এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সিনেমা

  • ঋতুপর্ণ ঘোষ

    gaja
    সিনেমা | ৩০ মে ২০১৩ | ৮০৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 113.245.197.178 | ৩০ মে ২০১৩ ২০:৫৯609558
  • ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রতি

    'সকলে জাঙিয়া পরা,
    তুমি শুধু পরে আলখাল্লা'
  • PM | 181.7.17.229 | ৩০ মে ২০১৩ ২১:৩৩609559
  • PT বাবু সময়টাকে ধরাই শিল্পের শেষ কথা নয়। ব্যক্তিগত সুক্ষ অনুভুতিগুলোকে ছোয়াও উৎকৃষ্ট শিল্প।

    আপনি জানেন না তা নয় নিশ্চিত্ভাবেই। তবু খোঁচালেন বলে বল্লাম
  • pharida | 192.64.46.63 | ৩০ মে ২০১৩ ২১:৩৪609560
  • ঋতুপর্ণ ছবি করলেন গল্প বলার খাতা
    বহুদিন পর বাংলা ছবি দেখছিল কলকাতা
    গল্প চলে পদ্য চালে চমকে দিয়ে ভাবায়
    এক এক চিঠি আদ্যোপান্ত নতুন রঙের জামায়।

    যখন আমরা মোড় ঘুরেছি কুমির ডাঙা খেলা
    ঋতুপর্ণ দেখান তাদের অনায়াস ভোরবেলা -
    কুঁড়ি ফুটছে শান্তি এমন অকারণ মন কেমন
    ঋতুপর্ণ গল্প বলেন - অচিন রাস্তা যেমন
    বাঁক নিয়েছে অথৈ খাদে কিম্বা ঝর্ণা জলে
    আমরা চলি নতুনতর দৃশ্য পাব বলে।

    আরো অনেক চিত্রকল্প সম্ভাবনার খেই -
    হাতছাড়া আজ মাঝরাস্তায় -
    ঋতুপর্ণ নেই......
  • @ | 79.211.9.134 | ৩১ মে ২০১৩ ০১:৩৩609561
  • ম,
    কবিতা পাঠের লিং, যেটার কথা বললেন
    Date:30 May 2013 -- 08:19 PM-এ সেটা দেবেন? ধন্যবাদ!
  • Abhyu | 34.158.244.47 | ৩১ মে ২০১৩ ০২:১৯609562
  • অসুখ সিনেমার শুরুর দিকে কৃষ্ণচন্দ্র দে'র গলায় আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে গানটার ব্যবহার অসাধারণ লেগেছিল। ওনার প্রথম সিনেমা দেখি আই এস আইয়ের জিওলজি অডিটোরিয়ামে, উনিশে এপ্রিল। সেই শুরু। কাল থেকে খুব খারাপ লাগছে।
  • Zn | 161.141.84.239 | ৩১ মে ২০১৩ ০২:৪১609563
  • আমি দুইদিন আগেও ইউটিউবে "ঊনিশে এপ্রিল" দেখছিলাম!!!!
    চিত্রাঙ্গদা খুঁজেছি অনেক, পাইনি। কয়েকটা ক্লিপ দেখলাম। ওটাতে তো ঋতুপর্ণ নিজেও অভিনয় করেছেন, কেন জানি মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যি বিষন্ন, শুধু চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলতে না, ব্যক্তি-অভিনেতা নিজেই খুব খুব বিষন্ন। ঃ-(
    চিত্রাঙ্গদা পুরোটা দেখতে চাই, আশা রাখি একদিন ঠিক পাবো।
  • | 60.82.180.165 | ৩১ মে ২০১৩ ০৩:৪৫609564
  • @ লিংক থেকে তো দেখি নি। ডিশ নেটওয়ার্কের কল্যাণে তারা মিউজিকে "আমার রবীন্দ্রনাথ'' বলে একটা অনুষ্ঠান দেখলাম। সেখানে ঋতুপর্ণ ঘোষ এইটা পাঠ করছিলেন।
  • SC | 34.3.20.47 | ৩১ মে ২০১৩ ০৭:১৩609565
  • সকালে শোনার পরে মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে গেল। অত তাড়াতাড়ি চলে গেলেন কমরেড। এখনো তো অনেক লড়াই বাকি ছিল।

    সিনেমা নিয়ে পাঁচ পয়সাও দিতে চাই না। বাংলা সিনেমা আমি বহুকাল দেখিনি, গান্ডু দেখেছিলাম লাস্ট। সেসব নিয়ে কিছু আমি জানিও না।
    কিন্তু ঋতু কে টিভির পর্দায় যখন প্রথম দেখেছিলাম, তার পর থেকেই মনে মনে একটা salute দিয়েছিলাম। আজ উনি মারা গেছেন বলে বলছি না, কিন্তু মানুষ ঋতুপর্ণ আমার কাছে একটা হিরো।
    বাঙালিদের মত আপাদমস্তক heteronormative , conservative ভিক্টোরিয়ান একটা সমাজে দ্নারিয়ে লোকটা বলে দিল, আমি এরকমই, এভাবেই চলব, তোদের যা chneRar , ছিঁড়ে নে। খুব বেশি লোক পারে না। লিবারাল, কমিউনিস্ট, আঁতেল শিরোমনি, সিপিএম হাবি জাবি, অনেক দেখলাম। সকলেই নিজের গন্ডির মধ্যে দ্নারিয়ে নিজের জেন্ডার রোল ঠিক রেখে তারপরে মুখ খোলেন। ঋতুপর্ণ কিন্তু সাহস নিয়ে দ্নারিয়ে বলতে পেরেছিলেন উনি এরকমই, এভাবেই চলবেন।

    শুধু বাংলাতে কেন, ভারতে আর কোনো সেলেব্রিটি নিজের সেক্ষুঅলিত্য নিয়ে এত ওপেনলি একটা স্টেটমেন্ট করেছেন, এতখানি সংগ্রাম করেছেন, খুব কম উদাহরণ। আর তার জন্য গালাগাল তো কম খাননি। তথাকথিত শিক্ষিত বাঙালির ড্রয়িং রুমেই দেখেছি, কিরকম নির্লজ্জের মত নকল করা হয়েছে, ইয়ার্কি করা হয়েছে। এক দ্বিতীয় শ্রেনীর ভাঁড় কমেডিয়ান তো নিজের career তৈরী করলেন ওনার মত লোকেদের বিরুদ্ধে হমফবিক বায়াস কে cash করে।

    আজ খেয়াল করলাম ফেসবুকের দেওয়ালে দেওয়ালে পরিচালক রিতুপর্নোর ছবি মিস করব ইত্যাদি। ব্যক্তি ঋতুপর্ণ সম্পর্কে একটা অদ্ভূত নীরবতা।

    ওনার প্রতি সশ্রদ্ধ প্রনাম রইলো। এই সমাজের "ঋতুপর্ণ রা" যেন খুঁজে পায় বাঁচার রসদ। এটাই ওনার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হবে।
  • S | 81.191.58.111 | ৩১ মে ২০১৩ ০৭:৪৩609566
  • ঋতুপর্ণর খবর দেখব বলে ইউটিউবে এবিপি আনন্দর দু একটা ক্লিপিং দেখছিলাম।সবই কত প্রতিভা, অপরিসীম ক্ষতি হয়ে গেল এইসব বলছেন।তারমধ্যে পরমব্রতর কথাটা মনে দাগ কেটে গেল।পরমব্রত বললেন বাংলা সিনেমার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদের মধ্যে খুব কম লোকেই সিরিয়াস পড়াশোনা করেন।ঋতুপর্ণ ছিলেন সেই বিরল প্রজাতির একজন।
  • s | 176.147.72.173 | ৩১ মে ২০১৩ ০৮:০৫609569
  • খুব ভালবাসতাম ওনার সিনেমাগুলো দেখতে। নিজের সঙ্গে মেলাতে পারতাম। চরিত্রগুলোকে চিনতাম। মানসিকতা বুঝতাম। পরিচালককে চেনা মনে হত।
    ইদানিং অভিনয়ও করছিলেন। সেদিন 'Memories in March' দেখলাম। খুব যথাযথ লাগলো। বিশেষ করে প্রেমিকের মৃত্যুর জন্য শোকাগ্রস্ত অথছ স্বাভাবিক থাকার প্রচেষ্টা।
    মীরের ইন্টারভিউতে নিজের নারী স্বত্বা নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন। কথাগুলো শুধু মীর শোনেনি, আমিও শুনেছিলাম। জেনেছিলাম। শিখেছিলাম।
    ভালো থাকিস রে রিতু।
  • s | 176.147.72.173 | ৩১ মে ২০১৩ ০৮:০৫609568
  • খুব ভালবাসতাম ওনার সিনেমাগুলো দেখতে। নিজের সঙ্গে মেলাতে পারতাম। চরিত্রগুলোকে চিনতাম। মানসিকতা বুঝতাম। পরিচালককে চেনা মনে হত।
    ইদানিং অভিনয়ও করছিলেন। সেদিন 'Memories in March' দেখলাম। খুব যথাযথ লাগলো। বিশেষ করে প্রেমিকের মৃত্যুর জন্য শোকাগ্রস্ত অথছ স্বাভাবিক থাকার প্রচেষ্টা।
    মীরের ইন্টারভিউতে নিজের নারী স্বত্বা নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন। কথাগুলো শুধু মীর শোনেনি, আমিও শুনেছিলাম। জেনেছিলাম। শিখেছিলাম।
    ভালো থাকিস রে রিতু।
  • siki | 132.177.209.250 | ৩১ মে ২০১৩ ০৯:৩১609570
  • ফেসবুক থেকে এইটা পেলাম।

    Representatives of Sappho and Association of Transgender and Hijras in Bengal were reportedly not allowed near the body of Rituparna Ghosh at the Nandan complex yesterday. They offered their red roses to his photo outside.

    এটা কি সত্যি? কে আটকালো? কপু না দিদির ভাইরা?
  • pi | 78.48.231.217 | ৩১ মে ২০১৩ ০৯:৪৫609571
  • !!
  • sosen | 125.242.209.78 | ৩১ মে ২০১৩ ০৯:৫২609572
  • দিয়েছে কাগজে। কিন্তু ব্যাপারটা এরকম নয়। খুব ভিড় হয়েছিল, তিস্তারা একটা আলাদা লাইন চেয়েছিলেন, মেয়েরা বা ছেলেরা যে লাইন দুটিতে দাঁড়িয়েছে তাতে দাঁড়াতে রাজি হননি। বলেছিলেন, আমরা পুরুষ ও না, নারী-ও না, আমাদের আলাদা লাইন দেওয়া হোক। সেটা দেওয়া হয়নি তাই প্রতিবাদে ওরা ভেতরে ঢোকেননি।
  • কৃশানু | 177.124.70.1 | ৩১ মে ২০১৩ ০৯:৫৯609573
  • এসসি,
    খুব ঠিক লিখেছ। এই কারণে মীরকে কোনদিন পছন্দ করে উঠতে পারব না।
  • san | 69.144.58.2 | ৩১ মে ২০১৩ ১০:৫৫609574
  • আমিও।
  • san | 69.144.58.2 | ৩১ মে ২০১৩ ১০:৫৮609575
  • উফ
    আমিও এসসিকে ক দিলাম।
  • কল্লোল | 125.241.2.183 | ৩১ মে ২০১৩ ১১:১৩609576
  • ঋতুপর্ণর আরও অন্ততঃ ২০ বছর বাঁচা উচিৎ ছিলো। তবে গিয়ে হয়তো তৃতীয় লিঙ্গের আলাদা লাইন দেখতে পেতাম। এই তো সেদিনও কাগজে লিখেছে একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসে। কোন ওয়ার্ডে যাবে পুরুষ না মহিলা সেটা ঠিক করতে করতেই মানুষটি মারা যান। আর কবে আমরা শিখবো মানুষ লিঙ্গেভেদে তিন প্রকার।

    পিটি। একটা মানুষ পুরুষতন্ত্রের হেজিমনি, নারীসুলভ পুরুষ, সমকামীতা এসব নিয়ে সিনেমা বানিয়ে গেলো, অভিনয় করলো, তারপর তুমি বলছো সমসময়কে উনি ধরতে পেরেছিলেন কি না?
    তুমি কি দেখেছো সিনেমাগুলো? না দেখে থাকলে, ১৯ এপ্রিল, চিত্রাঙ্গদা, আর ওঁর অভিনীত, আর একটি প্রেমের গল্প দেখে নাও।
  • সে | 203.108.233.65 | ৩১ মে ২০১৩ ১১:৩১609577
  • "আর একটি প্রেমের গল্প" দেখতে চাই। কোথাও ডিভিডি/ভিসিডি পাই নি। হলে যখন দেখানো হয়েছিলো তখন দেখা হয়ে ওঠে নি। কারো কাছে অনলাইন লিঙ্ক থাকলে একটু জানাবেন?
  • Kaju | 131.242.160.180 | ৩১ মে ২০১৩ ১১:৪২609580
  • আর যদি কিচ্ছু না-ও থাকে, শুধু রেনকোট-এর 'পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান' আর 'মথুরানগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও', মেমোরিজ ইন মার্চ-এর 'বহুমনোরথে সাচো অভিসারে' আমার ঋতুপর্ণ প্রতি মুহূর্তে একান্তে সঙ্গে থাকবেন।
  • opu | 24.99.88.55 | ৩১ মে ২০১৩ ১২:৪৭609581
  • কাল সারা রাত আবহমান আর নৌকা ডুবি দেখে কাটালাম। এখনও ভাবতে অস্বস্তি হচ্ছে।
  • siki | 132.177.209.250 | ৩১ মে ২০১৩ ১৩:৩৬609583
  • কাল ঋতুর বাড়িতে মীরও ছিল। মীরের ডিটেলস বক্তব্য শুনলাম।

    আমার মীরের ওপর কোনও রাগ নেই।

    বেঁচে থাকা অবস্থায় ঋতুরও মীরের সাথে কোনওরকম মন-কষাকষি ছিল না। সেই অশান্তির পরে দুজনের দেখা হয়েছিল, এবং দুজনেই ভালো বন্ধু হয়ে গেছিলেন।
  • PT | 213.110.243.23 | ৩১ মে ২০১৩ ১৪:৫৭609585
  • কল্লোলদা
    ১৯ শে এপ্রিল সহ অন্যান্য কয়েকটা সিনেমা দেখেছি। ঋতুপর্ণর কোন ছবিই আমার মনে দাগ কাটেনি। অসাধারণ ডিটেলের কাজ, দুর্দান্ত ক্যামেরার ব্যবহার ইত্যাদি সত্বেও প্রায় সব ছবিই (যা যা দেখেছি) খুব অ-গভীর মনে হয়েছে। আর "নারীসুলভ পুরুষ, সমকামীতা" ইত্যাদি নিয়ে তিনি ছবির চাইতেও ছবির বাইরে লড়াইটা বোধহয় বেশী করেছেন। বিশেষতঃ "আরেকটি প্রেমের গল্প" তো তাঁর নিজের তৈরি ছবি নয়। সে ব্যাপারে তাঁর অবস্থানকে আমি শ্রদ্ধা করি। কাল রাতে আমার ১৫ বছরের ছেলেকে ঋতুপর্ণর সাজ-পোশাক ইত্যাদি সম্পর্কে খানিকটা বোঝানোরও চেষ্টা করেছি।

    তবে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে সেরকম কিছু বড় ধরণের অবস্থান কিছু দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। বরঞ্চ, "চোখের বালি"-তে নারী শরীরের প্রদর্শন বেশ দৃষ্টিকটুই লেগেছে-মনে হয়েছে পুরুষ দর্শককে হলে টানার জন্য নগ্নতাকে ব্যবহার করেছেন। অথবা "দহন" আর "আদালত ও একটি মেয়ে"-র মধ্যে বিশাল কিছু অবস্থানের ফারাক চোখে পড়েনি। "অন্তর্মহল"-এর শেষের দিকে শারীরিক সম্পর্ক "অন্তর্জলী যাত্রা" ছবির কথা মনে করিয়েছে। ঋতুপর্ণর ছবি থেকে আমি সেই ভাবে নতুন কিছু পাইনি।

    এসবই আমার ব্যক্তিগত মতামত। হয়্ত সব ছবি দেখা হয়ে ঊঠলে মত বদলাতেও পারি। হয়ত এসব বলার সময়ও এখন নয়-অথবা হয়ত এটাই ঠিক সময়। তাঁর ছবির সমালোচনা করলেও তাঁকেই মনে করা হবে।
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.203.221.156 | ৩১ মে ২০১৩ ১৬:২৫609586
  • অনিকেত পথিক | 212.54.54.240 | ৩১ মে ২০১৩ ১৭:০৯609587
  • বড় মাপের মানুষরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নিজের জীবন আর কাজের জায়াগাকে আলাদা রাখেন। শিল্পে বা কাজে যে কথা বলেন ব্যাক্তিগত জীবনে তার চেয়ে শত যোজন দূরে বাস করেন। এটা ভাল না মন্দ তা নিয়ে কিছু বলছি না কিন্ত ঋতুপর্ণ ঘোষ সেই মানুষ যিনি নিজের জীবনকে, নিজের যৌন চেতনার মত একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়কে তাঁর কাজের অংশ করে তুলেছিলেন। যেহেতু এই বিষয়ে তিনি প্রচলিত ধারার বাইরের মানুষ, তাই তার জন্য ঝুঁকিও কম ছিল না, সমালোচনা-কটূক্তি-বিদ্রূপ কম সহ্য করতে হয়নি, অনেক ক্ষেত্রে এমনকি দর্শকের আনুকুল্যও হারাতে হয়েছে, কিন্ত উনি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। সব রকম সমালচনার উত্তর দিয়েছেন কাজে এবং কিছু ক্ষেত্রে কথায়ও !
    কমলহীরের আংটি থেকে ঠিকরে পড়া আলো যখন আমাদের ড্রয়িংরুম হয়ে বেডরুমে পৌঁছেছিল, আমরা মোটের ওপর খুশীই ছিলাম। আমাদের রোজকার পথের পাঁচালী, আমাদের সাজানো গোছানো ঘর-গেরস্থালীর বাহান্ন এপিসোডের মধ্যেকার মূল্যবোধ আর ভন্ডামী এমন সহানুভুতির সঙ্গে দেখিয়ে দেওয়া দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমরা ওঁকে খুব কাছের মানুষ ‘আমাদেরই লোক’ বলে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্ত সেই আলো সব বাধা পেরিয়ে একেবারে অন্তরমহলে পৌছে যাওয়াটা আমরা তত সহজে মেনে নিতে পারিনি। আমাদের চেনা লোকটা(মানে তখনও ছেলেটা !)সরু গলায় ঠোঁট সরু করে ‘মেয়েলী’ ছাঁদে কথা বলে কি ঘন ঘন কাঁধের চাদর (বা দোপাট্টা !)ঠিক করে আর সবাইকে ‘তুই’ সম্মোধন করে এই সব কিছুই আমরা এককথায় ওর ‘স্টাইল’ বা ‘পাকামি’ বলে(এমনকি ওর ‘ব্র্যান্ড’ বলেও বোধহয় !) মেনে নিয়েছিলাম। কিন্ত ঋতুপর্ণ ঘোষ আমাদের সেইখানে থামতে দেননি। তাই উৎসব বা আবহমান বা খেলা-র মতন পারিবারিক চিত্র, নৌকাডুবি বা চোখের বালি-র মত পিরিয়ড পিস-এর পাশাপাশিই করেছেন মেমরি’জ ইন মার্চ আর চিত্রাঙ্গদা। অসামান্য অভিনয় করেছেন আরেকটি প্রেমের গল্প’-তে। নিজের সাজসজ্জায় চালচলনে কথাবার্তায় সোচ্চারে জানিয়েছেন নিজের অন্তরমহলের কথাও। নিজের নারীসত্ত্বার কথাও। যে শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙালীর কথা ভেবে ওঁর ছবি করা, সেই দর্শকের কাছে যে এই কথা যে খুব সহজে গ্রহণযোগ্য নয় তাও তিনি জানতেন না তা নয়, কিন্ত প্রচলিত ধারার বিরুদ্ধে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে গেলে যে লড়াইটা কোনোভাবেই ছাড়া যায় না তা উনি করে দেখিয়েছেন। এই নিরন্তর সংগ্রাম ওঁর শিল্পীসত্বাকে বিঘ্নিত, ব্যহত করেছে, এমন অনেক অভিযোগ শুনি। তিনি নিজের ‘আইডেন্টিটি’ (অস্তিত্ব বললে যেন ঠিক বলা হয় না)কে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজের প্রতিভাকে খাটো করেছেন, এই কথা হয়তো পুরোটা ভুলও নয় কিন্ত আমরাও তো পারিনি তাঁকে এমন দিন এনে দিতে যেখানে লড়াই না করেই নিজের ‘আইডেন্টিটি’ নিয়ে নিজের কাজ করে যাওয়া যায়, তাই এই অভিযোগ করার অধিকার আমাদের নেই।
    ব্যক্তি ঋতুপর্ণর এই যে নিরুচ্চার লড়াই, তার একটা প্রভাব কোথাও নিশ্চই পড়েছে। আমরা যারা শুরুতে ঋতুপর্ণর কাজকে ভালোবেসেছি, তারা কোন এক সময়ে কাজের আড়ালে মানুষটাকেও ভালবাসতে, শ্রদ্ধা করতে শুরু করেছি। তারপর কোনো একটা সময়ে তার সব কাজ ভাল না লাগলেও মানুষটার বিশ্বাসকে, লড়াইকে মূল্য দিতে শিখেছি, বুঝতে চেষ্টা করেছি, দরকারে ওঁর পক্ষ নিয়ে চিৎকার করেছি, কেবলমাত্র ‘ওঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার’ বলে সরিয়ে রাখিনি। একটা ‘স্যাফো’ অনেক বছরে যেটুকু বোঝাতে পারে, একটা ঋতুপর্ণ শুধু নিজের জীবনধারাকে জনসমক্ষে তুলে ধরেই সেইটুকু করতে পেরেছেন। সমাজে সমকামী, রূপান্তরকামী, এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অবস্থানকে সচেতনভাবেই সহজভাবে নেওয়ার শিক্ষা ঋতুপর্ণ দিয়েছেন নিজের জীবন জুড়ে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ওঁর অবস্থান পুরোটা বুঝিনি কোনদিন। উনি কোথাও নিজেকে নারীসত্বাকামী বলেননি (আরেকটি প্রেমের গল্প-তে চপল রানীর মুখেও সেই কথা বলা আছে শেষের দিকে), অথচ শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন, দারুণ সাজগোজ করতে ভালবাসতেন কিন্ত একমাথা অত সুন্দর চুল কেটে ন্যাড়া মাথায় রয়ে গেলেন কত বছর, যা সত্যিই তো ঠিক ‘মেয়েদের মতো’ নয়। কিন্ত বুঝিনি মানে কোনদিন বুঝব না, এমন অবস্থানেও যে নেই, এইটাই ওঁর জিতে যাওয়া।
    আমার কাছে ঋতুপর্ণ ঘোষ শুধু চিত্র পরিচালক নন। একজন দারুণ বুদ্ধিমান, জ্ঞআনী, সুরসিক, মননশীল মানুষ যাঁর সব কাজই আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং উপভোগ্য, তা হোক বাঙলা ধারাবাহিক (সিরিয়াল)বা সাক্ষাৎকার, কিন্ত সমালোচনার উর্ধে নয়। রোববার পত্রিকার সম্পাদকীয় কলমে সামান্য দু-চার লাইন পড়ে যে কতবার মুগ্ধ হয়েছি, কোন হিসেব নেই। ওঁর মায়ের মৃত্যুর পরে বা আরো বিভিন্ন সময়ে মা-বাবাকে নিয়ে লেখা অসংখ্য কথা আমাদের অনেকের কথা হয়ে উঠেছে অনেকবার। ভেবেছি এত ব্যক্তিগত অনুভুতির কথা এমন খোলাপাতায় প্রকাশ করেন কেন (আবার খোলাপাতায় না লিখলে আমি পড়তামই বা কি করে !)।।।।।।সেই ভাবনার কথাও ঋতুপর্ণ কেমন করে জেনে ফেলে (!) কোন একটা সংখ্যায় নিজে থেকেই লিখেছিলেন ! সব মিলে উনি আমার কাছে এমন একটা জলজ্যান্ত বিনিময়ের, অধিকারের আর ভালোবাসার জায়গা ছিলেন যা শুধু ওঁর কাজ আর স্মৃতি দিয়ে ভরা যাবে না কিছুতেই।
  • .*. | 69.93.241.242 | ৩১ মে ২০১৩ ২১:২৭609590
  • অনিকেত পথিকের লেখা পড়তে পড়তে মনে হ'ল কবির বর্ম লাগে, শিল্পীরও কিন্তু ঋতুপর্নের কোন বর্ম লাগেনি।
    - সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত করে রেখে
    উন্মাদ "রবির" সঙ্গে স্নান করছে প্রকাশ্য ঝর্ণায় (জয় গোস্বামী, দু একটা শব্দ বদলিয়ে দিয়ে)।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন