এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভুত

    deepten
    অন্যান্য | ১৩ মার্চ ২০০৬ | ২৮৬৯০ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Manish | 59.90.135.107 | ৩০ ডিসেম্বর ২০১০ ১৬:১৫497581
  • এইতো নীনা গল্প লেখায় পাস করে গেছে (যদিও ঐটি সত্য ঘটনা)। একদম ঝরঝরে লেখা। দাবী রইলো আরো চাই।
  • achintyarup | 59.93.247.45 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ ০৫:১১497582
  • দ্দারুণ ভূত! আর আমি কিনা এতক্ষণ ধরে টইটকে খুলিই নি। নিনাদিদি, আরেকটা গল্প বল।
  • Nina | 68.84.239.41 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ ০৫:৪৭497583
  • সব্বইকে অনেক ধন্যযোগ :-) সময় নিয়ে পড়লে, ভাল বল্লে আর এবার বোঝ ঠ্যালা, আমার সাহসটা বাড়িয়ে দেয়ার ফল---আবার একটা শোনাই , শোন---

    যেসব কথা ভাবায় আমায়

    চারিদিকে শুধু ঘটে চলেছে এন্তার কতকিছু---কোনো কোনো ঘটনা মনটা তোলপাড় করে, মনে হয় দেখি তো অন্যরাও কি বলছে, তাদের কি মত ! কিন্তু কি করে পৌছবে সবার কাছে এই মনের বার্তা ?! আমি যে লিখতে পারিনা । আমার প্রিয় কবির লাইন ' আকাশ জোড়া লেখা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, সবাই কি লিখতে পারে"

    কিন্তু আমি বলতে তো চেস্টা করতেই পারি--

    কদিন ধরে এখানে New Jersey তে বিরাট খবর-- দুই ভাই Funeral home চালায় , তাদের arrest করা হয়েছে কারণ তারা মৃতদেহদের অর্গ্যান টিস্যু ইত্যাদি চড়া দামে বিক্রী করছে।এক বিরাট দল জড়িত এই ব্যব্‌সায়, ইত্যাদি ইত্যাদি---
    অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে একটা জিনিষ খুব চোখে পড়ে এই দেশে (U.S.A)depression, bi-polar রোগগুলি যেন মহামারিরূপে দেখা দিচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারা সব ADD-attention disorder তে ভুগছে আর এইসব রোগের ওষুধ খাওয়া বেশ বেড়ে গেছে---কই আগে তো এমন চোখে পড়ত না, মানে আমার পড়েনি।

    এই সুত্রেই আমার একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে ।
    বাবা মা আর অমি পুরী বেড়াতে গিয়েছিলাম, আমার তখন বছর সতেরো বয়স। চিরকালই বেশি কথা বলি, মানুষ ভালবাসি, সবার সঙ্গে বকবক করে বেড়াই---আসলে মানুষ দেখা আমার একটা নেশা। পুরীতে আমাদের হোটেলের পাশের ঘরে একজনরা, তাদেরও আমার বয়সি একটি মেয়ে আর বেশ গম্ভীর কিন্তু খুব সুন্দর দেখতে তাদের ভাগনী, বেশ 40+ বয়স কিন্তু বিবহিতা নয়। আমার তো যথারীতি শুরু হয়ে গেল তদের সবার সঙ্গে বকবক। ওরাও সবাই খুব মিশুকে কিন্তু ঐ ভাগনী মধুমিতাদি বড্ড চুপচাপ। আমার একেতো তো সব সুন্দর জিনিষ ভাল লাগে আর সব্বাইর সাথে কথাও বলতেই হবে আমাকে---নীতার সঙ্গে তো খুব ভাব হয়ে গেল আমার, দিনরাত আমরা গল্প করছি কিন্তু মধুমিতাদির কাছে যত পাত্তা পাচ্ছিনা তত চুম্বকের মতন টানছে আমায় ওরই দিকে । একদিন বিকেলে পেলাম সুযোগ, সব্বই ঘুমোচ্ছে তখনও, আর মধুমিতাদি চুপ করে বারান্দায় বসে, একলা কি ভবছে। ব্যাস আমায় আটকায় কে, আমি শুরু করে দিলাম---মধুমিতদি তুমি (আমি আবার আপনি বলতে পারিনা সহজে) কেন
    এত কম কথা বল গো, কি ভাব এত, তোমার বিয়ে হয়নি কেন --বকেই চলেছি খেয়াল নেই অন্যজন ক্রমশ বিরক্ত হচ্ছেন, শেষে মধুমিতাদি যেন রাগে ফেটে পড়লেন , চীৎকার করে উঠলেন ----তুমি চুপ কর আর আমাকে এরকম বিরক্ত করবেনা কক্ষনো , যাও এখান থেকে---আমি হতভম্ব, ভয় , অপ্রস্তুত, সব মিলিয়ে সে এক বিচ্ছিরি অবস্থা----নীতাও ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে, তাড়াতাড়ি আমায় বল্ল, চল চল আমরা সমুদ্রের ধারে ঝিনুক কুড়ুই--
    একরকম টেনেই আমায় নিয়ে চল্ল, তারপর ও আমাকে মধুমিতার গল্পটা বল্ল:

    মধুমিতা খুব হাসিখুশি , অত্যন্ত পড়াশোনায় ভাল, তার বাবা মার একমাত্র সন্তান। খুব আদরে আহ্লাদে মানুষ। বাবার এক বন্ধুর ছেলে বিজন মিত্র তার সঙ্গে গভীর প্রেম কলেজ লাইফ থেকেই, এবং দুই পরিবারের সম্পুর্ণ অনুমতি আছে , সবাই খুশি। বিজন ইনজিনিয়রিঙ্গ পাশ করেছে, মধুমিতার B.A Final হয়ে গেলেই তাদের বিয়ে হবে। মধুমিতার final পরীক্ষা চলছে আর বিজন নতুন চাকরী নিয়ে বম্বেতে posted। কোনো এক ছুটি পড়েছে তখন, বিজন ও তার এক বন্ধু গাড়ী করে বেড়াতে বেরিয়েছে লোনাভালা যাচ্ছে। বিজনই গাড়ী চালাচ্ছিল, সাংঘাতিক accident গাড়ী খাদে পড়ে যায় ও বিজন দুদিন হাসপাতালে ডাক্তারদের অনেক চেস্টা বিফল করে মারা যায়। এই ঘটনার পর মধুমিতা একদম পাথরের মতন চুপ মেরে যায়, কথা বলেনা, হাসেনা, কাঁদেওনা---তার বাবা মা ও কি করবেন বুঝে উঠতে পারেননা। আস্তে আস্তে আবার নিজেই সে সামলায়, M.A. ক্লাসে ভর্তী হয়, কিন্তু তার হাসি, আনন্দ সব যেন বিজনের সঙ্গেই চলে গেছে ।পাশ করে সে Bank এ চাকরী নেয়। বিয়ে সে করবেনা বলেই দিয়েছে , বিয়ের কথা বল্লেই এমন কান্নাকাটি করে যে সে কথা আর কেউ তোলনা। এই করে বেশ কয়েক বছর কেটেছে, সেই Bank একটি মারাঠী ছেলে পূনা থেকে বদলী হয়ে এসে জয়েন করেছে। সাদামাটা চেহারা, ভদ্র ব্যবহার। ক্রমশ মধুমিতা যেন এক যুগ পর জেগে উঠে, সেই ছেলেটির , নাম নীতিন, সঙ্গে আস্তে আস্তে আলাপ তারপর যেন ভাললাগা এইভাবে এগোতে থাকে। তার বাবা মা তো খুব খুশি, মেয়েটা যেন আবার বেঁচে উঠছে----খুবই সাধারন চেহারা, বিজনের তুলনায় একেবারেই ছাপোষা , তবু যদি মিতা একটা জীবন পায় তার বাবা মা আর কিছুই চান না, সবই যেন স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে।

    মিতা তার বন্ধুদের বলে নীতিনের চোখ্‌দুটি ভারি সুন্দর আর ও যেন তাতে ভীষণ শান্তি পায়। নীতিনের বাবা মার ও কোন আপত্তি নেই , ওদের ধুমধাম করেই বিয়ে হয়। বিয়ের পর ওরা পুরী যায় হানিমুনে। মিতার বাবা মা খুব খুশি মেয়ে আবার আগের মতন হাসিখুশি। নীতিন ও ভারী নম্র, ভদ্র ছেলে, সবাই খুশি।

    হানিমুন থেকে ওরা ফিরে আসে, কিন্তু একি, মিতা আর নীতিন ঠিক যে উচ্ছাস নিয়ে রওনা হয়েছিল সেটা নিয়ে কিন্তু ফেরেনি। দুজনেই কেমন চুপচপ। কাউকে কিছু বলেওনা কিন্তু কোথায় যেন একটা কিছু গরমিল। মিতার মা জিজ্ঞেস করেন মেয়েকে কিন্তু সে এড়িয়ে যায়। শেষে নীতিন তাদের এক কমন বন্ধুকে বলে তাদের প্রবলেমটা। এমনিতে কোন অমিল নেই, কিন্তু তাদের শারীরিক কোনো সম্পর্ক হতে পারছেনা কারণ সে মিতার খুব কাছে এলেই মিতা ভয়ে চীৎকার করে সরে যায় !

    মিতা জানায় সে নীতিনের সঙ্গে ঘনিস্ট হলেই তার চোখের দৃস্টি কেমন ভয়ংকর হয়ে উঠে, মিতা সহ্য করতে পারেনা, তার মনে হয় চোখে ঘৃণা আর ধিক্কার উপছে পড়ছে, সে পারেনা সে দৃস্টি সহ্য করতে।
    বন্ধুরা পরামর্শ দেয় ডাক্তার , সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে। দুজনেই তাতে রাজী হয় ও শুরু হয় তাদের session

    এর পরের ঘটনা আরো অদ্ভুত। নীতিন, তার medical history থেকে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে এক বিরাট accident থেকে রক্ষা পেয়েছে। সে সাইকিলে আসছিল, একটি গাড়ী তাকে ধাক্কা দেয় এবং গাড়ী ও সাইকিল দুই খাদে পড়ে যায়। যে গাড়ী চালাছিল তারি দোষ। তার সঙ্গীটি মারা যায়, সেই ড্রাইভার ভদ্রলোকটিও দুদিন পর মারা যান। নীতিনের মাথায় চোট লাগে ও তার চোখ দুটি একেবারে নস্ট হয়ে যায়। গাড়ীর চালক মারা যাবার আগে তর চোখদুটি নীতিন কে দিয়ে যান। ভদ্রলোকটির নাম বিজন মিত্র। সেই একই বিজন মিত্র যাকে মিতা ভালবাসত।
    এরপর ওরা অনেক চেস্টা করেছে, কিন্তু মিতার এই অদ্ভুত অনুভুতি কিছুতেই কাটেনি আর সে নীতিনকে ডিভোর্স দিয়েছে । নীতিন আবার বদলী নিয়ে পুনা চলে গেছে। মিতা সেই থেকে একাই।

    এইবার এইসব ঘটনা গুলি আমার মাথায় একসঙ্গে পাক দিচ্ছে----আছে কি কোনোটার সঙ্গে কোনোটার কিছু যোগাযোগ?----

  • sana | 58.106.18.8 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ ০৬:১৬497584
  • নিনা,(ডানে বাংঅলা নেই তাও না লিখে পারছি না)
    এখনো গয়ে কাঁটা দিচ্ছে!! পড়বো না ভেবে-ও এই টই টা ভাগ্যিস খুলেছিলাম! নিনা,মন ছোঁয়া অনুভূতি.....আরো লেখো,প্লীজ? বসে রইলাম পড়ে্‌বা বলে।
  • sana | 58.106.18.8 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ ০৬:১৮497585
  • *পড়বো
  • Nina | 68.84.239.41 | ০১ জানুয়ারি ২০১১ ০২:৪৯497586
  • :))
  • paakhi | 72.94.182.10 | ০১ জানুয়ারি ২০১১ ০৩:১৬497587
  • Nina, এইটি দুর্দান্ত হয়েছে।
  • Manish | 59.90.135.107 | ০১ জানুয়ারি ২০১১ ১১:০৩497588
  • নীনাবেন, অসাধারন।

    সব্বাইকে Happy New Year
  • Lama | 117.194.225.26 | ০১ জানুয়ারি ২০১১ ২৩:০২497589
  • ভূতদের কখনো বিশ্বাস করবেন না। ভারি মিথ্যুক

    যাকগে, নিনাদির বলা কাহিনী অসাধারণ লাগল, গা ছমছমে
  • Nina | 68.84.239.41 | ০২ জানুয়ারি ২০১১ ০৩:৪৪497591
  • আরে, মনীশভাই, তমে গুজু ছো ?:-০

    লামা, আহারে যারা নিজেদের ডিফেন্ড কত্তে পারবেনা, তাদের অপবাদ দিওনি---আর তোমার কাছে এসে ডিফেন্ড যদি কত্তে চায় তো তোমার ঘোর বিপদ ;-))

  • tatin | 70.177.55.6 | ০২ জানুয়ারি ২০১১ ০৩:৪৭497592
  • আমি ভূতে বিশ্বাস করি না, কিন্তু ভয় পাই, বেজায় ভয় :(
  • Nina | 68.84.239.41 | ০২ জানুয়ারি ২০১১ ০৪:০৫497593
  • আমি ভুতে পুওরো বিশ্বাস করি আর একটুও ভয় পাইনা:-))
    আমার অল টাইম ফেভারিট মুভি "সিক্সথ সেন্স " "মধুমতি" "ঘোস্ট" ভূতেরা মানুষের কক্ষনো কোনও ক্ষতি করেনা, মনুষই মানুষের ক্ষতি করে।
    শুদু এখনও পর্য্যন্ত একটাও ভূত দেখলুমনা :-((
  • achintyarup | 14.96.89.8 | ০২ জানুয়ারি ২০১১ ০৪:৩৩497594
  • খুব ভাল লেখ তুমি দিদি

    আরো লেখ
  • tatin | 70.177.55.6 | ০২ জানুয়ারি ২০১১ ০৪:৪৭497595
  • আমাদের দেশের ভূতেরা বেশ নিরীহ এমনকি টাইপের কখনো বেনেভোলেন্টও, আম্রু ভূতেরা খতরনাক হয়।
  • Nina | 68.84.239.41 | ০২ জানুয়ারি ২০১১ ০৫:২৬497596
  • আরে না গো তাতিন, আম্রু-ভূতেরাও নিরীহ--আরে না আছে কায়া না আছে ছায়া--কি দিয়ে খতরনাক হবে---বেচারা / রীদের শুধু ঐ ভেসে ভেসেই থাকা---তাতেও মানুষ সুযোগ পেলেই রে রে করে তাড়াতে লেগে যায়!
    খতরনাক হচ্ছে তাবৎ দুনিয়ার যত্ত আজকের দিনের পলিটিশিয়ানরা, ওদের আমি খুউব ভয় পাই--
    হয় কথাকে নয় করে
    তারে দেখলে ভয় করে :-((
  • Nina | 68.84.239.41 | ০২ জানুয়ারি ২০১১ ০৫:৩০497597
  • অচিনভায়া, লিখতেই তো পারিনা, একটু আধটু বলতে পারি শুধু! সেই ছোট্টবেলা থেকে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছি, তায় বাবা মার বুড়ো বয়সের সন্তান--তাই অনেক রকম লোকজন, নানা বয়সের নানা walks of life এর খুব কাছ থেকে দেখেছি ----লিখতে পারলে কেউ আমার সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার আটকাতে পাত্তনা :-)))))
  • Shibanshu | 59.97.237.177 | ০৭ জানুয়ারি ২০১১ ১৬:৪৬497598
  • আরে নিনা, তুমি এই টইটাতে গপ্পো লিকচো জানতামই না। কী লিকেচো... এক্কেরে যা তা...:-)
  • Sags | 114.143.7.146 | ০৭ জানুয়ারি ২০১১ ১৭:৫৮497599
  • আজকে সবকটা গপ্পো পড়লাম। রাত্রে ঘুমাতে না পাড়লে, তোমরা সব্বাই দায়ী থাকবে
  • amit | 128.103.93.236 | ০৭ জানুয়ারি ২০১১ ২২:০২497600
  • নিনাদি, Shutter দেখসো নাকি? সদ্য দেখলাম, কারে কয় ঘাড়ে ভুত চাপা।
  • kumudini | 122.163.188.78 | ০৭ জানুয়ারি ২০১১ ২২:১৬497603
  • নীনা,তোমার গল্প দুটো পড়ে মন ভরে গেল,কানায় কানায়।আরও অনেক অনেক লেখ,ঠিক এমনি করে।
  • Nina | 64.56.33.254 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ০০:৪০497604
  • অমিত, হা হা হা হা shutter ভূত ঘাড়ে নিয়ে ছবি--দেখসি দেখসি!
    আর এই যো শিবাজি, গপ্প কই লিকলাম--ও তো শুদু কয়েকটি অঘটন যা আজও ঘটে তার আঁখো দেখা/ কানো শুনা হাল ;-))
    এ বাবা কুমু নজ্জা দিওনি।
    আমি তো বসে আচি শ্রাবণী বলেছে কয়েকটা গপ্প লিখবে এইখানে----সেই আশায়
  • tc | 206.202.64.45 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ০৩:৫২497605
  • নীনার লেখা লাস্ট ঘটনাটা পড়ে ভাললাগা আর ভয় মিশ্রিত এক অদ্ভুত অনুভুতি হল।
    ব্যোমকেশের 'শৈল রহস্য' মনে পড়ে গেল।
    আরও গল্পের প্রত্যাশায় রইলাম।
  • Manish | 59.90.135.107 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ১২:০৪497606
  • নীনাবেন, কথা কম ,চাই লেখা বেশী :-)
    পুরো মজে গেছি।
  • kumudini | 122.162.173.66 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ১৬:৩৮497607
  • আমার এক বন্ধুর কাছে এই ঘটনাটা শুনেছিলাম:
    ঘটনা সেই সময়কার,যখন কলকাতার অলিগলিতে To-Letলেখা বোর্ড টানানো থাকত।
    অনায়াসে চমৎকার আলোহাওয়া-যুক্ত,দক্ষিণ খোলা বাড়ী খুঁজে পেত ভাড়াটেরা।ভাড়াও থাকত সাধ্যের মধ্যে। তা আমার বন্ধুর কাকার(নাম ধরুন শশাঙ্ক বাবু)দরকার ছিল কালীঘাট অঞ্চলে একখানা ছোটখাট বাড়ী।
    এক রবিবারের সকালে শশাঙ্ক বাবু বেরোলেন বাড়ী খুঁজতে।দু-তিনখানা দেখলেন-ও,তেমন পছন্দ হোলো না।হতাশ হয়ে সেদিনের মত ফিরে আসছেন, তখনি চোখে পড়লো-একটু গলির মধ্যে,কিন্তু চমৎকার একটি দোতলা বাড়ী,বেশ নতুন দেখতে,ঠিক যেমনটি চাইছিলেন।সামনে ঝুলছে "ভাড়াটে চাই",সদরে তালা।
    খুশী মনে শশাঙ্ক বাবু মোড়ের পানওলাকে জিজ্ঞেস করতে গেলেন বাড়ীওলার হদিশ।সে পান সাজতে সাজতে আঙ্গুল তুলে একটা বাড়ী দেখিয়ে দিল।
    বাড়ীওলার লম্বা চওড়া সুন্দর চেহারা,পাকানো গোঁফ,ডান গালে বড় তিল,ভুরুর পাশে কাটাদাগ,তিনি তখন রেডিওতে খবর শুনছিলেন।
    শশাঙ্ক বাবুর আগমনের উদ্দেশ্য শুনে তাঁকে আপাদমস্তক একবার মেপে নিলেন, একটু খাপছাড়া ভাবে দশ সেকেন্ড চুপ করে রইলেন,তারপর জিজ্ঞেস করলেন,
    "আপনি ব্রাম্‌হণ?"
    সামান্য ঘাবড়ে গেলেও শশাঙ্ক বাবু জানালেন,অবশ্যই,তিনি খাঁটি কুলীন ব্রাম্‌হণ।
    বাড়ীওলা ভদ্রলোক মনে হয় কম কথা বলেন।চুপ্‌চাপ বাড়ী দেখাতে নিয়ে গেলেন।চমৎকার বাড়ী,ওপরে নীচে আটখানা ঘর,ছোট পরিবারের জন্য যথেষ্ট।কথাবার্ত্তা পাকা করে শশাঙ্ক বাবু খুশী মনে ফিরে আসছেন, এমন সময় বাড়ীওলা(নাম বিভুতি) একটা বন্ধ ঘরের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন-
    "এটা একটা বাথরুম,কিন্তু আপনারা ব্যবহার করবেন না।"
  • kumudini | 122.162.173.66 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ১৭:০৮497608
  • যথা সময়ে শশাঙ্ক বাবু স্ত্রী,দুই ছেলে,এক মেয়ে নিয়ে এসে ঐ বাড়ীতে উঠলেন।বাড়ী দেখে সবাই খুশী,শুধু প্রতিবেশীরা বোধ হয় তেমন মিশুকে নয়,সবাই একটু চুপচাপ, বেশী মেশেটেশে না।তা একসাথে সব সুখ তো হয় না,শশাঙ্ক বাবু ও তাঁর পরিবার বেশ মানিয়ে নিয়েছেন।

    সেবছর শীত পড়লো জাঁকিয়ে,সবাই বলতে লাগলো এত ঠান্ডা কলকাতায় কখনো পড়েনি,আর এই ঠান্ডার দিনে রাণাঘাটে শশাঙ্ক বাবুর একমাত্র বোনের মেয়ের বিয়ে,রবিবার রাত্রে।সবাই বিয়েবাড়ী যাচ্ছে,কিন্তুশশাঙ্ক বাবুর উপায় নেই,পরদিন সকাল সাতটায় তাঁর বড়সাহেব আসবেন,তাঁকে রিসিভ করতে যেতে হবে দমদম।অন্যথায় চাকরী থাকবে না।
    লুচি-মাংস রেঁধে রেখে,পই পই করে দরজা-জানালা বন্ধ করার,ওষুধ/ইসবগুল খাওয়ার কথা মনে করিয়ে শশাঙ্ক বাবুর স্ত্রী সেজেগুজে সবাইকে নিয়ে বেরোলেন।গাড়ীতে উঠে শশাঙ্ক বাবুর দিকে তাকিয়ে কি
    বলতে যাবেন,দেখলেন উনি দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন।মনটা হঠাৎ কেমন কু ডাকল।

  • kumudini | 122.162.173.66 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ১৭:৫৮497609
  • খেয়ে দেয়ে শশাঙ্ক বাবু একটা ডিটেকটিভ নভেল পড়ছিলেন,সময়ের হিসেব ছিল না।নভেলটা শেষ করে পাশে মুড়ে রেখে খেয়াল হলো,রাত প্রায় বারোটা বাজে,চারিদিক শুনশান,উনি ছাড়া যেন পৃথিবীতে আর কেউ বেঁচে নেই।
    শুয়ে পড়ার আগে বাথরুম যেতে হবে।যেটাব্যবহার হয় সেখানে গিয়ে দেখলেন দুটো বালতি-ই খালি,এখন উপায়?
    দোতলায় যেতে হলে সিঁড়ির তালা খুলতে হয়,সে আর ইচ্ছে করল না।মনে পড়ল ঐ অব্যবহৃত বাথরুমটার কথা।যদিও ব্যবহার করতে মানা আছে,তবু তাঁর সুগৃহিণী সেখানে এক বালতি জল রাখেন।
    শীতের রাত্রে একটিবার গেলে আর কি হবে?
    দরজা খুললেন,আলো জ্বেলে দুপা ভেতরে গেছেন,মাথায় কি একটা ভারী জিনিসের ধাক্কা লাগলো।
    একটু পিছিয়ে এসে ওপরদিকে তাকিয়ে শশাঙ্কবাবু যেন জমে পাথর হয়ে গেলেন।
    ছাদে একটা পাখা ঝোলানোর আংটা,সেখান থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে রয়েছেন বিভুতিবাবু,তাঁর বাড়ীওলা। সেই গোঁফ,গালে তিল,কাটা দাগ,ঝুলন্ত মৃতদেহের পা দুটো এক্ষুনি শশাঙ্কবাবুর মাথায় লেগেছিল।
    কতক্ষণ,যেন অনন্তকাল ধরে শশাঙ্কবাবু তাকিয়ে রইলেন। বিভুতি বাবুর মুখে একটা বিকট হাসি,খালি গা,ঠেলে বেরিয়ে আসা দুই চোখে তিনি শশাঙ্কবাবুর দিকে চেয়ে রয়েছেন।
    হঠাৎ শশাঙ্কবাবুর মনে হল,হয়তো কোনোভাবে এই বাড়ীতে ঢুকে বিভূতি আত্মহত্যা করেছেন।তবে তো লোকজন ডাকতে হয়-এই ভেবে শশাঙ্কবাবু দৌড়ে বেরোতে চেষ্টা করতে গেলেন,কিন্তু যতবার দরজা পর্যন্ত যান,ততবার দুই ঝুলন্ত পা তাঁর মাথায় লেগে বাধা দেয়।

    প্রায় আধঘন্টা এইরকম চলল,তখনো অসমসাহসী শশাঙ্কবাবুর জ্ঞান রয়েছে।তিনি হাতজোড় করে কেঁদে বললেন"আমাকে ভয় দেখিয়ে আপনার কোনো লাভ নেই,আমার প্রাণ নেবেন না,যেতে দিন আমায়।"উত্তরে সেই মূর্ত্তির চোখ আরো বীভৎস, হাসি আরো ভীষণ হয়ে উঠতে লাগলো,এক আঙ্গুল তুলে তিনি দেখালেন তাঁর ধবধবে সাদা পইতে।
    অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে শশাঙ্কবাবুর সেই প্রথম দিনের প্রশ্ন মনে পড়ল।

    পরদিন বাড়ীর সবাই ফিরে এসে দেখল শশাঙ্কবাবু বাথরুমের আংটায় ঝুলে রয়েছেন,উর্দ্ধাঙ্গ খালি,গলায় নতুন পইতে।
  • achintyarup | 121.241.214.34 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ১৮:৫২497610
  • দারুণ ভূত!
  • Sibu | 184.194.93.115 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ১৯:৩৩497611
  • ভূত কোতায়? বেহ্মদত্যি তো!!
  • bitoshok | 80.237.226.75 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ১৯:৩৬497612
  • @ কুমুদিনী
    ইয়ে মানে, ফাঁকা বাড়িতে শশাঙ্ক বাবু কি করছিলেন সেটা কি করে জানা গেল? -:)

    @নীনা
    ১৯৪৭ সালে সাতশ টাকা মানে বিশাল অঙ্কের টাকা। -:)

    দুজনেরই লেখার হাত চম্‌ৎকার। চলুক।
  • kumudini | 122.163.189.2 | ০৮ জানুয়ারি ২০১১ ১৯:৫২497614
  • কাহিনী শেষ হয়নি তো-

    বন্ধু বলেছিল,ঐ বাড়ীটি এত লোভনীয় ছিল,যে এর পরেও নাকি ভাড়াটে আসে।সেই ভাড়াটেও,বলা বাহুল্য ব্রাহ্মণ ছিলেন।এক বর্ষার রাত্রে তিনি হঠাৎ সম্পূর্ণ উন্মাদ হয়ে যান।কেবল দড়ির খোঁজ করতেন ও সকলকে বলতেন তাঁকে আংটা থেকে ঝুলিয়ে দিতে।
    বিভূতিবাবুকে কেউ আর দেখতে পায় নি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন