এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আইটি-তে ইউনিয়ন নিয়ে কি মত?

    Arjit
    অন্যান্য | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ | ৭৪৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arjit | 128.240.229.67 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:০৬695957
  • ইউনিয়ন, থুড়ি অ্যাসোসিয়েশন হয়েছে তো - কাল। আবাপ-তে বেরিয়েছে। সোমনাথ ভট্টাচার্য্য বলে একজন সাধারণ সম্পাদক। ২/৩ আইটি ইন্ডাস্ট্রীর ভিতর থেকে, ট্রেড ইউনিয়নের নিয়ম মেনে ১/৩ বাইরে থেকে। অলরেডি ইন্ডাস্ট্রী ক্যাঁওম্যাও শুরু করে দিয়েছে...ওই সেই পুরনো যুক্তি - যা ম্যানেজাররা বলে থাকে - এখানে সব মেধার ভিত্তিতে ইত্যাদি ইত্যাদি...
  • dd | 202.122.18.241 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:১১695958
  • তথ্যে ভুল। তথ্যে ভুল। বেমালুম ভুল।

    এই ব্যাঙ্গালোরের এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে বলছি - আমার চেনাজানা (যারা বয়সে এট্টু ইয়ং কিনা ত্রিশ থেকে চল্লিশ) তারা সবাই অমন ভুতের মতন খাটে। সবাই।

    যারা ব্যাংকে কাজ করে,অথবা ম্যানুফ্যাকচারীং,সার্ভিস সেক্টর ,জাহাজ কোম্পানী। প্রত্যেকে। (মানে গবরমেন্টের কোম্পানী বাদ দিয়ে)। এরা আই টির কেউ নয়।

    কিন্তু এটাই দস্তুর। এখন এটাই প্রচলিত। তাড়াতাড়ি বাড়ী আসলে কেউ আসে না।

    তবে হ্যাঁ, আই টির মতন দেদার ট্যাকা পায় না। কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে দেখতাম সিবিল ইনজিনীয়ারেরা রাত দিন পাগলের মতন খাটছে আর মাঝে মাঝেই হায় হায় করছে ক্যনো আই টি তে গ্যালাম না - বয়স থাকতে থাকতে।

    সুতরাং তথ্য হলো - সবাই অম্নি খাটে , কিন্তু পোচোন্ডো মাইনা পায়, বিদেশ ঘোরে - শুদু আই টি।

  • Rana | 212.158.75.199 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:১২695959
  • বছর ১১ আগের কথা। Chennai তে তখন। সদ্য চাকরীতে ঢুকেছি, প্রথম আপ্রইসাল। ওখানে আবার ৩ জন থাকতো panel এ।
    Appraisal discussion এ আগের থেকেই মাথাটা গরম ছিলো। তো শেষে আমাকে জিগ্গেস করা হলো তুমি project এর কাজে কতদিন extra রাত অবধি থেকেছো। আমি বল্লাম সারা বছর-এ সাকুল্ল্যে ৪/৫ দিন হবে। তা বলে যে project এর জন্য মাত্র এইটুকু টাইম dedicate করেছো... !! আমি ছোটোবেলা থেকে-ই একটু গেঁড়ে টাইপ-এর।

    আমি বল্লাম ৮ ঘন্টা কাজ হিসেব-এ আমাদের project estimation হয়েছে। এখন যদি তার বেশি কাজ করতে হয়, তাহলে হয় project Managerinefficient, কারন ভুলভাল estimation করেছে। নাহলে আমি inefficient যে ৮ ঘন্টার কাজ ৮ ঘন্টায় করতে পারছি না। আমার মতে দুজন-এর কেউই inefficient নয়। তাই রাত জেগে কাজ করতে হয় নি.....
    তাকিয়ে দেখি ৩ জনের-ই মুখ কালো, ফল যা হওয়ার তাই হল। বেরিয়ে আসার সময় শুনলাম বলাবলি করছে... "West Bengal এর ছেলে, এরা genetically comunist হয়"

    **** বোম কালী***
  • Arjit | 128.240.229.67 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:১৫695960
  • এগারো বছর আগে, চেন্নাই, বি ই কলেজ - আমি মনে হয় চিনেছি।
  • J | 160.62.4.10 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:২১695961
  • "Genetically communist"???
    তাহলেতে আমার কমুনিস্ট হওয়া উচিৎ ছিলো।
    যদিও, আমার অফিসে-বাড়ীতে পাব্লিক গাল পাড়ে আমাকে "কমুনিস্ট" বলে।
  • Arjit | 128.240.229.67 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:২৩695962
  • এবং আমি সিওর আমি চিনতে ভুল করিনি। নয় নম্বর হোস্টেল, দোতলায় ঘর, পরে সেন হল, বালুরঘাটে বাড়ি...
  • J | 160.62.4.10 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:২৮695963
  • আইটি ইউনিয়ন থেকে ডিফেকটিভ এজেন্সী
  • Rana | 212.158.75.199 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৩১695964
  • ধুৎ।
    হস্টেল ৮ (দোতালা), সেন হল, বাড়ি Andal। আমি ৯৩ EE batch
    তুমি?
  • Arjit | 128.240.229.67 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৩২695965
  • শোন যোদি - বি ই কলেজ থেকে এগারো বছর আগে চেন্নাইতে চাকরি করতে গেসলো অল্প কিছু পাবলিক - টিসিএসে। তাদের মধ্যে একজনেরই নাম ছিলো রাণা। এবং তাকে আমি ভালো করে চিনি। যদিও শ্রীমান নিজে আম্রিকায় থাকাকালীন দুম করে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান - মেল/ফোনের উত্তর আসতো না, যেমন এখনও উত্তর নেই। এবং বি ই কলেজ কম্পিউটার সায়েন্স ডিপের ওই বছরের ব্যাচের সকলেরই অনেক ক্যাল ডিউ আছে;-) শুধুমাত্র এই গায়েব হয়ে যাবার কারণে।
  • Parolin | 213.94.228.210 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৩৩695968
  • সভয়ে বলি , এই যে সবাই বলচে আইটি য়ালা সবাই খুব খাটে তাতে আমার কিন্তু এট্টূ এট্টু হাসি পাচ্ছে। আমি হাজার হাজার আই টি য়ালাদের দেখেছি যারা দিনে তিন-চার ঘন্টার বেশি কাজের কাজ কিসুই করে না।অবিশ্যি প্রজেক্টের ডেড্‌লাইন এগিয়ে এলে অন্য কথা।
    আর আমি হাবিজাবি কোম্পানির কথা বলছি না , এই ধরো এইচ পি , স্যাপ , অ্যালকাটেল , আই বি এম ,ওর‌্যাকেল ইত্যাদি ইত্যাদি।
  • Arjit | 128.240.229.67 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৩৩695967
  • যা: শালা, হিসেব মিলছে না। রং নাম্বার। আমি CST, 95

    তাইলে এগারো বছর আগে সদ্য ঢোকা চাকরী কি করে হয়?
  • Arjit | 128.240.229.67 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৩৪695969
  • ছড়িয়ে গেছে:-( ছরি:-((
  • Arjit | 128.240.229.67 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৩৯695970
  • তা ঠিক। অনেকেই খাটে না (এই যেমন আমি আজ ফক্কুরি কচ্চি - আমার উইন্ডোজ মেশিন রিফরম্যাট না করলে কিছুই করা যাচ্ছে না) - কিন্তু কোন কাজ না থাকলেও রাত্তির অবধি আপিসে বসে থাকে, ইয়াহুতে চ্যাটায় - কারণ ওই সময়টা দেখাতে হবে - যত দেরী করে বাড়ি যাচ্ছ, তুমি তত বেশি কাজের।
  • Rana | 212.158.75.199 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৪১695971
  • IBM, HP etc প্যারেন্ট কম্প্যানি আর Indian branch এর সাথে গুলিয়ে ফেলোনা ভাই ... এখানে এরা overtime পায়, শনিবার এলে ১২৫-১৫০%। বুয়েচো?

    Arjit, তুমি আমাদের batch এর CTS র নাচু, কোনার, শুভঙ্কর এদের চিনে থাকবে হয় তো...
  • Arjit | 128.240.229.67 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৪৫695972
  • সব নামগুলোই মনে পড়ছে। আমি এগারোয় থাকতুম। জয় চক্কোত্তি তোমাদের ব্যাচের তো? আমি তোমাকে জয়ের ভাইয়ের সাথে গুলিয়েছিলুম:-)
  • J | 160.62.4.10 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৪৮695973
  • আমিও ভাববাচ্যে বলি।
    ৩ ঘন্টাই হোক বা ২ ঘন্টা, অফিসে কাজের ভান করে ৯ ঘন্টা থেকে ১২ বা ১৪ ঘন্টা বসে থাকলে সেতো বন্দী। বাড়ী যেতে পারছে না, সিনেমা যেতে পারছে না। কাজ থাকলে করছে। নইলে করছে না। ফ্রুটফুল কাজ অতোঘন্টা একনাগাড়ে এমনিতেও করা যায় না সেটা একটু আগেই লিখেছি।
    তবে চ্যাট বোধয় আজকাল ব্লক করে রাখে। আর ব্লক করা থাকে পর্নো সাইটগুলো।

  • J | 160.62.4.10 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:৫৩695974
  • রাণা,
    বড়ো কোম্পানীগুলোর পেরেন্ট চাইল্ড রিলেশানের সঙ্গে ওভারটাইম বা এমপ্লয়ী বেনিফিটস গুলিয়ে ফেলোনা ভাই।
    সুইটজারল্যান্ডের বসে যখন ওরা ব্যবসা করে, তখন এদেশের লেবার আইন না মানলে ওদের ব্যবসা গোটাতে হবে।
    শনিবার ১২৫%
    রাত আটটা থেকে ভোর ছটার মধ্যে যে কোনো সময়ে ১৫০%
    রবিবার ১৭৫%
    বছরে ১৫০ ঘন্টার বেশি ওভারটাইম হলে লোক্যাল পুলিশ অথরিটি কোম্পানীতে তালা লাগিয়ে যেতে পারে।
    তাই ওরা খুব ভয়ে ভয়ে ব্যবসা করে।
    এর মধ্যেও ই চুরি হয় না?
    হয়।
    বেশি ওভার্টাইম করলে, তখন সেটা গ্রাহ্য করে না। ওটা ঠিক মার্জিনের মধ্যে নিয়ে আসতে বাধ্য করে।
    সবদেশের সর্ষেতেই অল্পবিস্তর ভূত থাকে।
  • Rana | 212.158.75.199 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২০:১৮695975
  • DD কে ডিট্টো। আমি এক বছর Project Design কম্প্যানি তে ছিলাম। দেখেছি construction site -এ সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল engg. র উদ য়াস্ত কাজ করে। বাড়ির সাথে ৫/৬ মাস, ১ বছর কোনো যোগাযোগ নেই...

    বা এই ধরো ICICI, ABN AMRO bank গুলোতে যারা কাজ করে... কেউ কি জানে তারা-ও মোটামুটি slave এর মতই কাজ করে।
    আসলে নানারকম ভাবে চাপ দিয়ে সময়ের বেশি খাটানো টা সব MNC ই করে 3rd world... এটা আজ শুধু IT তে নয়, বহু আগে থেকেই MNC culture এ চলে আসছে !!!!!

  • Rana | 212.158.75.199 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২০:২৭695976
  • যো দি,
    আমি তো সেটাই বলছিলাম পারো কে... এখানে IBM, HP এর সাথে দেশে-র IBM, HP কে গুলিয়ে ফেলোনা....::))
  • b | 59.145.136.1 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২০:৪৫695978
  • য , আবারো বলছি, এই বিষয়ে আপনার উদুম ফান্ডা, এবং সেই ফান্ড কাজে লাগানোর জন্য গুছিয়ে লিখুন, এবং শুধু anecdotal কাজ করে লাভ নাই। আগে যেমন contract analysis করেছিলেন, সেইটা করতে পারেন, আর সংগে legal referencesocio economic রেফারেন্স করতে পারেন। আপ্নার বক্তব্যের structure আপনি নিজেই ঠিক করুন। তাতে ডিবেট তো হবেই, হোক। আমি সরাসরি আপনাকে একটি পোবোন্ধো অর্ডার কল্লাম;-)

    আপনাকে তেল দিয়ে আমার লাভ নেই, পোবোন্ধো লিখলে আমার মাইনে বড়বে না।মনে করি, এই গুরু তে অনেক মানুষ আছেন যারা একটা draft text পেলে অনেক ভালো করে আলোচনা করতে পারবেন। এ কথা সম্ভবত সম্পাদক আগে বলেছিল, না বলে থাকলে কিছু করার নাই;-)

  • Arjit | 128.240.229.66 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২০:৫২695979
  • ওক্কুটে এটা নিয়ে একটা কম্যুনিটি করা হয়েছে - এবং তাতে অ্যাননিমাস পোস্টের সুযোগ আছে - যাতে অনেকে যারা ডিরেক্ট বলছে না তারা লেখে। অলরেডি একজন অ্যাননিমাস হয়ে বেশ কিছু লিখে গেছে:-)
  • Rana | 212.158.75.199 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২১:০৪695980
  • অর্জিত, লিন্‌ক টা দাও তো... আজ আমি free bird, সারারাত নেট দেখতে পারি.
  • Parolin | 213.94.228.210 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২১:২৮695982
  • রণা রে , আমি যতগুলি কোম্পানীর নাম বলেছি সব দেশের গুলোর কথাই বলেছি।
    নিজে যতটুকু দেখেছি আর কি।
    বলতে চাইছি না যে কেউই কাজ করে না , তবে অনেকেই করে না , বছরের অনেকটা সময়েই করে না।
    বরং দেখেছি কল সেন্টারগুলিতে কাজের চাপ অনেক বেশি। উদয়াস্ত খাটুনি , লিমিতেড ব্রেক। পনেরো মিনিট মানে , পনেরো মিনিটই। এক মিনিট বেশি হলে জবাবদিহি।
    আর কল্লোল , এই প্রসঙ্গে একটি কথা আপনাকেউ বলার ছিল। কল সেন্টার মানেই যে তথ্য পরিবেশনা এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। টেকনিক্যাল সাপোর্ট কল সেন্টার হলে ওভার-দ্য-ফোনে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্স দিতে হয় , কখোনো সখোনো বেশ হাই এন্ড সাপোর্টও। কাজেই কল সেন্টারের একটা বড় ভাগকে আই টি বললে এতটুকু ভুল হয় না।
  • kallol | 221.135.208.208 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২২:০৭695983
  • থ্যাঙ্কু পারোলিন। কিন্তু এট্টু কেসটা বুঝে নি। টেকনিকাল সাপোর্ট কল সেন্টার মানে ধরো :
    ১) SAPতে কোনো ঝামেলা হচ্ছে, আমি জানতে চাইলাম, কল সেন্টার সমধান দিলো।
    ২) একটা ব্রিজ ডিজাইনিং-এ কোনো ঝামেলা হচ্ছে, আমি জানতে চাইলাম, কল সেন্টার সমধান দিলো।
    ৩) একটা লজিস্টিক নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে, আমি জানতে চাইলাম, কল সেন্টার সমধান দিলো।
    এর সবকটিই কি টেকনিকাল সাপোর্ট কল সেন্টার? ফলত: আইটি?
  • r | 61.95.167.91 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২২:২২695984
  • কিন্তু কল সেন্টার তো সরকারী হিসেবেও আই টি-র মধ্যে পড়ে না। পড়ে আই টি ই এসের মধ্যে। এই নিয়ে এতো তর্ক কেন? আই টি ই এসের মধ্যে একদম পাতি টেলিমার্কেটিং থেকে স্ট্যাটিস্টিকাল মডেলিং অবধি পড়ে। সাধারণত: এগুলোকে হয় বি পি ও নয় কে পি ও বলে ডাকা হয়। ইদানীং জেনপ্যাক্ট আর এন ডি টি ভির জয়েন্ট ভেঞ্চারে এম পি ও শুরু হয়েছে- মিডিয়া প্রোসেস আউটসোর্সিং।
  • kd | 59.93.240.83 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২২:৩৫695985
  • এই বিতর্কটি পড়তে বেশ মজা লাগছে। তার সঙ্গে কিছু প্রশ্ন করার ইচ্ছে জাগলো।
    ১। যদি এরকম ইউনিয়ন হয় এবং তার ফলে এই বেশী ঘন্টা কাজে থাকা বন্ধ করা হয় - সেই নিয়ম কি ভারতের সব কম্পানিতেই খাটবে, না পশ্চিমবঙ্গে এক নিয়ম, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদে আর এক নিয়ম?
    ২। দিনে আট্‌ঘন্টার বেশী খাটা (ওভারটাইম ছাড়া) শুধু ITতেই নয় - অন্য অনেক জায়গাতেই আছে, এই কলকাতাতেই - আমি আড্ডা মারি আমার এক বন্ধুর গেঞ্জির দোকানে, যগুবাজারের কাছে - ঐ পাড়ার সব দোকানেই লোকেরা সকাল দশটায় আসে, রাত সাড়ে নটায় ফেরে - মাইনে দুহাজার থেকে পাঁচহাজার - ITর থেকে একটু কম। এদের ইউনিয়ন নেই? এরা (যাদের জিজ্ঞেস করেছি) সবাই কিন্ত ছিপিএম।
    ৩। যতদূর জানতুম exploitation হয় supply-demand অনুযায়ী। শুনেছি এখানে ITওলাদের সাপ্লাই কম, ডিম্যান্ড অনেক বেশী। তাহলে কী করে employerরা exploit করতে পারে, যদি না employeeরা নিজের ইচ্ছেতেই exploited হয়?
    ৪। এটা প্রশ্ন নয় - ফালতু চিন্তা। যদি এমন হয়, ইউনিয়ন হলো, কোম্পানি নিয়ম করলো ইউনিয়ন সদস্যদের একরকম মাইনে, অন্যদের, মানে যারা exploited হতে ভালোবাসে আরকি, বেশী মাইনে, তাহলে?

    ওপরের লেখাটা পড়ে মনে হল পাগলের প্রলাপ, তবে গুরুতে সবই চলে, তাই submit মেরে দিলুম, জয় মা বলে।
  • dam | 61.246.18.121 | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ ২৩:৫৭695986
  • খুব একটা গুছিয়ে লিখতে পারছি না, তবু কয়েকটা কথা।

    ১। শুধু আইটি নয়, এখানে দেখি কেউই রাত ন'টার আগে পরিবারের কাছে ফেরে না। এমনিতে পাঞ্জাবীরা ভীষণ পরিশ্রমী। একেবারে বসে থাকে না, কেবলই চেষ্টা করে যায় কি করে আরো দুই পয়সা আয় বাড়ে। রাজস্থান বা ইউ পির বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকজনের মধ্যেও সেই মানসিকতা বেশ ভালভাবে ঢুকে গেছে। তার একটা কারণ সম্ভবত: আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। আর একটা কারণ মেয়ের বিয়েতে প্রচন্ড পণ দেবার রেওয়াজ। তো সেই জন্যেই যার বিকেল ৬ টায় অফিস শেষ হয় সে হয় রিয়েল এস্টেট, নয় শেয়ার বাজার, নয়ত কোন দোকানে সময় দেয়। সে আইটি ই হোক কি নন-আইটি হোক। বরঙ আইটির লোকেরা অফিস থেকেই অনেকসময় টুক করে শেয়ারটা দেখে নিয়ে লেনদেনও সেরে ফ্যালে। নন-আইটি দের অনেকেরই সেই সুবিধে নেই। মোটকথা লোকে চাইছে সময় ইনভেস্ট করে পয়সা রোজগার করতে। সেখানে বাইরে থেকে একটা ইউনিয়ন চাপিয়ে দিলে কি কাঁচকলা হবে?

    ২। আইটি কোম্পানি গুলিতে সব প্রোজেক্টেই সমান কাজ থাকে না। আর কোন একজনকে যদি সারা বছরই একভাবে ১২-১৪ ঘন্টা করেকাজ করতে হয়, তাহলে হয় সেই প্রোজেক্ট ম্যানেজারটি আস্ত অপদার্থ, নয়ত সেই এমপ্লয়ী, অথবা দুজনেই। যারা রিসোর্স পুলে (পরিভাষায় বেঞ্চে) থাকে তাদের সারাদিনই অখন্ড অবসর। যদ্দিন না কোন প্রোজেক্টে অ্যালোকেটেড হচ্ছে তদ্দিন যখন খুশী এসে যখন খুশী চলে যাওয়া চলে। কলকাতা টিসিএসে আমি অন্তত ৫ জনের নাম এক্ষুণি বলতে পারি যারা ২০০০-২০০১ সালে বহুদিন বেঞ্চে ছিল, এবং সবদিন অফিসেও আসত না।

    আবার কোন বিশেষ প্রোজেক্ট, সেটা যদি Maintenance টাইপের হয়, তো তাতেও সবসময় সমান পরিমান কাজ থাকে না। এবং যখন কাজ থাকে না, লোকে সাধারণত ২-৩ ঘন্টা অফিসে থেকে কেটে পড়ে। কিছু প্রোজেক্ট আছে যাতে আবার ৪ ঘন্টার মতই কাজ থাকে। উদাহরণস্বরুপ বলতে পারি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বা ভিসা র প্রোডাকশান সাপোর্ট অ্যান্ড মেনটেনান্স প্রোজেক্টগুলো। ছোটখাট এনহান্সমেন্টের জন্য ২-৩ মাস সময় নেওয়া কোন ব্যপারই না। কারণ ওদের ও সিস্টেম টেস্টিঙে যাওয়ার ও লাইভ যাবার নির্দিষ্ট তারিখ থাকে।

    আরো কয়েকটা ব্যাপার আছে। ফিক্স্‌ড বিড প্রোজেক্ট হলে ম্যানেজমেন্ট চেষ্টা করে যতটাসম্ভব কম লোক দিয়ে কাজ করাতে। এখানেই প্রোজেক্ট ম্যানেজারের ক্যালী, সে কতটা অপটিমাইজ করতে পারে। সে যত ভাল করে রিস্কগুলো অ্যানালিসিস করে অসুখবিসুখ, অ্যাট্রিশান ইত্যাদি সম্ভাবনা দেখিয়ে মিটিগেশান প্ল্যান হিসাবে এক্‌স্‌ট্‌রা রিসোর্স রাখতে পারবে, তত প্রেশার কম থাকবে। অনেক ম্যানেজারই এগুলো ঠিকভাবে করতে পারে না, ফলে প্রোজেক্ট ঝাড় খায়, আল্টিমেটলি টিমের ছেলেরা অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়।
    টি অ্যান্ড এম প্রোজেক্টে কিন্তু কাজ হিসাবে লোক পাবে এবং সেটা দিনে আট ঘন্টা হিসাবে কাজ। কিন্তু এখানেও কিছু নন-বিলেব্‌ল রিসোর্স রাখতে পারলে চাপ কম থাকে।
    এবারে মজা হল সবেতেই প্রোজেক্ট ম্যানেজার, লীড ইত্যাদিরা সাধারণত বিলেব্‌ল রিসোর্স হয়। কিন্তু তারা আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিলেব্‌ল কাজকর্ম করেন না। ফলে সেই চাপটা অ্যাবজর্ভ করার জন্যও রিসোর্স দরকার। এই কথাটাও প্রোজেক্ট প্ল্যানিঙের সময় লোকে খেয়াল রাখে না, অথবা টেকনিক্যাল কাজ করছে না/পারছে না এটা জানাতে ভয় পায়।

    প্রশ্ন হল ইউনিয়ন কি এই ইস্যুগুলো অ্যাড্রেস করতে পারবে?

    ৩। আইটিতে নি:সন্দেহে বেশী মাইনে দেওয়া হয়। নাহলে SAIL বা ইন্ডিয়ান অয়েলের মত কোম্পানিতে ৮ বছর কাজ করার পর, অথবা LIC তে ১৫ বছর কাজ করার পর ছেড়েছুড়ে আইটিতে আসত না। এক তো পয়সা প্রচুর। তারপর বিদেশ ভ্রমনের সুযোগ। এছাড়াও বেশ ফাস্ট ভার্টিকাল গ্রোথ হয়। এইসব কারণেই লোকে জেনেরালি আইটি পছন্দ করছে।

    ৪। একদম গোড়ার দিকে, মানে ৮০র দশকের শেষ আর ৯০ এর দশকের শুরুর দিকে যখন USA তে একসাথে অনেকজন করে লোক পাঠান শুরু হল, তখনই ইঞ্জিনিয়ার নেবার ধুম শুরু হল। H1B প্রোসেসিঙের জন্য ১৬ বছর পড়াশোনা করা এবং ১ বছর চাকরী করা, অথবা গ্র্যাজুয়েট এবং ৩ বছর রেলেভ্যান্ট এক্সপিরিয়েন্স -- ছিল মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট। আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থায় পাস বা অনার্স গ্র্যাজুয়েটরা ১৫ বছর পড়াশোনা করে, তাই কেউ আর চান্স নিতে না। সোজা BE/B.TECH/M.Sc/M.Tech রিক্রুট করতে শুরু করে। টি সি এস সর্বদাই তাই করে। এখনও। বহু কোম্পানি নন-ইঞ্জিনীয়ার শুনলে ইন্টারভিউ ই নিত না। এখনও কেউ কেউ নেয় না।

    আবার এই আইটি এমনই এক জিনিষ যার জন্য প্রথাগত শিক্ষা খুব বেশী থাকার প্রকৃতই কোন দরকার নেই। তাই একটু ছোট কোম্পানিরা দিব্বি নিত/নেয়। একটু অভিজ্ঞতা হলেই দর কষাকষি করা যায়। ফলে ক্রমশ মাইনে বাড়তে থাকে। তারপর বাইরে গেলে কনভার্শন রেটের কল্যানে ভারতে এসে দিব্বি বড়লোক হওয়া যায়। ৩ মাসের একটা ট্রিপ, ইউরোপ আম্রিকায় মারতে পারলে ফিরে এসে মোটামুটি একটা গাড়ী কেনা যায়। লঙ টার্মে গেলে ফিরে এসে বাড়ী বা ফ্ল্যাট। সেটা অবশ্যই একজনকে একটা কমফর্ট ফিলিং দেয়। সে খামোখা ইউনিয়নের ঝামেলায় কেন যাবে? তার না পোষালে পাতি কোম্পানি বদলাবে। আইটি সেক্টরেই কিন্তু বেশ রোয়াবের মাথায় চাকরী ও করা যায়।

    ৫। NIIT Technologies Ltd এ চাকরী ছাড়ার সময় যদি valid H1B থাকে তাহলে অরিজিনাল পিটিশান পেপারটা জমা না দিলে ক্লিয়ারেন্স দেয় না। এটা সম্পূর্ন বেআইনী। এমপ্লয়ী ইচ্ছে করলে রিলিজ লেটার নেবার পর পুলিশে অভিযোগ করে কনস্যুলেটে জানিয়ে বিপদে ফেলতে পারে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ করে নি সেটা। কারণ পরবর্তী কোম্পানি থেকেই বলে দেওয়া হয় যে ও ছেড়ে দাও, আমরা নতুন করে করিয়ে নেবো। কাজেই কেউ আর ঝামেলা করে সময় নষ্ট করে না।

    ৬। সমস্ত ভারতীয় কোম্পানিই ভারত থেকে ইউরোপ আম্রিকায় লোক পাঠালে অনেক কম মাইনে দেয়। কিন্তু ওখান থেকে ভারতীয় লোকও ডাইরেক্ট রিক্রুট করলে ঢের বেশী মাইনে দিতে বাধ্য হয়। যারা যায় তারাও সেটা জেনেই যায় এই কারণে যে "ঠিকাছে কনভার্ট করলে তো অনেক হবে। তারপর সময়্‌সুযোগমত ওখানেই জাম্প করব"।

    এই শেষোক্ত দুটো ইস্যু এবং এইজাতীয় আরো কিছু কিছুর জন্য (যেমন পেনশান) ইউনিয়ন হলে ভালই হয়। তবে ঐ আইটির লোকেদেরই করতে হবে। বাইরে থেকে নয়।
  • Samik | 125.23.114.146 | ২৭ অক্টোবর ২০০৬ ০০:০৪695987
  • র শেষমেশ ঠিক কথাটা বলেছে। কল সেন্টার বিপিও আইটি নয়, এরা ITeS। এবং অবশ্যই অত্যাবশ্যকীয়।

    ছ বছর আইটিতে রইলাম, ইনফোসিস টিসিএস আইবিএম এনআইআইটি অউটওয়ার্কস পাঁচটা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ কোম্পানিতে কাজ করে ফেললাম, এবং তারপরে আমার মতামত, আমি আইটি-তে ইউনিয়নের বিপক্ষে। ইউনিয়ন হলে যেটুকু কাজকম্মো হয় এই ইন্ডাস্ট্রিতে, সেটাও গোল্লায় যাবে।

    একটা পরিষ্কার কথা জানাই, যারা IT ইন্ডাস্ট্রিতে আছে, সবাই মানবে, এখানে যে কোনও প্রজেক্টের এস্টিমেশন করা হয় পার্সন আওয়ার / পার্সন মান্থে। সেই এস্টিমেশন কতটা রিয়েলিস্টিক সেটা আলাদা বিতর্ক, কিন্তু সেই এস্টিমেশন থেকে একটা দিন বাদ চলে গেলে প্রজেক্ট এক্সিকিউশন বা ডেলিভারি, সবেতেই বেদম এফেক্ট পড়ে। ক্লায়েন্টকে সাধারণত ডে বাই ডে কাজের খতিয়ান দিতে হয়, কেবলমাত্র মাইনে পাবার জন্যেই আমরা সপ্তায় সপ্তায় টাইমশীট ভরি না, ক্লায়েন্টের কাছে বিল চাইবার জন্যেও সেই দৈনিক হিসেব দরকার। একটা দিন নষ্ট হলে কোম্পানির ক্ষতি। সেই দিনটার জন্য সে n সংখ্যক রিসোর্সের জন্য টাকা চাইতে পারবে না। কোন ব্যবসায়ী চাইবে লস করতে? ভারতে, বিশেষত বাংলার বুকে ইউনিয়ন ঢুকলে ধর্মঘট আসবেই। ইউনিয়নকে আমি খুব ভয় পাই। বাড়ির পাশেই ডানলপ ফ্যাক্টরি কিনা!

    আমি মনে করি না, IT তে আমাদের এমন কিছু এক্সপ্লয়েট করা হয় টয়, যার জন্য ইউনিয়ন ফর্ম করে প্রতিবাদ জানাতে হবে। সব কোম্পানিতেই কিছু খারাপ লোক থাকে, ভালো লোকও থাকে। রাতের পর রাত আমিও জেগেছি, তারপর প্রতিবাদে চেঁচিয়েওছি, তার ফল হিসেবে গরম কড়াই থেকে আগুনেও নিক্ষেপিত হয়েছি, সেদিন খুব খুব খারাপ লেগেছিল, কিন্তু জীবনে এই শিক্ষারও খুব দরকার ছিল, এখন আমি অন প্রিন্সিপ্‌ল অফিস আওয়ারের পর অফিসে থাকি না; হ্যাঁ, প্রত্যেকটা প্রজেক্টেই একটা ফেজ আসে, ডেলিভারি বা সাপোর্টের সময়, তখন বাড়তি সময় দিতে হয়, তা সে তো হবেই। রাত্তির পর্যন্ত থাকাটাই সকলের খারাপ লাগবে, তুমি থাকতে না চাইলে অন্য কেউ থাকবে, তাতে অসুবিধা নেই, কিন্তু তোমাকে এর পর দায়িত্ব দেওয়া হবে না আর, পাতি টিম মেম্বার হয়েই থাকবে, তোমার বন্ধু তোমার সামনে দিয়ে অনসাইট চলে যাবে। রাতে থাকলে টিসিএস ফ্রিতে ডিনার দেয়, সেটা তো দেখলে না? ইনফোসিসে রাতে থাকার জন্য ডর্মিটরিতে ঢালাও ব্যবস্থা।

    বেশির ভাগ সময়েই আমাদের বিদেশি ক্লায়েন্টদের নিয়ে কাজ করতে হয়, যার জন্য আমাদের অফিস আওয়ারের পরে থাকতেও হয়। তার জন্য আমরা সকাল নটার বদলে বেলা বারোটাতেও আসতে পারি।

    পরিষ্কার কথা, এস্টিমেশন আনরিয়েলিস্টিক হয় একশ্রেণির ম্যানেজারদের বাঁদরামিতে, সব ম্যানেজার এ রকম নয়, কিন্তু সেই এস্টিমেশন অনুযায়ে তোমার একটা মডিউল শেষ করার কথা তিনদিনে, সাধারণত তোমাকে জিজ্ঞেস করেই এস্টিমেশন করা হয় তোমার নামে, খুব ক্রিটিকাল প্রজেক্ট না হলে, এ বার তুমি নটাতেই আসো কি বারোটায়, রাতে থাকো কি না থাকো, কাজটা তিনদিনে শেষ করতে পারলে তুমি গুড, দু দিনে করতে পারলে এক্সেপশনাল, একদিনে করে ফেললে তুমি বেস্ট। তোমার যে কাজ করতে তিনদিন লাগে, সেটা একদিনে ৮ ঘন্টার বদলে ১০ ঘন্টা লড়ে নামিয়ে দেবার লোকও আছে এই ইন্ডাস্ট্রিতে।

    এর অবশ্যই সুদূরপ্রসারী এফেক্ট আছে। সে আগে কাজ শেষ করল, সে চটপটে, প্রজেক্ট বিফোর টাইম ডেলিভারি হল, ক্লায়েন্ট খুশ হল, কোম্পানি আরও বিজনেস পেল। এর জন্য সেই রিসোর্স রিওয়ার্ডও পায়, ক্যাশে বা কাইন্ডে। হ্যাঁ, দু নম্বরী, এক্সপ্লয়েটেশনও চলে, মানছি, কিন্তু উল্টোটাও চলে।
  • Samik | 125.23.114.146 | ২৭ অক্টোবর ২০০৬ ০০:২৯695989
  • ২০০০ সালে আমি ইনফোসিসে ঢুকেছিলাম অ্যাজ আ ফ্রেশার, মাইনে দিয়েছিল ১৬,৮৩২ টাকা। ভূবনেশ্বর পোড়ো জায়গা, এন্টারটেইনমেন্ট বলতে কিছু নেই, সব নতুন বন্ধুরা মিলে রাত নটা পর্যন্ত অফিসে থেকে অফিস ক্যান্টিন থেকেই ডিনার সেরে ফিরতাম। কী করব বাড়ি ফিরে? কারুর কাছে ভেহিকেল নেই, খাবার জায়গা নেই। অফিসে বসে পড়াশোনা করতাম। আমি তো তিনমাস বেঞ্চে ছিলাম।

    ২০০১-এ এল স্লো ডাউনের মার্কেট। রোজ খবর পাচ্ছি, আজ কগ্‌নিজেন্টে ছাঁটাই হয়েছে, কাল মাহিন্দ্রা ব্রিটিশ টেলিকম কী অপমান করে ছেলেমেয়েদের তাড়িয়ে দিয়েছে, উইপ্রো জয়েনিং ডেফার করে দিয়েছে, বুকে প্রচন্ড ভয়। সেই স্লো ডাউনের পিরিয়ড আমি দেখেছি। তখন বুঝতাম না স্লো ডাউন কী জিনিস, জাস্ট টিকে থাকার তাগিদে এক্সপ্লয়েটেড হতাম। অ্যাপল কম্পিউটার্সের প্রজেক্টে ছিলাম তখন, রাত আটটার আগে অফিস থেকে বেরোলে জনতার ভুরু কপালে উঠে যেত।

    দায়িত্ব নিলাম এক প্রজেক্টের। তরুণ রক্ত। রাতের পর রাত জাগলাম। সে বার মহালয়া পড়ল শনিবার। তখন ভূবনেশ্বর থেকে যে কোনও ছুতোনাতায় আমরা বাড়ি ফিরতে পারতাম উইকএন্ডে। শুক্রবার দলপতি জানাল শমীক, এই উইকএন্ডে সাপোর্ট দাও, পরের শনিবার তুমি বাড়ি যেও।

    পরের শনিবার দুর্গাপুজো, সপ্তমী। মেনে নিলাম। দুর্গাপুজোতে অন্তত বাড়ি যেতে পারব, সেই আনন্দে মহালয়ায় বাড়ি যাওয়া স্যাক্রিফাইজ করলাম। শনিবার দুপুরে স্টেশন গিয়ে ৫০% গচ্চা দিয়ে টিকিট ক্যানসেল করিয়ে এলাম।

    ষষ্ঠীর সকালে, শুক্রবার, সেদিন রাতে আমার ট্রেন, দলপতি আমাকে ডেকে জানালো, আমি খুব ক্রিটিকাল রিসোর্স, (প্রথম প্রথম এটা শুনে গর্বে বুক ফুলে যেত, সব ফ্রেশারেরই হয়), শমীক, তুম মত জাও, আওয়ার প্রজেক্ট ইজ ইন আ ভেরি ব্যাড শেপ, ইত্যাদি প্রভৃতি।

    অন প্রিন্সিপল ভারতে থাকতে আজ পর্যন্ত কোনওদিন দুর্গাপুজোয় অফিস করি নি, করবও না। প্রথমে কেঁদে ফেলেছিলাম নিজের কিউবিক্‌লে ফিরে। স্বর্ণালীর সাথে তখন প্রেম চলছে, সে মালদা থেকে আসবে, আমরা দুজন খুব আনন্দ করব পুজোয়, কত কিছু ভেবেছিলাম।

    প্রোডাক্টিভিটির তো বারোটা বেজে গেল, সারাদিন কোনও কাজ হল না। দুপুর নাগাদ কোনও মতে নিজেকে শক্ত করে মেল লিখলাম। সেই প্রথম প্রতিবাদ। ছোট করে বললাম, আগের শনিবার তোমার কথা রেখেছি, এ বার তোমার কথা রাখার পালা। তুমি যদি আমাকে দুর্গাপুজোয় অফিসে থাকতে বাধ্য করো, রাখতে পারো, কিন্তু আমি কীবোর্ড স্পর্শ করব না, তাতে তোমার প্রজেক্টের কী হয়, আই কেয়ার আ ড্যাম।

    সিসি করে দিলাম বিজনেস ম্যানেজারকে। মেল সেন্ড করে চা খেতে গেলাম বারান্দায়। শালা দলপতি খুঁজতে খুঁজতে আমাকে বারান্দায় এসে ধরল, ইতনা গুস্‌সা কিঁউ ভাই, ঠিক হ্যায়, তুম জাও, হম সাম্‌হাল লেঙ্গে। বিএমকো কিঁউ কপি কিয়া।

    কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ে আমি পুজো আনন্দে কাটালাম। প্রতিদান হিসেবে কালীপুজো থেকে ভাইফোঁটা টানা বাহাত্তর ঘন্টা আমি অফিসে ছিলাম সাপোর্টে, তখন পুরো টিম দিওয়ালির ছুটি মানাচ্ছে।

    কিন্তু চাকে আমি খোঁচা মেরেছি, কামড় খাবো না? সেই প্রজেক্ট সাফল্যের সাথে শেষ হল, পরের প্রজেক্টে গেলাম, অ্যাপ্রেইজালের টাইমে আগের দলপতি সুন্দর করে আমার পেছনটি মেরে দিলেন। কোনও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেলাম না।

    যেদিন নিজের রেটিং জানলাম, সেদিনই আমি তৃতীয় রাত জেগে চতুর্থ রাতের প্রস্তুতি নিচ্ছি। রেটিং জানামাত্র মনকে তৈরি করে নিলাম। বিএমকে একটা লম্বা মেল লিখলাম, এই লাইফস্টাইল কী সুখে? রাত বারোটা একটায় ঘরে ফিরি, স্রেফ মুড়ি খেয়ে শুতে হয়, বাড়ি যেতে পারি না, এত টাকা রোজগার করছি তা হলে কী জন্য?

    তার পরেই আমাকে অ্যাপল থেকে সরিয়ে APL-এ দেওয়া হয়, সে আরও বড় বাঁশ, তার পরে পরেই আমি ছেড়ে দিই। তখন জেনেছিলাম, অ্যাপল ইনফোসিসের বহু পুরনো এবং অন্যতম বড় ক্লায়েন্ট। সেই অ্যাপল স্লোডাউনের সময়ে বিজনেস বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, ইনফি তখন স্রেফ বিজনেস ধরে রাখার জন্য ফ্রিতে কিছু ছোট ছোট প্রজেক্ট করে দিয়েছিল অ্যাপলকে, তার একটা দুটোতেই আমি কাজ করেছিলাম।

    তখন চাকরি হারানোর ভয় ছিল, কম্পানি এই ভাবে এক্সপ্লয়েট করত। এখন তো সে ব্যাপার নেই। না পোষালে দশটা কম্পানি আছে বেশি টাকা এবং বেটার ওয়ার্ক কালচার দেবার জন্য। সেটা সব কম্পানিই জানে (টিসিএস জানে না, ওটা বালের কম্পানি)। এক্সপ্লয়েটেশনের সে রকম সুযোগ এখন নেই। এখনও চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই কম এদেশে। আমি তো অনেক দিন ছটার পরে অফিসে থাকি নি, লাস্ট থেকেছিলাম টিসিএসে, সে-ও কিছুদিনের জন্য দরকার হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ান ক্লায়েন্ট ছিল, সেইজন্য। তার জন্য মনে এতটুকুও রাগ হয় নি, কারণ ওটা দরকারি ছিল, এক্সপ্লয়েটেশন ছিল না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন