এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  সমাজ  শনিবারবেলা

  • তেলেনিপাড়া তথ্যানুসন্ধান, ২০২০ - পর্ব ১

    আমরা এক সচেতন প্রয়াস
    ধারাবাহিক | সমাজ | ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ২৭৩২ বার পঠিত
  • `

    ভূমিকা ও প্রেক্ষিত:


    ‘আমরা এক সচেতন প্রয়াস’-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিগত চার বছরে রামনবমী উত্তর পর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ বুঝতে বিভিন্ন জনপদে তথ্যায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮-২০২০ এই তিন বছর আমরা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়ায় ক্ষেত্র গবেষণা চালিয়েছি, ইতিমধ্যে তার প্রতিবেদন প্রকাশিত। সেই ধারাবাহিকতায় তেলেনিপাড়া হল দ্বিতীয় প্রতিবেদন।

    হুগলী জেলার ভদ্রেশ্বর শহর গঙ্গার পশ্চিম পারের এক উল্লেখযোগ্য শহর। ইতিহাসের বিভিন্ন আঙ্গিকে এটি একটি উল্লেখযোগ্য জনপদ। ইতিহাসের পরতে পরতে- শিল্পে, সাহিত্যে, জনবিন্যাসে, সংস্কৃতিতে, পরাধীনতার ইতিহাসে, স্বাধীনতার সংগ্রামে। তেলেনিপাড়া এই শহরের একটি বড় এলাকা। এলাকাটি মিশ্র ও ঘন জনবসতি পূর্ণ। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা এপ্রিল তারিখে ভদ্রেশ্বর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। অবিভক্ত বাংলার অন্যতম প্রাচীন এই পৌরসভা। ভদ্রেশ্বরে বৈদ্যুতিক আলো আসে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত সুধীর কুমার মিত্র রচিত ‘হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ-২ গ্রন্থে সেই সময়ের ভদ্রেশ্বরের কয়েকটি খণ্ড চিত্র পাওয়া যায়, নিচে তা রাখা হোল-

    ভদ্রেশ্বর মিউনিসিপ্যালিটি পাঁচটি ওয়ার্ডে বিভক্ত। এক নম্বর ওয়ার্ড ভদ্রেশ্বর, দুই নম্বর ওয়ার্ড গৌরহাটি, তিন নম্বর ওয়ার্ড তেলেনিপাড়া এবং চার ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড মানকুণ্ডু।

    ভদ্রেশ্বরের মিল এলাকা ছাড়া অন্য স্থানগুলি খুব পরিস্কার রাখা হয় না বলিয়া মধ্যে মধ্যে অসুখের প্রাদুর্ভাব হয়। এই মিউনিসিপ্যালিটির মধ্যে প্রধান রাস্তা গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড। এই রাস্তার গা দিয়া যে সব শাখা রাস্তাগুলি আছে, সেইগুলি অপ্রশস্ত ও ধূলিধূসরিত। এখানকার রাস্তার মাইলেজ ১৩.৬৭ মাইল। ইহার মধ্যে ৯.৮৫ মাইল হইতেছে কাঁচা রাস্তা। কাঁচা রাস্তাগুলি চলার উপযোগী ও সুসংস্কৃত করিলে পথচারীরা উপকৃত হইবেন। এই সব রাস্তার দুধারে গভীর কাঁচা অপরিষ্কার নর্দমা পৌরসভার কলঙ্ক। পরিমার্জনের অভাবে নর্দমা হইতে দুর্গন্ধ ও জল নিষ্কাশনের অব্যবস্থার জন্য পেটের অসুখের প্রাদুর্ভাব এই স্থানে প্রায়ই হয়।

    পৌরসভার নিজস্ব ‘ওয়াটার-ওয়ার্কস’ নাই বলিয়া মিল এলাকা ছাড়া সর্বত্রই জলাভাব আছে। ৮০টি নলকূপের সাহায্যে জলদানের ব্যবস্থা অকিঞ্চিৎকর বলিয়া মনে হয়। তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মিল কর্তৃপক্ষের পৌরসভাকে সহৃদয়তার সহিত সাহায্য করা কর্তব্য। পৌরসভার একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা অনুসরণ করিলে এই প্রাচীন ঐতিহাসিক শিল্পসমৃদ্ধ শহরের ঐতিহ্য বজায় থাকিবে। (পৃষ্ঠা-৫৮৫, হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ-২, সুধীর কুমার মিত্র, ১৯৪৮)

    হুগলী জেলা বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জীবিকার প্রয়োজনে মানুষের আনাগোনার পুরনো ইতিহাস আছে। আছে ইউরোপীয় উপনিবেশিকদের বাণিজ্য তথা সাম্রাজ্য স্থাপনের ইতিহাস। উক্ত গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি-

    ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পর্তুগিজগণ সর্বপ্রথম বাণিজ্য করিতে এই দেশে আসে। তৎপরে শ্বেতাঙ্গ ব্যবসায়ীবৃন্দ কর্তৃক এই জেলার গঙ্গাতীরস্থ স্থানগুলিই অধ্যুষিত ছিল। তন্মধ্যে ইংরেজদের প্রাধান্য হুগলীতে, পর্তুগিজদের ব্যন্ডেলে, গ্রিকদের রিষড়ায়, জার্মানিদের ভদ্রেশ্বরে, কোন্নগরে অস্ত্রেলিয়দের, চুঁচুড়ায় ওলন্দাজদের এবং শ্রীরামপুরে দিনেমারদের অধিষ্ঠান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। (পৃষ্ঠা-৬৪৫, হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ-১, সুধীর কুমার মিত্র, ১৯৪৮)

    চটকল ও অন্যান্য শিল্পে কাজ করতে আসা হিন্দি ও উর্দুভাষী মানুষ এসেছেন মূলত ব্রিটিশ শাসন কালে। তেলেনিপাড়ার মিশ্র জনবসতিতে উক্ত দুই ভাষাভাষী মানুষ আছেন বহুলাংশে। এছাড়া ভদ্রেশ্বর ম্যুনিসিপ্যালিটি এলাকায় উড়িয়া, তেলেগু ইত্যাদি ভাষার মানুষ আছেন।

    তেলেনিপাড়ার সংলগ্ন চাঁপদানি শহর। এখানেও চটকল বা বিভিন্ন কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের বাস। হুগলী জেলার ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যায়, বিভিন্ন সময় দাঙ্গা হয়েছে এই দুটি জনপদে। ৯২-এ বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুনে দগ্ধ হয়েছে এখানের মানুষ। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই হিন্দিভাষী বনাম উর্দুভাষী এই সমীকরণ উঠে এসেছে। কিন্তু এবারের তেলেনিপাড়ার হিংসার বিশেষত্ব হোল দাঙ্গার বিস্তৃতি; এলাকা ও জনগোষ্ঠীর নিরিখে। বাংলাভাষীরাও সাম্প্রদায়িক হিংসায় (১২ মে’র হিংসায়) যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ সংগঠিত ও বহিরাগত দাঙ্গাবাজ এনে সুপরিকল্পিত ভাবে দাঙ্গা করানোর।

    (ক) গোন্দলপাড়া’র ঘটনা :

    হুগলী নদীর দুইপার (বিশেষত ব্যারাকপুর ও চন্দননগর মহকুমা এলাকা) সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক হিংসার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আমাদের প্রকাশিত রিপোর্ট, ‘সাম্প্রদায়িক হিংসা, ২০১৬: পশ্চিমবঙ্গ’-এ চন্দননগরে রামনবমী-উত্তর হিংসার উল্লেখ আছে। এবারেও চন্দননগর পৌরসভার উর্দিবাজার ২০১৬ সালের মত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়। ‘নিজামুদ্দিন-করোনা সংক্রমণ-মুসলিম হইতে সাবধান’-এই প্রচার এখানেও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ঘুরতে থাকে। ঠিক যেমন গঙ্গার ওপারে, বিশেষত ভাটপাড়ায় তা ব্যাপক আকার নেয়। ভদ্রেশ্বর পুরসভার ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং চন্দননগর পৌরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২০২০-র এপ্রিলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার শুরু হয়। তখনও তেলেনিপাড়া দাঙ্গা (মে, ২০২০) ঘটে নি।

    গত ১৯ এপ্রিল, ২০২০ গোন্দলপাড়া চটকল এলাকার বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙে সম্ভাব্য দাঙ্গার উত্তাপে। রাত্রি ৩.৩০-এ কেউ মালাপাড়া মসজিদের তালা ভেঙে মসজিদে ঢোকে, তারপর মসজিদের আসবাব ভাঙে, কোরান ছিঁড়ে দেয়। স্থানীয় মানুষ তাকে ধরে ফেলে, তারপর মারধোর করে, পরে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। ২০ এপ্রিল সেখানে র‍্যাপিড অ্যাকশান ফোর্স মোতায়েন করা হয়।

    এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা কথা বলি, রাজেশ জয়সোয়ালের সঙ্গে। ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের (গোন্দলপাড়ার নিকটবর্তী) নির্বাচিত এই কাউন্সিলর নিজেই গোন্দলপাড়ার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, চন্দননগর পৌরসভা ডিসলভ করা হয়েছে। এখানে তৃণমূলের দাদাগিরি সব রকমের গণতান্ত্রিক পরিসরকে শেষ করে দিয়েছে। ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই চুঁচুড়া, চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর-এর রাজনৈতিক চিত্র বদলাতে থাকে, ব্যাপক সেই বদল। প্রচার, মেরুকরণ এবং হিংসাকে কৌশল হিসাবে ব্যবহার করে বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের লক্ষ্য তখন হুগলী লোকসভা কেন্দ্র। সেই শুরু, এখনও চলছে।’

    গোন্দলপাড়া চটকল ২০১৮ সাল থেকে বন্ধ। ‘বেকার শ্রমিক বস্তীগুলো এখন সাম্প্রদায়িক শক্তির আখড়া,’ জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রেডইউনিয়ন নেতা। ১৯ এপ্রিলের ঘটনা কোন বড় ষড়যন্ত্রের শুরু জানালেন তিনি। আমরা মসজিদের সংলগ্ন এলাকায় গেলে অনেকে জানান, ‘সেই রাত্রে কে মসজিদে এসেছিল তা জানিনা। তার নাম, পরিচয় কিছুই জানায়নি পুলিস।’ মসজিদের কাছেই বসেছিলেন মুবাসসর আলি, তিনি বলেন, ‘মানসিক গণ্ডগোল থাকতে পারে লোকটার। হয়ত এই কারনেই তাকে ব্যবহার করা হয়েছে।’

    (খ) করোনা নিয়ে সাম্প্রদায়িক প্রচার এবং সোশ্যাল মিডিয়া :

    শতাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে ‘মুসলিমরা করোনা ছড়াচ্ছে’, ‘নিজামুদ্দিনের মারকাজ ফেরত বহু মুসলমান এখানে এই তেলেনিপাড়ায় আছে’, ‘চন্দননগরের উর্দিবাজারে মুসলিমদের করোনা ছেয়ে গেছে’, ‘ওরা নিয়ম মানছে না, করোনা ছড়াচ্ছে’- এই রকম কথা উঠে এসেছে বারংবার। এই গ্রুপগুলির বেশীরভাগ হিন্দুত্ব গ্রুপগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া হিন্দুত্ব মানসিকতার ‘স্বেচ্ছাসেবক’রা স্বেচ্ছায় ‘দায়িত্ব’ কাঁধে তুলে নিয়েছে, এইরকমও আছে। কয়েকটি গ্রুপের নাম এইরকম-
    Corona se Bancho
    Beware of Muslim
    Ram ke nam lo

    ফেসবুকের ক্ষেত্রে ‘গোপনীয়তা’ বজায় রাখা কম থাকায় এর ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে। ব্যতিক্রম হুগলীর সাংসদ, লকেট চট্টোপধ্যায়। বিজেপি’র সাংসদ তাঁর ফেসবুক থেকে বিভিন্ন সময় যেসব কথা বলেছেন তার নির্যাস, ‘মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা’। তাঁর কথার সারাংশ-

    ১) ১৩ মে, ২০২০ ফেসবুক পোস্ট- একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সন্ত্রাস, ভাঙচুর, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ, গুন্ডাগিরি করার সুযোগ করে দিচ্ছে পুলিশ।

    ২) ১২ মে, ২০২০ ফেসবুক পোস্ট- পরশুদিন এক্সম্প্রদায়ের লোকজন এসে তলোয়ার নিয়ে, বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে এসে আক্রমণ করে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দুটো সোনার দোকান লুঠ হয় এবং তার পর অনেক কিছু লুঠ হয়। ...আজ দুপুর ১১ টা থেকে আমার কাছে ফোন আসতে থাকে, চন্দননগর তেলেনিপাড়া দাওদাও করে জ্বলছে। আগুন বোমা আপনারা সবাই দেখেছেন, কিভাবে কালো ধোওয়া উঠেছে। চারিদিক থেকে ফোন আসতে থাকে হিন্দুদের ঘর লুঠপাট করেছে। জ্বালিয়ে দিয়েছে। মহিলারা ফোন করছে, ‘দিদি আমরা বোধহয় আমাদের কিছু বাঁচাতে পারবো না। এই অবস্থা যদি আমি শুনি তবে আমার কিরকম লাগবে?

    ৩) ১২ মে, ২০২০ ফেসবুক পোস্ট- চারিদিকে ব্যারিকেড দেওয়া আছে, কিন্তু একটা ছোট জায়গাকে কনট্রোলে আনতে পারছে না কেন? পুলিশ এতো ভালো কাজ করছে এখানে কিছু করতে পারছে না কেন? কেননা ওপর থেকে নির্দেশ আছে, ‘পুলিশ, আমি যতক্ষণ না বলবো এদের গায়ে হাত পরবে না’। কেন বললাম এদের গায়ে? রিসেন্টলি চন্দননগরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে এদের অনেকের মধ্যে। আজমীঢ় থেকে অনেকে ফিরেছে, কাউন্সিলর আছেন টিএমসি’র সংখ্যালঘু এদের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। যেহেতু পাওয়া গেছে এদের আশেপাশের লোকজনকে কয়ারেন্টাইনে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তারা টেস্ট করবে না, তারা কয়ারেন্টাইনে যাবে না। তারা পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা করলো। তারা কোথাও যাবে না, তারা শুধু ছড়িয়ে যাবে। করোনা নিয়ে যখন মানুষ লড়ছে, তখন এদের করোনা ছড়ানো উদ্দেশ্য। এই ছড়ানো আটকাতে পুলিশ প্রশাসন যখন ব্যারিকেড দিয়েছে, এলাকার মানুষ যখন ব্যারিকেড দিয়েছে, যেহেতু এই পাড়ায় করোনা বেশি, তখন তারা রাগ দেখাতে নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর আক্রমণ করেছে।

    ১০ মে হিন্দুদের দোকান আক্রান্ত হোল, একটি সম্প্রদায় তা করলো, কিন্তু প্রশাসন কিছু করলো না। ওদের মাথায় তুলে রেখেছে তৃণমূল সরকার। এর ফল ওরা হাতেনাতে পাবে।

    উল্লেখ্য এই সাংসদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা উনি নিজেই জানিয়েছিলেন।

    (গ) দাঙ্গার পরেপরেই :

    ১০ মে, ২০২০ তেলেনিপাড়ার ফেরি ঘাট স্ট্রিটের যেখানে হিন্দু মহল্লা শুরু হয় সেখানে অনেকগুলি দোকান আক্রান্ত হয়। প্রায় ২০ টা দোকানে লুঠ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ‘খবর’ হয়। তার প্রেক্ষিতে আমাদের প্রথম পর্বের তথ্যানুসন্ধান।

    ১১ মে, ২০২০ ‘আমরা এক সচেতন প্রয়াস’-এর তথ্যানুসন্ধান দল প্রথম তেলেনিপাড়া যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু চাঁপদানির পরেই পুলিশ আটকে দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু দোকানদারদের পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে চাঁপদানির পলতা ঘাটে আমাদের কথা হয়। চাঁপদানি হোল ভদ্রেশ্বরের পাশের ম্যুনিসিপ্যালিটি, যা দক্ষিণ দিকে।

    ১৯ মে, ২০২০ সাইকেল নিয়ে আমাদের এক সদস্য তেলেনিপাড়ার দাঙ্গাবিধস্ত এলাকায় যান। এফ জি (ফেরি ঘাট) স্ট্রিট এবং সংলগ্ন বাজারটিতে যথেষ্ট ভীর ছিল। আসন্ন ঈদের জন্য মানুষজন কেনাকাটায় মত্ত ছিলেন। আমরা’র সদস্যটির মত ‘বহিরাগত’কে নজরে রাখছিল মুসলিম যুবকেরা। বাজার শেষ হতেই, মোড়, সেখান থেকে হিন্দু এলাকা। একটু এগিয়ে তেলেনিপাড়া ফেরি ঘাট। র‍্যাপিড অ্যাকশান ফোর্সের জওয়ানরা কাউকেই সেদিকে যেতে দিচ্ছে না। মোড়ের একটু আগেই বামদিকে মুসলিম পাড়া, বস্তি সাদৃশ্য পর পর ঘরের সারি। একটি ছোট্ট ঘরের দাওায়ায় বসে ছিলেন বছর সত্তরের এক বৃদ্ধা। হামিদা বানু (নাম পরিবর্তিত)-র সঙ্গে কথা হয়। কথা হয় হিন্দি বা উর্দুতে।

    আমরা- আসসালাম আলেইকুম নানি।
    হামিদা- সালাম বেটা।
    আমরা- এই রাস্তাটা কি নেহেরু স্কুলের দিকে যাচ্ছে?
    হামিদা- তুমি কোথায় যাবে?
    আমরা- স্কুলে অবশ্যই যাবো না। তেলেনিপাড়া ঘাট যাবো, এইদিকে কি যাওয়া যাবে?
    হামিদা- এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া মুশকিল। এফ জি স্ট্রিট দিয়ে যাও।
    আমরা- ওইদিকে পুলিশ যেতে দিচ্ছে না।
    হামিদা- কি জানি বেটা, পরিস্থিতি উত্তেজক।
    আমরা- এখনও? প্রথম দিনের ঝামেলার পর এতদিন হয়ে গেলো?
    হামিদা- পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে নেতাদের আসার পর।
    আমরা- কাদের কথা বলছেন?
    হামিদা- এই যেমন লকেট চ্যাটার্জি, আমাদের এম পি।
    আমরা- কি হয়েছিল সেইদিন?
    হামিদা- পরিস্থিতি রমজানের আগেই ঘোরালো হয়ে উঠেছিল। ওরা আমাদের করোনা ছড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করছিল।
    আমরা- ওরা মানে হিন্দুরা?
    হামিদা- সব হিন্দু নই, কয়েকজন বদমাশ।
    আমরা- আর রমজান শুরু হওয়ার পর? রমজান তো শুরু হয়েছে ২৫ এপ্রিল থেকে।
    হামিদা- ওহি বদমাশ উধার ভি হ্যায় অউর ইধার ভি হ্যায়।

    ঠিক এই সময় কেউ একজন ভিতর থেকে আসে। কথোপকথন থেমে যায়। আমরা’র সদস্য তাঁকে সম্বোধন করে, কিন্তু সেই ব্যক্তি কোন জবাব দেন না। তিনি ‘নানি’র দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকান, নানি কিছুক্ষণের জন্য থেমে যান, তারপর শুরু করেন কিছুটা দ্বিধা নিয়ে। এই আলাপ তাঁকে সমস্যায় ফেলতে পারে এই ভেবে আমরা আর কথা বাড়াই না।

    আমরা- শুক্রিয়া নানি। আমাদের যেতে হবে। কি যে হয়ে গেলো, হিন্দু-মুসলমান একসাথে রয়েছে এখানে, কি হলো যে একে অন্যের দোকান, ঘর জ্বালিয়ে দিলো?
    হামিদা- এ হোল রাজনীতি, গন্ধা রাজনীতি।
    আমরা- আপনাদের এখানে অনেক দোকান জ্বলেছে, লুঠ হয়েছে।
    হামিদা- হ্যাঁ এখানে হিন্দুদের দোকান লুঠ হয়েছে, মুসলিমদের হয়েছে অন্য এলাকায়।
    আমরা- হ্যাঁ, যেমন জি টি রোডে দেখলাম।
    হামিদা- এখানেও লুঠ হয়েছে, আগুন জ্বলেছে, ওখানেও লুঠ হয়েছে, আগুন জ্বলেছে।
    আমরা- জি টি রোডে লুঠ হওয়া দোকানের মালিক শুনলাম তেলেনিপাড়ার।
    হামিদা- হ্যাঁ লুঠ হুয়া হামারা ঔর ইহা লুঠেরা ভি হম হ্যায়।
    আমরা- আপনাদের এখানে হিন্দুদের দোকান লুঠ হোল, আপনি বলছেন লুটেরা যারা লুণ্ঠিতও তারা?
    হামিদা- হ্যাঁ তাই তো। এখানে মুসলমানরা হিন্দুদের দোকান লুঠ করেছে, অন্য জায়গায় হিন্দুরা। মতলব তো এহি হুওা না?


    (১) আগুন ও ছাই


    প্রশাসনের কাছে কতগুলি বাড়ি ভাঙ্গা হয়েছে, কতগুলি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে, কটা পরিবারের জিনিষপত্র লুঠ হয়েছে (এবং আরও কিছু তথ্য)জানতে চেয়ে ‘আমরা’-র পক্ষ থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে হুগলী জেলা শাসকের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি দেওয়া হয়। না আজ পর্যন্ত কোন উত্তর আসেনি। স্থানীয় বন্ধু এবং আমরা সদস্যদের মিলিত দল বার বার মুখোমুখি হয়েছে আগুনের, ছাইয়ের। এখানে কয়েক টুকরো।

    সত্যপীরের ভাঙ্গা মাজারের সামনে:

    বাংলার জনজীবনে সত্যপীর বা সত্যনারায়ণ এক উল্লেখযোগ্য লোকসাংস্কৃতিক(এবং লোকধর্ম) পরিস্রবণ। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বিভিন্ন জনপদে সত্যপীরের মাজারে সমবেত হওয়া, সিন্নি দেওয়া, মানত করা এখনও সহাবস্থানের ঐতিহ্য বহন করে। আমরা জানি এই ঐতিহ্য ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জনপদে দেখা যায়। মাজার ঘিরে বা মাজারকে কেন্দ্র করে যে মেলা বা বাৎসরিক উরুস হয় তা থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা বা খাদেমদের রোজগার হয়, এটা আর একটি দিক। কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষ রোগ মুক্তি, পারিবারিক বা সামাজিক সমস্যার সুরাহা করতে মাজারে যায়, আর খাদেমরা তাবিজ, মাদুলি, জল পরা ইত্যাদির মাধ্যমে রোজগার করে। মাজারে কাওয়ালী গান, ফকীরি গান হয়। জি টি রোডের ওপর ভদ্রেশ্বরের এই সত্যপীরের থানটিও সেইরকম একটি কেন্দ্র। এলাকার কসমোপলিটান চরিত্র অনুসারে এখানে উর্দু, হিন্দি, ওড়িয়া, তেলেগু এবং বাংলাভাষী মানুষ প্রচুর। সত্যপীরের মাজারটি হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান নির্বিশেষে তাদের সকলের মিলনায়তন হয়ে উঠেছিল। ১২ জুন, ২০২০ হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজরা এটি আক্রমণ করে। ভেঙে চূর চূর করে দেয়, ইট-বালি-সুরকির ইমারত। বাস্তবে ভাঙ্গা হয় সহাবস্থানকেই, ভালোবাসাকে।

    ভদ্রেশ্বরের জি টি রোডের পাশে এই তেলেনিপাড়ার বাবুবাজারে সত্য পীরের মাজার। ২০০ বছরের পুরনো এই মাজার, এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হাজী বদর উদ্দিন সাহেব।৩০-৩৫ বছর আগে এটা এত সুন্দর ছিল না, ছিল মাটি দিয়ে নির্মিত একটি সাধারণ মাজার। বাউন্ডারি বানানো ছিল। ওই সময় রাধেশ্যাম ঘোষ, কোলকাতার কলেজ স্ট্রিটে যার মিষ্টির দোকান, ঢাকেশ্বরী মিষ্টান্ন ভান্ডার, উনি ‘স্বপ্নাদেশ’ পান এবং উনি এটি পুনর্নির্মাণ করেন। সেই ৩০-৩৫ বছর আগের কথা। ওনার নাম গেটে লেখা আছে। বর্তমানে ওনার বয়স হয়েছে, অসুস্থ, আসতে পারেন না। এলাকায় গিয়ে লোক মুখে আমরা এইসব তথ্য জানতে পারি।

    ১২ তারিখের দাঙ্গা শুধু ইমারত নয় সমাজের মনে কতটা ক্ষত এনেছে তা বুঝতেই আমরা কথা বলি বিভিন্ন জনের সঙ্গে। কথা বলি বর্তমান খাদেম আবদুল মল্লিকের সঙ্গে। ওনার বাবা শেখ জুম্মা মল্লিক আগে খাদেম ছিলেন, উনি মারা যাবার পর আবদুল মল্লিক মাজার দেখভাল করতে থাকেন। কথাবার্তার শুরুতে ওনাকে উত্তেজিত মনে হয়। ‘এই সব কথা বলে কি হবে, আমার ওপর যা হবার তো হোল, আজও হয়রানি চলছে’- এই ছিল তাঁর অভিব্যক্তি। আমরা তাঁর উস্মা, উদ্বেগকে বোঝার চেষ্টা করি। আমাদের কথা চলাকালীন উনি ওনার ‘ব্যবসা’ চালিয়ে যান। প্রচলিত ‘বিশ্বাস’কে পুঁজি করে কাউকে মাদুলি, কাউকে মালা দিতে থাকেন। ‘রুগী’ কারা? সব সম্প্রদায়ের, সব ভাষার মানুষ।

    আমরা- যখন ভাঙচুর হচ্ছিল, আপনি মাজারে ছিলেন?
    খাদেম- আমি বারোটার সময় চলে গেছি। আমরা সকাল ন'টায় আসি বারোটায় চলে যাই। আবার বিকেল পাঁচটায় এসে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা আটটার মধ্যে চলে যাই।তার মধ্যেই লোকজন এলে তাদের গা ঝাড়া, জল পড়া যেমন আছে সেসব করে দি, কাদের জন্ডিস হয়েছে জন্ডিসের মালা দিই। এই যে দরজা টা ভেঙে দিয়েছিল আমি বসিয়েছি নতুন।(কথা বলতে বলতে দেখালেন)
    আমরা- যখন ঘটছে তখনই খবর পেয়েছেন তো?
    খাদেম- তখনই খবর পেয়েছি।এখানেই পাশের থেকে সবাই খবর দিয়েছে। দেখো তোমাদের এখানে ভাঙচুর হচ্ছে, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে, তোমার এমন জিনিস নেই যা লুট হচ্ছে না সব কাঁধে করে করে নিয়ে চলে যাচ্ছে।
    আমরা- আচ্ছা স্থানীয় মানুষরা তো এখানে আসে?
    খাদেম- স্থানীয় মানুষরাই তো করেছে। বিশ্বাসের সাথে কি আছে, এ তো পার্টি পলিটিক্স।আমার গাড়িগুলো থানা নিয়ে গেছে সেগুলো কিছুতেই ফেরত দিচ্ছ না বলছে কেস হয়েছে, আমার গাড়ির ব্লু বুক আছে, সব আছে কাগজপত্র। শুধু ইনসিওরেন্স নেই। ঠিক আছে ইনসিওরেন্স আমি করাইনি, কিন্তু থানা আমায় গাড়ি গুলো ফেরত দিচ্ছ না কেন? আমি কি কারুর নামে কেস করেছি? আমিতো কেস করিনি।
    আমরা- এরকম একটা ধর্ম স্থানের উপর আঘাত এল?
    খাদেম- সে তারা এখন আফসোস করছে। আফসোস করে আর কি করবে? সেদিন তারা যখন রুখতে পারেনি।
    আমরা- কেউ এগিয়ে এসে রোখার চেষ্টা করেছিল?
    খাদেম- না না সেসব কেউ করেনি। যে যার নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছে, বলছে আমরা দেখছি। আর কেই বা আসবে? ওতো লোক ওরা এসেছিল, একজন দুজন বেরোলে তারাই তো মার খাবে। আমি থাকলে,আমাকেই তো সেদিন মেরে দিত। কেউ বাধা দিতে পারে?এখন বললে অনেক কিছুই বলা যায়, না বললে কিছুই বলা যায় না । কারা করল না করল সবাই সব জানে।
    আমরা- আপনি রাজনীতিকে দায়ী করছেন। কিন্তু এতদিন তো হয়নি, এখন হচ্ছে কেন?
    খাদেম- ওই যে রাজনীতির জন্য। এর আগেও রাজনীতি ছিল, কিন্তু এইরকম ছিল না।
    আমরা- আপনার কি মনে হয় আবার একসাথে থাকা যাবে? আবার সবাই আসবে এই মাজারে, উরুসে?
    খাদেম- হ্যাঁ, আসবে।
    আমরা- এই মাজার কতদিন আগেকার?
    খাদেম- সে দুশো বছর আগেকার হবে আরও বেশি হতে পারে। হাজী বদর উদ্দিন সাহেব এই পীরতলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একে সত্য পীরতলা বলে সবাই জানে। সেই মাজারকে ভাঙলো। ছিঃ!
    আমরা- এগুলো সংস্কারের জন্য কোন টাকা পাওয়া গেছে? কি কি ক্ষতি হয়েছে মাজারের?
    খাদেম- আমি মিউনিসিপালিটি তে গেছিলাম ওরা বলছে যে কাউকে আট দিচ্ছি কাউকে দশ দিচ্ছি প্রচুর লোকের প্রচুর গেছে। আমি বলি যে দশ দিলে আমি নেব না, আমার তাতে কিছুই হবে না। তখন ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব ডেকে কথা বলে কুড়ি হাজার টাকা আমাকে দিয়েছে। তাই দিয়ে এই বিম কিনতে পেরেছি। এই সামনের পাঁচিলটা আমাকে করতেই হবে। কিন্তু মাজারের এই সংস্কার আমার একার পক্ষে সম্ভব না। আমার যা পুঁজি ছিল সিন্দুকের মধ্যে সব নিয়ে চলে গেছে। সিন্দুক ভেঙে দিয়েছে। সিন্দুকে কিছু রাখেনি। এইযে সিন্দুকের ছবি। লোহার সিন্দুক ভেঙে ভেতরে যা ছিল সব নিয়ে গেছে, পেতলের জিনিস ছিল, তামার পাল্লা ও বাটখারা ছিল, আমাদের তো ওষুধের লাইন, নিক্তি ছিল তামার। মাজারে বড় বড় ফুলদানি ছিল, লাইট ছিল বেলজিয়াম গ্লাসের, সব ভেঙে দিয়েছে। সামনে শাটারের লক ভেঙে দিয়েছে। এই দেখুন শাটার, উপর থেকে খোলার চেষ্টা করেছিল। আমার ঘরে যা জিনিস ছিল সব নিয়ে গেছে।শাটার টা পুরো ভাঙতে পারেনি এটা ভাঙতে পারলে তারও জিনিস নিয়ে যেত। এটা ছেলের দোকান। ছেলের নাম শেখ আব্দুল মল্লিক।ঘরের ভেতরে যা জিনিস ছিল নিয়ে গিয়ে বাইরে পুড়িয়ে দিয়েছে। টেবিল-চেয়ার যা ছিল সব নিয়ে চলে গেছে।
    আমরা- আপনাদের এখানে উরুস কবে হয়?
    খাদেম- ফাল্গুন মাসের দ্বিতীয় শনিবার। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ আসে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি আসে।


    (ক্রমশ…পরের পর্ব পড়ুন আগামী শনিবার)




    থাম্বনেল গ্রাফিক্স: স্মিতা দাশগুপ্ত
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ২৭৩২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নবীন - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অপরাজিতা | 116.193.129.161 | ০৫ এপ্রিল ২০২১ ১১:৫১104491
  • আমরা'র প্রতিটা রিপোর্ট খুঁটিয়ে পড়ি। সংঘর্ষ  ও নির্মাণের এক দলিল এই রিপোর্টগুলি। আমার অনুরোধ পশ্চিমবঙ্গের স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের দাঙ্গা চিত্র নির্মাণে আমরা এক সচেতন প্রয়াস এগিয়ে আসুক। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন