এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আরেকটা বেড়াতে যাবার গপ্পো

    পু
    অন্যান্য | ০২ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৩৮০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পুপে | 120.5.74.2 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:২২686821
  • Part-12

    খুবসে ডাল পোস্ত দিয়ে মেখে সপাসপ ভাত খাওয়া হল, এই হোটেলটাও বাঙ্গালি হোটেল। খাওয়া দাওয়া রুম ব্যবস্থাপনা সবই ঠিক, কিন্তু আশেপাশের কাঠের বাড়ি গুলোর মাঝে আখাম্বা এই হোটেলগুলো বড়ই বেমানান, যেমন তেমন করে বিল্ডিং তুলেছে; পরিবেশের সাথে সাযুজ্য রেখে আরেকটু যত্ন নিয়ে কি তৈরী করা যেতো না! পাশেই এমন আরেকটি তৈরী হচ্ছে; শিক বেরিয়ে রয়েছে ঢালাইয়ের। এবার সরু পায়ে চলা রাস্তা দিয়ে এগোলুম, প্রায় দুই-তিন কিলোমিটার গিয়ে আইটিবিপি ক্যাম্প আছে, সেখান থেকে নাকি মনোরম নানা দৃশের সাক্ষী হওয়া যায়। রাস্তাটা ভীষণ নোংরা, খচ্চরের দল চলেছে অহরহ, পিঠে তাদের ইয়া ইয়া বস্তা, সেই ওজনের ভারেই হোক কি প্রকৃতির ডাকেই হোক, তারা গোটা রাস্তা আলপনা দিতে দিতে গেছে। একে তো এইসব বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে চলতে হচ্ছে, তার ওপর আমি পরেছি সাত-আট হাতি ঘেরের একটা আনারকলি! আমাকে পাগল ভাববেন না। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে লোকে এমন করতে বাধ্য হয়। বিয়ের আগে একদিন প্রায় তিন ঘন্টা ধরে নিউমার্কেট চষে এই আনারকলিটি কেনা হয়েছিল, নিজের দুর্ভাগ্যের ফেরেই অ-ও সেই শপিং ট্রিপের সঙ্গী ছিল। কিন্তু বিয়ের পর তিন মাস কেটে গেলেও সে একটি বারও গায়ে চড়েনি, বা বলা যায় ঐ পাঁচ কেজির পোশাকের আলমারির বাইরে বেরোনোর মত যুতসই কোন উপলক্ষ পাওয়া যায়নি। অ্যাদ্দিন ধরে দিনের আলো না দেখা সেই আনারকলির দুঃখ ভোলাতে তাকে হিমাচল এনেছি সাথে করে, হানিমুন বলে কথা! এসে অবদি পাহাড়ি রাস্তা, এক এক দিনে অনেক জার্নি ইত্যাদির অজুহাতে তাকে গায়ে তোলা হয়নি, সুযোগ পাওয়া গেছে আজই, স্পিলো থেকে চিটকুল কম জার্নি , তাই সকালেই বেরোনোর সময় তাকে পরে নিয়েছিলুম। যদিও আমি তাকে পরেছি না সে আমাকে পরেছে জানি না; কিন্তু এই ক্যাম্প ট্রেইলে চলতে গিয়ে বেজায় সমস্যায় পড়ছি, ঐ বিশাল ঘেরকে আগলে আগলে হাঁটা, যাতে কোথাও জড়িয়ে সে ফেঁসে না যায় (বলাই বাহুল্য ভালোই দক্ষিণা দিতে হয়েছিল এনার জন্য), যাতে তার চকচকে লাল গাত্র ধূলায় মলিন না হয়ে যায় ইত্যাদি। এই ড্রেসকে যথাযত সম্মান প্রদানের জন্য পায়ে পড়েছি হিল জুতো। যদিও বিষ্ঠাপূর্ণ রাস্তা টা মোটামুটি সমতল, তবুও নুড়ি পাথর আছেই, স্বাভাবিক। কিছুক্ষণ পরেই এভাবে চলাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠলো। অ দেখি তখন তার ব্যাকপ্যাক থেকে আমার স্পোর্টস শ্যু টা বের করছে! দুর্গতির সম্ভাবনা আঁচ করে আগেই সে ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিল। লাল আনারকলির সাথে সাদা কালো জুতো পরে বিটকেল ভাবে সেজে এগোলুম। দেখি একটা দল ফিরছে, তারাও ঐ আইটিবিপি ক্যাম্প দেখতেই গেছিল। একজন বয়স্ক মহিলা কোনমতে আসছেন, হাঁটু তাঁর আর সাথ দিচ্ছে না, নিজেই যেচে বল্লেন - ' মত যাও বেটা, কুছ নাহি হ্যায়, সেম ভিউ বিলকুল, এক ঘন্টা চলকে গ্যায়ে!' হেঁ হেঁ করে আরেকটু এগোনো গেল, এবার একজন বছর চল্লিশের ভদ্রলোক, তাঁরও একই বক্তব্য, এখন যেমন দেখতে পাচ্ছি, এদিককার পাহাড়ের গাছপালা, বয়ে চলা বাস্পা নদী, আর ওপারের পাহাড়ে বরফ, পাইন গাছ এসব ছাড়া ঐ ক্যাম্প থেকে কিছু দেখার নেই, তবে স্পেশাল পারমিট করানো থাকলে ঐ ক্যাম্প পেরিয়ে আরো কিছুদূর যেতে দেবে, সেইখানেই নাকি আসল দৃশ্য। এবার আমরাও একটু দমে গেলাম, এক ঘন্টা এই জবড়জং পরে অদ্দুর হাঁটা, তার ওপর এখন বেশ চড়চড়ে রোদ উঠেছে! এইসব সাত পাঁচ ভাবছি, তারপর দেখি একটা বারো-তেরো বছরের ছেলে আসছে, তাকেই জিজ্ঞেস করবো ভাবলাম, এ-ই ঠিকঠাক আপডেট দেবে। সে-ও একই কথা বল্ল, বরফ পায়নি বলে তার ভারি দুঃখ, সব বরফ নদী পেরিয়ে, এপাশে কিছুই নেই! এবার আমরা হাল ছেড়ে দিলাম। পাশ দিয়ে পাথর কেটে কেটে বীরবিক্রমে বয়ে চলেছে বাস্পা, চলো তার ধারে গিয়েই কিছুক্ষন বসা যাক।




    চিটকুল বাস্পা নদীর সাথে প্রায় এক লেভেলে, একটু নেমে এলেই তার তীর ছোঁয়া যায়। খানিকটা পথ ফিরে এসে একটা ইস্কুলের পাশ দিয়ে নেমে গিয়ে নুড়ি পাথরের ওপর পা রেখে রেখে একদম ধারে পৌঁছে গেলাম। যে সিন কল্পদৃশ্যে ভেসে বেড়াতো বলে এই পাহাড়ে হানিমুনের প্ল্যানের অবতারণা, ঠিক তেমনটি না হলেও তার কাছাকাছি পেলাম অবশেষে, ভারতের আখরি কোণায়। নদী আছে, তার চারপাশে পাহাড় আছে, পাইনবন আছে, শুধু সবুজ ঘাসের গালচে নেই, তার বদলে আছে বাস্পার পালিশ করে দেওয়া রং বেরঙ্গের নুড়ির বিছানা, ওমনি চকচকে পালিশ মেশিনেও হয়না। শোঁ শোঁ করে কনকনে হাওয়া দিচ্ছে, সোয়েটার খুলে কোনমতে পোজ দিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। জলে হাত দিতেই চড়াং করে কারেন্ট খেলাম, বরফগলা ঠান্ডা জলে আঙ্গুল জমে যাবার যোগাড়; জলে তেমনি স্রোত। অ মনখারাপ করছে, আমরা যেখানেই যাই, ঠিক উল্টোদিকের পাহাড়ে বরফ থাকে, সেদিকে কখনোই থাকে না, নেহাৎ জলটা এত ঠান্ডা, নইলে সে নদী পেরিয়েই ওপাড়ে গিয়ে বরফ ঘেঁটে আসতো ইত্যাদি; এই বরফপ্রীতির চক্করেই কিব্বার ঘোরা হয়নি। বরফে ঢাকা পাহাড়ের আলাদা আকর্ষণ আছে, সে রূপের মাদকতাই আলাদা, সবই ঠিক, কিন্তু সে তো সবই শ্বেতশুভ্র; এই যে আমরা পাহাড়ের গায়ে গায়ে হরেক রঙ্গের রঙ্গোলি দেখে এলাম স্পিতি ভ্যালিতে, তা কি বরফ ঢাকা থাকলে দেখা হতো? নদীর ধারের নুড়ি পাথর ডিঙ্গিয়ে ডিঙ্গিয়ে চলেছি, হঠাৎ দেখি দূরে একটা ব্রিজ, ওপারে যাবার! অ এক্সাইটেড খুব-'চল চল, ওখান দিয়ে যাওয়া যাবে।' আমি সেই উত্তেজনায় বাস্পার ঠান্ডা জল ঢেলে দিয়ে বললাম যে আগে খোঁজ নিই, ব্রীজটা ভাঙ্গাচোরা, পরিত্যক্ত ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে পারে। কাছেই দুজন চিটকুলী বস্তায় পাথর ভরছিলেন। তাঁদের থেকে জানা গেল যে কোন চাপ নেই, ঐ ব্রীজ এঁরা ব্যবহার করেন, এগিয়ে গিয়ে একটা ক্ষেত পড়বে, তারপর একটু চড়াই উঠলেই ব্রিজটা। সেইমত এগিয়ে গেলাম, কিন্তু সেই রাস্তা বলো, কি ক্ষেত, যাচ্ছেতাই রকমের নোংরা। কোনমতে পেরিয়ে সেই চড়াইয়ের সামনে এসে দেখা গেল আমার পক্ষে এই জামা পরে কোনমতেই ওঠা সম্ভব নয়। এদিকে বিকেল হয়ে গেছে, একটু বাদেই ঝপ করে অন্ধকার নেমে যাবে। তাই মিশন 'ব্রিজ পেরোনো' সেদিনকার মত মুলতুবি রেখে আমরা ফিরতে লাগলাম। তখন ইস্কুল ছুটি হয়েছে, দল বেঁধে সেই ইস্কুলের ছেলেপুলের দলও ফিরছে তখন, কচিকাঁচাগুলোর গলায় ছুটির ঘন্টা পড়ার চাপা উচ্ছ্বাস।

    সুর্য ডুবে যেতেই ঠান্ডার কামড়টা টের পাওয়া গেল, এখানেও ভীষন ঠান্ডা, হোটেলের পিছনে বরফের চাঙড় জমে থাকতে সকালেও দেখেছি। বিছানাটায় যেন কেউ জল ঢেলে রেখেছে। সোয়েটার পরে তার ওপর কম্বল চাপিয়ে গা গরম করতে হচ্ছে। হোটেলের কর্মচারীরাও সব বাঙ্গালি, ওরা মাসখানেক আগে এসে হোটেল খুলেছে, এবারে নাকি অন্যান্য বারের থেকে অনেক বেশি বরফ পড়েছে। ডিনারের পার্ট চুকিয়ে লেপের তলায় সেঁধিয়ে যেতেই ঘুমে তলিয়ে গেছি। মাঝরাতে একবার ঘুম ভেঙ্গেছে, বিছানার পাশেই বড় জানলা, যার পর্দা সরানো ছিল, সেখান দিয়ে দেখি জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। সেদিন বুঝি পূর্ণিমা, মিহি কাঁচের গুঁড়োর মত চাঁদের আলো বরফের গায়ে ঠিকরে ঘরের জানলা পেরিয়ে আঁকিবুকি কাটছে। অপার্থিব! অ-কেও ঠেলে জাগিয়ে তুলে সেই মুহুর্তের শরিক করলাম, এমনটি কি আর দেখা যায় রোজ!

    ঠান্ডা জড়ানো গাঢ় ঘুমের চোটে সকালের প্রথম অ্যালার্মটা আমরা মিস করেছি, নইলে ঠিক ছিল সকালবেলা আমরা ক্যাম্প অবধি ওয়াকে যাব। দুপুরবেলা চড়া রোদের থেকে ভোরের মিঠে আবছা আলো নিশ্চই অনেক তফাত করে দিত ঐ ট্রেলটার। কিন্তু এখন বেশ দেরি হয়ে গেছে। ঝটপট রেডি হয়ে নিলাম আমরা ব্রিজ পেরোতে যাবো বলে। আগেরদিনের চেনা রাস্তা পেরিয়ে এসে সেই চড়াইয়ের সামনে এলাম। সামান্য কসরত করে ব্রিজে উঠেও পড়লাম, এবার খালি ওপাড়ে বরফে গিয়ে পড়ার অপেক্ষা। ব্রিজের ওদিকে মাটিতে বেশ মোটা বরফের আস্তরণ, গাছের পাতা তেও ঝিরি ঝিরি বরফ জমে। লোকজনের জুতোর ছাপ দেখলাম, আমরা ছাড়াও আরো লোকজন বরফের আশায় এদিকে এসেছিল। তবে এখন এক্কেবারে ফাঁকা সবদিক, কেউ কোত্থাও নেই। বরফ ভেঙ্গে ভেঙ্গে অ উঠতে লাগলো, একবার ভুল জায়গায় স্টেপ ফেলে থপাস করে পিছলে পড়লো ব্যাটা!ঠিক হয়েছে, যেমন খালি বরফ বরফ করে নাচানাচি। ঘুরেফিরে এবার ফিরতি পথ, এবার আর নিচে না নেমে অন্য একটা রাস্তা দিয়ে ঘুরে ঘুরে গিয়ে পৌঁছলাম হোটেলের কাছে। গ্রামটা একটু হেঁটে আসা যাক এবার। ছোট ছোট কাঠের বাড়ি স্লেটের চালা, বেশীরভাগ লোকই কাজে ব্যস্ত, মাঝখান দিয়ে ছোট ছোট নালা কাটা আছে, সেই নালাগুলো আবার গিয়ে পড়েছে বাঁধানো একটা বড় নালায়। প্রায় সব বাড়িতেই কাঠ ডাঁই করে রাখা, আগুন জ্বালানোর কাজে দেয়; বেশ ঘন লোমে ঢাকা ছাগল, খচ্চর বাঁধা রয়েছে উঠোনে। কিছুদূর এগিয়ে মন্দিরটা দেখতে পেলাম, চিটকুলের মাঠি দেবীর মন্দির; কাঠ আর পাথরে বানানো, সুন্দর কারুকার্য করা, মন্দির থেকে দূরের পাহাড়ের ছবি যেন একটা পিকচার পোস্টকার্ড; তবে বিগ্রহ দেখতে পেলামনা, তালা মারা ছিল। মন্দির গ্রাম সব ঘুরে হোটেলের পথে পা বাড়ালাম। এবার ফেরার পালা, আজ আমরা ফিরতি পথে দেখে নেবো সাংলার ট্রাউট ফার্ম, বেরিং নাগের মন্দির আর কামরু ফোর্ট, তারপর এগিয়ে যাবো সারাহানের দিকে। অনেকে সাংলায় থাকে, ডে ট্রিপ করে চিটকুলে, তবে আমার মতে চিটকুলে থাকাই বেটার, সত্যিকারের পাহাড়ি গ্রামের ফ্লেভার, নীলচে সবুজ বাস্পার দুষ্টুমি এসব এখানে সুলভ, সে তুলনায় সাংলা একটু শহুরে। পুরো ট্রিপের সেরা যদি হয় টাবো, তাহলে দ্বিতীয় স্থান পাকা চিটকুলের জন্য। বেরনোর সময় আলাপ হল এক অবাঙ্গালি দম্পতির সাথে,ওঁরা বিয়েবাড়ি এসেছিলেন কোথায়, সেখান থেকে ঘুরতে এসেছেন এখানে, কিন্তু সাথে ক্যামেরা বা ভালো ফোন নেই, আমাদের অনুরোধ করলেন ছবি তুলে ওনাদের ছেলেকে হোয়াটস্যাপে পাঠিয়ে দিতে-'পিকচার তো হোনি চাহিয়ে না?' একশোবার!

    ব্রিজ থেকে তোলা ছবিরা-


    ব্রিজের ওপারে-

    গ্রাম ও মন্দির-



    চিটকুল থেকে ফিরছি-

    রকছামের কাছে -



    নিচে দেখা যাচ্ছে সাংলা ভ্যালি আর বাঞ্জারা ক্যাম্পস-

    ফেরার সময় রকছামের কাছে একজায়গায় অনেক গাছপালা ছিল, তার ফাঁক দিয়ে ঝিলমিলে রোদ্দুর টুকি দিচ্ছে, সেইখানে দাঁড়ানো হল ছবি তোলার জন্য। এরপর গাড়ি একেবারে এসে দাঁড়ালো একটা জায়গায়, পাহাড়ের গা দিয়ে নিচে রাস্তা নেমে গেছে, ঐদিকে নাকি গাড়ী যাবে না, ঐ রাস্তা দিয়ে হেঁটে নেমে দেখে আসতে হবে ট্রাউট ফার্ম আর বেরিং নাগের মন্দির। দুজনে মিলে নামছি। এখানে মেন রাস্তা নদী থেকে অনেকটা ওপরে, পাহাড়ের ঢালে বিছিয়ে রয়েছে সাংলা গ্রাম। অনেকটা নিচে বাস্পা উঁকি মারছে। কারোর ঘরের উঠোন দিয়ে, নর্দমার পাশ দিয়ে, আপেল বাগানের ভিতর দিয়ে রাস্তা নেমেছে নদী পর্যন্ত। একসময় নজরে পড়লো বেরিং নাগ মন্দির লেখা অ্যারো, সেটি ডানদিকে, আর আরো নিচে নেমে গেছে ট্রাউট ফার্মের রাস্তা। একটা ব্লগে পড়েছিলাম খালি হাতে তারা নাকি এই ফার্মে মাছ ধরেছিল, তারপর সেই মাছ রান্না করে খাওয়াও হয়েছিল। সেই গল্প শুনে অ মহোৎসাহে এগিয়ে চলেছে। যাচ্ছি তো যাচ্ছি, যাকেই জিজ্ঞেস করি কোথায় ভাই, সে-ই সামনে দেখিয়ে দেয়। একজনের উৎসাহর জোয়ারে ক্রমে ভাঁটার টান। আমি বললাম যে মাছ চাষ করছে যখন তখন নিশ্চয় নদীর লেভেল অবদি নামতে হবে। ইতিমধ্যে একজন ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করতে উনি বল্লেন সেদিকেই যাবেন, তাঁর সাথেই যেতে। উরিব্বাস, পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তায় কি স্পীডে চলেছেন উনি, তাল মিলিয়ে উঠতে নামতে গিয়ে বুক হাপরের মত ওঠানামা করছে। শেষে একটা ব্রিজ এলো, তার আবার মাঝখানটা ভেঙ্গে গেছে, কাঠের বিম চাপিয়ে যাবার রাস্তা করা। তো এখান থেকে ওনার রাস্তা আলাদা, বলে দিলেন ব্রিজ পেরিয়ে যেতে হবে। ব্রিজ পেরিয়ে এবার মোটামুটি সমান রাস্তা, চারপাশে লম্বা লম্বা প্রাচীন গাছেরা দাঁড়িয়ে আছে। স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা ভেজা ছায়া, কতরকম পাখি ডাকছে, এমন পথে হেঁটে গেলে নিজের ভেতরটাও ভিজতে থাকে।
    ট্রাউট ফার্ম যাবার রাস্তা -



    অ এবার আর যাবেনা স্থির করেছে, বাবা বাছা করে পটিয়ে পাটিয়ে নিয়ে চলেছি। যখন প্রায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে আর কোনমতেই যাবে না, তখন একটা ছোট বাগান ওয়ালা বাড়ি দেখা গেল। লোহার ক্যাঁচক্যাঁচে গেট ঠেলে ঢুকলাম। বাগানটায় এত এত প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। পায়ে পায়ে এগিয়ে দেখি খাঁচা ঘেরা চালা দেওয়া বড় বড় চৌবাচ্চায় ট্রাউট ছাড়া আছে! ওবাবা, এটাই ফার্ম! আমি তো আশা করেছিলুম বাস্পার জল নালা কেটে ঢুকিয়ে পুকুর খুঁড়ে খোলা জায়গায় চাষ হবে বুঝি। ঐ ব্লগের লোকজন কি করে এখানে খালি হাতে মাছ ধরলো, তা গবেষণার বিষয়; এক যদি না নর্দমা দিয়ে পালানো মাছ ধরে থাকে। এদিকে অ শুরু করে দিয়েছে - দেখলি তো, আগেই বলেছিলাম ফেরত চল, কিছুই থাকবে না দেখার মত ইত্যাদি। এবার এক মহিলাকে দেখা গেল, তিনি ফোনে কথা বলছিলেন। আমরা ফার্ম দেখতে এসেছি শুনে সব ঘুরে ঘুরে দেখালেন। চাবি খুলে একটা বড় হলঘর টাইপের জায়গায় গেলাম, সেখানে ছোট ছোট চৌবাচ্চার মধ্যে রাশি রাশি কেঁচোর মত কিলবিল করছে ছানা ট্রাউটরা। বড় হয়ে গেলে পরে বাইরের বড় চৌবাচ্চায় ছেড়ে দেওয়া হবে তাদের। এক এক সাইজের মাছের জন্য এক এক সাইজের চৌবাচ্চা। ফার্ম দেখা হল, এবার ফেরা, আকাশে মেঘ জমছে, জলদি ফিরতে হবে। ফেরার পথে ছোট ছোট বাদামী কুটকুটে খরগোশরা দেখি একদিক থেকে তুরুক তুরুক করে লাফাতে লাফাতে আরেকদিকের গর্তে গিয়ে লুকোচ্চে, আমাদের পায়ের আওয়াজ তাদের একেবারেই নাপসন্দ। এক জায়গায় দেখি টায়ারের দাগ, মানে এখানেও গাড়ি আসার রাস্তা আছে, অশোককে গিয়ে বলতে হবে তো! ব্রিজ পেরিয়ে এবার কেবলই ওঠা, নামার সময় অতটাও মালুম হয়নি, এবার অনেকটা ওঠার পর হাঁটু খুলে হাতে আসার জোগাড়। অ-এর মেজাজ পুঊরো খাট্টা হয়ে গেছে। সে কিছুতেই বেরিং মন্দিরে ঢুকবে না; বাইরে দাঁড়িয়ে রইল, আমি ঘুরে দেখে এলুম। এই মন্দিরটাও কাঠের, হিন্দু মন্দির, তবে একটা ঘরে একটা জাম্বো সাইজের প্রেয়ার হুইল ছিল। ঘরগুলোর দরজার আশেপাশে রঙ্গিন সাপের ডিজাইন, যাদের মুখটা ড্রাগনের মত; আরেকটা ঘরের দুপাশে দুটো হাঁ করা সিংহমুর্তি বসানো। বেশ ভালোই, আরো ঘুরে ঘুরে চারটি ফটো তোলা যেত, কিন্তু বাইরে গোমড়া অ আরো গোমড়া না হয়ে যায় সেই ভয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম। মেন মার্কেটের রাস্তা থেকে এই অবদি নামতে ১০-১৫ মিনিট লেগেছিল, এবার উঠতে যে কমপক্ষে আরো ২০-২৫ মিনিট লাগবেই, আর এই শেষটুকুই সবচাইতে খাড়াই। রেস্ট নিয়ে নিয়ে উঠছিলাম বাকিটা, প্রচন্ড জল তেষ্টাও পেয়ে গেছে, শেষের দিকে আর পা চলতে চায়না। এদিকে দেখি একজন মহিলা চা-পাতার ঝুড়ি যেভাবে নেয় ওভাবে একটা আস্ত গ্যাস সিলিন্ডার বয়ে দিব্বি তরতরিয়ে উঠে চলেছেন! গাড়িতে পৌঁছে ঢকঢকিয়ে জল খেলাম, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আমাদের অবস্থা দেখে অশোক হাসতে হাসতে বললো - কাঁহা থা না কুছভি নহি হ্যায় উধর, বস্‌ একবার নেট পে চড় গ্যায়া তো ফেমাস হো গ্যায়া। সাংলা মার্কেট এরিয়ায় এটিএম থেকে টাকা তুল্লাম। এবার একটা দোকানে ঢুকে মোমো আর থুকপা অর্ডার করা হল, তবে এ কোনোদিক থেকেই সেই টাবোর খাবারের ধারপাশ দিয়ে যায়না। এবার আমরা গেলাম কামরু ফোর্ট দেখতে। সিঁড়ি উঠে গেছে খাড়াই ছোট ছোট ধাপে, নিচে থেকে দেখা যায় পাঁচ তলার ফোর্টটা, বেসিক্যালি বদ্রীনাথের মন্দির। এই বদ্রিনাথ হলেন চিটকুলের মাঠিদেবীর বর আর বেরিং নাগ তাঁর ভাইপো বা কিছু। দেখেই বোঝা গেল অনেকটা উঠতে হবে; আর বুঝেই আমার রামগরুড়টা হেদিয়ে পড়েছে। আমি একাই খানিক উঠলাম, এখনো সেরম ভাবে ট্যুরিস্টের ভিড় নেই, আমি প্রায় একাই উঠছি সিঁড়িটা দিয়ে; অতটা রাস্তা এভাবে একা একা ওঠা খুব ক্লান্তিকর আর বোরিং হয়ে দাঁড়াবে, যেখানে একটু আগেই টোটাল ৭-৮ কিমি চড়াই উতরাই হয়েছে। আর ইচ্ছে করলো না, নেমে এলাম। কাকুতিমিনতি করেও (আমার খুব ইচ্ছে বুঝে অশোকও আমার সাথে যোগ দিয়েছিল) জগদ্দল পাথরটাকে গাড়ি থেকে নামানো গেল না, আমারও কামরু ফোর্ট দেখা হলনা। :(
    আকাশে মেঘ জমেছে-

    ট্রাঊট ফার্ম-


    বেরিং নাগ মন্দির-



    সাংলায় আরো দেখার মধ্যে আছে টিবেটান উড কার্ভিং সেন্টার, যাঁরা কাঠের কাজ ভালোবাসেন তাঁরা এখানে গিয়ে জিনিস দেখতে আর কিনতে পারেন। আরেকটা দেখার মত জায়গা হল সাংলা কান্দা, সাংলা থেকে চার পাঁচ ঘন্টার ট্রেক। অসাধারণ সুন্দর জায়গা, লেক আছে, কিন্নরীরা সেখানে ভেড়া চড়ায়, ফুলেরা ঘাসের আগায় মেলা বসায়। এই সাংলা কান্দা রুপিন পাস ট্রেকের স্টার্টিং পয়েন্ট; রুপিন পাস সাত দিনের ট্রেক, হিমাচলের সাংলা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় উত্তরাখন্ডের মুসৌরিতে। মজার না? এইসব আপাতত আমাদের প্ল্যানে ছিলনা, আবার যখন এই ভালোবাসার রাজ্যে ফিরে আসবো তখন বাকির খাতায় জমা পড়া এই হিসেব গুলো এক এক করে মেটাতে হবে। আমরা এগিয়ে চল্লাম সারাহানের পথে। বাস্পাকে বিদায় জানিয়ে আবার আগের পথ দিয়ে এসে পড়লাম সাতলুজের পাশে, তারপর আরো গিয়ে জিওরী থেকে ওপরে উঠতে লাগলো গাড়ি। রাস্তার ধারে ঝোপে ঝোপে আলো করে ফুটে রয়েছে জংলি লাল গোলাপেরা, আস্তে আস্তে রাস্তার প্রতিটা বাঁকে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে শ্রীখন্ড পীক। এই রাস্তার পাশে আর্মিদের থাকার জায়গা, তাদের ছেলেমেয়ে দের পড়ার ইস্কুল ইত্যাদি রয়েছে; অশোক এক হোটেলের সামনে এসে দাঁড়াল। আমার মাথাটা গেল গরম হয়ে, আমি ওকে আগেই বলেছিলাম যে এখানে ভীমাকালি মন্দিরের গেস্টহাউসে থাকবো। নেটে প্রচুর সুনাম এই গেস্টহাউসের; অসামান্য ভিউ, তেমনি সুনাম। অশোক ঘ্যানঘ্যানানি জুড়লো যে এই হোটেলে থাকলে তারও ফ্রিতে হয়ে যাবে, কালকেই আমরা সিমলা ফিরছি, লাস্ট দিনে মনোমালিন্য ইত্যাদি। অ-এর কিছুই এসে যায়না, যেখানে হোক থাকলেই হল। আমাকে ঠান্ডা করতে এসে ঝাড় খেয়ে গেল - আমার সাথে হানিমুন করতে এসেছিস নাকি অশোকের সাথে!যদি আমরা আগেই হোটেল বুক করে আসতাম তাহলে তো এতদিন অবদি যে তার ইচ্ছেমত হোটেলে থেকেছি সেই সুবিধেও সে পেতোনা। আমার ঝাঁঝিয়ে ওঠা দেখে অ-ও এবার অশোককে জোর করলো মানে মানে মন্দিরের কাছে গাড়ি নিয়ে যেতে। সেখানে রুম বাকি ছিল একটিই, বাকি এগারোটা ঘরই কোন পার্টি আসছে তারা বুক করে নিয়েছে; সবথেকে ভালো ভিউ ওয়ালা দোতলার চার নম্বর ঘর টার্গেট করে এসেছিলাম, পেলাম না। অ আবার অশোকের জন্য ডর্মিটরিতে থাকার ব্যবস্থাও জেনে এসেছে, কিন্তু সে থাকতে রাজি হল না, গাড়ি নিয়ে চলে গেল কোথায়। ৫০০ টাকায় তোফা বেড, সুন্দর বাথরুম আর টিভি ওয়ালা ঘর, কিন্তু রুমের কোনোই ভিউ নেই, মন্দিরের ভিতরের চাতাল ছাড়া। আগে থেকে রুম বুক করে রাখতে হয় এখানে পীক সিজনে, নইলে ঘর পাওয়া যায়না। কাঠ দিয়ে তৈরী গেস্টহাউসটার অনেক অংশ, মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীর সাথে বেশ সাদৃশ্য রেখে তৈরী করা হয়েছে, মন্দির কমপ্লেক্সের সাথে এক্কেবারে মানানসই। মালপত্র রেখে সবে গুছিয়ে বসেছি, এমন সময় বাইরে বেশ হাঁকডাক হইচই শুনে বারান্দায় গিয়ে দেখি সেই ট্যুরিস্ট পার্টি হাজির হয়েছে। শান্ত পরিবেশটা মুহুর্তে ছত্রখান হয়ে হাটে পরিণত হল!
    সারাহান ভীমাকালি গেস্টহাউস-


    ফুটনোটঃ
    ভীমাকালি মন্দির গেস্টহাউসের নম্বর - +৯১১৭৮২২৭৪২৮, দোতলার চার নম্বর ঘরটিই সবথেকে ভালো, আগেভাগে ফোন করে সেইটি বুক করে রাখাই ভাল। এছাড়া এখানে HPTDC-এর হোটেল আছে, নম্বর +৯১১৭৮২২৭৪২৩৪
  • হেঁইও | 132.177.139.44 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:২৯686822
  • এটা একটু নিচে চলে যাচ্ছে।
  • পুপে | 120.5.74.92 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৫:০৩686823
  • ঃ) এখন আপাতত ট্রিপ মোড। রোব্বার রাতে আবার পরের কিস্তি লিখবো।
  • + | 175.246.93.79 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:২৩686824
  • কোন রোব্বার ??
  • পুপে | 74.233.173.198 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:৪১686825
  • :p আসলে রোববার ট্রিপের ছবি বেছেবুছে ফেসবুকে অ্যালবাম বানাতে অনেক সময় গেল। এই আজ লিখবো।
  • TB | 118.171.132.188 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:১১686826
  • পুপে - কোনো কোনো প্যারায় একটু ব্রেক দেওয়া যায়? ছোট প্যারার রিডেবেলিটি হয়্ত বেটার।

    কন্টেন্ট লইয়া উত্সাহ প্রদান ছাড়া কুন বক্তব্য লাই।
  • avi | 113.252.164.73 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:২৫686827
  • বাহ, এটা তো আগে পড়ি নি। দিব্যি লাগলো। লেখার হাত ঝরঝরে। এটা শেষ হওয়া আর আরো ঘুরে তার গপ্পো লেখা - লেখকের কাছে দুটোই আর্জি রইলো।
  • পুপে | 131.241.184.237 | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:২৭686828
  • TB দা, পোস্ত করার পরে আমারো মনে হচ্ছিলো প্যারা গুলো বড় হয়ে গেছে। পরের বার থেকে খেয়াল রাখবো।

    avi দা, থ্যাঙ্কু ঃ)))
  • দ্গ্দ | 18.37.233.183 | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:৫৯686829
  • দ্চ্দ্দ্দ্গ্দ্দ্দ্দ্দ্দ্দ্দ্দ্দ্চ
  • পুপে | 120.5.74.2 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:০২686831
  • বহুদিন পর ল্যাদ কাটিয়ে আবার খানিক লিখেছি। ঃ)))

    Part-13

    বাঙ্গালী ট্যুরিস্ট পার্টি, পটাপট রুম দখল চলছে, একজন লিস্টি দেখে দেখে বলে দিচ্চেন - অমুক দার ঐ ঘর , তমুক দা ঐ কোণায়; কেউ কেউ আপত্তি জানাচ্চে - এ ঘরের ভিউ ভালো না, এটার বাথ্রুম ভালো না হেনো তেনো। দেখতে দেখতে খালি ঘর সব ভর্তি হয়ে গেল, আমাদের ঘরখানা পেরিয়ে ওদের আরো দুটো ঘর। বারান্দা থেকে দেখলাম নিচে বস্তা ঢুকছে কিসের সব; রান্নাবান্নার জিনিস বোধ হয়। এরি মধ্যে কারা যেন ঝগড়া শুরু করেছে। আমি শান্ত মানুষ, বেশী চেঁচামেচি সয়না, ঘরে ঢুকে গেলুম। খানিক বাদে দুজনে রেডিসেডি হয়ে মন্দিরে পুজো দিতে যাব বলে বেরোচ্ছি, অমনি আবার অ-বাবুর প্রকৃতির ডাক এলো। তার কোন সময় অসময় নেই, এক মিনিট আগেও কোন সতর্কবার্তা নেই, হঠাত হঠাত তার পেয়ে যায়। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। ইতিমধ্যে ট্যুরিস্ট দলের রান্নার ঠাকুর দিব্বি গরম গরম বেগুনি সিঙ্গাড়া ঝুড়িতে নিয়ে বিলি করতে বেরিয়েছে, সঙ্গে চা। তখনি আবার আমার একখানা ফোন এসেচে, মায়ের সাথে চারটি এতাল বেতাল বকে ফোন রেখে দেখি বেগুনিওয়ালারা কাছেই দাঁড়িয়ে; আমি বাংলা বলছি শুনে ভেবেছে ওদের দলের লোক, তবে পুরোপুরি সন্দেহমুক্ত নয় তারা, আমাকে বেগুনি অফারও করছে না, কেবল ভোম্বলের মতন দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমিই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বলে দিলাম যে না ভাই, আমরা তোমাদের দলের লোক নই। নেহাত আমি ভালো বলে তাই, নইলে ঠান্ডা ঠান্ডা সন্ধেবেলায় চা-বেগুনি কে অমন অম্লানবদনে প্রত্যাখান করে! অ হালকা হয়ে বেরিয়ে এসে গল্প শুনে মুখ ঝুলিয়ে বল্লো- নিয়ে নিতেই পারতিস!

    দূর থেকে ভীমাকালি মন্দির (পরদিন সকালে তোলা)-


    মন্দির চত্বরেই বিক্কিরি হচ্ছিল পুজোর ডালি, ১০০ টাকা ওয়ালা একটা ডালি কিনলাম, সব প্যাকট্যাক করা, স্টিলের থালাটা পুজো দিয়ে এসে ফেরত দিতে হবে। অ ব্যাটা গজগজ করেই চলেছে শুধু শুধু একশ টাকা গচ্চা দিলি ইত্যাদি, পাত্তা দিইনি অত; এই মন্দিরটা নাকি একান্ন পীঠের এক পীঠ, এখানে সতীর কান পড়েছিল, পুজো না দিলে কেমন লাগে। মন্দিরের ভেতরে ঢুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চত্বর দেখে বেশ ভালো লাগলো। একদিকে আবার একটা সুড়ঙ্গ ছিল, ঢেকে দিয়েছে, কোন পাহাড়ের খাদে গিয়ে পড়েছে বলা যায়না! মাথা ঢেকে ঢুকতে হয়, আমি ওড়না নিয়েছিলাম, চাপ নেই; ছেলেদের জন্য টুপি রাখা আছে, অ-এর হেঁড়ে মাথায় কোন টুপিই ফিট করে না, শেষে কোনমতে টেনেটুনে একটা টুপি পরালাম, একে টুপি পরাতে আমি বড়ই এক্সপার্ট। মন্দিরটা প্যাগোডার আদলে তৈরী, স্লেট পাথরের চালা, সোনালী চুড়ো, রূপোর দরজা, কাঠের দেয়াল, ঘুরে ঘুরে সিঁড়ি উঠে গেছে; প্রতি তলাতেই কিসের বিগ্রহ আছে, তবে দরজা বন্ধ, একেবারে উপরের তলায় দেবীর পুজো হচ্ছে। গিয়ে ঢুকলাম ছোট ঘরটায়, নকুলদানা দিল, কপালে টীকা দিল, এবার মন্ত্র পড়ে পুজো চালু হল; আড়ম্বর বিহীন সহজ সরল মন্ত্র, দেবীর পাশাপাশি বুদ্ধ বিরাজমান, আরো অনেক ছোটখাটো মূর্তি। পুজোর পর ডালিতে প্রসাদ নিয়ে বেরোতে যাব, বেঁটে দরজাটায় মাথা ঠুকে দড়াম করে একটা আওয়াজ হল! এত জোর আওয়াজ যে সবাই এদিকে তাকিয়ে, অস্বস্তিতে আমার প্রায় মাটিতে মিশে যাবার দশা; লেগেছে ভালোই , কিন্তু যেই জিগায় আমি বলি - না না লাগেনি, ঠিক হুঁ ইত্যাদি। এরি মধ্যে একজন বলে - দেবতার কাছে যাবার সময় মাথা নিচু করে যেতে হয়, ঐজন্যেই দরজাগুলো বেঁটে করে বানানো, মাথা উঁচিয়ে চল্লে তো লাগবেই। কথাটা শুনেই চড়াং করে মাথা জ্বলে গেল, তবে কিছু না বলে চলে এলাম। ফালতু ফালতু কথায় কথা বাড়ানো পোষালোনা।

    ঘরে ফিরে পুজোর প্যাকেট খুলে দেখি- একটা নারকেল আর কিছু মুড়ি! এই আজ পর্যন্ত 'তোর স্পেশাল একশ টাকার মুড়ি' নিয়ে আওয়াজ খাই, সে প্যাকেট বহুদিন অবধি ফ্রিজের কোনায় পড়ে থেকে থেকে অবশেষে একদিন বিদেয় হয়েছে, তার আগে অবিশ্যি মা বাবা স্বশুর শাশুড়িকে দু-তিন দানা করে মুড়ি খাইয়ে খুব অনেক পুন্যি করে দিয়েছি সবার!!:P ...

    এবার ডিনার সারতে বেরোবো, গেস্টহাউসের ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা গেল সেখানে ঢালাও মটরশুঁটি ছাড়াতে বসেছে একজন, আরেকজন আলু ছুলছে, এরাই বেগুনি বিলি করছিল, সে যা তা কান্ড। একদিকে কাউন্টারে একজন বসে ছিলেন, কি খাবার পাওয়া যাবে জিজ্ঞেস করতে উনি বল্লেন যে কিছুই পাওয়া যাবে না, বেশ কটমট করে কর্মরত ঠাকুরদের দিকে তাকিয়ে বল্লেন - 'ইন লোগো নে তো ইয়ে সব লা কে রাখখে হ্যায়, কিচেন ভি লে লিয়া, আপ লোগো কো বাহার যানা পড়েগা খানে কে লিয়ে।' এমনিতেও নিরামিশ খানাদানা ছাড়া কিছু পাওয়াও যায়না, কটা চকোলেটের বার কিনে বাইরে বেরলাম। মন্দিরের পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে অন্ধকার অন্ধকার গলি পেরিয়ে একটা মার্কেট মত এলাকা, পাশাপাশি কিছু খাবার দোকান, জামা কাপড়ের দোকান, তবে বেশ ফাঁকা ফাঁকা, এক এক করে দোকান বন্ধ হচ্ছে। একটু এদিক ওদিক ঘুরে একজন মোটাসোটা অবাঙ্গালী ভদ্রলোকের দোকানে ঢুকে গরম গরম পরোটা তরকারি দিয়ে পেট ভরানো গেল। উনি পরদিনের সকালের জলখাবার খেয়ে যাবার কথাও বলে রাখলেন।

    ফিরছি, টিপটাপ করে বৃষ্টি শুরু হল, তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছি, আজকের মত চরা শেষ, ঘরে ঢুকেই কম্বলের তলায় লম্বা হবো; দরজাটা বন্ধ করার সময় শুনতে পেলাম কে হেঁকে বলছে- তাড়াতাড়ি হাত চালা, কড়াইশুঁটির কচুরির পুরটা আজ রাতেই নামিয়ে ফেলতে হবে!

    রাতে সে কি ঝমঝম বৃষ্টি, কড়কড় বাজ! সতীর ছিঁড়ে পড়া কান উদ্ধারের জন্য যেন শিব নতুন করে তান্ডবনেত্য শুরু করেছে। বৃষ্টির অবিরত রিমঝিম সুর একসময় ঘুম পাড়িয়ে দিল। রাতভোর ভার লাঘব করে অবশেষে ভারি মনোরম নীল আকাশ, ঝলমলে রোদ আর থোকা থোকা সাদা মেঘ নিয়ে সকাল হাজির হলো। সক্কাল সক্কাল হানিমুন স্পেশাল ড্রেস লাগিয়ে আমি রেডি। পায়ে হেঁটে ঘোরা যায় এরম কয়েকটা জায়গা আছে আশেপাশে। আমরা লোক জিজ্ঞেস করে প্রথমে এগোলাম রাজবাড়ির দিকে, রাস্তাঘাট ভিজে ভিজে। সরু গলি রাস্তা গিয়ে খানিক গিয়ে দেখতে পেলাম বাড়ীটা; প্যালেস বলার মত এমন কিছু নয়, খানিকটা জমিদার বাড়ির মত দেখতে; আশেপাশে লোকজন কেউ কোত্থাও নেই, সামনে সবুজ চকচকে লন, ঘাসের আগায় টলমলে শিশির, সাদা সাদা কুটি কুটি ঘাসফুল। তার মাঝে পোজ মেরে খানিক ছবি তোলা হল। এদিক সেদিক ঘুরে দেখছিলাম বাড়ীটার, খানিক পরে একজন কেয়ারটেকারের আবির্ভাব। সে জানালো বাইরে যত ইচ্ছে ঘুরে দেখা যাবে, ভিতরে যাবার অনুমতি নেই। তবে আর তেমন কিছু দেখার মত ছিলোও না।

    রাজবাড়ির লন থেকে-


    রাজবাড়িতে পোজ-


    বেরিয়ে স্টেডিয়ামের দিকে এগোলাম। এমনিই একটা খেলার মাঠের মত, তালা দেয়া ছিল। এখান থেকে রাস্তা খানিকটা ঘুরে উঠে গেছে পাখিরালয়ের দিকে, পাশেই একটা ছোট্ট মন্দির, ছবি তুলতে গিয়ে আবার এক সাধুবাবার বকুনি খেলাম। পাখিরালয় টাও খোলা নেই। আগস্ট থেকে খোলে সেটা। তবে চমৎকার কিছু পাখি দেখা হল, নানারকম পাখির ডাক ভেসে আসছে উঁচু উঁচু গাছ গুলো থেকে। ভাগ্যিস আগের থাকতে নেট ঘেঁটে দেখে এসেছিলাম ঘুরে দেখার জায়গা গুলো, নইলে চমৎকার এই প্রাতঃভ্রমণটা হতনা। ইতিমধ্যে সূর্যের রং ধরতে শুরু করেছে দূরের পাহাড়ের গায়ে। পাহাড়ের উঁচুর দিকের গাছগুলোর মাথা যে সাদা সাদা তা এখান থেকেই ঠাহর করা যায়। আগের দিনের দোকানটায় পুরি খেতে খেতে শুনলাম যে অনেক উপরের দিকের পাহাড়ে কাল বরফ পড়েছে। ইস, আমি কোনদিন নিজের চোখে বরফ পড়তে দেখি নি!

    স্টেডিয়াম-

    মন্দির-

    পাখিরালয়-

    পোজমাস্টার-


    ঠান্ডা শীতের সকালটা একটু কফি খিদে পাইয়ে দিল, তবে এদিক সেদিক ঘুরেও কোন কফির দোকান পাইনা, শেষে একজন বাতলালো এগিয়ে গিয়ে HPTDC-র হোটেল আছে, সেইখানে কিছু মিল্লেও মিলতে পারে। চলো অগত্যা। হোটেলখানি চমৎকার, লোকেশনও অনবদ্য। ঠিক পাহাড়ের গায়ে, শ্রীখন্ড পীক গর্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সামনে, ডাইনিং থেকেই এত ভালো ভিউ। স্টাফেরাও ভারি অতিথিবৎসল, সুন্দর কথা বলেন, পরের বার এলে এই হোটেলে থাকার কথা বল্লেন ( তবে এদের রেট প্রায় তিনগুণ )। আয়েস করে চিকেন পকোড়া আর কফি সাঁটিয়ে ফিরছি, দেখি অশোকও গাড়ি নিয়ে হাজির। সে একটু পুজো দিয়ে এসে স্টার্ট করবে বললো, আগের দিনের ঝামেলার কোন লেস নেই তার চোখেমুখে। যাকগে ভালোই হয়েছে। আমরা নিজেদের লাগেজ নামাচ্ছি, এমন সময় চিটকুলের সেই দম্পতির সাথে দেখা, ওঁরাও এসে পড়েছেন এখানে। অতএব আবার ছবি তোলাতুলি ইত্যাদি হল। এদিকে তখন ক্যান্টিনে লাইন দিয়ে কচুরির পাত পড়েছে।

    বেরোনোর আগে খেয়াল পড়লো নিজেদের একটা কাপল পিকচার তোলা উচিত। ঐ বাঙ্গালি দল তখন বেরোবার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আগের দিনের মতই হট্টমেলা লেগে গেছে; চলে যাচ্ছে বটে, কিন্তু এরা জায়গাটা ঘুরলো কখন! দুজন আরেকবার বাথরুম সেরে নেবেন কিনা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত, কেউ কেউ ব্যাগ গুনে নিচ্ছেন, কেউ তখনো কচুরির সেবায়, কয়েকজন মন্দিরের বাইরের চাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। এই ঘুরে বেড়ানোদের থেকে একজনকে ধরে আমাদের ক্যামেরাটা গছিয়ে পরিষ্কার বাংলায় বল্লাম- একটু ছবি তুলে দিন না। উত্তর এল- জরুর, আপলোগ খাড়া হো যাইয়ে! তারপর কিন্তু উনি নিজের বন্ধুকে বললেন- দাঁড়া ছবিটা তুলে দিয়ে আসচি! এরপর ছবি তোলার জন্য ডাইনে বাঁয়ে সরা থেকে ক্যামেরা ফেরত দেয়া অবধি যাবতীয় কথাবার্তা হিন্দিতেই চালাতে লাগলেন, খুব একটা সড়্গড় না হয়া সত্তেও, এদিকে আমি যে কটা কথা বলছি সব বাংলায়। কিম্ভূত সিচুয়েশন একটা!

    গাড়িতে চেপে অশোককে বল্লাম এখানে কোথায় হাওয়ামহল আছে দেখিয়ে নিয়ে এসো। সে পড়েছে ফাঁপরে, আজ অবধি এতবার নানা লোককে এনেছে, কেউ তো এইসব দেখতে চায়নি, জানেও না সে জায়গাটা কোথায়। তবে সে লোক ভালো - চলিয়ে হাওয়ামহল ভি দিখা দেতে হ্যায় আপকো; একে তাকে জিজ্ঞেস করে অনতিদূরেই সেখানে পৌঁছোন গেল। সুন্দর জায়গা, দুপাশে গাছে ঢাকা পায়ে চলা রাস্তা চলে গেছে পাহাড়ের কিনারায় একটা ছাউনি করা জায়গা অবধি; সেই পথে চললে পায়ের তলায় শুকনো পাতারা খসখস আওয়াজ তোলে, সামনে হিমালয়ের চোখজুড়োনো রূপ। তবে এটা আসলে একটা সানসেট পয়েন্ট, পায়ে হেঁটে এই জায়গাটা কালই এসে ঘুরে নেওয়া উচিত ছিল, অসাধারণ ছবি উঠতো। আর কি করা যাবে, ভুল হয়ে গেছে প্ল্যানিংয়ে। এবার তাহলে সারাহানকে টা টা করে আমরা সিমলার পথে রওনা দিই। পথে পড়বে ফাগু কুফরি। সেসব ঘুরে আজ বিকেলের মধ্যেই সিমলা ঢুকে পড়বো, আমাদের নির্ধারিত শিডিউলের একদিন আগেই!!

    হাওয়ামহল ও আশপাশ-


  • ইশশশ | 126.50.59.180 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:২০686832
  • হোয়াট আ শিয়ার ওয়েস্টেজ অফ একশো টাকা। মন্দিরের ঠাকুরকে পুজো না দিয়ে ঐ বং গ্রুপের ঠাকুরকে ঘুষ দিলে সেই রাতের জন্য অনেকগুলো কড়াইশুঁটির কচুরি হয়ে যেত - হায় হায় হায়।

    আর বেশির ভাগ বাঙালিই বাইরে বেরিয়ে হিন্দি মোড থেকে চট করে বাংলা মোডে সুইচ করতে পারে না। এ স্যাম্পল আগেও দেখা গেছে।
  • Div0 | 132.171.175.13 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:৩৯686833
  • নাহ, এ তো পুপের সঙ্গে হিন্দিতে আর নিজের বন্ধুর সঙ্গে বাংলায় চালাচ্ছিল। তার্মানে বাংলা মোডে সুইচ করাটা ইশ্যু নয়। বোধহয় "অ-বাবু"কে অবাঙালি ঠাউরে নিয়েছিল।

    কড়াইশুঁটির কচুরিগুলোয় ভাগ বসাতে না-পারা বাজে লস। তবে, মুড়ি আর নারকেল কোরাও মন্দ নয়।
  • pipi | 60.129.53.31 | ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৯:২৭686834
  • ব্রেস! ব্রেস! দিব্য হচ্ছে।
  • Kabys | 113.16.69.11 | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০৯686835
  • পুরো টাই আজকে একসাথে পড়ে ফেললাম. একবার পড়তে শুরু করলে আর ছাড়া যাচ্ছে না. অসাধারণ ভালো লেখা আর ভীষণ ভালো ফটো.
    পু পুরো আইটেনারী সাথে হোটেলের নাম নম্বর সব চাই.
  • | 24.99.230.159 | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:১১686836
  • পিপি বেটা বাংলা ভুলে যাচ্ছে।

    ও টা হলঃ

    ব্রেশ ব্রেশ!! ঃ)
  • + | 175.246.93.159 | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:১১686837
  • বাংলার বাইরে বেরোলেই জটায়ু মোড অন
  • | 213.132.214.83 | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:২৭686838
  • তুমি একটু তোমার নতুন দেশ নিয়ে লেখ প্লাস। খুব জানার ইচ্ছা আছে..
  • + | 175.246.93.159 | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:৫১686839
  • ব্রতীন্দাঃ)

    লেখার ইচ্ছা আছে। কিন্তু আমি ঠিক লিখতে পারিনা এটাই সমস্যা।
  • | 213.132.214.83 | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:৫৫686840
  • আরে লেখো না।যে এত ভালো ছবি আঁকে সে লিখতে পারে না আমি বিশ্বাস করি না ঃ)
  • pipi | 139.74.230.45 | ১২ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:১৪686842
  • ব, মোবলি থেকে পোস্ট করেই খেয়াল হয়েছিল কিন্তু ল্যাদের চোটে তারপর আর ফের পোস্ট করতে ইচ্ছা হয় নিঃ-)
  • T | 24.100.134.82 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:১৬686843
  • অন্য টই ডোবাচ্ছি তাই...
  • pipi | 139.74.245.122 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৬686844
  • অ পুপে, শেষ কর লক্ষীসোনা।
  • sosen | 184.64.4.97 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:৩৪686845
  • গান্ধী বরম ছবিতে ট্রাভেলোগ লিখুক। সে ভারি ভালো হবে। বার্মা ক্রনিকল এর মতো
  • + | 175.246.93.159 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:৪০686846
  • সোসেন্দি, বোঝো!! দাঁড়াও, সময় করে কিছু একটা লিখবো, লেখার আছে অনেককিছু, আঁকা চাপঃ(

    এই লেখাটা শেষ হচ্ছেনা কেন??
  • পুপে | 120.5.74.2 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৬:০৪686847
  • Part - 14

    গাড়ি এসে দাঁড়ালো ফাগু অ্যামিউজমেন্ট পার্কের সামনে। তেমন কিছু নয়, এমনিই একটা ছোট্ট জায়গা, তবে একদম পাহাড়ের গায়ে। সুন্দর বাগান করেছে, আর রয়েছে কিছু অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস। দুজনে দুটো আলাদা প্যাকেজ নিলাম। আমি তিন রকম রাইড, সবই মাটি থেকে বেশ উঁচুতে, কি কি সব নাম ছিল ভুলে গেছি; যতবার খুশি চাপা যাবে। অ-বাবুর হাইটে ভয় লাগে, তাই সে করবে গো কার্টিং (তখনো আমরা ড্রাইভিং শিখি নি, ফর্মুলা ওয়ান টাইপের গাড়ি চালাতে পারবে দেখে এক্কেবারে লাফিয়ে পড়ে টিকিট কাটলো)। আগেই গো কার্টিং-এ লাইন দেওয়া হল। আমি ক্যামেরা বাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছি বাইরে একটা সুবিধেজনক জায়গায়। আমার এফ-ওয়ান হিরোর ছবি তুলতে হবে। তা সে বাবু তো গাড়ি নিয়ে বেরোলেন, হু হা চালাতে গিয়ে সাইডে রাখা টায়ারের মধ্যে দিলেন ভিড়িয়ে। আবার লোক এসে গাড়ি এবং গাড়ির মধ্যে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা চালককে টায়ারের জংগল থেকে উদ্ধার করে আবার পথে রওনা করে দিল। এবার হিরো চল্লো ঢিক ঢিক করে, সে যা হোক, আমারো ছবি তুলতে সুবিধে। কিন্তু যা বুঝলাম --একই রাস্তায় পাঁচ পাক ঘুরতে পাবে, তার জন্য ৫০০ টাকা! কোনো মানে হয়! তায় আবার ছদ্মগোঁসা আমিও কেন গোকার্টিং এর টিকিট কাটলাম না।

    এরপর আমার পালা। ফার্স্টেই যে রাইডটা ছিল সেটা একেবারেই বাচ্চাদের মত, গোল গোল ঘুরবে জিনিসটা, একটু হয়তো বেঁকে টেরে, সীটে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকো। ও তেমন ভালো না। তবে এরপরেরটা ছিল বাঞ্জী রাইড - ওফফ্‌, দারুণ। জিনিসটা এরকম দেখতে -


    একটা বেল্টের মত পড়িয়ে দিলো গায়ে, আর কোমরের বাঁধনটা ক্রমশ শক্ত শক্ত আরো শক্ত হয়ে চেপে বসছিল গায়ে, যেন আর চেপে বসলে বুঝি ফুসফুস কাজ করবে না, ঠিক তখনি চাপটা আলগা হয়ে গুলতির দানার মত আমি উড়ে গেলাম ওপরে, উঠছি উঠছি ... , দড়িতে টান পড়লো, এবার নিচের দিকে যাত্রা শুরু, ফ্রি ফল, পেটের ভেতরটা খালি, গলাটা শুকনো, ঠিক সামনেই পাহাড় আর খাদ, চোখটা বুজে ফেলেছি; ঠিক তখনি আবার দড়িতে টান, মাটি থেকে একটু উঁচুতে ঝুলে আছি। এত চমৎকার অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম! আরো একবার চেপে নিলাম জিনিসটায়।
    এর পরের রাইডটাও বেশ ইন্টারেস্টিং। এরকম দেখতে -

    ঐ যে ওপরে আমার পা দুটো দেখা যাচ্ছে -

    পাইরেট শিপে আমি-

    অ্যামিউজমেন্ট পার্ক-


    লম্বা রডটার গা বেয়ে বেয়ে উপরে উঠে যাবে পুরো জিনিসটা, দিয়ে সেখানে গোল গোল পাক খাবে, দিয়ে আবার আস্তে আস্তে নেমে আসবে। তবে এইটায় চাপতে গিয়ে আবার আমার সাধের ড্রেসটা গেল এক জায়গায় ছিঁড়ে। ছিঁড়ে যাওয়া জামা আর খিঁচড়ে যাওয়া মুড নিয়ে পাইরেট শিপ চেপে ক্ষান্ত দিয়ে আমরা সিমলার পথে রওনা দিলাম। কুফরিতে বরপ নেই বলে আর ঘোড়ার পিঠে ছাড়া ঘোরা যাবে না শুনে আর ওদিকে গেলাম না। আবার সেই নারকান্দা, চিরহরিৎ বৃক্ষ ছায়া পথ চলেছে এঁকেবেঁকে; দূরের পাহাড়েরা ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে, দুদিন আগেও ঐ ধোঁয়া ঐ বরফগুঁড়োর সান্নিধ্যে আমরা একে অপরকে ভালোবেসেছি, হাতে হাত নিয়ে হেঁটেছি, ওরা আমাদের মধুচাঁদ পর্বের ঐ দুদিনকে চিরহরিৎ করে দিয়েছে, অনেক অনেক বছর পার করেও বুঝি ঐ দিনগুলোর স্মৃতিতে ধুলো জমবে না এককণাও!
    সিমলা ফেরার রাস্তা-


    ছোট্ট একফালি মাঠ-

    এভারগ্রীন পয়েন্ট-


    সিমলা ঢুকতে ঢুকতে বিকেল। তায় হোটেল পাচ্ছিলাম না। মে মাসের শুরুর দিক তখন। প্রচুর লোক এসেছে, কেউ গরমের ছুটি কাটাতে, কেউ হানিমুন। দু-তিনটে হোটেল ঘুরে জায়গা পাইনি। এবার অশোক একজনকে ফোন করলো, এই হোটেলেমালিকের হয়ে নাকি আগে সে কাজ করতো। সেখানে জায়গাও মিললো, কিন্তু মুশকিল হলো যে সেইখান অবধি গাড়ি যাবে না, একদম ম্যালের কাছে জায়গাটা, লাগেজ নিয়ে বেশ অনেকটা চড়াই ভেঙ্গে উঠতে হবে। অশোক নিজে থেকেই আমাদের একটা ব্যাগ চেয়ে নিয়ে টকাটক সিঁড়ি ভাঙ্গছে। কিন্তু ট্রলিটাকে নিয়ে উঠতে গিয়ে আমাদের অবস্থা কাহিল। চাকা লাগানো ট্রলি, সে যেতে চায় নিচের দিকে, কিন্তু আমাদের তাড়া খেয়ে ঘাড় বেঁকা অবাধ্য ষাঁড়ের মত কোনমতে সে উঠতে লাগলো। সিঁড়িটার শেষেই সামনে এগিয়ে সিমলা কালিবাড়ি, তার পাশ দিয়ে গলি ঢুকে গেছে, খানিক হেঁটে হোটেল। তা পৌঁছতে খানিক সমস্যা হলেও হোটেলটার লোকেশন চমৎকার। ম্যাল একদম কাছে। ঘরদোরও বেশ, টিভি আছে। এতদিন পরে টিভি দেখতে পাবে বলে অ আনন্দে আত্মহারা, টিভিখোর কোথাকার!

    অশোককে টাকা মেটালাম। এদিকে আমরা শিডিউলের একদিন আগেই পৌঁছে গেছি সিমলা, আগামীকাল রাত দশটায় দিল্লির বাস। কাল গোটা দিন বাকি। শুধু শুধু বসে থাকবো নাকি! অশোক বললো সে সিমলার আশেপাশের সাইটসিয়িং করিয়ে দেবে পরদিন, তাকে কিছু এক্সট্রা টাকা দিলে। ঠিক হ্যায়, আমরা রাজি। আজকের মত অশোককে বিদায়, সে এখন বাড়ি গিয়ে ছেলেমেয়েদের বায়নাক্কা সামলাবে।

    আমরা একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে চড়তে বেড়িয়ে পড়লাম। সামনেই সিমলা কালিবাড়ি, বাংলায় লেখা নামফলক। মন্দিরের ওপরে ছাত মত জায়গাটা থেকে সমস্ত সিমলা ভ্যালিটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। তখন সূর্যের শেষের আলোটুকু আস্তে আস্তে নিভে আসছে, গোলাপী গোলাপী হাওয়ামেঠাইয়ের মত রং ধরেছে দূরের আকাশে, এদিক ওদিক বিজলীবাতির আনাগোনা হয়েছে শুরু। গোধুলিআলোয় মন্দিরের ছাদে বসে কোনো এক পাহাড়িয়া কন্যের বিয়ের কিছু অনুষ্ঠান চলছে, সুরেলা সখিরা গান গাইছে অচেনা সুরে। সুরের মাঝে মাঝে মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি ভেসে আসছে। মন্দিরের ভেতর চিরপরিচিত মা কালী চোখ বড় বড় করে একহাত জিভ বের করে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রণাম সেরে প্রসাদ খেয়ে কালিবাড়ি থেকে বেরিয়ে এবার সিমলা ম্যাল।
    সিমলা কালিবাড়ির ছাদ থেকে-



    পুরো চত্বরটা জুড়ে নানা বয়সের নানা ধর্মের নানা প্রদেশের নানা জাতের লোকের মেলা, যের যার মত ঘুরে বেড়াচ্ছে, ছবি তুলছে, কোনো ঝুটঝামেলা নেই। এরই মধ্যে কিছু ছবিওয়ালা আমাদের কানের কাছে পিনপিন করতে লেগেছে, পাহাড়ী পোশাকে সেজে ম্যালের সামনে পোজ দিয়ে ছবি তুলুন ইত্যাদি। কিছু স্যাম্পল ছবিও নিয়ে ঘুরছে তারা, দলে দলে লোকজন ছবি তুলছে। আমারো যে ইচ্ছে একেবারে করছিলনা তা নয়, কিন্তু অ কোনমতেই পাহাড়ী জামা পরতে রাজি নয়! রাগী রাগী গোমড়া মুখ নিয়ে আমি ঘুরছি। আশেপাশে অন্যসব সুখী হানিমুন কাপলরা আরো বেশী বেশী করে চোখে পড়ছে। কনুই অবধি লাল সাদা চূড়া পরা নতুন বিয়ে করা পাঞ্জাবী মেয়েটা টুকটুকে পাহাড়ী বৌ সেজে বরের বক্ষলগ্না হয়ে ছবি তুলছে। আরো এরকম রাশি রাশি নতুন বর বৌ-রা ঝলমলে সেজে চারিদিক আলো করে ঘুরে বেড়াচ্চে। আমিই কেবল মুখে অমাবস্যার আঁধার ঘনিয়ে তুলে চিঁড়ে ভেজাবার চেষ্টা করছি। এদিকে সন্ধের আঁধারও ভালোই নেমে এসেছে। ম্যালের চারপাশের দোকানরা ঝিকমিকে আলো জ্বালিয়ে পশম ফল ব্যাগ সাজানোর জিনিস খাবার আইসক্রীম ইত্যাদি হরেক পশরা সাজিয়ে বসেছে।
    অ-- দ্যাখ এখন তো আলোও নেই, ছবি ভালো উঠবে না, কাল সকালে ছবি তুলবো কেমন? চল্‌ এখন তোকে একটা আইস্ক্রিম কিনে দি।
    আমি ( গম্ভীর হয়ে ) - ঠিক আছে। কাল কিন্তু তুলবো ছবি।
    অ-- হ্যাঁ রে বাবা।
    ম্যালের শেষে আবছা আলোয় দাঁড়িয়ে আছে ক্রাইস্ট চার্চ, বন্ধ এখন। কাল সকালে আমরা ঢুকে দেখবো ভিতরে। এখন আপাতত আইসক্রীম খেতে খেতে দরদস্তুর করে সোয়েটার কেনায় মন দিলাম। গোটা মার্কেটটা চষে বেরিয়ে দু খানা সোয়েটার আরো কিছু খুঁটিনাটি জিনিস কেনা হল, কাবাব খাওয়া হল, আর কিছু খাবারের দোকান দাগিয়ে রাখা হল কাল সকালের জন্য। দিনের বেলায় বেশ গরম থাকলেও সূয্যি পাটে যাবার পর থেকেই বেশ শীত শীত করছে। আটটা বাজছে ঘড়িতে। এবার পা চালিয়ে হোটেল ফিরতে হবে, ঘুম দরকার। কাল ঠিক সকাল এগারোটায় অশোক আসবে। তার আগে সমস্ত বাঁধাছাদা রেডি করে রাখতে হবে। কালই আমার স্বপ্নের ভ্রমণের শেষ দিন।
    ম্যালের ছবি (পরদিন সকালে তোলা)-
  • pipi | 139.74.245.243 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:২০686848
  • বেশ হচ্ছে। তারপর?
  • Manish | 127.242.168.53 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১০:৪৩686849
  • পুপেকে, ম্যালে যাওয়ার জন্যতো নীচ থেকে lift এর বন্দোবস্ত আছে।
  • পুপে | 131.241.184.237 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১০:৫০686850
  • মনীশদা,
    আমি তো প্রথমবার গেছি। লিফটের কথা জানতাম না। এই আপনি বলার আগে পজ্জন্তও জানতাম না। অশোক ব্যাটা একটা কোন হোটেলের পিছন দিকের চড়াই গলি রাস্তা দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল!
  • avi | 113.24.84.48 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৪:৫৭686851
  • আপনার সোনার কিবোর্ড আর জুতো হোক। দিল খুশ হয়ে গেল এক্কেবারে।
  • de | 69.185.236.53 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৬:১০686853
  • দারুণ হচ্চে -
    পুপের বিহুডান্সের ছবিটাও কি মিত্তি কি মিত্তিইই!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন