এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ক্রমবর্দ্ধমান আর্থিক বৈষম্যের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা ঃ স্যাম পিত্রোদা 

    Sandipan Majumder লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬৭ বার পঠিত
  • আর্থিক বৈষম্যের মোকাবিলা করা একটা গুরুতর বৈশ্বিক সমস্যা। আরো সাম্যময় সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এর জন্য দরকার একটি জটিল এবং বহুমুখী উদ্যোগ যাতে বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজির পরীক্ষা, প্রচেষ্টা, এবং রূপায়ণের মাধ্যামে একটি উপযুক্ত রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায়।

    প্রথম, ক্রমবর্দ্ধমান কর (Progressive Tax)। এই করব্যবস্থার প্রয়োজন যাতে সম্পন্নদের থেকে সম্পদ প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে পুনর্বন্টন করা যায়। এটা ধনীদের টাকা চুরি করে দরিদ্রদের দেওয়া নয়। এর মানে হল করের টাকা ব্যবহার করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দক্ষতাবৃদ্ধি এবং পরিবেশের উন্নতিসাধন, সঙ্গে কর্মসংস্থান।

    দ্বিতীয়, শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি। উৎকৃষ্ট শিক্ষা পাওয়ার সুযোগ, দক্ষতার প্রশিক্ষণ এবং জীবনভর শিক্ষার সুযোগ যাতে নিয়োগযোগ্যতা এবং উপার্জন বাড়াতে তা সাহায্য করে।

    তৃতীয়, ন্যায়সঙ্গত শ্রম আইন। শ্রম অধিকার, ন্যূনতম মজুরি, নিরাপত্তার নিশ্চিতি , শিশু শ্রম দূরীকরণ, শোষণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা আর যৌথ দর কষাকষির অধিকার ---এসবই দরকার যাতে সমস্ত শ্রমজীবী মানুষ আর্থিক বৃদ্ধি থেকে উপকৃত হতে পারে।

    চতুর্থ, পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ । এতে আঞ্চলিক বৈষম্য কমবে, অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং ধারণযোগ্যতা ( sustainability) নিশ্চিত হবে। পরিবেশ, জল, বর্জ্য নিষ্কাশন, অরণ্য, শক্তি, জলবায়ূ পরিবর্তন, আবাসন এবং পরিবহণ সংক্রান্ত পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ করা জরুরী।

    পঞ্চম, অতি ধনীদের অবদান। বিল গেটস এবং ওয়ারেন বাফেট একটা বিশ্বব্যাপী ক্যাম্পেন চালাচ্ছেন ‘ দেওয়ার শপথ ‘ ( Giving Pledge ) নামে যাতে অতি ধনীরা জনগণের জন্য তাঁদের আয়ের অর্ধেকের বেশি দান করেন।

    ২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী ২৮টি দেশের ২৩৫ জন অতি ধনী জনস্বার্থে ৬০০ বিলিয়ন ডলার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। অনেক প্রাগ্রসর দেশে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সম্পদ হস্তান্তরিত করার সময় একটা বিশেষ উত্তরাধিকার কর আছে (জাপানে ৫৫%, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০%,, ফ্রান্সে ৪৫%, মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রে ৪০%)। যদিও এটা শুধু অতি ধনীদের বৃহৎ সম্পদ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতীতে ভারতেও এই কর প্রচলনের প্রস্তাব অনেকে করেছেন। ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব জানাচ্ছে যে ভারতে ওপরের ১% লোকের জাতীয় আয়ের অংশীদারিত্ব, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে দেশগুলিতে এরকম বৈষম্য আছে তারই মধ্যে পড়ে। এমনকি ভারতে এখন আর্থিক বৈষম্য ব্রিটিশ আমলের চেয়েও বেশি। এটা কী মেনে নেওয়া যায় ?

    অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং সমতা

    মধ্যবিত্তশ্রেণী, ধনী বা অতিধনীদের ওপর কর বাড়ানো বা নতুন কর প্রবর্তনের বিতর্ক এটা নয়। এটা হচ্ছে সংস্থানের খোঁজ যাতে আরো কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্য আর কর্মহীনতা থেকে বের করে আনা যায় এবং এমনভাবে সেটা করা যাতে উৎপাদন, পারদর্শিতা,গুণমান বৃদ্ধি এবং কনজাম্পশনের মধ্য দিয়ে মূল্য যুক্ত হয়। একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিকরণ, ধারণযোগ্যতা
    (sustainability), মর্যাদা এবং বিচার যাতে মান্যতা পায়। প্রয়োজন বিশ্লেষণ ও বিতর্কের, ভীতি উৎপাদনের জন্য মিথ্যা প্রচারের নয়। ভারত ইতিমধ্যেই কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলেছে। তবে এটা আদৌ যথেষ্ট নয়। সাহসী উদ্যোগ নিয়ে অনেককিছু করা দরকার যেটা নকল করা সমাধান দিয়ে সম্ভব নয়। নতুন অর্থনীতি মানে ‘সুযোগ এবং উন্নতির অর্থনীতি’ থেকে ‘উদ্দেশ্যমূলক অর্থনীতি’ তে উত্তরণ। এখানে উদ্দেশ্য মানে অন্তর্ভুক্তি, সমতা এবং ধারণযোগ্যতা (Sustainability) যাতে কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা যায়।আর্থিক এবং অন্য ব্যবস্থা সংক্রান্ত আলোচনাগুলিকে এই পরিপ্রেক্ষিতেই বোঝা উচিত।

    ভারতকে কোন কৌশল নিতে হবে যাতে এই অনিশ্চিত সময়েও সংকট কাটিতে ওঠাযায়? না, কোনো যাদু সমাধান নেই এবং সেরকম কিছুর প্রস্তাবও এখানে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরী হচ্ছে ভাবনার চর্চা এবং নীতিনির্ধারণ যাতে আর্থিক বৃদ্ধি -- ন্যায়বিচার এবং আশার বিরুদ্ধাচারণ না করে। তার জন্য দরকার বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা এবং ভারতের সৃষ্টিশীল এবং উদ্ভাবক ক্ষমতার থেকে শিক্ষা নিয়ে সমস্ত সম্ভাব্য বিকল্পগুলিকে নিয়ে আলোচনা এবং বিতর্ক।

    কেউ কেউ এখনও বিশ্বায়ন এবং বাজারের মুক্তিকেই যাদু সমাধান ভেবে চলেছেন -- এগুলি যে স্ট্র্যাটেজি মাত্র যেগুলির উপর নিরীক্ষণ এবং নিরন্তর অন্তর্বর্তীকালীন সংশোধন দরকার, সেকথা ভুলে গিয়ে। বিশ্ব বাজারের অস্থিরতাগুলি, কোভিড-১৯ মহামারী, ইওরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধগুলি আমাদের শিখিয়েছে বিশ্বায়ন তার নিজের মূল্য কীভাবে আদায় করে নেয়।
    আমার কাছে গান্ধীবাদী বিকাশের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে যেখানে বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় প্রয়োজন, স্থানীয় প্রতিভা, স্থানীয় সংস্থান, স্থানীয় উৎপাদন এবং “ক্ষুদ্রই সুন্দর’’ দৃষ্টিভঙ্গীর গুরুত্ব, বিশেষত আজকের অতি সংযুক্ত সমাজে যাতে স্থানীয় রোজগারি এবং সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করা যায়। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি মাপের উদ্যোগে বিনিয়োগ এবং স্থানীয় উদ্ভাবন -- বিশ্ব বাজারে পৌঁছোনোর জন্য নেটওয়ার্কের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যাংকগুলি ক্ষুদ্র উদ্যোগের তুলনায় বড় কোম্পানিদের বড় ঋণ দিতেই বেশি পছন্দ করে। আর্থিক পরিষেবার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই এরও পরিবর্তন দরকার। ভারতের ৮০০ জেলায় তাদের আলাদা জলবায়ূ, প্রাকৃতিক সংস্থান, সক্ষমতা এবং প্রতিভা দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্য এবং পরিষেবার জন্য ৮০০ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব। এর মানে সরবরাহ শৃঙ্খল, রসদ, বাজার এবং বিপণনের জন্য নেটওয়ার্কের সঙ্গে ৮০০টি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সংযুক্তি।

    ভবিষ্যত কোথায়?

    এমনকি কৃত্রিম মেধা নিয়ন্ত্রিত পৃথিবীতেও ভবিষ্যতের কাজগুলি আসবে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পর্যটন এবং উৎপাদনী ক্ষেত্র থেকে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় তরুণ প্রতিভা বিশ্ব কর্মীবাহিনীর অংশ। তাই জরুরী হল মানবসম্পদ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মূল্যায়ন এবং একটা নতুন অর্থনৈতিক মডেলের উদ্ভাবন যার ভিত্তি হল বিকেন্দ্রীকরণ, নেটওয়ার্কিং, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এরই সঙ্গে কনজাম্পসন প্যাটার্ন এবং ব্যবহারের পরিবর্তনও গুরুত্বপুর্ণ। ভবিষৎ অবশ্যই নিহিত আছে প্রযুক্তিগত অর্থনৈতিক মডেলের ওপর যা সুনিশ্চিত করবে অন্তর্ভুক্তি, প্রাথমিক মানবিক চাহিদাগুলি, বিকেন্দ্রীকরণ এবং অহিংসা। ভবিষ্যৎ নিহিত আছে জীবনযাপনের পরিবর্তনের ওপরেও যা “প্রদর্শনকামী উপভোগের অশ্লীলতা’র বিরুদ্ধে ‘শেয়ার করে, কেয়ার করে’ দর্শনসঞ্জাত সুখকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

    [ গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত স্যাম পিত্রোদার ‘Take on the challenge of rising income inequality’ লেখাটি আমার এত ভাল লেগেছে যে অনুবাদ করে ফেললাম ]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন