এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  রাজনীতি

  • হোয়াটস‌অ্যাপে পেলাম। বাংলাদেশ নিয়ে আর একটি বিশ্লেষণ

    পলিটিশিয়ান
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৬ আগস্ট ২০২৪ | ৪০৭ বার পঠিত
  • বাংলাদেশের আন্দোলনকে দুম করে জামাতি দাগিয়ে দেয়া, অথবা অসাধারণ কোন বিপ্লব সাধিত হয়ে গেছে বলে নৃত্য করা দুটোই অবিবেচকের কাজ। পশ্চিমবাংলায় এই দুই প্রকার মানুষের সংখ্যাই দুঃখজনক ভাবে বেশি। 

    হাসিনা সরকারের দুর্নীতি, শেখ হাসিনার মুখের লাগামহীনতা, ভোট চুরি মানুষকে ক্ষিপ্ত করার পটভূমি তৈরি করেছে। গণআন্দোলন হওয়া স্বাভাবিক। সাধারণ ছাত্রছাত্রী জনগণের অংশটিকে বাদ দিলে তিন ধরণের রাজনৈতিক রং এই আন্দোলনে দেখা যায়।  ১> জামাত-বিএনপি ২> ব্যানারহীন বাম লেবাস পরা সিভিল সোসাইটি, যারা সম্ভবত মার্কিন মদতপুষ্ট। এই বাংলার ফেসবুকে ব্যানারহীন বাম লেবাসের জনপ্রিয় মুখগুলি এদের সাথে যোগাযোগ রাখে। ৩> সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়ন সহ বামপন্থী কমিউনিস্ট শক্তি। 

    এবার আসি বাংলাদেশের জনগণের তথাকথিত ভারত বিরোধিতায়। আমি মনে করি পরের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে নিজের দিকে আঙ্গুল তোলা প্রয়োজন। ভারতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জল চুক্তি নিয়ে ক্রমাগত টাল বাহানা বিদ্যমান। তিস্তার জল চুক্তি, ফরাক্কার জল, ব্রহ্মপুত্রের জল - ভারত একটাও সমস্যা বাংলাদেশের সাথে মেটায় নি। মমতা এবং নরেন মোদী পরস্পরের কোর্টে বল ঠেলে চলেছেন। এর সাথে যুক্ত হয়েছে অনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে তৈরি হওয়া আদানির পাওয়ার প্ল্যান্ট। বাংলাদেশের চাষ বাস এবং পরিবেশের ক্ষতি, এবং মানুষের তজ্জনিত ক্ষোভকে আমল না দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বারে বারে রেল ট্র্যানজিট নিতে গেলে তার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠাও স্বাভাবিক। আপনাকে প্রাপ্য সুবিধা না দিয়ে আপনার  থেকে বারে বারে কেউ সুবিধা আদায় করে নিলে আপনার কী রকম লাগবে? মনে রাখা  উচিৎ গত দশ বছরে মোদী সরকারের আমলে চীন, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, মায়ানমার প্রতিটি প্রতিবেশী দেশের সাথে ভারতের সম্পর্কও তলানিতে। এর সাথে যোগ করুন গত ১০ বছরে ভারতের সংখ্যালঘুর উপর সংগঠিত অগণিত অপরাধ, হিন্দুত্ববাদী অপশাসন। 

    এবার আসি পশ্চিমা টাকায় চলা রঙিন বিপ্লবের কারবারে। মতিউর রহমানকে চেনেন? ইনি বাংলাদেশের বিখ্যাত সংবাদপত্র প্রথম আলোর সম্পাদক। শহিদুল আলমের নাম শুনেছেন? ইনি মার্কিন পত্রিকা টাইমসে পার্সন অফ দ্য ইয়ার। অথচ ইয়াসের আরাফতের মত মাথায় ফেট্টি বেঁধে ঘুরে বেড়ান। ফরহাদ মাজহারকে চেনেন? বাংলাদেশে উনি উবিনিগ (UBINIG) বলে একটা সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর,  লিঙ্কডইনে গেলে দেখতে পাবেন ইন্টারেস্টে  ইউএসএইড এবং ইউকেএইড এর নাম দেয়া আছে। ফরহাদ মাজহারের কার্যকলাপে জামাত শিবিরের সাথে যোগ স্পষ্ট।  এই তিনজন ভিন্ন ব্যক্তি - কিন্তু ভিন্ন কলেবরে একই মার্কিন ইন্টারেস্টের ধারক। এদের মুখ্য উদ্দেশ্য কী? মার্কিন ইন্টারেস্টে অরাজনীতির রাজনীতিকে প্রোমোট করা।  গত শতকের মাঝামাঝি থেকে আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলি দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বিপ্লব রপ্তানি করতে থাকে। গত শতকের উদ্দেশ্য ছিল প্রধানত কমিউনিস্টদের প্রভাব খর্ব করা। তবে মার্কিন স্বার্থের যেকোন বিরোধীকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অরাজনীতির রাজনীতি রপ্তানি করা হত। এই শতকেও আরব বসন্তে লিবিয়ার গদ্দাফি, বা সিরিয়ার আসাদদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তার নিদর্শন। গদ্দাফি বা আসাদদের বিরুদ্ধেও চূড়ান্ত স্বৈরাচারের অভিযোগ ছিল। কিন্তু দেশগুলির বর্তমান হাল ঠিক কীরকম? মনে রাখতে হবে আমেরিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও সমর্থন করেনি। বর্তমানে বাংলাদেশ সহ ভারতের নর্থ ইস্ট জুড়ে একটি মার্কিন প্রভাবাধীন এলাকা গঠন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অঘোষিত এজেন্ডা। 

    শুনে বিস্মিত হবেন, ফরহাদ মজহার সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা তৃণমূলের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গে এসে ঘুরে গেছেন। ব্রাত্য বসু, এবং রাম্বাম তত্ত্ব তোলা একদল স্বাধীন বামের সাথে তাঁর বিগলিত হাসির নমুনার ছবি ইন্টারনেটে সহজলব্ধ। কিন্তু এদেশের সামাজিক মাধ্যমে বিশেষ প্রচার হয়নি। আবার শহিদুলদের সাথে দহরম মহরম ফেসবুকে জনপ্রিয় এক পশ্চিমবঙ্গীয় সাংবাদিকের। এঁরা সোশ্যাল ডেমক্র্যাট গোছের কথা বলেন, কিন্তু প্রকাশ্য চাহিদা রঙিন বিপ্লব। অপ্রকাশ্য চাহিদাটি ফরহাদ মাজহারের সাথে জামাত শিবিরের ঘনিষ্ঠতায় স্পষ্ট।  

    যাই হোক, ​আন্দোলনটা মূলত সরকারের বিরুদ্ধে, লুঠ পাট দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সিপিবি অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টি অফ বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থক, তাদের ছাত্র ইউনিয়ন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী। তাহলে সিপিবি'র অফিসে বিএনপি-জামাতের  হামলার কারণ কী? সিপিবি'র কর্মীদের কুপানোর কারণ কী? কারণ এইটাই যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সহ আন্দোলনের মৌলবাদ বিরোধী অংশটি  আন্দোলনের মধ্যেকার জামাতি এবং মার্কিন মদতপুষ্ট সিভিল সোসাইটির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান রাখছে। সম্প্রতি নিহত মীর মুগ্ধ প্রকাশ্য ফেসবুক পোস্টে জামাত শিবিরের আন্দোলন সংশ্লিষ্টতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান রেখেছিলেন। ফলে আন্দোলন সরকার বিরোধী হলেও আন্দোলনের মৌলবাদ বিরোধী অংশটিও মৌলবাদী হামলার শিকার হবেন। ৯ এর দশকে কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট উদীচীর উপর হামলা থেকে শুরু করে ২০০১ থেকে ২০১০ এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ মৌলবাদী হামলার শিকার হয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি।

    সুতরাং আন্দোলনকে সম্পূর্ণ ভাবে জামাতি হিসেবে দাগিয়ে দেয়া যেমন সত্যের অপলাপ, তেমনি আন্দোলনের ভেতরকার মৌলবাদী-মৌলবাদ বিরোধী দ্বন্দ্বকে  অস্বীকার করাও অনৃত ভাষণ। স্বৈরাচার এবং দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে জয়লাভের জন্য বাংলাদেশের  জনতাকে অভিবাদন, কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট নেতৃত্ব ছাড়া আন্দোলন যদি ক্ষমতা দখল করতে যায় তবে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে বাধ্য। এর সুযোগ সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিস্টরা নেবেই। আশা রাখব পরবর্তী অধ্যায়ে সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিস্টদের  পর্যুদস্ত করার মত মৌলবাদ বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে উঠে আসবেন। শুভেচ্ছা বাংলাদেশ।

    অনির্বাণ ভাই এর লেখা, যাদের ট্যাগ করলাম, একটু আলোচনা করবেন প্লিজ।

    - সোমরাজ সুরের পাতা থেকে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ০৭ আগস্ট ২০২৪ ০৯:০৭743533
  • গুরুত্বপূর্ণ লেখা। 
    প্রশ্ন হল -- এই নৈরাজ্যের মধ্যে জামাতি বিরোধী অসাম্প্রদায়িক শক্তির কণ্ঠস্বর কতটুকু শোনা যাচ্ছে? কীভাবে ধর্মান্ধতা, আর্থিক শক্তির অশুভ আঁতাতের মোকাবিলা করবে?
     
    আমরা শুধু আশা করতে পারি।  আর নিজেদের ঘর ঠিক রাখতে পারি।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:d615:c2a7:37ce:75ee | ০৭ আগস্ট ২০২৪ ২০:৩৬743538
  • অসাম্প্রদায়িক শক্তি সংগঠিত নয়। জামাত সংগঠিত, ওয়েল ফান্ডেড এভং ফ্যানাটিক।
     
    এবারে বুখুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন