এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • টোপান - ৩

    পাগলা গণেশ লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ জুলাই ২০২৪ | ৪৮৭ বার পঠিত
  • | |
    স্নান করে নিল রেহানা। স্নান করলে বেশ চাঙ্গা লাগে। ঘুম না হলেও, শরীরটা ঝরঝরে লাগে। তাতে কাজ করতে বেশ সুবিধা হয়। ওর বরাবরের অভ্যাস এই সাতসকালে স্নান করা। আগে খুব অসুবিধা হতো। গিজার ছিল না, ঠান্ডা জলে স্নান করতে হতো। এমনি গ্রীষ্মকালে কোনো সমস্যা ছিল না, কিন্তু শীতকালে হাড় পর্যন্ত কেঁপে যেত। মনে হতো, "আজ আর স্নান করব না। "কিন্তু স্নান না করলে ক্লান্তি লাগত।

    রেহানার প্রায় কোনোদিনই রাতে ঘুম হয় না। ঘুমের ওষুধ মুড়ি মুড়কির মতো খেয়েও না। ডাক্তারকে বলেছে, কিন্তু ডাক্তার বলে, "ঘুমের ওষুধে যখন কাজ হচ্ছে না, আপনি ব্রেন মডিফিকেশন করিয়ে নিন। তাতে ঘুমের সমস্যা তো যাবেই, সাথে আপনার ওভারঅল ব্রেন ফাংশানও ইম্প্রুভ করবে। কিন্তু রেহানা ঠিক ভরসা পায় না। যদিও ও আধুনিক, তবুও কোথাও যেন একটা কিন্তু লেগেই থাকে। আসলে ও একটু বেশিই ভীতু। নাহলে আরো হাজার হাজার লোক ব্রেন মডিফিকেশন করাচ্ছে, তাদের কিছু হয়নি তো!ডাক্তাররা বলে নাকি এর সাফল্যের হার প্রায় নিরানব্বই শতাংশ। তা না হলেও পঁচানব্বই-ছিয়ানব্বই শতাংশ তো হবেই!সেটা কি কম?কিন্তু তবু রেহানার ভয় লাগে।

    ও ব্যাগটা তাড়াতাড়ি গুটিয়ে নিল। তারপর খাবার খেতে বসল। বাকি কাজ ও তাড়াহুড়ো করে করলেও খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো ও মোটেও পছন্দ করে না। অনেকসময় এমনও হয়েছে তাড়াতাড়ি করে খেতে হবে বলে ও একবেলা খায়নি। এই সময় ও বসে বসে  আজকের করণীয় কাজগুলো দেখতে থাকে। যদি কাজের চাপ না থাকে, তাহলে বাকি সময়টা বাইরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করে।

    ওর বাড়িটা শহরের মাঝখানে হলেও চারিদিকে অনেকটা জায়গা জুড়ে গাছপালা লাগানো আছে। ফলে বাইরের আওয়াজ একদম আসে না। এমনিতেও শহরে যে খুব আওয়াজ হয় তা নয়। ইলেক্ট্রিক গাড়ির দৌলতে যানবাহনের আওয়াজ প্রায় নেইই। তাছাড়া দোকান বাজার যা আছে তা কাঁচঘেরা, তার ভেতরে কথা বললে বাইরে আওয়াজ আসে না। রাস্তায় লোক চলাচল আছে, কিন্তু তারাও মৃদুস্বরে কথা বলে। তাও খুব প্রয়োজনে। কোনো পাবলিক প্লেসে বেশি কথা বলা অভদ্রতা। তাই একটা মিষ্টি গুঞ্জন ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না।

    রেহানা একবার পৃথিবীতে গিয়েছিল। বেশ সুন্দর কিছু নদী, বন আছে। কিন্তু তা এত কম, যে সেগুলো ছেড়ে বেরিয়ে এলে মনেই হয় না তারা আছে বলে। আর শহরে তো হাওয়া এত দূষিত যে ওর কেমিক্যাল মুখোশ পরেও মনে হচ্ছিল নাক, বুক সব জ্বলে যাচ্ছে। তার উপরে গাড়ির আর লোকের প্রাণান্তকর আওয়াজ। যেন একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে, কে কার থেকে জোরে চেঁচাতে পারে। ওর রাগ, ঘৃণা আর হাসি একসাথে পেয়েছিল। আহাম্মকগুলো যদি চুপ করে যায়, তখন একজন কথা বলল, তারপর একে একে সবাই বলল, সবার কথা শুনতে পাওয়া গেল, কাজ হয়ে গেল। এই যে এত চেঁচামেচি তাড়াহুড়ো এতে দেরিও হচ্ছে, কাজও হচ্ছে না। অথচ ওরা কিছুতেই শুনবে না। ওরা যে কী করে বেঁচে আছে!ও একজনকে জিগ্যেস করেছিল, "তোমরা কী করে বেঁচে আছো এই পরিস্থিতিতে?"
    সে বলেছিল, "এভাবেই তো বেঁচে আছি বোঝা যায়। যদি মানুষ না থাকত তাহলে কি চেঁচামেচি হতো, না দূষণ হতো?"
    রেহানা আর কিছু বলেনি। বলার ছিল না কিছু।

    ওর পরিকল্পনা ছিল মাস খানেক থাকার, কিন্তু এরকম অস্বাস্থ্যকর এবং বিরক্তিকর পরিবেশে খুব কষ্ট করে পনের দিন থাকতে পেরেছিল। তাও থাকত না, যদি প্যাকেজের অর্থ রিফান্ডেবল  হতো। তবুও অর্ধেক ক্যারাব মারা গেল। কিন্তু ক্যারাবের থেকে প্রাণটা দামী। ও নিউ ইয়র্ক থেকে সোজা গিয়েছিল কেপ ক্যানভেরাল। সেখান থেকে টোপান। এখানে এসে বিশুদ্ধ হওয়ায় নিশ্বাস নিয়ে বেঁচেছিল। ও বুঝতে পেরেছিল কেন টেরাডাইটরা প্রাণের বাজি নিয়ে টোপানে চলে আসে।

    পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো, ওদের অর্থনীতির সাথে প্রকৃতির ব্যস্ত সম্পর্ক। তাই ওদের অর্থনীতির উন্নতি হলে প্রকৃতির বারোটা বাজে, আর প্রকৃতি বাঁচাতে গেলে অর্থনীতি রসাতলে যায়। অথচ কাজটা যে খুব একটা কঠিন তা নয়। প্রাথমিকভাবে অনেক অর্থ লগ্নি করতে হবে, কিন্তু বছর ত্রিশের মধ্যে তা পুষিয়ে যাবে। কিন্তু ওরা এত অস্থিরচিত্ত এবং ধৈর্যহীন যে কেউ তা করবে না। শুধু একে অপরের উপর দোষারোপ করবে। টোপানের লোকেরা ওদেরই উত্তরসূরী। টোপানের লোকেরা ডাইসন স্ফিয়ার বানাতে চলল আর ওরা এখনো টাইপ ১.৩ সভ্যতা হয়েই রয়ে গেছে। সবচেয়ে আশ্চর্য, ওরা এখনো জীবাশ্ম জ্বালানীর মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এখনো সারা পৃথিবী দেড়শরও বেশি দেশে বিভক্ত। বড়ো দেশগুলো ছোট দেশগুলোকে সবসময় কী করে পিষে মারবে সেই পরিকল্পনায় ব্যস্ত। টোপানে যে টেরাডাইটরা আছে তারা তবু টোপানবাসীদের সংস্পর্শে একটু সভ্য। পৃথিবীর টেরাডাইটরা জঘন্যতম ক্রিচার।

    আজকেও অন্যদিনের মতো ঠিক সময়েই বেরোলো রেহানা। অবশ্য এটা কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যাপার নয়। কেননা এখানে সবাই খুব সময়নিষ্ঠ। ও স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল এস্কেলেটরের জন্য। এখানে বাস, ট্যাক্সির মতো প্রথাগত যানবাহন নেই। তার বদলে আছে উচ্চগতিসম্পন্ন এস্কেলেটর। দূরপাল্লার এস্কেলটরগুলো পাঁচশ থেকে সাতশ কিমি প্রতি ঘন্টা গতিতে চলে। কিছু এস্কেলেটর তো দেড় হাজার কিমি প্রতি ঘন্টা গতিতেও চলে। কিন্তু লোকাল এস্কেলেটরগুলো মোটামুটি একশ থেকে দেড়শ কিমি প্রতি ঘন্টায় চলে। স্ট্যান্ডগুলো প্রতিটি সমান দূরত্বে অবস্থিত। আর স্ট্যান্ড থেকে প্রতিটা স্থাপনা পর্যন্ত আবার এস্কেলেটর আছে। এতে মুখোমুখি বা পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ আপ ও ডাউন দুটো লেন আছে। যেহেতু এস্কেলেটরগুলো ম্যাগলেভ প্রযুক্তিতে চলে, তাই মুভিং পার্টস প্রায় নেই। আর সেজন্যই রক্ষণাবেক্ষণের খরচও প্রায় নেই। ওয়েদারিংয়ের জন্য কিছু সমস্যা হতে পারত। কিন্তু তার জন্য এস্কেলেটরগুলো ২৯ তম গ্রেডের কাঁচ দিয়ে ঢাকা। এগুলো এফ ফাইভ ক্যাটাগরির টর্নেডো এবং ম্যাগনিটিউড এইটের ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। তাতে খরচ প্রায় শূন্যের কোটায় পৌঁছে গেছে। তবুও বছরে তিনদিন বন্ধ থাকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। এই এস্কেলেটর চালু করার পর থেকে প্রায় এক হাজার বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে শুধু দু বার দুর্ঘটনা ঘটেছিল। প্রতিবার মাত্র একজন মারা গিয়েছিল। তাও হতো না, যদি ওরা সিটে বসে থাকত। সবচেয়ে যেটা রেহানার ভালো লাগে, সেটা হল নিঃশব্দতা। বোঝাই যায় না এস্কেলেটর চলছে। এমনকি ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শব্দটুকুও শোনা যায়। আর পৃথিবীতে, বাপরে!

    ওর অফিস গিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেজে গেল দশটা। সাড়ে দশটা থেকে অফিস আওয়ার শুরু। ও ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে মেশিন থেকে এক কাপ কফি নিল। ক্লান্তিটাকে তাড়ানো দরকার। নাহলে কিচ্ছু কাজ করতে পারবে না। এই কাজটা অবশ্য তাকে প্রায় প্রতিদিনই করতে হয়। ঘুমালে ঘুম ধরে না, অথচ সারাদিন ঘুম ঘুম পায়। তার সাথে ক্লান্তি তো আছেই। কফিটা খেলে একটু চনমনে লাগে। ও কফিটা নিয়ে একটা টেবিলে গিয়ের বসল। আজকে রমেন আসেনি এখনো। এমন তো হওয়ার কথা নয়। ওর সময়নিষ্ঠতা প্রবাদপ্রতিম। রেহানা একটু চিন্তায় পড়ে গেল। কফিটা খেতে খেতেই মনে মনে ডায়াল করল রমেনের নাম্বার। রিং হচ্ছে। অনেকক্ষণ রিং হয়ে হয়ে কেটে গেল। ওপাশ থেকে যান্ত্রিক স্বর শোনা গেল, "আপনি যাকে কল করছেন তিনি উত্তর দিচ্ছেন না। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন। "
    রেহানা ফোনটা কেটে দিল। কি হলো ছেলেটার!কোনো বিপদ হয়নি তো?ওর মনে হল, "রমেনের সাথে তো ঋষভ আসে, ওকে ফোন করলে কেমন হয়?"
    ও ঋষভকে ফোন লাগাল। একবার রিং হলো, কেটে দিল। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করল। এবারে ঋষভ ফোন ধরল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, "রেহানা সর্বনাশ হয়ে গেছে। রমেনকে টেরাডাইটরা গুলি করেছে। "
    রেহানা  কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। খানিকক্ষণ কোনো কথা বলতে পারল না। একটু পরে আস্তে আস্তে জিগ্যেস করল, "ও কোথায় এখন?"এত আস্তে বলল যে ঋষভ শুনতেই পেল না প্রথমে। সে জিগ্যেস করল, "কী বলছিস?"
    রেহানা এবার একটু জোর গলায় বলল, "ও কোথায় আছে এখন?"
    ঋষভ - "কিউরিনে। "
    রেহানা - "আমি যাচ্ছি। "
    ও বসের কেবিনে গিয়ে দেখে বস সেইমাত্র ঢুকছে। সে কোনো ভূমিকা না করেই বলল, "স্যার, রমেনকে টেরাডাইটরা গুলি করেছে। কিউরিনে ভর্তি আছে। আমি যাচ্ছি, আমার ছুটিটা কেটে নেবেন। "বলেই ও বেরিয়ে আসছিল। বস পেছন থেকে ডাকলেন, "এই শোনো, শোনো। দাঁড়াও, আমিও যাচ্ছি। "
    বলেই বস জিনিসপত্র সব অফিসে রেখে বেরিয়ে এলেন তক্ষুনি।

    হাসপাতালে গিয়ে দেখে করিডরে ঋষভ দাঁড়িয়ে আছে। রেহানা দৌড়ে গিয়ে ঋষভকে বলল, "ও কোথায়?"
    ঋষভ আঙ্গুল বাড়িয়ে দেখিয়ে দিল অপারেশন থিয়েটারের দিকে। রেহানা কোনোমতে কান্না চেপে দাঁড়িয়ে রইল। "ও কি দোষ করেছিল!ও তো কোনোদিন কারো সাথে ঝগড়া পর্যন্ত করেনি। "
    এমন সময় কাঁধে কার একটা হাতের ছোঁয়া অনুভব করে ও ঘুরে দেখল, ঋষভ।
    ও আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না। ঋষভের বুকে মাথা রেখে হুহু করে কেঁদে ফেলল। ঋষভ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

    রেহানা, রমেন আর ঋষভ। ওরা বলতে গেলে মানিকজোড়। অবশ্য তিনজনকে যদি মানিকজোড় বলা যায়। ওদের বাড়ি শশাঙ্কপুরীতেই। একই পাড়ায় ঘর। ছোট থেকে একই স্কুলে পড়া। তিনজনেই স্নাতক হয়েছে টেকনোভার্সিটি থেকে। সেখান থেকেই স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরেট। তারপর রেহানা প্রথমে চাকরি পায় এই কোম্পানিতে, মানে পিটিকেতে। রমেন আর ঋষভ আলাদা আলাদা কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিল। কিন্তু দু-চার বছরের ব্যবধানে জোগাড়যন্তর করে এই কোম্পানিতে চলে আসে। কলেজে পড়াকালীন একদিন হঠাৎ রমেন রেহানাকে প্রস্তাব দেয়। রেহানা হকচকিয়ে গিয়েছিল। রমেনকে সে ভালোবাসে, খুবই ভালোবাসে। কিন্তু তা বলে প্রেম করার কথা তার কোনোদিনই মনে হয়নি। সে কিছু বলে না। সেদিন ক্লাসও করে না বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে এসে ভেবে দেখে রমেন যে খারাপ ছেলে তা তো নয়। বরঞ্চ খুবই ভালো। তাছাড়া ও রমেনকে ছোটবেলা থেকেই চেনে। ওর ভালো, খারাপ সব দিকগুলোই ও জানে। অন্য কোনো ছেলের কথা ভাবতেই ওর মনে হল, সে ছেলে কেমন হবে তার ঠিক নেই। চিনতে চিনতে হয়তো বছর পাঁচেক লেগে যাবে। যখন চিনতে পারবে, তখন যে সে ভালোই হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তার থেকে এই ভালো।

    ঘন্টাখানেকের মধ্যে প্রায় সব সহকর্মীরা এসে গেল। সবার মুখে দুশ্চিন্তা। খবর পেয়ে এর মধ্যে রমেনের বাবা, মা, দাদা, বৌদি সবাই চলে এসেছেন। রমেনের মা তো কেঁদে কেঁদে অস্থির। রেহানা তার মাথা কাঁধে নিয়ে বসে আছে। রমেনের বাবা অস্থির পায়ে পায়চারি করছেন। দাদাও উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘন্টা চারেক পরে ডাক্তার বেরিয়ে এলেন। রমেনের দাদা ও বাবা গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালেন। ডাক্তার বললেন, "আমরা গুলি বের করে দিয়েছি। ভয়ের কিছু নেই। কোমরের হাড়ে গিয়ে বিঁধেছিল। টেমিন বড় কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। রক্তক্ষয় একটু হয়েছে, তাছাড়া শকটাও আছে। তাই একটু দুর্বল। এক-দুদিন একটু বিশ্রাম করলেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে হাঁটাচলা করতে সময় লাগবে। "
    বলেই তিনি চলে গেলেন। সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। একে একে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল। বলে গেল অফিস শেষ হলে আসবে। এখন শুধু রেহানা, রমেনের বাবা, মা, দাদা, বৌদি আর ঋষভ। ওরা অপেক্ষা করতে লাগল। ডাক্তার বলেছেন একটু পড়ে দেখা করা যাবে। রমেনের মা একটু সুস্থ হয়েছে। দাদা একটা জলের বোতল এনে দিলেন। মা খেলেন, খেয়ে ফেরত দিলেন।

    আধঘন্টা পরে নার্স এসে বলল, "এবার আপনারা দেখা করতে পারেন। "সবাই গিয়ে ঢুকল কেবিনে। রমেনের মা গিয়েই কাঁদতে আরম্ভ করে দিলেন। রমেনের বাবা পরেশ তাঁকে গিয়ে গিয়ে ধরলেন। "কেঁদো না। কিচ্ছু হয়নি তো। "
    পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেল।
    রমেনের দাদা সৌমেন বললেন-"কেমন আছিস ভাই?"
    রমেন অনেক কষ্টে হাসি ফুটিয়ে বলল-"ভালোই রে। তবে খুব দুর্বল লাগছে। ব্যাথা যন্ত্রণা কিছু বুঝতে পারছি না, পেইনকিলার দিয়েছে বলে। "
    সৌমেন পরিবেশটা হালকা করার জন্য বলল, "ও কিছু হবে না। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে দৌড়াতে পারবি। "
    রমেন হাসার। চেষ্টা করল।
    বেশ খানিকক্ষণ ওরা রইল। মিনিট পনের পরে নার্স এসে বলল, "রোগীকে আর বিরক্ত করা চলবে না। ওর এবার বিশ্রামের দরকার। আপনারা এবার যান। আবার পরে ভিজিটিং আওয়ারে আসবেন। "
    ওরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেরিয়ে গেল।
    রেহানাও ওদের সঙ্গেই গেল।

    রাস্তায় যেতে যেতে কোনো কথা হলো না। সবাই গম্ভীর। রেহানা রমেনের মা সুমনা দেবীর কাছে বসেছিল। সুমনাদেবীর মাথাটা রেহানার কাঁধে। সে ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। মিনিট পনেরর মধ্যে ওরা ঘরে পৌঁছে গেল। রেহানা চলে আসতে চাইছিল। কিন্তু ওরা কিছুতেই আস্তে দিলেন না। রেহানা রমেনের কামরাটায় গিয়ে ঢুকল। এই ঘরটার প্রতিটা জিনিসে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার ছোঁয়া আছে। সে রোমাঞ্চিত হল, সাথে কান্নার একটা দমক এসে গেল তার গলায়। মানুষটা এখন হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছে। মনে হচ্ছে গিয়ে তার শিয়রে সারাক্ষণ বসে থাকে। কিন্তু তা নাকি নিয়মবহির্ভূত। খাকের নিয়ম, ওরা পারবে তার মতো যত্ন করতে?ও হুহু করে কেঁদে ফেলে। এমন সময় সুমনাদেবী ঘরে ঢুকে এলেন। তাকে দেখে রেহানা তাড়াতাড়ি চোখ মুছতে গেল। সুমনা দেবী বলতে যাচ্ছিলেন, "রেহানা, খাবি আয়।"

    কিন্তু সে কথা মাঝপথেই থেমে গেল। তিনি গিয়ে তার পাশটিতে বসলেন। বললেন, "তুই কাঁদছিলি পাগলী?রমেনের তো কিছু হয়নি। ডাক্তার তো বলেছে ঠিক হয়ে গেছে। ধুর, একদম কাঁদিস না। "বলে তার মাথাটা নিজের বুকে নিলেন। রেহানার কান্নার বেগ এবার আরো বাড়ল। সুমনাদেবীর বুক রেহানার কান্নার জলে ভিজে গেল। তিনি তাকে থামালেন না, শুধু মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। তাঁর নিজের গলাতেও কান্নার আভাস, চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.245.152 | ২১ জুলাই ২০২৪ ২০:৪৫535114
  • পাগলা গণেশ,
    একটা প্রশ্ন আছে। এই টোপান সিরিজ আর রমস্তনকি সিরিজ দুটোই যে একই প্রেক্ষাপট নিয়ে সেটা বুঝতে পারছি। এবার টোপান সিরিজটা পড়তে আমার এখন সেরকম আগ্রহ হচ্ছেনা। তো প্রশ্ন হলো এইটা না পড়লে রমস্তনকি সিরিজে কিছু জায়গা বোঝার অসুবিধা হবে এমন ব্যাপার আছে কী? মানে যেমন MCU এর সিনেমাগুলোয় হয় -- আয়রনম্যান না দেখলে অ্যাভেঞ্জার্স বোঝা যাবেনা, ডক্টর স্ট্রেঞ্জ না দেখলে স্পাইডারম্যান বোঝা যাবেনা, এইরকম?
  • পাগলা গণেশ | ২১ জুলাই ২০২৪ ২১:১০535115
  • আমি খুবই দুঃখিত।আসলে ব্যাপারটা ঠিক তাই।
    আমি নিজেও বুঝতে পারছি টোপান সিরিজটা খুব একটা ভালো হচ্ছেনা।তার মধ্যে এটা তো একেবারে জঘন্য হয়েছে।
    আমি এর পরের পর্বগুলো আরো যত্ন নিয়ে লেখার চেষ্টা করব।যাতে আপনার আগ্রহ ধরে রাখতে অসুবিধা না হয়।
  • পাগলা গণেশ | ২১ জুলাই ২০২৪ ২১:১০535116
  • রমস্তনকি সিরিজটা ভালো লাগছে তো?
  • kk | 172.58.245.152 | ২১ জুলাই ২০২৪ ২১:২৮535119
  • না দেখুন ব্যাপারটা ঠিক পর্বগুলো যত্ন নিয়ে লেখার বা না লেখার জন্য নয়। একই প্রেক্ষাপটে দুটো সিরিজ একসাথে পড়তে ঠিক ইচ্ছে করছেনা। এটা আমার ব্যক্তিগত মনে হওয়ার কথা বলছি। সবাইকার এমনিই মনে হবে তা নাও হতে পারে। রমস্তনকি সিরিজ ভালো লাগছে কিনা জানতে চেয়েছেন। সত্যি কথা হলো, আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারছিনা কেমন লাগছে। আরো এগোক লেখাটা তখন হয়তো ঠিকমত বলতে পারবো। তবে এখন টোপান সিরিজ পড়া হবেনা আমার। তাতে যদি অন্যটা বোঝায় ফাঁক থাকে তো কী আর করা! আসলে একটা দিনের মধ্যে হাজার রকম কাজ থাকে, নানান কিছু পড়ারও থাকে, সেখানে একসঙ্গে একই ব্যাকগ্রাউন্ডের দুটো সিরিজ পড়তে পারছিনা। তবে আপনি লিখুন আপনার মত। অন্য কেউ পড়ছেন হয়তো।
  • পাগলা গণেশ | ২১ জুলাই ২০২৪ ২১:৫৩535123
  • ঠিক আছে।চাপ নেই।
    আমি তবু আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
    আপনি নাহয় পরে পড়ে নেবেন।
    অন্তর্জালে তো পড়েই রইল।
  • kk | 172.58.245.152 | ২১ জুলাই ২০২৪ ২২:১৮535126
  • হ্যাঁ আমি পরে পড়ে নেবো। আপনি লিখুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন