এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মিতার সুবিচার চাই

    শারদ্বত লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ | ৪২৪৮ বার পঠিত
  • মিতাকে আমি ভাল করে চিনতাম না। আমিও, ওরই মত, যাদবপুরে বাংলা পড়তাম। ক্লাস করে ফেরার সময় সিঁড়িতে দেখা হত কখনো-সখনো। একই ব্যাচ, একই বিভাগ, বিষয়ও এক, কিন্তু এরকম হয়েই থাকে, আমার বন্ধুমহল আর ওর বন্ধুমহল আলাদা ছিল। আলাপ হয়েছিল রি-ইউনিয়নে। আমার ওপর দায়িত্ব পড়েছিল ডিপার্টমেন্ট সাজানোর, আর আমাকে সাহায্য করার জন্য ছিল আরো দশ-বারোজন, তাদের মধ্যে মিতাও ছিল। টানা চার-পাঁচদিন শোলা কেটে রঙ করে আঠা দিয়ে ঘর সাজাতে সাজাতে রি-ইউনিয়নের আগের দিন খুব ক্লান্ত হয়ে ও বলেছিল, ‘এত খাটলাম, কিছু খাওয়াবি না?’ অগত্যা সবাই মিলে ঝালমুড়ি, যার যা রেস্ত। ওইটুকুই। পাশ করে যাওয়ার পরে কনভোকেশনেও দেখা, ওই, হাই-হ্যালো। তারপর অভীক-সমন্বিতা-দিব্যর ফেসবুক ওয়াল থেকে জানতে পারলাম, মিতা বিয়ে করেছে। লাইক, কনগ্র্যাচুলেশনের কমেন্ট, যোগাযোগ শেষ।

    অবশ্য ও চলে যাওয়ার পর ওর বাড়ি গিয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে মিতার কথা তুলে এনে যা যা জানা গেল, সেগুলো জানা থাকলে লড়াই কাকে বলে, তাও জানা হত। মিতার বাড়ি গড়িয়ার শান্তিনগরে। কাঠের পুল দিয়ে নালা পেরিয়ে যে গলির মধ্যে ওর বাড়ি, তার রাস্তার চারপাশে এখনো নবমীর বৃষ্টির থই থই জল। মিতার বাড়িতে টালির চাল, দরমার দেওয়াল। বাবার আয়ের কোনো ঠিকঠিকানা নেই। দিন গেলে ১৫০-২০০ টাকা। দুই দাদার একমাত্র বোন মিতা যাদবপুরে পড়ার সময় বইখাতার খরচ আর হাত খরচ তুলত সেলাই করে, পাড়ার কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়েকে টিউশন পড়িয়ে। মা বাড়ি বাড়ি কাজ করে ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ যুগিয়েছেন। সেলাইয়ের খুব ভাল কাজ জানত, বন্ধুদেরও টুকটাক ব্লাউজ-কুর্তি বানিয়ে দিয়েছে ও। এত কষ্টের পরিবেশেও কী একটা মনে পড়াতে এক শিঞ্জিনী হাসতে হাসতে বলছিল, ‘ভাব, ব্যাগ থেকে ফিতে বার করে ক্লাসরুমেই আমার মাপ নিয়েছিল’... এই মেয়ে যে এত লড়াই করে যাদবপুরে পড়তে এসেছে, সেটা যাদবপুরের সৌভাগ্য। আমরা মধ্যবিত্তরা জীবনযুদ্ধের কীই বা জানি?

    মিতা টাকাপয়সা নিয়ে খুব খুঁতখুঁতে ছিল, পাই-পয়সা ধার রাখত না বন্ধুদের কাছে। ওর বিয়ের পর যাদবপুরের বন্ধুদের সঙ্গে ওর দেখা হয় এমফিল পরীক্ষার দিন। শ্বশুরবাড়ির সুখ্যাতি করেছিল বেশ কয়েকবার। কোনো একবার চায়ের দামের পাঁচটাকা দিতে না পারায় যখন খুব লজ্জিত, তখন দিব্য-অভীক বলেছিল, ‘সাধ’-এ তো মেয়েদের ডাকবি। আমরা তো ডাক পাব সেই তোর বাচ্চার অন্নপ্রাশনে, তখন পাঁচটাকা কেটে রেখে গিফট দেব। রসিকতার পাত্রী লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে- এরকম ইয়ার্কি আমরা দিয়েই থাকি, কিন্তু আমরা কিংবা মিতার বাড়ির মানুষরা, কেউই জানতাম না কত কিছু মিতা লুকিয়ে যাচ্ছে আমাদের সবার কাছে। মিতা বাপের বাড়ির সবার কাছে লুকিয়ে গেছে, যে বিয়ের আগে অনেকদিনের সম্পর্কই ছিল ওর আর রানার। যেমন, মিতার কাছে রানা চেপে গেছে তার মদের নেশার কথা। একবার, মাত্র একবারই বিয়ের পর বাপের বাড়িতে মিতা বলেছিল, বর খুব মদ খায়। বন্ধুদের কাছেও বলেনি এ কথা। শুধু বৌদিকে একবার বলেছিল, ক’দিন আগে, ওর অনেক কথা জমে আছে, বলার মত। পুজোয় বাপের বাড়ি এলে বৌদিকে বলবে সব। চতুর্থীতে মিতা বাপের বাড়ি আসে, সপ্তমীর দিন রানা ওকে শ্বশুরবাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তার পরের ঘটনাগুলো আমরা সোশ্যাল মিডিয়া আর পেপারে পড়েছি।
    মিতা যাদবপুরে বাংলা এম.এ.তে আমাদের সঙ্গেই ভর্তি হয় ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। ২০১৫র ডিসেম্বরে আমাদের কনভোকেশন হয়ে যায়। মিতা বিয়ে করে ২২শে এপ্রিল ২০১৬। দশমীর বিকেল-সন্ধ্যে নাগাদ অনলাইন মিডিয়ায় আমরা খবর পাই, আমাদের মিতা মারা গেছে, রিপোর্টে ‘আত্মহত্যা’ নয়, সরাসরি ‘গলা টিপে ঝুলিয়ে দেওয়া’র কথা উল্লেখ করা আছে।

    মিতার বাড়িতে রানার ফোন আসে দশমীর দিন, ১১ই অক্টোবর ভোরে, ৫.০০-৫.৩০ নাগাদ। রানা ফোনে বলে, ‘আপনাদের মেয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।’ তার ১৫ মিনিট পরেই আবার ফোন করে বলে, ‘আপনাদের মেয়ে মারা গেছে।’ পাড়া থেকে কোনোমতে গাড়িভাড়া করে মিতার বাড়ির লোকজন সঞ্জীবন নার্সিং হোমে পৌঁছলে মিতার মৃতদেহের কাছে তার বাড়ির কোনো মানুষকে দেখা যায় না, রানা কোথাও নেই। মিতার শ্বশুরবাড়ির সবারই কেমন যেন আক্রমনাত্মক ভাব। যে মেয়ে আত্মহত্যা করে, তার স্বামীর তো শোকে বিহবল হওয়ার কথা, সে কেন নিখোঁজ? মিতার কাকাশ্বশুর বলে, ‘আপনাদের মেয়ে সুইসাইড নোট লিখে গেছে’। সুইসাইড নোট কোথায়, এই প্রশ্ন করতেই সে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে প্রায় পালিয়ে যায় কেন? এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলে মিতার নিথর দেহ দেখে। এমনই আত্মহত্যা করেছে মিতা, যাতে তার নাক-কান দিয়ে প্রচণ্ড রক্ত পড়েছে। রক্তের ধারায় মুখ ভেসে চুল পর্যন্ত চাপ চাপ রক্তে ভরে গেছে। কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে অনেকটা। গলায় আর ঘাড়ে আঁচড়ের গভীর ক্ষত। একটা কানের লতি ছিঁড়ে গেছে। বাহুতে আঙুলের ছাপ পড়ে কালশিটে পড়ে গেছে। গলায় গভীর কালো দাগ, তা আঙুলে হতে পারে, দড়িতেও হতে পারে, আবার দুটোই, মানে, আঙুলের পরে দড়ি ব্যবহার করেও হতে পারে। মিতার হাতের শাঁখা-পলা, হাতের মেহেন্দি, পায়ের আলতা, দাম্পত্যের সবকিছুর চিহ্ন তখনও রয়ে গেছে। আত্মহত্যাই, কারণ রানার বাড়ির লোকজন এই ঘটনাকে খুব ‘স্বাভাবিক-মৃত্যু’ ‘আত্মহত্যা’ বলে তার মৃতদেহ খুব তাড়াতাড়ি দাহ করার চেষ্টা করছিল।

    মিতা যে ঘরে ‘আত্মহত্যা’ করেছে, তার খাট এত উঁচুতে, আর সিলিং এতই নিচুতে, সে ঘরে খাটের ওপর দাঁড়ালে পাখার ব্লেড মিতার গলায় লাগার কথা – মিতার ছোড়দার থেকে এমনই জানা গেল। ঝোলার স্থান নেই যেখানে, সেখানে ফ্যানে ঝুলে পড়ে সে ‘আত্মহত্যা’ করল? এত আঘাত তাহলে সে কখন পেল? সঞ্জীবন নার্সিংহোম, যেখানে চাকরি করে মিতার স্বামী রানা, সেখানকার রিপোর্টে কেন লেখা হল আঘাত কেবলমাত্র গলার চারপাশে? মৃত্যুর কারণ কেন লেখা হল, ঝুলে পড়ার জন্য দম আটকে মৃত্যু হয়েছে তার? ডাক্তাররা কি রক্ত চেনেন না? আঁচড়ের দাগ চেনেন না? ব্রেনে হ্যামারেজ না হলেও, এমনি এমনিই নাক কান দিয়ে ভলকে ভলকে রক্ত বেরিয়ে আসা খুব স্বাভাবিক ঘটনা- এমনটাই কি মনে হয়েছিল সঞ্জীবন নার্সিংহোমের ডাক্তারদের? আমরা সত্যিই জানি না, কেবল শুনেছি, উড়ো কথাও হতে পারে, যে জমিতে সঞ্জীবন হাসপাতাল তৈরি হয়েছে তার বেশ কিছুটার প্রাক্তন মালিক রানার পরিবার। ওই হাসপাতালে তার পরিবারের দাপট আছে, রানার ওই হাসপাতালের টেকনিশিয়ানের চাকরিও সেখানেই পাওয়া। যেখানে মিতার মৃত্যু হয়েছে, পুলিশ সেই ঘরটিকে সিল করেনি এখনও। প্রমাণ লোপাট হতেই পারে, খাটের অবস্থান বদলে দিলেই মিতার ‘আত্মহত্যা’র পক্ষে যুক্তি সাজাতে পারবে খুনিরা। মিতার স্বামী-শ্বশুর ধরা পড়লেও দেওর-শাশুড়ি এখনও পলাতক। হ্যাঁ, মিতার খুন হওয়ার সময় তারা সেই বাড়িতেই উপস্থিত ছিল। খুন হওয়া মেয়ের পরিজনকে নার্সিংহোমে ঢোকার মুখে মিতার শাশুড়ি বলেছিল, ‘আপনার মেয়ের খুব জেদ।’ তখনও ভয় পায়নি সে। কুশবেড়িয়ার মণ্ডলপাড়ায় মিতার শ্বশুরবাড়ি, সেখানে সমস্ত মানুষই রানাদের আত্মীয়, সরাসরি না হলেও জ্ঞাতি তো বটেই। তাই খুন হওয়া মিতার বাড়ির মানুষ যখন নার্সিংহোমে, হাসপাতালের মর্গে, থানায় দৌড়াদৌড়ি করছেন, সব জায়গায় তাঁদের প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে। পুলিশ এফআইআর নিতে চায়নি, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁদের। শেষে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, দুশ-আড়াইশ লোকের হাত থেকে মিতার আত্মীয়-পরিজনকে বাঁচানোর জন্য র‍্যাফ দিয়ে প্রোটেকশন দিয়ে হাওড়া পর্যন্ত তাঁদের এগিয়ে দিয়ে যেতে বাধ্য হয় পুলিশ।

    এর সঙ্গে আরো অনেকগুলো ছোট-ছোট আপাত-বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছিল, যেগুলো জুড়লে,ব্যাপারটা আর অনেকটা পরিষ্কার হয়। মিতা চতুর্থীর দিন বাড়িতে এসে বলে, ও বি.এড. পড়তে চায়, তার অনেক খরচ। শ্বশুরবাড়ি থেকে অল্প কিছু টাকাই পাওয়া যাবে, বাকিটার জন্য বাবার কাছ থেকে ওর একলাখ টাকার দরকার। আর, খুন হওয়ার মাসদুয়েক আগে আমাদেরই সহপাঠী, ওর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে জানায়, ও কনসিভ করেছিল, তারপর সদ্য অ্যাবরশন করতে হয়েছে ওকে। এই বিশেষ বিশেষ ঘটনাগুলো কি আমাদের খুব চেনা ছকের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে না?

    খুব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ঘটনা কী, কিন্তু আমাদের দেশে আইনের শাসন এমনই হাস্যকর যে, বহু মানুষের সমর্থন না পেলে তা বলবৎ হয় না। আমরা, মিতার বন্ধুরা ভয় পাচ্ছি, মিতা সুবিচার পাবে না। কারণ, মিতার পরিবারের লোকবল নেই, অর্থবল নেই, দক্ষ আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্য নেই। আমরা ভয় পাচ্ছি, বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানচর্চা আর প্রগতিশীলতার কেন্দ্র যাদবপুরের তথাকথিত আধুনিক ছাত্রী হয়েও মিতা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হল দেখে। আমরা, মিতার বন্ধুরা আর আত্মীয় পরিজনরা এখনো জানি না কী ভাবে এগবো, জানি না, এই লড়াই কীভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে। আপনারা, যাঁরা এই লেখাটি পড়ছেন, তাঁরা সবাই মিতার পাশে, মিতার পরিবারের পাশে এসে না দাঁড়ালে মিতার সুবিচার নিশ্চিত করা যাবে না।

    #justiceformita

    #abolishdomesticviolence
    মিতার সুবিচার চাই - ২ (আরও দু'চার কথা)

    (এটা ঠিক আপডেট নয়, তবুও দশদিন পর অনেকগুলো কথা বলার ছিল, সেগুলো বললাম এখানে।)

    দশদিন আগে, ১৩ই অক্টোবর মিতার বাড়ি যাই আমরা জনাদশেক বন্ধু। তার দুইদিন আগেই জেনেছি মিতার খুনের ঘটনা। গড়িয়া স্টেশনে নেমে শান্তিনগরে কাঠের পুল পেরিয়ে যখন মিতার বাড়ির গলিতে আমরা ঢুকি, আমাদের, বিশেষ করে দিব্য-অভীক-সমন্বিতা-সোনালিকে দেখে মিতার বাড়িতে কান্নার রোল ওঠে। মিতার এই বন্ধুরা শেষবার এই বাড়িতে এসেছিল মিতার বিয়ের দিন। তারপর এই আসা। এত কান্না, এত অভিযোগ, এত অবিচারের কথা শুনতে শুনতে আমাদের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছিল বারবার। মিতার মা অসুস্থ শরীরে যেভাবে আমাদের বুকে আছড়ে পড়ে কাঁদছিলেন, তাতে চোখের জল চেপে রাখা মুশকিল। আর তখনই জেদের জন্ম হয়। আমরা জানি, প্রতি মিনিটে কয়েকশো নারী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার, আমরা জানি, লিঙ্গবৈষম্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যে দেশগুলোর, তার মধ্যে অন্যতম হল ভারত, কিন্তু সেই মুহূর্তে এত কথা, এত ফালতু পলিটিকাল কারেক্টনেস আর জেনারালাইজেশনের কথা আমাদের মাথায় আসেনি। শুধু মনে হচ্ছিল, হ্যাঁ, স্বার্থপরের মতই আমাদের মনে হচ্ছিল, আমাদের সহপাঠী, বন্ধু এই মেয়েটি, যাকে আমরা আড়াই বছরধরে চিনতাম, আমাদের সামনে যার পরিজন কাঁদছে যাকে হারিয়ে, কেবলমাত্র সেই মেয়েটির জন্য আমরা লড়ে যাব শালা, এই শুয়োরের বাচ্চা সিস্টেমের শেষ দেখে নেব।

    ঘন্টাদুই ধরে বিভিন্ন সংলগ্ন অসংলগ্ন কথাবার্তার ভিড়ে যা যা আমরা শুনি, সেগুলো সম্পূর্ণ গোছানোর জন্য যাদবপুর ক্যাম্পাসে ফিরে এসে আমাদের একটা আলোচনা হয়। উলুবেড়িয়া থানায় ডেপুটেশন দিতে যাওয়া, পিটিশন লেখা ছাড়াও আমাদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে একটা লেখা সার্কুলেট করার কথা ভাবা হয়। লেখালিখি করি টুকটাক, তাই আমার ঘাড়েই দায়িত্ব পড়ে পুরোটা লেখার। আমি বলি, দ্যাখ, আমি খুব পার্সোনাল একটা লেখা লিখতে চাই, তার মধ্যে আমাদের যুক্তিগুলোও থাকবে, তবুও, লেখার প্রথম অংশটা আমারই, বাকিটা সবার। সেই মত কথা হয়। বন্ধুরা যোগান দিতে থাকে তথ্য, আমি লিখে চলি, ছবিগুলো সাজিয়ে সাজিয়ে এডিট করতে থাকি। রাত দুটোর সময় ফোন করে লেখাটা বিভাগের স্যরকে দিয়েও চেক করানো হয়। তিনিও পালিশ করে দেন। পরদিন লইয়ারকে দিয়ে ফাইনালি চেক করিয়ে বেলা দুটোর দিকে আমি পোস্ট করি। বন্ধুরা লেখার ভূমিকাটুকু বাদ দিয়ে তার বর্ণনা-উপসংহারটিকে নিয়ে নিজের নিজের কথা জুড়ে নিজের নিজের ওয়ালে পোস্টায়। শিঞ্জিনী ট্রান্সলেট করে লেখাটি। আমি আট-দশটি গ্রুপে ছড়িয়ে দিই। প্রথম চার ঘন্টায় পাঁচ হাজার শেয়ারের পর আর দেখিনি। পরদিন সকালে সেটা বাইশ হাজারে চলে যায়। টিভিতে দেখি 'সোশ্যাল মিডিয়ায় সহপাঠীদের ঝড়'... আমাদের ফোন করে বিভিন্ন চ্যানেলে ডেকে পাঠানো... ইন্টারভিউ চলতে থাকে। পিটিশনটি তৈরি হয়ে যায়, তার সাইন ক্যাম্পেনও চলতে থাকে। দিন দুই পর মুখ্যমন্ত্রী মিতার পরিবারকে ডেকে আশ্বাস দেন, মিতার হত্যার তদন্তের দায়ভার নেয় সিআইডি।

    এতদূর পর্যন্ত সবাই মোটামুটি জানেন। যেগুলো ফেসবুকের ওয়ালে শো করে না, সেই সেই ঘটনাগুলো বলব এবার। মিতাকে নিয়ে লেখাটি ভাইরাল হওয়ার পর পায়েলদির বন্ধুরা আমার সঙ্গে ইনবক্সে যোগাযোগ করেন (পায়েলদিই বলছি, কারণ, যে কলেজে পায়েলদি পড়াশুনো করেছে, আমাদের বন্ধু দিব্যদীপ সেই কলেজে একই ডিপার্টমেন্টে পায়েলদির দুই বছরের জুনিয়র ছিল। দিব্য একইসঙ্গে মিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, পায়েলদির জুনিয়র)। অর্পিতাদি, পায়েলদির বন্ধু আমার সঙ্গে ইনবক্সে যোগাযোগ করেন, বলেন,
    -'তোমরা তোমাদের বন্ধুর জন্য লড়ে যাচ্ছ, দেখে ভাল লাগছে। কিন্তু আমাদের বন্ধুর কী হবে?'
    আমি তখন দিনে শ'চারেক মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছি, মিতার পিটিশনে তাদের সাইন করাচ্ছি, আমার অন্য বন্ধুদের অবস্থাও তথৈবচ। তার মধ্যেও বলে রাখি,
    -'আপনারা দিন দুয়েক একটু অপেক্ষা করুন, আমরা দেখছি কী করা যায়'

    তখন আমাদের কথা জানতে পেরে আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন প্রায় জনা তিরিশেক লইয়ার। এগিয়ে এসেছে হিউম্যান রাইটস ল নেটওয়ার্ক (HRLN), এগিয়ে এসেছে SWAYAM, APDR, ঋজুদার থেকে নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করেছেন নারী অধিকার কর্মী অঞ্চিতাদি, ইটিভির টক শোতে আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছে শাশ্বতীদির... হয়তো, এতগুলো পরিচিতির ভরসাতেই আশ্বাসটা বেরিয়ে এসেছিল মুখ থেকে।

    শিঞ্জিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানালাম পুরোটা। বিভিন্ন দিক ঠিক রাখতে রাখতে আমার-শিঞ্জিনীর-সমন্বিতার তখন পাগল পাগল দশা। তার মধ্যে শিঞ্জিনীও বলল, ওর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন নাজিয়ার বাড়ির মানুষরা, পার্কসার্কাসে যে একুশ বছরের মেয়েটিকে তার স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির লোক পুড়িয়ে মেরেছে। এদিকে যাদবপুরের বন্ধুরা, চারপাশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের তরুণ-তরুণী বন্ধুরা ঠিক করেছে তারা এই ঘটনাগুলো জুড়বে। মিতার ঘটনা তো কেবল যাদবপুরের ঘটনা নয়। সর্বত্র ঘটে চলা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের একটি বিন্দু হল মিতা, ঘটনাচক্রে আমরা মিতার বন্ধু, যারা জানি কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিতে হয়, ঘটনচক্রে মিতা এমন দাদা পেয়েছে, যে বোনের দেহ পোস্ট মর্টেমে দেওয়ার আগে ফটো তুলে রেখেছে। কিন্তু বাকিরা? প্রতিদিন হাজারটি ঘটনার বাকি ৯৯৯ জন? তারা কোথায় যাবে?

    নাজিয়ার বাড়িতে আমরা জনাছয়েক যখন পৌঁছলাম, তারপর যা যা ঘটল, তার সঙ্গে মূলগত ফারাক নেই মিতার ঘটনার, কেবল তীব্রতা আরো বেশি। ১৭ বছরে তার বিয়ে হয়, প্রথম ছয় মাসে অ্যাবরশান, তার পর টর্চার। থানায় জেনারেল ডায়েরি করে তো কোনো লাভ হয় না, সবাই জানে। তাও সেটা করা হয়েছিল। তারপর একটি সন্তানের জন্ম। গর্ভাবস্থায় অত্যাচারের কারণে তার মুখের একদিক জন্ম থেকেই ক্ষত-বিক্ষত। তারপর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম এবছরের ফেব্রুয়ারিতে। মার্চ-এপ্রিলে লাগাতার অত্যাচার, মুখে হাতে অজস্র কালশিটে আর রক্তাক্ত ক্ষত নিয়ে সে পালিয়ে আসে বাড়িতে। এফআইআর করা হয়, তারপর ক্ষমা-টমা চেয়ে তার স্বামী তাকে আবার বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এ বাড়িতে নাজিয়া থাকতোই বা কোথায়? দুটি ঘরে প্রায় জনাদশেক লোকের বাস। তারপর অবশেষে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে দেহ ফেলে রেখে বাড়িতে ফোন যায়, নাজিয়া গায়ে আগুন দিয়েছে।

    আমরা একের পর এক সুন্দরী সদ্যযৌবনা নাজিয়ার ছবি দেখছিলাম। হঠাৎ নাজিয়ার মামী এসে বললেন, 'ইয়ে লিজিয়ে ডেডবডি কা ফোটো'। সম্পূর্ণ পুড়ে চুল-ভুরু গুটিয়ে যাওয়া একটি ঝলসানো দেহ, তখনও ধোঁয়া উঠছে যেন অল্প অল্প। পর পর এরকম ছবি দেখার পর এই ছবিটা দেখে কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত অনুভূতি শূন্য হয়ে যায় আমাদের। গায়ে কাঁটা দিতে থাকে।

    পুলিশ বিন্দুমাত্র সহায়তা করেনি। হত্যাকারীর পরিবারের সঙ্গে খুব উঁচুমহলের রাজনৈতিক যোগাযোগ। পুলিশ সম্পূর্ণ সহায়তা করছে হত্যাকারীদের। শোনা খবর, দেড়লক্ষ টাকার বিনিময়ে পুলিশ কাস্টডিতে দুটি ফ্যান ও প্যাকেজড ফুড সহ নাজিয়ার হত্যাকারী স্বামী ছুটি কাটাচ্ছে। পরিবারের বাকিরা, নাজিয়ার শ্বশুর-শাশুড়ি-দুই ননদ-দুই নন্দাই এখনো ফেরার। পুলিশ লুকিয়ে রেখেছে তাদের। বিক্ষোভ বাড়লে তাদের থেকে নিয়েই শিশুপুত্রদুটিকে এই পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে যায় তারা। অথচ বলে, তারা নাকি ফেরার।

    পায়েলদিকে গলা টিপে অথবা ঝুলিয়ে খুন করা হয়েছে। বাথরুমের শাওয়ারে ঝুলে আত্মহত্যা করার গল্প মানতে চাননি পায়েলদির পরিবার, বন্ধু আর প্রতিবেশিরা। বাড়ি সিল করা হয়নি। দশদিনের আত্মগোপনে পায়েলদির ছয়মাসের মেয়ে এখন সারা গায়ে র‍্যাশ আর রক্ত পায়খানা নিয়ে ফিরে এসেছে তার মাসি-মেসোর কাছে। মেয়ে জন্ম দিয়েছে তো, তার পর থেকেই অত্যাচার বাড়ছিল। গাড়ি কেনার জন্য তিনলাখটাকার দাবি তো ছিলই।

    বারুইপুরের নমিতা নস্করের ঘটনা আমরা টিভিতেই দেখলাম। সাত বছরের শিশুপুত্রের সামনে পিটিয়ে গলায় বিষ ঢেলে তার মাকে মারল তার বাবা।

    আরো কত কত পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে উঠতে পারলাম না। আরো কত কত মেয়ে... আরো কত কত অত্যাচার... মৃত্যু বাঁচিয়ে জীবন্মৃত হয়ে আরো কতকাল বেঁচে থাকা... কোথায় থামব?

    যাদবপুরের ফেটসুর ইউনিয়ন রুমে যখন পায়েলের পরিবার আর নমিতার পরিবার মুখোমুখি বসেছেন, একটা সুতোর বুনন ঘটে যাচ্ছে আমাদের চোখের সামনে, নাজিয়ার দাদা সাবির যখন বলছেন, আমরা আমাদের লড়াই ছিনিয়ে নেব, নমিতার জামাইবাবু বলছেন, আমাদের মেয়েকে হারালাম, আপনারা দেখবেন আর কোনো মেয়ে যেন না হারিয়ে যায়, পায়েলের পড়শিরা বলছেন, আমরা হার মানিনি, থানা ঘেরাও করেছিলাম... তখন জেদ চেপে যাচ্ছে আমাদের। সেই জেদটা ছিলই। মিতার বৌদি যাদবপুরে এসে আমার দু'হাত জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন,
    -'ভাই তুমি যা লিখেছ, আমি রোজ পড়ি আর কাঁদি'
    আমি হাত ছাড়িয়ে ধমক দিয়ে বলছি,
    -'কাঁদবেন না বৌদি, কাঁদলে হেরে যাবেন।'
    নাজিয়ার দিদি আমাদের সামনে কাঁদছিলেন,
    -'আপলোগ কুছ কিজিয়ে, কুছ কিজিয়ে ভাইয়া'
    আমরাই ধমকে বলছি,
    -'রোনা মত।'

    আর যাদবপুরের মাঠে আমরা এই পরিবারগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছি স্বয়ম, এপিডিআর, এইচআরএলএন কে। আমরা এটুকুই তো পারি।
    আমি চোখের সামনে দেখছি আমার যাদবপুর বদলে যাচ্ছে, বদলে বদলে যাচ্ছে যাদবপুরের কমিউনিকেশনের ভাষা। চোয়াল শক্ত হচ্ছে সবার। কোনো দলই মুখ্য নয়, অথচ সব দল এগিয়ে এসে ভাগ করে নিচ্ছে তাদের দায়িত্ব। তারা বলছে কম, শুনছে বেশি। ক্যাম্পাসের বাইরে তাদের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে নতুনভাবে। চারপাশের সবাইকে ডেকে আনছে তারা। তাদের সঙ্গে কাজে মিশে তাদের ঘরে ঢুকে পড়ছে, কষ্টের কথা শুনছে। ক্যালকুলেশন করছে কম, ইনভলভড হচ্ছে বেশি। যখন মিতা-নাজিয়া-নমিতা-পায়েলের কথা শুনছি আমরা, একপাশে শাশ্বতীদি আর অঞ্চিতাদি নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন, গিয়ে বললাম,
    -'গল্প করছেন?'
    -'ঠিক গল্প নয়, তিরিশ বছরের নারী অধিকার নিয়ে লড়ে এখন উই আর শেয়ারিং ফ্রাস্ট্রেশনস। এই মেয়েগুলো তো মরে গেল বল, যারা বেঁচে আছে, তাদের জন্য কিছু করবে না তোমরা?'

    সবকিছুই খুব ভাল নয় কিন্তু। আছে কিছু অভিসন্ধি খুঁজে বার করা পাবলিক। স্ট্যাটাসটিতে ফ্রেন্ড সার্কলের বাংলা অনুবাদ করেছিলাম বন্ধুমহল, ওর আর আমার ফ্রেন্ড সার্কলে কমন কিছু বন্ধু থাকলেও আমরা সরাসরি একে অন্যের বন্ধু ছিলাম না। তাই, পার্সোনালি মিতাকে ঠিক কতটুকু চিনতাম লিখেছি। লিখেছি, মিতা যে কতটা যুদ্ধ করেছে জীবনে, তার খতিয়ান সে বেঁচে থাকতে জানতে পারিনি আমি। এই লেখাগুলোর পেছনে আর কী অভিসন্ধি থাকতে পারে? তবুও শুনতে হল, আমি তার গরিবীকে সেন্সিটাইজ করেছি, সে আমার বৃত্তের, অর্থাৎ 'যাদবপুরের উচ্চশিক্ষিত মহল' এর অংশ নয়, সেটাও আমি কৌশলে উল্লেখ করেছি, শুনতে হল, কেবল মিতাকে কেন গ্লোরিফাই করছি। এদের বলতে চাই, 'সবার জন্য লড়তে চাই' - কথাটা সবসময় আউড়ে গেলে আসলে কারোর জন্যই লড়া হয় না। এই নেগেটিভিটির রাজনীতি আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। আমি জানি আপনারা খুব খুশি হতেন মিতা সুবিচার না পেলে। কারণ, যেখানে কেউ সুবিচার পায় না, সেখানে ও কেন পাবে সুবিচার... এই তো আপনাদের প্রশ্ন? আপনাদের বলছি, 'ফুটুন'। মিতাকে ব্যবহার করে আমাদের ফুটেজ খেতে দিন। হাত কামড়াবেন না।

    লজ্জা করে না আমাদের, যখন মিতার শেয়ার হওয়া ছবিতে আমরা লিখি, 'ইউ আর সেক্সি'?

    লজ্জা করে না আমাদের, এরকম অবস্থায় ইনবক্সে খিস্তি আর যৌন প্রোপোজাল পাঠাতে?

    লজ্জা করে না আমাদের মিতার স্ট্যাটাস শেয়ার করে 'যাদবপুরের মাগী খুব তো আজাদি চেয়েছিলি, এই তো পরিণতি হবে তোদের' লিখতে?

    লজ্জা করে না আমাদের, যখন বলি, 'আগে কেন বেরিয়ে আসেনি মেয়েটা'...?

    লজ্জা করে না আমাদের, যখন আমরা বলি, 'প্রেম করে বিয়ে করেছিল, নিজেরই দোষ'...?

    মিতা-নাজিয়া-নমিতা-পায়েল-আলেমাদের এইভাবে খুন করতে লজ্জা করে না আমাদের?

    লেখাটা লিখতে লিখতে মনে পড়ল, মিতার বাড়ি গিয়েছিলাম ১৩ই অক্টোবর।নয় বছর আগে, ক্লাস টেনে পড়ার সময় ওইদিনেই আমাদের প্রিয় তিন বন্ধু তলিয়ে যায় পুকুরের জলে। আমরা সেইদিন পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলাম। পেপার মিডিয়া তোলপাড় হলেও ঘরে বসে কাঁদা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। কাকে দোষ দেব? এমনই শীত ঘনিয়ে আসা বিষণ্ণ ছিল দিনকাল। দিন যায় না, ফিরে ফিরে আসে সব। আমাদের সবার মধ্যে পুষে রাখা কোনোদিন কারোর জন্য কিছু না করতে পারার কষ্টরা এভাবেই নিজের ইকুইলিব্রিয়াম খুঁজে নেয়।

    লড়াইটা সবার। সারা বাংলার ছাত্রসমাজ লালবাজার অভিযান করছে ২৬শে অক্টোবর, প্রতিটি গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাকে পুলিশ যেন তীব্রতম গুরুত্ব দিয়ে দেখে, প্রতিটি ব্লক-গ্রাম-পঞ্চায়েত যেন সক্রিয় হয় গার্হস্থ্য হিংসা বিলোপে - এই দাবিতে। বেলা তিনটের সময়, কলেজ স্ট্রিটে, আপনারাও আসুন। এই নরম মেরুদণ্ডহীন সর্বত্র পিছিয়ে পড়া পশ্চিমবাংলার ভেতো বাঙালিরা গার্হস্থ্য হিংসায় সারা ভারতে ফার্স্ট বেঞ্চে বসে। লজ্জা করে না আমাদের? লজ্জা ঢাকতে রাস্তায় নামব না আমরা?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ | ৪২৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • d | 144.159.168.72 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৩৭59010
  • একদম!
    যাঁরা শিক্ষিত, সহজেই যাঁদের পক্ষে আত্মনির্ভরশীল হওয়া সম্ভব তাঁরা কেন মুখ বুজে সহ্য করেন, কেন রুখে দাঁড়ান না ---- এই প্রশ্নের উত্তর আমি কিছুতেই খুঁজে পাই না। বেশ কিছু বছর আগে এক পুলিশ এস আই মহিলাকে শ্বশুরবাড়ীতে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। তিনি তোপ অন্তত নিজের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে অন্যায়ের শাস্তি দেবার চেষ্টা করতে পারতেব্ন।
    এত হতাশ লাগে!

    যে কোনওরকম ভায়োলেন্সের প্রতিবাদ করতে একেবারে স্কুল লেভেল থেকে শেখানো যায় না? বাড়ীতে মা বাবা মারলেও সেটার প্রতিবাদ করা দিয়ে ?যদি বাচ্চারা শুরু করতে পারে --- তাহলে আর বড় হয়ে চরম পরিণতির মুখে পড়তে হয় না।

    আর এই এত কষ্ট করে লেখাপড়া শেখা, এত আত্মসম্মান সেসব নিয়ে কি লাভ হল মেয়েটির!!
  • মদ | 178.26.197.46 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৪৪59035
  • আর হ্যাঁ, মদ খাওয়া। অ্যালকোহলিজম একটা অসুস্থতা যা ব্রেনকেও অ্যাফেক্ট করে। অ্যালকোহল হল Mind altering drug, যা আত্মনিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ভালবাসা, মায়া, লজ্জা ইত্যাদি যা কিছু আমাদের ভায়োলেন্ট হতে বাধা দেয়, অ্যালকোহল সেসব অনুভূতিকে নষ্ট করে দেয়।
    এই নিয়েও কথা বলা হোক। আমেরিকাতে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এবং অ্যালকোহলের কোরিলেশন নিয়ে অনেক রিসার্চ আছে। ইন্টার্নেটে খুঁজলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
    এই মিতার স্বামী ছিল অ্যালকোহলিক। দিনরাত মদ খেত। এরকম বহু পুরুষ আছে। এরা যে শুধু স্ত্রীর জীবন নষ্ট করে তাই নয়, এদের নিজেদের জীবনও ছারখার হয়ে যায়। যেমন মিতার স্বামী। আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে, তার জীবনও নষ্ট, জেলে পচে মরতে হবে বহু বছর।

    মিতাদের অবস্থা বদলাতে হলে এই সমস্ত সমস্যাগুলো অ্যাড্রেস করা উচিত।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৪৮59036
  • প্রত্যেক বাপ মা স্বামী শিক্ষক শিক্ষিকা শ্বশুর অসুর শাশুড়ী অসুরী ইত্যাদি ইত্যাদি অন্যান্য যে যেখানে পোটেনশিয়াল মারনেওয়ালা মারনেওয়ালি আছে সবাইকে হাড়ে হাড়ে শিক্ষা দেওয়া খুবই দরকার ।
  • Abhyu | 208.137.20.25 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৫০59037
  • ছেলে মেয়ে বৌমা জামাই হার্মাদ সিণ্ডিকেট ...
  • নন্টে | 11.39.39.232 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৫৪59038
  • ননদ ছাড় পেলেন কেন?
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:০৮59039
  • কোনো বাপ-মা ছেলেমেয়েকে মেরেছে খবর গেলেই দুটোকেই থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে কম্বল ধোলাই দেওয়া হোক। একজন মারলেই বাই ডিফল্ট অন্যজনও ধরিতব্য।
  • mila | 22.5.49.74 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:২৯59040
  • মিতার ভাই সরকারি চাকরি পেলেন
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:৩২59041
  • এও আরেক ইয়ে হয়েছে। মেয়েগুলো মরে আর মেয়েগুলোর বাড়ির লোক চাকরি পায়।
  • PT | 213.110.242.7 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:৪২59042
  • এই সব চড়-থাপ্পর মারামারি বাদ দিয়ে অন্য কোন আর্থ-সামাজিক কারণের সন্ধান করা যায়? যেমন এটা ২০১২-র কথাঃ
    "Saswati Ghosh, another Maitree member, believes the political flux, coupled with rising unemployment and unfulfilled aspirations have led to the spurt in violence. "Crime against women has increased steadily from 2004. I believe it is to do with lumpenisation by CPM to hold on to power. Mamata Banerjee has inherited this legacy. Only, while the CPM as a disciplined cadre-based party could control the lumpen elements, Trinamool Congress is unable to do so," she reasoned.
    http://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/West-Bengal-tops-chart-in-crime-against-women/articleshow/16390741.cms

    ২০১৪-র কথাঃ
    According to NCRB data of 2014, published in 2015, out of the 3,37,922 incidents of crime against women in the country, Bengal has the second highest number of cases of crime against women at 38,299.
    And in terms of rate of crime against women, Bengal stood second with 85.5 per cent......
    `http://articles.economictimes.indiatimes.com/2016-02-07/news/70421282_1_domestic-violence-act-pwdva-state-women-commission

    crime against women-এ সংস্কৃতিবান বাঙালীর নাম এক্কেরে ওপরের দিকে জ্বলজ্বল করবে কিন্তু মিতারা মারা যাবে না -এ কেমন প্রত্যাশা?

    এটাও থাক এখানেঃ
    Why are India's housewives killing themselves?
    http://www.bbc.com/news/world-asia-india-35994601
  • ছোটোলোক | 198.155.168.109 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:০৫59011
  • উচ্চশিক্ষিত হওয়া মানেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করা - এরকম কিন্তু সহজ সমীকরণ হয় না।
    আবার আরো অনেক ফ্যাক্টর থাকে প্রতিবাদ করতে না পারার। সর্বপ্রথম হচ্ছে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই। সসম্মানে। সেটা বিয়ের পর একটা মেয়ের আর থাকে না শ্বশুরবাড়ী ছাড়া। যে মেয়ের আত্মসম্মানবোধ প্রবল, সে মাথা নীচু করে বাপের বাড়ি ফিরতে চাইবে না। অন্য অপশন থাকলে সেটা নিতে পারে, যেমন রোজগার থাকলে একটা নিজস্ব বাসস্থান।
    আপনারা নিজেরা কেউ এমন পরিস্থিতিতে পড়লে বুঝতেন যে ওরকম পরিস্থিতিতে কেমন লাগে।
  • ছোটোলোক | 198.155.168.109 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:১৯59012
  • একটা মেয়ের ওপর যখন খুনের অ্যাটেম্পট হয়, তখন সেই মেয়েটার কীরকম লাগে সেটা জানেন কি? দুবার এরকম খুন হওয়া থেকে বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা আছে, আবার উচ্চশিক্ষা আত্মসম্মানবোধ এসবও আছে। তা সত্ত্বেও এসমস্ত হয়। মেয়েটাকে না দুষে যারা তাকে খুন করল তাদের দুষুন।
    আমার বন্ধুমহলেও এই একই ট্রেন্ড দেখছি কদিন ধরে। খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটার সব দোষ যেন। ও কেন প্রতিবাদ করেনি এত পড়াশোনা করেছে এদিকে, ও কেন বাপের বাড়ী থেকে সপ্তমীর দিন চলে গেল, ও কেন বাবার কাছে এক লক্ষ টাকা চাইল? শুনে শুনে এটাই বুঝছি যে এ সমাজে সব দোষ মেয়েটার এবং ওর খুন হয়ে যাবার পেছনে ওর নিজেরই যত দোষ।
    শুনে শুনে আশ্চর্য হয়ে গেছি। কী সমাজ মাইরি!
  • d | 144.159.168.72 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:২৭59013
  • উঁহু মেয়েটার দোষ বা 'সব দোষ' এরকম কিছু বলিনি। বক্তব্য একটাই আর সেটা হল শিক্ষা বা টাকাকড়ি এই দুটোর যেকোনও একটা হাতে থাকলে দিনের পর দিন অত্যাচারিত হবে কেন? সেখানেই আমার হতাশা। নিজের জীবনের কন্ট্রোল নিজের হাতে নেবার আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে না এখানেই হতাশা।
  • Debi | 213.197.123.132 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৩৭59014
  • মেয়েটার দোষ এর কথা তো কোথাও বলা হয় নি। শুধু অসহায় লাগে ভাবতে যে আজকেও মেয়েদের বিয়ের পর কোনো কারণে বাপের বাড়ি ফিরে আস্তে হলে মাথা নিচু হয়।বিয়ের পর শশুরবাড়ী ছাড়া মেয়েদের র গতি থাকে না।সব সহ্য করে মাটি কামড়ে পরে থাকতেই হয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এগুলো ভাবতে কষ্ট হয়। কিন্তু ও জানি এগুলোই বাস্তব।
  • sch | 37.251.71.51 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৪৯59015
  • প্রত্যেকটা মেয়ের ফিনান্সিয়ালি ইন্ডিপ্নডেন্ত হওয়া খুব জরুরী। JU থেকে MA করার পর আরো পড়ার প্রয়োজন হচ্ছিল কেন? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এমন কেন যে এরকম একটা জায়গা থেকে পাশ করার পরও লোকে চাকরী করার সুযোগ পায় না? এই গোটা মানসিকতায় বদল আনাটা খুব দরকার। বিয়ে করুক বা না করুক প্রতিটি মেয়ের যদি নিজের পায়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা থাকে - মাতাল বরকে এক লাথিতে ছিটকে দেবে, পণ চাইলে আপাদ মস্তক জুতিয়ে দেবে
  • ছোটোলোক | 198.155.168.109 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৫৬59016
  • ডি র বক্তব্য বুঝেছি। আপনি একবারো বলেননি যে মেয়েটার দোষ। সে নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই আমার।

    কিন্তু, উচ্চশিক্ষা থাকা মানেই টাকাকড়ি থাকা নয়। টাকাকড়ি থাকা দরকার। বাসস্থানের প্রভিশন থাকা দরকার। মেয়েটার একটা সোর্স অফ ইনকাম থাকা দরকার। সেগুলো ছিল না। মেয়েটা বিএড পড়তে চেয়েছিল একটা চাকরি করে ইনকাম করবার জন্য। সেটা হতে পারল না। তার আগেই খুন হয়ে গেছে।

    আরেকটা কথা। আমরা বারবার বলে থাকি মার খেলেই প্রতিবাদ করো। কিন্তু সবাই সঙ্গে সঙ্গে পারে না। সবার রিফ্লেক্স/ রিয়্যাকশান তাৎক্ষণিক হয় না। মার খেলে প্রতিবাদ করতে শেখা দরকার, কিন্তু তার চেয়েও বেশি দরকার কারো মারতে না শেখা। আমার বন্ধুদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিলো শ্বশুরবাড়ি মারতেই পারে। ওটা যেন স্বতঃসিদ্ধ। একবারো কেউ বলল না যে, শ্বশুরবাড়িকে জানতে হবে যে তারা মারতে পারে না। শ্বশুরবাড়ি কেন শুধু, বাপ মা, টিচার , কেউ মারতে পারে না। তাদের শিখতে হবে কারো গায়ে হাত না তুলতে। যারা ছোটোবেলা থেকে মার খাচ্ছে, তারা জানছে যে ওটা অ্যালাওড, অ্যাক্সেপ্টেড ব্যাপার সমাজে। ইস্কুলে মাস্টার ঠ্যাঙাচ্ছে, বাড়িতে বাপ মা চড় চাপড় দিচ্ছে, তা শ্বশুরবাড়িই বা কোন একসেপশান? নিজের বাচ্চাকে মারবেন না - এটা শিখুন। নিজের ছাত্রকে মারবেন না- এটা শিখুন। তাহলে বৌকে ঠ্যাঙানোর হ্যাবিটও তৈরী হবে না। কারোর গায়ে হাত তোলার অধিকার আপনার নেই।
    বহুলোকে অম্লানবদনে ছেলেবেলায় ইস্কুলে মাস্টারের হাতে প্যাঁদানির এক্সপিরিয়েন্স বর্ণনা করেন দেখেছি। সেগুলো অম্লমধুর স্মৃতির মতো। যেন খুব মজার ব্যাপার। সেটা ঠিক নয়। সেই মাস্টারেরা শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকেন - এখানেই আমার আপত্তি। মারধোরের কালচার এটা। ওয়াইডলি অ্যাকসেপ্টেড কালচার। টিচার কানমলা দিচ্ছে, পাছায় বেত মারছে, এগুলো শৈশবের স্মৃতি হিসেবে ভালো স্মৃতি যেমন নয়, তেমনি সেই টিচারদেরো জানতে হবে যে এটা ক্রাইম, এবং দে শুড বি সরি ফর দ্যাট।
    মুশকিল হচ্ছে যে, এগুলো প্যাঁদানি খেয়ে বেড়ে ওঠা অনেকেই মানে না। ফিজিক্যাল পানিশমেন্ট বন্ধ হওয়া দরকার। মেন্টাল পানিশমেন্টও। যারা পানিশ করছে, তাদের ট্রেইন করা দরকার, যে এগুলো অন্যায়।

    একটা বন্ধু বলছিলো যে, শ্বশুরবাড়ি মেরেছে তো ওখানে থাকছিল কেন? "শ্বশুরবাড়ি মেরেছে"টা ক্যাজুয়ালি বলল। যতবার বলছি যে শ্বশুরবাড়ি মারবে কেন? সে বলছে, মারলেও ও থাকল কেন?
    তারমানে প্রথমেই আমরা ধরে নিচ্ছি যে মারতে পারে। একবারো বলছি না যে,না, মারতে পারে না।
    মেয়েটা থাকল কি থাকল না শ্বশুরবাড়িতে সেটা সেকেন্ডারি। সর্বপ্রথম হচ্ছে, যে শ্বশুরবাড়ি মারতে পারে না। এই বক্তব্যটা কারো কানে ঢুকছে না।
  • Sayantani | 126.202.192.219 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:০১59043
  • ছোটোলোক এর লেখা গুলো ভালো লাগলো। দেখুন ডোমেস্টিক ভায়লেন্স,বা ইন্টিমেট পার্টনার ভায়োলেন্স একই সাথে কমন ও নুয়েন্সড ব্যাপার। এখানে একটা খুব জরুরি জিনিস নিয়ে কেউ বললেন, সেটা হলো সম্পর্কের টান। হ্যা মার্ খেয়েও থাকে। বা মানসিক ভাবে স্কার্ড হয়েও থাকে। এবং যে ভায়োলেন্স টা করছে, তার একটা সাইক্লিক অর্ডার থাকে সাধারণ ভাবে। মার্- ক্ষমা চাওয়া- ভালোবাসা- মার্ - এই ভাবে। এছাড়া আছে গ্যাস লাইটিং। যেটা সমাজ, পরিবার, স্বামী, সবাই কম বেশি করে থাকেন। ফলে বেরিয়ে আসা, সম্পর্ক ভেঙে চলে আসা প্রাক্টিক্যালি সহজ হয়না।
  • Sayantani | 126.202.192.219 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:০২59044
  • * বললেন না
  • ছোটোলোক | 198.155.168.109 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:১১59017
  • শ্বশুরবাড়িতে কি বাপেরবাড়িতে মার খাওয়া মেয়েরা সেকথা কারোকে বলতে পারে না লজ্জায়। এ এক অদ্ভুত মানসিক পরিস্থিতি যেখানে যে মারছে তার লজ্জা নেই, কিন্তু যে মার খাচ্ছে সে লজ্জা পাচ্ছে কারোকে জানাতে। এর ফলে ক্রাইম বাড়তে থাকে, কারণ যে ক্রিমিনাল সে আশকারা পেতে থাকে। সে জানে ভিক্টিম এ খবর বাইরে কারোকে জানাতে পারবে না লজ্জায়। মারের চিহ্নগুলো ছোটোখাটো অ্যাক্সিডেন্টের চিহ্ন বলে চালিয়ে দেবে ভিক্টিম নিজেই। যতক্ষণ না একটা থ্রেশোল্ড লিমিট পেরোচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই এই থ্রেশোল্ড পেরোনোর টাইমে এক্সিট ওয়ে টা বন্ধ হয়ে যায়, বা পালানোর সময় থাকে না, বা এতটাই ইনজুরি থাকে যে পালানোর শক্তি থাকে না। তখন খুন হয়ে যায়।
  • ছোটোলোক | 198.155.168.109 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:২০59018
  • অন্য টইয়ে একটা গল্প চলছে, একজনের ইস্কুলের হোস্টেলের ঘটনা, সেখানে শিক্ষক সন্ন্যাসীরা ছাত্রদের ঠ্যাঙাচ্ছে। রীতিমতো ঠ্যাঙাড়ে কালচার। একজন ঠ্যাঙানি খেলে তার শত্রুপক্ষের শাডেনফ্রয়েডে হচ্ছে। অথচ যারা ঠ্যাঙাচ্ছে তারা নাকি সন্ন্যাসী! একজন সন্ন্যাসী কীকরে ঠ্যাঙাড়ে হয়, এইটাই প্যারাডক্স। নাকি অক্সিমোরন।
  • sswarnendu | 138.178.69.138 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:১৩59019
  • ছোটোলোক এর লেখা শেষ তিনটে কমেন্ট ভীষণ ভাল লাগল... একদম ঠিক কথা, একদম।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:৩২59020
  • আমি বলছিলাম শিক্ষা অথবা টাকাকড়ি দুটোর যে কোনও একটা থাকলে। শিক্ষা থাকলেই টাকা থাকবে এমন নয়।

    সে যাই হোক, আমি একটা গ্রুপে যুক্ত, সেখানে বিভিন্ন সামাজিক স্তরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মেয়েরা আসেন। তো সেখানে একজন বলছিলেন যে তিনি দীর্ঘকাল একটি ফিজিক্যালি এবং মেন্টালি এবিউজিভ রিলেশানের মধ্যে ছিলেন। এই বছরখানেক হল সেটা থেকে রেহাই পেয়েছেন। তো তিনি বলছিলেন যে দীর্ঘ কিছু বছরের এই সম্পর্কের বেশ অনেকটা সময় মার খেয়ে, বিভিন্নভাবে হিউমিলিয়েটেড হয়েও তিনি ভাবতেন যে তাঁরই কিছু দোষ হচ্ছে, এই মারধোর, অপমান যে আসলে যে করছে তার প্রবলেম, তার দন্ডিত হওয়া প্রয়োজন এটা বুঝতে তাঁর অনেক অনেক সময় লেগেছে।
  • নন্টে | 11.39.39.232 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:৩৪59045
  • Sayantani একদম ঠিক বলেছেন। লালুয়া রাত্তিরে মদ খেয়ে একজন্তু আবার সকালে অন্য মানুষ।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:৪০59021
  • শুধু ঐ টইটাই নয়, যে কোনও মিশনের স্মৃতিচারণার টই দেখবেন, এই বেধড়ক ক্যালানির গল্প পাবেন। এইটে সন্ন্যাসীদের বেশ প্রিয় টাইমপাস। নিশান বলে একজন কিছু লিখছিলেন, সেখানেও দেখবেন ঐ একই ট্রেন্ড। এছাড়া বেশ কিছু বছর আগে প্রতিদিনের 'রোব্বার'এর একটা সংখ্যায় চন্দ্রিল নরেন্দ্রপুরের এক শিক্ষকের কথা লিখেছিলেন যে একটি ছাত্রকে দিনের বিভিন্ন কাজে দেরী করিয়ে দিয়ে ঠিক সেই দেরীর জন্যই তাকে শাস্তি দিচ্ছে। পরে গতবছর আবাপ'র রবাসরীয়তে উল্লিখিত ছাত্র অবিকল এই ঘটনাটি তাঁর নিজের জীবনের দুঃস্বপ্ন হিসেবে বর্ননা দিয়ে লেখেন। "ইস্কুলে গাঁট্টা" বোধহয় কলামটার নাম ছিল।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:৪১59022
  • *রবিবাসরীয়
  • Ekak | 53.224.129.40 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:৫১59023
  • তেরো বছর মিশনে পড়েছি । কোনোদিন কোনো সন্ন্যাসী -ব্রহ্মচারী গায়ে হাত তোলেন নি । টিচার রা কয়েকজন তুলেছেন অবশ্য । তো সেই এসকেজিটু কে সন্ধ্যের অন্ধকারে অনন্যা সিনেমার সামনের নর্দমায় ঠেলে দেওয়া হয় , মুকুলদার একুরিয়ামের সব মাছ মেরে ফেলা হয় টিউশন নিতে গিয়ে, আর বীরেন্দা কে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে সপাটে এক ঘা , ক্রিকেট প্র্যাকটিসের সময় "ভুল করে " । মারলে মার্ সহ্য করার কোনো সীন নেই । তবে ক্লাস ফাইভ -সিক্স অবধি কেও কেও পড়া না পারলে হাতে প্লাস্টিকের স্কেল দিয়ে মারতো । সেটা খুবই অনুচিত কাজ । তাদের সাদা পাঞ্জাবিতে অবশ্য পেনের কালি স্প্রে হয়েছে পেছন থেকে , বহুবার ।

    তবে অভিজ্ঞতা তো মানুষে মানুষে আলাদা হতেই পারে ।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ১০:৩১59024
  • প্রাসঙ্গিক মনে হল

  • Atoz | 161.141.84.108 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ১০:৪৪59046
  • আচ্ছা, এই চেনাজানাদের মধ্যে নানা রকম মদের কথা নিয়ে যাঁরা মাঝে মাঝেই বেশ জম্পেশ গপ্পো করেন, অর্থাৎ কিনা খুবই খান আনন্দে উলুতোপুলুতো হয়ে, তাঁরা নিজেদের কন্ট্রোল করেন কীভাবে? সিক্রেটটা কী?
  • নন্টে | 11.39.38.54 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ১০:৪৪59025
  • খামোকা মাছগুলো মরলো।
  • একক | 53.224.129.40 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ১০:৫১59026
  • হ্যা , খারাপ লাগে ভাবলে, মাছেদের কোনো দোষ ছিলনা । মুকুলদার হাতে প্র্যাকটিকালের নম্বর থাকত এমনকি এক্সটার্নাল এক্সামিনারও সব চেনা জানা । কাজেই সরাসরি কিছু করা সম্ভব ছিলো না । তবে আমাদের পরের ব্যাচ নাকি বরানগর বাজারে গায়ে সাইকেল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল । সেটা ইচ্ছাকৃত নাও হতে পারে । যা ভীড় । মাছ মারা ঠিক হয়নি ।
  • Abhyu | 208.137.20.25 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ১১:০৫59047
  • কে জানে? বোধ হয় দামী মদ খেলে নিজেকে কন্ট্রোল করা সহজ হয় :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন