যে একটি অতি পুরাতন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ তাহা স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়। এই প্রাচীন দুর্গ বা নগরের প্রাকার এক অংশে মহাকায় অশ্বত্থ ও বটে আচ্ছন্ন। এই অংশে এক স্থানে দুর্গের প্রধান বা সিংহদ্বারের চিহ্ন স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়। ইহার নিকটেই অনেকটা উচ্চ ভূমি আছে। নিকটে যাইয়া দেখিলে তাহা কোনো প্রাচীন প্রাসাদ বা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বলিয়া বুঝিতে পারা যায়। সিংহদ্বারের ধ্বংসাবশেষের নিকট হইতে অনেক দূর পর্যন্ত ছোটো বড়ো ঢিপি দেখিলেই অনুমিত হয় যে, চন্দ্রকেতু গড়ের ধ্বংসাবশেষ বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

    ""চন্দ্রকেতুগড়ে যে সমস্ত অতি প্রাচীন নিদর্শন আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহা দেখিয়া স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, স্থানটি ভারতবর্ষের অতি পুরাতন স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম।''

    -- বাংলা ১৩৩০ সালে মাসিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রকেতুগড় বিষয়ক প্রবন্ধ।

    রাখালদাস চন্দ্রকেতুগড়ে যান ১৯০৯ সালে। মহেঞ্জোদাড়ো আবিষ্কারের ১৩ বছর আগে। সে সময় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের অ্যাসি্‌সস্ট্যাণ্ট সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। ১৯১১ সালে চন্দ্রকেতুগড় থেকে পাওয়া কিছু প্রত্নবস্তু জমা পড়ে পরিষদের সংগ্রাহলয়ে। সেগুলির তালিকাও বানিয়েছিলেন রাখালদাসই।
  • Nina | 68.45.76.170 | ১২ আগস্ট ২০১১ ০৬:৩৯483690
  • চিন্টুবাবু---তোমার লেখার সঙ্গে কিছু ছবিও দাও না প্লিজ, পোড়ালাল ইঁট না ঘষা-ঘষা মাটি, নাকি বিবর্ণ কোনও ধাতু---খুব দেখতে ইচ্ছে করছে!

    বাসুভাই, তোমার ছবি আর লেখা দুই রাখ একসঙ্গে--ছবি তো থাকে এখানে--অবশ্য কি ভাবে সেতার জন্য পাইদিদিরে ধর :-))
  • kiki | 59.93.198.42 | ১২ আগস্ট ২০১১ ১২:১০483691
  • রঞ্জনদা,
    আমায় আবার আপনি বলছেন কেন?(ভ্যাঁ)আমায় আপনি টাপনি বললে ভালো লাগে না।

    ভীমবেটকা নিয়ে কোথায় কী পড়ছিলাম ভুলে গেছি,বেশ আগের ব্যাপার, কিন্তু বোধায় এই যে টিকিট কেটে ঢোকার ব্যবস্থা সে নিয়েও লেখা ছিলো, সেই জায়গাটা বোধায় সংরক্ষন আরো জোরদার দরকার, মানুষের যাতয়াতে কিছু প্রবলেম আছে, ভালো করে আরেকবার জেনে বলবো।

    দিদিয়া,
    অচিন্ত্যর টাইমসের লিং টায় ছবি আছে।
  • ranjan roy | 122.168.244.50 | ১২ আগস্ট ২০১১ ১২:২৬483694
  • সরি কিকি,
    বড় M আর কিকি যে এক ভুলেই গেছি।:))))))
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন