এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মিতার সুবিচার চাই

    শারদ্বত লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ | ৪২৪১ বার পঠিত
  • মিতাকে আমি ভাল করে চিনতাম না। আমিও, ওরই মত, যাদবপুরে বাংলা পড়তাম। ক্লাস করে ফেরার সময় সিঁড়িতে দেখা হত কখনো-সখনো। একই ব্যাচ, একই বিভাগ, বিষয়ও এক, কিন্তু এরকম হয়েই থাকে, আমার বন্ধুমহল আর ওর বন্ধুমহল আলাদা ছিল। আলাপ হয়েছিল রি-ইউনিয়নে। আমার ওপর দায়িত্ব পড়েছিল ডিপার্টমেন্ট সাজানোর, আর আমাকে সাহায্য করার জন্য ছিল আরো দশ-বারোজন, তাদের মধ্যে মিতাও ছিল। টানা চার-পাঁচদিন শোলা কেটে রঙ করে আঠা দিয়ে ঘর সাজাতে সাজাতে রি-ইউনিয়নের আগের দিন খুব ক্লান্ত হয়ে ও বলেছিল, ‘এত খাটলাম, কিছু খাওয়াবি না?’ অগত্যা সবাই মিলে ঝালমুড়ি, যার যা রেস্ত। ওইটুকুই। পাশ করে যাওয়ার পরে কনভোকেশনেও দেখা, ওই, হাই-হ্যালো। তারপর অভীক-সমন্বিতা-দিব্যর ফেসবুক ওয়াল থেকে জানতে পারলাম, মিতা বিয়ে করেছে। লাইক, কনগ্র্যাচুলেশনের কমেন্ট, যোগাযোগ শেষ।

    অবশ্য ও চলে যাওয়ার পর ওর বাড়ি গিয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে মিতার কথা তুলে এনে যা যা জানা গেল, সেগুলো জানা থাকলে লড়াই কাকে বলে, তাও জানা হত। মিতার বাড়ি গড়িয়ার শান্তিনগরে। কাঠের পুল দিয়ে নালা পেরিয়ে যে গলির মধ্যে ওর বাড়ি, তার রাস্তার চারপাশে এখনো নবমীর বৃষ্টির থই থই জল। মিতার বাড়িতে টালির চাল, দরমার দেওয়াল। বাবার আয়ের কোনো ঠিকঠিকানা নেই। দিন গেলে ১৫০-২০০ টাকা। দুই দাদার একমাত্র বোন মিতা যাদবপুরে পড়ার সময় বইখাতার খরচ আর হাত খরচ তুলত সেলাই করে, পাড়ার কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়েকে টিউশন পড়িয়ে। মা বাড়ি বাড়ি কাজ করে ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ যুগিয়েছেন। সেলাইয়ের খুব ভাল কাজ জানত, বন্ধুদেরও টুকটাক ব্লাউজ-কুর্তি বানিয়ে দিয়েছে ও। এত কষ্টের পরিবেশেও কী একটা মনে পড়াতে এক শিঞ্জিনী হাসতে হাসতে বলছিল, ‘ভাব, ব্যাগ থেকে ফিতে বার করে ক্লাসরুমেই আমার মাপ নিয়েছিল’... এই মেয়ে যে এত লড়াই করে যাদবপুরে পড়তে এসেছে, সেটা যাদবপুরের সৌভাগ্য। আমরা মধ্যবিত্তরা জীবনযুদ্ধের কীই বা জানি?

    মিতা টাকাপয়সা নিয়ে খুব খুঁতখুঁতে ছিল, পাই-পয়সা ধার রাখত না বন্ধুদের কাছে। ওর বিয়ের পর যাদবপুরের বন্ধুদের সঙ্গে ওর দেখা হয় এমফিল পরীক্ষার দিন। শ্বশুরবাড়ির সুখ্যাতি করেছিল বেশ কয়েকবার। কোনো একবার চায়ের দামের পাঁচটাকা দিতে না পারায় যখন খুব লজ্জিত, তখন দিব্য-অভীক বলেছিল, ‘সাধ’-এ তো মেয়েদের ডাকবি। আমরা তো ডাক পাব সেই তোর বাচ্চার অন্নপ্রাশনে, তখন পাঁচটাকা কেটে রেখে গিফট দেব। রসিকতার পাত্রী লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে- এরকম ইয়ার্কি আমরা দিয়েই থাকি, কিন্তু আমরা কিংবা মিতার বাড়ির মানুষরা, কেউই জানতাম না কত কিছু মিতা লুকিয়ে যাচ্ছে আমাদের সবার কাছে। মিতা বাপের বাড়ির সবার কাছে লুকিয়ে গেছে, যে বিয়ের আগে অনেকদিনের সম্পর্কই ছিল ওর আর রানার। যেমন, মিতার কাছে রানা চেপে গেছে তার মদের নেশার কথা। একবার, মাত্র একবারই বিয়ের পর বাপের বাড়িতে মিতা বলেছিল, বর খুব মদ খায়। বন্ধুদের কাছেও বলেনি এ কথা। শুধু বৌদিকে একবার বলেছিল, ক’দিন আগে, ওর অনেক কথা জমে আছে, বলার মত। পুজোয় বাপের বাড়ি এলে বৌদিকে বলবে সব। চতুর্থীতে মিতা বাপের বাড়ি আসে, সপ্তমীর দিন রানা ওকে শ্বশুরবাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তার পরের ঘটনাগুলো আমরা সোশ্যাল মিডিয়া আর পেপারে পড়েছি।
    মিতা যাদবপুরে বাংলা এম.এ.তে আমাদের সঙ্গেই ভর্তি হয় ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। ২০১৫র ডিসেম্বরে আমাদের কনভোকেশন হয়ে যায়। মিতা বিয়ে করে ২২শে এপ্রিল ২০১৬। দশমীর বিকেল-সন্ধ্যে নাগাদ অনলাইন মিডিয়ায় আমরা খবর পাই, আমাদের মিতা মারা গেছে, রিপোর্টে ‘আত্মহত্যা’ নয়, সরাসরি ‘গলা টিপে ঝুলিয়ে দেওয়া’র কথা উল্লেখ করা আছে।

    মিতার বাড়িতে রানার ফোন আসে দশমীর দিন, ১১ই অক্টোবর ভোরে, ৫.০০-৫.৩০ নাগাদ। রানা ফোনে বলে, ‘আপনাদের মেয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।’ তার ১৫ মিনিট পরেই আবার ফোন করে বলে, ‘আপনাদের মেয়ে মারা গেছে।’ পাড়া থেকে কোনোমতে গাড়িভাড়া করে মিতার বাড়ির লোকজন সঞ্জীবন নার্সিং হোমে পৌঁছলে মিতার মৃতদেহের কাছে তার বাড়ির কোনো মানুষকে দেখা যায় না, রানা কোথাও নেই। মিতার শ্বশুরবাড়ির সবারই কেমন যেন আক্রমনাত্মক ভাব। যে মেয়ে আত্মহত্যা করে, তার স্বামীর তো শোকে বিহবল হওয়ার কথা, সে কেন নিখোঁজ? মিতার কাকাশ্বশুর বলে, ‘আপনাদের মেয়ে সুইসাইড নোট লিখে গেছে’। সুইসাইড নোট কোথায়, এই প্রশ্ন করতেই সে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে প্রায় পালিয়ে যায় কেন? এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলে মিতার নিথর দেহ দেখে। এমনই আত্মহত্যা করেছে মিতা, যাতে তার নাক-কান দিয়ে প্রচণ্ড রক্ত পড়েছে। রক্তের ধারায় মুখ ভেসে চুল পর্যন্ত চাপ চাপ রক্তে ভরে গেছে। কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে অনেকটা। গলায় আর ঘাড়ে আঁচড়ের গভীর ক্ষত। একটা কানের লতি ছিঁড়ে গেছে। বাহুতে আঙুলের ছাপ পড়ে কালশিটে পড়ে গেছে। গলায় গভীর কালো দাগ, তা আঙুলে হতে পারে, দড়িতেও হতে পারে, আবার দুটোই, মানে, আঙুলের পরে দড়ি ব্যবহার করেও হতে পারে। মিতার হাতের শাঁখা-পলা, হাতের মেহেন্দি, পায়ের আলতা, দাম্পত্যের সবকিছুর চিহ্ন তখনও রয়ে গেছে। আত্মহত্যাই, কারণ রানার বাড়ির লোকজন এই ঘটনাকে খুব ‘স্বাভাবিক-মৃত্যু’ ‘আত্মহত্যা’ বলে তার মৃতদেহ খুব তাড়াতাড়ি দাহ করার চেষ্টা করছিল।

    মিতা যে ঘরে ‘আত্মহত্যা’ করেছে, তার খাট এত উঁচুতে, আর সিলিং এতই নিচুতে, সে ঘরে খাটের ওপর দাঁড়ালে পাখার ব্লেড মিতার গলায় লাগার কথা – মিতার ছোড়দার থেকে এমনই জানা গেল। ঝোলার স্থান নেই যেখানে, সেখানে ফ্যানে ঝুলে পড়ে সে ‘আত্মহত্যা’ করল? এত আঘাত তাহলে সে কখন পেল? সঞ্জীবন নার্সিংহোম, যেখানে চাকরি করে মিতার স্বামী রানা, সেখানকার রিপোর্টে কেন লেখা হল আঘাত কেবলমাত্র গলার চারপাশে? মৃত্যুর কারণ কেন লেখা হল, ঝুলে পড়ার জন্য দম আটকে মৃত্যু হয়েছে তার? ডাক্তাররা কি রক্ত চেনেন না? আঁচড়ের দাগ চেনেন না? ব্রেনে হ্যামারেজ না হলেও, এমনি এমনিই নাক কান দিয়ে ভলকে ভলকে রক্ত বেরিয়ে আসা খুব স্বাভাবিক ঘটনা- এমনটাই কি মনে হয়েছিল সঞ্জীবন নার্সিংহোমের ডাক্তারদের? আমরা সত্যিই জানি না, কেবল শুনেছি, উড়ো কথাও হতে পারে, যে জমিতে সঞ্জীবন হাসপাতাল তৈরি হয়েছে তার বেশ কিছুটার প্রাক্তন মালিক রানার পরিবার। ওই হাসপাতালে তার পরিবারের দাপট আছে, রানার ওই হাসপাতালের টেকনিশিয়ানের চাকরিও সেখানেই পাওয়া। যেখানে মিতার মৃত্যু হয়েছে, পুলিশ সেই ঘরটিকে সিল করেনি এখনও। প্রমাণ লোপাট হতেই পারে, খাটের অবস্থান বদলে দিলেই মিতার ‘আত্মহত্যা’র পক্ষে যুক্তি সাজাতে পারবে খুনিরা। মিতার স্বামী-শ্বশুর ধরা পড়লেও দেওর-শাশুড়ি এখনও পলাতক। হ্যাঁ, মিতার খুন হওয়ার সময় তারা সেই বাড়িতেই উপস্থিত ছিল। খুন হওয়া মেয়ের পরিজনকে নার্সিংহোমে ঢোকার মুখে মিতার শাশুড়ি বলেছিল, ‘আপনার মেয়ের খুব জেদ।’ তখনও ভয় পায়নি সে। কুশবেড়িয়ার মণ্ডলপাড়ায় মিতার শ্বশুরবাড়ি, সেখানে সমস্ত মানুষই রানাদের আত্মীয়, সরাসরি না হলেও জ্ঞাতি তো বটেই। তাই খুন হওয়া মিতার বাড়ির মানুষ যখন নার্সিংহোমে, হাসপাতালের মর্গে, থানায় দৌড়াদৌড়ি করছেন, সব জায়গায় তাঁদের প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে। পুলিশ এফআইআর নিতে চায়নি, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁদের। শেষে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, দুশ-আড়াইশ লোকের হাত থেকে মিতার আত্মীয়-পরিজনকে বাঁচানোর জন্য র‍্যাফ দিয়ে প্রোটেকশন দিয়ে হাওড়া পর্যন্ত তাঁদের এগিয়ে দিয়ে যেতে বাধ্য হয় পুলিশ।

    এর সঙ্গে আরো অনেকগুলো ছোট-ছোট আপাত-বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছিল, যেগুলো জুড়লে,ব্যাপারটা আর অনেকটা পরিষ্কার হয়। মিতা চতুর্থীর দিন বাড়িতে এসে বলে, ও বি.এড. পড়তে চায়, তার অনেক খরচ। শ্বশুরবাড়ি থেকে অল্প কিছু টাকাই পাওয়া যাবে, বাকিটার জন্য বাবার কাছ থেকে ওর একলাখ টাকার দরকার। আর, খুন হওয়ার মাসদুয়েক আগে আমাদেরই সহপাঠী, ওর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে জানায়, ও কনসিভ করেছিল, তারপর সদ্য অ্যাবরশন করতে হয়েছে ওকে। এই বিশেষ বিশেষ ঘটনাগুলো কি আমাদের খুব চেনা ছকের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে না?

    খুব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ঘটনা কী, কিন্তু আমাদের দেশে আইনের শাসন এমনই হাস্যকর যে, বহু মানুষের সমর্থন না পেলে তা বলবৎ হয় না। আমরা, মিতার বন্ধুরা ভয় পাচ্ছি, মিতা সুবিচার পাবে না। কারণ, মিতার পরিবারের লোকবল নেই, অর্থবল নেই, দক্ষ আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্য নেই। আমরা ভয় পাচ্ছি, বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানচর্চা আর প্রগতিশীলতার কেন্দ্র যাদবপুরের তথাকথিত আধুনিক ছাত্রী হয়েও মিতা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হল দেখে। আমরা, মিতার বন্ধুরা আর আত্মীয় পরিজনরা এখনো জানি না কী ভাবে এগবো, জানি না, এই লড়াই কীভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে। আপনারা, যাঁরা এই লেখাটি পড়ছেন, তাঁরা সবাই মিতার পাশে, মিতার পরিবারের পাশে এসে না দাঁড়ালে মিতার সুবিচার নিশ্চিত করা যাবে না।

    #justiceformita

    #abolishdomesticviolence
    মিতার সুবিচার চাই - ২ (আরও দু'চার কথা)

    (এটা ঠিক আপডেট নয়, তবুও দশদিন পর অনেকগুলো কথা বলার ছিল, সেগুলো বললাম এখানে।)

    দশদিন আগে, ১৩ই অক্টোবর মিতার বাড়ি যাই আমরা জনাদশেক বন্ধু। তার দুইদিন আগেই জেনেছি মিতার খুনের ঘটনা। গড়িয়া স্টেশনে নেমে শান্তিনগরে কাঠের পুল পেরিয়ে যখন মিতার বাড়ির গলিতে আমরা ঢুকি, আমাদের, বিশেষ করে দিব্য-অভীক-সমন্বিতা-সোনালিকে দেখে মিতার বাড়িতে কান্নার রোল ওঠে। মিতার এই বন্ধুরা শেষবার এই বাড়িতে এসেছিল মিতার বিয়ের দিন। তারপর এই আসা। এত কান্না, এত অভিযোগ, এত অবিচারের কথা শুনতে শুনতে আমাদের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছিল বারবার। মিতার মা অসুস্থ শরীরে যেভাবে আমাদের বুকে আছড়ে পড়ে কাঁদছিলেন, তাতে চোখের জল চেপে রাখা মুশকিল। আর তখনই জেদের জন্ম হয়। আমরা জানি, প্রতি মিনিটে কয়েকশো নারী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার, আমরা জানি, লিঙ্গবৈষম্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যে দেশগুলোর, তার মধ্যে অন্যতম হল ভারত, কিন্তু সেই মুহূর্তে এত কথা, এত ফালতু পলিটিকাল কারেক্টনেস আর জেনারালাইজেশনের কথা আমাদের মাথায় আসেনি। শুধু মনে হচ্ছিল, হ্যাঁ, স্বার্থপরের মতই আমাদের মনে হচ্ছিল, আমাদের সহপাঠী, বন্ধু এই মেয়েটি, যাকে আমরা আড়াই বছরধরে চিনতাম, আমাদের সামনে যার পরিজন কাঁদছে যাকে হারিয়ে, কেবলমাত্র সেই মেয়েটির জন্য আমরা লড়ে যাব শালা, এই শুয়োরের বাচ্চা সিস্টেমের শেষ দেখে নেব।

    ঘন্টাদুই ধরে বিভিন্ন সংলগ্ন অসংলগ্ন কথাবার্তার ভিড়ে যা যা আমরা শুনি, সেগুলো সম্পূর্ণ গোছানোর জন্য যাদবপুর ক্যাম্পাসে ফিরে এসে আমাদের একটা আলোচনা হয়। উলুবেড়িয়া থানায় ডেপুটেশন দিতে যাওয়া, পিটিশন লেখা ছাড়াও আমাদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে একটা লেখা সার্কুলেট করার কথা ভাবা হয়। লেখালিখি করি টুকটাক, তাই আমার ঘাড়েই দায়িত্ব পড়ে পুরোটা লেখার। আমি বলি, দ্যাখ, আমি খুব পার্সোনাল একটা লেখা লিখতে চাই, তার মধ্যে আমাদের যুক্তিগুলোও থাকবে, তবুও, লেখার প্রথম অংশটা আমারই, বাকিটা সবার। সেই মত কথা হয়। বন্ধুরা যোগান দিতে থাকে তথ্য, আমি লিখে চলি, ছবিগুলো সাজিয়ে সাজিয়ে এডিট করতে থাকি। রাত দুটোর সময় ফোন করে লেখাটা বিভাগের স্যরকে দিয়েও চেক করানো হয়। তিনিও পালিশ করে দেন। পরদিন লইয়ারকে দিয়ে ফাইনালি চেক করিয়ে বেলা দুটোর দিকে আমি পোস্ট করি। বন্ধুরা লেখার ভূমিকাটুকু বাদ দিয়ে তার বর্ণনা-উপসংহারটিকে নিয়ে নিজের নিজের কথা জুড়ে নিজের নিজের ওয়ালে পোস্টায়। শিঞ্জিনী ট্রান্সলেট করে লেখাটি। আমি আট-দশটি গ্রুপে ছড়িয়ে দিই। প্রথম চার ঘন্টায় পাঁচ হাজার শেয়ারের পর আর দেখিনি। পরদিন সকালে সেটা বাইশ হাজারে চলে যায়। টিভিতে দেখি 'সোশ্যাল মিডিয়ায় সহপাঠীদের ঝড়'... আমাদের ফোন করে বিভিন্ন চ্যানেলে ডেকে পাঠানো... ইন্টারভিউ চলতে থাকে। পিটিশনটি তৈরি হয়ে যায়, তার সাইন ক্যাম্পেনও চলতে থাকে। দিন দুই পর মুখ্যমন্ত্রী মিতার পরিবারকে ডেকে আশ্বাস দেন, মিতার হত্যার তদন্তের দায়ভার নেয় সিআইডি।

    এতদূর পর্যন্ত সবাই মোটামুটি জানেন। যেগুলো ফেসবুকের ওয়ালে শো করে না, সেই সেই ঘটনাগুলো বলব এবার। মিতাকে নিয়ে লেখাটি ভাইরাল হওয়ার পর পায়েলদির বন্ধুরা আমার সঙ্গে ইনবক্সে যোগাযোগ করেন (পায়েলদিই বলছি, কারণ, যে কলেজে পায়েলদি পড়াশুনো করেছে, আমাদের বন্ধু দিব্যদীপ সেই কলেজে একই ডিপার্টমেন্টে পায়েলদির দুই বছরের জুনিয়র ছিল। দিব্য একইসঙ্গে মিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, পায়েলদির জুনিয়র)। অর্পিতাদি, পায়েলদির বন্ধু আমার সঙ্গে ইনবক্সে যোগাযোগ করেন, বলেন,
    -'তোমরা তোমাদের বন্ধুর জন্য লড়ে যাচ্ছ, দেখে ভাল লাগছে। কিন্তু আমাদের বন্ধুর কী হবে?'
    আমি তখন দিনে শ'চারেক মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছি, মিতার পিটিশনে তাদের সাইন করাচ্ছি, আমার অন্য বন্ধুদের অবস্থাও তথৈবচ। তার মধ্যেও বলে রাখি,
    -'আপনারা দিন দুয়েক একটু অপেক্ষা করুন, আমরা দেখছি কী করা যায়'

    তখন আমাদের কথা জানতে পেরে আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন প্রায় জনা তিরিশেক লইয়ার। এগিয়ে এসেছে হিউম্যান রাইটস ল নেটওয়ার্ক (HRLN), এগিয়ে এসেছে SWAYAM, APDR, ঋজুদার থেকে নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করেছেন নারী অধিকার কর্মী অঞ্চিতাদি, ইটিভির টক শোতে আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছে শাশ্বতীদির... হয়তো, এতগুলো পরিচিতির ভরসাতেই আশ্বাসটা বেরিয়ে এসেছিল মুখ থেকে।

    শিঞ্জিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানালাম পুরোটা। বিভিন্ন দিক ঠিক রাখতে রাখতে আমার-শিঞ্জিনীর-সমন্বিতার তখন পাগল পাগল দশা। তার মধ্যে শিঞ্জিনীও বলল, ওর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন নাজিয়ার বাড়ির মানুষরা, পার্কসার্কাসে যে একুশ বছরের মেয়েটিকে তার স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির লোক পুড়িয়ে মেরেছে। এদিকে যাদবপুরের বন্ধুরা, চারপাশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের তরুণ-তরুণী বন্ধুরা ঠিক করেছে তারা এই ঘটনাগুলো জুড়বে। মিতার ঘটনা তো কেবল যাদবপুরের ঘটনা নয়। সর্বত্র ঘটে চলা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের একটি বিন্দু হল মিতা, ঘটনাচক্রে আমরা মিতার বন্ধু, যারা জানি কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিতে হয়, ঘটনচক্রে মিতা এমন দাদা পেয়েছে, যে বোনের দেহ পোস্ট মর্টেমে দেওয়ার আগে ফটো তুলে রেখেছে। কিন্তু বাকিরা? প্রতিদিন হাজারটি ঘটনার বাকি ৯৯৯ জন? তারা কোথায় যাবে?

    নাজিয়ার বাড়িতে আমরা জনাছয়েক যখন পৌঁছলাম, তারপর যা যা ঘটল, তার সঙ্গে মূলগত ফারাক নেই মিতার ঘটনার, কেবল তীব্রতা আরো বেশি। ১৭ বছরে তার বিয়ে হয়, প্রথম ছয় মাসে অ্যাবরশান, তার পর টর্চার। থানায় জেনারেল ডায়েরি করে তো কোনো লাভ হয় না, সবাই জানে। তাও সেটা করা হয়েছিল। তারপর একটি সন্তানের জন্ম। গর্ভাবস্থায় অত্যাচারের কারণে তার মুখের একদিক জন্ম থেকেই ক্ষত-বিক্ষত। তারপর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম এবছরের ফেব্রুয়ারিতে। মার্চ-এপ্রিলে লাগাতার অত্যাচার, মুখে হাতে অজস্র কালশিটে আর রক্তাক্ত ক্ষত নিয়ে সে পালিয়ে আসে বাড়িতে। এফআইআর করা হয়, তারপর ক্ষমা-টমা চেয়ে তার স্বামী তাকে আবার বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এ বাড়িতে নাজিয়া থাকতোই বা কোথায়? দুটি ঘরে প্রায় জনাদশেক লোকের বাস। তারপর অবশেষে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে দেহ ফেলে রেখে বাড়িতে ফোন যায়, নাজিয়া গায়ে আগুন দিয়েছে।

    আমরা একের পর এক সুন্দরী সদ্যযৌবনা নাজিয়ার ছবি দেখছিলাম। হঠাৎ নাজিয়ার মামী এসে বললেন, 'ইয়ে লিজিয়ে ডেডবডি কা ফোটো'। সম্পূর্ণ পুড়ে চুল-ভুরু গুটিয়ে যাওয়া একটি ঝলসানো দেহ, তখনও ধোঁয়া উঠছে যেন অল্প অল্প। পর পর এরকম ছবি দেখার পর এই ছবিটা দেখে কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত অনুভূতি শূন্য হয়ে যায় আমাদের। গায়ে কাঁটা দিতে থাকে।

    পুলিশ বিন্দুমাত্র সহায়তা করেনি। হত্যাকারীর পরিবারের সঙ্গে খুব উঁচুমহলের রাজনৈতিক যোগাযোগ। পুলিশ সম্পূর্ণ সহায়তা করছে হত্যাকারীদের। শোনা খবর, দেড়লক্ষ টাকার বিনিময়ে পুলিশ কাস্টডিতে দুটি ফ্যান ও প্যাকেজড ফুড সহ নাজিয়ার হত্যাকারী স্বামী ছুটি কাটাচ্ছে। পরিবারের বাকিরা, নাজিয়ার শ্বশুর-শাশুড়ি-দুই ননদ-দুই নন্দাই এখনো ফেরার। পুলিশ লুকিয়ে রেখেছে তাদের। বিক্ষোভ বাড়লে তাদের থেকে নিয়েই শিশুপুত্রদুটিকে এই পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে যায় তারা। অথচ বলে, তারা নাকি ফেরার।

    পায়েলদিকে গলা টিপে অথবা ঝুলিয়ে খুন করা হয়েছে। বাথরুমের শাওয়ারে ঝুলে আত্মহত্যা করার গল্প মানতে চাননি পায়েলদির পরিবার, বন্ধু আর প্রতিবেশিরা। বাড়ি সিল করা হয়নি। দশদিনের আত্মগোপনে পায়েলদির ছয়মাসের মেয়ে এখন সারা গায়ে র‍্যাশ আর রক্ত পায়খানা নিয়ে ফিরে এসেছে তার মাসি-মেসোর কাছে। মেয়ে জন্ম দিয়েছে তো, তার পর থেকেই অত্যাচার বাড়ছিল। গাড়ি কেনার জন্য তিনলাখটাকার দাবি তো ছিলই।

    বারুইপুরের নমিতা নস্করের ঘটনা আমরা টিভিতেই দেখলাম। সাত বছরের শিশুপুত্রের সামনে পিটিয়ে গলায় বিষ ঢেলে তার মাকে মারল তার বাবা।

    আরো কত কত পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে উঠতে পারলাম না। আরো কত কত মেয়ে... আরো কত কত অত্যাচার... মৃত্যু বাঁচিয়ে জীবন্মৃত হয়ে আরো কতকাল বেঁচে থাকা... কোথায় থামব?

    যাদবপুরের ফেটসুর ইউনিয়ন রুমে যখন পায়েলের পরিবার আর নমিতার পরিবার মুখোমুখি বসেছেন, একটা সুতোর বুনন ঘটে যাচ্ছে আমাদের চোখের সামনে, নাজিয়ার দাদা সাবির যখন বলছেন, আমরা আমাদের লড়াই ছিনিয়ে নেব, নমিতার জামাইবাবু বলছেন, আমাদের মেয়েকে হারালাম, আপনারা দেখবেন আর কোনো মেয়ে যেন না হারিয়ে যায়, পায়েলের পড়শিরা বলছেন, আমরা হার মানিনি, থানা ঘেরাও করেছিলাম... তখন জেদ চেপে যাচ্ছে আমাদের। সেই জেদটা ছিলই। মিতার বৌদি যাদবপুরে এসে আমার দু'হাত জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন,
    -'ভাই তুমি যা লিখেছ, আমি রোজ পড়ি আর কাঁদি'
    আমি হাত ছাড়িয়ে ধমক দিয়ে বলছি,
    -'কাঁদবেন না বৌদি, কাঁদলে হেরে যাবেন।'
    নাজিয়ার দিদি আমাদের সামনে কাঁদছিলেন,
    -'আপলোগ কুছ কিজিয়ে, কুছ কিজিয়ে ভাইয়া'
    আমরাই ধমকে বলছি,
    -'রোনা মত।'

    আর যাদবপুরের মাঠে আমরা এই পরিবারগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছি স্বয়ম, এপিডিআর, এইচআরএলএন কে। আমরা এটুকুই তো পারি।
    আমি চোখের সামনে দেখছি আমার যাদবপুর বদলে যাচ্ছে, বদলে বদলে যাচ্ছে যাদবপুরের কমিউনিকেশনের ভাষা। চোয়াল শক্ত হচ্ছে সবার। কোনো দলই মুখ্য নয়, অথচ সব দল এগিয়ে এসে ভাগ করে নিচ্ছে তাদের দায়িত্ব। তারা বলছে কম, শুনছে বেশি। ক্যাম্পাসের বাইরে তাদের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে নতুনভাবে। চারপাশের সবাইকে ডেকে আনছে তারা। তাদের সঙ্গে কাজে মিশে তাদের ঘরে ঢুকে পড়ছে, কষ্টের কথা শুনছে। ক্যালকুলেশন করছে কম, ইনভলভড হচ্ছে বেশি। যখন মিতা-নাজিয়া-নমিতা-পায়েলের কথা শুনছি আমরা, একপাশে শাশ্বতীদি আর অঞ্চিতাদি নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন, গিয়ে বললাম,
    -'গল্প করছেন?'
    -'ঠিক গল্প নয়, তিরিশ বছরের নারী অধিকার নিয়ে লড়ে এখন উই আর শেয়ারিং ফ্রাস্ট্রেশনস। এই মেয়েগুলো তো মরে গেল বল, যারা বেঁচে আছে, তাদের জন্য কিছু করবে না তোমরা?'

    সবকিছুই খুব ভাল নয় কিন্তু। আছে কিছু অভিসন্ধি খুঁজে বার করা পাবলিক। স্ট্যাটাসটিতে ফ্রেন্ড সার্কলের বাংলা অনুবাদ করেছিলাম বন্ধুমহল, ওর আর আমার ফ্রেন্ড সার্কলে কমন কিছু বন্ধু থাকলেও আমরা সরাসরি একে অন্যের বন্ধু ছিলাম না। তাই, পার্সোনালি মিতাকে ঠিক কতটুকু চিনতাম লিখেছি। লিখেছি, মিতা যে কতটা যুদ্ধ করেছে জীবনে, তার খতিয়ান সে বেঁচে থাকতে জানতে পারিনি আমি। এই লেখাগুলোর পেছনে আর কী অভিসন্ধি থাকতে পারে? তবুও শুনতে হল, আমি তার গরিবীকে সেন্সিটাইজ করেছি, সে আমার বৃত্তের, অর্থাৎ 'যাদবপুরের উচ্চশিক্ষিত মহল' এর অংশ নয়, সেটাও আমি কৌশলে উল্লেখ করেছি, শুনতে হল, কেবল মিতাকে কেন গ্লোরিফাই করছি। এদের বলতে চাই, 'সবার জন্য লড়তে চাই' - কথাটা সবসময় আউড়ে গেলে আসলে কারোর জন্যই লড়া হয় না। এই নেগেটিভিটির রাজনীতি আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। আমি জানি আপনারা খুব খুশি হতেন মিতা সুবিচার না পেলে। কারণ, যেখানে কেউ সুবিচার পায় না, সেখানে ও কেন পাবে সুবিচার... এই তো আপনাদের প্রশ্ন? আপনাদের বলছি, 'ফুটুন'। মিতাকে ব্যবহার করে আমাদের ফুটেজ খেতে দিন। হাত কামড়াবেন না।

    লজ্জা করে না আমাদের, যখন মিতার শেয়ার হওয়া ছবিতে আমরা লিখি, 'ইউ আর সেক্সি'?

    লজ্জা করে না আমাদের, এরকম অবস্থায় ইনবক্সে খিস্তি আর যৌন প্রোপোজাল পাঠাতে?

    লজ্জা করে না আমাদের মিতার স্ট্যাটাস শেয়ার করে 'যাদবপুরের মাগী খুব তো আজাদি চেয়েছিলি, এই তো পরিণতি হবে তোদের' লিখতে?

    লজ্জা করে না আমাদের, যখন বলি, 'আগে কেন বেরিয়ে আসেনি মেয়েটা'...?

    লজ্জা করে না আমাদের, যখন আমরা বলি, 'প্রেম করে বিয়ে করেছিল, নিজেরই দোষ'...?

    মিতা-নাজিয়া-নমিতা-পায়েল-আলেমাদের এইভাবে খুন করতে লজ্জা করে না আমাদের?

    লেখাটা লিখতে লিখতে মনে পড়ল, মিতার বাড়ি গিয়েছিলাম ১৩ই অক্টোবর।নয় বছর আগে, ক্লাস টেনে পড়ার সময় ওইদিনেই আমাদের প্রিয় তিন বন্ধু তলিয়ে যায় পুকুরের জলে। আমরা সেইদিন পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলাম। পেপার মিডিয়া তোলপাড় হলেও ঘরে বসে কাঁদা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। কাকে দোষ দেব? এমনই শীত ঘনিয়ে আসা বিষণ্ণ ছিল দিনকাল। দিন যায় না, ফিরে ফিরে আসে সব। আমাদের সবার মধ্যে পুষে রাখা কোনোদিন কারোর জন্য কিছু না করতে পারার কষ্টরা এভাবেই নিজের ইকুইলিব্রিয়াম খুঁজে নেয়।

    লড়াইটা সবার। সারা বাংলার ছাত্রসমাজ লালবাজার অভিযান করছে ২৬শে অক্টোবর, প্রতিটি গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাকে পুলিশ যেন তীব্রতম গুরুত্ব দিয়ে দেখে, প্রতিটি ব্লক-গ্রাম-পঞ্চায়েত যেন সক্রিয় হয় গার্হস্থ্য হিংসা বিলোপে - এই দাবিতে। বেলা তিনটের সময়, কলেজ স্ট্রিটে, আপনারাও আসুন। এই নরম মেরুদণ্ডহীন সর্বত্র পিছিয়ে পড়া পশ্চিমবাংলার ভেতো বাঙালিরা গার্হস্থ্য হিংসায় সারা ভারতে ফার্স্ট বেঞ্চে বসে। লজ্জা করে না আমাদের? লজ্জা ঢাকতে রাস্তায় নামব না আমরা?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ | ৪২৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২২59048
  • হুঁ, তাই হবে হয়তো। আফ্ট্রল, সবই তো সেই কাপিতালিজমের খেলা।
    ঃ-)
  • PT | 213.110.242.5 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৫59049
  • কত চাই মৃতদেহ?
    "`ঠাকুরপুকুরের একটি বাড়ি থেকে এক বধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ ৷ মৃতার নাম , নবনীতা বিশ্বাস (৪২ ) ৷ "
    http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=26856&boxid=145828248
  • Abhyu | 85.137.2.86 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪৬59050
  • http://www.anandabazar.com/district/nodia-murshidabbad/payel-pal-s-family-and-friends-want-justice-for-payel-1.496834#

    ‘‘দশমীর দিন খবরের কাগজে মিতা মণ্ডলের ছবিটা দেখে খুব মনে হচ্ছিল তোর কথা। ঠিক পাঁচ দিন আগেই তো বোধনের দিন তো তোকেও তোর শ্বশুরবাড়ির লোকগুলো মেরে ফেলল।
    ফারাক একটাই, তুই খবরে এলি না।।।। তোর ছ’মাসের বাচ্চাটা এখনও খুনিদের হাতে। মিতার পাশে হয়তো যাদবপুর দাঁড়াবে, তোর জন্য কি কিছু করা সম্ভব?’’
  • অভি | 125.187.34.200 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৩৬59051
  • ই কী! মদ খেলেই বৌ পেটাতে ইচ্ছে হবে, এমন তো না। মদের মাইন্ড অল্টারিং এফেক্ট মানে ইনহিবিটরি এফেক্ট কাটিয়ে দেওয়া। যে মদ খেয়ে পেটায়, তার মধ্যে এমনিতেও পেটানোর ইচ্ছে আছে, অন্তত পিটিয়েই সব ঝামেলা মিটিয়ে দেওয়া যাবে এমন একটা বোধ আছে, এবং আরো নানান ফ্যাক্টর। কিন্তু রকমারি কারণে, পারিবারিক, আইনি, সামাজিক, ব্যক্তিগত, আর্থিক - সে এমনিতে পেটায় না। এবার মদের প্রভাবে এই লজিক্যাল রিজনিং আর ইনহবিশনের বারোটা বেজে গেলে তখন পেটাতে শুরু করে। এর কোনো দিশী বিদেশী, বেশি দামী কম দামী ব্যাপার নেই। :-)))
  • :) | 37.7.202.19 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৫59052
  • পায়েলরা চার বোন!! বোঝাই যাচ্ছে কেন! এইরকম পরিবারের মেয়েদের আত্মসন্মান নিয়ে বাঁচতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রেখে দাঁড়াতে কে শেখাবে? পারিবারিক শিক্ষা তো সম্পূর্ণ বীপারীতমুখীঃ(
  • :) | 37.7.202.19 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৬59053
  • বিপরীত
  • sch | 37.251.71.51 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:০৯59054
  • আবারও বলছি - এই সব সি আই ডি টি আই ডি মুখ্যমন্ত্রীর চাল - ঘোড়েল মহিলা - এখন উৎসবের মরশুমে ঝট করে চাপা দিয়ে দিলেন যাতে কোনো বড়ো ঝাম না হয়। যাদবপুর আছে - কে জানে আবার কি আন্দোলন হবে। যদি পারেন কেউ ময়না তদন্তের রিপোর্টটা যোগাড় করুন। দেখা যাক সেখানে কি লেখা আছে - সেটা প্রকাশ্য করতে অসুবিধে কোথায়? সবাই জানুক কি শব্দ লেখা আছে সেখানে । যদি বলা থাকে এক্সটার্নাল ইঞ্জুরি আছে - রাণার বেলের ব্যবস্থা করতেই হবে
  • Sayantani | 11.39.56.39 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:৪৯59055
  • Mod ইকুয়ালস টু বৌ পেটানো এটা ঠিক না। অনেক মদ না ছোয়া লোক ও বৌ petay
  • ranjan roy | 192.69.127.20 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৩১59060
  • ঠিক কথা। এই "মানিয়ে চলা"র সুপরামর্শটাই মারাত্মক। খুন হয়ে গেলে পরে কে কার সঙ্গে মানিয়ে চলবে?
    আসলে বাপ-মার ডিভোর্স নিয়ে সমাজে সম্মান গেল এই ফল্স্‌ বোধটাকেই অ্যাটাক করা উচিত।
  • de | 24.139.119.174 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৪৪59056
  • ঠিক - বৌ পেটানোর সঙ্গে মদকে যোগ করে দিলে অপরাধীকে সফটার অ্যাঙ্গেলে দেখার একটা টেন্ডেন্সি থাক এ - আহা, মদ খেয়েছে তো, মাথার ঠিক ছিলো না -

    যে বাপের বাড়িতে অতো অত্যাচারিত হয়েও মেয়েটা ফিরে যেতে পারেনি, সেই বাপের বাড়ির লোককেই চাগ্রী দেওয়ার কি মানে? যখন অত্যাচারিত হচ্ছিলো, তখন কোথায় ছিলো বাপের বাড়ির লোক। কেন ম্যারেজকে এমন ওয়ান ওয়ে লেন মনে করা হবে? বিয়ে দিয়ে দেওয়া মানে সেই মেয়ের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব থেকে হাত তুলে নিতে পারে বাপের বাড়ি?

    তবে মার-ধোর অনেক ডাইরেক্ট জিনিস - পুলিশ-টুলিশে অভিযোগ করা অনেক সহজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন সাট্‌ল ওয়েতে টর্চার চলে যে অভিযোগ করাও যথেষ্ট মুশকিলের হয়ে পড়ে-
  • de | 24.139.119.174 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৪৭59057
  • এতো কিছু দেখার পরেও মেয়েরা আর তাঁদের অভিভাবকেরা একটু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে ভাবেন না কেন? অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হলে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হয়! এই ব্যাপারটা মাথার মধ্যে গজাল মেরে ঢোকানো হোক -
  • nabanita | 162.79.255.200 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:০৭59061
  • শুধু মানিয়ে চলার পরামর্শই নয়, যদি মেয়ে মরলেই ভাই সরকারি চাকরি পায়, তবে তো বোন/মেয়ে দের মানিয়ে চলতে পাঠানোর আরো incentive। শুনছি নাকি বিয়ের জন্যের দেনা মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল শোধ করে দেবে, তা না করে যাতে মেয়ের বিয়েতে দেনা করতে না হয় এটা দেখলে বোধহয় আরো দু-চারটে মিতা বাঁচলেও বাঁচতে পারত।
  • kumu | 69.178.44.181 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:৪৬59058
  • দে,একদম ঠিক।
  • Abhyu | 208.137.20.25 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:০৭59062
  • মেয়েরা আর তাঁদের অভিভাবকেরা একটু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে একেবারে ভাবেন না কে বলেছে? মিতা কি হিসেবে ঠিক পরাধীন ছিলেন অর্থনৈতিক ভাবে? ঐ পরিবেশ থেকে লড়াই করে বড় হয়েছেন, যাদবপুরে পড়েছেন, উনি নিশ্চয়ই জানতেন যে ওনার পক্ষে একা বাঁচা সম্ভব ছিল। এমন তো নয় যে কোনো রকমে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতেই মিতার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল...
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:১৯59063
  • মেয়েগুলোকে জোরজার করে বিয়ে দিয়ে বেড়াল পার করে দিয়ে তারপরে যদি আবার শ্বশুরবাড়ীতে মারা গেলে ভাই টাইয়ের চাকরি জোটে মুফতে , তাইলে তো এটাই টেকনিক হয়ে দাঁড়াবে।
    শ্বশুর বাপ সব একজোট হয়ে প্ল্যান করে করে আপদ বিদায়।
    একদিকে বাপের বাড়ীর লোক চাকরি, অন্যদিকে শ্বশুরের ছেলের পরবর্তী বিয়েতে কনের বাড়ী থেকে হাতে হাতে নগদ।
    ম্যানেজমেন্টের ভাষায় এরেই তো কয় উইন-উইন।
    আপদও বিদায় হল, ধনসম্পদও ঘরে এলো।
  • Sayantani | 126.203.129.170 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ১১:৫৬59059
  • ঠিক। মারধরের দাগ গুলো বাইরে থেকে দেখা যায়। আরো এমন অনেক অত্যাচার চলে যার কোনো দাগ বাইরের লোক দেখতে পায় না।
    আর সত্যি আমাদের দেশে এমনকি শিক্ষিত, উচ্চ্ মধ্যবিত্ত পরিবারেও দেখা যায়, 'মানিয়ে চলা' র সুপরামর্শ দেওয়া হয়। ডিভোর্স এর পরও আত্মীয় মহলে তা চেপে রাখা হয়।
  • PT | 213.110.242.23 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৬59064
  • কিন্তু পরবর্তী বিয়েতে তো আরেকটা "আপদ"-ও ঘরে এল!! এতো সেই পার্পিচুয়াল মোশন মেশিনের ব্যাপার-একটা বাড়িতে ক্রমাগত ধনসম্পত্তি আসতেই থাকবে!!!!!!
  • নামে কি যায় আসে? | 83.78.217.138 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৮59065
  • আপনাদের চাড্ডী পেটানোর বীরপুঙ্গবোচিত কাহিনী তো আগে দেখেছি। ক্ষমতা যখন এতোই, বরটাকে কেলিয়ে আসতে পারছেন না? না কি অণ্ডকোষহীন মাকুদের এটাই ধাত? ফেসবুক আর ব্লগে বাতেলা?
  • Satabdi | 178.235.205.80 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৫59066
  • এটা সায়ন্তনী পোস্ট করতে বলল।
    ফেসবুক ওয়াল থেকে তুলে দিলাম।এডিট ছাড়া।

    " ফেসবুকে ও কলকাতায় সপ্তাহখানেক ছিলাম না। এর মধ্যে মিতার মৃত্যু বা খুন ঘটেছে। যেখানে ছিলাম সেখানে বাংলা সংবাদপত্র পৌঁছয়না। তাও টুকরো টাকরা খবর কানে এসেছে।

    মিতা মন্ডলের নামটা হয়ত আর ফেসবুকে আবর্তিত হবেনা বেশিদিন। মেয়েটির মৃত্যু যখন সাড়া ফেলেছেই,তখন সে বিস্মৃতিতে তলিয়ে যাওয়ার আগে কতগুলো কথা আবারও বলে যাই। ইন ফ্যাক্ট, বলার জন্য এই সময়টা কিঞ্চিৎ বেশি উপযুক্ত বলেই আরেকবার বলা। এমনিতেও ,কথা কানে ঢোকানোর জন্য একই সুরে ঘ্যানঘ্যান করে যাওয়া বেশ কাজের পদ্ধতি।

    ১) গার্হস্থ্য হিংসা শুধু মৃত্যু দিয়ে চিহ্নিত হয়না। প্রতি মুহূর্তে তা ঘটছে।আমার আপনার চারপাশে। একথা বললুম,কারণ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত,সত্যি বলছি,কোথাও কোনো আলোড়ন দেখিনা। অনেকেই "স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়" বলে এড়িয়ে যান। আর এটাও ভেবে দেখবেন,যদি আত্মহত্যাও হয়ে থাকত, তাহলেও কি তা আসলে হত্যা নয়?

    ২) 'যাদবপুরের মেয়ে' কেন এতদিন ধরে সহ্য করছিল পড়ে পড়ে, এই প্রশ্ন যাঁরা তুলছেন,আবারও বলি, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সে বা ইন্টিমেট পার্টনার ভায়োলেন্সে এটাই একদম স্বাভাবিক। প্রতিটা কেসেই ভিক্টিম- হয় মৃত্যু নয় সম্পর্কবিচ্ছেদের আগে -সাত থেকে দশবার নিজের নির্যাতকের কাছে ফিরে যায়। কারণ নির্যাতক নাগাড়ে নির্যাতন করেনা। মাঝে ভালোবাসা, সুখানুভূতির অনেক মুহূর্ত থাকে,যা আশা জাগিয়ে রাখে। ভিক্টিম বুঝেই উঠতে পারেনা ব্যক্তিটির কোন সত্ত্বা সত্যি-নির্যাতকের না প্রেমিকের। একে সাইকল অব ভায়োলেন্স বলি আমরা। হানিমুন ফেজ, টেন্সন ফেজ, ভায়লেন্ট ফেজ এর নিরন্তর চক্র এটি। ছবি১ এ দেখতে পারেন কিভাবে এই কুন্ডলি ভিকটিমকে ঘূর্ণির মতো আছড়ে মারে।

    ৩) না। ডোমেস্টিক ভায়লেন্স 'শুধু' পণ চেয়ে হয়না। হাজার একটা কারণ থাকে তার। আবার সেই সব কারণের মূলগত কারণ একটাই। নির্যাতকের অত্যন্ত হীন মনোবল, আত্মপ্রত্যয়হীনতা। মূলত,নির্যাতক নিজেকে নির্যাতিতের থেকে হীনতর ভাবে। কিন্তু শিকারটিকে তার প্রয়োজন হয় তবুও। তাকে ডমিনেট না করে নির্যাতক বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় আত্মপ্রত্যয়টুকুও জোগাড় করতে পারেনা।

    ৪) মিতার বর মাতাল কি গাঁজাখোর,তা খুব প্রাসঙ্গিক নয়। যদিও দেখা গেছে অনেক ডিভি পারপিট্রেটরই সাবস্টেন্স এ্যবিউজের দোষে দুষ্ট,কিন্তু খুব একটা কার্য-কারণ সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখুন,ছেলেটি মদ খেয়ে বাড়ির অন্য সদস্যদের, বা পাড়ার লোকেদের পিটিয়েছে,এমন ইতিহাস না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বরং পরিচিত মহলে তার একটি সদাশয় ইমেজ থাকা সম্ভব। এমনটাই হয়ে থাকে।

    ৫) মিতার বর অবশ্যই সাইকোটিক কিলার নয়,যেমনটা আপনি ভাবছেন,লিখছেন,আলোচনা করছেন। WHO এর মতে প্রতি তিনজনে একজন মহিলা এইভাবে নির্যাতিত হন। এত বেশিসংখ্যক মনোবিকল মানুষ বিচরণ করছে পৃথিবীতে বলতে চান?

    ৬) ডিভি আসলে পাওয়ার আর কন্ট্রোলের খেলা। আর এর মূল আসলে আছে পুরুষতন্ত্রে। বস্তিতে নয়। মদে নয়। মানসিক অসুস্থতায় নয়। আপনারা যখন মদ,বিএডের টাকা ইত্যাদি দেখছিলেন,আমার চোখ শুধু ওইখানেই আটকে ছিল...ওই যে,মেয়েটির শাশুড়ি যা বলেছিল-'আপনাদের মেয়ের ভারি জেদ'।
    অনেকবার বলেছি।আরো অনেক বার বলব-

    DV /IPV IS ALL ABOUT SHOWING A WOMAN HER PLACE.
    NOTHING MORE OR LESS.

    প্রশ্ন হল,মিতার জাস্টিস তো অবশ্যই লড়াই-এর স্লোগান। কিন্তু গার্হস্থ্য বা অন্তরঙ্গ সঙ্গী দ্বারা হিংসা নিয়ে সার্বিক সচেতনতার কথা আমরা কবে ভাবব? আমাদের দেশে, আমাদের রাজ্যে প্রতিটি জেলায় একটি করে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স ভিক্টিম শেল্টার হবে কবে? ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়াস সরকার কি কোনোদিনও নেবেন? আমাদের একটি ছোটো গ্রুপ ও একটি পেজ আছে এই সংক্রান্ত,প্রয়োজনে দেখুন সেগুলি, কিন্তু সরকারি উদ্যোগ এক্ষেত্রে আশু প্রয়োজন মনে করি। বৈবাহিক ধর্ষণকে যে দেশের আইন স্বীকার করেনা,তার থেকে খুব বেশি চাওয়া হয়ে গেল কি?
  • Abhyu | 106.32.191.88 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২১59067
  • খুবই ঠিক লেখা।
  • Abhyu | 106.32.191.88 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৩৪59068
  • এবার যেটা বলব সেই রকম কেসে আত্মীয়স্বজনদেরও কিছু করার থাকে না। ছেলেটি শুধু বউকেই পেটায় না, বাবা মাকেও ছেড়ে কথা বলে না। কিন্তু বাবা মা পুত্রস্নেহে অন্ধ, আর পুলিশ নিয়ে আপনি ওদের বাড়ি গেলে মেয়েটাও পাল্টি খেয়ে বলবে না তো কিছু হয় নি। তখন? আপনার এগেনস্টেই পুলিশ কেস। মেয়েরা নিজেরা প্রতিবাদ না করলে কিছু করার নেই।
  • নামে কি আসে যায় | 83.78.217.138 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৪৬59069
  • মিতা একজন নয়। লক্ষ লক্ষ মিতা ভারতবর্ষ এবং আরো অনেক তৃতীয় বিশ্বের দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কতজনের জন্য পিটিশন জমা হবে। বদলটা আসতে সময় লাগে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা করছি, সেটা হলো এরকমঃ টাকা পয়সা ঢেলে এবং মেধার জোরে একটি কোম্পানী খুলেছি, অবশ্যই সেটা লাভ করার জন্য, আমি বড়লোক হতে চাই, আমাকে পুঁজিবাদী বললে কিস্যু যায় আসে না। কিন্তু আমার কোম্পানীর কাজের ধরণটাই এমন যে তাতে প্রচুর মহিলার কর্মসংস্থান হচ্ছে, তাঁরা স্বনির্ভর হচ্ছেন, এবং আস্তে আস্তে এভাবেই পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা বদলাবে। এভাবেই হয়, রাজনৈতিক তত্ত্বের মুগুর ভেঁজে কিছু হয় না।
  • Sayantani | 190.215.79.99 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:১২59070
  • শতাব্দী থ্যাংকইউ । লেখা টা সবাই একটু পড়ুন। ডি ভি খুব জটিল সমস্যা, দুটো মারধোর দিয়ে, বা ভাই কে চাকরি দিয়ে সমাধান হওয়ার নয়।
  • ছোটোলোক | 198.155.168.109 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:১৮59071
  • শতাব্দীর লেখায় পয়েন্ট বাই পয়েন্ট করে গুছিয়ে বলা আছে। পুরো ব্যাপারটাই যে পিতৃতান্ত্রিকতার ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে, সেটা স্বীকার করবার দিন এসে গেছে।

    তবে, মিতার মতো আরো যে মেয়েগুলো খুন হয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য মিলিতভাবে যদি আবেদন করা যেত। মিতাতো একা নয়, এরকম করে বহু মেয়ে মরে যাচ্ছে রোজ।
  • Sayantani | 190.215.84.90 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:৩৮59072
  • যারা মার্ খাচ্ছে, খুন হচ্ছে, তাদের সবার জন্য।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:৫৯59073
  • শতাব্দীর লেখাটা ভীষণ ভাল।

    "তাকে ডমিনেট না করে নির্যাতক বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় আত্মপ্রত্যয়টুকুও জোগাড় করতে পারেনা।"-- এইটা ভীষণ ভাল পয়েন্ট। শুধু আর একটা কথা, এ প্রসঙ্গে হয়ত খুবই পেরিফেরালি প্রাসঙ্গিক, তবু...
    "'আপনাদের মেয়ের ভারি জেদ'।" এইটার পিছনে যে অচলায়তন তা প্রেমিক পুরুষটিকে দিয়েই মেডিয়েটেড হতে হয় এমন বোধহয় নয়, এমনকি না হলে সেন্সেবল পুরুষ সঙ্গীকেও ছেড়ে কথা বলেনা। পরিবারের একজনের সঙ্গিনী নয়, পরিবারে একটি 'বউ' এসেছে, যা একটা বশমানা প্রাণী হতে হবে। তাই তার জেদ অশোভন, এবং সেটা তার সঙ্গীর তার ওপরে কতৃত্ব ফলাতে না পারার 'ব্যর্থতা'-- আদ্যন্ত আদারওয়াইস আধুনিক এবং সম্পূর্ণ আর্বান অনেক বাড়ীতেও এইভাবে দেখা হয় এখনো। তাইতে পুরুষ সঙ্গীর পৌরুষ এ আঘাত লেগে সে অন্য মানুষ হয়ে যেতেও দেখেছি কিছু। ফলত বিষয়টা সত্যিই সঙ্গের পুরুষটা মাতাল না নয়, সে ভাল লোক না ভারী খারাপ লোকের ব্যাপার নয় শুধু।
  • ranjan roy | 132.162.197.131 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ১১:৩০59074
  • "পরিবারের একজনের সঙ্গিনী নয়, পরিবারে একটি 'বউ' এসেছে, যা একটা বশমানা প্রাণী হতে হবে। তাই তার জেদ অশোভন, এবং সেটা তার সঙ্গীর তার ওপরে কতৃত্ব ফলাতে না পারার 'ব্যর্থতা'-- আদ্যন্ত আদারওয়াইস আধুনিক এবং সম্পূর্ণ আর্বান অনেক বাড়ীতেও এইভাবে দেখা হয় এখনো।"
    ---- হক কথা। অনেক কাছ থেকে দেখা। শাশুড়ি চিন্তায়, ছেলে পর হয়ে যাচ্ছে না তো! বাপের বাড়ির চালচলন যাই হোক, ওকে আমাদের পরিবারের হিসেবে চলতে হবে, অ্যাডজাস্ট করতে হবে।
    এখানে ছেলে হয় 'কন্ট্রোল' এর দায়িত্ব মার হাতে ছেড়ে দিয়ে নিজে চুপটি করে থাকবে, নয় নিজে কন্ট্রোল করতে শুরু করবে--দেখাতে যে ও বউয়ের বশ হয়ে যায় নি।
    ফল=DV।
  • Abhyu | 107.81.96.72 (*) | ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪১59075

  • pi | 192.253.196.11 (*) | ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:৩২59079
  • সঠিক স্বাধীনতার মানে এখনো হাতে ধরে শেখাতে হবে কেন ? অন্ততঃ একজন শিক্ষিত মেয়েকে ? পড়াশুনো করে বড় হওয়ার পথে স্বাধীনতা শেখা যায়না ? সরি, মেয়েদের নিজেদেরও এখনো অনেক কিছু করা বাকি। সব দোষ পিতৃতান্ত্রিকতার ঘাড়ে চাপালে ওটাকে আরোই গেঁড়ে বসতে দেওয়া হয়।
    আর ঐ বিয়ে হয়ে গেল, একটা সংসার , নিশ্চিন্তির জীবন, রোজগার , সংসার চালানো নিয়ে চিন্তাভাবনা না করলেও চলে যাবে, এই নর্মটা থেকে গেলে বা আর মেয়েরা তাতে সাবস্ক্রাইব করলে বা কখনো ভাঙলেও গুচ্ছ অপরাধবোধ নিয়ে, এই সমস্যা কমার সম্ভাবনা কমই মনে হয়। সব কিছু স্মুথ হবে, তবে করবো বা না হলে পিছিয়ে আসবো, বা না হবার ভয়েই, এরকম হলে এরকমই চলতে থাকবে, সে চলা যতই অনুচিত হোক না কেন। স্মুথ হলে চলার থেকে চলতে চলতে স্মুথ করাটা বেটার উপায় মনে হয়। একজন দুজনের কথা নয়। প্রচুর মেয়ে দলে দলে নিজেদের মত করে কাজকম্ম করলে হয়তো এই ভাবনাচিন্তাগুলো কিছু বদলাতে পারে। এটাই স্বাভাবিক মনে হতে বাধ্য হয়ে।
  • rani | 212.142.102.122 (*) | ২০ অক্টোবর ২০১৬ ১০:১৯59076
  • নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি কোন রকম সচেতনতা নেই ডোমাস্টিক ভায়োলেন্স সম্বন্ধে আমাদের সমাজে কোথাও । আমি নিজে প্রচন্ড ভায়োলেন্সের শিকার হয়ে যখন অবশেষে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি, আমার সিনিয়র, তথাকথিত শিক্ষিত সহকর্মী আমায় বলেছে, দু একটা চড়চাপড় খেলে কিছু হয় না, ডিভোর্সের পথ খুব সাঙ্ঘাতিক, মামলা ঝুলে থাকবে বছরের পর বছর । আবার অনেকে সাহস দিয়েছে সেও ঠিক । কিন্তু আসল কথাটি হল, নিজস্ব সাহসের দরকারই থাকে সবচেয়ে বেশি, যেটা ভীষন কঠিন, ভীষন অজানা । একলা বাচ্চার হাত ধরে বেড়িয়ে যে অপরীসীম মানসিক একাকিত্বের সঙ্গে লড়াই করেছি সে জানি আমি আর আমার বাচ্চা । যতদিন না বাবা মায়েরা মেয়েদের শেখাবে কাকে বলে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স , কাকে বলে সঠিক স্বাধীনতার মানে, ততোদিন কিচ্ছুটি করার নেই ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন