এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যদেতৎ হৃদয়ং তব 

    আফতাব হোসেন লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ জুন ২০২৪ | ১১০ বার পঠিত
  • অনির্বানটা ডাহা মিথ্যেবাদী, বলে কিনা কোন লেহেঙ্গা ছিল না। ব্রেসলেটও নাকি দেখেনি।
    বলুন নতুন জামাই কি করে এরকম ডাহা মিথ্যে বলে,
    শুনুন তাহলে গোড়া থেকে বলি। পয়েন্ট ধরে ধরে। শুনবেন, মেয়ের বিয়ে বলে কথা।

    #পাটিপত্র :-

    নিখিল ঘটককে অনেকদিন থেকেই বিশ্বাস আমার। সেই যে তিনবছর আগে বড় ছেলের বিয়ে দিলাম। তখন নিখিলই সম্বন্ধটা এনেছিল।
    আজ পাটি পত্র করে ফেললাম নীলিমার। আমার ছোট মেয়ে।
    বলে কিনা বাবা লেহেঙ্গা পরবো। কি অশান্তি ওর মায়ের সঙ্গে। ওর মা আবার একটু সেকেল। যাই হোক শেষমেস চুড়িদার এ রাজি করিয়েছি। বলেছি অস্টমঙ্গলায় আসার সময় পরিস। আগুন রঙা সালোয়ার কামিজে নীলুকে পুরো ওর মায়ের ডুপ্লিকেট কপি লাগলো। মেয়েটা চোখের সামনে কেমন জানি না তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল। যাই হোক মেয়ের বিয়ে সামনের মাসের ২৩ এ। আসবেন।

    #দধি মঙ্গল :-

    নিলুটাকে বোঝা খুব কঠিন। পঁচিশটা যৌবন পেরোলো, ওর মা হাজারবার হাজারটা ব্রত করার জন্য বললেও ম্যাডামের সে সবে কি কোন দিনও মন আছে।শশুর বাড়িতে কি ভাববে সে নিয়ে ওর মায়ের কি সব খোঁটা ছিল। তাও মহারানী কখনো কি শুনেছে। সত্যি বলতে কি মেয়েটা সারাদিন না খেয়ে থাকবে এটা আমিও ঠিক মানতে পারি না। অথচ আজ দেখ, সকাল থেকে একটি দানাও মুখে তুললো না, ওর মা মুখ ঝামটা দিয়ে বললো ঢং। তা যাই হোক আমিই গেলাম শেষ মেস চিড়ে আর দই নিয়ে। বলে কিনা বাবা খাবো না, "ওর অমঙ্গল হবে"।
    সবুজ শাড়িটা ওর মা এর দেওয়া। শাড়ি পড়লে মুখটা আমার মত লাগে। ওর মাকে লুকিয়ে সেনকো গোল্ড এর ব্রেসলেট টা দিয়ে এলাম। বললাম এটা আমার স্পেশাল গিফট। হানিমুনে জিন্সের সঙ্গে পরিস। ওর মা শুনলে এক্ষুনি খ্যাকখ্যাক করবে। বলবে কেমন বাবা হে তুমি? মেয়েকে কি সব শেখাও?
    বাদ দিন ওর কথা, আপনি কিন্তু আসবেন। ২৩ তারিখ।

    #গায়ে হলুদ :

    ঘরটা বড্ড বেশি গমগম করছে। আমি ভেবেছিলাম একদম সপ্তাহের শুরুর দিনে গায়েহলুদ, সবাই আসবে কিনা। কিন্তু নাহ:, সবাই এসে নীলুকে আশীর্বাদ করে গেল। ব্যানার্জি গিন্নিও এসেছিল। ওর বাউন্ডুলে ছেলেটা বড্ড নিলুর পেছনে লাগতো। যাক ওসব পুরোনো কথা। মেয়েটাও বড্ড খুশি আজকে। শুধু ওই হতচ্ছাড়া ফোটোগ্রাফারটাকে আমি পরে দেখবো। কোন লজ্জা শরম নেই এই ছোড়াগুলোর। এসময় আর এ বস্ত্রে আবার ছবি তোলে? অন্য সময় হলে নিলুটা বকা খেত, আজ ছেড়ে দিয়েছি। স্কুলের নাটকে ওড়না ছাড়া ছবি তোলার জন্য কি মারটাই না মেরেছিলাম ওকে। যাক ওসব কথা। যাই আবার বিমলাটা সকাল থেকে কান্না জুড়েছে। মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাচ্ছে না বর্ডারে কে জানে। বলি এত কান্নার কি আছে। তবে হ্যাঁ দিলু ময়রাকে আমি কাঁদাবো। এগুলো মিষ্টির সাইজ হল? বিয়েতে আসবেন কিন্তু। আপ্যায়নের ত্রুটি হবে না।

    #বরণ :

    উফফ ...ব্যাপারে বাপ, কি চাপ আর কি চাপ। সায়েন্সের মাস্টার হয়ে সারাজীবন পড়িয়ে এলাম আমাদের মাথা নাকি দুদিকে একসঙ্গে মনোযোগ দিতে পারে না, অথচ এখন দেখুন সব কিছুতেই মাথা দিতেই হচ্ছে। বড় ছেলে তো রেগেই গিয়েছিল। বললো বাবা সকালে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবার পরও কেন এত চাপ নিচ্ছ। ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকে কি করে বোঝাই পৃথিবীর কোন বাবাই এসময় চুপ করে বসে থাকতে পারে না। বড় বৌমা পই পই করে বলে দিয়েছে বাবা অনেক লোকজন আছে, আপনাকে সব দিক দেখতে হবে না। শুধু আপনি খাবার জায়গাটায় থাকবেন। বরযাত্রীদের যাতে খাওয়া দাওয়ার কোন অসুবিধা না হয় সেটা দেখবেন। বাকি আপনার বড় ছেলে দেখে নেবে।
    আমি সব কিছুই দেখতে রাজি শুধু নিলুটাকেই একবারও দেখতে পেলাম না। বিমলাকে বললেই ধ্যতানী, বলে ধুর বুড়ো, মেয়েটার আজকে স্পেশাল দিন। একটু সাজাসাজি করছে। তুমি বাপ হয়ে কোন লজ্জায় ওখানে ঘুরঘুর করবে শুনি।
    আসলে মেয়েটা নতুন কিছু পরলে আগে আমাকেই দেখাত। যাক গে বাদ দিন। আপনি কিন্তু খেয়ে যাবেন। বুঝতেই পারছেন লোকবল কম, একটু নিজের মত চেয়ে নেবেন।

    #সাত পাক / শুভদৃষ্টি / মালা বদল :

    আমি জানতাম নিলুটাকে লাল রঙে ভালোই মানাবে। বাকি আমি আর কিছু দেখিনি। ওগুলো ছেলেছোকরা দের ইয়ার্কির জায়গা। আমরা থাকলে লজ্জা পাবে। ফোটোগ্রাফার ছোড়াকে বলতে হবে একটা বেনারসি পরা সিঙ্গেল ছবি আমাকে যাতে বাধিয়ে দেয়। একটা কথা মনে পড়ে গেল নিলুর জন্য প্রথম জন্মদিনে যে ফ্রক টা কিনেছিলাম ওটা বেনারসি কালারের ছিল। ওই যাই ডাকছে, সম্প্রদান এর সময় হোলো মনে হয়।

    #সম্প্রদান :-

    " যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম। যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব। "
    নাঃ কিছু বলতে বলবেন না। যদি প্রেসারটা বাড়ে। সর্বনাশ হয়ে যাবে। যত অশান্তির মূলে এই বিমলাটা, এ সময় কি কেউ কাঁদে। এ কি বাংলা সিনেমা। বলিহারি বুদ্ধিকে। নিজেরটা ছাড়, নিজের মেয়েটার মনের অবস্থা তো ভাব। যত্তসব। নাও নাও বাবা অনির্বান সিঁদুরটা দাও।

    #বিদায় :-

    বিমলাটার জন্যই খুব চিন্তা। সারাজীবন মেয়েটাকে খোঁটা দিয়ে দিয়ে এখন ন্যাকামি মারাচ্ছে। বলি ওইসব প্যাঁ প গানের ক্যাসেট না চালিয়ে একবার ওষুধের সময়গুলো তো জেনে নিতে পারতো। লোকদেখানো কান্নার অদিখ্যেতাটা কেন বুঝি না।
    আমি ওসব ন্যাকামিতে নেই।

    ওই ওই যে ড্রাইভার ভাই চলো চলো গাড়ি ছাড়, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। বাবা অনির্বান পৌঁছে ফোন কর। তুমিও একটু সামলে থেকে বাবা। মেয়েটা আমার খুব জেদি। যাও বাবা সাবধানে যেও।
    দুর্গা দুর্গা।
    যাঃ, মেয়েটাকেই তো কিছু বললাম না। রায়বাবু বললেন দাদা আপনি কিন্তু খুব স্ট্রং। কাউকে বলি নি আপনাকে চুপিসারে বলছি শুনুন, নিলুর ব্যবহারের চারটে পারফিউম সরিয়ে রেখেছি।

    # F.I.R :-

    থানায় যাবার ইচ্ছে ছিল না আমার। মেয়েটার সন্মান বলে একটা কথা আছে তো নাকি। সব্বাই বললো যেতেই হবে। অনির্বান সকালে ফোন করে বললো নীলিমা সুইসাইড করেছে। ওখানে সবাই বলাবলি করছিল গলায় নাকি V চিহ্নের মত দাগ থাকলে ওটা সুইসাইড নয়। ওর দাদা আবার হাতের আঙ্গুল কটা ভাঙা দেখেছিল। পায়েও নাকি কিসব নীল নীল দাগ ছিল। হতেই পারে। মেয়েটা যা চঞ্চল। আমি শুধু দেখছিলাম নিলুটা কেমন যেন সাদা হয়ে শুয়ে আছে। আমি ভালো করে দেখছিলাম। ঠিক এভাবেই ঘুমত মেয়েটা। শুধু বেরিয়ে পড়া জিবটা আবার সাদা দেখাচ্ছে। মেয়েটা আবার ডায়েটিং করেছিল মনে হয়। উফফ পারি না আজকালকালকার মেয়েগুলোকে। এই তো শরীর, সারাজীবন এনিমিক তাই এবার ডায়েটিং। যাই হোক মা আমার ঘুমিয়ে থাক। ভালো করে ঘুমো। আমি যাই তোর মাকে আবার বলতে হবে। বিমলার দেওয়া সবুজ শাড়িটা পরেই তুমি ঘুমিয়েছে।
    বড়বাবু জোর করলেন।
    সইটা করে দিলাম।
    বললো "বডি" টা বুঝে নেন। সাথে জিনিসপত্র গুলো।

    তখন থেকেই তন্ন তন্ন করে খুঁজছি, লেহাঙ্গা আর ব্রেসলেটটা।
    অনির্বান বলে কিনা ওসব নাকি ছিল না। কি মিথ্যেবাদি বলুন।
    আপনি আবার চাপ নেবেন না,
    আসবেন কিন্তু... সন্ধ্যেবেলায়,
    কেওড়াতলা মহাশশ্বানে
    আসবেন আতিথেয়তার ত্রুটি হবে না।

    #বিসর্জন :-

    এইটুকু মাত্র অস্টিভস্ম পেলাম। তাও শান্তি। রায়বাবু বলছিল ওর মেয়ের তো সেটাও পায়নি।
    সব বাবা কি আর আমার মত ভাগ্যবান হয়।

    #মিল কাকতালীয়
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন