এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আরেকটা বেড়াতে যাবার গপ্পো

    পু
    অন্যান্য | ০২ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৩৮০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • 0 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:২৪686788
  • বাঃ , ভীষণ সুন্দর সব ছবি। পাহাড়ি রাস্তার ছবিগুলো, (082624, 082632) শুধু দেখেই কেমন গলা-শুকনো, গা-শিরশিরানি, এসব হচ্ছে। সিকির বাইক্‌জার্নির ব্লগেও এর'ম সাংঘাতিক রাস্তার ছবি ছিল। ওগুলো পেরুনোর সময় যে কেম্নি লাগে!!

    লেখা বেশ সহজ, সুন্দর। শুরু থেকে টানা আটটা পার্ট তরতরিয়ে শেষ হয়ে গেলো।
  • Blank | 24.99.99.164 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৩৩686789
  • ছবি গুলো বেশ হয়েচে
  • পুপে | 120.5.74.2 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৫:২৪686790
  • Part - 9

    কল্পা ছাড়ার পর থেকেই মোবাইলে টাওয়ার নেই; এরপর থেকে বিএসএনএল ছাড়া আর কিছু চলারও কথা নয়, তবে আমাদের দুজনেরি একটি করে BSNL এর সিম আছে, কলেজ জীবনে নেওয়া, তখনকার 'দোস্তি' স্কিমের দৌলতে (পেয়ার করা দুটি নম্বরে আনলিমিটেড কলিং ছিল)। মাঝে মাঝে তাতে সিগনাল আসছে যাচ্ছে। সুমদো থেকে টাবো বেশী দূর নয়, ৩০ কিলোমিটার। তবে টাবো ঢোকার আগে আমরা যাব গিউ ভিলেজ। রাস্তা ছেড়ে ঢুকতে হবে প্রায় ১১ কিমি মত ভিতরে। 'ওয়েলকাম টু গিউ ভিলেজ' লেখা রঙ্গিন তোরণ পেরিয়ে নতুন পথের শরিক হলাম। বিনোদের থেকে জানা গেল এই গ্রামটা চীনারাও নিজেদের ম্যাপে দেখায় এবং চীনের অংশ বলে দাবী করে। কখনো মোটামুটি কখনো একেবারে যাচ্ছেতাই কখনো চলনসই রাস্তা দিয়ে চলেছি। পাশে পাহাড়ের দেওয়ালে কখনো ফুটে উঠছে গাঢ় বাদামি, কখনো মেটে লাল, কাজল কালো রং। পুরো স্পিতি ভ্যালি ভূপৃষ্ঠের কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের সাক্ষী, এখানকার পাহাড়ের পরতে পরতে লেখা আছে সেই ইতিহাস; ভৌগোলিক দিক থেকে স্পিতি ভ্যালির গুরুত্ব নিয়ে একটা ভালো রিপোর্ট পড়েছিলাম কিছুদিন আগে।



    অবাধ হাওয়ার দাপটে নুড়িরা ক্ষয়ে ক্ষয়ে পাতার মতন পাতলা হয়ে গেছে, ক্ষুরধার; হাওয়ায় মাঝে মাঝে উড়ে আসছে সেই পাথরের পাতা। ঝুরঝুর করে উপর থেকে ছোট ছোট পাথরকুচি পড়লো কিছু। বিনোদ বললো আইবেক্স উপরে ঘাস খুঁজতে এসে খুরের আঘাতে পাথর ফেলছে; আইবেক্স হল একরকমের পাহাড়ী ছাগল, এখানে খুব দেখা যায়, যদিও এখন আমাদের চোখে পড়লো না। পাশে পাশে সরু তিরতিরে জলের একটা স্রোত বয়ে চলেছে, ওটা গিউ নাল্লা। দূরে পুঁচকি পুঁচকি খেলনার মত কটা বাড়ি চোখের আওতায় এলো। তারপর এলো চৌখুপি কাটা জমি, লালচে ঝুপ্পুস শুকনো গাছ, পাথরে গাঁথা পাঁচিল; আস্তে আস্তে বড় হতে হতে একটা জনহীন গ্রামে এসে পৌঁছলাম। কেউ কোত্থাও নেই, পুরো নিঝঝুম, যেন সোনার কাঠি রূপোর কাঠি ছুঁইয়ে সব্বাইকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে চলে গেছে কোন শয়তান যাদুগর; কামার ঘুমোয়, কুমোর ঘুমোয়, ঘুমোয় সহিস পাহারাদার।

    গিউ গ্রাম -




    আমরা গিউ ভিলেজ কেন দেখতে এসেছি? এই গ্রামটা ভারত-চীন বর্ডারের একদম প্রান্তে তো বটেই, কিন্তু তাছাড়াও এখানে একটা দারুণ জিনিস আছে, ভারতের একমাত্র প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত এক বৌদ্ধ ভিক্ষু 'সাংহা তেনজিন'-এর মমি। ১৯৭৫ সালে ITBP'র লোক এখানে মাটি খুঁড়ছিল কোন কারণে, কিসে কোদাল লেগে রক্ত বেরোতে শুরু করে, তখনকার মত তো সব ভয়ে ভাগলবা। তারপর সেখান থেকে উদ্ধার হয় হাঁটু ভাঁজ করে বসে থাকা সেই মমি, তার তখনো গায়ে লোম, মাথায় চুলের আভাস, অবিকৃত নখ! ধ্যানমগ্ন লামার বুদ্ধের স্মরণ করতে করতেই প্রাণবায়ু নিঃশেষ হয়, তুষারচাপা পড়ে 'ন্যাচারাল মামিফিকেশন' ঘটে, তিনি নাকি দেহের ক্ষয়হার কোন বিশেষ উপায়ে এতই কমিয়ে এনেছিলেন যে ৫০০ বছর পরেও তা থেকে গিয়েছিল প্রায় অক্ষত! পরে এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, জানা গেছে এইসব তথ্য। মমিটি এখন একটি ছোট্ট মন্দিরে রাখা কাঁচের বাক্সের মধ্যে। পাশেই তৈরী হচ্ছে বড় মন্দির, এই অসাধারণ লামার জন্যে। বিনোদ হাঁকডাক করায় এক বাড়ির দরজা খুললো, পাওয়া গেল মন্দিরের চাবি। অশোক গাড়ি নিয়ে তুললো একদম মন্দিরের সামনে। এখান থেকে পুরো গ্রামটার সুন্দর ছবি পাওয়া যায়। মন্দির খুলে ঢুকলাম, আজও তিনি বুদ্ধের মন্ত্রোচ্চারণে নিমগ্ন; চোখের কোটরের উপরে ছোট ছোট অক্ষিপল্লব, মাড়িতে দাঁতের সারি, অবিশ্বাস্য! এখন নাকি এই মমি ক্রমশ নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে, কিভাবে এনাকে রক্ষা করা যায় সেই নিয়ে চলছে রিসার্চ, ভাবাই যায়না আজ থেকে কত বছর আগে লামারা এমন আশ্চর্য ভাবে মৃতদেহ সংরক্ষণের উপায় খুঁজে বের করেছিলেন!

    গিউ লামার মন্দির -





    এবার টাবোর দিকে সিধে গাড়ি ছুটলো, আর কোথাও থামাথামি নয়, প্রায় তিনটে বাজতে চলেছে, পেটে ইঁদুরের ডনবৈঠক লেগে গেছে, সেই কোন সকালে পরোটা খেয়ে কল্পা থেকে বেরিয়েছি। টাবোয় থাকবো কোথায় তা নিয়ে সমস্যা ছিলো। কোন লজ কি হোমস্টে কিছুই খোলেনি। কিচ্ছুটি না পাওয়া গেলে বিনোদের লজে ওঠা হবে। কিন্তু টয়লেটের সমস্যা। কমোডের ভিতরের জল নাকি জমে বরফ হয়ে ফাটল ধরিয়ে নষ্ট করে দেয় পোর্সেলিনের দেওয়াল, তাই শীতকালের আগেই সব জল বের করে তাতে কেরোসিন ঢেলে দেয়, সেইসব ঠিক না করা অবধি ব্যবহারের উপায় নেই! গাড়ী ঢুকে এলো টাবোয়, স্পিতির ধারে ছিমছাম ছোট্ট গ্রাম, ১০০০ বছরের পুরোন গোম্পা, তার লাগোয়া একটা বাড়ির সামনে থামলাম আমরা। বাড়ীটাতেও পুরনো পুরনো গন্ধ, ভারী কাঠের দরজা, মাটির দেওয়াল, চারপাশের সাথে এক্কেবারে মানানসই; এটা টাবো মনাস্টারির গেস্টহাউস। অশোকেরা গেল ভেতরে থাকার জায়গার খোঁজ নিতে। হাওয়ায় গাড়ি এমন থরথরিয়ে কাঁপছে যেন এখুনি উল্টে যাবে, কনকন করছে ঠান্ডা। জায়গা মিললো, বাথরুমে কল খুল্লে গরম জল এখন পাওয়া যাবেনা বটে, কিন্তু বালতি করে দিয়ে যাবে। ঘরে ঢুকেই মনটা জুড়িয়ে গেল; দেখনদারির বাড়াবাড়ি নেই, কাঠের মেঝে-কড়িবরগা, মাটির দেয়াল, মেঝেতে নরম কার্পেট মত পাতা, খাট টেবিল চেয়ার, যেন টাবোর ইস্কুলের ছেলেটার ঘর, সরল সাধাসিধে, এক্ষুনি দুড়দাড়িয়ে মাঠ থেকে ফিরে পড়তে বসবে। অবশ্য কাঠের মেঝেটা অমন দুপদাপ করে পা ফেলে চললে কাঁপে। ছোট্ট কাঠের জানলা, আর জানলা খুলে মুখ বাড়ালেই -




    গেস্টহাউসের কেয়ারটেকার এক নেপালি পরিবার। ভীষণ অতিথিবৎসল অমায়িক এক হাসিখুশি ছেলে আর তার দিদি বারেবারে এসে খোঁজ নেয় কি লাগবে না লাগবে, যাই বলো তৎক্ষনাৎ হাজির। কিছুদিন আগের ভূমিকম্পে তাদের দেশের জমিবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবুও ঠোঁটের কোণে হাসিটি লেগেই আছে। কিচেনের পর্দা সরিয়ে বেরুলো গরম গরম ধোঁয়া ওঠা চিকেন মোমো আর থুকপা। মুখে তুল্লেই জিভে মিশে যায় এমনি নরম মোমো! আহা, কতদিন বাদে এমন ভাল রান্না খেলাম, পুরো ট্রিপের মধ্যে সবচেয়ে ভালো থাকার জায়গা এই টাবোতেই ছিল, আর সবথেকে ভালো খাওয়াদাওয়াও। আজও আমার লেখা দেখতে দেখতে অ বলে উঠলো - 'কি খেয়েছিলাম!!!'

    কারেন্ট আসছে যাচ্ছে বারবার, ওতেই মোবাইল চার্জে লাগিয়ে দিয়ে দুখানা করে সোয়েটার চাপিয়ে, কান মাথা ভালো করে ঢেকেঢুকে আমি আর অ চরতে বেরোলাম। একটু হেঁটে গিয়েই টাবো হেলিপ্যাড, চারদিক খোলা; হাওয়ায় ভর করে পাখনা মেলেছি আমি, চলে যাব মোরা পাশাপাশি উড়ে পাহাড়ের পরে, অচেনা আকাশ, অজানা দেশে বাঁধবো বাসা দুজনায়। টাবো হেলিপ্যাড থেকে তোলা ছবি আর ভিডিও -



    এখান থেকে একটু দূরে একটা ঘেরা জায়গায় প্রচুর গাছ লাগান ছিল। লালচে ন্যাড়া ন্যাড়া পাতাবিহীন গাছ, গোড়ায় নীল রং লাগানো। ওখানে ঢুকে ইতিউতি দেখছি, অমনি একজন ভাগিয়ে দিলে, ওখানে নাকি কিসের রিসার্চ হয়, প্রহিবিটেড এরিয়া।


    আমরা এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছিলুম দূরে রাস্তা পেরিয়ে যে পাহাড়ের দেওয়াল তার গায়ে খুদি খুদি গুহা, খেয়াল চাপলো গিয়ে দেখে আসি। কোদ্দিয়ে যাবো জিজ্ঞেস করে করে এর বাড়ির উঠোন, তার বাড়ীর পিছন দিয়ে দিয়ে গিয়ে ল্যান্ডমার্ক কার একটা মুদির দোকানের সামনের গলি দিয়ে মেন রাস্তায় উঠলাম। এবার দুই ন্যানো-ট্রেকার পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগলো, পায়ের নিচে নুড়ি গড়িয়ে পিছলে যাচ্ছে, কিন্তু কিছুদূর উঠেই তারা বুঝলো ক্রমেই খাড়াই হয়ে গেছে দেয়ালটা, এ তাদের কম্মো নয়! তারপরেই বোকাদুটো দেখলো একটু দূরে ধাপ কাটা সিঁড়ি বানান আছে দিব্য! চোখেই পড়েনি। আবার রাস্তায় ফিরে ওই ধাপ বেয়ে বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। একটু উঠেই কেমন হাঁফ ধরছে, বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কম বিলক্ষণ মালুম হয়। রেস্ট নিয়ে নিয়ে উঠছি, যত ওপরের দিকে যাই ধাপগুলো তত অসমান, উঁচু উঁচু। খাড়াই সিঁড়িতে অ-এর খুব ভয়। হঠাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে এবার সে হাঁউমাউ করে উঠল- 'আমি আর উঠবোঁনাঁআঁআঁ।'


    গুহায় কি আছে দেখার ইচ্ছে আমার ষোলআনা, 'তুই এখানেই দাঁড়া, আমি ঘুরে আসি'; সেও বাবুর পছন্দ না, শেষে নিচের পানে না তাকিয়ে বাকিটা সে কোনমতে উঠলো। গুহার ভেতর গুলো অন্ধকার অন্ধকার, একটায় কিছু আঁকাও ছিল, পরিষ্কার বোঝা যায়না, অনেক অনেক বছর আগে বুদ্ধের অনুগামীরা এখানে সাধনা করতেন। এইখান থেকে ছোট্ট টাবোকে পুরো দেখা যায়, চৌকো চৌকো ছড়ানো ছিটনো দেশলাই বাক্সের মত বাড়ি, চাষের জমি, চাষের জন্য জমানো জলের পুকুর মতন, এই সবকিছুর ওপারে কুলকুলিয়ে বয়ে চলা বরফ ঠান্ডা স্পিতি, তার ওপারে হিমালয়, আর সবকিছুকে ঘিরে নীল সাদা রং গুলে রাখা বাটিটা কে যেন উল্টে দিয়েছে!




    গুহা এক্সপ্লোর করার পর আমাদের পরের স্টপেজ টাবো মনাস্টারি। ফিরতি পথে দেখি গোবলু আপাদমস্তক গোলাপী বাচ্চা, বছর দুয়েকের হবে, বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। ছবি তোলার আগেই ব্যাটা টলমল পায়ে একছুট্টে পালাল! টাবো গোম্পা অন্যতম পবিত্র বৌদ্ধ ধর্মস্থান, প্রাচীন তিব্বতী রাজাদের বংশধরেরা মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটানোর জন্য এটির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ এর ভূমিকম্পে এই গোম্পার অনেক অংশ ভেঙ্গে গেছিল, আবার সমস্ত সারাই হবার পরে দালাই লামা এসে কলাচক্রের সূচনা করেন ( প্রানপ্রতিষ্ঠা ও পুনরুজ্জীবন জাতীয় ব্যাপার), ১৯৯৬ তে এই গোম্পার হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষেও তিনি এসেছিলেন। খুব উৎসাহ নিয়ে আমাদের সমস্ত ঘুরিয়ে দেখালেন একজন লামা, ছবি ধরে ধরে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, সব কটা মন্দিরের ইতিহাস সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে বলে চলেছিলেন, যদিও শ্রোতা মোটে চারজন!




    মোট নটা মন্দির আর চারটে স্তুপ আছে। একটা মন্দিরের নাম গোল্ডেন টেম্পল, সেখানে নাকি একসময়ে সোনার কারুকাজ করা ছিল। ভারী ভারী দরজা, পাইন কাঠের বিম, মাটির তিন ফুট মোটা দেয়াল, ভেতরে অবিচ্ছিন্ন নিস্তব্ধতা, টিমটিমে প্রদীপ জ্বলছে, ছাদের খুপরি জানলা দিয়ে শেষ বিকেলের মরা আলো আসছে অল্প, ঝুলছে লম্বা লম্বা থাংকারা কোন আদ্যিকালের গল্প বুকে নিয়ে, নিভন্ত টর্চের আলো পড়ে ক্ষনিকের জন্য বুদ্ধ সন্ন্যাসীরা ছবির মধ্যে থেকে জীবন্ত হয়ে উঠছেন, আর গমগমে স্বরে তাদের বৃত্তান্ত বলে চলেছেন আজকের লামা; সেই আধাভৌতিক পরিবেশে যেন সময় আজও সেই হাজার বছর আগেই থমকে দাঁড়িয়ে থাকে। ভিতরে ছবি তোলা বারণ, হাজার বছরের পুরনো সব চমৎকার দেয়ালচিত্র আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাই এই ব্যবস্থা। বুদ্ধের ছবি, আরো অজানা বৌদ্ধ দেবদেবী, গ্রীনতারা, বজ্রধাতুর ছবি, বুদ্ধ জাতকের গল্প ছবিতে ছবিতে আঁকা, বিচিত্র রঙ্গের কারিকুরি, বেশ কিছু ভয়ঙ্কর দৈত্যদানো টাইপের ছবিও রয়েছে; আর আছে কিছু হিন্দু দেবদেবীর ছবি, সম্ভবত শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী নারায়ণ আর ভয়ালদর্শনা কালী। কিভাবে ভারত-তিব্বত সীমানায় এই শান্ত নিরালা গ্রামে দুই সভ্যতা দুই ধর্ম মিলেমিশে গিয়েছিল তারই গল্প বলে চলে এই ছবিরা।


    নতুন মন্দির তৈরী হচ্ছে-


    পাশেই নতুন মন্দির তৈরী হচ্ছে, সেটা দেখতে গেলাম। আলাপ হয়ে গেলো নতুন হেড লামার সাথে। মহা পণ্ডিত ব্যক্তি, দর্শনশাস্ত্রের ডক্টরেট, তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধশাস্ত্রের গভীর তত্ত্ব আত্মস্থ করে স্বয়ং দালাই লামার নির্দেশে এখানে এসে যোগ দিয়েছেন। প্রথমবার হিমাচল বেড়াতে এসে কুলু মানালি না গিয়ে টাবো পৌঁছে গেছি শুনে খুব খুশি তিনি! আবার আসার নেমন্তন্ন করে গেলেন। আমরা খোঁজ নিলাম লামাদের প্রভাতী প্রার্থনা কখন হয়। আপাতত পিছনের হোস্টেলের আসেমব্লি হলে হয় ৬ টার সময়, নতুন মন্দির তৈরী শেষ হলে পরে সেখানে হবে।

    নতুন স্তূপের ছবি-



    নতুন মন্দিরের ভেতর বুদ্ধমূর্তি-



    সারাদিন ঘোরাঘুরির পর একটু ক্লান্ত, স্তূপের সামনের বেঞ্চিটায় পাশাপাশি বসলাম, শেষবেলার রোদ এসে পড়েছে দূরে পাহাড়ের গায়ে। অ বলে - এখানে এসে ঘর বানিয়ে থাকলেই হতো না বেশ! আমার মনের কথাটাই যেন ও বলে দেয়। আমি কিছু উত্তর দিই না, জানি এই প্রশ্নের কোন উত্তর হয়না, এই ট্রিপ শেষ হলেই আবার আমরা কেজো ফ্রাস্ট্রেটেড বাস্তববাদী খোলসের মধ্যে ঢুকে পড়বো, রোজকার টানাপোড়েনের মাঝে কখনো হয়তো মনে পড়ে যাবে টাবোর সেই মিষ্টি বিকেলটা, তার কথা লিখতে লিখতে মনকেমন করে উঠবে, ফিসফিসিয়ে অস্ফূটে শুনতে পাবো - 'থেকে গেলেই হত না!'

    রাত বাড়তেই শীত আরো জাঁকিয়ে এসে পড়লো। ডিনার সারতে নেমেছি নিচের ডাইনিং-এ। ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি। গেস্টহাউসের ডাইনিং হল -



    এখানটা ফাঁকাই, আমরা বাদে আরো একটা বাঙ্গালি কাপল, আরেকজন বিদেশী মেয়ে। ওই বাঙ্গালী কাপল গাড়ি নিয়ে আসেনি, তারা সরকারি বাসে করে সময় নিয়ে নিয়ে ঘুরছে, বেশী ছুটি থাকলে এমনি করেই ঘোরা ভাল, জায়গাটাকে আরো কাছ থেকে জানা যায়, চেনা যায়। ওই বিদেশিনীও বেড়াতে এসেছে, আমারই বয়সী হবে, একাই এসেছে সে এই অচেনা দেশে, আলাপ জমে ওঠার আগেই খাবার চলে এলো। উমমম্‌! মন উচাটন করা সুগন্ধ। এবার খালি হাত চামচ আর জিভের যুগলবন্দী। চকোলেট প্যানকেকটা যে কি ভালো খেতে ছিল! সব্বাইকে গুডনাইট জানিয়ে শুতে গেলাম, কাল খুব তাড়াতাড়ি ওঠা, আমরা লামাদের প্রেয়ার শুনতে যাবো। সেই নেপালি ছেলেটা এসে এক্সট্রা কম্বল দিয়ে গেল, নইলে ঘুম আসা মুস্কিল হতো। বিছানায় শুয়ে আছি, বাইরের মিশকালো অন্ধকারকে ম্লান করে দিয়েছে চাঁদের হালকা আলো। আস্তে আস্তে টাবোর ঘুমপরীরা তাদের দেশে নিয়ে চলে গেলো আমায়।
  • বেশ | 126.50.59.180 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:১৬686791
  • আরেক কিস্তি এগোবে না আজ?
  • পুপে | 120.5.74.2 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:৩৫686792
  • বেশ/সিকি দা,
    এখনো পরের পর্বটা শুরু করিনি তো। কাল রাতের মধ্যে হয়তো পাওয়া যাবে। :)
  • d | 24.96.169.158 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:৪৬686793
  • বাঃ বাঃ
    এদিকে পুপের লেখা পড়ে আমার আবার সিকিমের অসমাপ্ত অংশটা শেষ করতে ইচ্ছে করছে। কি কেলো!
  • পুপে | 74.233.173.188 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:৫১686794
  • সিকিমের লেখার লিং কই? আমিও পড়তে চাই।
  • smt | 120.224.242.240 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:২০686795
  • কল্পা এর হোটেল টা কি গোল্ডেন আপেল হোটেল?
  • পুপে | 74.233.173.198 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:৪১686796
  • না গোল্ডেন অ্যাপল নয়
  • Manish | 127.214.42.166 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৬:৫৮686798
  • ছবির সাথে তাল মিলিয়ে লেখাও ফাটাফাটি হচ্ছে।
  • পুপে | 120.5.74.177 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ২০:০২686799
  • মনীশদাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পরের পর্ব। :)

    Part-10

    সক্কাল সক্কাল দুজনে লামা হোস্টেলের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি। আরেকজন বয়স্ক মহিলা এলেন, বিদেশী; উনিও প্রেয়ার শুনতে এসেছেন। ওনার পিছন পিছন আমরাও হোস্টেলে ঢুকে পড়লুম। চওড়া উঠোন, সিঁড়ি বেয়ে উঠেই সামনে অ্যাসেমব্লি হল; দোতলার বারান্দার গায়ে সারি সারি ঘর। ছোট সেজ মেজ বড় লামারা হন্তদন্ত হয়ে এঘর ওঘর করছে; তিব্বতে নাকি দুই ছেলে আছে এমন পরিবারে বড় ছেলেকে লামা করার জন্য দিয়ে দিতে হয়, সেটাই নিয়ম, এই ছোট লামারা হয়তো তেমনই বাপ-মাকে ছেড়ে এখানে এসেছে! আমরা প্রার্থনাকক্ষে ঢুকে পড়লাম। ঘরটা ভীষণ রঙ্গিন উজ্জ্বল, এককাপ ঠান্ডা বাসি চায়ের তলানির মত মনকে এক নিমেষে চাঙ্গা করে ধোঁয়া ওঠা বিড়াল আঁকা ল্যাটে কফিতে বদলে দিতে পারে এমন আবহ। লাল নীল হলুদ সবুজ নানানরকম কাপড়, থাঙ্কা, চাইনিজ লন্ঠন, মোমবাতি দিয়ে সাজানো ঘর, মেঝেতে মোটা গদি গদি সুন্দর দেখতে কার্পেট পাতা। একটা উঁচু বেদীর ওপর দলাইলামার ছবি, আরো কোনো সিনিয়র লামার ছবি; রয়েছে বুদ্ধমুর্তি, বৌদ্ধ প্রচারকদের মূর্তিও। পিছনের কাঠের শোকেসে রাশি রাশি পুঁথি, রোল পাকানো ফিতে বাঁধা স্ক্রোল, থাঙ্কা সাজানো রয়েছে। কার্পেটের ওপর চৌকো চৌকো বসার নরম আসন, তার সামনে তাকওয়ালা কাঠের জলচৌকি মত জিনিস রাখা হয়েছে, ওর উপরে পুঁথি রেখে পড়া হবে। এছাড়া ঘন্টা রয়েছে। ঘরের দুদিকে দুখানা স্ট্যান্ডওয়ালা গোল ড্রাম, লম্বা ডান্ডা দিয়ে তাতে ঘা দিলে ভোঁতা অথচ গম্ভীর গুমগুমে আওয়াজ বেরয়, একে নাকি উডেন ফিস ড্রাম বলে। একে একে লামারা এসে জড়ো হচ্ছেন, খুদে লামাদের জায়গা সবচেয়ে পিছনের সারিতে, সবথেকে সামনে সবচেয়ে সিনিয়ররা। মন্ত্রোচ্চারণ শুরু হল, একটানা অচেনা সুরে, কখনো দ্রুত কখনো ধীর লয়ে গানটা হয়ে চলেছে। মজার কথা সবাই কিন্তু একসাথে গাইছে না, অ্যাট এ টাইম কয়েকজনই গাইছে, একজন গাইতে গাইতে থেমে যাচ্ছে, কিন্তু থামার আগেই আরেকজনের গলা তার জায়গা নেয়, কোন কোন অংশ আবার সবাই গায়, এইভাবে সদাপরিবর্তনশীল কোরাসটা হয়ে চলে, মৌমাছির মত গুনগুনে একটা মিহি চাপা অনুরণন কমে বেড়ে তার সাথে সাথে চলে। মাঝে সবাইকে চা দেওয়া হল, শ্রোতাদেরও। তারপর আবার নতুন উদ্যমে শুরু, মাঝে মাঝে ঘন্টাধ্বনি, ড্রামের সঙ্গত। সেই সুরের আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে গোটা ঘর। নিজের কানে না শুনলে ঠিক উপলব্ধি করা যায়না এ কি জিনিস। প্রায় দেড় ঘন্টা চললো প্রেয়ার। ভারি সুন্দরভাবে শুরু হলো আমাদের সকালটা।

    গেস্টহাউসের মাঝের ছাদ -


    প্রেয়ার হল -


    আমরা আজ কাজা, ঢঙ্কার গোম্পা, কী গোম্পা, কিব্বার দেখে ফেরত আসবো টাবোয়, এখান থেকে লাঞ্চ সেরে ফিরতি পথে পাড়ি দেবো, নাকো লেক আর ভিলেজ দর্শন করে ওখানেই রাত্রিবাস, এরকমই প্ল্যান। টাবোর পরে কোত্থাও থাকার কোন জায়গা খোলেনি, কাজেই থাকার সিন নেই ওদিকে। সকালে উঠেই বাক্সপ্যাঁটরা বেঁধেছেঁদে রেডি করে রেখেছিলাম, সুস্বাদু খাবারে উদরপূর্তি করে রওনা দিলাম। স্পিতির ধার বেয়ে বেয়ে রাস্তা চলেছে, খুবই খারাপ জায়গায় জায়গায়, রাস্তা নেই বল্লেই চলে। স্পিতি চলেছে অনেকটা চওড়া জায়গা নিয়ে সরু সরু শিরা উপশিরায় ভাগ হয়ে হয়ে, কোথাও কোথাও জলের ধারা জমে বরফ হয়ে রয়েছে এখনো, গ্রীষ্মকালের বরফগলা জলে পুষ্ট হতে দিন গুনছে শীর্ণকায়া স্পিতি। পথের পাশে পাশে মাঝে মাঝে আসছে পো পমরাং সিলুক ইত্যাদি ছোট ছোট গ্রাম, পাথরের গায়ে লেখা নাম গুলো, তার সাথে লেখা জনসংখ্যা, কারো ১০০, কারো ৩০! চলতে চলতে চোখে পড়ছে ছোটদের ইস্কুল, এখনো ছাত্রদের আনাগোনা শুরু হয়নি। কোথাও ফসলহীন জমি পড়ে রয়েছে, শুকনো গাছগুলো জমি থেকে কান্ড বের করে রুখাশুখা ডালপালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, শীত চলে গেছে, রেখে গেছে তার চিহ্ন।






    স্পিতির ধারে পোজ -



    রাস্তা চলে গেছে ঢঙ্কারের দিকে -


    শিচলিং থেকে ডানদিকে উঠে গেছে ঢঙ্কার মনাস্ট্রির রাস্তা। অনেকটা উঠে গেটের সামনে গাড়ি রাখলো অশোক। ঢুকে দেখি সব তালা মারা, একজন ছিলেন, কিন্তু তিনি হিন্দি ইংরেজি বাংলা কিছুই বুঝছেন না, আর ওনার ভাষাও আমরা বুঝচি না। উনিই শেষে আরেকজনকে ডেকে আনলেন, তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দি বোঝেন। কথা বলে জানলাম এটা গোম্পার নিউ কমপ্লেক্স। তালা খুলে দেখালেন সব। মূল পুরনো গোম্পাটি এখান থেকে হেঁটে যেতে হবে বেশ কিছুদূর; ভদ্রলোক আমাদের নিয়ে যেতে খুবই উৎসাহী, আমরাই নাকি প্রথম এই সিজনে এখানে পদার্পণ করলাম। আমারও ভীষণ ইচ্ছে যাবার। ঢঙ্কার - মানে 'fort on a cliff'। ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন কেন তিব্বতী স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন এই গোম্পাটি সার্থকনামা। পাহাড়ের গায়ের গ্রামের ভেতর দিয়ে পায়ে চলা পথে যাওয়া, পাহাড়ের শেষমাথায় ঝুলে থাকা গোম্পার ছাদ থেকে পিন আর স্পিতি নদীর মোহনার চমৎকার ছবি তোলা - এসবই করা যেত। কিন্তু দেখলাম অ-এর সেরকম ইচ্ছে নেই, আর অশোকও তাড়া লাগাতে লাগলো যে এখানেই এত সময় লাগলে আজকের মধ্যে নাকো ফিরতে পারবোনা, এমনিতেই বেলা হলেই গাড়ি আটকে রেখে রাস্তা চওড়া করার কাজ হয়। শুধু নতুন অংশটি দেখেই আমরা কাজার পথে এগোলাম। :( এই আফশোস আমার থেকে যাবে যতদিন না আবার ওই স্বর্গরাজ্যে যেতে পারি!
    আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে ঢঙ্কার গোম্পা ও আশেপাশের গ্রাম -



    ঐ অনেক দূরে পাহাড়ের সবথেকে ধারে পুরনো মঠ আর কাছের বিল্ডিংটা নিউ কমপ্লেক্স-


    মঠ ও গ্রাম -



    নতুন মঠের ভেতরের ছবি -



    যাঁরা যাবেন তাঁদের বলে রাখি অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে যাবেন, আর এখানে একটি স্টে নেবেন, এখানেও চমৎকার কিছু হোমস্টে আছে। ভোর ভোর উঠে ট্রেক করে দেখে আসবেন ঢঙ্কার লেক, সূর্যোদয়, লালুং অবধি হেঁটে আসবেন, কিম্বা নিজের ইচ্ছেমতন পাহাড়ের বুকে হারিয়ে যাবেন যেদিকে দুচোখ যায়! আরো একদিন রাখবেন পিন ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক দেখার জন্য। এপ্রিলের শেষে পিন ভ্যালি খোলে নি। ঢঙ্কার ছাড়িয়ে একটু এগিয়েই বাঁ দিকে স্পিতি ক্রশ করে রাস্তা ঢুকে গেছে ভ্যালির দিকে, পিন নদীর ধার বরাবর। সেই রাস্তা গিয়ে উঠেছে স্নো লেপার্ড, সাইবেরিয়ান আইবেক্সদের রাজ্যে, পরিযায়ী পাখিদের বেড়াতে আসার রাজ্যে!

    রাস্তার আরো ছবি -




    দেখতে দেখতে এসে পড়লো কাজা, এটা লাহল-স্পিতি জেলার গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা, তাই ভিড়ও বেশী, এখানে ব্যাঙ্ক, এটীএম, হসপিটাল, পেট্রল পাম্প, পোস্টঅফিস সব আছে। থাকার জায়গাও অনেক আছে, তবে এখন সবই বন্ধ, পেরিয়ে গেলাম কাজা। রাস্তায় ক্রমে রকম রকম নতুন নতুন জিনিস দেখতে পাচ্ছি। এই যেমন একই উচ্চতায় স্পিতির উল্টোদিকের পাহাড়ে বরফের আনাগোনা ক্রমেই বাড়ছে, কিন্তু আমরা যে পাহাড় দিয়ে যাচ্ছি সেইটি বেবাক ফাঁকা, বরফের নামগন্ধ নেই, মাঝে মাঝে ছিঁটেফোঁটা মাত্র! অবাক কান্ড! তারপর শুরু হল হরেক ডিজাইনের পাথরের স্ট্রাকচার, সেইইই নাইন-টেনে পড়েছিলাম 'আবহবিকার'- তার নিদর্শন চোখের সামনে। শূলের মত সরু সরু ছুঁচোলো রক ফর্মেশন, কোথাও একটু মোটা ভোঁতা ঢিপি মতন; পাহাড়ের গায়ে সব তৈরী হয়েছে হাওয়ার ধাক্কায়, বরফগলা জলে ক্ষয়ে। যত কী গোম্পার দিকে এগোচ্ছি তত যেন আরো মোটা হচ্ছে স্পিতি, তেমনি বাড়ছে তার জলে জলে থাকা বরফ। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম কী গোম্পা।

    দূরে কী মনাস্ট্রি-


    এই গোম্পার ঘরবাড়িগুলো যেন একটা আরেকটার মাথায় ব্যালেন্স করে করে বসানো, ১৩৬০০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ের গায়ে যেমন তেমন করে বসিয়ে দেওয়া। এটা স্পিতি ভ্যালির দু নম্বর প্রাচীনতম গোম্পা, এক নম্বর অবশ্যই টাবোরটা। এখানে এসে আবার অ-এর খুব হালকা হবার দরকার হয়ে পড়েছে, ঢুকেই আগে টয়লেটের খোঁজে ছুটতে হল, ঢোকার মুখে সারি সারি সুন্দর কারুকাজ করা প্রেয়ার হুইলগুলো ঘোরাতে অবধি সময় দিলে না! এখানে তখন বৌদ্ধ প্রার্থনাসংগীত চলছে। আমরা একটুও আওয়াজ না করে ভালো ছেলেমেয়ের মত পা টিপে টিপে লামাদের পাশ দিয়ে দিয়ে প্রেয়ার হলটা ঘুরে এলাম। অশোকও দেখি উঠে এসেছে, এই তিন অতিথিকে গোম্পার রান্নাঘরে ডেকে লামারা চা বানিয়ে খাওয়ালেন, কিচেনটায় একটা জানলা ছাদের দিকে, সেইটা দিয়ে আলো আসছে। চা টা অনেকটা গ্রীন টি-এর মত, মিষ্টি অথচ ঝাঁঝালো গন্ধ, ওই প্যাকেট করা গ্রীন টি-র থেকে লক্ষ গুণ ভালো খেতে। চা খেতে খেতে গল্প হল টুকটাক, আমরা কোথা থেকে আসছি কি কি ঘুরলাম এইসব; তারপর যাওয়া হল ছাদে, ঘুপচি অন্ধকার সিঁড়ি গলি, বেঁটে বেঁটে দরজা পেরিয়ে; আর দড়াম করে মাথায় ঠোকা খেলাম একটা দরজায়, সবাই এত ব্যস্ত হয়ে উঠলো যে আমিই লজ্জায় পড়ে গেছি! এই ছাদে যাওয়াটা কেউ মিস করবেন না, আশেপাশে যা দেখা যায় তার জন্যে দুটো চোখও কম পড়ে। আর একটা ছোট্ট ইনফো, পরে অন্য একটা ব্লগ থেকে জানতে পারি ২০১১ তে এক দশ বছুরে তিব্বতী ছেলেকে কী মনাস্ট্রির হেড লামার পদটি দেওয়া হয়, সে নাকি কোন বিখ্যাত বৌদ্ধ সন্নাসীর পুনর্জন্ম!
    গোম্পার কিচেন -


    এবার আমাদের কিব্বার যাওয়ার কথা, কিন্তু অ-বাবুর খুব বরফের শখ চেপেছে, কল্পায় যেরম ময়লা ময়লা বরফ পেয়েছিলাম তেমন না, ফর্সা সাদা বরফ। আমরা যেদিকের পাহাড়ে রয়েছি সেদিকের সব বরফই প্রায় গলে গেছে দেখে তার খুব মন খারাপ। অশোক আইডিয়া দিলো যে উল্টোদিকের পাহাড়ে তো বরফ আছে, কিব্বার না গিয়ে আমরা কিছুক্ষণ বরফের দিকে ঘুরে আসতা পারি। অ-এর খুব মনঃপুত হয়েছে কথাটা। অগত্যা চলো, কিব্বার দেখবো পরের বার। স্পিতি নদীর ওপর দিয়ে ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি ছোটাল রাংরিকের দিকে। এই রাস্তাটাই লোসার বতাল হয়ে চলে গেছে মানালির দিকে, মাঝে একটু অফ-রুটে গিয়ে পড়বে চন্দ্রতাল, তবে সে সবই খোলা পাওয়া যায় জুলাইয়ের পর থেকে। কিছুদূর যেতে না যেতেই বরফ পেয়ে অ-এর আর খুশি ধরে না। নানারকম পোজ দিয়ে দিয়ে ছবি তোলা হল।
    বরফ নিয়ে খেলা -



    মনকাড়া স্পিতি -


    স্পিতি ক্রশ করে মানালির দিকে যাবার ব্রিজ -


    বেশ বেলা হয়ে গেছে ততক্ষণে। এবার ফিরবো টাবোর দিকে। পথে কাজায় গাড়ি থামলো তেল ভরতে। পাশেই ভারি সুন্দর সাদার ওপর রংচঙ্গে ডিজাইন করা বৌদ্ধ স্তুপ ছিল, যাকে চোরতেন বলে তিব্বতী ভাষায়, টাবোতেও ছিল এই জিনিস। আমরাও নেমে একটু ঘুরে নিলাম; কাজাতেও শাক্য মনাস্ট্রি বলে একটা নতুন মনাস্ট্রি আছে, ২০০৯ সালে উদ্‌বোধন হওয়া, সেটায় আমরা আর যাইনি। পরে নেটে ছবি দেখেছি, না গেলেও চলে, এমন কিছু নয়।
    চোরতেন-


    পাহাড়ের গায়ে গায়ে -





    দূরে ছোট্ট স্কুল-


    ফেরার পথে পাহাড়ের গায়ে দেখি ছাগলের পাল চরে বেড়াচ্ছে, এগুলোই হয়তো আইবেক্স। আবার এক জায়গায় সড়াৎ করে একটা শেয়ালের মত লোমশ জীব রাস্তার এদিক থেকে ছুট্টে গিয়ে ওপারের ঝোপে লুকিয়ে পড়লো, কি ছিল ওটা কে জানে! ফেরার পথে অ-এর শরীরটা খারাপ লাগছিল, তাই সে গাড়িতে ঘুমিয়েই পড়লো। আমি স্পিতি ভ্যালির দুপুরের রুক্ষ রূপের ছবি তুলতে তুলতে মনে মনে সাজাতে শুরু করলাম- এবারে কি কি বাদ গেল, পরের বার কি কি দেখতেই হবে।

    ছাগলের পাল -


    দুপুর দুটো নাগাদ টাবোতে সেই গেস্টহাউসের কিচেন থেকেই খাওয়াদাওয়া সারলাম, অত ভালো মোমো থুকপা আজ অবধি আর কাউকে বানাতে দেখলাম না! তাদের বিদায় জানিয়ে , টাবোকে বিদায় জানিয়ে গাড়ী পাড়ী দিল নাকোর পথে, টাবোর গেটটা পেরনোর সময় বুকের ভিতরটা চিনচিন করে উঠলো, মন বলে উঠলো - এমন মিঠে এমন নিষ্পাপ জায়গায় যেন বারবার ফিরে আসি!
    আমাদের ট্রিপের বেস্ট স্টে-



    ফেরার পথে আবার সেই বিপজ্জনক রাস্তা; যাবার সময় আটকাইনি, কিন্তু ফেরার সময় আটকে পড়লাম বেশ কিছুক্ষণের জন্য, তাও দু দু বার। সুমদোর আগে এক জায়গায় ট্রাক বাস ইত্যাদির লাইন, সামনে কোথায় রাস্তার কাজ হচ্ছে গাড়ী আটকে। অশোক কোথায় আড্ডা মারতে গেছে; আমরা বসেই আছি, বসেই আছি,হঠাৎ উল্টোদিক থেকে একটা দুটো গাড়ি আসতে শুরু করল, তার মানে ওদিকের ট্রাফিক ছেড়েছে, চটপট গাড়িতে চাপলাম, অশোকের টিকি দেখা গেল। চলা শুরু; আবার আটকালাম কিন্নর জেলায় ঢুকে কিছুদূর যাবার পর, সেখানে বোল্ডার ভেঙ্গে পড়েছে রাস্তায়, রাস্তা পরিষ্কার হচ্ছে। বিরাট মেশিনটা কিরকম প্রথমে বড় বোল্ডারটা ভেঙ্গে ছোট ছোট টুকরো করছে, আর তারপর এইসা বড় বেলচা (যেটা কিনা মেশিনটারই পার্ট) দিয়ে টুকরোগুলো সাফা করছে। দেখতে বেশ ভালই লাগছিল, তো আমাদের গাড়ী যাবার মত জায়গা বেরোতেই অশোক টুক করে গলে গেল। আবার সেই মনোহর ভয়ংকর রাস্তা, মাল্লিং নাল্লা ইত্যাদি পেরিয়ে আমরা নাকো যাবার লেফট টার্নটা নিলাম।

    নাকো লেক ও গ্রাম-



    গ্রামের মধ্যে ঢুকে এসে আমরা গেলাম নাকো লেক দেখতে আর অশোক গেল ঘরের ব্যবস্থা দেখতে, এইখানেই রাতে থাকার কথা। অ্যারো দেয়া আছে লেক যাবার রাস্তা দেখিয়ে, সেই দেখে দেখে যাচ্ছি, নুড়ি পাথর বিছনো সরু গলি রাস্তা, আরো খানিক গিয়ে গাছপালা ঘেরা লেকটা দূর থেকে দৃষ্টিগোচর হল, কিন্তু কাছে যাবো কি! রাস্তায় ঘোড়া খচ্চরদের হাগুতে ভর্তি, আর তেমনি দুর্গন্ধ, ওরা নিশ্চই এখানে জল খেতে আসে; কোনক্রমে সেসব কাটিয়ে কাটিয়ে লেকের ধারে চলে এলাম। এটা লেকের মতন বড় মোটেই নয়, একটা দিঘির মত সাইজ। ঐপাশটায় আবার হোটেল বাড়ি এইসব বানিয়েছে, এদিকটায় কিছু গাছপালা। তখন সূর্য প্রায় পশ্চিমে ঢলে পড়ছে, হাল্কা রোদে চিকচিক করছে টলটলে জল, পাহাড়ের বরফ ছুঁয়ে নেমে আসা বাতাসে জলটা কাঁপছে তিরতির করে। শুধু এবং শুধুমাত্রই বিকেলের অস্তগামী রবির কিরণ আর আশপাশের পাহাড়েরা এই দিঘিটাকে আমার চোখে লেক বানিয়েই ছাড়লো!

    লেকের আরো ছবি -




    গাড়ির কাছে ফিরে গেছি, তখন প্রায় পাঁচটা বাজছে, অশোক ফিরেছে দুঃসংবাদ নিয়ে। কোন হোটেল পাচ্ছেনা সে, একটিই খোলা, তাদেরও বাথরুমের সমস্যা আছে, তার ওপর প্রচন্ড গলাকাটা দাম চাইছে! ঠিক হল আরো এগিয়ে দেখবো রাস্তার ধারে কোন হোমস্টে পাওয়া যায় কিনা, আসার সময় দেখেছিলুম বলে মনে পড়ে। কিছুদূর এগিয়ে রাস্তার ধারে একদম খাদের কিনারায় ছোট্ট হোটেলটার খোঁজ মিললো। দেখেই আমাদের মনে ধরেছে, আশেপাশে আর কোত্থাও কিছু নেই, পাহাড়ঘেরা রাস্তায় খাদের গায়ে হোটেলটা। অশোক খোঁজ নিয়ে এসে বললো - "ইধর ভি টয়লেট কা পাঙ্গা হ্যায়।" ! এবার? রাতে থাকবো কোথায়! তখনো নেক্সট জায়গা যেখানে হোটেল পাওয়া যাবে তা প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে, স্পিলোতে। এদিকে অন্ধকার নেমে আসছে পাহাড়ের আনাচে কানাচে, সুয্যি এক্ষুনি টুপ করে ডুব দিলো বলে! আলোচনা করে ঠিক হল এগিয়েই যাওয়া যাক। অ আরেক কাঠি সরেশ। গাড়িতে অশোকের সাথে তার কথোপকথন-
    অ - অব তক আপ বোল রহে থে, আভি ম্যায় কহতা হুঁ, আপ টেনশন মত লো।
    অশোক - রাতকো রুকেঙ্গে কাঁহা?
    অ - কোই বাত নহি, গাড়ি মে হি রহে লেঙ্গে। (!!!)
    অশোক - (হাসি সহযোগে) দেখহি তো রহে হ্যায় হর ওয়াক্ত উপর সে পাত্থর গিরতা হ্যায়। ইধর গাড়ী রোক্‌কে শোয়েঙ্গে তো মারে যায়েঙ্গে সব কে সব!
    অ - তো ফির কোই গাঁও আ যায়ে তো উধার রোক লিজিয়ে গা, ওয়হি গাড়িমে রহ লেঙ্গে । (!!!!!!!)
    অশোক - ইস টাভেরা মে তিন লোগ ক্যায়সে শোয়েগা?

    অতঃপর গাড়িতে কিভাবে তিনজনের কিভাবে জায়গা হয় সেইসব আলোচনা করতে করতে তারা চললো। এদিকে প্রায় ছটা বাজতে চলেছে, সূর্য ডুবে গেছে, বিকেলের শেষ আভা আভা আলোটুকু সম্বল। পাহাড় থেকে নেমে সেই খতরনাক ভাঙ্গাচোরা ২২ নম্বর জাতীয় সড়কে আমরা তখনো ঢুকিনি! তার ওপর এদের কথাবার্তা শুনে চিন্তায় আমার গলাটা ক্রমেই শুকিয়ে আস্তে লাগলো।




    ফুটনোটঃ
    ১। জুলাইতে স্পিতির গোম্পাগুলোয় ছাম বলে একটা নাচের উৎসব হয়, উৎসাহী লোকজন আসতে পারেন ওই সময়ে।
    ২। ঢঙ্কারে থাকার খোঁজ - “Manirang Family Guest House” (Contact Mr. Anil @ +91-9418556208), "Dhankar Monastery Guest House”(Contact: Parul Gupta @ +91-9418646578)
  • ওরেবাবা | 132.177.222.69 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ২০:২০686800
  • বাংলা সিরিয়ালের ক্লিফহ্যাঙ্গারে এনে ঝুলিয়ে দিল!
  • তাহলে | 120.5.74.177 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:১৯686801
  • থাকার জায়গা কি পাবে অপু?
    নাকি গাড়িতেই রাত্রিযাপন?
    গাড়িতে রাত কাটানোর মতো নিরাপদ জায়গা কি পাবে অপু?
    জানতে হলে পড়ুন পরের পর্ব। ঃ) ;)
    (সিকিদার নামের স্টাইল টা ঝাপলাম)
  • I | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:০৮686802
  • দিব্য হচ্ছে। লেখা ও ছবি। আর ঠিক ক্ল্যাইম্যাক্সে এসে চুপ মেরে গিয়ে পাঠক পটানোর কায়দাও শিখে গেছেন। জিতা রহো !
  • Tim | 140.126.225.237 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:৫৫686803
  • সুন্দর হয়েছে লেখা ও ছবি। গুজ্জব!
  • Div0 | 132.179.71.97 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:০০686804
  • ভালোলাগা ট্রাভেলগগুলোর মধ্যে এটা একটা হ'ল। নাইসলি ডান। অ্যান্ড কম্পোজড।
    এটা শেষ হোক। তারপর আরও এর'ম অনেক ট্রাভেলগ নামুক।
  • TB | 118.171.130.188 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:২৩686805
  • হ্যাঁ হ্যাঁ, এর পর লাইনে আছে অজন্তা ইলোরা আর মহাবালেশ্বরের টই
  • sosen | 184.64.4.97 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:৩৮686806
  • খুব মন ভালো করা টই, খুব ভালো লেখা হচ্ছে
  • পুপে | 131.241.184.237 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৩৭686807
  • I, Tim, Div0, sosen (দা/দি/কিছুনা)
    ফিডব্যাক পেয়ে খুব খুশি হলাম। শুরু করার আগে ভাবিই নি যে সবাইকার এত ভালোলাগবে। :)))

    TB (দা/দি?)
    অজন্তা ইলোরা তো এখনো যাইনি। ক্রিসমাসের লং উইকেন্ডে যাবো। ওটা আমাদের মিনি রোড ট্রিপ। এখন থেকেই উত্তেজনায় দিন গুনছি।

    ওরেবাবা-দা, তাহলে
    মাঝে মাঝে টই টা যাতে এসে লোকে দেখে যায় তাই এই বন্দোবস্ত ;)
  • ওরেবাবা | 132.177.222.69 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৩৯686809
  • তাই দেক্‌চি। ঠিক আছে, এখানে অনেকেই এই রকমের পাঁয়তারা মারে।

    আগে বাড়ুক। :)
  • sosen | 184.64.4.97 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৫৮686810
  • আমি দি(গম্ভীর গলায়)
  • + | 175.246.93.79 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:০৩686811
  • মাইরি!! রাস্তার মাঝে ঝুলিয়ে কাটিয়ে দিল, পুরো বাংলা সিরিয়াল তো। পড়ছি, ভাল্লাগ্ছে
  • d | 144.159.168.72 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:০৩686812
  • এবং ক্ষুব রাগী (আমি স্বপনে জেনেছি সেকথা)
  • Manish | 127.214.45.224 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:৪৬686813
  • ছবিগুলো সাঙ্ঘাতিক রকমের ভালো।
  • পুপে | 120.5.74.2 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:২৪686814
  • Part - 11

    বেশ অন্ধকার নেমে এলো, আমরা পাহাড় থেকে নেমে এসেছি, ঢুকে পড়েছি NH-22 এর 'নেই রাস্তা' স্ট্রেচটায়। ততক্ষণে অশোক এবং অ ঠিক করে ফেলেছে যে একান্তই কিছু না পাওয়া গেলে সামনের দুটো সীট পিছনে হেলিয়ে দিয়ে ওরা শুয়ে পড়বে, পিছনের দিকের সীট ফোল্ড করে আমি! কিন্তু অশোকের একটা বই দুটো কম্বল নেই; বাকি রা অনেক অনেক সোয়েটার পরে শোবে। খাব পেরলো, ঐ রাস্তায় অশোক ৩৫ কিলোমিটার পার আওয়ার স্পীডে গাড়ী চালাচ্ছে, লাফাতে লাফাতে কোমর ভেঙ্গে যাবার যোগাড়, স্পিলো এখনো ৪০ কিলোমিটার। আগে পিছে যদ্দুর দৃষ্টি যায় একটাও আর গাড়ী নেই। সাড়ে ছটা বেজে গেছে, ঠান্ডাও বাড়ছে অন্ধকারের সাথে পাল্লা দিয়ে। অশোক বোধহয় হেডলাইট ছাড়া অন্ধকারে হাঁসুলী বাঁকে পূর্ণ রাস্তায় কদ্দুর যেতে পারে তার রেকর্ড তৈরীর তালে ছিল; একটা বাঁক ঘুরে আচমকা সামনে একটা সুমো! আলো জ্বললো, সেইসাথে প্রতি টার্নে একবার করে হর্ন যোগ হল এবার থেকে। একটা একটা ছোট ছোট গ্রাম পেরিয়ে যাচ্ছে, থামার লক্ষণ নেই, স্পিলো না গিয়ে সে আজ থামবে না, যে করে হোক এই স্বল্পপরিচিত যুগলকে সে রাতে নিরাপদ আশ্রয় জুটিয়ে দেবে। মাঝে আরেকটা অন্য গাড়ী আমাদের সামনে সামনে চলছিল, পুহ তে তারা থেমে গেল। আবার আমরা তিনটি প্রাণী, সাতলুজ নদী, শুটিং জোনে ভর্তি পাহাড়ী রাস্তার একের পর এক বাঁক আর হেডলাইটের আলোয় দেখতে পাওয়া পথটুকু; গাড়িতে আর কোন আওয়াজ নেই এখন, 'আপ ট্যানশন মত লো' 'গাড়িমে হি রহ লেঙ্গে' রা থেমে গেছে! অনেকক্ষন পর গাড়ির আলোয় দেখা গেল সিমলা আর ২৭০ কিমি মত,স্পিলো ২০ কিমি, অশোক যেন একটু নিশ্চিন্ত হল, গাড়ির দমচাপা পরিবেশটা হালকা করার জন্য সে বলে উঠলো - 'অব তো আশপাশ আ হি গয়ে হ্যায়, স্পিলোমে ভি হোটেল না মিলে তো আজহি সিমলা তক চলে যায়েঙ্গে!' ইল্লি নাকি! এখনো সাংলা, চিটকুল, সারাহান দেখা বাকি, বল্লেই হল সিমলা যাবে! আবার সব চুপচাপ, দেখতে দেখতে স্পিলো ৭ কিমি লেখা মাইলস্টোন এল, সবাই আরেকটু নিশ্চিন্ত। কিন্তু সেই সাত কিলোমিটার আর যেন শেষই হতে চায়না, আমি স্পিডোমিটার দেখে হিসেব করছি ঠিক আর কতক্ষণ এই সাংঘাতিক পথ চলা, হিসেব মত মিনিট ১৫-২০, সময় আর কাটেনা,আটটা নাগাদ গাড়ী ঢুকে এল স্পিলোয়। গাড়ি থামার পর দুজন দুভাষায় প্রায় একইসাথে বলে উঠলো - ' মাইলস্টোনের হিসেবে বোধহয় গড়বড় ছিল!'

    স্পিলোয় তখন পাওয়ার কাট চলছিল, টিমটীমে বাতি চলছে দোকানগুলোয়, একটা হোটেল পাওয়া গেল। তারা ৬০০ টাকায় ঘর দেবে বটে, কিন্তু অ্যাটাচ বাথরুম নেই। স্পিলোতে অপশনও নেই বেশি, এখানে আমাদের মত বিপাকে না পড়লে লোকজন খুব একটা রাত কাটায়না, অগত্যা যা পাওয়া যায় তাইই সই, রাতে মাথা গোঁজবার মত ব্যবস্থা হলেই হল। টেনশনে খিদে পায়নি এতক্ষন, এবার সে বেশ চাগাড় দিয়ে উঠলো। অর্ডার দিতেই রুমে এসে গেল গরম গরম রুটি, ডিমের ভুরজি, পনীর, আর ধোঁয়া ওঠা কফি; বেশি বেশি দুধ চিনি দেওয়া ঐরম ঘন সুস্বাদু কফি এইরকম জায়গায় পাবো আশা করি নি, সব ক্লান্তিটুকু মুছিয়ে দিতে দিতে গলা দিয়ে নামতে লাগলো। একটু থিতু হবার পর খেয়াল করলাম নদীর জলের বয়ে যাবার একটা অবিরাম শব্দ আমাদের সঙ্গী। অন্ধকারে ততক্ষণে চোখটা সয়ে গেছে, জানলা দিয়ে দেখলাম পিছনেই চাঁদের আলোয় আবছা পাহাড় আর সাতলুজ। বাঃ, লোকেশনটা বেশ ভালো তো!

    সকালে উঠেই প্রথম চিন্তা বাথরুমে নিয়ে, কি জানি কেমন ব্যবস্থা; ঘরেই পাশেই সেটা, তবে দেখা গেল কমন হলেও বাথরুমটা পরিষ্কার, তাৎক্ষনিক প্রয়োজন কোনমতে মিটিয়ে রেডী হয়ে গেলাম। সকালে আরো ভালো করে নজরে এল রুমের ভিউ, তবে জানলায় একটা জাল লাগানো থাকায় ছবি ওঠেনি ভালো। আমরা ব্রেকফাস্ট করে রেডি, তখন দেখি অশোক সবে ঘুম থেকে উঠেছে। কালকের ঐ চাপ সামলে তার আজ একটু দেরি হয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হলো, আজ বেরোয়ে বেরোতে প্রায় পৌনে নটা বেজে গেছে। আজ অবধি প্রতিদিন আমরা লেটেস্ট সাড়ে সাতটায় বেরিয়ে পড়েছি। তবে আজ বেশীক্ষণ যেতে হবে না, ৯০ কিলোমিটার এখান থেকে চিটকুল। আজ অশোক বলেই ফেললো যে রোজ রোজ সাতটার মধ্যে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়তে চায় এমন যাত্রী তার ড্রাইভিং জীবনে সে খুব একটা পায়নি - 'আজ তক তো ম্যায় ওয়েট করতা থা। অব নিন্দ সে উঠকে দেখতে হ্যায় কে আপ বোলতে হো চল ভাই নিকলতে হ্যায়।' কথায় কথায় চলে এলাম করছাম। মাঝে এক জায়গায় পুলিশের চেকপোস্টে গাড়ী দাঁড়িয়েছিল, সেখানে ফোটোশ্যুট হল। এখানে রাস্তার পাশে পাশে প্রচুর সেনা ছাউনি আছে, তাদের রকমারি নাম, টাইগার, বীর জওয়ান জাতীয়; এতদিন পর আর ঠিক ঠিক মনে নেই সেই নামগুলো।

    পুলিশ ছাউনি-

    পুলিশ ছাউনির সামনে হিরো -

    হিরোর বন্ধু -

    ঐ মেশিনের ড্রিল দিয়ে পাহাড় ফুটো করছে, রাস্তা চওড়া হবে -


    করছাম থেকে সাতলুজের বুকের ওপর দিয়ে ব্রিজ পেরিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম সাংলা চিটকুলের রাস্তায়, এবার সাথে সাথে চলেছে বাস্পা নদী। রাস্তার পাশের পাহাড়ে লম্বা লম্বা হলদে আলো জ্বলা টানেল খোঁড়া রয়েছে, সেখানে যদিও সাধারণের প্রবেশ নিষেধ, কিসব কাজ হচ্ছে সেখানে। এখানে বাস্পা ক্রশ করে ওপাড়ের পাহাড়ে গিয়ে উঠতে হবে। এরকম একটা ব্রিজের মুখে গিয়ে গিয়ে দেখি রাস্তা বন্ধ, ওপাড়ের রাস্তায় নাকি ধ্বস নেমেছে; আরো বেশ কিছুদূর এগিয়ে অন্য ব্রিজে চেপে বাস্পা পেরোলুম। এখানেও রাস্তা খুব একটা ভালো না, নাচতে নাচতে চলেছি। বাস্পার ওপরে এখানে একটা বিশাল বাঁধ দেওয়া, ওপারে বিপুল জলরাশি থমকে রয়েছে আর এপারে মরা নালার মতন বাস্পা। আমাদের রাস্তা চলে গেছে এই বাঁধের পাশ দিয়ে পেরিয়ে গিয়ে ঐপারের হাঁক ডাক করে গর্জন করতে করতে নেমে আসা বাস্পার কাছে! যেমনি তার স্রোত, তেমনি তার গান আর চলার ছন্দ। হিমালয় দাদুর কোল জুড়ে হেসেখেলে বেড়িয়ে বাস্পা তাঁর গাম্ভীর্যের মুখোস সরিয়ে যেন চিলতে হাসি এনে দিয়েছে তাঁর ঠোঁটে। এই পুরো ট্রিপে রকমারি রূপ দেখেছি আমরা পাহাড়ের, সবুজে সবুজ পাহাড় রামপুরের দিক অবদি; তারপর ছাড়া ছাড়া হালকা গাছপালা আপেল বাগান বরফ ঢাকা চূড়া কল্পায়; তারপর রুক্ষ পাথুরে বরফহীন অথচ অপরূপ সুন্দর পাহাড় পেয়েছি স্পিতিতে, সেখানেই আরো এগিয়ে একদিকে বরফে বরফ আর একদিকে বরফ গলে যাওয়া বাদামী পাহাড়; বাস্পার তীরে হালকা পাইন দেওদারের জটলা আর বরফ দুইই একসাথে সাজিয়েছে পাহাড়কে, আবার আপেল বাগানও হাজির! হিমাচলেই বুঝি হিমালয় একসাথে একশো রূপ উজাড় করে দেয় তার প্রেমিকদের কাছে। একে একে পেরলো সাংলা বাতসেরি রকছাম, লম্বা লম্বা গাছের ছায়ায় ঘেরা ছোট ছোট গ্রাম। কাঠের বাড়ি, তাদের বাগানে ফুল ফলের গাছের মেলা, এদিক সেদিক কুঁচো ঝরনারা, বেশ খানিক নিচে নেমে গেলে চলে যাওয়া যায় বাস্পার সবুজ তীরে, সত্যিকারের 'ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' এখানেই! আশেপাশে রাস্তা ঢুকে গেছে নদীর ধার অবদি যাওয়ার, সেখানে প্ল্যাকার্ড লাগানো বাঞ্জারা ক্যাম্প, কিন্নর ক্যাম্প ইত্যাদি, তবে একরাতের ভাড়াই প্রচুর এসব জায়গায়।

    বাস্পার ওপর ব্রিজ-

    বাঁধের কাছাকাছি কোথাও, মনে নেই কোথায়-

    রাস্তার সিনসিনারি-








    রাস্তায় আশেপাশে দেখি দু একটা লোমশ বাছুর মরে পড়ে আছে, উপরের পাহাড়ে ঘাস খেতে এসে বেচারারা নুড়িতে পা হড়কে পড়েছে নিচে। এরই মধ্যে একটা সাংঘাতিক ঘটনা ঘটলো, উল্টোদিক থেকে একটা ছোট অল্টো আসছিল, হঠাৎ উপর থেকে একটা বেশ বড় পাথর পড়ে তার সামনের কাঁচটা পুরো চুরমার। সামনের সীটে যারা বসেছিল তাদের গায়ে কাঁচে কাঁচ, তবে কেউ আহত হয়নি। কয়েক সেকেন্ডের দেরি হলেই আমরা ঐ জায়গায় থাকতাম! অশোক বল্ল এসব রাস্তায় এরম লেগেই থাকে, তাই সে তাড়াহুড়ো করে এই রাস্তাগুলো পাড় করতে চায়। আর সেরকম কিছু ঘটেনি রাস্তায়, বারোটা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম চিটকুল, ইন্দো-চীন বর্ডারের কাছে সর্বশেষ গ্রাম যেখানে মানুষের বসতি আছে।
    চিটকুলে হিরোর আরো বন্ধুরা -


    ছবিতে আমার একটা বন্ধু ঢুকে পড়ে ছবিটাকে আরো দশগুণ ভালো করে দিয়েছে-

    হোটেলের ভিউ-

    হোটেলে রুম পাওয়া গেল, সামনের বারান্দা থেকে অসামান্য ভিউ। আমরা যখন ঢুকলাম, তখন একটা মিনিভ্যান টাইপের বেরিয়ে গেল, চেক আউট করে। খাবারের অর্ডার দিয়ে হোটেলের উঠোনে বেরিয়েছি, জানা গেল ঐ ভ্যানের লোকেরা কি সুটকেশ ফেলে চলে গেছে। অশোককে নাকি হোটেল থেকে যেতে বলছিল দিয়ে আসতে সেটা টাকার বিনিময়ে, সে যায়নি- ' উপর সে পাত্থর গির রহে হ্যায়, পইসা সবকুছ নেহি হোতা, আপ হি বোলো কিঁউ যাউ ম্যায়, ঘর মে ছোটে ছোটে বাচ্চে হ্যায়।' সে তখন তার ছোট মোবাইলটার ঝাপ্সা হয়ে আসা স্ক্রিনে বাচ্চাদের ছবি দেখছে, দেবশিশুর মত এক ছয় বছুরে মেয়ে, দু বছরের ছেলে; তার মিষ্টি বৌয়ের ছবি, একটা চোলি টাইপের ড্রেস পরে রোদে দাঁড়িয়ে আছে সে, কোথায় অনুষ্ঠান ছিল বলে সে খুব সেজেছে। সেই পুঁচকেগুলো হয়তো এখন খেলছে, মাঝে মাঝে বাবার জন্য তাদের হয়তো মনকেমনও করে ওঠে।
    আমি- বহত সুন্দর বাচ্চে হ্যায় আপকে। গোরা চিট্টা।
    অশোক- ম্যায় গোরা, মেরি ঘরওয়ালি অওর গোরি, তো বাচ্চে ভি গোরে হি হোঙ্গে। (হাসি)
    তারপর স্বগতোক্তির মত বলে ওঠে- 'ইনহে ছোড়কর কাঁহা কাঁহা ভটক রাহা হ্যায় তু!'
  • TB | 118.171.130.188 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৩৩686815
  • ঐ পাঁচ-ছয় বছর অব্দি শিশুগুলো দেবশিশুসম থাকে (সব সময় নয় মোটেও), তার পরেই কেমন জানি হয়ে যায়!
  • একদম | 132.177.222.69 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:২০686816
  • টাকে এফসি।
  • de | 24.97.229.203 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৬:৫৪686817
  • বাঃ - খুব ভালো হচ্ছে পু, এই আজকে অনেক্গুলো কিস্তি একসাথে পড়লাম। তোমার লেখাটা হয়ে গেলে একটা শর্ট আইটিনেরারি দিও। লেখার মধ্যেও দিয়েছো - কিন্তু একজায়গায় থাকলে খুব ভালো হয়।
  • পুপে | 74.233.173.198 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:০৫686818
  • দে-দি
    আমার আইটিনেরারিটা বড় তাড়াহুড়োরর ঘোরা, দম ফেলার ফুরসত নেই। লেখা টা শেষ হলে আমারটা দেবো, আর কোথায় কোথায় আরো টাইম দিলে ভালো হয় সেটাও লিখবো।
  • ফরিদা | ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:৪৩686820
  • আহা দারুণ...। মাঝে মাঝে এটা পড়ছি আর মিলিয়ে মিলিয়ে নিচ্ছি। সেই কোনকালে গিয়েছিলাম - টাবো, কাজা, কিব্বের নামগুলো রূপকথার মতো লাগে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন