এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • ধানাই পানাই ৪

    রূপঙ্কর সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১১ জুন ২০১২ | ৭৩৮ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০

    নান্তুদা


    সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়, শুধু মানুষের পরিচিতি ছাড়া। আমি একজন হ্যান্ডসাম তরতাজা তাগড়া যুবককে চিনতাম, তার নাম ছিল তিমির। এখনও তিমিরকে মাঝে মাঝে গড়িয়াহাটে দেখি, লোলচর্ম, পলিতকেশ, কুব্জদেহ। হাতে একটা লাঠি আর মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে অনেক কষ্টে ভিড়ের মধ্যে শরীরটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তিমির আমারই বয়সী কিন্তু বার্ধক্যের মজাই হল, সে সবদেহ কে শবদেহ একসঙ্গে বানায়না। সন্দেহ হওয়াতে একদিন তার সামনে রাস্তা আটকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, তুই কি – মানে, আপনি কি ‘তিমির’? একরাশ বিরক্তি ভরা মুখে সামান্য বাঁকা হাসি মাখিয়ে সে বলল, আমি যে তিমিরে, সে তিমিরেই ।



    আবার দেখা হলে, আমি তিমিরকে এড়িয়ে যাব। ওই থুত্থুরে বুড়োকে আমি কিছুতেই তিমির বলে ডাকতে পারবনা। এই ভদ্রলোকের নামও ‘নান্তুদা’ নয়, আমি বদলে দিয়েছি। তাঁর ভাল নাম, তিমির দত্তগুপ্ত। এই নামটাও বদলে দেওয়া, অবশ্য সম্পূর্ণ অন্য কারণে।


    যতদূর মনে পড়ে, সালটা উনিশশো পঁচাত্তর। আমার তখন অকাল্ট সায়েন্স শেখার খুব ঝোঁক। বাজারে বেনহ্যাম বা রামনের বই পেলেই কিনি, জ্যোতিষি বা তান্ত্রিক দেখলেই তাঁর পেছনে দৌড়ই, যদি কিছু শেখা যায়। আমার পরিচিত একটি মেয়ে এসে বলল সে একজন ভদ্রলোকের সাক্ষাত পেয়েছে, যিনি, হাত নয়, একজনের মুখ দেখেই তার ভূত ভবিষ্যত সব বলে দিতে পারেন।


    সেদিন থেকেই মন উচাটন, কবে তাঁর দেখা পাব, কী করেই বা পাব? এও শোনা গেল, যে তিনি ডাকলেই বাড়িতে চলে আসেন এবং পয়সাকড়ি কিছুই নেন না। কিন্তু তাঁকে ডাকবে কে, কী করেই বা ডাকবে? আমি একটা কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি(এখনও) – এভরি মুশকিল হ্যাজ সাম আসান। শুধু মনে প্রাণে চাইতে হবে। অচিরেই সুযোগ জুটে গেল, এক আত্মীয়ার বাড়িতে প্রভুর আগমণ ঘটবে, এমন সংবাদ পাওয়া গেল।


    আমি যখন সেখানে পৌঁছলাম, তখন আসর অলরেডি জমে উঠেছে। বসার ঘরে ঢুকেই দেখি, সোফার ঠিক মাঝখানে তিনি বিরাজ করছেন, দুপাশে, সামনে এবং কিছু দূরে চেনা অচেনা অনেক মানুষ, এবং আশানুরূপ ভাবেই মহিলা ও পুরুষদের সংখ্যা বিচ্ছিরি রকমের অসমানুপাতিক।


    দরজার ফ্রেমে আমার চেহারাটা প্রকাশ হতেই গৃহকর্ত্রী বললেন, এই যে, আমার ভাই হয়, এর কথাই বলছিলাম আপনাকে। ওকে একটু দেখুন তো। অ্যাই জানিস, উনি যাকে যা বলছেন সব হুবহু ঠিক হচ্ছে। আমি খুব আস্তে বললাম, বৃক্ষ, তুমহারা নাম কেয়া হ্যায়? ভদ্রলোকের কান খুব শার্প, এত আস্তে বলা কথাও শুনে ফেলেছেন, বললেন, হ্যাঁ, ফলেন-ই পরিচিয়তে হোগা।


    আমি যেমন দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তেমনি থাকলাম, কেননা ঘরের সোফা, চেয়ার, টুল, মোড়া, মায় সেন্টার টেবিলটা পর্যন্ত বসে, আর ঘরের সব কোনা আর দেয়াল দাঁড়ানো অবস্থায় অকুপায়েড। পষ্ট দেখলাম ভদ্রলোক আমাকে আপাদমস্তক জরিপ করছেন।


    ওদিকে আমিও উল্টো জরিপ শুরু করেছি। সেই কৈশোর থেকেই আমার মানুষ দেখা অভ্যেস। ওঁর মত ভূত ভবিষ্যৎ হয়ত বলতে পারিনা, তবে কাউকে বেশ কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে দেখলে, তার সম্পর্কে অনেক কিছুই আন্দাজ পাওয়া যায় এ আমি জানি।


    আমি দেখলাম, ভদ্রলোক এযুগের মানুষ না। ওঁর পরনে অনেককাল আগের হারিয়ে যাওয়া গা চ্যাপটানো ভীষণ সরু প্যান্টস(বাংলায় অবশ্য ‘প্যান্ট’-ই বলে)। সে সময় বেল-বটম উঠে গিয়ে ‘প্যারালেল’ চলছে। এই প্যান্টস গুলো অনেক কাল আগের স্টাইল, তখন ওগুলোকে ‘চোস্ত’ থেকে সরলীকরণ হয়ে ‘চুস্ত’ থেকে ‘চুসপ্যান্ট’ নামে ডাকা হত। বন্ধুদের মধ্যে যারা এই বস্ত্র পরত, তাদের পরা এবং খোলার সময় ভাই-বোনেদের সাহায্য নিতে হত।


    এবার জামা। ওঁর গায়ে একটা স্ট্রাইপড শার্ট। তাতে কোনও অসুবিধে নেই, কিন্তু জামা পরার ধরণটা অনেক পুরনো। সে সময়ে লোকে প্রচুর হলিউডি ছবি দেখত, এনপ্ল্যানেড অঞ্চলটাকে ‘সাহেবপাড়া’ বলা হত, জায়গাটা ছিল অ্যাংলো ইন্ডিয়ানে ভর্তি। সরকারি অপদার্থতার কারনে এরা দেশত্যাগ করে। আহা সে সময়ের ঝকঝকে তকতকে সাহেবপাড়ার কথা ভাবলে এখনও মনের মধ্যে মোচড় দেয়। সেই অ্যাংলোদের আইডল ছিলেন অভিনেতা জেমস ডীন। তিনি ধরাধামে খুব বেশীদিন না থাকলেও একটা ফ্যাশন ট্রেন্ড তাঁর পোষাক থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল, চুলে অ্যালবার্ট ( যেটা রকের ভাষায় ‘আলবেট’ হয়েছিল) আর ফুলহাতা জামার হাতটা খুব সরু করে গোটাতে গোটাতে বাইসেপস ছাড়িয়ে আরো একটু ঊঁচুতে। ( তখন ম্যাড্রাসি-রাও, মানে,তামিল,তেলুগু, মলয়ালম, সবাই, সরু করে হাত গোটাত, কিন্তু অত উঁচুতে তুলতনা)।


    ভদ্রলোকের জামা জেমস ডীনের মত, চুলে অ্যালবার্ট, এবং আরও একটা জিনিস, উনি সরু কব্জিতে এইয়া চওড়া একটা ঘড়ির ব্যান্ড পরেছেন, তাও আবার ডান হাতে, যেটা বছর বারো আগে কলকাতার ‘কাপ্তেন’রা পরত। সে সময়ে ওই ব্যান্ড কোনও দোকানে দেখেছি বলে মনে পড়ছিলনা। মোদ্দা কথা যা বুঝলাম, ভদ্রলোকের জীবন থেকে দশ-বারো বছর একেবারে গায়েব।


    ভদ্রলোক আমার চোখে চোখ রেখে বললেন, ভেরী ইন্টারেস্টিং ক্যারাকটার। আমি বললাম, আমার চেনা অচেনা সব লোকই আমার সম্বন্ধে এই কথাটা বলে, তাদের অধিকাংশই কিন্তু জ্যোতিষ মোতিষ জানেনা। উনি একটা ক্ষমাসুন্দর হাসি দিলেন। তারপর কথোপকথনটা এই রকম হল, -


    - আপনি বাড়ির বড় ছেলে।


    - আমি বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান।


    -আপনি যে চাকরীটা করছেন, সেটি আপনার দ্বিতীয় চাকরী।


    - এটাই আমার প্রথম, এবং সম্ভবতঃ শেষ।


    - আপনি কিছুদিন ব্যবসাও করেছেন।


    - জম্মে করিনি।



    ঘরের মধ্যে একটা গুঞ্জন উঠল, কি ব্যাপার বলতো? সবার কথা বেদবাক্যের মত ফলে গেল, এর বেলা দেখি কিছুই মেলেনা। আমি বললাম, বৃক্ষ, তুমহারা নাম যো ভি হো, মগর ফল বহোৎ কড়োয়া হ্যায়। উনি দেখলাম হিন্দী বা উর্দু প্রবচনও জানেন, বললেন, সবর কা ফল মিঠা হোতা হ্যায়। গৃহকর্ত্রী খুব উত্তেজিত, বললেন, সবারই তো সব ঠিকঠাক মিলছে। একটা দুটো মেলেনি বলে অত হৈচৈ করার কিছু হয়নি।


    তা অবশ্য ঠিক। চক্ষুকর্ণের সামনেই অপরের উদ্দেশে বলা কথাগুলো পটাপট মিলে যেতে দেখলাম। নিশ্চয়ই আমার বেলা কিছু গোলমাল হয়েছে ( হয়েছে কী ভাবে তা আমি বিলক্ষণ জানতাম, পরে হবে সে সব কথা)। শুনতে শুনতে আর দেখতে দেখতে আমি মন্ত্রমুগ্ধ, মানে যাকে বাংলায় বলে মেসমেরাইজড হয়ে গেলাম। ভদ্রলোকের পেছনে ছায়া হয়ে গেলাম, দাদা, আমি এ বিদ্যে না শিখে আপনাকে ছাড়ছিনা। ভদ্রলোকের চোখ দুটো আস্বাভাবিক রকমের বড় এবং উজ্জ্বল আর ওঁর নাকের তলায় এক জোড়া ‘তলোয়ার’ গোঁফ। হ্যাঁ, ভাল কথা, এই গোঁফের স্টাইলও অনেক পুরোন। এর মেইন্টেন্যান্সে প্রচুর ব্যাটারি খরচা হ্ত। এখন তো প্রশ্নই নেই, আমি যখনকার কথা বলছি, তখনও অত সময় কারো ছিলনা। উনি হাসলে ওপরের ঠোঁটের সঙ্গে এই তলোয়ার গোঁফ সমান্তরাল হয়ে যেত, এ বিদ্যাও অনেক কষ্ট করে আয়ত্ব করতে হত। এ হাসি সে সময়ে বড়ই রমণীরঞ্জন, আমি বহু চেষ্টা করেও শিখতে পারিনি। প্রাচীন অভিনেতা শেতল বটব্যাল ( যাঁকে লোকে প্রদীপ কুমার নামে চিনত) খানিক পারতেন, তবে নান্তুদার কাছে শিশু। সেই মায়াবী হাসির ঝিলিক দিয়ে তিনি বললেন, আচ্ছা, হবে হবে, একদিন বাড়িতে এস। বুকে আশার সঞ্চার হল, যাক বাবা, আপনি থেকে ‘তুমি’তে নেমেছে।


    তিমির দত্তগুপ্তর বাড়িটা ছিল দক্ষিণ কোলকাতার এক প্রাচীন পাড়ায়, এক ডাকে ছেলে বুড়ো সবাই চেনে, এমন এক কৌতুকাভিনেতার বাড়ির উল্টোদিকে। কবে যাব দাদা ? এস না, রোববার টোববার ছুটির দিন দেখে এস। ছুটির দিনে আসতে বলছেন কেন? আমি চাকরি করি বলে? আরে না না, আমিও করি, একটা সরকার অধিকৃত কোম্পানীতে। পেট চালাতে হবে তো, এসব বিদ্যে প্রয়োগ করে কোনও পয়সা নিইনা জান নিশ্চয়ই।


    নান্তুদা বললেন, বাড়িটা চিনতে কোনও অসুবিধে হবেনা। বিখ্যাত লোকের বাড়ির উল্টোদিকে, যে কোনও লোককে বললে দেখিয়ে দেবে। আমি বললাম, আমি ওপাড়া বিলক্ষণ চিনি, তা ছাড়া উনি পাকাপাকি ভাবে সিনেমায় আসার আগে বাবার কোলীগ ছিলেন, ওঁর বাড়িও চিনি। সবচেয়ে বড় কথা, সেজপিসির বাড়ি যেতে দুমাইল না ঘুরে, আমিতো ঐ রাস্তা দিয়েই শর্টকাট মারি। একটু গ্যাসও দেয়া দরকার, বললাম, কদিন বাদেই তো দুজন বিখ্যাত লোকের বাড়ি মুখমুখি হবে। নান্তুদা গোঁফজোড়া ঠোঁটের সঙ্গে প্যারালেল করলেন, এ হাসির মানে হল, আমি গ্যাস খাইনা ভাই!


    শনিবার রাতে ভাল করে ঘুমই হলনা। কাল যাব, কাল যাবোওওও...। ওরে সূয্যি, তাড়াতাড়ি ওঠনা বাবা। একটু আগে ভাগেই পৌঁছে গেলাম। বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারা ওঁর নাম করতে খুবই নিরুৎসাহ মনে হল। তাজ্জব ব্যাপার তো, বাড়ির মধ্যে এত বড় মহাপুরুষ, অথচ কারো হেলদোল নেই! একতলার বাসিন্দা এক সত্যিকারের বয়স্কা মহিলা আর এক অল্পবয়সে বুড়িয়ে যাওয়া যুবতী বাড়ির সামনে রকবিহার করছিলেন, শেষে তাঁদের জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, তিমির দত্তগুপ্ত, যিনি সাংঘাতিক ভবিষ্যৎ- তাঁরা আমার দিকে না তাকিয়েই মুখ ভেটকে জবাব দিলেন দোতলায় গিয়ে বাঁদিকের দরজা ঠেলুন। বলেই আবার নিজেদের আলোচনায়। কী সব লোক রে বাবা এপাড়ায়।


    দোতলার দরজাটার মাথার ওপরে এক বিশাল ছবি। ভারতে যে সব বিখ্যাত গডম্যান এখনও জীবিত, তাঁদের একজন। বিরাট বড় মালাও ঝুলছে ছবিতে। দরজায় কড়া নাড়তে গিয়ে ডান দিকের ঘরের ভেতরে চোখ গেল। সেখানে একজন বৃদ্ধা, যাঁর বয়স ষাট, সত্তর, আশি, যা কিছু হতে পারে, অফ অল প্লেসেস, জানলার তাকের ওপর উবু হয়ে বসে আছেন। তাঁর উর্ধাঙ্গে কিছু নেই, কোমরে একখানা গামছা কোনও মতে জড়ানো, ন্যাড়া মাথায় সদ্য গজানো কাঁচাপাকা চুল। তখনকার পুরোন পাড়ার পুরোন বাড়িগুলোর দেয়াল অনেক চওড়া হত, জানলার তাকও বিস্তর চওড়া। কিন্তু ঘর তো আসবাবে ভর্তি, তবু উনি তাকে কেন বোধগম্য হলনা, বৃদ্ধা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে।


    বাঁ দিকের দরজা খটখট করতেই খুলে গেল। যেন দরজা খোলার জন্য কেউ তৈরীই ছিল। এস এস, জুতোটা একটু খুলে – গেরস্ত বাড়িতে লোকে জুতো খুলেই ঢোকে, তবু এ কথার উল্লেখের কারণ বোঝা গেল ঘরে ঢুকেই। প্রায় ফাঁকা এক বিশাল ঘর। তার একদিকের দেয়াল জুড়ে এক নীচু তক্তপোষের মত লম্বা কাঠের প্ল্যাটফরম। তাতে তেত্রিশ কোটি না হলেও প্রায় কাছাকাছি সংখ্যার নানা সাইজের দেবদেবী। তাদের মধ্যমণি এক পেল্লায় শিবলিঙ্গ, তক্তাটার সামনের দিকে গুচ্ছের অপরাজিতা ফুল লাইন দিয়ে সাজান। নান্তুদা বললেন, আমার আবার একশ আটটা অপরাজিতা ছাড়া পুজোই হয়না। বললাম, আপনার খাওয়া শোয়া? উনি আবার গোঁফটা প্যারালেল করতে গিয়েও ঠিকমত পারলেননা, আমার আবার খাওয়া। শোয়ার সময় ঘরের কোণে একটা শতরঞ্জি বালিশ থাকলেই হল।


    খাওয়ার প্রতি ওঁর নিজের খুব একটা আগ্রহ না থাকলেও আমার জন্য সিঙ্গাড়া সন্দেশ চলে এল, চা-ও এল। আমি, আবার এসব কেন? বলতে বলতে ভাবি, আসল কথায় এসনা দাদা, শেখাবে কখন ? নান্তুদা বললেন, এক কথায় তো এসব জিনিষ শেখা যায়না ভাই, ধৈর্য লাগবে। তুমি বরঞ্চ এখন থেকে অফিস ফেরত আমার সঙ্গে যাবে, আমি যেখানে যেখানে ইন্টারভিউ করতে যাব, তুমি পাশে বসে দেখবে। ধীরে ধীরে নিজেই শিখে যাবে। এ বাড়ির অন্য সদস্যদের আচরণের কথা তুলতেই নান্তুদার ঠোঁটে আঙ্গুল – চুপ চুপ, এ পাড়ার লোক ঘুণাক্ষরেও যেন না জানে এসব। ভিড়ের ঠেলায় বাড়িতে টিকতে পারবনা। বেরোবার সময়ও জানলার তাকে সেই বৃদ্ধা উবু হয়ে বসে। সেদিকে জিজ্ঞাসু চোখ ফেলতেও দিলেননা তিমিরবাবু, আমার মা। -কিন্তু জানলায়? -ওই মানে অসুস্থ তো, তাই। প্রণাম করতে এগোতেই তাকবাসিনী প্রানপনে হাত নেড়ে বারণ করলেন। নান্তুদা বললেন, মায়ের আশীর্বাদই সব। রোজ সকালে বাড়ি থেকে বেরোবার আগে একটা বাটিতে জল নিয়ে মায়ের কাছে যাই। মা পায়ের আঙ্গুল ডুবিয়ে দিলে পাদোদক খেয়ে তবে বেরোই। ভাবলাম, সত্য সেলুকাস-


    শুরু হল সান্ধ্যভ্রমণ। কিচ্ছু জানিনা, কিন্তু নান্তুদা কখনও ‘ভাই’, কখনও ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বলে চালাতে লাগলেন। অফিস ফেরৎ ভুখা পেটে দিব্যি কাটলেট, ওমলেট, ফ্রেঞ্চটোস্ট, পান্তুয়া, চমচম ঢুকতে লাগল রেগুলার। নান্তুদা মাঝে মাঝেই, আমি যেন কত পন্ডিত এমন ভাব করে সমর্থন চাইতে লাগলেন, আচ্ছা, এঁর ছোট ভাইয়ের ডায়াগনোসিসটা ডাক্তার একেবারেই ভুল করেছিল, কী বল? কিংবা, এঁর শ্বশুরমশাই তিনতলাটা শেষ করার আগেই আনফরচুনেটলি – বাড়ির বৌদিরা সমস্বরে, কি আশচোরযোওও, যেমন দাদা তেমনি ভা‌ই। আর একখানা চমচম দিই ভাই? বলতে লাগলেন। আমি কনফিডেন্ট ছিলাম, আমার গুষ্টিতে কারো সুগার নেই, তাই একবাড়ি সেরে পরের বাড়িতেও চমচমে একদম আপত্তি করতামনা।


    শিখলাম তো ঘন্টা, সে কথা তুললেই নান্তুদার গোঁফ সমান্তরাল। তবে কয়েকটা জিনিষ আমার মানুষ দেখা চোখকে ফাঁকি দিতে পারলনা। এক, - উনি পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের ‘ইন্টারভিউ’ নিতে বেশি আগ্রহী( সে অবশ্য অ্যামেচার যে কোনও জ্যোতিষীই), দুই, - উনি ভবিষ্যতের কথা খুব একটা বলেননা, খুব চাপাচাপি করলে ভাসাভাসা এমন কিছু বলেন যার বহু রকম মানে হয় (তবে কিসের জ্যোতিষী?) তিন, - উনি বর্তমানের ঘটনাবলীর এমন নিখুঁত ডিটেলস বলে দেন, (কীভাবে কে জানে) লোকে তাতেই বোল্ড, চার, - উনি যে পয়সাকড়ি নেন না, টাকা পয়সার প্রতি একদম আকর্ষণ নেই, এক মাড়োয়ারি ওঁকে দেবেন বলে লাখ দেড়েক টাকা এনে টেবিলে রেখেছিলেন, উনি বাঁ হাত দিয়ে সে সব সরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন যদি একান্তই দিতে ইচ্ছা হয়, তো এক প্যাকেট ‘রথম্যান্স’ আনিয়ে দিন-এই উপাখ্যান নিয়ম করে সব বাড়িতেই বলেন। আমার প্রতিটা অক্ষর মুখস্থ হয়ে গেছিল।


    নান্তুদার ক্লায়েন্টদের বর্তমানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনের খানিকটা এইরকম, আমার এক বন্ধু, যে এখন আর ইহলোকে নেই, একদম জ্যোতিষ ফোতিষ বিশ্বাস করতনা। নান্তুদা বারবার বললেন তাকে নিয়ে আসতে, সে কিছুতেই আসবেনা। তখন উনি বললেন ওর একটা পাসপোর্ট সাইজ ছবি নিয়ে এস, আনলাম। তা দেখে উনি বললেন, এক,- ওরা অনেক ভাইবোন, ও হচ্ছে বাবা-মা’র ষষ্ঠ সন্তান। দুই,- ও জ্যোতিষ মানুক না মানুক, আমার কাছে আসবেই। ছবি দেখে সিক্সথ ইসু বলেছেন শুনে বন্ধু তো হাঁ। পরের দিনই চলে এল। নান্তুদা এটা ওটা বলে তারপর বললেন আপনাকে কেউ খুব সম্প্রতি একটা কালো রঙের প্যান্টের কাপড় দিয়েছে, আপনি ওটা একদম ব্যবহার করবেননা, ক্ষতি হবে। বন্ধুবর এমনিতেই স্কেপটিক, এই শুনে ক্ষেপে গেল।


    - আমাকে কেউ কালো কেন, সাদা, সবুজ, বেগুনী, কোনও প্যান্টের কাপড় দেয়নি।


    - আলবাৎ দিয়েছে।


    - আরে আমাকে কেউ প্যান্টের কাপড় দিল কিনা আপনি আমার থেকে ভাল জানবেন?


    - নিশ্চয়ই জানব। এই জন্যই লোকে আমার কাছে আসে।


    - আমি বলছি দেয়নি, একদম বাজে কথা।


    - যদি না দিয়ে থাকে (টেবিলে চাপড়) কাল থেকে আমি এই বিদ্যে জম্মের মত ছেড়ে দেব।


    - তাই দিন তাহলে, ছ’নম্বর সন্তানটা ফ্লুক বলেই ধরে নিচ্ছি।


    - কি মুশকিল, আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, কেউ আপনাকে কোমরের নীচে পরার মত কালো কিছু একটা দিচ্ছে, কালো পাজামা হয়না, ধুতি হয়না,( এখন সবই হয়, তখন কেউ ভাবতেও পারতনা) প্যান্টের কাপড় ছাড়া কী হতে পারে ?


    বন্ধুটি ধপাস করে বসে পড়ল,-মাই গড! (ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয়, ওটা কথার কথা) আমাকে তো বড়দা আস্ত একটা কালো প্যান্ট দিয়েছে কদিন আগে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, পুরোন দিনের কথা বলতে গেলে অনেক ব্যাখ্যা দিতে হয়, যেমন, তখনকার দিনে রেডিমেড প্যান্ট কেউ চোখে দেখেনি এদেশে। এখন যে দর্জিরা মাছি তাড়ায়, তখন তাদের দোকানে ভিড়ে ঢোকা যেতনা, সব প্যান্টস-ই মেড টু অর্ডার। ওদিকে দক্ষিণ পূর্ব এসিয়ার পুঁচকে দেশগুলো কিন্ত তখন অনেক এগিয়ে, টিভি, মোবাইল ফোন অনেক আগে ঢুকেছে ঐ সব দেশে, রেডিমেড জামা কাপড়ও। বড়দা সেই রকমই এক দেশে থাকতেন, পুজোয় কোলকাতা এসেছিলেন।


    নান্তুদার সমান্তরাল গোঁফ আর ঠোঁটের যুগলবন্দি অনেক্ষণ দৃশ্যমান।ঘরে পিনড্রপ সাইলেন্স। আমার আর যে বন্ধুরা ব্যাপারটা দেখছিল, তাদের হাঁ বন্ধ করতে ডাক্তার লাগবে।


    আর এক দিন। আমার সেই দিদির বাড়ি তিমিরবাবু এসেছেন, তাঁকে দেখাতে আসবেন আমার আরেক বন্ধুর দিদি, এই দিদি দুজন আবার একে অপরের বন্ধু। ধরা যাক বন্ধুর দিদির নাম ‘ইরা’, তিনি আসতে দেরী করছেন, আমরা উশখুস। নান্তুদা অভয় দেন,-উনি এক্ষুনি আসবেন, বাড়ি থেকে বেরিয়েই পড়েছেন। আসলে শাড়ি পছন্দ হচ্ছিলনা কিছুতেই। দিদি চোখ গোলগোল করে বলল, এসবও আপনি দেখতে পান? প্যারালেল গোঁফের মানুষটা বললেন, প্রথমে একটা সিন্থেটিক হলদে সবুজ পোলকা ডট বের করেছিলেন, সেটা প্রায় পরেও ফেলেছিলেন। মন খুঁতখুঁত করায় সেটা তুলে একটা নীল সাদা মুর্শিদাবাদ সিল্ক পরে আসছেন উনি।


    আমরা মুখ হাঁ করিনি, এতদিনে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। ইরাদি এল নীল সাদা মুর্শিদাবাদ পরে। দিদি বলল, হ্যাঁরে, তুই কি আসার আগে একটা হলদে সবুজ পোলকা ডট – ইরাদি চেঁচিয়ে উঠল, সেকিইইইই-তুই কি করে – আমি বললাম, হলদে সবুজ ওরাং ওটাং, ইঁট পাটকেল চিতপটাং।


    আমার হিসেবপত্র সব ঘেঁটে যেতে লাগল। সরু প্যান্টস, অ্যালবার্ট, মায়ের পা ধোয়া জল, তলোয়ার গোঁফ, ঘরের কোনায় শতরঞ্জি, জেমস ডীন, অপরাজিতা, রথম্যানস, শিবলিঙ্গ-নাঃ শালা পাগল হয়ে যাব, কোনও হিসেবই তো মেলেনা। তবে হ্যাঁ, আগে যে গোটা চারেক পয়েন্ট উল্লেখ করলাম, তার সঙ্গে আরেকটা। উনি ‘ডাকলেই’ যে সব বাড়ি যেতেন, সেখানে গিয়েই নতুন ক্লায়েন্টের বায়না করে আসতেন। যেমন, আচ্ছা বৌদি, আপনার এক বোন আছেন না, যাঁর কপালে একটা কাটা দাগ, আর সামনের দাঁতটা একটু উঁচু? কোলকাতার উত্তর দিকে থাকেন – ও ম্মা, দেখেছোওও, কী আশচোরযো – হ্যাঁ তাঁকে একটু দেখতে হবে, সামনে একটু ফাঁড়া –ওমা তাই নাকি? ওকে বলবো তো, কালই চলুন না - সেসব জায়গায় অবশ্য উনি আমাকে সঙ্গে যেতে বলতেননা, আমার গতিবিধি বাড়ির দু কিমি রেডিয়াসে, তাও অফিসের পর সময় পেলে।


    এর মধ্যে আর এক কান্ড। আর এক তিমির, তিমির চক্রবর্তী ( গড়িয়াহাটের বুড়োটা, মিস্টার দত্তগুপ্ত এবং চক্রবর্তী, সকলের একই নাম। একজনকে তিমির করা হয়েছে বলে, সবাই তাই)। এই তিমির খুবই সরল ছেলে। আমরা কথায় কথায় যাকে তাকে সরল বলি, সরল জিনিষটা কী, তা বুঝতে হলে তিমির চক্কোত্তিকে দেখা দরকার। কেউ যদি আদালতে এফিডেভিট ক’রে, একগলা গঙ্গাজলে তামা তুলসি হাতে নিয়ে বলে, তিমির চক্কোত্তি একটা মিথ্যে কথা বলেছে, আমি বিশ্বাস করবনা।


    তিমির আমাদের অফিসেরই কর্মী। ওরা পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ তখনও হয়নি) বরিশালের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকত, দাঙ্গায় পালিয়ে এসে উঠেছিল নান্তুদাদের এলাকাতেই এক বহু ভাড়াটেওয়ালা ব্যারাক টাইপের বাড়িতে। সে বাড়ি ভেঙ্গে এখন বহুতল। ওরা পাকিস্তানের যে অঞ্চলে থাকত, সেখানে ইলেক্ট্রিসিটি পৌঁছয়নি, কলকাতায় এসে সকালবেলা রেডিয়োয় খবর শুনে বেজায় ভয় পেয়েছিল তিমির। ওইটুকু একটা বাক্সের মধ্যে একটা লোক ঢুকে কথা বলছে কি করে?


    তিমির একবার আমাকে হাত দেখাতে এসেছিল। আমি দেখে ঘাবড়ে গেলাম, কী ব্যাপার বলত? এখানে দেখছি ছেলেবেলায় তোর পঠনপাঠনে খুব নাম, উন্নতি, কিন্তু আবার দেখছি পরীক্ষায় ফেল করার চিহ্ন, ব্যাপারটা কিরে ? তিমির হেসে বলল, ঠিকই দেখেছেন। আমি ওখানে ইস্কুলে পড়ার সময় ফেল করেছিলাম, কিন্তু ফার্স্ট প্রাইজও পেয়েছি, ঘরে এখনও তোলা আছে। আসলে সেবার সবাই ফেল করেছিল, তাদের মধ্যে আমিই হাইয়েস্ট।


    একদিন নান্তুদা আমাদের অফিসে এসেছেন, একটা দোলন চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়েছে। চারদিকে খুব ভিড়, কাস্টমার সার্ভিস ভোগে, দু একজন কোনওমতে কাউন্টার সামলাচ্ছে। আমাদের ব্যাঙ্কের ডাক্তারবাবু, ডাঃ চ্যাটার্জী, যিনি শুধু ডাক্তার নন, নামকরা সাইকায়াট্রিস্টও বটে, সেই যে হাঁ করেছেন, কত মশা ঢুকে আবার নিরাশ হয়ে বেরিয়ে গেছে। নান্তুদা তাঁকে বলেছেন, আপনার শ্বশুরবাড়িতে দোতলায় একটা বড় জানলার পাল্লা, কব্জা ভেঙ্গে বাইরে ঝুলছে দেখেছেন তো? রাস্তায় কারো মাথায় ভেঙ্গে পড়লে তো পুলিশে ধরবে। তারপর ওঁদের শিবলিঙ্গের পিনাকটা উত্তরে মুখ কেন? দক্ষিণে থাকার কথা না? ডাক্তারবাবু হাঁ মুখ বন্ধ হবার পর সমানে বিড় বিড় করে চলেছেন, কি করে বলে, কি করে বলে, কি করে বলে, কি করে –


    মুখার্জী সাহেবের সাইকেল চুরি গেছে, উনি প্রতিকারের আশায় এসেছেন ( তখন ব্যাঙ্কের সাহেব সুবোরাও সাইকেল চড়ত, এখন কেরাণীরাও স্যান্ট্রো চড়ে, দেশ এগিয়ে গেছে অনেকটাই ) আমি জানতাম নান্তুদা চুপকি মারবেন, ওঁর ক্যাদ্দানি সব বর্তমান নিয়ে। বললেন, চোর পশ্চিম দিকে গেছে। এটা আমিও বলতে পারতাম, চোর তো আর সাইকেল নিয়ে কদম তলায় দাঁড়িয়ে নেই। মুখার্জী সাহেব তোতলা, বললেন কি-কিন্তু পু-পু-পু-উলিশের ডায়রিতে কি পো-পো-পোশচিম- এমন সময় তিমির ঢুকল ঘরে।


    ও দোতলায় বসে। নান্তুদা যতবার এসেছেন, একবারও সামনাসামনি দেখা হয়নি, না হবারই কথা। এবার কিছু না জেনেই একতলায় এসেছে। এসেছে আবার পেছনের সিঁড়ি দিয়ে। নান্তুদার দোলন চেয়ারের পিঠে সামান্য চাপ দিয়ে তিমির বলল, কি ব্যাপার, ভাল আছেন? এখানে হঠাৎ?


    নান্তুদা ঘাড় ঘুরিয়ে তিমিরকে দেখলেন। প্যারালেল গোঁফ আর ঠোঁটের মাঝে হাসিটা ধরে রাখা উনি অনেক কষ্ট করে রপ্ত করেছেন, ওটা রইল, কিন্তু চোখে ভূত দেখার আতঙ্ক। এটা আমি ছাড়া সম্ভবতঃ কেউ খেয়াল করেনি। ডান হাত ঘুরিয়ে ব্রডব্যান্ডের ঘড়ি দেখে উনি বললেন ইসসস- একটু দমদম যাওয়ার ছিল একদম মনে নেই। আমি আসছি রূপঙ্কর – সবাই বলল, আরে এই তো এলেন, বসুন, চা আসছে,- মুখার্জী সাহেব বললেন, আচ্ছা, থা-থানায় গিয়ে কি পো-পোশচি- নান্তুদা ছিটকে বেরিয়ে গেলেন।


    সকলের চোখ এড়িয়ে তিমিরের কাছে গেলাম। এ সব ব্যাপার হাটের মাঝে আলোচনা করতে নেই।


    - হ্যাঁরে, তুই এঁকে চিনলি কি করে ?


    - আপনি ক’দিন চেনেন ?


    - তুইও কি দেখাস টেখাস ?


    - কী দেখাব ?


    - কেন উনি তো বিরাট জ্যোতিষী, মানে সাধক আর কি, কেন, তুই জানিস না?


    - আপনি যে কী বলছেন, আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।


    - কেন? ওঁর বাড়িতে গেলেই দেখতে পাবি, বিশাল শিবলিঙ্গ, রোজ একশ আট অপরাজিতায় পূজো হয়। উনি তো সকাল থেকে উপোস করে পূজো টুজো সেরে মায়ের পা ধোয়া জল খেয়ে তবে বাড়ি থেকে অফিসে বেরোন। চোদ্দ বছর বয়স থেকে কঠিন সাধনা করে-


    - শুনুন, আপনি ক’বার সে বাড়িতে গেছেন? বড়জোর দু তিন বার। আমি তো রোজ ও বাড়িতে যেতাম। কোনও দিন লিঙ্গ ফিঙ্গ দেখিনি। আর সাধনা? ও তো চিরকাল মাস্তানি করত, পেটো বাঁধত। রোজগারের টাকা দু হাতে ওড়াত, বাপ মা কে খেতে দিতনা। ওর বাবা শেষে কিছু উপায় না দেখে, ফুটপাথে শেকড় বাকড় বেচতেন। আমার কাছে কত কান্নাকাটি করেছেন। মায়ের পা ধোয়া জল? অসুস্থ বুড়ির চিকিৎসাটাও হয়না।


    - বৃদ্ধা জানলার তাকে থাকেন কেন?


    - কি করবে, পেচ্ছাপের কন্ট্রোল নেই, ঘরদোর নোংরা করে ফেলে যদি?


    - তা তুই ও বাড়িতে যেতিস কেন?


    - পুত্রের গুণপনার বহর দেখে ওর বাবা এক পালিত পুত্র নিয়েছিলেন, তার প্রাইভেট টিউটর ছিলাম আমি। এই চাকরীতে জয়েন করার পর বছর দুয়েক হল ছেড়েছি। বাবা মারা যাবার পর মনে হয় সে বেচারাও ঘাড়ধাক্কা খেয়েছে।


    - ওরে ব্বাবা এই সব ব্যাপার?


    - আরও ব্যাপার আছে, ওর তো বিয়েও দেয়া হয়েছিল। বৌদিটা খুব ভাল ছিল জানেন? আমার এখনও তাঁর কথা ভাবলে কষ্ট হয়।


    - কী হল তাঁর?


    - কী আবার হবে, বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা দিলে যা হয়, মালা ছিঁড়ে সব মুক্তো ছিটকে পড়ে।


    ধাঁ করে চলে গেলাম দিদির বাড়ি। ওরে, সব্বোনাশ হয়েছে। এই সব বৃত্তান্ত। সব শুনে দিদি বলল, যাঃ হতেই পারেনা। চিলে কান নিয়ে গেছে কেউ বলল, আর ওমনি তুই – আমি বললাম, ওরে শোন, যে বলেছে, সে মিথ্যে কথা বলেনা তা নয়, জিভে লাই ডিটেক্টর নিয়ে জন্মেছে, বলতে পারেনা। কুরুক্ষেত্রে থাকলে কেষ্ট মেষ্ট যাই বলুক, অশ্বত্থামা বিন্দাস জীবিতঃ বলে দিত। মাঝখানের শব্দটা সংস্কৃত কিনা তাই নিয়ে স্লাইট ডাউট থাকলেও ওই সব বালখিল্যদের হাতে দ্রোণবুড়ো মরত না নিশ্চয়ই। বেদব্যাস বেচারাকে দুবার করে খাটতে হত।


    দিদি বলল, এখন কী হবে? শোন, আর কাউকে রেফারেন্স দিবিনা। কেউ পরিচয় করিয়ে দিতে বললেও ধানাই পানাই গেয়ে এড়িয়ে যাবি। আমি মনে মনে বললাম, রেফারেন্স দেয়ার আর বাকি কিছু আছে? একের থেকে আর এক, এতো দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে।


    ছড়িয়ে যে পড়েছে তা তো হাড়ে হাড়ে টের পেলাম দিদির বাড়ি থেকে বেরিয়েই। ভোম্বলের সঙ্গে দেখা রাস্তায়, খুব উত্তেজিত। অ্যাই রূপেন, (রূপ শব্দের নানা ডেরিভেটিভ আমার নামে যে যেমন ইচ্ছে প্রয়োগ করে, কোনওটাতেই আমি আপত্তি করিনা) ওই বাইঞ্চোতটা হালে আইসে নিকি তগো বাসায়? হালারে একবার দ্যাখলে হয়, অর তিনোটা পাওই আমি কাইট্যা ফালামু। এই সুমধুর সম্ভাষণ কার উদ্দেশে আন্দাজ করা কঠিন নয়। ওই দমদমে ঘনঘন যাওয়ার পেছনে নাকি আ্যস্ট্রোলজিকাল ইন্টারেস্ট ছাড়াও অন্য কিছু ছিল, ওটা ভোম্বলের এক বৌদির বাড়ি। আমি ভাবলাম তিনটে পায়ের মধ্যে চলমান দুটো না কাটলেও চলবে, এমন পরামর্শ দিই, তারপর ভাবলাম, ফেসিলিটেটর হিসেবে আমার পা গুলোও, আই মীন অল থ্রী অফ দেম, খুব একটা নিরাপদ নয়, তাই সুট করে হাওয়া দিলাম।


    হাঁফাতে হাঁফাতে ঢুকলাম অসীমের গানের আসরে। এখানেও বহু বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি, সাবধান করা দরকার। ও বাবা, সেখানে গিয়ে শুনি সাংঘাতিক কান্ড। আমাদের এক বন্ধু ছিল দীপক। বেশ খানিকটা বড়ই আমাদের থেকে, সার্কলে একমাত্র বিবাহিত সদস্য। তবু তুই তোকারি চলত ওরই ইচ্ছায়। তাকে নাকি বলেছে একেবারে তাজ্জব করা সব কথা। কী কথা?- আপনাদের বাড়িটা একটা কানাগলির শেষে। এতেই দীপক বোল্ড কিন্তু নান্তুদা থামেনি। - আপনাদের বাড়ির সদর দরজা জুড়ে একটা ঠেলা গাড়ি রোজ সকালে দঁড়িয়ে থাকে। আপনারা আপত্তিও করেননা, কেননা ও বাড়ির কেউ ন’টার আগে বেরোয় না। ঠেলাটা ঠিক পোনে ন’টায় চলে যায়, বছরে তিনশো পঁয়ষট্টি দিন। দীপক নাকি পায়ে পড়ে গেছে।


    এই দীপক সম্বন্ধে আবার দুকথা বলতে হবে। বলতেই হবে, না হলে গল্প টানা যাবেনা। দীপককে একটা শাড়ি পরিয়ে দিলে পুরুষ বলে কেউ চিনতে পারবেনা। মুখে দাড়ি গোঁফের লেশ নেই, হাতেও নেই। মেয়েদের হাতে মুখে যে আলতো নরম রোমরাজি দেখা যায়, তাও নেই। শরীরের গঠন ইত্যাদিও মেয়েলি। শীতকালে চাদর জড়িয়ে আমাদের গ্রুপ ছবিতে দাঁড়ালে ইনভেরি্যেবলি আমাদের বাড়ির লোকেরা বলে, তোদের ছেলেদের সঙ্গে এই বয়স্কা মহিলা কে? হ্যাঁ মেয়েলি হলেও ওকে যুবতী নয়, কেমন যেন পিসি পিসি দেখতে।


    তবে মজা এইখানে, এতসব সত্বেও ও কিন্তু এফেমিনেট বা মেয়েলি পুরুষ নয়, পুরুষের দেহে আবদ্ধ নারী বলে আজকাল যে সব সাহিত্য সিনেমায় দেখা যাচ্ছে, ও তার কোনওটাই নয়, রীতিমত পুরুষ। সেই দীপক বেশ কয়েক বছর বিয়ে করেও বাবা হচ্ছেনা, খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা অবশ্য মাত্রা ছাড়া ইয়ার্কিতে বলতাম লেসবিয়ানদের আবার ছেলে হয় নাকি? দীপক রাগত না। তাই কিছুক্ষণ পরেই আমরা অনুতপ্ত হতাম। ওর জন্য চিন্তাও করতাম।


    নান্তুদাকে ভবিষ্যতের কথা বড় একটা কেউ বলতে শোনেনি, বললেও সেগুলো মিলিয়ে দেখার সময় আসেনি। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উনি নাকি দীপকের বাড়ি গিয়ে ওর বৌকে বলে এসেছেন, তিন মাসের মধ্যেই কনসেপশন এবং ছেলেই হবে।


    তিন মাস পর শোনা গেল দীপকবৌদির পা ভারি। দীপক রাগবেনা জেনেই আমরা তুমুল মশকরায় বললাম, ন’টা তো মাস, তার পরই জানা যাবে ছেলেটা নান্তুদার মত দেখতে হল কিনা। কিছুক্ষণ পরেই অনুতাপ এবং অপরাধ ঢাকতে আমাদের কেউ বিবাহিত না হওয়া সত্বেও কি কি সাবধানতা নিয়ে এই ক’মাস চলতে হবে, তাই নিয়ে লেকচার দেয়া শুরু করলাম। ওই গ্রুপ্টাকে আর নান্তুদা সম্বন্ধে সাবধান করা গেলনা, কেউ বিশ্বাস করতনা।


    সে সময়ে আমি আবার চুটিয়ে গ্রুপ থিয়েটার করছি, বাইরে কোথাও শো ছিল, অফিস ছুটি নিয়ে আমি আউট অফ ক্যাল। বেশ কিছুদিন পর ফিরে একদিন অসীমের বাড়ি গেলাম। অসীম বেশ গম্ভীর। নাটকের শো গুলোর কথা জিজ্ঞেসও করছেনা, কিছু যেন অস্বস্তি। কী হয়েছে রে? কিছু লুকোচ্ছিস? অসীম ভেঙ্গে পড়ল। দেখ আমাকে বার বার প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছে, তুই যেন কোনওমতেই জানতে না পারিস, কিন্তু ছেলেবেলার বন্ধু, লুকোন যায়? তুই বল- লোকটা কে?-নান্তুদা।– কি করেছে? বলছি, কিন্তু তুই প্রমিস কর অন্তত আমি বলেছি এটা বলবিনা। আমি বললাম, শালা মাগী নাকি রে? কিসের ভয় তোর? জানলেই বা কী ?


    ধমক খেয়ে অসীম বলল, কিছুদিন আগে হঠাৎ উদভ্রান্তের মত এসে বলল, অসীম, আমার খুব বিপদ, মা মারা গেছেন, কিন্তু ঘাটকাজ করার টাকা নেই আমার হাতে। শ’পাঁচেক টাকা হবে? আমি বললাম, কেন? সরকারি চাকরি করে তো। অসীম বলল, ব্যাপারটা আমিও ভেবেছি, কিন্ত এমন উস্কোখুস্কো দেখাচ্ছিল, মায়া হল, বললাম, দেখুন, আমি তো চাকরি করিনা, ম্যাক্সিমাম শ’খানেক দিতে পারি। ( সত্তরের প্রথম অর্ধে একশ কিন্তু অনেক টাকা) আমি বললাম, তারপর? অসীম বলল, টাকা নিয়ে বলল, কেউ যেন জানতে না পারে, প্রেস্টিজের ব্যাপার। আমি সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই শোধ করে দেব।


    কেউ জানতে না পারে বললেতো হয়না, ন্যাংটো বেলার বন্ধুরা কি চাপাচাপি করতে পারে? একে একে শুনলাম, সবারই খসেছে, সবচেয়ে বড় মুরগী হয়েছে দীপক। ওর ছেলে হয়েছে তো, ভালই গেছে। আমি বললাম যাক তাহলে ছেলেই হল? অসীম এক চোখ বন্ধ করে বলল, ভয় নেই ব্যাটা বাপের মতই দেখতে। আমি বললাম আর একটা পিসি ? ও বলল, নাঃ গোঁফদাড়ি বেরোবে বলে মনে হচ্ছে। তবে বিপদ অন্যখানে। ও আমাদের প্রত্যেকের কানেকশানে আলাদা আলাদা সার্কলে ঢুকেছে তো। আবার তাদের থেকে অন্যখানে। কত টাকা টোটাল তুলেছে ঈশ্বরও জানেন কিনা সন্দেহ। তবু তোকে কেন জানিনা, অন্য চোখে দেখে। সেদিন রাসবিহারীর মোড়ে দেখা, তোর কথা বলতে গিয়ে প্রায় কেঁদে ফেলছিল। বলল, কথা দাও, আর যে জানে জানুক, রূপঙ্কর যেন কিছুতেই না জানতে পারে।


    সেই রাসবিহারীর মোড়। সন্ধেবেলা কোথাও যাচ্ছি একদিন। একটা চায়ের দোকান থেকে একজন ঝাঁপিয়ে পড়ল, রূপঙ্কর- আমি চোয়াল শক্ত করলাম, কী চাই ? তুমি এখনও রেগে আছো ভাই? – কে ভাই? হাত ছাড়ুন, আমার কাজ আছে। আচ্ছা শত অপরাধেরও তো ক্ষমা আছে, আমার নেই? আমি বললাম, আঃ হাত ছাড়ুন, কি সব ভাট বকছেন? আমি কোন সুপ্রীম কোর্টের জাজ যে ক্ষমা করব? আমার রিহার্সালের দেরী হয়ে যাচ্ছে, হাত ছাড়ুন।


    নান্তুদার মুখটা বড় করুণ, ইনি কি আমার চেয়েও বড় অভিনেতা? না, তা হতে পারেনা। কাঙ্গাল কাঙ্গাল লাগছে। একদিন আমার বাড়িতে এস ভাই, তারপর আর আমার মুখ দেখোনা। আমি নরম হলাম, কী করব আপনার বাড়ি গিয়ে? এসনা, সে কথা রাস্তায় বলা যাবেনা। এবার চায়ের দোকানের আড্ডার এক বন্ধু এগিয়ে এলেন, যান না ভাই এত করে বলছে যখন – ঠিক আছে রোববার যাব, তবে এই শেষ কিন্তু।


    রোববার। রকে সেই জেনুইন বৃদ্ধা এবং অকালবৃদ্ধা নারীযুগল। ওপরে উঠলাম। দরজাও ঠেললাম। ডান দিকের জানলার তাক ফাঁকা। দরজা যিনি খুললেন, তাঁকে দেখব আশা করিনি। সদ্য বিবাহিতা এক মহিলা। কালো মেয়ে, শান্তিদেব ঘোষের গান বাজতে থাকে কানের ভেতর। কালোও এত সুশ্রী হয়? তুমি রূপঙ্কর না? সোজা আমার হাত ধরলেন, সারা শরীর জুড়িয়ে গেল।


    নারীর স্পর্শে পুরুষের রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়, মস্তিষ্কের গ্রন্থিসকল ডোপামাইন, অক্সিটোসিন ইত্যাদি ক্ষরণের প্রস্তুতি নেয়, এটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, এতে অপরাধের কোনও বিড়ম্বনা নেই, এটা নিতান্তই স্বাভাবিক। তবু লোকাচার, সংস্কার, এইসবের কারণ লোকে বিব্রত হয়। প্রাণীদের মধ্যে শুধুমাত্র মানুষের বেলায় কিছু ক্ষেত্রে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। নারীর স্পর্শে অঙ্গ উত্তপ্ত না হয়ে শীতল হয়ে যায়। পণ্ডিতগণ একে স্নেহ, বাৎসল্য, এইসব নাম দিয়ে থাকেন।


    হাত ধরে উনি শোবার ঘরে নিয়ে গেলেন। আমি ভাই আপনি আজ্ঞে করবনা কিন্তু। আমি বললাম, কে বলেছ করতে? আমি কে বলতো? আমি বললাম, বৌদি।


    - তুমি জানতে তোমার দাদা বিয়ে করেছে?


    - হ্যাঁ শুনেছিলাম।( মিথ্যে আমি সচরাচর বলিনা, এটা ব্যতিক্রম )


    - তবে এতদিন আসনি কেন?


    - সময় পাচ্ছিলাম না।


    - বাব্বা, তোমার কথা এত শুনেছি, এত শুনেছি, রাস্তায় একশ লোকের ভিড়েও ঠিক চিনে নিতাম।


    - (মনে মনে) ঈশ্বর, মায়া বাড়ছে, মায়া বাড়ছে, পালিয়ে যাবার ব্যব্যস্থা করে দাও-


    ব্যবস্থা হল। দরজার ফ্রেমে নান্তুদা। হাতে মিষ্টির দোকানের প্যাকেট।


    -ও, তুমি এসে গেছ? যাই চা করে আনি। ভাই, এসে হাত দেখাব কিন্তু –


    আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমি ? আআআমি ? বলেন কি, আপনার কর্তা এতবড় – নান্তুদা বৌদির দিকে পেছন ফেরা, চোখে মুখে কাকুতি মিনতি, চুপ করার জন্য। আমি চেপে গেলাম। বৌদি কিচ্ছু না বুঝে বললেন, বড় টড় কিছু না ভাই, তবে এ ক’দিনে যা বুঝেছি, মানুষটা বড় ভাল।


    বৌদি রান্নাঘরের দিকে যেতেই নান্তুদা লাফিয়ে এসে হাত চেপে ধরলেন, চাপা স্বরে বললেন, ভাই, তোমাকে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি, আমার কিছু ইতিহাস, যেমন আগে আমার একবার বিয়ে হয়েছিল, পরিবারের সঙ্গে আমার আচরণ, এই সব যেন কোনওমতেই তোমার বৌদি জানতে না পারে। আমি জানি তুমি এসব জেনে ফেলেছ। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমার ঐ সব জ্যোতিষ বিদ্যার কথা যেন ঘুণাক্ষরেও টের না পায়।


    আমি বললাম, আমাকে একটা কারণ দেখান, গিভ মি ওয়ান গুড রীজন, যে কেন আমি আপনার গুণপনা বৌদির থেকে লুকোব? আপনি খাল কেটে কুমীর এনেছেন, ধরে বেঁধে আমায় বাড়িতে ঢুকিয়েছেন, এবার ফল ভোগ করুন।


    নান্তুদা প্রায় কেঁদে ফেলল বলে। রূপঙ্কর, জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করব ভেবেছিলাম, আমি কি একটু – আমি বললাম সে তো ভূপেন হাজারিকার গান হয়ে গেল, - একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না –হ্যাঁ পারে, বিলক্ষণ পারে, তবে তার জন্য মূল্য ধরে দিতে হয়। আমি এখন আপনাকে ব্ল্যাকমেল করব। যা শেখার জন্য দিনের পর দিন অফিস কামাই করে, নাটকের রিহার্সাল ফাঁকি দিয়ে, আপনার পেছন পেছন ঘুরেছি, সেই বিদ্যে শেখান এবার। নইলে – ফর্দা ফাঁস।


    এ গল্প এবার শেষ করতে হবে, শুধু নান্তুদাকে নিয়ে পড়ে থাকলে তো চলবেনা। সে বিদ্যে উনি আমায় শিখিয়েছিলেন কিনা, শিখলেও তা দিয়ে আমি কিই বা হাতি-গন্ডার মেরেছি, আমাদের প্রথম সাক্ষাতে কেনই বা উনি আমার সম্বন্ধে কিছুই বলতে পারেননি, সে কথা হয়ত ঘুরে ফিরে আসবে আবার। শুধু এইটুকু বলি, চা নিয়ে বৌদি ফিরে আসার পর ওঁরা জুটিতে আমাকে হাত দেখালেন। নান্তুদা প্রশ্ন করলেন, আমাদের বিবাহিত জীবন কেমন যাবে? ছেলেপুলে হবে কিনা? ইত্যাদি।


    বন্ধু মহলে বেশ ক’দিন বলে বেড়ালাম এই গপ্পো। জানিস, যে নাকি দীপকের ছেলে হওয়া ফোরকাস্ট করেছে, সেই আবার আমাকে হাত দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে ছেলেপুলে হবে কিনা, হে হে। বেশ কয়েক বছর পর বুঝেছিলাম ভদ্রলোক কতটা বুদ্ধি ধরেন। পুরো ব্যাপারটাই সাজানো। উনি অত সাধ্যসাধনা ক’রে, খাল কেটে কুমীর এনেছিলেন তাকে দিয়ে বাঘ মারতে। বাঘের বাচ্চাটাকে লুকিয়ে রেখেছিলেন বালিশের নীচে। বলাতো যায়না, কখনো যদি –


    (চলবে)


    ছবিঃ  লেখক


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০
  • ধারাবাহিক | ১১ জুন ২০১২ | ৭৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • JommRaj | 233.223.140.49 (*) | ১২ জুন ২০১২ ০৩:০৯89999
  • বেশ তো !! :)
  • মিলা | 213.116.48.98 (*) | ১২ জুন ২০১২ ০৩:১৪89996
  • বাকিটা? :(
  • নিরমাল্লো | 69.162.23.71 (*) | ১২ জুন ২০১২ ০৩:৫৬90000
  • ইকি কারবার, শেষ হল না যে!!
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.202.194.154 (*) | ১২ জুন ২০১২ ০৪:২৬89997
  • সব কিছু শেষ করতে নেই :)
  • মিলা | 213.116.48.98 (*) | ১২ জুন ২০১২ ০৪:৩৪89998
  • :)
  • Nina | 78.34.167.250 (*) | ১৭ জুন ২০১২ ০৫:৪২90001
  • খাসা হচ্ছে----যা হচ্ছে আর যা হচ্ছেনা তাও ঃ-)
    চলুক চলুক
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.202.212.49 (*) | ১৮ জুন ২০১২ ০২:৫৬90002
  • নিনা থাঙ্কু। ভূতের গপ্পো দারুন। আম্মো লিখব ধানাই পানাইতে ক'দিন পরে। একেবারে হাতে গরম।
  • ranjan roy | 24.96.136.34 (*) | ১৯ জুন ২০১২ ০৩:৩৬90003
  • রূপংকরদা,
    আমি আপনার চ্যালা হয়ে বিদ্যে শেখার জন্যে ঘুরতে রাজি!
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.202.197.9 (*) | ১৯ জুন ২০১২ ০৬:৫৪90004
  • রঞ্জনবাবু, আমার নিজের পোস্টে গুটিকয় খুব পরিচিত ও আত্মীয়গোছের লোকজনকে একটা রেস্ট্রিকটেড অ্যাক্‌সেস করে এক্সপ্ল্যানেশনটা দিয়েছিলাম। এখানে দিয়ে মার খাই আর কি। দুটো কথা বলি, প্রথম হ'ল, যে বিদ্যে কোনও কাজে আসবেনা, তা শিখে লাভ কি ? কে বাড়ি থেকে কোন শাড়ি পরে বেরোচ্ছে, আর কার বাড়ির জানলা ভেঙে ঝুলছে, তা জেনে হবেই বা কি। আমার যে বন্ধুর কালো প্যান্টের ব্যাপার নিয়ে অত কান্ড হ'ল, সে মারা গেল বীভৎসৎ ভাবে। বাড়ির একতলার চৌবাচ্চায় কোমর থেকে মাথা অবধি ডোবা অবস্থায়। কই, সে কথা তো বলা হয়নি। আর দু নম্বর কথা হল, বাঘের বাচ্চাটা বালিশের তলাতেই ছিল, শুধু লেজটা কেটে উনি আমায় দিয়েছিলেন। তাও অনেক অবশ্য।
  • কান্তি | 113.24.190.176 (*) | ১০ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৩90006
  • এর পরের গল্পেও কী উপসংহারটা এভাবেই সংহারিত হবে?
  • Mohan Mukhopadhyay. | 122.79.37.214 (*) | ১০ মার্চ ২০১৫ ০৫:৫২90005
  • বেশ ভালো লাগলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন