এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আরেকটা বেড়াতে যাবার গপ্পো

    পু
    অন্যান্য | ০২ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৩৮১৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Stacked auto-encoder | 117.167.116.166 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:০২686869
  • একে নতুন এপিসোড, তায় কলকাতার করাল গ্রাস থেকে পালানোর আনন্দ - শুধু তারিখ দেখলে হবে? ওসব ক্ষ্যামাঘেন্না করে নিতে হয় :-p
  • :) | 192.69.243.8 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:০৭686870
  • শুধু ঐ "পু" নামটাতে ক্যামং অস্বস্তি হচ্চে।

    অন্য নাম নেওয়া যায় না? নিদেনপক্ষে, পুপে?
  • পু | 120.5.74.200 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:১৯686871
  • সোসেন দি,
    এইরে ওটা ৪ মে হবে।

    আরিজিত দা,
    কলকাতা না পুনে? কলকাতা থেকে তো আগেই পালিয়েছি। যদিও কলকাতা আমার কাছে কখনোই করাল নয়। ঃ)

    ঃ) দা,
    পু পুপে হলে অ-কেও একটা ভাল নাম দিতে হয়। সে এখন ভেবে পাচ্ছিনা।
  • পু | 120.5.74.200 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:২৪686873
  • আর আমি কিছুতেই গুগল ড্রাইভে স্টোর করা ছবিগুলো লেখায় এম্বেড করতে পারছিনা। :(
  • pi | 74.233.173.198 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:২৪686872
  • কেন , গোরা ঃ)। তবে লিচুই বেটার ছিল।
  • কায়দা | 192.69.243.8 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:৪২686874
  • ঐভাবে হবে না।

    লিংকের দুদিক থেকে অ্যাঙ্গুলার ব্র্যাকেট হঠাতে হবে।

    লিংকটা .jpg বা .png বা অন্য কোনও ইমেজ ফাইলের এক্সটেনশন নাম দিয়ে পেস্ট করতে হবে।

    পিকাসা থাকতে গুগল ড্রাইভ কেন??????????
  • de | 24.97.46.251 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:১১686875
  • ক্যান - পু শোনেননি - উইনি দ্য পু -
    দিব্বি হচ্চে - অ থেকে লিচু আম্মো খ্যাল করেছিলাম -
  • dd | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:১৩686876
  • লিচু তো খুবই সুন্দর নাম আর পুপেও চমৎকার। আমার ভোট এই দুটোতেই।
  • byaang | 132.167.26.52 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:৩৫686879
  • বাঃ পুপে খাসা লেখে তো!
  • Stacked auto-encoder | 117.167.108.184 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:৪০686880
  • "যদিও কলকাতা আমার কাছে কখনোই করাল নয়।"

    হুঁ, রেকর্ড হল।
  • kiki | 55.124.7.253 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:০৬686881
  • কেবল এ কার টা উঠিয়ে না ফেললেই হলো।ঃ)

    খাসা হচ্ছে।
  • ঈশান | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:১৬686882
  • ডিডি পুপে সবাই ভ্রমণকাহিনী লিখছেন। আমাকেও এবার একটা নামাতে হয়। পিছিয়ে পড়বনা কভু।
  • পু | 120.5.74.200 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:৩৫686883
  • সব্বাইকে থ্যাংকিউ। :)))))

    অরিজিতদা,
    কলকাতা ইকোস্পেসের জন্যে 'অকরাল' নয়। কলকাতা 'অকরাল' কলেজ স্ট্রীট, কলেজ স্কোয়ার, কফি হাউস, পার্ক স্টীটের রাস্তা, পিটারক্যাটের চেলো, মোকাম্বোর কোজি রোমান্স, নিউমার্কেটের ভিড় ঠেলে শপিং, নন্দনে মুভি, সাউথ সিটিতে ডেটিং, ভিক্টোরিয়ার বাগান, গড়ের মাঠে ঘোড়াগাড়ি, নিক্কোপার্কের রোলার কোস্টার ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছুর জন্যে। :) কতো কিছুই বাদ পড়ে গেলো।

    নিপাদি,
    আমি চাই পেজের মধ্যে যাতে ছবিটা দেখা যায়। কাল ট্রাই করবো। ঃ)
  • pi | 233.176.35.186 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৪১686884
  • পুপে, ছবিগুলো postimage এ তুলে .jpg ওয়ালা লিং টা এখানে দিয়ে দিলে এই পাতাতেই ছবি এসে যাবে।
  • + | 175.246.93.79 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:১৭686885
  • চারপাশে হেব্বি হেব্বি ভ্রমণ কাহিনী চলছে। পড়ে পড়ে নেটে সার্চিয়ে যাচ্ছি, আর ভাবছি কোনটা কবে যাব? (ডিডিদার ভ্রমণকাহিনী এই যাব লিস্টের বাইরে)

    দারুণ হচ্ছে পু, পড়ছি
  • টেস্টিং | 120.5.74.71 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:৫৪686886
  • পু | 120.5.74.71 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ২০:০৩686887
  • এইবারেরটা শুরু করে ফেলেছি। এখন অপু-ই রইল। পরে আবার কোনদিন অন্য গল্পো লিখলে নাম বদলে দেব। ঃ)

    Part - 4

    কালকা মেল এসে দাঁড়াতেই চারদিকে একটা দক্ষযজ্ঞ শুরু হলো। 'পুচু কোথায় গেল?' 'নীল ব্যাগটা কই? হারালি নাকি?' 'এই দরজা দিয়ে শিগ্‌গির ওঠ' ইত্যাদি নানারকমের গলা শোনা যেতে লাগলো। বুঝলাম প্রচুর বাঙ্গালী দলে দলে হিমাচল চলেছেন। কুলিদেরও ব্যস্ততা তুঙ্গে। আমরাও টুকুস করে ট্রেনে উঠে নিজেদের বার্থ দখল করলাম। 'ট্রেন কখন ছাড়বে', 'এতো লেট করছে কেন' ইত্যাদি প্রশ্নের হুঁ হাঁ জবাব দিতে দিতে, বার দুয়েক বাড়ি থেকে 'হ্যাঁ বাবু, পৌঁছে গেছিস? সাবধানে থাকবি। ঠিক আছিস তো? আশেপাশের প্যাসেঞ্জার কেমন?' জাতীয় কৌতুহল নিরসন করতে করতে দেখি ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।

    পরদিন ভোরবেলা ঘুম ভাংল। কালকা মেল গন্তব্যে প্রায় এসে পড়েছে। ঘড়িতে ৫-৩০। শিবালিক এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা ৫-২৫শে। তবে কানেক্টিং ট্রেন। কালকা না আসা অব্ধি বাধ্য প্রেমিকের মত ওয়েট করে দাঁড়িয়েই থাকে। তাতেও অ বল্লো - নেমেই কিন্তু ছুটতে হবে! আমি ত হাঁ। খামোখা ছুটব কেন? সীট রিজার্ভ করা রয়েছে, ট্রেনটাও তোরই মতন ;) । জানা গেল লোকজন নাকি রিজার্ভের তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছেমতো ভাল ভাল সীট বেছে নিয়ে বসে পড়ে। অ আগে বাবার সাথে মানালি ঘুরতে এসে নাকি ভুক্তভোগী ( এইবার বোঝা গেল আগে চেপেছে বলেই ব্যাটার টয়ট্রেনে আগ্রহ ছিলনা!) । এই শুনে ট্রেন থামা মাত্র পড়িমরি করে লাগেজ নিয়ে ছুট লাগালাম। আমাদের কামরায় উঠে দেখি আমার জানলার ধারের সীটে অন্য কারা বসে আছে। তাদেরকে টিকিট দেখাতে যেতেই কোথেকে এক কেয়ারটেকার এসে হাজির হলো। 'আপ কাপল্‌ হো?'। ঢক করে ঘাড় নাড়তেই দুটো মুখোমুখি জানলার ধার দেখিয়ে দিল আমাদের। কিন্তু কিন্তু করে বসে পড়লাম। একটা নিশ্চিন্দি যে সীট দুটো এক জায়গায়। অরিজিনাল সীট দুটোই উইন্ডো ওয়ালা হলেও বড্ডো দূর দূর। হানিমুন বলে কথা , অত দূরে বসলে চলে! কিন্তু এত প্রেম লোকের সহ্য হলে তো! গুছিয়ে সবে বসেছি, হঠাত এক ভদ্রলোক এসে অ-কে দেখিয়ে সদর্পে ঘোষণা করলেন - 'ইয়ে সীট মেরা হ্যায়। আপ উঠিয়ে। ' এদিকে সেই কেয়ারটেকার বেপাত্তা। অ ভালমানুষের মতো উঠে গেল। খানিক বাদে সেই কেয়ারটেকার এলে তাকে সমস্যার কথা বলা হল - "হয় আমাদের অরিজিনাল সীট ফেরত দাও নয়ত এর ব্যবস্থা করো।" কেয়ারটেকার ওই ভদ্রলোককে বুঝিয়ে সুঝিয়ে এক জায়গায় বসালো, দিয়ে আবার কোথায় চলে গেল। তিনিও ব্যাগ ট্যাগ রেখে 'মেরা সীট দেখিয়েগা, ম্যায় আতা হুঁ থোড়া' বলে সেই যে গেলেন, সাড়ে ছটা নাগাদ ট্রেন চলতে শুরু করার পরও তাঁর দেখা পাওয়া গেলনা! তবে ওনার ব্যাগে বোম টোম কিছু ছিল না।

    কামরার বাকি প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে মনে পড়ে বেশ কিউট বাবা-মা আর তাদের ততোধিক কিউট বাচ্চা, গোটা রাস্তা কান্না নেই, মোবাইলগেমের বায়না নেই, সুন্দর কমলালেবু খেতে খেতে জানলা দিয়ে সিনারি দেখতে দেখতে গেছিল। আরেকটা জুটি, সম্ভবতঃ এরাও হানিমুন কাপল্‌, একটাই শাল মুড়িয়ে দুজনে দিব্বি ঘেঁসাঘেঁসি করে বসে নিজেদের নিয়ে বেশ বিজি ছিল; মাঝেসাঝে জানলা দিয়ে উঁকি মারলেও প্রকৃতির শোভা তাদের মূল উপভোগ্য বিষয় নয়! আর এদিকে আমাদের মুখোমুখি সীট.... :(

    প্রথম টয়ট্রেন যাত্রা। মৃদুমন্দ গতিতে হেলেদুলে সে চলতে শুরু করল। প্রথমে আশেপাশে এম্নি ইঁটের বাড়ি, জঞ্জাল, ঝোপঝাড়, ভাঙ্গাচোরা পেরিয়ে খানিক বাদেই সামনে ছবির মত সুন্দর দৃশ্যপট এসে হাজির। পাহাড়ের গা দিয়ে এঁকে বেঁকে চলেছি। পথে অজস্র টানেল। অন্ধকার সেই টানেলের ভিতর দিয়ে যাবার সময় সে কী গুমগুম শব্দ, প্রপোজের আগে বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটার শব্দের সাথে তার ভারি মিল! আশেপাশের গাছগাছালি পাল্টাতে শুরু করল। একে একে দেখা দিল দেওদার পাইনের দল। অনেক নাম না জানা রঙ্গিন ফুলে ভরতি রেললাইনের আশেপাশের ঝোপঝাড়। একটা লম্বাআআআ টানেল পেরিয়ে ট্রেন এসে থামলো বারোগ স্টেশনে। এখানে আমাদের ব্রেকফাস্ট বিলি করবে সেই কেয়ারটেকার। আমরাও স্টেশনে নেমে পোজ দেব। ছবি টবি তুলবো। ইত্যবসরে কিছু ছবি দেখান যাক আর টয়ট্রেন সম্পর্কে কিছু ইনফো দিই। ইনফোগুলো নেটেই মেলে, এখানে শুধু গল্পচ্ছলে একটু সারাংশ দিলাম।

    ট্রেন থেকে নিচে গাড়ি যাবার রাস্তা দেখা যাচ্ছে -




    রেললাইনের ধারে আর বারোগে ফুলের ছড়াছড়ি -




    এই কালকা সিমলা লাইনে রেল চলা শুরু হয় আজ থেকে একশ বছরেরও বেশী আগে ১৯০৩ সালে, সায়েবদের সামার ক্যাপিটালকে রেলপথে জুড়তে। এই রেলওয়ে এখন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। প্রায় পাঁচ ঘন্টার জার্নিতে বেশ খাড়াই ৯৬ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন কালকার থেকে আরো প্রায় ৪৮০০ ফুট উঁচুতে, পথে ১০২ খানা টানেলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের খাঁজখোঁজ , এবাঁক সেবাঁক পেরিয়ে এসে যাবে সিমলা। এই টানেলদের মধ্যে ফার্স্ট হওয়া টানেল ১ কিলোমিটারেরও বেশী লম্বা, বারোগের ঠিক আগে। এই স্টেশনের নাম বারোগ হবার পিছনে একটা ঘটনা আছে। ইঞ্জিনিয়ার কর্নেল বারোগ ওই লম্বা টানেল দুদিক দিয়ে খুঁড়তে শুরু করে মাঝে এসে আর মেলাতে না পারায় তাকে সেই প্রোজেক্ট থেকে বরখাস্ত করা হয়, সাথে প্রতীকি এক টাকা ফাইনও ধার্য হয়। এই হিউমিলিয়েশন না সইতে পেরে ওই টানেলেই সে সুইসাইড করে!! পরে অন্য ইঞ্জিনিয়ার সে কাজ শেষ করেছিল। তবে বারোগ সায়েব নাকি টানেলের মায়া কাটিয়ে পরপারে যেতে পারেনি আর এখনো ওখানেই ঘুরে বেড়ায় বলে গপ্পোগাছা শোনা যায়।

    বারোগে রেস্ট নিয়ে শিবালিক আবার চড়াই ভাংতে লাগলো। ইতি মধ্যে রামচন্দ্রজীর হোয়াটস্যাপ মেসেজ এলো যে তার বাড়িতে পুজোআচ্চা আছে, কি যজ্ঞ হচ্ছে, তার উপস্থিতি একান্তই প্রয়োজনীয়, সে আসতে পারবে না। তবে তার এক বন্ধু আসবে গাড়ি নিয়ে; আমরা যেন কোন চিন্তা না করি, সেই বন্ধুই আমাদের পুরো ট্রিপের সংগী হবে। আমরা এক্টু দমে গেলেও রামজীর ভরসায় এগিয়ে চল্লাম, সিমলা আসতেই বেজে গেলো সাড়ে এগারোটা। সিমলা স্টেশনটা ছোট্ট, ছিমছাম, শান্ত। ট্রেন এলেই তার যত হৈচৈ, হুড়হুড়ি। ভিড় পাতলা হলেই আবার চুপটি করে বসে পরের গাড়ির অপেক্ষা।

    হাঁচোড় পাঁচোড় করে লাগেজ টেনে অনেকটা চড়াই উঠে স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে তখন বেশ হাঁপাচ্ছি আমি। এদিকে অ-কে বেশ ফুরফুরে দেখাচ্ছে। বিয়ের কমাস আগে থেকে দুজনে একইসাথে জিম চালু করেছিলাম যাতে ছবিগুলো ফার্স্টক্লাস ওঠে, রোগা পাতলা দেখতে লাগে। সেই প্রয়োজন মিটতেই জিম-টিম ভোঁ-ভাঁ, আমি কুঁড়ের হদ্দ। ব্যায়াম নেই, সেরম হাঁটাহাঁটির বালাই নেই, জিমের ছায়াও মাড়াইনি তিনমাস হলো, সেই পাপ যাবে কোথায়! অ অবিশ্যি নিষ্ঠা সহকারে হাতের গুলি, পেটের অ্যাবস্‌ বের করার জন্যে কৃচ্ছ্বসাধন চালিয়ে গেছে। গুলি হাতের ভিতরে আর অ্যাবস্‌ পেটের কোটরে সেঁধিয়ে থাকলেও সেই শরীরচর্চার সুফলটা অ এবং তার অভাবের কুফলটা আমি মোক্ষম টের পাচ্ছি। রামচন্দ্রজী বন্ধুর নাম ফোননম্বর গাড়ির নম্বর সম্বলিত মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ফোন করা হল। 'হাঁ ম্যায় পার্কিং সে নিকলকে স্টেশন কে সামনে আ রহা হুঁ। আপ হাথ উঠাইয়ে।' হাত তুলতে গিয়ে দেখি তিন-চার জন ড্রাইভার হাত নাড়াচ্ছে! কি মুস্কিল। গিজগিজ করছে লোক। অনেকেই আগে থেকে গাড়ি বুক করে রেখেছে। কার ড্রাইভার যে কাকে হাত দেখাচ্ছে বোঝা মুস্কিল। তার ওপর তো 'গাড়ি চাহিয়ে?' ইত্যাদি বলতে বলতে অনেকে এগিয়ে আসছে। শেষে নম্বর দেখে আমাদের সাদা টাভেরা স্পট করে এগিয়ে যেতেই 'সির্ফ এক কাপল্‌ হো না আপ্‌?' বলে উঠলো হাসিমুখ ড্রাইভার। বুঝলাম রামুজী আমাদের এই বর্ণনাই দিয়েছে। সে জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে আমাদের নিয়ে পাড়ি দিল স্বপ্নের দেশে।
  • পু | 120.5.74.71 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ২০:০৬686888
  • ছবিগুলো এরম ছোট আসছে কেন বুঝতে পারছি না। লিঙ্ক খুল্লে ব্লারড্‌ দেখাচ্ছে। অথচ 12MP সোনির ক্যামেরায় তোলা। কেউ সমাধান জানলে বলুন প্লিজ।
  • পিকাসা | 126.50.59.180 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ২০:৩৭686890
  • পিকাসা ইজ দা সল্যুশন। পিকাসাওয়েব ডট গুগল ডট কম, অথবা ফোটোজ ডট গুগল ডট কম। এখানে তুলে এখান থেকে ইমেজ শেয়ার করুন। সঠিক সাইজে ছবি আসবে।
  • পোস্টইমেজ | 126.50.59.180 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ২০:৩৮686891
  • অথবা পোস্টইমেজ। ছবি আপলোডান, সেখান থেকে হাতে গরম লিং দিন।
  • pipi | 77.175.190.90 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:১৭686892
  • পুপেপিপিপাইঃ-)
    দিব্য হচ্ছে।
  • পুপে | 74.233.173.203 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:৫৫686893
  • পুপেপিপিপাই
    শিবের গাজন গাই
    এতাল বেতাল ঘুরে এসে
    গুরুর টই ভরাই।। :)))
  • pipi | 77.175.190.90 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:১৯686894
  • নাহ আজ অবধি টই ভরিয়েছি এমন গালি কেউ দিতে পারবে নাঃ-)
  • পুপে | 120.5.74.106 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:৪৫686895
  • Part- 5:

    রোগাপাতলা হাসিমুখ ফরসাপানা রাজপুত ড্রাইভার অশোক ঠাকুর, সে ট্রাকও চালাতে পারে, খুব স্কিলফুল নাকি! 'আপ ট্যানশন মত লো।'- তার ফেভারিট বুলি। বেশ আমুদে আড্ডাবাজ লোক। এ কথা সে কথায় ঘিঞ্জি বাজার টাইপের এক্টা এলাকায় এসে পড়লুম। এটিএম থেকে টাকা তুলতে হবে। সিমলায় বেশ গরম ছিল, তারি মধ্যে অশোক আর অন্য লোকাল পাবলিক সোয়েটার পরে ঘুরছে। ওটাই নাকি অভ্যেস! কাজ মিটিয়েই সিমলা ছাড়ব আমরা, এখানে বড় ভিড়ভাট্টা, এখানে বেড়ান হয়, হানিমুন হয়না; তাই শহর পেরিয়ে এন এইচ - ২২ ধরে ফেল্লাম, যাব সারাহান। খানিক যেতেই চোখের সামনে পাহাড় পাহাড় আর পাহাড়। কাছের গুলো সবুজ সবুজ, দূরের গুলো আবছা নীল নীল ধোঁয়া ধোঁয়া, গলে যাওয়া আইসক্রীম। কতদিন পর আবার হিমালয়কে দেখছি। মনে পড়ে গেল শেষবারের দেখা হওয়া, ৬-৭ বছর আগে নেপালে; ছবির মত সুন্দর,মা-বাপি-মাসি-মেসো-বোন...ফোন এল, ছেদ পড়লো ভাবনায়। 'বাবু, তোরা ঠিক আছিস তো? নেপালে বিরাট ভূমিকম্প হয়েছে! তোদের ওদিকে কিছু হয়নি তো?'- উৎকন্ঠায় ভরা মায়ের গলা। একের পর এক ফোন মেসেজ এল, সবাইকে আশ্বস্ত করলাম, এখানে সব নরমাল। আমরা তখনো জানি না নেপালে কি ঘটে গেছে, বাড়ির কম্পিউটারে 'নেপাল২০০৯' ফোল্ডার বন্দী সেই নেপাল আর নেই!

    রাস্তার কিছু ছবি -




    'দ্যাখ অ, কি সুন্দর! ছবি তুলেছিস?' তাকিয়ে দেখি ফুরফুরে অ বেশ কাহিল হয়ে সীটে এলিয়ে পড়েছে। তার নাকি মাথা ধরেছে, গা গুলচ্ছে। কিছু খেলে শরীর ঠিক লাগবে ভেবে সখ করে কেনা হলদিরামের বাদাম হালুয়ার প্যাকেট খুল্লাম। এটা কি? সবুজ রঙ-এর ভিজে ভিজে মতন দেখতে, তাতে কিছু বাদাম আটকান! খেয়ে গা গোলানো আরো বেড়ে গেল। অশোক থাকায় গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেও কিরম কিন্তু কিন্তু লাগছে। 'বোধহয় পাহাড়ি রাস্তার জন্যে এরম হচ্ছে।' - শুনে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। আগামী সাতদিন কেবলই চলা, পাহাড় বেয়ে, পাকদন্ডি বেয়ে, হিমালয়ের কোলে কোলে, উঁচু নিচু, হাঁসুলি বাঁক সব মজুত। পাহাড়ি রাস্তার খাঁজখোঁজেই আমার আনন্দ। মোটে সাত দিনে ঠেসে ঠেসে যা পোরা যায় তাই ভরেছি আমি। প্রথম দিনেই এই হাল হলে পরে কি হবে ভেবে বুক শুকিয়ে গেল আমার! বেচারা ভালমানুষটার কপালে আমার মত একটা উচ্চিংড়ে জুটেছে!!

    প্রায় আড়াইটে নাগাদ একটা ধাবায় গাড়ি দাঁড়াল। রাজমা-চাওয়াল পাওয়া যাচ্ছিল শুধু, তাই খেলাম সোনামুখ করে, ভালই লাগলো, সত্যি বলতে খাওয়া নিয়ে অ-পুর কোনো ঝঞ্ঝাট নেই । ঃ) । পেটে খাদ্যবস্তু পড়ে অ এক্টু বেটার ফিল করছে। আবার গাড়ি চল্লো। যাবার পথে নারকান্দা হাটু পীক দেখে নেবার প্ল্যান ছিল। কিন্তু অশোকের মতে আগে দূরের রাস্তাগুলো পেরিয়ে আসাই ভাল। এই সময়ে রাস্তা ঠিক আছে। যখন তখন কিন্নরের সাইডে ধ্বস নামে, রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে পুরো প্ল্যান চৌপাট। তাই সই। ফেরার সময় দেখে নেওয়া যাবে কুফরি ফাগু নারকান্দা। এম্নিতেও কুফ্রি তে এপ্রিলে গিয়ে লাভ নেই, ওখানে লোকজন যায় বরফে হুল্লোড় করতে, এখন বরফ একেবারে নেই সেখানে, খালি আছে ঘোড়া আর তার পটি।

    নারকান্দা পেরিয়ে আমরা এগোলাম। অনেকেই এখানে স্টে করে, খুব ভাল ভিউ পাওয়া যায় আশেপাশের, আর হিমাচল টুরিজমের হোটেলও আছে। চারপাশে সারি সারি পাইন, দেবদারু। চোখ জুড়নো গাঢ় সবুজ, উপরে আকাশের নীলিমা। সত্যি বলতে আমরা যারা সরস্বতী বন্দনা সেরে লক্ষ্মী উপার্জনের আশায় শহরে থিতু হয়েছি তারা এই নীল সবুজ, তাদের নানান শেড, মেশামিশি এসব দেখতেই পাইনা। তাই পাহাড়ে এসে মনের আরাম, চোখের আরাম।

    এরই মাঝে অশোকের ফোন এল। ফোনে কথা বলতে বলতেই সে স্টিয়ারিং এর মোচড়ে পাহাড়ের রাস্তায় ডান বাঁ করতে করতে চলেছে। খানিক পর বেশ উত্তেজিত হয়ে সে গাড়ি সাইড করে ফোনে বকতে বকতে চলে গেল কোথায়। আমরা সেই ফাঁকে গাড়ি থেকে নেমে কোমর হাত পা ছাড়ালুম, ছবি তুল্লুম। হঠাৎ কাঁচুমাচু মুখের অশোককে দেখা গেল - 'বিজলি বোর্ডমে হামকো জব লাগা হ্যায়। কালহি যানা হ্যায়। মুঝে লটনা হ্যায়। পর আপ বিল্‌কুল ট্যানশন মত লো।' অ্যাঁ!!!!!!!

    যেখানে ফোনের জন্য দাঁড়ান হয়েছিল -



    অশোক নাকি অন্য ড্রাইভারের ব্যবস্থা দেখছে, সিমলা থেকে যে পরদিন এসে পৌঁছবে। তাই আমরা বেশীদূর এগবোনা। বরং কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে হাটু পীক দেখে নারকান্দায় থেকে যাব। আমাদের প্ল্যান যা ছিল তা এদিক সেদিক হবে বটে, কিন্তু একটা লোকের স্টেডি জবের সম্ভাবনা বলে কথা! কনসিডার করতেই হবে। এন এইচ ২২ ছেড়ে হাটু পীকের রাস্তা ধরলো গাড়ি। সরু খাড়াই রাস্তা উঠেছে, পাশে পাইন বন, উল্টোদিক থেকে গাড়ি এলে পাশ দেওয়া জায়গাও নেই বল্লেই চলে। মাঝে মাঝে বরফগলা জলের নালা টাইপের দেখা যাচ্ছে পাশে পাশে। আর কিছু পর দেখি চাপড়া চাপড়া বরফ জমে রয়েছে মাঝে মাঝে। গোটা সিমলার মধ্যে নাকি নারকান্দার বরফই সবথেকে দেরি করে গলে। প্রায় ৭ কিলোমিটার চলার পর গাড়ি উঠে পড়ল হাটুপীকে। হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে। গায়ে গরম জামা দিইনি তখনো। বেশ শীত শীত লাগছে। ৩৬০ ডিগ্রী হিমালয়ের ভিউ - 'তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে'।

    হাটু পীক, হাটুমাতা মন্দির আর আশেপাশের সিনারি-



    দূরে মেঘ ঘনাচ্ছে -


    বরফ পেয়ে অ-এর খুব ফুর্তি -


    ঘুরে এসে গাড়িতে উঠছি, অশোক বললো যে ড্রাইভার পাওয়া মুস্কিল হচ্ছে! আজ সে রামপুর অব্ধি এগিয়ে যাবে। তারপর যাহোক একটা ব্যবস্থা হবে। হাইওয়েতে ঢুকে হু হু করে গাড়ি ছোটাল সে। বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নেমেছে এরি মধ্যে। আর আমাদের পথের নতুন সঙ্গী হয়েছে সাতলুজ নদী। সাতলুজকে কি আমরা চিনি? চিনি বইকি। বইয়ের পাতায় পড়া পাঞ্জাবের পাঁচ নদীর এক নদী শতদ্রুরই তো আদরের ডাকনাম সাতলুজ। দিনের আলো পড়ে এল, আকাশ মেঘে ভরা। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে একটা রোডসাইড হোটেলে ঢুকে পড়লাম সেদিনের মত। খাওয়া দাওয়া ঘুম। তখনো জানিনা আমাদের ড্রিম ট্রিপের বাকি দিনগুলো আমরা কার সাথে কাটাবো,অশোক নাকি আর কেউ নাকি কেউই না!

    ফুটনোটঃ
    ড্রাইভারদের নম্বর। ভিঙ্কালের খোঁজ পেয়েছিলাম কে শিল বাবুর ব্লগে। পার ডে ২৫০০ টাকার রফা হয়েছিল আমাদের সাথে রামচন্দ্রজির।

    ভিঙ্কাল - 9459262520
    রামচন্দ্র - ৯৪১৮০২৭৫২৮
    অশোক - ৯৮১৬৬৩৬৮৬৪
  • তাপস | 190.215.84.171 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:২৬686896
  • কে শিল বাবুর ব্লগের লিংক পাওয়া সম্ভব?
  • তাপস | 122.79.35.183 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:৫৭686898
  • থ্যাংকিউ। থ্যাংকিউ। আর ইয়ে, একটু হাত চালানো সম্ভব?
  • পুপে | 120.5.74.215 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ২০:৩৫686899
  • Part -6:

    সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে হোটেলের বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। ঠান্ডা হাওয়া ঝাপ্টা মেরে গুডমর্নিং জানিয়ে গেল, কানে কানে বলে গেল -'আমাদের রাজ্যে স্বাগত।' তাদের রাজ্যে তখন ঝলমলে রোদ্দুর উঠেছে, পালিশ করে দিচ্ছে সামনের পাহাড়ের গা, বরফগলা ঝরনা আগেই তাকে চান করিয়ে দিয়েছে, আর সাতলুজ ভাল্লো করে পা রগড়ে ধুইয়ে দিয়েছে, কিন্তু ঝপ করে গরম পড়ে যাওয়ায় মুখে স্নো পাউডার আর তার মাখা হয়নি। তার সেই দুঃখ ভুলিয়েছে নতুন কচি ঘাসেরা তাকে সবুজ জামা পরিয়ে। সাজটি তার বেশ খোলতাই হয়েছে। আমি তো দু চোখ ভরে দেখলামই, কম্বলের ওমের বাহুডোর থেকে কুট্টি বরটাকে উদ্ধার করে তাকেও দেখালাম, এবার বাকি সবাই কেও দেখিয়ে দিই। :)



    রেডিসেডি হয়ে দুরুদুরু বুকে অশোকের খোঁজে গেলাম। আজকের ঘোরার কি হবে জানি না।
    অশোক - গুড মরনিং জী।
    পু - আপ ওয়াপস্‌ নহি গ্যায়ে?
    অশোক - নহি জী, ফির কভি। আভি মেরে সাথ হিমাচল ঘুম লিজিয়ে।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে অন্য ড্রাইভার পাওয়া তো যায়নিই এই শর্ট নোটিসে। উপরন্তু চাকরির ব্যাপার টাও বেশ গোলমেলে, কনট্র্যাক্ট বেসিসে ড্রাইভারির কাজ, কোন কাগজে লেখাপত্তরের ব্যাপার নেই, পাকাপোক্ত কিছু নয়। অশোক নিজেই বলছে যে পরে তার ওপরওয়ালার বদলি ঘটলে যে কোন মুহুর্তে সেই চাকরি নট হয়ে যেতে পারে। এই চাকরির জন্য প্যাসেঞ্জারকে মাঝপথে ছেড়ে গেলে অন্য ড্রাইভাররা পরে তাকে ট্রিপ দেবেনা। গুডউইল বেশ গুরুত্বপূর্ণ তার এই কাজে। তাই সে যায়নি। আমিও মনে মনে নিশ্চিন্ত হলাম। এই হাসিখুশি পাহাড়ি সরল যুবকের সাথে প্রথম দিনেই আমাদের বেশ জমে গেছিল।

    আজ তারিখ ২৬শে এপ্রিল। সাতটা বাজে, গায়ে জ্যাকেট চাপাতে হয়েছে। পরে চড়চড়ে রোদ উঠলে খুলে ফেলা যাবে। হুশ করে গাড়ি ছেড়ে দিল। একটু পরে এসে গেল জীওরি। এখান থেকে ওপরে উঠে গেছে সারাহানের রাস্তা। কিন্তু আমরা এগিয়ে গেলাম, প্ল্যান বদলেছি আমরা, সারাহান দেখব ফিরতি পথে, আজ গন্তব্য কল্পা। আরো খানিক যেতেই 'কিন্নর দেবভূমিতে স্বাগত' জানাল একটা তোরণদ্বার। আমরা কিন্নর জেলায় ঢুকে পড়েছি। কিন্নরের ম্যাপটা রইল এখানে।



    মাঝখান দিয়ে যে মোটা ফিকে হলুদ লাইন টা গেছে ওটাই কিন্নর জেলার লাইফলাইন, মূল সংযোগরক্ষাকারী রাস্তা- NH22। রাস্তাটা একদম সাতলুজের সাথে হাত ধরাধরি করে চলেছে। এই রাস্তা অম্বালা থেকে শুরু হয়ে গেছে সেই খাব পর্যন্ত, ইন্দো তিব্বত বর্ডারের কাছাকাছি। তারপর সে নামগিয়াল হয়ে শিপকি লাতে মিশেছে, শুরু হয়ে গেছে চীনাদের এলাকা। এই শিপকি লা হয়েই 'হাতি নদী' (তিব্বতি নাম - Langqên Zangbo) নাম পাল্টে সাতলুজ বেশে ভারতে ঢুকেছে খাবের কাছে। সেখান থেকে আরো খানিক উত্তরদিকে উজিয়ে গেলে কিন্নর জেলা শেষ, লাহল-স্পিতি শুরু। NH-22 খুব খতরনাক রাস্তা, জায়গায় জায়গায় ভীষন ভাঙ্গাচোরা তো বটেই, উপরন্তু যখন তখন ধ্বস নামে, বর্ষাকালে আরোই; এমনকি হিস্ট্রি চ্যানেলে 'ডেডলিয়েস্ট রোড'-এর একটা সিরিজে স্থান হয়েছিল এনার। এনারি পোশাকি নাম হিন্দুস্থান-টিবেট হাইওয়ে।

    রাস্তার ছবি-


    ওইযে মাঝখানে ধ্বস নেমেছিল -






    কলকল ছলছল করে সাতলুজ চলেছে, সবুজ বাদামি পাহাড়ের গায়ে গায়ে আমরা চলেছি। রাস্তায় একটা ছোট্ট ঝরনা পড়লো। কিঞ্চিত ফটোস্যুট হয়ে গেল।




    কিন্নর ঢুকতে কিছুদূর এগোতেই একটা মন্দির পড়ে, তারান্ডা মাতার মন্দির, দেবীর মূর্তি দেখে কালিঠাকুরের কথা মনে হয়। সব গাড়িই এখানে দাঁড়ায় পরের রাস্তাটুকু ভালয় ভালয় পেরিয়ে যাবার প্রার্থনা সেরে নেয়।



    খিদে পেয়ে গেছে জোর। একটা রোডসাইড দোকানে পেটপুরে গরমাগরম ঘী মাখান আলু পরাঠা খেলাম, বেশ ভালই বানিয়েছিল। একপেট খেয়ে লাফাতে লাফাতে চলা গাড়ির পেটে বসে রয়েছি, রাস্তা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, নেহাত আমার বমিটমির ধাত নেই, নইলে অনেক আগেই---! অ-এর নাকি পিঠ কনকনিয়ে কোমর ঝনঝনিয়ে যাচ্ছিল মাঝের সীটে বসে, তাই সে উঠে গিয়ে অশোকের পাশের সীটে গিয়ে বসেছে। আমি মাঝে একা ঃ( । অবশ্য তাতে একটা সুবিধে হয়েছে, যখন যেদিকে ভাল জিনিস দেখতে পাচ্ছি, সেদিকে সরে গিয়ে তার ছবি তুলছি। পেরিয়ে গেলাম নাথপা - ঝাক্‌রি ড্যাম, সাতলুজের বুকে বিশাল জলবিদ্যুত্‌ প্রকল্প, জেপি কোম্পানির। এখানে আবার কিছুটা রাস্তা ভাল। জেপি তাদের লোকদের জন্য স্কুল হস্পিটাল কোয়ার্টার সব বানিয়েছে, এলাহি কান্ড।


    ওয়াংটু পেরোল, এইখানে একটা পাওয়ার হাউস আছে। আমরা ব্রিজ পেরিয়ে টুক করে নদীর অপর পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। টাপরি পেরিয়ে এগিয়ে দেখা গেল রাস্তা বন্ধ। সেখানে বোল্ডার গড়িয়ে পড়েছে নাকি রাস্তার কাজ হচ্ছে। তাই হাইওয়ে ছেড়ে গাড়ি উঠবে পাশের পাহাড়ে, সেখান দিয়ে ২০ কিলোমিটার ঘুরে ঘুরে আবার আমরা মেন রাস্তায় পড়বো। পাহাড়ের গা দিয়ে খানিক উঠেছি; সেই কিন্নরে ঢোকা অবধি যেসব সাদা মুকুট পড়া পাহাড়ের দল বারবার খালি টুকি দিয়ে এদিক ওদিক পালাচ্ছে তারা এবার পালাবে কোথায়? গাড়ি একটা বাঁক ঘুরতেই আমরা তাদের ধপ্পা দিয়ে দিলাম। অসামান্য নাকি ফাটাফাটি নাকি স্পেলবাউন্ড! জটায়ুর 'অয়ি কাঞ্চনজঙ্ঘে' টাইপ কোন কবিতা আবৃত্তি করলে ঠিকঠাক 'ভাবের স্ফূরন' ঘটাতে পারতাম। কিন্তু আমাদের মত অপটু লোকজনের কবিতার গুঁতো খেয়ে অশোক যদি খাদে নিয়ে ফেলে গাড়ি! সেই ভয়েই আমরা নিরস্ত হয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ ছবি তুলেই ক্ষান্ত দিলাম।







    এই রাস্তায় ঠিক আমাদের সামনে সামনে আই টি বী পি (ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশ) এর একটা ট্রাক যাচ্ছিল, চন্ডিগড়ের নম্বর, ট্রাক ড্রাইভার বেচারি বোধ হয় নতুন ড্রাইভার, প্রতিটা বাঁকে সে প্রায় খাদের শেষ সীমায় চলে যায়, অন্তিম মুহুর্তে আবার গাড়ি ব্যাকগিয়ারে পিছিয়ে এনে কোনমতে টার্ন কমপ্লিট করে আবার খুব ধীরে ধীরে চলে। পিছনে গাড়ির লাইন পড়ে গেছে, তারা ধুলোয় ধুলো হচ্ছে। অশোক অনবরত সেই অচেনা ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে চোখা চোখা বাক্যবান নিক্ষেপ করে চলেছে। এর ওপর আবার উল্টোদিক থেকেও একটি ট্রাক এসে হাজির হল, আর যায় কোথায়, আগের ট্রাক ব্রেক লাগিয়ে সেখানেই থিতু, পুরো জটলা। এই সব ক্ষেত্রে যেমন হয়, বেশ কিছু বাঘা বাঘা লোকজন আসরে নেমে, 'তুমি এদিক এস, তুমি সেদিক ঘেঁস' করে একটা প্যাসেজ বের করল। পুলিস-ট্রাকের পিছনের গাড়িদের আগে যেতে দিল, আমরা বেঁচে গেলাম, তারপরে অবিশ্যি কি হয়েছে সেই চন্ডিগড়ের ট্রাকের তা আমরা আর জানিনা।

    রাস্তার আরেকটা ছবি -


    মেন রাস্তায় উঠে যেতে যেতে করছাম এসে পড়ল। এখানে জেপিরা আরেকটা পাওয়ার প্ল্যান্ট বানিয়েছে, করছাম-ওয়াংটু প্ল্যান্ট, ১০০০ মেগাওয়াটের। করছামে দুষ্টু ছোটবোনের মত বাস্পা নদী এসে বড়দি সাতলুজের কোলে উঠে পড়েছে। হাইওয়ে ছেড়ে সাতলুজ পেরিয়ে যদি আমরা বাস্পা কোথেকে আসছে তা খুঁজতে বেরই তাহলেই পৌঁছে যাব ছবির মত সুন্দর আর মিস্টি মিস্টি নামওয়ালা সাংলা, রকছাম, চিটকুল এইসব গ্রামে। কিন্তু বাস্পা যতই লোভ দেখাক, আমরা আগে তার বড়দির বাড়ি ঘুরে এসে তবেই তার বাড়ি যাব। তাই ঠোঁটফোলান বাস্পাকে ছেড়ে আমরা এগিয়ে যাব সামনের ভাঙ্গা ভাঙ্গা পথে।



    NH-22 একবার নদীর এপার আবার ওপার এই করতে করতে চলেছে, কত ব্রিজে যে চড়া হলো, আমার ব্রিজে চাপতে খুউব ভালোলাগে, শনশন হাওয়া গাড়ির একদিক দিয়ে ঢুকে আরেকদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়, ডাইনে দেখলে একরকম রূপ, আবার বাঁয়ে দেখলে একরকম। ২০০০ সালের বন্যায় এইসব ব্রিজের অনেকই ভেসে যায়, সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছিল খাব টাপরি করছাম এসব অঞ্চলেই। কোথায় একটা অসম্পূর্ণ ব্রীজ দেখিয়ে অশোক বলেছিল যে ওটা তৈরী করার সময় আচমকা হড়কা বানে সবাই ভেসে যায়, ইঞ্জিনিয়ার, কুলি-মজুর সবাই, তাদের স্মৃতিতে ওটা নাকি অমনই রেখে দেওয়া হয়েছে। পাশ দিয়ে আরেক্টা নতুন ব্রীজ বানিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই জায়গা টা আর মনে পড়েনা ( এইজন্যেই ঘুরে আসার সাথে সাথে লিখে ফেলা উচিত)!



    কিন্নর ঢোকার পর থেকে সবুজের সমারোহ ব্যাপারটা একটু কমে গেছে। সিমলা জেলায় যেমন পাইন ফার দেবদারুরা মেলা বসিয়েছে, এখানে তেমন একেবারেই নয়। বাদামি ল্যান্ডস্কেপ, ছাড়া ছাড়া সবুজ। তবে এটা গরমের শুরুতে, বর্ষা পেরোলে অন্য রূপ। তখন আবার চারদিক লাল-সবুজ আপেলে ভরে যায় নাকি! এসে গেলো শংটং ব্রিজ। ব্রিজ পেরিয়ে ওপারে উঠে আরো কিছুটা এগিয়ে বাঁদিকে ঢুকে পড়লাম রেকং পেও এর রাস্তায়, প্রায় দুপুর একটা তখন। রেকং পেও কিন্নরের হেডকোয়ার্টার। এইখান থেকে ইনার লাইন পারমিট দেয়, তবে সে বোধহয় বিদেশীদের লাগে। আমরা কিব্বার অবদি গেছি, কোন পারমিট ছাড়াই। এই জায়গাটা বেশ ব্যস্তবাগীশ,বাসস্টান্ড, মার্কেট, অফিস , দোকানপাট; এখান থেকে আরো বেশ কিছুটা ওপরে উঠে আমরা পৌঁছে গেলাম কল্পা। অশোক এক জায়গায় গাড়ি রাখলো। সামনে খানিক হেঁটে গিয়ে একটা মনাস্টারি আছে, সেটা দেখে এসে আমরা হোটেলে চেকইন করবো।

    পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম, সরু মতন গলি রাস্তা, দুপাশে ছোট ছোট কাঠের বাড়ি, লোকজন খুব কম, খুবই। কেন কে জানে। কারণটা মঠে পৌঁছে মালুম হলো। কি একটা মিটিং হচ্ছে, থিক্‌থিকে ভিড় মনাস্টারিতে, দরজা পর্যন্ত লোক বসে আছে, একজন একটু গম্ভীর গলায় বক্তব্য পেশ করছে, তবে বাইরে থেকে তাকে দেখা যাচ্ছেনা। ঢুকবো কি ঢুকবোনা দোনামোনা করতে করতে ঢুকেই পড়লুম। ছোট্ট মনাস্টারি। লাল নীল হলুদ সবুজ কাপড়ের টুকরো লাগান দড়ি টাঙ্গান আছে, পতপত করে উড়ছে সেটা,অনেক অনেক প্রেয়ার হুইল। এরই সাথে একটা কাঠের কারুকাজ করা ঘর ছিল,সামনে ঘন্টা টাঙ্গানো, মন্দির হবে হয়ত, আমরা ঢুকিনি সেটায়। এই কল্পার লোকেরা নাকি একিসাথে হিন্দু আর বৌদ্ধ ধর্ম মেনে চলে। মার মার কাট কাট করা শহরের লোকজন হিমালয়ের গ্রামগুলোতে এসে এই স্থৈর্যটুকু, সরলতাটুকু কেন শিখে নিয়ে যায়না!





    মঠের ভিতরটা অন্ধকার মত, ভিতরে বুদ্ধ আসীন,তাঁকে চকলেট,বিস্কুট এইসব খেতে দিয়েছে। দু জন থুত্থুরি বুড়ি সেখানে বসে বসে গপ্পো করছিল, মুখে হাজার হাজার ভাঁজ তাদের, গুনতে বসলে বুঝি দিন ফুরিয়ে যাবে। তাদের গপ্পো, মিটিং-এর গপ্পো, এই যে অ-পু বেড়াতে এসছে এই মঠটায় তার গপ্পো সব বসে বসে দেখে চলেছে, শুনে চলেছে এক সাদা মুকুট পরা রাজা। মঠের পিছনে যদ্দুর চোখ যায় শুধু তারই রাজ্যপাট। সে এমনি ফরসা যে গা দিয়ে রোদ্দুর অবধি পিছলে যাচ্ছে, এই অলস দুপুরে একটু রোদে গা সেঁকে নিচ্ছে সে, খানিক পরে সুয্যি পাটে চল্লে অন্যরকম সাজ নিয়ে হাজির হতে হবে না যেন! রাজার নামটি হলো কিন্নর কৈলাশ।

  • বাঃ | 126.50.59.180 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ২০:৪৪686901
  • কল্পা সাংলা চিটকুলের রাস্তা খুব সুন্দর। 7009 আর 7010 নম্বর ছবিদুটো তো খুবই ফেমাস, ঐ রুটের প্রত্যেক ট্র্যাভেলার এই জায়গাটার ছবি তোলে।

    হয় তো পরের বছর ...
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন