এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রঙের ছোঁয়া

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ জুন ২০২৪ | ১০৪ বার পঠিত
  • রঙের ছোঁয়া
    শুকদেব চট্টোপাধ্যায়

    আজকে অনিক বাড়ির বাইরে বেরোবে না। অন্তত এ বেলা তো নয়ই। আজ বলে নয়, চিরকালই এই দিনটা খুব ঠেকায় না পড়লে ও চেষ্টা করে ঘরেই কাটাতে। আসলে রং খেলতে অনিকের কোনদিনই ভাল লাগে না। সেই ছোট্টবেলায় যখন ওর বন্ধুরা নানারকমের পিচকিরিতে ভরে ছুটোছুটি করে রং খেলত, তখনও অনিক চেষ্টা করত একটু তফাতে থাকতে। কলেজে পড়ার সময় একবার বন্ধুদের চাপে পড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রং খেলতে হয়েছিল। সেবার মুখে মাথায় সব এমন রং মাখিয়ে দিয়েছিল যে দু তিন দিন সাবান শ্যাম্পু লাগিয়েও তা পুরোটা ওঠেনি। ওখানেই শেষ। তারপর শত অনুরোধেও আর কখনও দোল খেলেনি।
    অল্প কিছুদিন হল অনিক এই বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হয়ে এসেছে। এখান থেকে ওর অফিসটা কাছে পড়ে। বাড়ির তিনতলার একমাত্র ঘরটা ওর জন্য বরাদ্দ। সবকিছু আলদা ব্যবস্থা আছে। ওর একার জন্য ঘরটা যথেষ্ট বড়। বাড়ির মানুষগুলোও ভাল। আপনজনের মতই ওর দেখাশুনো করে। বাড়িটা রাস্তার ওপরে। জলখাবার খেয়ে ঝুল বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে নভেল পড়ছিল। বই পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে রাস্তার দিকে চেয়ে দেখছে। বাচ্চা বুড়ো সব একে অপরকে রঙে চুবিয়ে ভূত করছে। এতে কি যে এত আনন্দ অনিক বুঝে উঠতে পারে না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বইয়ে চোখ ফেরায়। কিন্তু মনঃসংযোগ করতে পারে না। বারে বারেই নিচে বাইরের দিকে নজর চলে যাচ্ছে। একটা গরুকে রং মাখিয়ে কিছু লোক মজা মারছে। নিরীহ প্রাণীরও এই নোংরামির হাত থেকে মুক্তি নেই। বই বন্ধ করে অনিক ঘরে এসে টিভি খুলে বসল। এখানেও নিস্তার নেই। অধিকাংশ চ্যানেলেই শুধু দোল খেলার ছবি। অগত্যা একটা কার্টুনের চ্যানেল খুলে দেখতে লাগল। কিছু সময় পরে হঠাৎ মুখে মাথায় কে যেন আবির মাখিয়ে দিল। পরিষ্কার জামাকাপড় সব আবিরে ভরে গেল।
    “কি হচ্ছে কি ?”—অসন্তুষ্ট হয়ে একটু জোরেই কথাটা বলার পর তাকিয়ে দ্যাখে আবিরের প্যাকেট হাতে ঘরের একধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই বাড়ির একমাত্র সন্তান, পিয়ালি।
    ---রাগ করলেন ? দোলের দিন একটু রং না খেললে ভাল লাগে বলুন ! আর এমন একটা দিনে আপনি কিনা ঘরে বসে বাচ্চাদের মত কার্টুন দেখছেন।
    অনিক কি বলবে ভেবে পায় না। ওরকম ভাবে রিঅ্যাক্ট করাটা উচিত হয়নি। কি করে বুঝবে যে পিয়ালি আবির মাখাতে এসেছে।
    খুব সংকোচের সঙ্গে বলল---কিছু মনে করবেন না। আমি না ঠিক বুঝতে পারিনি যে আপনি।
    ---তা বোঝার পরেই বা কি করলেন !
    ---আমি সত্যিই খুব লজ্জিত।
    ---শুধু লজ্জা পেলেই হবে! রং খেলার একটা নিয়ম আছে জানেন না!
    ---আমি কোনদিন তো রং খেলি না, কি করে জানব বলুন !
    ---কেউ আবির মাখালে তাকেও একটু আবির লাগাতে হয়।
    অনিক তাকিয়ে দ্যাখে যে আবিরের প্যাকেটটা পিয়ালি ওর দিকে বাড়িয়ে রেখেছে। এদের সাথে খুবই অল্প দিনের পরিচয় তাই আড়ষ্টতা একটু ছিলই। তবু সব দ্বিধা সংকোচ কাটিয়ে প্যাকেট থেকে আবির নিয়ে অনিক পিয়ালিকে মাখাতে লাগল। প্যাকেট কখন শেষ হয়ে গেছে তবু রং মাখানো আর শেষ হয় না। রং যে তখন হৃদয়ে লেগেছে।
    নিচে থেকে মায়ের ডাকে সম্বিৎ ফিরতে পিয়ালি এক ছুটে ঘর থেকে পালাল। আবির ধুয়ে ফেললেও পিয়ালির মুখের রাঙা ভাবটা কিন্তু ফিকে হতে সময় লাগবে। আর অনিক,রঙের ঘোরে বিভোর হয়ে ভাবে, 'এমন দোল রোজ আসে না কেন'!

    Email [email protected]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন