এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পরীক্ষাটরীক্ষা

    Suvasri Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ আগস্ট ২০২৪ | ৩৩২ বার পঠিত
  • সারা জীবন আমরা প্রত্যেকেই অসংখ্য পরীক্ষা দিই। চলার পথে একেকটা বাধা আসে, সেই বাধাকে হারিয়ে দেওয়া অবশ্যই পরীক্ষা ছাড়া কিছু নয়। তার ওপর একটা বাধা এল আর সেটার সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়ে বাকি জীবনটা আনন্দে কাটিয়ে দিলাম, এমন তো নয়। একটার পর একটা বাধা আসে, পরপর অসুবিধা আর সমস্যা। কোনোটা বড় মাপের, কোনোটা ছোট । প্রতিটি বাধার সঙ্গে লড়তে হয়। বারবার পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষার এই ধারাবাহিকতা জীবনের মস্ত বড় পরিপ্রেক্ষিতে সব সময় সত্যি। সুখের বিষয়, স্কুল কলেজে আমাদের পরীক্ষা দেওয়ার পালা এক দিন শেষ হয়ে যায়। 

    বইপত্র পড়ে খাতায় সেই পড়া নামিয়ে দেওয়া ও নম্বর পাওয়া, এই যে পরীক্ষা.. এটাও কিন্তু কম ভীতিপ্রদ নয়। অবাক করা ব্যাপার হ'ল - পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে এই পরিণত বয়সেও আমি বেশ ভীতিপ্রদ সব স্বপ্ন দেখি যদিও পরীক্ষাভীতি আমার ছিল না। তার মানে এই নয় যে আমি দুর্দান্ত ভালো ছাত্রী ছিলাম। ওই এক রকম ছিলাম আর কী! তবে অঙ্কে কেমন ছিলাম সে ব্যাপারে মুখ না খোলাই ভালো। তা সত্বেও কখনো কোনো পরীক্ষার আগে ভয় পেতাম না। পাঁচ পাওয়ার মতন প্রস্তুতি হয়ে থাকুক বা পঞ্চাশ-পঁচাত্তর পাওয়ার মতো, দিব্যি গটগট করে পরীক্ষা দিতে চলে যেতাম। অন্য দিকে আমার বোন মামন পরীক্ষার আগে মা-কে আঁকড়ে ধরে থাকত। ঘুমোতে দিত না। 

    আমাদের স্কুলে সপ্তাহে সপ্তাহে পরীক্ষা হ'ত। সাপ্তাহিক, ষাণ্মাসিক বা বাৎসরিক কোনো পরীক্ষার আগেই অামি ঘাবড়ে যেতাম না। দিব্যি একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব ছিল। এখনো বাধাঅসুবিধার সামনে সেই ভাবটা আছে বলেই তো মনে হয় যদিও নিজের দ্বারা নিজের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন সম্ভব নয়। 

    যাক গে যে কথা বলছিলাম। মাঝেমাঝে স্বপ্ন দেখি সামনেই মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা অথচ একটাও অঙ্ক জানি না। কী করে পরীক্ষা দেব, সাদা খাতা জমা দিতে হ'বে, এমন একটা ভয় লাগে। তারপর স্বপ্ন ভেঙে যায়। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই, ওটা স্বপ্ন ছিল। ঘুমকে ধন্যবাদ দিই ভেঙে যাওয়ার জন্য নাহলে তো ওই অঙ্ক আতঙ্কেই আরো অনেকক্ষণ থাকতে হ'ত। 

    কিছু দিন আগে একটা স্বপ্ন দেখলাম। স্কুলে সাপ্তাহিক পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। অামি দেরি করে ঢুকেছি এবং ইউনিফর্ম পরে যাইনি। মস্ত হলে বাকি মেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছি। কেউ একজন এসে আমার হাত ধরে বললেন, বাইরে দাঁড়িয়ে কেন? পরীক্ষা তোমাকে দিতেই হ'বে। আমি সমানে বলার চেষ্টা করছি, "আমি কিচ্ছু পড়ে আসিনি,  কিছু লিখতে পারব না ৷ তাছাড়া আমার ইউনিফর্মটাও ঠিক নেই।" যিনি পরীক্ষা দিতে বলছেন, তিনি কে বুঝতে পারছি না কিন্তু তিনি ভীষণভাবে আছেন। তিনি খুব কঠোর স্বভাবের তাও বুঝতে পারছি । আমি পরীক্ষার হলে কিছুতেই ঢুকব না (আসলে ওটা অনেকটা আমাদের নবম শ্রেণির কক্ষের মতো কিন্তু ঢের বেশি লন্বা) কিন্তু যিনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রয়েছেন তিনি সমানে বলে চলেছেন - পরীক্ষা তোমাকে দিতেই হবে।  কী ভয়, কী ভয় লাগছে আমার!  স্বপ্নটা ভেঙে যাওয়ার পরও তার রেশ ছিল সারাটা দিন। 

    পরীক্ষা আতঙ্ক নিয়ে অনেকেই স্বপ্ন দেখেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো স্কুলে পরীক্ষার স্বপ্ন। কোথাও পড়েছিলাম, স্কুলে আমরা জীবনে প্রথম পরীক্ষায় বসি যার ফলাফল আমাদের সেল্ফ এস্টিমের সঙ্গে জড়িত। কম নম্বর পেলে সেল্ফ এস্টিম কমে যাওয়ার আতঙ্ক শিশু বয়স থেকে আমাদের মনে ঢুকে যায়। সেই আতঙ্ক অবচেতন মনে একেবারে গেড়ে বসে থাকে। পরীক্ষা নিয়ে এমনধারা স্বপ্ন সেই আতঙ্কেরই প্রতিফলন। 

    জীবন বহুমাত্রিক। একেক সময় তার একেক রং। তবে কখনো কখনো তার কর্কশ রূপটাই বেশি করে চোখে পড়ে। ব্যাপার হ'ল- সমস্যা ও অসুবিধার সামনে জড়পদার্থ না হয়ে আমরা সবাই লড়ে যাচ্ছি। নানা মাত্রায় সাফল্য, ব্যর্থতা সবই আসছে। যখন অামরা বাধার সঙ্গে লড়াই করে জিতে যাই তখন অদৃশ্য সেই পরীক্ষক নিজেকে পরাজিত ভাবেন কী? মনে হয় না। তাহলে পরের বাধাটা আমাদের সামনে রাখার উৎসাহ তাঁর থাকত না। তিনি নির্বিকার। আমাদের খেলান। আমরা ভাবি পরীক্ষার পর দিচ্ছি । 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কৌতূহলী | 115.187.40.100 | ০৪ আগস্ট ২০২৪ ১৫:০৮535706
  • এই অভিজ্ঞতা আমারও। ছোটবেলা থেকেই পরীক্ষাভীতিতে ভুগে এরকম স্বপ্ন আমিও দেখি। আর একধরনের স্বপ্ন দেখি ,একটা অচেনা ট্রেনে উঠে পড়েছি ,কোন স্টেশনে নামব কিছুই জানি না শুধু দেখছি ট্রেনটা একের পর এক স্টেশন ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে
  • Suvasri Roy | ০৪ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৫০535714
  • @কৌতূহলী
    প্রতিক্রিয়া জানাবার জন্য ধন্যবাদ । এ কথা ঠিক যে আমাদের মনের ভেতরে অনেক ভয় ঢুকে গভীর শেকড় ছড়িয়ে দেয়। তবে স্কুলটুলে পড়ার সময় অাপাতদৃষ্টিতে আমার পরীক্ষাভীতি ছিল না। তা সত্বেও অবচেতন মনে একটা আতঙ্ক নিশ্চয় সেই ছেলেবেলা থেকেই ঢুকে রয়েছে । সেই আতঙ্ক কখনো কখনো স্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে বৈকী। 
    শুভেচ্ছা।
  • চিত্তরঞ্জন হীরা। | 2409:4060:2e95:b832:903e:dba5:1d3e:9705 | ০৯ আগস্ট ২০২৪ ০৭:৪২536073
  • এই লেখাটি একেবারে অন্যরকম হয়েছে। খুব সুন্দর শেখ।
  • Suvasri Roy | ০৯ আগস্ট ২০২৪ ০৯:৩০536077
  • @চিত্তরঞ্জন হীরা
    পাঠপ্রতিক্রিয়া পেয়ে ভালো লাগছে। শুভেচ্ছা। 
     
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১০ আগস্ট ২০২৪ ০১:০৩536107
  • আপনার লেখা নিয়মিত পড়ি। মন্তব্য করতে খানিকটা দ্বিধায় ছিলাম। আজ দ্বিধা কাটিয়ে উঠলাম। 
     
    কোন কোন লেখকের লেখা প্রথমবার পড়ার সময় থেকেই আমার খুব পছন্দ হয়ে যায়‌। আবার কোন কোন লেখকের লেখায় মন বসতে কিছুটা সময় লাগে, বেশ কিছু লেখা পড়তে লাগে। আপনার লেখায় মন বসাতে সময় লেগেছে। আপনার লেখা পড়ে মনে হয় যেন এক এক টানে লিখে চলেছেন। ক‍্যনভাসে ব্রাশের স্ট্রোক পড়ছে, অবয়ব, দৃশ্য, ফুটে উঠছে, পরের ক‍্যনভাস, স্ট্রোক - অমসৃণ, ঐরকমই ছেড়ে রাখা। 
     
    মন বসে যাওয়ার পর এই ছবিগুলোর টানটা অনুভবে আসে।
     
    পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
  • Suvasri Roy | ১০ আগস্ট ২০২৪ ১৩:০৯536129
  • @অমিতাভ চক্রবর্তী 
    মতামত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। অকপট পাঠপ্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। একজন কলমচি হিসেবে এমনটাই চাই । 
    শুভেচ্ছা রইল। 
  • শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় | 2402:3a80:1c8a:2e80:6ca9:ecdc:ee20:c1d4 | ২০ আগস্ট ২০২৪ ১১:৫৭536685
  • এই লেখায় বিশেষ কিচ্ছু পেলাম না।
    বিশেষ কোন দিক দেখাতে পারেননি শুভশ্রী।
  • Suvasri Roy | ২০ আগস্ট ২০২৪ ১২:২৪536687
  • @শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
    ভালো বলেছেন ৷ যা মনে হয় সেটাই বলা উচিত। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন